জায়া ও পতি পর্ব-০৮

0
3

#জায়া_ও_পতি
#পর্ব_৮
#ইসরাত_ইতি

পুরো বিষয়টি জান্নাত যখন উপলব্ধি করতে পারে জান্নাতের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো। একদিন দুদিন করে একটা নতুন জগতে এসে,এই জগতের জন্য জমানো আবেগকে অদৃশ্য এক ঝড়ো হাওয়া নাড়িয়ে দিতে চাইলো। জান্নাত কাঁদছে খুব,সে কান্না থামাতে পারছে না,না পারছে নিজেকে সামলাতে। তার মানতে কষ্ট হচ্ছে,ভয় হচ্ছে।

শামির ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল দীর্ঘক্ষণ, মেজাজ টা ভীষণ চটে উঠেছে তার, বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করে ধীরস্থির বললো,“স্টপ ক্রাইং!”

_কিন্তু আপনারা তো বলেছিলেন আমাকে পড়াবেন।
ফুঁপিয়ে উঠলো,বললোও।

_চুপ!

বজ্রধমকে মিইয়ে যায় জান্নাত। নিশ্চুপ কাঁদতে থাকে। শামির ওকে শক্ত হাতে কাছে টানে,ধমকের মতো করে বলে,“কাকে বলেছি আমি তোমাকে পড়াবো?”

_মামীকে।
ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে।

_না জান্নাতুল,এমন কিছুই হয়নি। উল্টো বলা হয়েছে আমি বৌকে পড়াবো না,এই তথ্যটা যেন তোমাকে জানিয়ে নেওয়া হয়। তোমার মামা মামীরা বলেছে “কোনো সমস্যা নেই। পড়ানো লাগবে না। তোমাকে জানানো হয়েছে।”

নাক টানে জান্নাত, তার এতো কষ্ট হচ্ছে! নিজেকে কি বলে সান্ত্বনা দেবে সে বুঝতে পারছে না। শামির হচ্ছে মহাবিরক্ত,রাগী গলায় বলে,“কান্না থামাতে বলেছি জান্নাতুল।”

_আমি পড়তে চাই।
ছটফটিয়ে ওঠে জান্নাত।

_না।

কড়া,চড়া ধমক! এবার ডুকরে কেঁদে ওঠে জান্নাত, শামির মেজাজ টা আর ঠিক রাখতে পারলো না, হাতের কাছে সাইড টেবিলে একটা গ্লাস ছিলো,সেটা ছুড়ে ফেলে মেঝেতে। ভয়ার্ত জান্নাত গুটিসুটি মেরে ফোপায়, মন গলে না শামিরের, চেঁচিয়ে ওঠে,“আর একবার কান্নার শব্দ পেলে খুব খারাপ অবস্থা হবে জান্নাতুল।”

_কিন্তু আমি পড়তে চাই।
ভয়ডরের তোয়াক্কা না করে ফোপাতে ফোপাতে বলে জান্নাত।

_এই তুমি কার সাথে তর্ক করছো তোমার আদৌও ধারণা আছে?

_আপনি আমার স্বামী।
কোনো মতে বললো মেয়েটা।

এবার জান্নাতের কাছে গিয়ে ওকে ধরলো শামির, শক্ত হাতে মুখটা ধরে উঁচু করলো, জান্নাতের ঐ ভেজা চোখে নিজের কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,“সেটাই! আমি তোমার স্বামী! আর একটুও যেন আমার কথার অবাধ্য হতে না দেখি! বলেছি কান্না থামাতে,তুমি এখনি কান্না থামাবে। রাইট নাউ!”
শামিরের কন্ঠে যেটুকু,যা কিছু ছিল, জান্নাত নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে পুরো। পারছে না কান্না থামাতে তবুও চেষ্টা করছে, শামিরের ঠোঁটে বক্র হাসির রেখা ফুটে উঠলো, এবার নিজের আরও কাছে টেনে, বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে গম্ভীর তবে স্বাভাবিক গলায় বলল,“একটা কথা জেনে রাখো জান্নাতুল, তোমাকে কি বলা হয়েছিল,না হয়েছিলো দ্যাটস নট মাই প্রবলেম! ওটা তোমার মামা মামীর ব্যাপার। বিয়ের আগের ব্যাপার। এখন তুমি আমার স্ত্রী। অ্যান্ড, ইট ইজ ক্লিয়ার, আমি তোমাকে পড়াশোনা করতে দিচ্ছি না আর।”
কথাগুলো বলতে বলতে শামির ভেজা দু’চোখ মুছিয়েও দিলো জান্নাতের। জান্নাত শুধু পাথরের মতোন বসে রইল নির্বাক, নিস্তেজ হয়ে।

