জায়া ও পতি পর্ব-২৬

0
2

#জায়া_ও_পতি
#পর্ব_২৬
#ইসরাত_ইতি

শামির জবাব দিলো,“আচ্ছা! খুব সাহসী হয়ে উঠেছো না? পারলে এই কাজটা করে দেখাও!”
________

জান্নাত ঐ কাজটা করতে পারবে না,শামিরের বিশ্বাস। তাই ভেবে শামির হাত ছাড়লো। তবে শামিরের বিশ্বাসকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে জান্নাত ভ্যানিটি ব্যাগ কাঁধে তুলে নিলো,ঐ অসুস্থ শরীরেও।

লবিতে লোকজন জড়ো হয়েছে চেঁচামেচি শুনে। মহসিন নিজের মেয়ের দুঃসাহস দেখে ভয় পাচ্ছে। এখন যদি জামাই রাগের মাথায় সত্যি সত্যি তালাক দিয়ে বসে তবে? তবে এই মেয়ের কি হবে?

“জান্নাত কইতাচি বাড়াবাড়ি হরিস না। একটা থাবড় দিমু!”

তেড়ে যায় মহসিন।

_দাও আব্বা। তুমি বাপ,তুমি থাপ্পড় দিবে,এই লোক স্বামী, এই লোক থাপ্পড় দিবে। দাও। আমার গাল দু’টো এই যে। দাও।

জান্নাতও এগিয়ে যায় মহসিনের দিকে। শাহিনুর ওর হাত ধরে টেনে বলল,“ঐ ছেড়ি। এতো গুমুর কেন তোর? এতো যে তালাক তালাক করতেছো! কে পুছবে এরপর তোরে? কিসের অভাব আছে তোর? জামাই রাগ করে, আবার ভালোও তো বাসে। অস্বীকার করবি?”

থামলো জান্নাত শাহিনুরের এই কথাটায়,ঘুরে তাকায় শামিরের মুখের দিকে। শক্ত চোয়াল,কঠিন দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখেই জান্নাত কাঁপা স্বরে বলে,“না অস্বীকার করবো কেন? আমি কি নেমক হারাম? ভালোবাসে তো। ওনার মতো করে ভালোবাসে। আমার চাইনা এতো ভালোবাসা।”

দুই পা কেবিনের বাইরে রাখবে অমনি শামির টেনে ধরলো জান্নাতকে। থরথর করে কাঁপছে জান্নাত। শামির এইবার নরম হলো, আর ঝামেলা না বাড়িয়ে হাঁফ ছেড়ে বললো,“রাগের মাথায় বলেছি এতো কথা জান্নাতুল, ওটা তো আমার বেবি ছিল! তোমাকে বুঝতে হবে!”

এবারো চোখ থেকে পানি ঝরিয়ে জান্নাত হাসলো অপ্রকৃতস্থের মতন,“হ্যা। ওটা যা ছিলো শুধু আপনারই ছিলো। ছাড়েন। ছাড়েন আমাকে।”

তানিয়া রহমান এসে জান্নাতের পাগলামি দেখলেন, দেখলেন শামিরের শক্ত করে জান্নাতের হাত ধরে রাখা। শামিরকে বুঝিয়ে বললেন,“এখন ট্রমাটাইজড। একটু এমন করবে। ওকে চাপ দিও না, জোর করো না, ধমকিও না।”

শামির তানিয়ার কথায় হাতের বাঁধন কিছুটা আলগা করতেই জান্নাত ওকে ধাক্কা মেরে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। গায়ে একটা সুতির শাড়ি আর কাঁধে ভ্যানিটি ব্যাগ। পায়ে নেই জুতা। হঠাৎ কি হয়েছে জান্নাত জানে না, ওর আশেপাশের এই মানুষগুলোকে খুব বিষাক্ত ঠেকছে ওর কাছে। এদের নিঃশ্বাসের ত্রিসীমানায় জান্নাত থাকবে না। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে আগুপিছু না ভেবেই জান্নাত খুঁজতে লাগল সিঁড়ি। লিফট জান্নাত ব্যবহার করতে পারেনা। ছয় তলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামবে সে, কোথায় যাবে জানে না।

সিঁড়িতে পা রাখতেই ওকে টেনে ধরলো শামির, চেঁচিয়ে উঠল,“জান্নাতুল। থামো! লোক দেখছে!”

