জায়া ও পতি পর্ব-১৪

0
201

#জায়া_ও_পতি
#পর্ব_১৪
#ইসরাত_ইতি

[ ১ম অংশ ]

পরশী এসেছে রূপাতলী থেকে, পরশীকে নিয়ে এসেছে জান্নাতের বাবা মহসিন। তিনি এসেছিলেন জান্নাতের অসুখ দেখতে। এক কেজি আঙ্গুর,এক কেজি মাল্টা আর দুই কেজি মিষ্টি নিয়ে এসে মেয়েকে দেখে পিতার দায়িত্ব পালন করে জামাই বাড়িতে দুপুরের খানা খেয়ে বিকেলেই চারটার বাসে চলে গিয়েছেন কদমতলা।
শামির অবশ্য জামাই হিসেবে শ্বশুরের কাছে সেরা, প্রতিবার এলে জান্নাতের হাত দিয়ে দুই-তিন হাজার করে টাকা শ্বশুরকে দেয়। খুবই উপযুক্ত,কামাইদার, সমঝদার জামাই পেয়েছে মহসিন, সে তার জামাইয়ের প্রশংসা জনে জনে করে বেড়ায়। কথা বললে জামাইয়ের পক্ষ নিয়েই কথা বলে। জান্নাতকে এবারও বুঝিয়ে গেলেন, পড়তে চাই পড়তে চাই বলে ঘ্যানঘ্যান করতে না করে গেলেন।
মহসিন গেলেও পরশী যায়নি। ক্লাস এইটের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবার আগে আগে তার খুব ইচ্ছে হয়েছে জান্নাতুল আপুর কাছে এসে দু’টো দিন থাকার।

অবশ্য এ বাড়িতে আসলে পরশির খুব অস্বস্তি হয়, এই বাড়ির ঝকঝকে পরিবেশে চোখ ব্যথা করে তার, জান্নাতুল আপুর নিশ্চয়ই অভ্যাস হয়েছে এখানে থেকে থেকে। তবে এ বাড়ির সব লোক খুব ভালো, শামির দুলাভাই রাগী হলেও তিনিও ভালো,খুব সুন্দর করে কথা বলে পরশীর সাথে। আপুকে নিয়ে সবসময় চিন্তা হতো পরশীর। এখন আর চিন্তা হয়না।
এখানে আসলে সে রুহীর ঘরে থাকে। শামা মেয়েটার নাক উঁচু,পরশির ওকে তেমন পছন্দ নয়,তাই ওর কাছে খুব একটা যায়ও না। রুহী আপু মিশুক,তাই রুহীর সাথেই লেপ্টে থাকে এখানে এলে।
আপাতত রুহী বাড়িতে নেই,টিউশন নিতে গিয়েছে। বেলা তিনটার কাছাকাছি, গেছো মেয়ে পরশী এই সময়ে আমবাগান পেয়ারা বাগান চষে বেড়ায়, আর এ বাড়িতে বেলা তিনটায় সবাই ভাত ঘুম দেয়। এটা খারাপ অভ্যাস।
বাড়িটা এখন ফাঁকা মনে হচ্ছে, যে যার ঘরের দোর লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে। পরশীর একঘেয়েমি লাগছিলো তাই হেঁটে জান্নাতের ঘরের দিকে গিয়ে দেখে ঘরের দরজা বন্ধ, দুলাভাই আছে ভেতরে, তাই পরশী আর নক করলো না। হেঁটে সোজা চলে গেলো ছাদে।

শায়ন পরশীকে দেখতে পেয়ে হাত থেকে সিগারেট ফেলে জুতো দিয়ে পিষে দাঁড়িয়ে রইল। পরশী দুলাভাইয়ের এই ভাইয়ের সামনে খুব একটা যায়না, তার বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে। শায়নকে ওভাবে,ওখানে দেখে পরশী মাথায় ওড়না টেনে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। পেছন থেকে ভারী স্বর বলে ওঠে,“হেই সুইটি!”

_আমি সুইটি নই, পরশী।

নিচুস্বরে তৎক্ষণাৎ জবাব দেয়। হাসে শায়ন, কিছুক্ষণ হেসে বলে,“ওহ। পাড়া-পরশী । তা এদিকে তাকাও পিচ্চি।”

পরশী ঘুরে শায়নের দিকে তাকায়। দুলাভাইয়ের এই ভাইটাও দুলাভাইয়ের মতো লম্বা, তবে চুলগুলো ঝাঁকড়া। চোখে কালো মোটা ফ্রেমের চশমা । চেহারার গড়ন কিছুটা দুলাভাইয়ের মতো। দুলাভাইয়ের চুল ট্রিম করে ছাটা,নয়তো পাশাপাশি দুইভাইকে একই রকম লাগতো। শায়ন পা থেকে মাথা পরশীকে দেখে বলে,“সেই বিয়ের সময় দেখেছি তোমাকে। কিসে পড়ো পিচ্চি?”

