জারুল ফুলের কাব্য পর্ব-১৮+১৯

0
7

#জারুল_ফুলের_কাব্য
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:১৮]

‘রান্না করতে গিয়ে মায়ের হাত পুড়ে গিয়েছে’ খবরটা পেয়ে আর এক মুহূর্তও দেরি না করে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সোজা বাড়ি চলে এলো তৈমূর।অন্দরমহলে মাকে বসে থাকা অবস্থায় দেখতে পেয়েই পাশে এসে বসলো সে। পরিচিত ডাক্তার তখন শাহানার ক্ষত স্থান পরিষ্কার করে সেখানে করে দিচ্ছেন ব্যান্ডেজ। শাহানা চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে আছেন সোফায়। ছেলের উপস্থিতি টের পেয়েও চোখ খুললেন না তিনি।জয়নব এবং বশির উদ্দিনও ওখানেই বসা। তৈমূর ডাক্তারের উদ্দেশ্যে প্রথমে প্রশ্ন ছুঁড়লো,“বড়ো ধরণের কিছু হয়েছে ফাহাদ ভাই? হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে?”

“না, তেমন সিরিয়াস নয়। গরম ভাতের মাড় পড়ে আঙুল থেকে শুরু করে তার পার্শ্ববর্তী এরিয়া পুড়ে গেছে। আমি ড্রেসিং করে দিয়েছি, ব্যান্ডেজটা আপাতত দুদিন থাক। তারপর জ্বালা কমলে ব্যান্ডেজ খুলে পরিষ্কার করে ওষুধ লাগিয়ে দিও। প্রেসক্রিপশন দিয়ে যাবো, সেই মাফিক ওষুধগুলো আনলেই হবে।”

তারপর শাহানার উদ্দেশ্যে বললেন,“এই বয়সে এসব ভারি কাজকর্ম করা উচিত নয় চাচী। দেখলেন তো কী একটা অঘটন ঘটলো?”

শাহানা এবার সোজা হয়ে বসলেন। আড়চোখে পুত্রের পানে একপলক তাকিয়ে আফসোস করে বললেন, “কী আর করবো বাবা? বসে বসে খাওয়ার মতো আরামের কপাল তো আমার নেই। নইলে কী আর এই বয়সে রান্নাঘরে ঢুকতে হয়? পেট যে মানে না।”

জয়নবও তাল মেলালেন জায়ের সাথে,“ঠিকই তো। দুই দুইডা পোলা জন্ম দিয়া বাড়িত বউ আনার পরেও রান্না কইরা খাইতে হয়! এর থাইক্কা আল্লাহ আমারে পোলা না দিয়াই ভালা করছে।”

মা, চাচীর কথা শুনে ভারি অবাক হয় তৈমূর। ডাক্তার বশির উদ্দিনের হাতে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিয়ে ফি নিয়ে বিদায় নেন। বশির উদ্দিনও প্রেসক্রিপশন হাতে চলে যান ওষুধ আনতে। তখনি ভেতরে প্রবেশ করে উথমী। ফোনকলে দারোয়ান ফজলুলের কাছ থেকে শাশুড়ির দুর্ঘটনার খবরটা পেতেই প্রিন্সিপালের থেকে ছুটি নিয়ে সে চলে এসেছে বাড়ি। স্ত্রীকে তখনও দৃষ্টিগোচর হয়নি তৈমূরের। তার দৃষ্টি মায়ের ব্যথাতুর মুখপানেই নিবদ্ধ। এবার মায়ের উদ্দেশ্যে সে প্রশ্ন ছুঁড়লো,“আপনি রান্নাঘরে কেনো গিয়েছিলেন আম্মা? কে বলেছে আপনাকে রান্না করতে?”

পুত্রের প্রশ্নে তেতে উঠলেন শাহানা। রুক্ষ স্বরে উত্তর দিলেন,“তো কী না খেয়ে বসে থাকবো? রান্না করতে তেমন সমস্যা হয়নি। সমস্যা হয়েছে মার গালতে গিয়ে। হাত পিছলে কীভাবে যে পড়ে গেলো?”

“সেদিনও আপনি রান্না করতে গিয়েছেন কিন্তু কিছু বলিনি। আর আজকে গিয়ে তো একটা অঘটনই ঘটিয়ে ফেললেন। বড়ো কিছু হয়ে গেলে? তখন কী হতো?”

“কী আর হতো? মরে যেতাম। অন্তত ছেলে আর ছেলের বউদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকতে হতো না।”

মায়ের কথায় বুকটা যেনো চৌচির হলো তৈমূরের। আহত কণ্ঠে বললো,“আম্মা! কী বলছেন এসব?”

“তো কী বলবো? তিনবেলা খাওয়ার পর আমায় যে ওষুধ খেতে হয় তা তুই আর তোর বউ জানিস না? দুপুরে ভাত ছাড়া আমার চলে? কিন্তু তুই তো আবার চাকরি করা মেয়ে বিয়ে করে এনেছিস। যাকে কিনা কিছুই বলা যাবে না। আর সেও ঘরের কোনো কাজকর্ম করতে পারবে না। এমনকি অসুস্থ শাশুড়ির জন্য রান্না করতেও তার অসুবিধে। তো নিজে রান্না না করে আমি আর কী করবো?”

চমকের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলো তৈমূরের। পুনরায় শুধালো,“উথমী দুপুরের জন্য রান্না করে যায়নি?”

কোনো উত্তর দিতে পারলেন না শাহানা। তৎক্ষণাৎ জয়নব মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলেন,“বেশি শিক্ষিত আর উঁচু বংশের মাইয়া বিয়া কইরা আনলে এমনই হয়। সংসারে অশান্তি লাইগাই থাহে। আইজ মায়ের পছন্দে বিয়া করলে রোজ রোজ সংসারে এমন ঝামেলা হইতো না।”

এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সমস্ত কথাই শ্রবণাতীত হয়েছে উথমীর। এবার এগিয়ে এলো সে। উঁচু কণ্ঠস্বরে প্রতিবাদ করে বললো,“আমার অবর্তমানে তো ভালোই কথা লাগাতে পারেন চাচী। তা সকাল, রাত দুইবেলা আপনার জন্যও রান্না করে যে ঘরে দিয়ে আসি সেকথা তো বললেন না? আপনাকে রান্না করে খাওয়ানো কী আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে?”