জান্নাত লোকটাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো,“এটাও দেখুক।”

ওদিকে ব্লিডিং হচ্ছে খুব, জান্নাত পারছে না হাঁটতে। তবুও নিচে নামছে। শামির ওর পিছু পিছু নেমে আবার ওকে ধরলো,“যথেষ্ট করেছো জান্নাতুল। এখন আমার রেপুটেশন নষ্ট করো না এই ভাবে।”

আবারো ওকে সরিয়ে জান্নাত হাঁটতে শুরু করে বলে,“রেপুটেশন নষ্ট করেছি,তালাক দেন।”

_জান্নাত দাঁড়াতে বলছি। বেয়াদবির সীমা পার করছো।

_সে তো কখন করেছি, তালাক দেন।

শামিরের পিছু পিছু সবাই ছয় তলা সিঁড়ি বেয়ে নামছে। প্রতি তলায় নেমে মৃদু ধস্তাধস্তি হচ্ছে জান্নাতের শামিরের সাথে। শামির গাঁয়ের জোর দেখাচ্ছে না,নিচে নেমেই পাকড়াও করে গাড়িতে তুলবে এই তার পরিকল্পনা।

অ্যাপোলোর সামনে নেমেই জান্নাত দাঁড়িয়ে পরল, তার হুশ ফিরল এইবার। বাস্তবতা তো সবচেয়ে বড় শত্রু জান্নাতের। বাস্তবতা হচ্ছে,এই এতো রাতে জান্নাতের যাওয়ার কোনো যায়গাই নেই এই শহরে। এই শহরে কেনো? এই পৃথিবীতেই নেই। ও কই যাবে?

জান্নাতের জীবনের আরেকটা বাস্তবতা হচ্ছে, এই এতো রাতে যদি এই লোক জান্নাতকে ধরে নিয়ে যায়, জান্নাত জানে, কাল যখন এই লোক জান্নাতকে নরম আদরে দু’টো চুমু দিয়ে বলবে,“রাগের মাথায় করেছি অমন, আর রেগে থেকো না।” জান্নাত গলে যাবে, গলে গিয়ে আবার জান্নাত এই লোকের তোতাপাখি হবে। রান্না শেষে মাছের পেটির বড় পিসটা এই লোকের জন্যই আলাদা করে রাখবে। এই লোক দেড়ি করে বাড়িতে ফিরলে ছটফট করবে, রোজ রোজ ইচ্ছে না হলেও বিকালেও এই লোকের সাথে বিছানায় মিলিত হবে, তারপর যখন এই লোকের আরেকটা বাচ্চা জান্নাত নিজের জরায়ুতে বড় করবে, তখন জান্নাত হাওয়া খাওয়ার সুযোগ পাবে, তারপর হয়তো এক রাতে আদর করতে করতে বলবে,“এতকিছু শিখিয়ে দিতে হবে কেন? রেসপন্স কোথায়?”, আবার হয়তো বলবে,“এত বেশি বোঝো কেনো? ছোটো ছোটোর মত থাকো।”

উহু! ভাবতে পারছে না জান্নাত,আর কিছু ভাবতে পারছে না এই মুহূর্তে। পেট চেপে ধরে সে পার্কিং লটে,একটা বড় ফুলের টবের পাশে বসলো। শামির এসে জান্নাতের হাত ধরে টানে, জান্নাত মুখ তুলে তাকায় লোকটার দিকে, নিজের সাড়ে সাত মাসের দাম্পত্যের ছোটোবড় স্মৃতি,যা কিছু জান্নাতের মনে গেঁথে আছে সব মনে পরে যায়, চোখের সামনে ভাসে। লোকটার গাম্ভীর্য থেকে শুরু করে লোকটার আদর-যত্ন হয়ে সেই দৃশ্যপট এসে থামে লোকটার বর্বরতায়।

জান্নাত নিঃশ্বাস নেয় বুক ভরে, উঠে দাড়াতেই শামির ওর হাত ধরে গাড়িতে বসাতে চাইলে জান্নাত বসে না। খুব অভিমান বুক ভরা তার, এই লোক কেন ন্যাকামি বললো তার কান্নাকে? কেন বললো?