_ক্লাস এইট।

_রোল কত?

_ছয়।

_বাহ, বেশ ভালো। কোন সাবজেক্ট বেশি পছন্দ?

_অংক।

_দারুন। আচ্ছা একটা কথা বলো, তুমি মেজো ভাবীর মামাতো বোন তাইনা?

_জি।

_তবে চেহারা এতো সেইম টু সেম কি করে? মনে হয় আপন বোন।

_জানিনা।

শায়ন হাসে, হাসি থামিয়ে বলে,“আচ্ছা। ছাদে এসেছিলে কেন পিচ্চি?”

_হাটতে!

_হাটবে? আচ্ছা হাটো। আমিই যাই।
শায়ন চলে যায়, যাওয়ার আগে বলে,“আসার সময় দরজা লক করে এসো সুইটি।”

_আমি সুইটি নই। পরশী।
আবারও নিচু স্বরে তৎক্ষণাৎ জবাব দেয় পরশী।

শায়ন এবারও হাসে,“ওহ ওকে। পরশী। সুন্দর নাম। কে রেখেছে?”

_জানিনা।

শায়ন চলে যাওয়ার পরে পরশী ছাদে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে, ছাদে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে বারোটা সিগারেটের টুকরো। এগুলো ঐ শায়ন বলে লোকটা খেয়েছে। আপুর কাছে পরশী শুনেছে এ বাড়ির সব ছেলে প্রচুর সিগারেট খায়।
আসরের আজান দিলে পরশী ছাদ থেকে নেমে সোজা হেঁটে জান্নাতের ঘরে গিয়ে দেখতে পায় দরজা খোলা, শামির-জান্নাত উঠেছে। শামির এখন অফিসে যাবে, পরশী দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বলে,“আসবো দুলাভাই?”

গলায় টাই বাঁধতে বাঁধতে শামির সামান্য হেসে বলে,“এসো।”

পরশী ভেতরে ঢোকে, জান্নাত আসরের নামাজ আদায় করে উঠেছে, পরশীকে দেখে বললো,“পায়েশ খাবি এখন? দুপুরে তো খেলি না।”

_সন্ধ্যায় খাবো আপু।

হাতে ফোন তুলে নিয়ে শামির জান্নাতকে বলে,“আজ আসতে একটু দেরী হবে জান্নাতুল,অনেক রাত হবে। পরশীর কিছু লাগলে আমাকে ফোন করো।”

জান্নাত মাথা নাড়ায়। পরশী জান্নাতের বেলকোনিতে ঢুকে ফুলগাছ দেখছিলো, সেই ফাঁকে শামির জান্নাতকে চুমু খেয়ে ওর কানে ফিসফিসিয়ে বললো,“একটু রাত হবে, ঘুমিয়ে পরো না আবার।”

জান্নাত মাথা নিচু করে সামান্য হাসে। পরশী বেলকোনি থেকে বেরিয়ে দুলাভাই আপুকে চুমু খাচ্ছে দেখে আবারও বেলকোনিতে ঢুকে পরে।

শামির চলে গেলে পরশী মজার ছলে বলে ওঠে,“আমি কিছু দেখিনি কিন্তু!”

_পেকেছিস পরশী। আয় এখানে বোস।

পরশী বসে, জান্নাত পরশীর মাথায় তেল লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,“মামী ফোন করছে। কথা বলবি?”

_নাহ।

_না কেনো?

_মাথা খারাপ করে দেয় আপু, ভালোলাগে না এত কথা বলতে।

জান্নাত হাসে,বলে,“মামী একটু বেশি কথা বলে।”

_শুধু বেশি কথা বলে? কি বলে জানো? সাজিসনি কেন? জামাইয়ের ভাইবোনদের সামনে গিয়ে নাচিসনি কেনো, শায়নের সামনে যাবি, গল্প করবি। মা পুরো পাগল আপু।

জান্নাত অবাক হয়ে পরশীকে ঘুরিয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,“ছোটো দাদার সাথে গল্প করতে বলে কেন?”

_কি জানি। বলে,শায়নের সামনে সেজেগুজে যাবি।

জান্নাত দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলে, মামী তাকে একবার বলেছিলো,“তোর দেবরের বিয়ের কথা তুললে আমগো পরশীর কথা বলিস জামাইর লগে জান্নাতুল।”

ঘনঘন মাথা নেড়ে পরশীর চুল বেনী করতে করতে জান্নাত বিড়বিড় করে,“সাজতে হবে না। এ বাড়ির ছেলের বৌ হতে হবে না তোকে, পড়াশোনা কর।”

_কিছু বললে আপু?