কথাগুলো কর্ণকুহর পর্যন্ত পৌঁছাতেই হকচকিয়ে গেলেন জয়নব। উথমীকে দেখে ভীষণ চমকালেন। উনার মতো তৈমূর আর শাহানার দৃষ্টি গিয়েও পড়ল সেদিকে। উথমী পুনরায় বললো,“বিয়ে হয়ে এ বাড়িতে আমি এসেছি অর্ধ বছরও হয়নি। ওদিকে আমার বড়ো জা আলাদা থাকেন তারও বছর পাঁচেক আগে থেকে। তা এতোদিন তিনবেলা কে রান্না করেছে? সেসব বাদ দেই। বিয়ের পর থেকে সকালের রান্না এবং রাতের রান্নাটাও আমিই করি। দুপুরের রান্না সকালে করে যাওয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া বিনা পয়সায় আমি কারো কাজের লোক নই যে বাড়ির সব কাজকর্মও করবো আবার চাকরিও করবো। মালতী ফুফুই আগে তিনবেলা রান্না করতেন আর আমি আসার পর এখন উনি শুধু দুপুরে করেন। তাহলে উনি কোথায়? উনাকে রেখে আপনি কেনো মাতব্বরি করতে গেলেন শাশুড়ি আম্মা?”

থতমত খেয়ে গেলেন শাহানা। উনার অবস্থাও ঠিক বড়ো জায়ের মতোই হলো। স্ত্রীর যুক্তিযুক্ত কথা শুনে হুঁশ ফিরলো তৈমূরের। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,“ঠিকই তো আম্মা, মালতী ফুফুই তো সবসময় রান্না করে আসছেন। উনি কোথায়? গতকাল রাত থেকে কোথাও দেখছি না। উনাকে বললেই তো হতো।”

গলা ঝাড়লেন শাহানা। বাহির থেকে গম্ভীর থাকার চেষ্টা করে বললেন,“মালতী নেই। তিথি তাকে নিজের সাথে নিয়ে গেছে, এখন থেকে মালতী ওখানেই থাকবে। তারপরেও তোর বউয়ের উচিত ছিলো রান্না করে যাওয়া। সংসারের কাজ করা কী তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?”

এবারও উথমীর সোজাসাপ্টা জবাব,“আমি আমার দায়িত্ব সঠিকভাবেই পালন করছি। তাছাড়া মালতী ফুফু যে উনার সঙ্গে যাচ্ছেন আপনি কিংবা আপা আমায় এই ব্যাপারে একবারও জানিয়েছিলেন? গতকাল ফিরেই তো আপনাদের জন্য কতগুলো পিঠে বানালাম। আবার টিফিন বক্সে করে আপাকে দিয়েও দিলাম, তখনও তো কিছু জানাননি। এমনকি সকালেও না। এতো বড়ো একটা সিদ্ধান্ত নিলেন অথচ একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না? আমি না হয় পর কিন্তু আপনার ছেলে তো আর নয়। এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার ছেলেকে অন্তত আপনার জানানো উচিত ছিলো। আমার জানামতে, মালতী ফুফু অনেক বছর ধরে আপনাদের বাড়িতে কাজ করছে।”

মুহূর্তেই যেনো কথার প্যাঁচে জড়িয়ে গেলেন শাহানা। উথমী আফসোসের সুরে এবার স্বামীর উদ্দেশ্যে বললো,“স্যরি টু সে, আমি একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি তৈমূর সাহেব। এই পরিবারে আপনার মা-বোনের কাছে আপনাদের দুই ভাইয়ের কোনো গুরুত্বই নেই। নইলে এমন একটা ঘটনা ঘটলো তা আপনাকে জানানো হলো না? এতো বছর মালতী ফুফুকে আপা বাড়ি নিলেন না অথচ আমি আসার পরেই হুট করে নিয়ে যেতে হলো? এই ব্যাপারে আমার আর কিছু বলার নেই। বাড়িতে আমারো মা আছে, ভাই-ভাবী আছে। কিন্তু আমার মাকে কখনো দেখিনি ছেলে কিংবা ছেলের বউয়ের সঙ্গে এমন আচরণ করতে।”

কথাগুলো বলে আর সেখানে দাঁড়ালো না উথমী। সোজা হাঁটা ধরলো সিঁড়ির দিকে। মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ পেলো। অধর বাঁকিয়ে বিড়বিড় করল, “সাংসারিক পলিটিক্সে একবার যখন ঢুকেই পড়েছি তখন আমিও এর শেষ দেখে ছাড়বো।”

ছেলের মুখভঙ্গি বদলাতে দেখে ভেতরে ভেতরে ভয় পেলেন শাহানা। বোঝানোর ভঙিতে বললেন,“তিথির বাড়ির কাজের মেয়েটার হাত মারার স্বভাব। বাড়ির অনেক জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছিল তাই মেয়েটাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছে। এখন এই যুগে ভালো, বিশ্বস্ত মানুষ কোথায় পাবে বল তো? তাই আমিই মালতীকে…..”

বাকি কথাটুকু উনাকে আর শেষ করতে দিলো না তৈমূর। চাপা স্বরে বললো,“চলুন আপনাকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে আসি আম্মা। এখন আপনার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। দুপুরের খাবার আমি বাইরে থেকে আনিয়ে নিবো।”

দ্বিমত করলেন না শাহানা। ছেলের কথায় সায় জানালেন। তৈমূর সাবধানে মাকে ধরে হাঁটা ধরলো ঘরের উদ্দেশ্যে। জয়নব অনেকক্ষণ আগেই সুযোগ বুঝে ত্যাগ করেছেন স্থান। ঘরে গিয়ে দরজায় খিল এঁটেছেন।

শাহানাকে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলো তৈমূর। ছেলের হাবভাব বুঝতে না পেরে অপরাধীর ন্যায় শাহানা শুধালেন,“তুই কী রাগ করেছিস তৈমূ? আসলে তিথি এমন করে বললো তাই আর না করতে পারিনি।”

বলবে না বলবে না করেও এবার এই প্রসঙ্গে মুখ খুললো তৈমূর,“এটা হচ্ছে বুবুদের ব্যক্তিগত সমস্যা আম্মা। মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না তো দুলাভাইকে গিয়ে খুঁজতে বলুক। মালতী ফুফুকে নিয়ে যাওয়ার অধিকার পেলো কোথায়? সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি উনি এ বাড়িতে কাজ করছেন। সেখানে বুবু চাইলো আর নিয়ে গেলো? আপনিই তো বলেন, আপনি নাকি গোটা একটা পরিবারের সব কাজ একা হাতে করেছেন। ছেলে-মেয়েদের বড়ো করেছেন তাহলে আপনার মেয়ে কেনো তা পারে না? এমন তো নয় আমার বউয়ের মতো বুবু চাকরি করে আর না তার বাড়িতে শ্বশুর-শাশুড়িসহ ভরা পরিবার। তার উপর ওরি, মিলি নিজেদের কাজ নিজেরাই করতে পারে। দুলাভাইয়েরও তেমন কোনো ঝামেলা নেই। তাহলে এই ছোট্ট একটা সংসার সামলাতে কিনা কাজের লোক লাগে? আজ একটা কথা বলতে আমি বাধ্য হচ্ছি আম্মা, আপনি পরের বাড়ির মেয়ের দোষ, খুঁত ধরতে গিয়ে নিজের মেয়েকেই সঠিক শিক্ষা দিতে পারেননি।”

