গল্প #জুলিয়েট
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন
১৩.
রূপম বহু কষ্টে বাসার এড্রেস জোগাড় করেছিল।রূপসার বিয়ের ব্যাপারটা শোনার পর থেকেই তার মাথা কাজ করছিল না।দিদিয়া এই কাজ করবে সেটা তার কল্পনার বাইরে।সে বিশ্বাসও করে না এই কাজ তার বোন করেছে।তার কেবল মনে হচ্ছে রূপসা ভালো নেই।দিদিয়া আর যাই হোক,তাকে একটা ফোন ঠিকই দিতো।পালিয়ে গেলেও তাকে অবশ্যই ফোন দিতো।দিয়ে অন্তত জানাতো কেন সে এই কাজ করেছে।অথচ তিন দিন হয়ে গেছে দিদিয়ার কোনো খোঁজ নেই।
অবশেষে সাইফের মায়ের কথার প্রেক্ষিতে সে অর্কিড প্যালেসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।যদি সেখানে গিয়ে সে ব্যাপারটা নিশ্চিত হতে পারে।এরই মাঝে তার কানে উড়ো খবর এসেছে দিদিয়ার সাথে সত্যিই ঐ লোকের বিয়ে হয়েছে।সম্পর্কে সে দিদিয়ার স্টুডেন্টের চাচা।রূপমের মন আজ ভীষণ অস্থির।ভীষণ ভীষণ অস্থির।
সে বাড়ির গেইটে গিয়েই দারোয়ান চাচাকে ডাকলো।দারোয়ান লোকটা সামনে আসতেই সে অস্থির হয়ে বলল,’আমি একটু বাড়ির ভেতর যেতে চাই।গেইট খুলুন।’
লোকটা তাকে আগাগোড়া দেখলো।তেছড়া চোখে জানতে চাইলো,’কাকে চাই?’
‘আপনাদের মালিকের মেঝ ছেলে।জনাব শোহরাব।উনার সাথে কথা আছে আমার।’
‘শোহরাব স্যার আপনার কি হয়?’
রূপম দম ফেলল।ছোট করে বলল,’কিছুই হয় না।আমি শুনেছি আমার বোন তার কাছে।আমি আমার বোনের খোঁজ নিতে এসেছি।’
দারোয়ান লোকটা আরো একবার তাকে আগাগোড়া পরোখ করলেন।তার কুঁচকে রাখা অক্ষিযুগল দেখেই রূপমের বিরক্তি ধরলো।সে কি কোনো চোর বাটপার নাকি?অদ্ভুত তো।
লোকটা বলল,’দাঁড়ান আপনি এখানে।আমি আপনাকে জানাচ্ছি।’
রূপম আর কথা বাড়ালো না।হাত দু’টো বুকের কাছে বেঁধে চুপচাপ গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলো।তাকে বেশ শান্ত দেখাচ্ছে।তবে ভেতরটা তার অস্থিরতায় ফেটে যাচ্ছে।বাবার শরীরটা ভালো না।রূপমের সাথে তার সম্পর্কের তিক্ততা থাকতে পারে।কিন্তু বাবা তো দিদিয়াকে খুব ভালোবাসে।সাইফের মায়ের ঐ কথা গুলো শুনে বাবা বেশ ভেঙে পড়েছে।এই মুহূর্তে দিদিয়ার সাথে একটু কথা বললে বাবার শরীরটা ভালো হবে বলে রপমের বিশ্বাস।সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।লোকটা একসময় ফিরবে।তারপর রূপম বাড়ির ভেতর যাবে।এরপর কিছু জানলেও জানবে বোধহয়।
___
মারুফ সাহেব তার ঘরেই ছিলেন।ইজি চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে দু’চোখ বুজে শুয়ে ছিলেন।জিনিয়ার বাবার সাথে তার একটু আগে কথা হয়েছে।কি পরিমান লজ্জার সাথে তাকে বিয়েটা বাতিল করতে হয়েছে,সেটা শুধু মারুফ সাহেবই জানেন।এজন্য ছেলের উপর তার যতোটা না রাগ,তার চেয়ে কয়েক গুন বেশি রাগ ছেলের বউয়ের উপর।ঐ মেয়ের কোনো দোষ নেই,এই কথা তিনি মরে গেলেও বিশ্বাস করবেন না।মারুফ সাহেব বড় বড় নিশ্বাস ছেড়ে আধশোয়া হয়ে বসে রইলেন।রেজাউল তার ঘরের দরজায় এসে নক করলো।নিচু স্বরে বলল,’আসবো স্যার?’