বাড়ির সবাই জমায়েত হয়েছে সেখানে। শামির এবার শক্ত হাতে টানছে জান্নাতকে। জান্নাত চেঁচামেচি যদিও থামিয়েছে, তবে জান্নাত যাবে না, এটাই তার শেষ কথা। যাবে না জান্নাত,গেলেই এই লোক রূপকথার দুষ্টু রাজার মতো তাকে খাঁচাবন্দি করবে, খাঁচাবন্দি করবে তার অনুভূতিকে। মন চাইলে প্রেম দেবে,মন চাইলে বর্বরতা দেবে। জান্নাত ক্লান্ত ওসবে।

আশেপাশে তাকায় জান্নাত, বাড়ির সবাই স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদের আর দোষ কি? কারো সাহস আছে এই লোকের মুখের ওপর কথা বলার?

শেষটায় বাধ্য হয়ে ছাড়লো শামির। সে মোটামুটি সুপরিচিত,সফল একজন ব্যবসায়ী বরিশালের। বৌ নিয়ে কোনো কেলেঙ্কারিতে জড়াতে ইচ্ছুক নয়। তাকায় সুহানার দিকে। সুহানা পাঁচ মিনিট আগেই মেসেজ পেয়েছে শামিরের। ওর শিখিয়ে দেয়া কথাটাই গিয়ে জান্নাতকে বোঝাতে চাইলো,“জান্নাত! এত রাতে কোথায় যাবে তুমি বলো? একটু শান্ত হও।”

_আমি রাস্তায় থাকবো।

_জেদ করে না জান্নাত, তোমার শরীর ঠিক নেই,মন ঠিক নেই।

_হ্যা হ্যা তাই। তাহলে মেনে নাও আমার জেদ। যেমন ভাবে মেনে নিয়েছো এই লোক আমাকে থাপ্পর মেরেছে এই অবস্থায়। সে সন্তান হারিয়েছে তাই যা খুশি করবে, বলবে। আমিও সন্তান হারিয়েছি তাই যা খুশি করবো, বলব।

এইবার লোকজন তোয়াক্কা না করে খেকিয়ে উঠলো শামির,“একটুও অনুশোচনা নেই তাইনা? আমার বাচ্চাটাকে খেয়ে এখন গলাবাজি? নেহাত ভালোবাসি,নয়তো আজ কেবিন থেকে ছয় তলা সিঁড়ি বেয়ে নেমে এই পর্যন্ত যা যা করেছিস, যদি তোকে ভালো না বাসতাম,আছাড় মেরে মেরে ঘিলু বের করে দিতাম ফাজিলের বাচ্চা। এই তুই ভাবিস কি আমাকে হ্যা? চিনিস আমাকে? আমি আগের শামির হলে তোকে কেবিনেই গেড়ে আসতাম।”

জান্নাতের চোখ ভরে উঠলো আবার জলে। মুখ চেপে ধরলো নিজের।

রাজন এবার ধমকে ওঠে শামিরকে,“শামির এখন থাম। ও ঠিক নেই,নয়তো জান্নাত কি এমন আচরণ করার মতো মেয়ে? একজন অন্তত থাম তোরা।”

মুখে আঁচল চেপে অন্যদিকে ঘুরে ফুঁপিয়ে কাঁদছে জান্নাত। আচমকা ভীষণ পেটে ব্যথা শুরু হয় জান্নাতের। পেটে হাত চেপে কাঁদতে থাকে। আর উদ্ভ্রান্তের ন্যায় বলতে থাকে,“ওটা আমারো বাচ্চা ছিল। আমারো বাচ্চা।”

রিজিয়া উদাস চোখে দেখছে ছেলে আর ছেলের বৌয়ের তামাশা। আশেপাশে লোক জড়ো হচ্ছে।

সুহানা জান্নাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,“জান্নাতুল ! এভাবে তালাক চাওয়া উচিত বলো? স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা তো হবেই, তালাক কি সবকিছুর সমাধান? শামির ভাইয়ার দোষ আছে জানি, তবে রেগে গিয়েও এসব বলতে নেই বোন। আল্লাহ বেজার হন তালাক দেখলে। তুমি বাড়িতে চলো, দুদিন মাথা ঠান্ডা করে ভাবো। দু’জন দু’জনকে দেখো। প্রয়োজনে বিছানা আলাদা করে সময় নাও। তবুও তালাক তালাক করো না।”

_কি দেখবো ওনাকে? সব তো দেখা হয়েই গিয়েছে আমার!