কথাগুলো একদমে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো তৈমূর। ছেলের আচরণে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলেন শাহানা। চোখ বুজে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এমন একটা কাঁচা কাজ করে যে ছেলের চোখে খারাপ হয়ে যাবেন ব্যাপারটা যেনো কল্পনাতেই আনতে পারেননি তিনি।

বোরখা হিজাব খুলেই রন্ধনশালায় ঢুকে চুলায় নতুন করে ভাত বসিয়েছে উথমী। মেঝে পরিষ্কার করার জন্য বাথরুম থেকে পানি ভরা বালতি নিয়ে ড্রয়িং রুমের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় দেখা হয়ে গেলো তৈমূরের সাথে। শুধালো,“কোথায় যাচ্ছেন আবার?”

“বাইরে।”

“এখন আর কোথাও যেতে হবে না। ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি রান্না বসিয়েছি। বেশিক্ষণ লাগবে না।”

স্ত্রীর কথা শুনলো না তৈমূর। বললো,“রান্না শেষ হলে আম্মাকে খাইয়ে দিয়েন। বড়ো চাচা প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ নিয়ে এসেছে। তার থেকে ব্যথার ওষুধটাও খাইয়ে দিয়েন।”—–তারপর আর সেখানে এক মুহুর্তও না দাঁড়িয়ে অন্দরমহল পেরিয়ে সদর দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো সে।
_________

স্বল্প সময়ে কোনোমতে ভাত রেঁধে ডিম ভাজিটাই তৈরি করল উথমী। সকালের বেঁচে যাওয়া আলু ভাজিটাও প্লেটে যুক্ত করে খাবার নিয়ে ছুটলো শাশুড়ির ঘরে।

পূর্বের ন্যায় এখনো আধশোয়া শাহানা। খাটের উপরি অংশে মাথা এলিয়ে ঘুমে ঝিমুচ্ছেন। উথমী ভেতরে প্রবেশ করে হালকা কাশলো। বিছানার একপাশের ফাঁকা জায়গায় খাবারের ট্রে রেখে ডাকলো, “শুনছেন? এই যে শাশুড়ি আম্মা!”

এক ডাকেই চোখ মেলে তাকালেন শাহানা। ঝিমুনি ভাবটা মুহূর্তেই যেনো দূর হয়ে গেলো। সোজা হয়ে বসে পুত্রবধূর পানে একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলেন। উথমী তা লক্ষ্য করেও কোমল স্বরে বললো,“ডান হাতটাই তো পুড়িয়েছেন দেখছি। এ হাত দিয়ে তো মনে হয় না খেতে পারবেন, তা আমি কী খাইয়ে দিবো?”

সঙ্গে সঙ্গে চোখ রাঙিয়ে পুত্রবধূর পানে তাকান তিনি। বিড়বিড় করেন,“ফাজিল মেয়ে মানুষ।”

“কী বললেন? শুনতে পেলাম না।”

“কিছু না। নিয়ে যাও এসব, খাবো না।”

“আরেকবার ভেবে দেখুন। নিয়ে গেলে কিন্তু দুপুর থেকে শুরু করে সারারাত না খেয়েই থাকতে হবে। আর খাবার না খেলে ব্যথার ওষুধও খেতে পারবেন না। ব্যথার ওষুধ না খেলে হাতের ক্ষত স্থানও ঠিক হবে না। আর ক্ষত স্থান ঠিক না হলে কিন্তু হাতে পঁচন ধরবে। একসময় হয়তো শরীর থেকে সেই হাত আলাদা করেও ফেলতে হবে।”

কথাগুলো শুনে মনের ভেতরে ভয় হানা দিলো শাহানার। একসময় তা মুখশ্রীতেও ফোটে উঠলো। উথমী সেসব দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো। পুনরায় বললো,“ওদিকে আপনার ছেলেও তো বাড়িতে নেই যে আপনাকে খাইয়ে দিবে। কখন ফিরে না ফিরে তারও তো কোনো খবর নেই।”

“কোথায় গেছে তৈমূ?”

“জানি না, বলে যায়নি।”

এবার চিন্তায় পড়ে গেলেন শাহানা। কিছু একটা ভাবতে লাগলেন। উথমী উনার হাবভাব বোঝার চেষ্টা করল কিন্তু পারলো না। তাই যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়ে বললো,“আমি তবে চললাম। ঘুম পাচ্ছে খুব।”

আমতা আমতা করে তৎক্ষণাৎ পেছন থেকে বলে উঠলেন শাহানা,“পরে কিন্তু খাইয়ে দিয়ে খোঁটা দেওয়া যাবে না, চাপে পড়ে খাচ্ছি।”

জোরপূর্বক হাসি চেপে রেখে পিছু ফিরে উথমী। হাত ধুয়ে এসে ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে ভাত মাখিয়ে উনার মুখের সামনে ধরে। তারপর বলে,“ওসব খোঁটা দেওয়া, হিংসে করা, ঝগড়া করা, খারাপ আচরণ করা আমার স্বভাব বহির্ভূত। যে ভালো আচরণ করে আমিও তার সাথে ভালো আচরণই করি। আর যে খারাপ আচরণ করে তাকে গুণায় ধরি না।”

কথাটা সুঁচের মতো গায়ে বিঁধলো শাহানার। কিন্তু কিছু বললেন না। চুপচাপ খাবারগুলো গলাধঃকরণ করতে লাগলেন।

দুপুরের ভোজন শেষে ভাত ঘুম দেওয়া তিথিয়ার এক বদ অভ্যাস। মেয়েরা বাড়ি ফেরার আগ পর্যন্ত তার এই ঘুম চলতেই থাকে। তখন বিকেল চারটা। কলিং বেল বাজার শব্দ পেয়ে দরজার লুকিং গ্লাসে চোখ রেখে বাইরের মানুষটিকে দেখার চেষ্টা করেন মালতী ফুফু। সদা পরিচিত মুখখানা ওই ছোট্ট গ্লাস দিয়ে দেখতেই দ্রুত দরজাটা খুলে দেন তিনি। ভেতরে প্রবেশ করে তৈমূর। হেরফের না করে সোফায় গিয়ে গা ছেড়ে বসে। মালতী ফুফু দরজা আটকে দিয়ে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করেন,“এই অসময় তুমি এনে যে তৈমূ বাবা?”