মেজাজটা বেশি আর প্রকাশ করতে চাইলো না শামির, মেয়েটিকে সে ভালোবেসে ফেলেছে তার মতো করে,তার স্ত্রী জান্নাত, তার একান্ত আপন, বয়স কম,মন নরম,যেটুকু ধমকাধমকি করেছে যথেষ্ট। আর কাদাতে ইচ্ছে করছে না,তবে শামির নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকবে।
জান্নাতকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় সে, ড্রয়ার থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার নিয়ে চলে যায় ছাদে। বিছানায় চুপচাপ পরে রয় জান্নাত, নিস্তেজ হয়ে বিক্ষিপ্ত আর চূর্ণ বিচূর্ণ একটা মন নিয়ে।

বাড়ির কানায় কানায় কথাটা প্রচার হয়ে গেলো শামির জান্নাতের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে পড়াশোনা নিয়ে, কান্না ভেজা মুখটা দেখে সবার খুব খারাপ লাগে, তবে কেউ কিচ্ছুটি বলে সান্ত্বনা দিতে আসে না জান্নাতকে। জান্নাত এখন বাড়ির সবার জন্য সন্ধ্যার নাস্তা বানাচ্ছে, পুরোটা বিকেল সে বিছানায় শুয়ে থেকে কেঁদেছে,ফোন করেছিলো বড় মামীকেও, শাহীনুর ফোনটা রিসিভ করতেই জান্নাত কেঁদে ফেলে বললো,“মামী তুমি তো বলেছিলে ওনারা আমাকে পড়তে দেবেন।”

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় শাহীনুর, বুঝে যায় বিরাট বড় ঝামেলা লেগেছে, এক বিকেল বুঝিয়েছে জান্নাতকে,“মা’রে এতো অবুঝ হইস না তুই আল্লাহর দোহাই লাগে। কিসের অভাব আচে তোর? রাজরানীর মতো খাইতেচো। তোর স্বামী তোরে কিসের অভাব দেয়? আর এই পড়ালেখা দিয়া কি করবি? কয় জনে চাকরি পায় এই দ্যাশে?”

_সেজন্য আমি পড়বো না?

_চিল্লাইসনা জান্নাত। মনে রাখপি,তোর বিয়া ওইয়া গ্যাচে,আর স্বামী যাতে খুশি থাকে সেইটাই করবি তুই। বেহুদা জেদ করবি না খবরদার। স্বামীর মন যোগাইয়া চল, দেখবি কত আদর করে। কয়েক মাস গ্যালে একটা বাচ্চাও নিয়া নিবি, সংসারে শক্ত অবস্থান করবি নিজের।

জান্নাত গা কাঁপিয়ে কাদছে। শাহীনুরের ভয়,এই জেদ-টেদ দেখে শামির না আবার জান্নাতকে তালাক দিতে চায়, সে নরম গলায় বলে,“আরে বোকদা হোন, স্বামী এমন এক লোক,এরে চাইলেই বশে আনা যায়, এখন না হয় একটু ঘাড়ত্যাড়ামি করতাচে, তোর কলেজে ভর্তির তো ম্যালা দেরী, তোরে বুদ্ধি দিই হোন, স্বামী যখন অতিরিক্ত নরম থাকবে তখন এইটা সেইটা যা-ই আবদার করে বৌ, স্বামী মানে। রাইতের বেলা জামাইর গলা ধইরা কবি তুই পড়তে চাস,দেখপি এক দিন, দুইদিন মানা করবে, কিন্তু তিনদিনের দিন আর পারবে না। দেখিস।”

জান্নাতের কান্না থামে না, আচমকা এই শোকবার্তায় সে মূর্ছা যাচ্ছে প্রায়, শাহিনুর বলে,“বোকদা ছেড়ি! তোর স্বামীর কত টাকা,তুই এইসব বেহুদা জেদ ছাড়া কইলাম,জামাই রাইগা গেলে তালাক দেবে। তুই তালাক চাস?”