শামির রাগে কাঁপছে। প্রচণ্ড চেষ্টা চালাচ্ছে নিজেকে শান্ত রাখার। আশেপাশে যে লোক জড়ো হয়েছে তাদের মুখ দেখে ভেতরে ভেতরে শ্বাস ফেলে শামির। এই অপমানটাও তোলা থাক, এই আহাম্মক মেয়েকে এর শাস্তি সময় মতো ঠিক দেবে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সুহানার চোখের দিকে তাকায় সে, ঠান্ডা দৃষ্টিতে।

সুহানা তৎপর হয়ে জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে, ক্লান্ত জান্নাত সুহানার গাঁয়ের উষ্ণতায় ঢলে পরে।

“চলো, বাড়িতে যেতে হবে না। তবে এই শহরে কেউ কি আছে তোমার জান্নাত? এটা তো তোমাকে বুঝতে হবে। চলো আমার বাপের বাড়িতে যাবে। বরিশাল ইউনিভার্সিটির ওখানে আমার বাপের বাড়ি। তুমি চলো ওখানে থাকবে, আমিও যাবো তোমার সাথে।”

জান্নাত নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছে। সুহানা ওকে টানতে টানতে গাড়িতে নিয়ে বসালো। জোর করে, একটা কথাও বলতে দিলো না জান্নাতকে। রাজনকে বললো তাদের দু’জনকে পৌঁছে দিতে। গাড়িতে উঠে জান্নাত সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বসে থাকলো দু’চোখ বন্ধ করে, একটিবারের জন্যও শামিরকে দেখলো না, কেমন ঠান্ডা হয়ে আছে সে। শামিরও একই যায়গায়,একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে, চুপচাপ।

_________

সুহানার বাপের বাড়িতে সুহানার বৃদ্ধ বাবা মা থাকেন। সুহানার দুই বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। জান্নাত এখানে এসেছে পাঁচ ঘণ্টা হয়েছে। বিশাল বড় এই বাড়ির দোতলায় একটি নিস্তব্ধ কামরায় চুপচাপ শুয়ে আছে সে। সুহানা এসে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে গিয়েছে। কপালে রাবিং বাম ঘষে দিয়ে গিয়েছে। আপাতত শরীরটা আরাম পেয়েছে বিধায় একটু শান্তি শান্তি লাগছে,তবে সে শান্তি মনে নেই। বুকটা পুড়ে যাচ্ছে জান্নাতের। দু’চোখ ভরে উঠছে বারবার। ঐ ছোটো প্রাণটার কথা মনে করে। এই এতকিছুর মাঝে জান্নাতের জীবনে একটা জ্বলজ্বলে প্রদীপ হয়ে ধরা দিচ্ছিল সে। আজ যদি জান্নাত একটু সতর্ক থাকতো তবে ঐ প্রাণটা থাকতো। জান্নাত খুব ভালোবাসতো তাকে, তাকে নিয়েই একটা গোটা জীবন কাটিয়ে দিতো খুশি খুশি। নিজের প্রতি কষ্ট,হতাশা আর রাগে বিছানার চাদর চেপে ধরে ডুকরে কাঁদতে থাকে জান্নাত।

__________

একটার পর একটা সিগারেট শেষ করছে শামির, তখন রাত দু’টো প্রায়। কোনোভাবেই নিজের মনে জ্বলতে থাকা স্ফুলিঙ্গটাকে নেভাতে,দমাতে পারছে না। কি মনে করেছে ঐ মেয়ে? কত বড় সাহস হয়েছে ঐ মেয়ের শামিরের চোখে চোখ রেখে তালাক চায়। কেন? স্ত্রী কেনো তালাক চাইবে? স্ত্রী তখন তালাক চাইবে যখন স্বামীর দোষ থাকবে কিংবা স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পালনে অস্বীকার করবে। আর ঐ মেয়ে শামিরের জীবনে এসে এতো এতো আদর আর বিলাসবহুল জীবন পেয়েও তালাক চায়। ওর কতবড় সাহস। কোনটাতে খামতি রেখেছিল শামির সেটাই বুঝতে পারছে না সে, কি কম দিয়েছিল মেয়েটাকে? যে মেয়েটা আজ তার ভালোবাসায় আঙ্গুল তুলেছে!