“তো আর কী করবো ফুফু? এভাবে না জানিয়ে এখানে চলে এলেন কেনো? আমাদের ওখানে থাকতে কী আপনার কোনো অসুবিধে হচ্ছিল? অসুবিধে হলে আমায় জানাতেন।”

“না না বাবা, কীসের সমস্যা? তুমগো বাড়িতে তোমরা যেমনে আমারে সম্মান দিয়া রাখছিলা তাতেও কেউর অসুবিধা হওয়ার কথা?”

“তাহলে এভাবে এখানে চলে আসার কারণ কী?”

মুখটা মলিন হয়ে গেলো মালতী ফুফুর। অভিমানী স্বরে বললেন,“তিথি মায় চাইলো আর মেজো ভাবীও রাজি হইয়া গেলো। আমার আর কী করার আছে বাবা?”

“অনেককিছুই করার ছিলো ফুফু। ছোটো থেকেই ফুফু বলতে আপনাকে জেনে এসেছি।বলতে গেলে আপনিই আমাদের বাড়িটা সামলান। সেই অনুযায়ী আপনার একটা অধিকার রয়েছে। সে যাই হোক, বুবু কোথায়? বুবুকে ডেকে দিয়ে আপনি গিয়ে আপনার সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আসুন। বাড়ি ফিরে যাবো। এরপর যাতে এমন একটা ভুল আর না হয়।”

কথাটা শুনতেই মুখশ্রীর মলিনতা বিলীন হয়ে তাতে ঠাঁয় পেলো আনন্দ। ওখানে আর না দাঁড়িয়ে তিনি সোজা চলে গেলেন তিথিয়ার ঘরে। তিথিয়া কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। মালতী ফুফু আলতো করে তাকে ঠেলতে ঠেলতে ডাকলেন,“তিথি মা! ওই তিথি মা! উডো তাড়াতাড়ি।”

ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ কারো ডাকে লাফিয়ে উঠলো তিথিয়া। ভয়ার্ত কণ্ঠে শুধালো,“কককী হয়েছে? এভাবে ডাকছো কেনো?”

“তৈমূ বাবা আইছে। বসার ঘরে বইয়া রইছে। তোমারে যাইতে কইছে।”

চমকায় তিথিয়া। ছোটো ভাইয়ের আগমনের সংবাদে অবাক হয়। কিছুটা সময় নিয়ে চোখেমুখে পানির ছিটা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। এসেই প্রশ্ন ছুঁড়ে,“কী রে হঠাৎ তুই? কখনো তো বলে কয়েও বাড়িতে আনতে পারি না তোকে। কিছু হয়েছে?”

একনাগাড়ে ভাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রশ্নগুলো ছুঁড়ে তারপর মালতী ফুফুর উদ্দেশ্যে বললো,“তৈমূর জন্য চুলায় চা বসাও ফুফু। ফ্রিজে মিষ্টি আর ফলমূল আছে। ওগুলো দিয়ে যাও এখানে। আর হ্যাঁ, ফ্রিজ থেকে গোশত বের করে ভিজিয়ে রাখো। রাতে খেয়ে যাবে ও।”

“এতো ব্যস্ত হইয়ো না বুবু। চা, মিষ্টি কিছুই খাবো না। আমি ফুফুকে নিয়ে যেতে এসেছি। ফুফু আপনি আপনার জিনিসপত্র নিয়ে আসুন, বাড়ি ফিরতে হবে।”

ভাইয়ের কথায় আবারো অবাক হয় তিথিয়া। বসে পড়ে সোফায়। বলে,“মানে? তুই ফুফুকে নিতে এসেছিস? কিন্তু…..”

বাকি কথা আর বোনকে শেষ করতে না দিয়ে তৈমূর বলে ওঠে,“বলতে হবে না কিছু, আম্মার থেকে সব শুনেছি। তুমি কাজের লোক পাচ্ছো না এটা তোমাদের পারিবারিক ব্যাপার। দুলাভাইকে সেকথা জানাবে। হুট করে মালতী ফুফুকে এ বাড়িতে নিয়ে চলে আসা তোমার উচিত হয়নি বুবু। মালতী ফুফু বাবা, চাচাদের গ্ৰামের মানুষ। অনেক বছর ধরে থাকছে আমাদের বাড়িতে। আগলে রেখেছে আমাদের সংসার। সেখানে তুমি উনাকে কীভাবে নিয়ে এলে বলো তো? একবার বাড়ির কথা, আম্মার কথা ভাবলে না? বড়ো চাচা-চাচী, আম্মার বয়স বেড়েছে। উনাদের কী এখন সম্ভব রান্নাবান্না করা, ঘরদোর গোছানো? এসব তো মালতী ফুফুই করেন।”

“তোর বউ কোথায়? সে কোন পাটরাণী? সে পারে না সংসারের কাজকর্ম করতে?”

“এ কথা তো আমিও বলতে পারি। তুমি কেনো নিজের সংসারের কাজ করতে পারো না? এইতো তিন রুমের একটা ফ্ল্যাট। ওদিকে ওরি, মিলিও বড়ো হয়েছে। নিজেদের কাজ নিজেরাই করে। একটুও বিরক্ত করে না। দুলাভাইও তো তোমার কথায় উঠে আর বসে তাহলে তোমার কেনো কাজের লোক লাগে? সংসার তো আমাদের মা, চাচীরাও করেছে অথচ তুমি পারছো না? সংসার জীবনে যুগ পার করে দিলে কিন্তু সংসার করাটাই শিখলে না বুবু? ওদিকে আবার ভাইয়ের বিয়ে করে আনা নতুন বউ কেনো এটা করে না, ওটা করে না এ নিয়ে কত অভিযোগ!”

ভাইয়ের চ্যাটাং চ্যাটাং কথায় ভীষণ আশ্চর্য হলো তিথিয়া। সাথে করল অপমানিতবোধ। রাগত স্বরে বললো,“তুই তোর বউয়ের জন্য আমায় বাড়ি বয়ে এসে অপমান করছিস তৈমূ? আমায়? ওই মেয়েটাই তোকে এভাবে উষ্কানি দিচ্ছে তাই না? ওর জন্যই মা- বোনের বিরুদ্ধে কথা বলছিস তুই?”