_নাহ, চল ওঠ,আমি রান্নাঘরে যাবো। আর শোন!

_হু?

_ছোটোদাদার সামনে যাবি না সহজে। মাথায় কাপড় দে।

________

একটা বড় দূর্ঘটনা ঘটেছে। চৌধুরী বাড়ির পরিবেশ থমথমে। জমির মামলার রায় বেড়িয়েছে, জিতেছে হাওলাদার বাড়ির লোক। ঐ ব্যারিকেড দেয়া এক শতাংশ জমি তাদের, জজ রায় দিয়েছে। পঁয়তাল্লিশ লক্ষ টাকার জমি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার শোক চাট্টিখানি কথা নয়, চৌধুরী বাড়ির পুরুষ গুলোর মন মেজাজ ঠিক নেই, ফুলে ফেঁপে এমন অবস্থা হয়েছে ক্ষোভ, যে কেউ একটু খোঁচা দিলেই ধুন্ধুমার লেগে যাবে।

এই থমথমে পরিবেশ পরশীর ভালো লাগছে না, নিচতলায় শামির,রাজন আর শারাফাত ফোনে উকিলের সাথে কথা বলছে। ডাইনিং রুমে পরশী ভাত খাচ্ছিল রাতের, তাকে বেড়ে খাওয়াচ্ছে সুহানা। রিজিয়া আর জান্নাত রান্নাঘরে । রিজিয়া দুধ গরম করছে। জান্নাত চা বানাচ্ছে শামিরের জন্য।
শায়ন এসে পরশীর পাশের চেয়ার টেনে বসলো,সে তখনও খায়নি। লোকটাকে দেখেই পরশী দ্রুত মাথায় কাপড় টানলো ওড়না দিয়ে।

শায়ন ওকে দেখে হেসে বলে,“যত বড় মুখ নয় তত বড় ঘোমটা?”

রিজিয়া হাসে, বলে,“একেবারে মেজো বৌয়ের মতো। ভারি মিষ্টি মেয়ে।”

শায়ন দুষ্টুমি করে পরশীর ঘোমটা নামিয়ে দিয়ে বলে,“তুমি খুব পিচ্চি সুইটি। আমার সামনে ঘোমটা দিতে হবে না। পিচ্চি পিচ্চির মতো থাকো।”

_আমি সুইটি নই পরশী।

আবারও মেয়েটার বাচ্চামোতে হেসে ওঠে শায়ন। জান্নাত ওদের দেখছে। শায়ন দুষ্টুমি করে রিজিয়াকে বলে,“কি বললে মা? মেজো ভাবীর মতো? তা একে তোমার ছোটো বৌ বানিয়ে আনি? কি বলো? ভাইয়ার মতো বাল্যবিবাহ করি?”

সুহানা আর রিজিয়া হেসে ফেলে। পরশী ফ্যাকাশে মুখ করে জান্নাতের দিকে তাকাতেই জান্নাত বলে,“মজা করছে।”

পরশী খেয়ে উঠে যায় দোতলায়, তার গোছগাছ করতে হবে, আগামীকাল খুব সকালে সে রওনা দেবে রূপাতলী।

রিজিয়া শায়নকে বলে,“তোর বাবা আর ভাইয়াদের মুড ঠিক হয়েছে?”

_না, দেখলাম উকিলকে যা নয় তাই বলে গালাগালি করছে।

রিজিয়া এবার চিন্তিত ভঙ্গিতে জান্নাতের দিকে তাকায়,নরম গলায় বলে,“আজ মেজাজ খুব একটা ঠিক নেই বুঝতেই পারছো, উল্টো পাল্টা কিছু করো না,কেমন?”

শায়ন মায়ের কথা শুনে হাসে, বিদ্রুপ করে বলে,“ভাবী তো কিছু করার সুযোগই পায়না।”

শামিরের মেজাজের প্রথম শিকার হয় শামা, পড়াশোনা রেখে নেটফ্লিক্সে রোমান্টিক সিরিজ দেখছিলো দেখে চ’ড় খেয়েছে শামিরের হাতে। নায়কটা যখন নায়িকার ঠোঁটে গাঢ় চুমু খাচ্ছিল ঠিক তখনই নজরে পরে শামিরের, দোতলায় উঠেই শামাকে প্রথমে চ’ড় মেরে কিছুক্ষণ ওর ওপর চেঁচামেচি করে ঘরে ঢোকে। জান্নাত গিয়ে শামাকে ধরে, মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,“কাদে না শামা।”

_ভাইয়া হাওলাদার বাড়ির ওপর রাগ আমার ওপর ঝাড়লো ভাবী।
কাঁদতে কাঁদতে হাঁপাতে হাঁপাতে শামা বলে,নাক বেয়ে সর্দি ঝরছে তার।

রুহী ফোন নিয়ে ঘরে ঢুকে সোজা বেলকোনিতে চলে যায়, তন্ময় কলটা রিসিভ করেই বলে,“ওদিকের অবস্থা কি?”