আঁতকে ওঠে জান্নাত, না সে তালাক চায়না কিন্তু নিজের জীবনের এই চরম সত্যিটা মানতে পারছেনা সে। আসলেই তার পড়ালেখা আর হবে না?
মামীর কথাগুলো আর নিতে না পেরে জান্নাত ফোন কেটে দেয়, সেই থেকে জান্নাত নিশ্চুপ, নির্বিকার, তবে ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতটা বিধ্বস্ত ও।

বাড়ির লোকগুলো আড়ে আড়ে বাড়ির মেজো বউকে দেখছে। ড্রয়িং রুমে সবাইকে চা আর ফুলকপির পাকোড়া পরিবেশন করে দিচ্ছে জান্নাত। শামির সন্ধ্যার খবরটা দেখতে বসেছিল, জান্নাত বাধ্য বৌয়ের মতো শামিরকে ডাবল ডিমের অমলেট করে দিয়েছে, এশার আজান দিলে নামাজ পরে এসে রাতের খাবারও গরম করেছে, নিজেকে একপ্রকার ব্যস্ত রেখেছে জান্নাত, সে এই এতো লোকদের সামনে কাঁদতে চাচ্ছে না কেন জানি।

শামির আড়চোখে শুধু জান্নাতের কর্মকাণ্ড দেখছে,তবে সে বিশেষ পাত্তা দেয়নি। নারীজাত,তার ওপর বয়স কম,শামিরের দুমিনিট লাগবে না নিয়ন্ত্রণে আনতে, রাত বাড়ুক, একটু নিড়িবিলি হোক,বোঝাবে। এতো বোঝাবুঝির ধার শামির চৌধুরী ধারতো না যদি না মেয়েটা জান্নাত হতো, মেয়েটিকে সে ভালোবাসে,তাই তাকে বোঝাতে যাওয়ার গরজ শামিরের।

জান্নাত মায়মুনার ঘরে নামাজ পরে কোরআন শরীফ পাঠ করছে। গুনগুন আওয়াজ আসছে ও ঘর থেকে। কোরআন পাঠ করেও জান্নাত দাদী শাশুড়ির কাছে বসে থাকে,মায়মুনা জান্নাতের শুকনো মুখ দেখে, একপর্যায়ে জান্নাতের গালে টোনা মেরে বলে,“ঐ মা*গী,এতো লেহাপড়া দিয়া কি করবি? এই আমারে দেখ,কেলাশ থিরি পর্যন্ত পরছি,ঐ বাল দিয়া কি ওইচে? হাস, হাস একটু কইতাচি!”

ড্রয়িং রুমে তখন শামির,রাজন আর রিজিয়া বণিক। এমন নিড়িবিলি সময়টাই রিজিয়া চাচ্ছিলেন,তিনি দরাজ গলায় ছেলেকে বললেন,“মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে।”

_অহেতুক কষ্ট, ওর পরিবার দায়ী।
গম্ভীর জবাব শামিরের।

_আরে ঐ শাহীনুর লোভে পরে এতো কিছু চেপে গিয়েছে বোধ হয় রে বাবা, জানায়নি জান্নাতকে। আমাদের ভুল, আমাদের আরো সময় নিয়ে ভেঙেচুরে বোঝাপড়া করা উচিত ছিলো।

_ভেঙেচুরে বলতে?

_জান্নাতের সাথে এসব বিষয়ে সরাসরি কথা বলা।

শামির মনে হলো কোন বিরক্তিকর কৌতুক শুনলো,মুখটা অমন করে বললো,“ও কি সিদ্ধান্ত দিতো? যেখানে ওর পরিবার আমি না হলেও অন্য কারো গলায় ওকে ঝোলাতোই। তাছাড়া যেটা হয়েছে সেটা ওর পরিবারের দোষেই। আমরা কিছু লুকোইনি,না আমার প্রথম বিয়ের কথা,না অন্য কথা। বাট যেটা হয়েছে সেটা ওকে মেনে নিতেই হবে।”

রিজিয়ার মুখটা মলিন হলো,ছেলে এসব ব্যাপারে কেমন কঠোর হয়ে যায়। তিনি বললেন,“বাবা অন্তত ইন্টারমিডিয়েট টা কম্প্লিট করতে….”

শামির শীতল চোখে মায়ের দিকে তাকাতেই রিজিয়া চুপ করে রইলেন। পাশ থেকে বিরক্ত হয়ে রাজন বললো,“একটু ভেবে দেখ। তোর ভাবী তো শিক্ষিতা, আমি তো এতে অসুবিধা দেখছি না। তোর ভাবী এমবিএ টাও কম্প্লিট করে রাখতে চাচ্ছে। আপত্তি করিনি কোনো।”

_সেটাই ভাইয়া আমি বোঝাতে চাচ্ছি, তুমিই সিদ্ধান্ত নেবে তোমার বৌয়ের সাথে কি করবে, তেমনি ভাবে আমিও….