“কেউ আমায় উষ্কানি দিচ্ছে না বুবু। তোমরা যদি লিমিট ক্রস করে নিজেদের অধিকারে না থেকে বারবার আমার স্ত্রীকে অপমান করো,দোষারোপ করো তাহলে আমায় তো এর প্রতিবাদ করতেই হবে। স্বামী হিসেবে আমার কিছু দায়িত্ব আছে। একটা মেয়ের পরিবার বিশ্বাস করে তাদের মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিয়েছে, সেই বিশ্বাস তো রাখতেই হবে। সেই মেয়ের সম্মান ধরে রাখাও আমার দায়িত্ব। মা-বোনের প্রতি সম্মান দেখাতে গিয়ে, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি আমার স্ত্রীকে অসম্মান করতে পারি না বুবু। আমার একটাই অনুরোধ, আজকের পর থেকে আমার স্ত্রীকে নিয়ে একটা শব্দও তুমি তোমার মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবে না। তোমায় আমি অনেক ভালোবাসি। বাবা-মায়ের পরে আমার কাছে তোমার আর ভাইয়ার স্থান। দয়া করে এই ভালোবাসা আর সম্মানের স্থান নষ্ট করো না। আমার স্ত্রীকে নিয়ে কিছু বললে বা অপমান করলে আমার কষ্ট হয়। আরেকটা কথা, তোমার সমস্যা নিয়ে তুমি দুলাভাইয়ের সাথে আলোচনা করো। বিয়ের পর স্বামীর বাড়ির কথা বাপের বাড়িতে এসে বলা উচিত নয়। আজকে আসি তবে। কোনো ভুল ত্রুটি হলে ছোটো ভাইকে মাফ করে দিও।”

কথাগুলো বলে উঠে দাঁড়ালো তৈমূর। মালতী ফুফু ততক্ষণে নিজের ব্যাগ নিয়ে চলে এসেছেন। দরজার দিকে হাঁটা ধরে উনার উদ্দেশ্যে তৈমূর বললো,“চলে আসুন ফুফু।”

চলবে _______

#জারুল_ফুলের_কাব্য
লেখনীতে: #মাশফিত্রা_মিমুই
[পর্ব:১৯]

খোলা বারান্দায় ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা হাতে দাঁড়িয়ে আছে উথমী। উপভোগ করছে স্নিগ্ধ, সুন্দর, কোলাহলহীন একটি নতুন ভোর। বাগানের একপাশে হেলে পড়া গন্ধরাজ গাছের শুভ্র ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। শোনা যাচ্ছে পাখির কলতান। বুক ভরে সেই ঘ্রাণ নিঃশ্বাসের সঙ্গে ভেতরে টেনে নেয় উথমী। মনোযোগ সহকারে শোনে সেসব কলতান। হারিয়ে যায় এক কল্পজগতে। যেই জগতটা সুন্দর। বাস্তবতার চেয়েও অধিক সুন্দর। এখানে মানুষ হাসতে জানে, বুক ভরে শান্তির শ্বাস নিতে পারে, সাথে পারে সকল বিষাক্ত মানুষের খারাপ আচরণের ক্ষত নিরাময় করতে।

কাপের অর্ধেক চা পেটে পুরে কাপটা চওড়া রেলিংয়ের ওপর রেখে দেয় উথমী। বুকের সঙ্গে হাত ভাঁজ করে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে থাকে। শোনে প্রকৃতির হাহাকার। কয়েক মুহূর্ত এভাবে পেরোতেই আচমকা পেছন থেকে কেউ এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।পুরুষালি স্পর্শে কম্পিত হয় তার বুক। খোলে যায় বন্ধ আঁখি যুগল। মানুষটির স্পর্শ চিনতে পেরেও লোমকূপ জাগ্ৰত হয়। শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রয়াস চালিয়ে উথমী শুধায়,“ঘুম শেষ?”

স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য ছেড়ে বসে পড়ে তৈমূর। কোমল স্বরে উত্তর দেয়,“হুম কিন্তু মাথা আর চোখের আশপাশটা খুব ব্যথা করছে।”

কথাটা শুনে চিন্তিত হয়ে ওঠে উথমীর মন। ললাটে ভাঁজ পড়ে। এগিয়ে গিয়ে কাছে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে,“সে কী? মাথা, চোখ ব্যথা করছে মানে? খুব ব্যথা করছে? কখন থেকে করছে? শুরুতে কেনো বলেননি?”

“মাইগ্ৰেনের ব্যথা, ঘুম ভাঙার পর থেকেই করছে। প্রায়শই এমন হয় আবার সময়মতো সেরেও যায়।”

“বললেই হলো? আপনি একটু বসুন। আমি বরং কড়া করে আপনার জন্য চা আর গরম পানি করে নিয়ে আসি। চা খেলে মাথা ব্যথা কমে যাবে, গরম পানির ভাপ দিলে চোখ যন্ত্রনাও সেরে যাবে।”

কথাটা শেষ করে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় উথমী। তৎক্ষণাৎ তার হাতটা চেপে ধরে তাকে থামিয়ে দেয় তৈমূর। একটানে বসিয়ে দেয় নিজের কোলে। তারপর ঘাড়ে আলতো করে থুতনি ঠেকিয়ে শীতল কণ্ঠে বলে, “বসুন আপনি, ওসবের প্রয়োজন নেই।”

“এদিকে ব্যথার জ্বালায় অবস্থা খারাপ অথচ আপনি বলছেন প্রয়োজন নেই?”

হাতের বাঁধন আরো শক্ত হলো তৈমূরের। কানের কাছে মুখ নিয়ে তাকে থামানোর উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বললো,“হুসসস।”

স্বামীর মুখ থেকে নিঃসৃত এই ছোট্ট শব্দে নিজের মুখ আর মুখের কথা থেমে গেলেও থামলো না উথমীর চিন্তা। ওভাবেই বসে রইলো সে। তৈমূর হয়তো বুঝতে পারলো তা। প্রশ্ন ছুঁড়লো,“কী ব্যাপার বলুন তো? হঠাৎ করে আমায় নিয়ে আপনার এতো চিন্তা হচ্ছে যে? মায়ায় পড়ে গেলেন নাকি উথমী?”

