জুলিয়েট পর্ব-০৫

0
308

গল্প #জুলিয়েট
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

৫.

বাড়ির চৌকাঠ বেশ শক্ত।হেলান দিলে পিঠ ব্যাথা হয়ে আসে।অর্ক আর চৌকাঠ ঘেঁষে বসলো না।হাঁটতে হাঁটতে বই পড়ছিল।কিছুটা আওয়াজ করে।এখন বিকেলের সময়।সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত।অর্ক আওয়াজ করে পড়লে কারো সমস্যা হওয়ার কথা না।

অর্ক খুব মনোযোগ দিয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বইয়ের তৃতীয় অধ্যায় পড়ছিল।তার পড়া গোছাতে একটু বেশি সময় লাগে।সাথের সব ছেলেরা টিচারের কাছে পড়ে।অর্ক পড়ে নিজ থেকে।টিউটর রেখে পড়া তার পক্ষে সম্ভব না।তাদের বাড়িতে প্রতিদিনের ভাতের জোগাড় করতেই অবস্থা খারাপ হয়।সেই জায়গায় আবার টিউটর! হ্যাহহ্,ভাবলেই হাসি পায় অর্কর।

শতাব্দী সেই সময় বাড়ির সামনের রাস্তায় হাত পা ছড়িয়ে মার্বেল খেলছিল।রাস্তাটা বেশ সরু।গিয়াস মাস্টারের সাইকেলটাও ঠিক মতো যেতে পারে না এর ভেতর দিয়ে।শতাব্দী মার্বেল খেলার ফাঁকেই দেখলো সেদিনের সেই সুন্দর ছেলেটা আবার তাদের গলিতে এসেছে।আজকে আবার অন্য একটা শার্ট পড়েছে।কেমন চেক প্রিন্টের শার্ট।তার নাক মুখ কুঁচকানো।চারপাশের ভ্যাপসা আর গুমোট গন্ধে তার বমি পাচ্ছে।

শতাব্দী তাকে দেখামাত্র খেলা থামলো।সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে গায়ের ধুলো ঝাড়লো।রূপম কয়েক কদম সামনে আসতেই তাকে চিনল।গম্ভীর মুখে শুধু জানতে চাইলো,’অর্ক বাড়ি আছে?’

‘হ্যাঁ।’

রূপম আর কথা বাড়ায় না।মাথা নিচু করে সোজা ঘরের ভেতর প্রবেশ করে।শতাব্দী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার শার্ট চুল আর হাত দেখে।মিতু তার এক হাত টেনে ধরে বলল,’কিরে শতাব্দী?বোস না।খেলবি না আর?’

শতাব্দী তার কথা শুনল।কিন্তু তার চোখ তখনও বাড়ির ভেতরের দিকে।রূপম দূরে যেতে যেতে একেবারে অদৃশ্য হয়ে গেছে।তাকে আর দেখা যাচ্ছে না।আরেকবার হাতে টান পড়তেই সে মৃদুস্বরে বলল,’নাহ।আজ আর খেলবো না।’
__

অর্ক আশ্চর্য হয়ে বলল,’রূপম! তুই?’

রূপমকে বিচলিত দেখালো না।সে উল্টো হেঁটে গিয়ে অর্কদের ধুলোবালি মাখা তোষকে গিয়ে বসলো।অর্ক বলল,’আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?’

‘নাহ্।’

রূপম একহাতে মাথার চুল টেনে ধরে বলল,’তোর থেকে পুরো সপ্তাহের নোট নিতে এসেছি।’

অর্ক মাথা নাড়ল।ঠোঁট গোল করে কিছুটা উৎসুক হয়ে বলল,’কলেজে আসিস নি কেন এতোদিন?অসুস্থ ছিলি?’

রূপম কপাল ভাঁজ করে বলল,’অসুস্থ হতে যাবো কেন?আমাদের একটা ক্রিকেট ম্যাচ ছিলো।তাই কলেজে আসি নি।’

অর্কর মুখটা আপনাআপনি হা হয়ে গেল।সে কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে রূপমের দিকে তাকালো।কি যে অবিশ্বাস ছিলো সে চাহনিতে! কিছুটা ধাতস্থ হওয়ার পর সে বলল,’কেবল একটা ক্রিকেট ম্যাচের জন্য এতো গুলো ক্লাস মিস দিলি?’