কথাগুলো বলে শেষ করার আগেই শামিরের ফোন বেজে উঠল । শামির ফোন নিয়ে চলে গেল আলোচনার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে।

আজ খাবার টেবিলের আশেপাশেও জান্নাত ছিলো না। শামির একের পর এক তাদের বহুমুখী প্রতিষ্ঠানের রড সাপ্লাইয়ারদের সাথে ফোনে কথা বলে যখন খেতে বসলো তখন রাত দশটা, আজ জান্নাত দীর্ঘ সময় তার দাদী শাশুড়ির ঘরে কোরআন তেলাওয়াত করেছে, কিছুক্ষণ হয় তার কোনো সাড়া শব্দ নেই ‌।
শামির খেতে বসে সুহানাকে দেখে শুরুতেই জানতে চাইলো,“জান্নাতুল কোথায়?”

_ছাদের দিকে যেতে দেখেছি।

ভ্রু কুঞ্চিত হলো শামিরের,সে কিছুক্ষণ আগে ছাদ থেকেই ফিরেছে, তালুকদারদের ছাদে উঠতি বয়সী ছেলেদের দল সিগারেট ফুকছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। শামির উঠে দাঁড়ায়, সুহানা এও বললো জান্নাত তখনও খায়নি। তখন কেন, জান্নাত বিকেল থেকে এক গ্লাস পানিও খায়নি।

শামিরের চোয়াল শক্ত হলো,এতো নীরব প্রতিবাদও শামির মেনে নিতে পারবে না, স্ত্রীকে অত তোয়াজ সে করবে না, কি দুঃসাহস! মুখে পানি পর্যন্ত নেয়নি! এতো ভরিয়ে দেওয়ার পরেও সামান্য বিষয় নিয়ে জেদ করে উপোস থাকে! নীরব তেজও শামির বরদাস্ত করবে না! তার সংসারে এসেছে, খেয়ে পরে তার কথা মেনে সুন্দর মতন থাকতে হবে, নয়তো শামির পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও কঠোর হবে।

গটগট করে ছাদের সিঁড়িতে উঠতেই দেখলো জান্নাত ঘোমটা সামলে চোখ মুছতে মুছতে নিচে নামছে, এতক্ষণ ছাদে দাঁড়িয়ে খুব কেঁদেছে সে। শামিরকে দেখে তার পা জড়িয়ে এলো, ধীরে ধীরে নিচে নামতেই শামির বজ্রকণ্ঠে বলে,“সরাসরি খাবার টেবিলে গিয়ে বসবে,এক পাও এদিক সেদিক নয়।”

জান্নাত নাক টানতে টানতে তাই করলো গিয়ে। শামির গিয়ে বসলো জান্নাতের পাশে, সুহানাকে বলল জান্নাতের প্লেটে খাবার তুলে দিতে। খেতে পারছিলো না জান্নাত,তার শুধু কান্না পাচ্ছিল, ভয়ের চোটে তবুও খেতে লাগলো, ঝুরঝুরে বাসন্তী পোলাও আর ইলিশের দোপেঁয়াজা থেকেও কোনো স্বাদ পাচ্ছিল না জান্নাতুল,সবটা তেতো লাগছে।

ঘরে ঢুকেছে জান্নাত শামিরের আগেই, ঢুকে তাড়াতাড়ি মুখ হাত ধুয়ে তার ঘুমানোর আগের নিত্যদিনের কাজ যেমন বিছানা ঠিক করা,মশা মারার যন্ত্রটা চালু করে রাখা, খোঁপা খুলে চুলে একটা আলগা বেনী করা, মুখে একটু ক্রিম লাগানো, শামিরের কম্পিউটার টেবিল গুছিয়ে রাখা, একটা জন্মনিরোধক বড়ি খাওয়া, এসব করে শুয়ে পরেছে ওপাশ ফিরে। রাতের খাবার শেষে শামির ব্যবসায়িক আলাপ পাড়ে ভাই আর বাবার সাথে রোজ, বোনদের খোঁজখবর নেয়। রুহির জন্য ইদানিং বিয়ের কথা তুলছে শামির, তার কানে উড়ো খবর এসেছে ক্লাসের কোন এক রোড সাইড রাস্কেলের সাথে কফিশপে গিয়েছে রুহি। একটা অঘটন ঘটার আগেই ওর বিয়ে দিতে চাচ্ছে শামির। প্রেম ভালোবাসা করে কেলেঙ্কারি করবে তার বোন,সে এটাও বরদাস্ত করবে না।