_সবার মাথায় খুব রাগ, শামাকে মারলো ভাইয়া।

তন্ময় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,“এতো মেজাজ গরম করার কি আছে বুঝি না, আরে চৌধুরী বাড়ির মেয়ে হাওলাদার বাড়ির বৌ হলেই তো মিলেমিশে জমিটা ভোগদখল করা যাবে,সিম্পল! এক কাজ করি? আমি কালই প্রস্তাব নিয়ে আসি।”

রুহীর ভালো লাগছিলো না তন্ময়ের ফাজলামি। সে কলটা কেটে দিয়ে পরশীর পাশে গিয়ে শুয়ে পরে। বারান্দায় তখন শায়নের গলা শোনা যায়, কাকে যেন ফোনে বলছে,“প্লিজ জান,কল কেটো না। বললাম তো ফোনটা সাইলেন্ট করা ছিলো। স্যরি!”
পরশী মুখে ওড়না চেপে হাসে সেসব শুনে।

শামিরের রাগের দ্বিতীয় শিকার ছিলো জান্নাত। শামাকে ঠান্ডা করে ওর চুল বেঁধে দিয়ে জান্নাতের ঘরে ঢুকতে দেরী হয়, শামির চেঁচিয়ে ওঠে,“কোন চুলোয় ঢুকে বসেছিলে? রাত এগারোটা বাজে, ঘরে আসতে মন চায়না নাকি?”

_শামার কাছে ছিলাম, কাঁদছিল।
ভয়ে ভয়ে জবাব দিয়ে দ্রুত বিছানা ঠিক করে,পিল খেয়ে শুয়ে পরে জান্নাত। শামির একের পর এক সিগারেট শেষ করেছে বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে, মাথাটা ঠান্ডা হচ্ছিল না তার। পঁয়তাল্লিশ লক্ষ টাকা মুখের কথা না। রাগে কিছুক্ষণ নিজের চুল টানলো, তারপর এসে শুয়ে পরলো জান্নাতের পাশে। জান্নাতকে ঘুরিয়ে নিয়ে তাড়াহুড়া লাগিয়ে কাছে টানলো আজ, মাথাটা একটু হালকা করতে হবে। জান্নাতের অস্বস্তি হচ্ছিল,তবে বাঁধা দেওয়ায় সাহস পেলো না,লোকটার মেজাজ ঠিক নেই আজ, আতঙ্কে নিশ্চুপ হয়ে রইল পুরো মেয়েটা। শামির জান্নাতের ব্লাউজের বোতাম টানাটানি করে খুলতে না পেরে বিরক্ত হয়ে রেগেমেগে বলল,“ধ্যাত্তেরিকি! একটু সাহায্য তো করতে পারো? সব শিখিয়ে দিতে হয়? ননসেন্স।”

টানাটানিতে বোতামটাই ছিরে ফেললো। তৎক্ষণাৎ জান্নাতের চোখে পানি এলো, আলগোছে মুছেও নিলো একহাতে।

চলমান….

#জায়া_ও_পতি
#পর্ব_১৪
#ইসরাত_ইতি

[ ২য় অংশ ]
সকাল বেলা চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙে জান্নাতের। ধড়পড়িয়ে উঠে বসে দেখে শামির পাশে নেই, ঘড়িতে সময় দেখে, সকাল নয়টা। এতো বেলা অবধি ঘুমিয়েছে সে! ফজরের নামাজ পড়া হয়নি। নিজেকে নিজে বকা দিয়ে জান্নাত দ্রুত গোসল সেরে ভেজা চুল ঘোমটার নিচে ঢেকে ঘর থেকে বেরোয়, পরশীর সাথে দোতলার করিডোরে দেখা হলে পরশী বলে,“আপু মাঈমা যেতে দিচ্ছেন না,আজ বিকেলে কিন্তু আমি যাবোই।”

_পরশী কিসের শব্দ এতো? তোর দুলাভাই কাউকে বকছে?