‘তো কি হয়েছে?’

‘পড়া তো সব মিস করে গেলি।’

রূপম হাই তুলে বলল,’ব্যাপার না।আজিম স্যার তো কোচিংয়ে সব পড়াবেই।তখন বুঝে নিবো।’

অর্ক মাথা নিচু করে কেবল সংক্ষেপে উত্তর দিলো,’ওহহ্।’

জানালা দিয়ে অল্প কিছুটা বাতাস আসছে।রূপম একটু দম ছাড়ার সুযোগ পেল।নয়তো যেই আটসাট কলোনি।শ্বাস ফেলার জায়গাও অবশিষ্ট নেই।কিছুটা সময় নিরব থেকে রূপম বলল,’তুই আমাকে একটা অংক বুঝিয়ে দিতে পারবি?স্যার বুঝিয়েছে কোচিং-এ।কিন্তু আমি বুঝিনি।’

অর্ক ম্লান হেসে বলল,’চেষ্টা করতে পারি।তবে তুই কতোখানি বুঝবি সেটা জানি না।’

‘তুই বোঝালেই বুঝব।তোর হিউমার ভালো।’

অর্ক আরেকদফা হাসলো।শতাব্দী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ডাক দিলো,’আসবো?’

অর্ক পেছন ফিরে।আওয়াজের উৎস অনুসরণ করে রূপম নিজেও ঘাড় ঘুরায়।শতাব্দী দরজায় দাঁড়িয়েছিল।হাতে একটা ট্রে।তার উপর কেবল এক কাপ চা।দু’জন তার দিকে তাকাতেই সে বোকা বোকা হেসে ভেতরে এলো।চায়ের কাপ রাখা ট্রে টা নিয়ে রূপমের সামনে গিয়ে রিনরিনে গলায় বলল,’নাও,তোমার চা।’

রূপম একবার তার হাত,একবার তার মুখ,আর একবার তার হাতে থাকা ট্রে টা দেখে।সে হাত ভর্তি চুড়ি পরেছে।সবুজ,লাল,কালো,সাদা,সব রঙের চুড়ি।রূপম কেমন চোখ খাঁড়া করে তার দিকে তাকালো।একটুখানি বিরক্তও হলো বোধহয়।থমথমে মুখে বলল,’আমি চা খাই না।’

শতাব্দীর মুখটা একেবারে ফিউজ হওয়া বাতির মতো নিভে গেল।সেদিনই তো চা খেল।আজ বলছে খায় না।সে মূর্তির মতো সোজা দাঁড়িয়ে থাকে।একটু পরে রূপম নিজ থেকেই চায়ের কাপ হাতে তুলে বলল,’আসলে আমি এই সময়টাতে চা খাই না।তবে যেহেতু তুমি কষ্ট করে বানিয়েছো,তাই খাচ্ছি।তোমাকে ধন্যবাদ।’

শতাব্দী চওড়া করে হাসলো।রূপম চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে তার দিকে তাকালো।তাকে কিছুটা অপ্রস্তুত দেখাচ্ছে।শতাব্দী মেয়েটা খুব মন দিয়ে তার চা খাওয়া দেখছে।খাওয়ার সময় কেউ তাকিয়ে থাকলে প্রচন্ড অস্বস্তি হয়।রূপম কিভাবে তাকে বলবে-একটু সরো শতাব্দী।আমি মানুষের সামনে চুক চুক করে চা খেতে পারি না।

অর্ক গলা খাকারি দিয়ে বলল,’যা এবার ভেতরে যা।’

শতাব্দী চঞ্চল পায়ে বাড়ির ভেতরের দিকে ছুটে।এই চঞ্চলতা তার জন্মগত।যেতে যেতেই সে টেবিলের এক পায়া তে হোঁচট খেয়ে হুড়মুড় করে মেঝেতে গিয়ে পড়লো।রূপম চা খাওয়ার মাঝেই অবাক হয়ে সেদিকে তাকালো।অথচ অর্ক বিষয়টা দেখলো খুব স্বাভাবিক ভাবে।

রূপম চায়ের কাপটা তোষকে রেখে উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,’আয়হায়! কেমন করে পড়লে শতাব্দী?তুলতে হবে?’