নড়ে উঠলো উথমী। লোকটির বাঁধন থেকে জোরপূর্বক নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ভ্রু যুগল কুঁচকে বললো,“তো কী মায়া হওয়া উচিত নয়? একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে, মজবুত করতে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, একে অপরের যত্ন নেওয়াটাই হচ্ছে মুখ্য বিষয়। নইলে পরে গিয়ে তো অন্যের ডালে বসে এক্কাদোক্কা খেলবেন। আর যাই হোক, পুরুষ মানুষকে বিশ্বাস নেই। এদের স্বভাব তেমন ভালো নয়। নিজের থেকে অন্যের জিনিসই এদের বেশি ভালো লাগে।”

স্ত্রীর উদ্ভট সব কথায় মাথা ব্যথা নিয়েই হেসে উঠলো তৈমূর। ট্রাউজারের পকেট থেকে চশমাটা বের করে চোখে পরতে পরতে বিপরীতে বললো,“যখন সময় সুযোগ ছিলো তখনি অন্যের ডালে এক্কাদোক্কা খেলিনি আর এখন তো নিজেরই ব্যক্তিগত ডাল রয়েছে, সেহেতু এসবের প্রশ্নই ওঠে না। নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।”

“হয়েছে, নিজের প্রশংসা আর নিজেকে করতে হবে না। চোর কখনো চুরি করে তা স্বীকার করে না। ঘরে এসে বসুন। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। খেয়ে মেডিসিন নিবেন।”

আর এক মুহূর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে নিচে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় উথমী।

তিথিয়ার বাড়ি থেকে মালতী ফুফুকে নিয়ে ফেরার তিনদিন পেরিয়েছে। সেদিনের পর থেকে আর বাড়িতে কোনো ফোন করেনি তিথিয়া। আগ বাড়িয়ে খোঁজও নেয়নি মায়ের। যদিও শাহানা এই তিনদিন ধরে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলেন মেয়েকে কিন্তু তাও তা রিসিভ হয়নি। ছোটো ভাইয়ের উপর রাগ করেছে সে। যাকে বলে ভীষণ রাগ! আর ননদের এই রাগ এবং স্বামীর জেদ, অভিমানের সম্মুখে পরাস্ত হয়ে শাশুড়ির সতর্কতা অবলম্বন করার জন্যই এই তিনদিন যেনো শ্বশুর বাড়িতে বেশ শান্তি খুঁজে পেয়েছে উথমী। করতে পারছে মন দিয়ে স্বামীর সংসার।

সকালের নাস্তা এখনো তৈরি হয়নি। আজকের নাস্তার দায়িত্বে মালতী ফুফুই রয়েছেন। উথমী এসে এক চুলায় চায়ের পানি বসিয়ে ব্যস্ত হাতে ছুরি দিয়ে কাটতে লাগলো আদা। মালতী ফুফু অপরপাশে দাঁড়িয়ে রুটি বেলতে বেলতে শুধালেন,“আদা চা কার লাইগা বউ?”

“তৈমূর সাহেবের জন্য। উনার মাথাটা খুব ধরেছে সাথে চোখেও যন্ত্রণা হচ্ছে।”

“কও কী!”

“হ্যাঁ, নাস্তা তো এখনো হয়নি। আমি বরং চা তৈরি করে সাথে জ্যাম পাউরুটি নিয়ে যাই? খেয়ে না হয় ওষুধ খেয়ে নিবে।”

“হ তাই লইয়া যাও। রাইতে ঠিকমতো ঘুম না হইলেই এই পোলার মাথা বিষ, চোখ বিষ শুরু হইয়া যায়।”

“আগেও এমন হয়েছে?”

“হ, এইডা আর নতুন কী?”

বিপরীতে আর কথা বাড়ায় না উথমী। নিজের কাজে মনোযোগ দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেতে করে চা, জ্যাম পাউরুটি আর ডিমের অমলেট নিয়ে পুনরায় হাঁটা ধরে ঘরের দিকে।

মাথার উপর বালিশ চাপা দিয়ে উবু হয়ে শুয়ে আছে তৈমূর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যথাটা যেনো তার তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। উথমী ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে শব্দ করে বিছানার একপাশে খালি জায়গায় ট্রে রেখে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে মেডিসিন বক্সটা নিয়ে এসে বসলো স্বামীর শিয়রে। বালিশটা সরিয়ে চুলের ভাঁজে হাত ডুবিয়ে ডাকলো,“শুনছেন! তৈমূর সাহেব? উঠুন দেখি, নাস্তা করে মেডিসিন নিয়ে তারপর আবার ঘুমান।”

কিছুটা সময় নিয়ে উঠে বসে তৈমূর। বালিশ উঁচু করে পিঠ ঠেকিয়ে তাতে হেলান দেয়। এর মধ্যেই চোখ দুটো তার রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। ঘামে ভিজে গিয়েছে পরনের জলপাই রঙের টি-শার্ট। তার এহেন অবস্থায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো উথমীর। এই স্নিগ্ধ, মায়ায় ভরা মুখশ্রীতে বিষাদ ব্যথা যেনো কিছুতেই মানাচ্ছে না। এই মুখে একমাত্র চমৎকার ওই হাসিটাই মানায়। যা বারংবার উথমী নামক মেয়েটিকে অপ্রস্তুত করে, তার সকল মনোযোগ কেড়ে নেয়। আর দেরি না করে স্বামীর মুখের সামনে পাউরুটি ধরে উথমী। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,“হা করুন।”

বাধ্য ছেলের মতোই হা করল তৈমূর। কামড় বসালো রুটিতে। উথমী পুনরায় শাসন করার ভঙিতে বললো,
“জানেন যখন মাইগ্ৰেনের সমস্যা আছে তাহলে দেরি করে ঘুমাতে হবে কেনো? অফিস থেকে আসতেই বা এতো দেরি হয় কেনো? নিয়মমাফিক চলতে পারেন না?”

মুখের খাবার শেষ করে পানির গ্লাসটি হাতে তুলে নিলো তৈমূর। নিরস মুখে উত্তর দিলো,“ব্যথা কী বলে কয়ে আসে নাকি? যদিও আমি প্রচুর সতর্কতা অবলম্বন করে চলি কিন্তু কাল রাতে ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে ভুলে গিয়েছিলাম।”

“আর অফিস থেকে ফিরতে দেরি হয় কেনো?”

“যেদিন রাস্তায় জ্যাম থাকে সেদিন যেতে দেরি হয়। আর যেতে দেরি হলে কাজ করতে করতে রাত হয়।”

“তাহলে বাড়ি থেকে আগে বের হবেন।”

“আগে বের হলে তো আর জ্যাম থাকে না। তখন এতো আগে গিয়ে বসে থাকতে কেমন লাগে?”

লোকটির যুক্তির সম্মুখে হার মেনে নিলো উথমী। নিরবে খাইয়ে দিয়ে তারপর ওষুধ খাওয়ালো। ট্রে থেকে চায়ের কাপটি তুলে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বললো,“এখন বসে বসে পুরো চা শেষ করুন। এই অবস্থা নিয়ে তো আর অফিসও যেতে পারবেন না। কী করবেন?”

“উহুম, অফিসে যাবো না। দশটা, এগারোটা নাগাদ বসকে মেইল করে দিলেই হয়ে যাবে।”

তৎক্ষণাৎ স্বামীর পানে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকায় উথমী। আমতা আমতা করে শুধায়,“বস? তা বস ছেলে নাকি মেয়ে?”