_জানিনা আপু, আমাদের মেয়েদেরকে বাইরে যেতে বারণ করেছে দুলাভাই, সম্ভবত পেছনের ঐ বাড়িটার সাথে ঝামেলা।

সকাল বেলাতেই ধুন্ধুমার লেগে গিয়েছে, হাওলাদার বাড়িতে তন্ময়, মেধার বাবা মোশাররফ হাওলাদারের নির্দেশে তার বড় দুই ছেলে তায়েফ আর মারুফ ওই এক শতাংশ জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে মালিকানার। শুধু তাই নয়,কোথা থেকে ঢোল যোগার করে বাজাচ্ছে, এলাকায় মাইকিং করে ঘোষণা করছে শুধুমাত্র শামিরদের খোচাতে।

শামির স্থির হয়ে থাকতে পারেনি, তীব্র ক্রোধ নিয়ে বাইরে গিয়ে গালি দিয়েছে তায়েফ আর মারুফকে,ব্যস অমনি ঝামেলা লেগে গেলো। মেয়েরা কেউ ঘর থেকে বেরোয়নি। সবাই দোতলায় গিয়ে বারান্দা থেকে দেখছে পুরুষদের ঝগড়া। মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া, দু’পাশে দুই বাড়ির লোক। জান্নাত গিয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে মেধাকে খুঁজছে, মেধা আপু তার এনজিওর কাজে ঢাকা গিয়েছিলো শুনেছে,ফেরেনি সম্ভবত।

শারাফাত তর্ক করছে মোশাররফের সাথে, তায়েফের সাথে রাজন আর শামির তর্ক করছে মারুফের সাথে। চেঁচামেচিতে অন্যসবার কথা স্পষ্ট না শোনা না গেলেও শামির আর মারুফের তর্কাতর্কি শোনা যাচ্ছে। শামির বলছে,“সাহস থাকলে কাঁটাতারের এপাশে এসে কথা বল।”
মারুফ বলছে,“তোর সাহস থাকলে তুই আয়।”

দুই পক্ষ থেকে শায়ন আর তন্ময় সবাইকে থামানোর চেষ্টা করছে,তবে কেউই থামছে না। জান্নাত শাশুড়ির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়,মুখটা মলিন করে বলে,“মারামারি করবে না তো আম্মা?”

_জানি না বৌমা,আমার আর ভালো লাগছে না।

সুহানা গিয়েছিলো রাজনকে বোঝাতে,সেও ধমক খেয়ে ঘরে এসেছে। রুহী অবস্থা বেগতিক দেখে ফোন নিয়ে ছুটে যায় আড়ালে,কল করে তন্ময়কে। তন্ময় রুহীর কল পেয়ে আড়ালে গিয়ে কলটা রিসিভ করে বলে,“এখন ফোন দিচ্ছো কেন?”

_আচ্ছা তোমার বাবা ভাইয়েরা এতো টক্সিক কেন তন্ময়? মামলায় জিতেছে ভালো কথা। এতো উৎসব করতে হবে কেন? শুধুমাত্র আমার পরিবারকে জ্বালানোর জন্য।

_এখন এসব বলার সময় রুহী? দেখছো আমি থামানোর চেষ্টা করছি। তোমার বাবা ভাইয়েরাও কম টক্সিক নয় রুহী, সেটা ভুলো না। রাখো।

তন্ময় হুট করে কল কেটে দিলে রুহী মুখ ফুলিয়ে থাকে। ওদিকে আরেক কান্ড তখন। কাঁটাতারের মধ্যে থেকেই শামির আর মারুফ একে অপরের কলার চেপে ধরেছে। কাউকে সরিয়ে আনা যাচ্ছিল না। জান্নাত তখন দৌড়ে নিচে গেলো, ওর শাশুড়ি পেছন থেকে এতো ডাকছে,ও শুনলোই না। সদর দরজা খুলে সোজা ছুটলো বাগানে। শশুর ভাসুরের রাগী দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়ে শামিরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে শামিরকে ধরে টানলো, মিহি স্বরে ডাকলো,“বাড়িতে চলুন, ওনার কলার ছাড়ুন।”

শামির মারুফের কলার থেকে হাত সরিয়ে হতভম্ব হয়ে জান্নাতের দিকে তাকায়, মুহুর্তেই চেঁচামেচি থেমে যায়। হাওলাদার বাড়ির পুরুষ গুলো ড্যাবড্যাব করে জান্নাতকে দেখে, শামিরের বৌকে তারা এই প্রথম দেখলো।
শামিরের চোয়াল শক্ত হলো, আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে গটগট করে হেঁটে সে অন্দরমহলে ঢুকলো গিয়ে।
রাজন আর শারাফাতও চলে গেলো। শায়ন এসে জান্নাতকে বলে,“তুমি এলে কেন ভাবী? এবার ভাইয়ার বকা খাবে।”

জান্নাত জানতো সে বকা খাবে,সে প্রস্তুতও। মাথার ঘোমটা টেনে সোজা অন্দরমহলে ঢুকতেই শামির চেঁচায়,“কতবড় সাহস তোমার। একটা কথা বললে মাথায় থাকে না নাকি?
বেয়াদব! ওখানে কেনো গিয়েছিলে ফাজিল? ও বাড়ির দামড়া ছেলেগুলোকে এই মুখটা দেখাতে?”