আজ খানিকটা তাড়াতাড়িই রুমে ঢুকেছে সে। তখন রাত সাড়ে দশটা বাজে কেবল,ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে চুপচাপ একটা হাত রাখলো জান্নাতের গাঁয়ে, জান্নাত কোনো নড়চড় করছে না তবে শামির জানে জান্নাত জেগেই আছে। অন্য রাত গুলোতে জান্নাতের গাঁয়ে হাত রাখা মাত্র জান্নাত চুপচাপ ঘুরে তার কাছে এসে শোয়,এমনটাই বলা আছে তাকে,শুতে গেলে শামির দূরত্ব পছন্দ করে না মোটেই।

দু মিনিট চুপ থাকলো শামির, জান্নাতের স্পর্ধা দেখে তার কেনো জানি রাগ উঠছে না যতটা ওঠার কথা। তার হাসি পাচ্ছে উল্টো মেয়েটার বোকামি দেখে। শামির কি করলো, নিজেকে ঠান্ডা রেখে এক টানে ঘুরিয়ে নিলো জান্নাতকে, দেখতে পেলো জান্নাতের দু’চোখ ভেজা। কাঁদছিল মেয়েটা,না শব্দ হচ্ছিল,না শরীর কাঁপছিল।

গম্ভীর আওয়াজে শামির বলে,“স্টপ জান্নাতুল।”

_আমি পড়তে চাই!
খুব সাহস জমিয়ে বললো জান্নাত কাঁদতে কাঁদতে।

ধৈর্য্যর বাধ ভেঙে যাওয়ায় উঠে বসলো শামির, প্রচন্ড রাগে চেঁচিয়ে উঠলো,“বলেছি না এটা হবে না? বলেছি না?”

_আমি পড়তে চাই।
একই কথা বিড়বিড় করতে থাকলো জান্নাত। শামির ওর দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে, বললো,“পড়বে তুমি?”

_হু-হ্যা।
মাথা ঝাঁকায় জান্নাত।

শামির ওর দিকে দীর্ঘসময় ধরে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ বলে,“ওকে! আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও জান্নাতুল, পড়াশোনা কেন করে মানুষ?”

হতবাক জান্নাত অস্ফুটে বললো,“জানতে , শিখতে।”

ফিচেল হাসে শামির,বলে,“জানতে? শিখতে?”

_জি।

_আচ্ছা এতদিন কি শিখেছো আমি একটু জানতে চাচ্ছি। ও.কে., He pleaded for his innocence এটাকে কম্প্লেক্স করো তো।

বিস্ময়ে হতবিহ্বল জান্নাত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে,শামির ধমকে বললো,“কি হলো বলো!”

জান্নাত চোখ মুছে বললো,“He pleaded that he was innocent.”

_good! এখন সতেরো ঘরের নামতা না থেমে বলবে।

_সতের একে সতেরো,সতেরো দুগুণে চৌত্রিশ,তিন সতের একান্ন,চার সতেরো…

_ওকে ওকে,গ্রেট! এখন এ প্লাস বি হোল স্কয়ারের সূত্র বলো জান্নাতুল।

_(a + b) 2 = a 2 + 2ab + b 2 ।

_হু। এ মাইনাস বি হোল কিউবের সূত্র?

_(a − b) 3 = a 3 – b 3 – 3ab(a – b)

_গতির দ্বিতীয় সূত্র বলো!

জান্নাত চূড়ান্ত হতবিহ্বল,ধমকের চোটে থেমে থেমে বলে,“কোনও বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার এর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে ভরবেগও সেদিকে ক্রিয়া করে।”

_ওফফফ,গ্রেট জান্নাতুল। ইউ নৌ! তুমি অনেক কিছু শিখে গিয়েছো,জেনে গিয়েছো এতো কিছু অ্যান্ড দ্যাটস এনাফ! আর কিছুই শেখার নেই জান্নাতুল, আমার স্ত্রী হিসেবে,আমার ভবিষ্যৎ বেবিদের মা হিসেবে যেসব বেসিক জিনিস জানা দরকার,তুমি শিখেছো। আর কিছু শিখতে হবে না তোমায়, কিছুই না।

চির গম্ভীর সুরে শাণিত বাক্যগুলো জান্নাতুলের মুখের ওপর ছুঁড়ে দেয় শামির,আর জান্নাতুল ব্যথিত,আহত চোখে চেয়ে থাকে তার স্বামীর মুখের দিকে।

চলমান…..