শতাব্দীর চোখ দু’টো চক চক করে উঠে।সে কিছু বলতেই যাচ্ছিলো,তার আগেই অর্ক বলল,’ধ্যাত,না।এগুলো তেমন কিছু না।শতাব্দী চব্বিশ ঘন্টায় বাইশবার উষ্টা খায়।এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার।’

যেই গাঢ় হাসিতে শতাব্দীর মুখ ভরে ছিল,অর্কর কথা শুনতেই সেটা এক নিমিষে মিলিয়ে গেল।সে ব্যথিত চোখে ভাইয়ের দিকে তাকায়।কি দরকার ছিলো তার এই কথাটা বলার?ঐ সুন্দর ছেলেটার সামনে সে শতাব্দীর মান সম্মান সব নষ্ট করে দিয়েছে।ছেলেটা এখন কি ভাববে তাকে?
.
.
.
.
জানালার পর্দাটা দুই ধারে চাপিয়ে রাখা।সূর্যকিরণ প্রবেশ করছে দ্বিধাহীনভাবে।সেই আলোতে পুরো ঘর সোনালি আভায় সিক্ত হয়েছে।রূপসা তখন তার পড়ার টেবিলে বসে ছিল।গালে একটা হাত,অদ্ভুত চিন্তায় মশগুল।

তার পরীক্ষা শুরু হবে মাস খানেক পর।এইবার তার প্রস্তুতি ভালো না।বিগত এক মাস সে বইয়ে হাত দিতে পারেনি।সে গালের নিচে হাত রেখে বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোর দিকে মনোনিবেশ করে।কেন জানি ঠিকঠাক মনোযোগ দিতে পারছে না।একটু পর পর এ’কথা সে’কথা মাথায় আসছে।

রাজিব সাহেব দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন।তিনি কয়েক দিন যাবত একটু একটু হাঁটতে পারেন।তার সার্জারি হয়েছিল দেড় মাস আগে।তারপর থেকেই তিনি শয্যাশায়ী।গত সপ্তাহ থেকে আবার ধরে ধরে চলাফেরা করতে পারছেন।

‘রূপ! আসবো?’

রূপসা দ্রুত সেদিকে চোখ নেয়।তাড়াহুড়ো করে বলে,’হ্যাঁ বাবা।আসো না।’

রাজিব সাহেব ঘরে ঢুকলেন।হেঁটে গিয়ে খাটের এক পাশে বসলেন।রূপসা নিজেও পড়ার টেবিল ছেড়ে বাবার মুখোমুখি এসে বসলো।রাজিব একটু রয়ে সয়ে বললেন,’তোমার মতিউর কাকা তোমার জন্য একটা বিয়ের সম্বন্ধ এনেছে।তুমি কি এই ব্যাপারে কিছু বলতে চাও?’

রূপসার মাথা নামানো ছিলো।বাবার কথা শুনতেই সে আরো বেশি বিনীত হয়ে বলল,’না বাবা।এখনই বিয়ে টা করতে চাইছি না।’

‘কেন?পড়াশোনার চাপ বেশি?’

‘হ্যাঁ।কিছুটা।’

রাজিব শান্ত গলায় বললেন,’থাক তাহলে।আমি দুই একদিন পর মতি কে ফোন করে জানিয়ে দিবো।’

রূপসা উত্তরে মুখ ফুটে কিছু বলল না।কেবল কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সামান্য হাসলো।সে এখনই বিয়ে করতে চায় না।গ্রেজুয়েশনের মাঝপথে বিয়ে করাটা ঝামেলা।না সংসার করতে পারবে,না পড়াশোনা ঠিক রাখতে পারবে।আগে গ্র্যাজুয়েশন শেষ হোক।তারপর বিয়ে নিয়ে ভাবা যাবে।

রাজিব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,’আমি নিজেও তোমায় গ্র্যাজুয়েশনের আগে বিয়ে দিতে চাই নি।কিন্তু মতি বলল ছেলে নাকি বেশ ভদ্র।অমায়িক ব্যক্তিত্বের।আমি তাই ভাবলাম তোমায় জানাই।আজকাল তো এরকম ছেলে পাওয়া যায় না।’

রূপসা চোখ নামিয়েই মিনমিন করলো,’জ্বী বাবা।বুঝেছি।’

রাজিব আরো কিছুক্ষণ মেয়ের ঘরে থেকে তারপর চলে গেলেন।রূপসা এক প্রকার হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।বিয়ে শাদির কথা উঠলেই তার কেমন অস্থির অস্থির লাগে।রূপসার ধারণা,ভালো গিন্নি হওয়ার কোনো বৈশিষ্ট্য তার মাঝে নেই।সে গুছিয়ে কোনো কাজ করতে পারে না।সংসার করবে কেমন করে?