ধমকে ধমকে কেঁপে উঠে চোখ মুখ খিচিয়ে নেয় জান্নাত, তবুও বলে,
_আপনি মারামারি করতেন যে!

_তো?

_থানাপুলিশ হতো!

বলেই জান্নাত ভয়ে কাঁপছে। শামির ওকে দেখছে, চোখদুটো লাল হয়ে আছে রাগে, নিজেকে বহু কষ্টে সামলায় সে, অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে জান্নাতকে বলে,“ফের এমন ফাজলামি যেন না দেখি। ছোটো ছোটোর মতো থাকবে।”

বলেই এক ঝটকায় জান্নাতের হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যায় দোতলায়।

জান্নাত চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে, হঠাৎ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পরশীর চোখে চোখ পরে তার। এতক্ষণ আপুকে বকা খেতে দেখে মনটা ছোটো হয়ে ছিলো পরশীর। জান্নাতের চোখে চোখ রাখে না সে, ছুটতে ছুটতে ভেতরে চলে যায়।

______

পিকপিক আওয়াজ তুলে ফোনটা লাগাতার বেজে চলেছে। রুহী উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা তখন, সারাদিন রুহী এভাবেই শুয়ে ছিলো। তন্ময়ের ফোনটা রিসিভ করেনি। আজ হাওলাদার বাড়ির তায়েফ আর মারুফ ভাইয়ার জন্য মেজো ভাবীকে বাড়ির সবার সামনে বকলো ভাইয়া। যদি না ওনারা উৎসব করতো, না তো ভাইয়া ওদের সাথে ঝগড়া করতে যেত, না তো জান্নাত কাঁটাতারের বেড়ার ওখানে যেতো ভাইয়াকে থামাতে। মনটা বিক্ষিপ্ত রুহীর ভীষণ, তন্ময়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না।
সাইত্রিশ বারের বার রুহী কলটা রিসিভ করতেই তন্ময় ওপাশ থেকে রেগে মেগে বলে,“চুপচাপ ছাদে আয় রুহি!”

_তুমি?

_ছাদে আয়।

কল কাটে তন্ময়। উঠে বসে রুহী, ভয়ে তার হাত পা কাঁপছে। ভাইয়ারা বাড়িতে থাকলে আজ রুহী শেষ। দ্রুত মাথায় ওড়না টেনে ঘর থেকে বেরিয়ে সুহানাকে বলে,“বড় ভাইয়া কোথায় ভাবী?”

_অফিসে।

_আর মেজো ভাইয়া?

_সেও অফিসে, আজ তো ওরা ঢাকা যাবে,নয়টায় লঞ্চ। তার আগে কিছু ইমার্জেন্সি কাজ সেরে আসতে গিয়েছে।

_ছোটো ভাইয়া?

_শায়ন ফুটবল খেলতে গিয়েছে স্টেডিয়াম, ফেরেনি এখনও।

রুহি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে ছাদে ওঠে, ছাদের দরজা খুলে বাইরে পা রাখতেই তন্ময় হ্যাঁচকা টানে ওকে কাছে নিয়ে ছাদের দরজা লাগিয়ে দিলো।
চোখ দুটো বড় বড় করে রুহী ঘনঘন শ্বাস ফেলে। ওর দিকে তাকিয়ে আছে দু’টো রাগী চোখ, তন্ময় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,“ফোন ধরছিস না কেন?”

রুহী নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,“তুই তোকারি করছো কেন?”

_কেন? পিচ্চিকাল থেকে তো তুই করেই বলতাম, তুমি করে তো চারদিন হয় বলছি।

_এখানে কেনো এসেছো? মরতে চাও?

_ফোন ধরিস না কেন? এতো ঝামেলা দেখে ব্রেকাপ করার কথা ভাবছিস নাকি আমার সাথে?

রুহীর চোখে পানি আসে। নাক টেনে বলে,“কিচ্ছু হবে না তন্ময়। দেখলে আজ কি হলো? জানাজানি হলে খুনাখুনি হবে শিয়র!”

_তো? এখন ন্যাকামি করিস? সম্পর্কে জড়ানোর আগে মাথায় ছিলো না?