শামির ভালোবাসে না বৌকে? এই মেয়ের প্রতি বিশ্বস্ত নয় শামির? এই মেয়ে তার শারীরিক চাহিদা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আজ? কি দোষ করেছে শামির? পুরুষ হিসেবে এড়ানো যায় যৌন চাহিদা? শামির কি করতো ওর কাছে না গিয়ে? বাইরের মেয়েদের কাছে যেতো? সেটা উচিত ছিলো? যতসব আহাম্মকের মতো কথা!
হাতের কাছে কম মেয়ে তো নেই শামিরের, হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় তাদের। শামির তো চোখ ফিরিয়েও দেখে না ওইসব মেয়েদের। তার মাথায় সবসময় থাকে তার ঘরে একটি বৌ আছে, যে তাকে ভালোবাসে,যাকে সে ভালোবাসে।
হ্যা সে ভালোবাসে বৌকে, ভালোবাসে বলেই তো শামির দু’জনের নামে একটা জয়েন্ট একাউন্ট খুলেছে। ভালোবাসে বলেই তো তার সব একাউন্টের নমিনি ঐ মেয়ের নামে করেছে। এসব ঐ মেয়েকে বলেনি কারণ এই মেয়ে জাতটা বান্দরের অনুরূপ। মাথায় তুললেই সর্বনাশ। এরা যদি পুরুষের নরম রূপটার গন্ধ পেয়ে যায় তবে নিজেকে মনে করে ভুবনের সম্রাজ্ঞী, কি থেকে কি করবে দিশা খুঁজে পায়না, তখন স্বামীকে বলে,“তুই আমার কুত্তা। গলায় শিকল পর।”

এই এতকিছু করেও শামির নাকি ওকে ভালোবাসে না, স্ত্রীর সব চাহিদা পূরণ করা, নিজের সবকিছুর অংশীদার করা, সবই তো করে শামির। একটা পুরুষ আর কিভাবে ভালোবাসবে? আর কিভাবে? সারাদিন পা চাটবে বৌয়ের? একটু ধমকাধমকি না হয় করতো শামির, সে তো জান্নাতের ভালোর জন্যই। ঐ মেয়ে বুঝলো না, তাকে পড়তে কেনো দেয়া হয়নি সেই জেদে গুমরে থেকেছে শুরু থেকে। অন্যকিছু তাই গায়েই মাখলো না। ভালো জিনিসও গাঁয়ে মাখলো না।

সিগারেটে মন ভালো হচ্ছে না শামিরের। আজ সবকিছু ঠিক থাকলে ক’মাস পরেই সে বাবা হতো। যখন থেকে জেনেছে সে বাবা হবে, নিজের প্রতিটা দায়িত্ব পালন করেছে নিখুঁত ভাবে। কত স্বপ্ন দেখেছে। ওসব কি শুধু বাচ্চাটার জন্যই করেছে? জান্নাতের জন্য মোটেও করেনি? বাচ্চাটা হয়ে গেলে কি জান্নাতকে তাড়িয়ে দিতো সে?
আর “আমার বাচ্চা,আমার বাচ্চা” বলবে না তো কি বলবে? ধর্ম,আইনে পিতারই তো অগ্রাধিকার বেশি সন্তানের পরিচয়ে। বাচ্চাটা তো শামিরেরই। বলবে না সে “আমার বাচ্চা”?

হাতের সিগারেটটা ফেলে পায়ে পিষে দেয় শামির। এখানে,এই নদীর পারে এসেছে পাঁচ ঘণ্টা হয়েছে। শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে শামিরের বাড়িতে পাঠিয়েছে। তার পরিকল্পনা ছিল আজ রাতে গিয়েই ঐ মেয়েকে ধরে বেঁধে নিয়ে আসবে সুহানার বাপের বাড়ি থেকে, তবে যায়নি। একটু সময় দিয়েছে, শামির দেখতে চায় ঐ মেয়ে ঠিক হয় কিনা,আজ রাতটা পার হোক। দ্বিতীয় বার যদি শামির দেখে ঐ মেয়ে তালাক চেয়েছে তবে শামির কি করবে সে জানে না।

বৌটা বড্ড আদরের শামিরের কাছে, এই মেয়ের মধ্যে তাই পেয়েছে যা সে চায়। এই মেয়ের মতো উপযুক্ত মেয়ে নেই তা শামির জানে। হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো! সবকিছুই যে ঐ মেয়ের বেশি বোঝার কারণে,উড়ু উড়ু মনের কারণে এটা কে বোঝাবে ঐ মেয়েকে। আরে তুই মেয়ে, তুই কেন পাখির মত মন নিয়ে চলবি? তোর দরকার টা কি এতো?