মারুফ সাহেব চোখ খুলেন নি।দুই চোখ বুজে রেখেই বললেন,’আসো রেজা।কি হয়েছে?’
‘স্যার বাড়ির বাইরে একটা ছেলে এসেছে।বলল শোহরাব স্যারের সাথে দেখা করতে চায়।’
মারুফ সাহেব ভ্রু কুঁচকালেন।
‘শোহরাবের সাথে?তার সাথে কে দেখা করতে চায় আবার?’
‘জানি না ঠিক।তবে একজনকে অনুমান করতে পারছি।’
‘কে?’
‘রূপসা ম্যামের ছোট ভাই।’
মারুফ সাহেব এবার চোখ খুললেন।বললেন,’ঐ মেয়ের ভাই?’
‘জ্বী স্যার।’
‘কেন এলো?কিছু বলে নি?”
‘বেশ অস্থির ছিলো।কেবল বলল শোহরাব স্যারের সাথে দেখা করতে চায়।’
মারুফ উত্তর দিলেন না।উপর নিচ মাথা নেড়ে কিছু একটা ভাবলেন।রেজাউল বলল,’স্যার।ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।কি বলবো?’
ঘরের দেয়ালঘড়ি টা টিকটিক করে চলছিলো।মারুফ সাহেব ইজিচেয়ারে পুনরায় হেলান দিয়ে চোখ বুজলেন।বললেন,’দাঁড়িয়ে থাকুক বাইরে কিছুক্ষণ।এরপর গিয়ে বলবে,ভেতরে ঢোকানো সম্ভব না।শোহরাব বাড়ি নেই।’
রেজাউল থতমত খেল।এর আগে এমন করে কাউকে বাড়ির দরজা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।সে ভয়ে ভয়ে বলল,’এভাবে ফিরিয়ে দিবো স্যার?ছেলেটা খুব আশা নিয়ে এসেছে।’
‘তো?আমি এখন কি করবো?এসব বড়লোক বাড়ির প্রতি মিডেল ক্লাস মানুষের এমনিতেও আশা আকাঙ্ক্ষা থাকে।তার বোনও নিশ্চয়ই ছলে বলে আমার ছেলের মাথা খেয়েছে।দাঁড়িয়ে থাকুক সে বাইরে।সে এতো গুরুত্বপূর্ণ কেউ না যার জন্য আমি আমার বাড়ির দরজা খুলবো।যাও গিয়ে বলো,শোহরাব নেই।বিদায় করো তাকে।’
রেজাউল কাচুমাচু মুখে দাঁড়িয়ে থাকলো।মনে অনেক কথা ছিলো।কিন্তু মুখ ফুটে কোনোটাই প্রকাশ করলো না।স্যারের কথার উপর তার কিছু বলার নেই।সে মাথা নামিয়ে আস্তে করে বলল,’জ্বী স্যার।ঠিক আছে।’
___
প্রায় ঘন্টাখানেক মূল ফটকের বাইরে দাঁড় করানোর পর রূপমকে জানানো হলো,শোহরাব বাড়ি নেই।তার সাথে দেখা করা যাবে না।রূপম কেমন হতবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকালো।
এক ঘন্টা।পাক্কা এক ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রেখে শুধু জানানো হলো,এখন দেখা করা সম্ভব না।এটা কি আরো আগে জানানো যেত না?রূপম মাথা তুলে কাঠ ফাঁটা রোদ দেখে।রোদের প্রখরতায় মুখ ঝলসে যাচ্ছে।এই রোদে পুড়ে পুড়ে সে বৃথা অপেক্ষা করলো।এরা কি আদৌ মানুষ?