_তো তুমিই তো হাত ধুয়ে আমার পিছনে পরে ছিলে।

_হ্যা সেটাই! তোকে আমার লাগবে। শোন রুহী, ব্রেক আপের কথা ভাবলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। তোর পেছনে আমার পাঁচ বছর চারমাস গিয়েছে, আমার ঐ সময়গুলোর হিসেব আমি বুঝে নেবো খুব ভালো করে। আমি কিন্তু অতটা ভালো ছেলে নই মাথায় রাখিস!

_এমন গুন্ডাদের মতো কথা বলছো কেন?

_মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে আমার, সারাটা দিন আমার ফোন ধরিস নি। এখন একটা চুমু দিয়ে যা।

রুহী কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে আছে। তন্ময় রাগী রাগী মুখ করে রাখে কিছুক্ষণ, তারপর হেসে ফেলে।

ওর বুকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে মারতে চাপা কান্নায় ভেঙে পরে রুহী , তন্ময় ওকে সামলায়,“এই মজা করেছি আমি,কিছু দিতে হবে না। শান্ত হও।”

খানিক বাদে রুহী শান্ত হয়ে বলে,“কেউ মানবে না তন্ময়। ভাইয়ারা আমাকে মেরে ফেলবে।”

_কারো মানতে হবে না।

_পালাবো?

_তো এটাই তো কথা ছিলো?

_কোথায় যাবো।

_বাবা ভাইয়ারা আমাকে ব্যবসায় রাখবে না শিয়র, কিক মেরে তাড়িয়ে দেবে,তাই জব খুজছি আগে ভাগেই। তুইও মন দিয়ে পড়াশোনা কর। দু’জনে জব করবো, চাপ কম হবে।

কথাটা শুনে রুহী হাসছে খিলখিল করে। ঠিক তখনই ছাদের দরজায় ধাক্কা পরে, ওপাশ থেকে জান্নাতের কন্ঠ শোনা যায়,“রুহী আপু তুমি ছাদে?”

কিছুক্ষণ আগে পরশীকে এসে নিয়ে গিয়েছে শাহীন আকন্দ, জান্নাত এতক্ষণ নিচে ছিলো, দোতলায় উঠে সব গোছগাছ করে রুহীর খোজে ছাদে চলে আসে।

তন্ময় চুপ করে রুহীকে ধরে রেখেছে, রুহি তোতলাতে তোতলাতে বলে,“হ্যা ছাদে আমি।”

_দরজা খোলো।

_মাথা ধরেছে আমার। একটু একা থাকবো ভাবী। আর তুমি এতো সময়ে অসময়ে ছাদে আসো কেন হ্যা? এতো ছাদে কি তোমার? ভাইয়াকে বলে বকা খাওয়াবো, যাও এখন।

জান্নাতের মুখটা মলিন হয়, অভিমানের সুরে বলে,“হ্যা,আমাকেই পেয়েছো সবাই। কপাল আমার।”

জান্নাত চলে গেলে তন্ময় রুহীকে ছেড়ে দেয়,“আমি চলে যাচ্ছি। তুমি যাও, বেচারীকে ভাই বোন সবাই মিলে খুব কষ্ট দাও।”

তন্ময় ছাদের পাইপ বেয়ে নেমে যায়, রুহী চলে আসে জান্নাতের ঘরে। জান্নাত মুখ বেজার করে শাড়ি পরছিলো, শামির কল করে বলেছে রেডি হতে।

রুহীকে দেখে জান্নাত মুখ ঘুরিয়ে নেয়, রুহি গিয়ে পেছন থেকে ভাবীকে জরিয়ে ধরে বলে,“রাগ করেছো?”

_না তো!

জান্নাতের শাড়ির কুচি ঠিক করে দিতে দিতে রুহি বলে,“তুমি জানো ভাবী আমি তোমাকে কতটা পছন্দ করি?”

জান্নাত হাসে,হেসে বলে,“জানি।”

সবকিছু গোছানোই ছিলো, রুহী আরো একবার সবকিছু চেক করে দেখলো, এরপর সুহানাকে ডাকলো, সুহানা ঘরে আসে হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে,এসে জান্নাতকে বলে,“জান্নাত এটাও নিয়ে যাও।”

_এটা কি?

_খুলেই দেখো।

জান্নাত প্যাকেটটা খুলে দেখে,পর পর গাল দু’টো লাল হয় লজ্জায়,কান দুটো গরম হয়।

সুহানা বলে,“হানিমুনে যাচ্ছো। চুটিয়ে প্রেম করবে বরের সাথে, বরকে খুশি করতে যা যা করতে হয় করবে, এই নিড়িবিলি সময়টা কাজে লাগাবে, ধীরে ধীরে কৌশলে রাগী বরকে হাতের মুঠোয় আনবে, যাতে তোমার কথায় উঠবোস করে।”

_এসব পরলে বুঝি বর হাতের মুঠোয় চলে আসে?