এসব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ শামিরের মনটা বিষন্ন হয়। সে মানতে নারাজ তার মধ্যে খামতি আছে। কখনোই না। সে কোথায় মদন বানিয়ে রেখেছে জান্নাতকে? জান্নাতকে সে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দেয়। ঘরে কোন রং পেইন্ট করা হবে এটা জান্নাতের মতের ওপর নির্ভর করে করা হয়, এই শুক্রবার কি রান্না হবে সেটাও জান্নাতের মতের ওপর নির্ভর করে হয়, বেডশিট কোনটা বিছানো হবে সেটা তো জান্নাতই ঠিক করে। সংসারের ছোট ছোট গৃহস্থালি পরামর্শ শামির নেয় জান্নাতের থেকে। একটা মেয়ে সংসারে আর কি চায়? আর কি স্বাধীনতা চায়? তাকে পুরুষের সমকক্ষ হতেই হবে? পড়াশোনা করে, চাকরি করে দুনিয়া উল্টানোর নাম করে সামাজিক অরাজকতা তৈরি না করলেই নয়?

তুই মেয়ে! তুই সংসারটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবি,আরামে থাকবি। তোর কেন এতো বেশি বুঝতে হবে? চাইতে হবে?

ঘনঘন শ্বাস ফেলে শামির,কত বড় বেকুব হলে স্বামীর চাহিদা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এই গর্দভ। ওকে কি সবসময় ভোগ বস্তুই ভেবেছে শামির? না, উল্টো স্ত্রী হিসেবে আগলে রেখেছে, সুবিধা অসুবিধা সবসময় খেয়াল রেখেছে। সারাদিন যৌন বাসনা নিয়ে পরে তো থাকে না শামির। শারীরিক মিলনে সবসময় তুষ্টি পায়না শামির এই মেয়ের থেকে,কই শামির তো এসব নিয়ে কিচকিচ করে না! এসব ধরে বসে থাকে না!
জান্নাতের ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে সে নিজে গিয়ে হট ওয়াটার ব্যাগ এনে বৌয়ের সেবা করেছে। শুধু নিজেরটা তো শামির কখনো ভাবেনি! অসুখ বিসুখ করলে হেলা করে রাখেনি,চুটকিতে ডাক্তার দেখিয়েছে।
এসব ভুলে গিয়েছে ঐ মেয়ে? আর শুধু মনে রেখেছে শামির ওকে ধমকায়, মারে, এসব!

শামির রাগ উঠে গেলে দু একটা চড় থাপ্পড় না হয় মেরেছে, তাতে কি হয়েছে? দোষ করেছে বলেই তো মেরেছে! এমনিতে আদর করে না? জান্নাত ব্যথা পেলে শামির কখনো অবহেলা করেছে এটা বলতে পারবে ঐ মেয়ে? স্বামীকে খুঁচিয়ে রাগিয়ে দিয়ে চ’ড় খাবে আবার স্বামীর দিকেই আঙ্গুল তুলবে?

দেবে না শামির তালাক, শামিরও দেখবে ঐ মেয়ে কিভাবে তালাক নেয়। ঐ মেয়ের ক্ষমতা দেখবে, দেখবে কোন আদালত থেকে তালাক নেয় ঐ এক রত্তি মেয়ে। একটু সুস্থ হোক ঐ বেয়াদব টা, ঠ্যাং ভেঙে বাড়িতে বসিয়ে রাখবে তবুও শামির তালাক দেবে না।

মানুষ হাসবে শুনলে,বলবে শামির চৌধুরী বৌ রাখতে জানে না। কিন্তু এটা তো মিথ্যা। সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি কথা।

চলমান……..