সেদিন বিকেলে রূপসার ফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে তিন তিনবার কল এলো।রূপসা শুরুতে ধরলো না।অপরিচিত নম্বরের ফোন সে সাধারণত রিসিভ করে না।তবে চতুর্থবার কল হতেই রূপসা কিছুটা চিন্তিত হয়ে সেটা রিসিভ করলো।কেউ কোনো বিপদে পড়লো নাকি?নয়তো এতো বার ফোন দেওয়ার কথা না।

সে ফোনটা কানের সাথে চেপে ধিমি স্বরে বলল,’হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম।’

অনেকক্ষন নিরবতা।তারপর একটা গুরুগম্ভীর স্বর ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে আসে-
‘মিস রূপসা!দিস ইজ মি,শোহরাব।’

রূপসা চোখ দু’টো তড়াক করে খুলে গেল।মস্তিষ্ক সচল হলো সহসা।শরীরের যতো ঝিমুনি ছিলো,এক নিমিষেই কেটে গেল।সে বাকহারা হয়ে ফোনটা কানের সাথে চেপে ধরল।শরীরটা আচমকাই এমন শিউরে উঠলো কেন?

শোহরাব নিজ থেকেই বলল,’তুমি আমাকে কোনোদিনই পুরো কথা শেষ করতে দাও না।আজকে আমি পুরোটা শেষ করবো,আর তারপর তুমি ফোন কাটবে।’

রূপসার হাতটা জমে গিয়ে ফোনের সাথে মিশে ছিলো।ধমনী আর শিরার ভেতরে কল কল করে রক্তের প্রবাহ ছুটে গেল।সে জবাব দেয় না।কেমন কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে থাকে।

শোহরাব বলল,’তুমি আমাকে কি ভাবো জানি না।তবে এমন আগ বাড়িয়ে এতো বার কোনো মেয়ের সাথে কথা বলার ইচ্ছে আমি আগে কখনো পোষণ করিনি।তুমিই প্রথম।আশা করি তুমিই শেষ।এখন শোনো,যা বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম,,,,,,’

টুট…টুট….টুট…

রূপসা ফোনটা কেটে দিলো তৎক্ষণাৎ।তারপর দ্রুত মোবাইল ফোনটা অন্যদিকে ছুঁড়ে মারলো।সে আর হাতেই নিবে না সেটা।কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে সে দ্রুত ফোনটা হাতে নিল।নম্বরটা ব্লক লিস্টে না ফেলা পর্যন্ত তার শান্তি নাই।শোহরাবের নম্বর ব্লক করেই সে এক গাল হাসলো।তারপর ফোনের দিকে দেখে মুচকি হেসে বলল,’এবার মন ভরে কথা বল।আমি সব শুনছি।শালা পাগল ছাগলের দল! দুনিয়া ভর্তি এতো এতো মেয়ে ফেলে সে এসেছে আমার সাথে কথা বলতে।’

পরের দিন বিকেলে রূপসা গিয়েছিলো নাসিম চাচার দোকানে।তেল আর ডিম কেনা লাগতো।রাজিব তো ইদানিং বাইরে যেতে পারেন না।রূপম বাড়িতে নেই,কোনো সরু গলিতে ক্রিকেট খেলছে নিশ্চয়ই।অগত্যা রূপসা নিজেই মুদি দোকানে গেল।

সবটা ঠিকই ছিলো।কিন্তু বিপত্তি বাধলো কেনা শেষে বাড়ির দিকে ফেরার পথে।একটা বাইক সাঁই সাঁই করে ছুটে এসে তার সামনে থামলো।রূপসা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দুই কদম পিছিয়ে গেল।বাইকে থাকা লোকের উপর বিরক্তও হলো কিছুটা।এভাবে মাঝরাস্তায় গাড়ি থামায় কে?