রুহী জান্নাতের কাঁধ চেপে বলে,“না, বর রোমান্টিক হয়। হানিমুনে এসব পরে,তবে বাইরে পরে বেড়িও না আবার, খুন করে ফেলবে তোমার বর।”

বলতে বলতে রুহী হাসে । জান্নাতও শুকনো হাসি দেয়। রুহী জান্নাতের গালে হাত রেখে বলে,“ভাইয়া সকালে এতো বকলো বলে এখনও মন খারাপ?”

দু’পাশে মাথা নাড়ে জান্নাত। রুহী ভাবীকে জরিয়ে ধরে,“যাও। কটা দিন আনন্দ করো, আ’ম শিয়র ভাইয়া অন্তত হানিমুনে নিয়ে গিয়ে বকাঝকা করবে না। আর বকা দিলে টকাশ টকাশ করে চুমু দিয়ে দেবে। চুটকিতে রাগ পরে যাবে। আমি ভাইয়ার ফুরফুরে মুড খুব কমই দেখেছি,তবে যখন হাসে মন খুলে, কি যে ভালো লাগে!”

লঞ্চ নটায় ছাড়বে। শামির আটটায় এসে জান্নাতকে নিয়ে গেলো, ওদের সাথে বড় দু’টো লাগেজ। ঢাকা পৌছে সব বন্ধুরা মিলে সেখান থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে,এমনটাই পরিকল্পনা করা।

শামির একটা ভিআইপি ফ্যামিলি লাউঞ্জ বুক করেছে, তিনতলায়। লঞ্চঘাট অবধি শায়ন ওদের পৌঁছে দিয়ে গেলো। জান্নাতের জীবনে এই প্রথম এতো বড় লঞ্চে ওঠা। এর আগে কখনো সে ঢাকা যায়নি।
কেবিনে ঢুকেই শামির প্রয়োজনীয় সবকিছু কেবিনবয়কে দিয়ে আনিয়ে রাখলো, লঞ্চ ছাড়লে কেবিনের দোর আটবে, এরপর আর খুলবে না।
জান্নাত দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি মেরে সবকিছু দেখছে । তিনতলা ভিআইপিদের, সাধারণ লোকসমাগম নেই। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে জান্নাত করিডোরের গ্রিল ধরে দাঁড়ায়, আশেপাশে আরো অনেক গুলো লঞ্চ।
ডানপাশে কিছুটা দূরে দু’টো ছেলে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুকছিলো,জান্নাতকে দেখেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে দুজনেই। শামির বুঝতে পেরেই জান্নাতুলকে ডেকে নেয় ভেতরে, জান্নাত গিয়ে চুপচাপ বেডে বসে থাকে,খানিকবাদে গাঁয়ের শাড়িটা পাল্টে একটা সুতি শাড়ি পরে নেয়। শামিরও শার্ট প্যান্ট পাল্টে জান্নাতের পাশে বসে, “নদী দেখতে বাইরে গিয়েছিলে?”

মাথা নাড়ে জান্নাত। লঞ্চ ততক্ষণে ছেড়েছে। শামির কাচ্চির প্যাকেট জান্নাতের হাতে তুলে দিয়ে বলে,“এখন দেখবে না, কুয়াশা পরছে। কাচ্চি খেয়ে ঘুমিয়ে পরো, রাত দু’টোর দিকে উঠিয়ে মেঘনা নদী দেখাবো।”

_এটা কি আপনাদের লঞ্চ?

_না, আমাদের লঞ্চ আমতলী টু ঢাকা রুটের। এটা খানদের।

খেয়েদেয়ে জান্নাত শুয়ে পরে, শামিরও কিছুক্ষণ ফোনে কাজ করে শোয়। কেবিনবয়কে ওয়ার্ন করে দিয়েছে শামির, সকালের আগে কোনোভাবেই যেন তাদের বিরক্ত না করা হয়।

রাত তখন আড়াইটার কাছাকাছি, জান্নাত ছিলো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ গায়ে হাত রেখে কেউ জোরে ধাক্কা দিচ্ছে টের পেয়ে জান্নাত, ধড়পড়িয়ে উঠে বসে,উঠে বসে চোখ বড় বড় করে দেখতে পায় শামিরকে। জান্নাত ঘাবড়ে গিয়ে বলে,“আপনি? কি হয়েছে?”
শামির হাপাচ্ছে, জান্নাতের গালে একটা হাত রেখে নিজেকে যথাসাধ্য ঠান্ডা রেখে বলে,“জান্নাতুল ঘাবড়াবে না। শোনো,লঞ্চে আগুন লেগেছে। আমার সাথে এসো।”

চলমান……