“ছেলে।”

“ওহ।”

“তবে বসের ভাইয়ের একটা মেয়ে আছে।”

“তো?”

“বস তার জন্য সম্বন্ধ এনেছিলেন।”

মুখশ্রী মলিন হলো উথমীর।এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,“আপনার জন্য?”

“হ্যাঁ।”

“করেননি কেনো?”

“প্রস্তাব পেয়ে আমি আম্মাকে জানিয়েছিলাম, আর আম্মা বুবুকে। বুবুর থেকে সেই খবর চলে গিয়েছিল দুলাভাই পর্যন্ত। তারপর দুলাভাই নিজে নিজেই খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারেন মেয়ে ওয়েস্টার্ন কালচারে চলাফেরা করে, উচ্চ শিক্ষিত। সব খোঁজখবর শেষে দুলাভাই এসে বুবুর মাধ্যমে আম্মার কানে ঢুকিয়ে দেন কথাটা।”

“আর তারপর নিশ্চয়ই আপনার আম্মা হায়হুতাশ করে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেয়, তাই না?”

“হুম তাই।”

“তা আপনার বস এ নিয়ে কিছু বলেনি?”

“কী বলবে? আমি বুঝিয়ে না করে দিয়েছি। যেখানে পরিবারের কেউ রাজি নয় সেখানে এই বিয়ে করে লাভ কী?”

“তাহলে আমায় করলেন কেনো? এখানেও তো কেউ রাজি ছিলো না।”

এবার বিরক্ত হলো তৈমূর। যা তার ব্যথাতুর মুখশ্রীতে স্পষ্টভাবে ফোটে উঠলো। বললো,“এক কথা বারবার বলার কী আছে? সবাই কোথায় রাজি ছিলো না?ভাইয়া, ভাবী তো ছিলো রাজি। এমনভাবে বলেন যেনো আমার সঙ্গে সংসার করাই যাচ্ছে না। অত্যাচারী স্বামী আমি।”

“অতো কিছু ভেবে বলিনি। তবে অত্যাচারী শাশুড়ির ছেলে তো বটেই।”—-কথাটা বলে স্থান ত্যাগ করল সে।

থতমত খেয়ে গেলো তৈমূর। পিছু ডাকলো বেশে কয়েকবার,“উথমী! এই উথমী!” কিন্তু উথমী সেই ডাক পরিপূর্ণভাবে উপেক্ষা করেই চলে গেলো।
__________

রায়হান কবীরের মনটা আজ তেমন একটা ভালো নেই। সকাল থেকেই কারো সঙ্গে কথা বলছেন না তিনি। কুলুপ এঁটেছেন মুখে। মূর্তির ন্যায় বসে আছেন সোফায়। কেয়া বেগম অবশ্য বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন স্বামীর সঙ্গে কথা বলার কিন্তু তাতেও যেনো কোনো কাজ হলো না।

শ্বশুরের জন্য কড়া লিকারের চা বানিয়ে সম্মুখ টেবিলে রাখলো রিনিতা‌। কোমল স্বরে পরপর প্রশ্ন ছুঁড়লো,“কী হয়েছে আপনার বলুন তো বাবা? আপনি না বললে আমরা জানবো কীভাবে? বলুন না।”

পুত্রবধূর প্রশ্নে নড়েচড়ে ওঠেন রায়হান কবীর। শুরু থেকেই রিনিতাকে নিজের মেয়েদের মতো করেই দেখে আসছেন তিনি। প্রাণপ্রিয় বন্ধুর দ্বিতীয় কন্যা ছিলো রিনিতা। সেই সুবাদেই তাকে পছন্দ করে একমাত্র ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে বউ করে বাড়িতে এনেছিলেন রায়হান কবীর। আর এই বাবা মরা মেয়েটিও যেনো ভেতরের সকল স্নেহ, ভালোবাসা উগরে দিয়ে বাবা বাবা বলে মন জয় করে নিয়েছে শ্বশুরের। এমনকি নিজের দিক থেকে উনার সেবায়ও কোনো কার্পণ্য করে না রিনিতা। বিয়ের পর থেকে শ্বশুরের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছে সে নিজের পিতাকে।

কিছুক্ষণ তুমুলভাবে এই নিরবতা চালিয়ে শেষমেশ মুখ খুলতে বাধ্য হলেন রায়হান কবীর। অসহায়, ভারি কণ্ঠে বললেন,“বুঝলে বউমা, গতকাল রাতে মাকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখেছি। যেনো তেনো স্বপ্ন নয় বরং দেখেছি, মা আমায় ডাকছেন।আমার জন্য খাবার নিয়ে পিঁড়িতে বসে অপেক্ষা করছেন। কতদিন পর মাকে দেখেছি বউমা! বেঁচে থাকাকালীন মাকে একটু সুখ দিতে পারিনি। কি আফসোস যে হয়! তখনি ঘুমটা ভেঙে গেলো। দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে মায়ের জন্য দোয়া করলাম। আর তারপর থেকেই মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছে। কতদিন হলো আমার উথমীকে আমি সামনাসামনি দেখি না, মাথায় হাত রাখি না। কেমন আছে কে জানে? ওই ছোট্ট একটা যন্ত্রে দেখে কী আর মন ভরে বলো?”

শ্বশুরের বিষণ্ণ মুখশ্রী দেখে আর দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলা কথাগুলো শুনে নিজের মনটাও খারাপ হয়ে গেলো রিনিতার। মিনমিনে স্বরে বললো,“শুনেছি ওর শাশুড়ি অসুস্থ। ফোন করে যে আসতে বলবো সেই উপায়ও নেই। তার উপর ওরা দুজনেই অফিস, কলেজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলেন রায়হান কবীর। আবারো নিরব হয়ে যান। কিছুক্ষণ কি যেনো ভাবেন। তারপর হুট করেই বলেন,“আমি গিয়ে দেখে আসি বউমা? বিকেলেই তো ওর কলেজ শেষ হয়ে যায়। ধরো সন্ধ্যার দিকে আমি গিয়ে ওকে চমকে দিলাম?”

কথাটা পছন্দ হয় রিনিতার। তবে কিছু একটা ভেবে নাকোচ করে দিয়ে বলে,“অতোদূরের পথ! আপনি একা একা কীভাবে যাবেন বাবা? আপনার ছেলে জানলে আমার সঙ্গে খুব রাগারাগী করবে। আর আমিও আপনাকে অতোদূর কিছুতেই একা একা ছাড়বো না।”

“চিন্তা করো না, হারুন ভাইয়ের গাড়িটা তো গ্যারেজে পড়েই আছে। উনাকে নিয়ে না হয় চলে গেলাম। তুমি আবার কাউকে বলো না। আমি উৎস আর ওর মাকে বাড়ি এসে ম্যানেজ করে নিবো।”

“কিন্তু বাবা!”