সে আর কিচ্ছু বলে নি।কেবল চুপচাপ হেঁটে এসেছিল সেখান থেকে।কোনো প্রতিক্রিয়া আসছিলো না তার।নিজেকে সার্কাসের জোকার লাগছিলো।
দুপুরের সূর্য তখন মাথার উপরে।মনে হচ্ছিল শরীরের সমস্ত শক্তি ঐ সূর্যটা টেনে নিচ্ছে।রূপম একবার বাম হাতে কপালের ঘামটুকু একটানে ঝেড়ে ফেলল।তারপর একটা ছোটো দীর্ঘশ্বাস আপনাআপনি নিঃশ্বাসের মাঝে বুক চিরে বেরিয়ে এলো।
সেদিন পথ ফুরাচ্ছিল না।রূপম হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে দুই মিনিট চুপচাপ মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলো।তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।মনে হচ্ছে কিছু একটা নেই।কি যেন একটা হারিয়ে গেল জীবন থেকে।হুট করেই সে অঘটন টা ঘটিয়ে ফেলল।বিগত তিনদিন ধরে জমিয়ে রাখা আবেগ গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহের নিচে দাঁড়াতেই চোখ ছাড়িয়ে গালের কাছে নেমে এলো।ভেতরে জমানো অশ্রু শেষমেশ রূপমের সংযম ভেঙে দিলো।রূপমের মনে হলো তার মতো অসহায়,তার মতো অবহেলিত আর কেউ নেই পৃথিবীতে।
বাবার সাথে তার সম্পর্কের যাচ্ছে তাই অবস্থা।মা তো নেই বছরের পর বছর।এই মানুষে ভরা পৃথিবীতে রূপমের মানুষ ক’জন?শুধুমাত্র দিদিয়া।আর তো কেউ নেই।আর সেই দিদিয়ার সাথে রূপমের যোগাযোগ নেই তিনদিন।কোথায় আছে,কেমন আছে কিচ্ছু জানে না সে।আজকাল বুকটা বড় ভার ভার লাগে।চোখ দু’টো টানে ভীষণ।মন চায় নার্সারি পড়ুয়া বাচ্চাদের মতো গলা ছেড়ে কাঁদতে।জীবন একটা বিরক্তিকর বিষয়।
***
রূপসা রোবট হয়ে লিভিং রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিল।লিভিং রুম ভর্তি মানুষ।তৌকি,সানজানা,ফাহিম,স্মৃতি,মেঘা,শোহরাব,নাফিস,টুটুল,তানভীর সবাই লিভিং রুমে।শোহরাব নির্লিপ্ত হয়ে বসেছিল।এক ফাঁকে আবার আড়চোখে রূপসার দিকে তাকালো।সে তখনও সোজা দাঁড়িয়ে।নড়ছিল না।কিছু বলছিলোও না।
স্মৃতি আর মেঘা অন্য পাশের সোফায় বসা।জোহরাও ছিলেন তাদের সাথে।তার প্রেশার ফল করছে একটু পর পর।সংসারে এতো অশান্তি তার ভালো লাগে না।কিন্তু তার ছেলে যে অশান্তি বাঁধিয়েছে,সেটা কয়দিনে ভালো হবে জোহরা জানে না।তার বাবা দু’দিন ধরে জোহরার সাথে কথা বলছে না।এখানে জোহরার দোষ কোথায় সেটাও জোহরা জানে না।
ফাহিম অপরাধীর মতো মাথা নামিয়ে বসেছিল।সে আর রূপসা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।নীতির মাধ্যমে রূপসার টিউশনটা সে ই জোগাড় করে দিয়েছিল।শোহরাবের এই ঘটনার পর লজ্জায় সে আর রূপসার মুখোমুখি হয় না।পুরো ঘটনায় তার নিজেকেই দোষী মনে হয়।শোহরাবের সাথে মজার ছলেও ঐ কথাটা বলা উচিত হয়নি।ফাহিম চায় নি কোনো মেয়ের জীবন এমন করে নষ্ট হোক।