সে দুই চোখ কুঁচকে মুখটাকে বাঁকা করে বাইকে থাকা লোকটার পানে তাকায়।লোকটা ভীষণ শান্ত।হেলমেটও খুললো আস্তে ধীরে।অথচ সে হেলমেট খুলতেই রূপসা কয়েক ভোল্টের ধাক্কা খেলো।মনে হলো কিলবিল করে কিছু একটা মাথার তালুতে উঠে এলো।

শোহরাব কটমট চোখে তার দিকে তাকালো।রাগ উপচে পড়া দৃষ্টি যাকে বলে।চোয়াল শক্ত,দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে বোধহয়।রূপসা একবার তীর্যক চাহনিতে তাকে দেখে প্রায় সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিল।

শোহরাব ভারি গলায় বলল,’আমি কি তোমার সাথে প্রেমের আলাপ করছিলাম?ব্লক কেন দিলে?’

রূপসা উত্তর দিলো না।তার ভেতরটা অস্থির হয়ে উঠেছে।কেমন যে হাঁসফাঁস লাগছে।সে মাথা নামিয়ে ঝাঝালো স্বরে বলল,’পথ ছাড়ুন।’

শোহরাবের মেজাজ গরম হলো।তেঁতেঁ উঠে বলল,’কেন?রাস্তা কি তোমার বাপের?’

‘তো রাস্তা কি আপনার বাপের?’

সাথে সাথে পাল্টা জবাবে শোহরাব একটু দমে গেল।দেখলো রূপসার মুখটা কেমন কঠিন হয়ে আছে।সে ঠান্ডা গলায় বলল,’তোমাকে এমন কিছুই বলিনি যার জন্য তুমি আমাকে ব্লক দিবে।আমি যতোই তোমার সাথে পোলাইট বিহেভ করছি,তুমি ততোই আমার প্রতি রুড হচ্ছো।কারণ টা কি?’

রূপসা জিরোয়।প্রথমে চিন্তা করলো কিছুই বলবে না।শেষে অবশ্য পারলো না।মাথা তুলে কাট কাট গলায় বলল,’কারণ সামনে আমার বিয়ে।বিয়ের আগে পরপুরুষের সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে বাধে।’

শোহরাবের শান্ত মুখশ্রী আচানকই কেমন পাল্টে গেল।সে চোয়াল শক্ত করে বলল,’কি?কি বললে তুমি?সামনে তোমার কি?’

রূপসা নির্বিকার।ভাবলেশহীন হয়ে জবাব দেয়,’বিয়ে।বিয়ে করছি আমি।’

‘কার সাথে?’

‘আপনাকে কেন বলবো?আপনি নিজের চরকায় তেল দেন।’

শোহরাব চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’সেটাই করছি।’

রূপসা মুখ ভেঙচায়।শোহরাব সরোষ চাহনিতে তার দিকে দেখে বলল,’তোমাকে আমি বিয়ে করবো।এটাই আমার শেষ কথা।’

‘কিন্তু আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।’

শোহরাব হাসলো।গা ঝাড়া দিয়ে বলল,’চ্যালেঞ্জ করছো?’

রূপসা কটমট সুরে বলল,’নাহ।বাস্তবতা শিখাচ্ছি।’

‘বাস্তবতাও এটাই যে আমি তোমাকেই বিয়ে করবো।এসবে আবার আমি ভীষণ সিরিয়াস।যা বলি,তাই করে দেখাই।’

রূপসা নিজেও কিছুটা হাসলো।তাচ্ছিল্য আর বিদ্রুপ মেশানো হাসি।

‘বিয়েতে দাওয়াত রইলো।আপনার আরুকে সাথে নিয়ে আসবেন।’

বলা শেষেই সে হনহন করে বাড়ির পথে হাঁটা দিলো।সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে,আজ বাড়িতে গিয়েই বাবাকে বলবে সে ঐ বিয়ে তে রাজি।তারপর চোখ বন্ধ করে সে বিয়ে করে নিবে।এরপর দেখবে এই শোহরাব তাকে কিভাবে জ্বালাতন করে।

শোহরাব বাইক ছেড়ে উঠলো না।কেবল ঘাড় কাত করে রূপসার অল্প অল্প করে হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া দেখে নিলো।তারপরই কিছুটা অবাক হওয়ার অভিনয় করে বলে,’কি আশ্চর্য! আপনারা এতো কৃপণ! বিয়েতে কেবল বর আর বরের ভাতিজি কে দাওয়াত দেন।উহু,পছন্দ হয়নি ব্যাপারটা।’

চলবে-