“কোনো কিন্তু নয়। তুমি কী চাও তোমার বাবা সারাদিন এভাবেই মন খারাপ করে বসে থাকুক?”

বিপরীতে আর কিছু বলতে পারে না রিনিতা। মনের বিরুদ্ধে গিয়েই শ্বশুরের কথায় সায় জানিয়ে দেয়।

গতকাল থেকে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না জয়নব। শরীরটা উনার ভালো নেই। ডাক্তার দেখানো হলেও ধরা পড়েনি তেমন কোনো রোগ। খাবারের প্রতি ধরে গিয়েছে অরুচি। গতকাল দুপুরেও পেট ভরে খাবার খাওয়া মানুষটি রাত থেকে খেতে চাচ্ছেন না কিছুই। খাবার দেখলেই বিরক্ত হচ্ছেন। সবই বয়সের দোষ। শাহানার হাতের যন্ত্রণাটা সেরে গিয়েছে। এখন শুধু অক্ষত রয়েছে হাতের ঘা।

দুপুরের রান্নাবান্নার পাট চুকিয়ে ঘরে এলো উথমী। এই এক দুপুর বিছানায় পড়ে লম্বা একটা ঘুম দেওয়া শেষ তৈমূরের। ঘুম থেকে উঠেই লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে সে। শরীরটা এখন তার ফুরফুরে লাগছে। মাথা ব্যথাটাও সেরে গিয়েছে অনেক আগে। স্ত্রীকে দেখতে পেয়েই প্রশ্ন ছুঁড়লো, “আজ কলেজ যাননি কেনো?”

গোসলে যাওয়ার জন্য আলমারি থেকে পোশাক বের করছে উথমী। প্রশ্নটি শুনতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো,“অসুস্থ স্বামীকে ঘরে রেখে কীভাবে অফিস যাই বলুন? দজ্জাল শাশুড়ি তা জানতে পারলে তো বাড়িতে তুলকালাম কান্ড ঘটাতো! দেখা যেতো তার কিছুক্ষণ পর হাজির হয়ে যেতো আমার ঘসেটি বেগম ননদ। তখন কী হতো আমার? কে আমায় রক্ষা করতো? স্বামী? কিন্তু সেও তো মা ভক্ত পুরুষ।”

হতবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল নয়নে স্ত্রীর পানে তাকিয়ে রইলো তৈমূর। আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে বলে উঠলো, “দজ্জাল শাশুড়ি? ঘসেটি বেগম ননদ? মা ভক্ত স্বামী?”

“বিয়ের পর থেকে তো তাই দেখছি।”

“আমি মোটেও মা ভক্ত পুরুষ নই উথমী। আমি আমার আম্মাকে সম্মান করি। উনার বয়স হয়েছে, বয়স বাড়লে মানুষের চিন্তাধারা বাচ্চাদের মতো হয়ে যায়। তাছাড়া উনার সামনে আপনার পক্ষ নিয়ে কথা বললে কতটা কষ্ট পাবেন উনি, ভাবতে পারছেন? তাই বলে যে কিছু বলি না এমন নয়। তবে আপনার কপাল ভালো যে আপনি আমার দাদীর মতো কাউকে পাননি।”

“কেনো? তিনি কী আপনার মায়ের থেকেও দজ্জাল ছিলো?”

“আমার আম্মা আমার দাদীর কাছে সদ্য জন্মানো শিশু। দাদী তো উনার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলতেন। নানা যৌতুক দিতে না পারায় বাড়ির সব কাজকর্ম আম্মাকে দিয়ে করাতেন। পুত্র সন্তান জন্ম দিতে না পারায় চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলতেন, অপমান করতেন। এমনকি আমাদের বাবাকে আবার বিয়ে দিতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবা মাকে রেখে আর দ্বিতীয় বিয়েটা করেননি। তা নিয়েও অনেক অশান্তি করেছেন আমার দাদী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অভিশাপ দিয়ে গেছেন আম্মাকে। যদিও ভাইয়া জন্মের বছর দুয়েক আগেই তিনি মারা গিয়েছিলেন তবে অনেক কষ্টে।”

“আপনার বাবা কিছু বলতেন না?”

“না, আপনার ভাষ্যমতে মা ভক্ত পুরুষ ছিলেন আমার বাবা। সব জেনেবুঝেও নাকি কখনো প্রতিবাদ করতেন না। কিন্তু দাদীর কথায় দ্বিতীয় বিয়ে না করায় অবশ্য শেষ বয়সে বাবার উপর তিনি চরম নারাজ ছিলেন।”

কথাগুলো শুনে ভীষণ মায়া হয় উথমীর। মুহূর্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো শাশুড়ি নামক ভদ্রমহিলার জন্য। তৈমূর পুনরায় বলে,“যে নারীর শৈশবকাল কেটেছে অভাব-অনটনে, কৈশোর থেকে যৌবনকাল কেটেছে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার আর স্বামীর অবহেলায় তার বয়স্ককাল কীভাবে খারাপ হতে দেই বলুন তো? জানি উনি মাঝেমধ্যে অন্যায় করে ফেলেন, ভয়ে থাকেন যদি বউয়ের কথায় উনাকে ফেলে রেখে চলে যাই? ভুলে যাই উনাকে? তখন তো উনি একা হয়ে যাবেন। সেসব কারণে পুত্রবধূদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন। অথচ উনার এই ভাবনা এবং আচার আচরণ যে ভুল তা উনি নিজেও বুঝেন না এমনকি আমরা বোঝালেও বুঝতে চান না। যে বুঝতে চায় না তাকে বুঝিয়ে কী আদৌ লাভ আছে? তাই আপনাকে বলি, মানিয়ে নিতে না পারেন কিন্তু কখনো খারাপ ব্যবহার গায়ে মাখবেন না। চুপ থাকবেন, এড়িয়ে চলবেন। সেদিন খাবার টেবিলে আম্মাকে চুপ করাতে পারছিলাম না বলেই কিন্তু আপনাকে ধমক দিয়েছিলাম। সেই ধমকের জন্যই এরপর থেকে আপনার রান্নায় আর কখনো তিনি ভুল ধরেননি। তাই মাঝেমধ্যে কিছু ব্যাপার নিয়ে কষ্ট পেতে নেই। ইগোতে ধরে বসে থাকতে নেই।”

বিপরীতে মাথা নাড়ায় উথমী। আর দাঁড়ায় না সেখানে। গোসলের উদ্দেশ্যে নিরবে চলে যায় বাথরুমে।

চলবে ________

(কপি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)