মারুফ সাহেব গলা খাকারি দিলেন।ঘরে উপস্থিত সবাই সেদিকে চোখ নিল।কেবল রূপসা ছাড়া।সে নির্বিকার দাঁড়িয়ে ছিল।আজ এদিকে আসার তার কোনো ইচ্ছে ছিলো না।শোহরাব তাকে কথা দিয়েছে,আজ যদি সে লিভিং রুমে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে,তাহলে কাল সে তাকে তার বাসায় নিয়ে যাবে।
বাসায় যাওয়ার জন্য রূপসার ভেতরটা সেই কবে থেকে ছটফট করছে।সে বাড়ি যেতে চায়।একবার বাবার সামনে বসে সবটা খুলে বলতে চায়।রূপম নিশ্চয়ই তাকে পাগল হয়ে খুঁজছে।বাড়িতে না গেলে অবস্থা আরো খারাপ হবে।বাড়ি যাওয়ার অভিপ্রায়ে রূপসা শোহরাবের শর্ত মেনে নিয়েছে।শোহরাব অন্তত বেঈমানী করবে না তার সাথে।আবার করতেও পারে।রূপসার তার উপর ভরসা নেই।
মারুফ সাহেব দারাজ কন্ঠে বললেন,’বিয়ে শব্দটা অনেক ভারি।কবুল বললাম,আর বিয়ে হয়ে গেল।এটা বিয়ের সংজ্ঞা না।শোহরাবের কাছে হয়তো সেটাই বিয়ে।কিন্তু আমি সেটাকে বিয়ে হিসেবে মানি ই না।’
শোহরাব বাঁকা হাসলো।এক জ্ঞান দশবার ঝাড়ার মাহাত্ম্য কি,তার বুঝে আসে না।সে বিয়ে মানে না,তাতে কার কি যায় আসে?শোহরাব কি একবারও বলেছে যে তাকে এই বিয়ে মানতে হবে?অদ্ভুত লোক।নিজেকে এতো প্রয়োজনীয় ভাবে কেন সে?
মারুফ পুনরায় গলা খাকারি দিয়ে বললেন,’আমি এই মেয়েকে শোহরাবের স্ত্রী হিসেবে মানতে পারব না।তাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নেওয়া সম্ভব না আমার পক্ষে।’
এইবার রূপসা একটু নড়ল।স্থির হয়ে থাকা চোখ দু’টো তুলে মারুফ সাহেবের দিকে তাকালো।তার চোখের কোণায় জল জমেছে।কিসের জল?আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছে বলে কান্না আসছে?নাকি সূক্ষ্ম অপমান তীরের ফলার মতো গায়ে বিঁধেছে বলে এই অশ্রু?
রূপসার শরীরে প্রতিরোধ প্রতিবাদ বলতে কিছু অবশিষ্ট ছিলো না।সে ছিলো নির্জীব,নিরাসক্ত।জীবনের প্রতি কয়েকদিনেই যার তীব্র বিতৃষ্ণা জন্মেছিল।কিন্তু সেই বিকেলে রূপসা নির্লিপ্ত থাকতে পারেনি।নিজের মর্যাদায় বারংবার আঘাত সহ্য না করতে পেরে সে জোর গলায় বলেছিল,’আর আপনাদেরও আমি শ্বশুড়বাড়ির লোক বলে মানি না।আপনার ছেলেকেও স্বামী হিসেবে মানা সম্ভব না আমার পক্ষে।আমি কোনোদিন মানতেও পারবো না।’
মারুফ সাহেব তব্দা খেয়ে তার দিকে তাকালেন।তার চাহনি তে মেয়েটা দমলো না।উল্টো কটমট করে বলল,’আপনার ছেলেকে আমি বিয়ে করিনি নিজ থেকে।সে খুবই বিচ্ছিরি পরিস্থিতি তৈরি করে আমায় বিয়ে করেছে।’
রূপসা দু’টো শ্বাস ছাড়লো।জোহরা গোল গোল চোখে তার দিকে চেয়ে ছিলো।তৌকি আর সানজানার মুখ বিস্ময়ে হা হয়েছিল।রূপসা আরেকবার শ্বাস ফেলে বলল,’আমি আরিবা কে পড়াতাম।শিক্ষকতা কে কি আপনাদের বাড়িতে এতো বাজে চোখে দেখা হয়?জানতাম না তো।আমি এটাকে মহান পেশা হিসেবেই দেখি।আমার বাবা একজন শিক্ষক।আমিও সেই শখ থেকেই টিউশন করাই।আপনারা বুঝি হোম টিউটরদের ভিক্ষুকের চোখে দেখেন?’
মারুফ সাহেব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন।এই মেয়ে বাড়িতে আসার পর একটা শব্দও করেনি মারুফ সাহেবের সামনে।তিনি কল্পনাও করেন নি এই মেয়ে এতো কথা জানে।তার মুখের উপর এমন চড় মারার মতো জবাব কেবল শোহরাবের বউই দিতে পারে।আর কেউ না।
রূপসা হনহনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
যেতে যেতে বলল,’আপনার ছেলের কোনো যোগ্যতাই নাই আমার বর হওয়ার।এসব আলালের ঘরের দুলালকে আমি পাত্র হিসেবে গোনায়ই ধরি না।’
মারুফ সাহেব সেদিন আর কোনো শব্দ করতে পারলেন না।বসার ঘরের লোকজনও ফ্যালফ্যাল করে তার মুখের দিকে চেয়ে রইল।কেবল শোহরাব নিঃশব্দে হাসলো।তার আনন্দ হচ্ছে,সুখ সুখ লাগছে।বাবার থোতা মুখ যে রূপসা ভোঁতা করে দিয়েছে,তাতেই রূপসা কে তার হয়ে এতো গুলো উড়ন্ত চুমু।সোজাসুজি চুমু তো আর দেওয়া যাবে না।তাই আপাতত হাওয়ায় ভাসতে থাকা চুমুই যথেষ্ট।
রূপসা ঘরে এসেই ধপ করে খাটে গিয়ে বসলো।মাথাটা ভীষণ ধরে আছে তার।এই বাড়িটা একদম অসহ্য।রূপম ঠিক কথা বলেছিল।বেশি বড়োলোকদের বাড়িতে সুখ নেই।আবার একেবারে হতদরিদ্র দের বাড়িতেও সুখ নেই।সুখ আছে কেবল মধ্যবিত্তের কাছে।যারা সবকিছু চাইলেও পায় না।আবার পরিশ্রম করে অনেক কিছুই অর্জন করতে পারে।এই বড়লোক গুলো কি পারে?শুধু কথায় কথায় মানুষ কে অপমান করা।এছাড়া আর কিচ্ছু পারে না এরা।
শোহরাব ঘরে এলো আধঘন্টা পরে।এসেই হাসি মুখে বলল,’আমি ঠিক করেছি আমি কাল তোমায় তোমার বাবার কাছে রেখে আসবো।আজ যে তুমি লিভিং রুমে জনাব মারুফ কে ডিটারজেন্ট ছাড়া ওয়াশ দিয়েছো,তাতে আমি খুব খুশি হয়েছি।’
রূপসা পেছন ফিরল।চোয়াল শক্ত রেখে বলল,’অপমানটা আপনাকেও করেছি।’
‘উহু।সেটাকে আমি অপমান হিসেবে নেই নি।’
‘নিবেন কিভাবে?শরীরে অপমান বোধ থাকলে তবে তো।’
শোহরাব শব্দ করে হাসলো।বলল,’আচ্ছা।আজ অপমান করো।মাইন্ড করবো না।’
রূপসা নাক ছিটকে সামনে তাকায়।তারপর মনে মনে কি যেন বিড়বিড় করে।শোহরাব হেঁটে এসে তার পাশাপাশি বসলো।এতেই রূপসা একটু সরে এলো।শোহরাব দেখল,তবে গায়ে মাখলো না।দুই হাতের আঙুল আড়াআড়ি করে বলল,’রূপসা! তুমি কি আমার একটা কথা শুনবে?’
‘না।’
‘প্লিজ।আমি মজা করছি না।’
রূপসা মুখ খিঁচে বসে রইল।শোহরাব গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে বলল,’আমাদের বিয়ে টা যেভাবেই হোক।বিয়ে তো বিয়েই।সেটা কি তুমি মানো?’
‘না,মানি না।এই বিয়ে মানলে আমার পাপ হবে।’
শোহরাব ক্লান্ত শ্বাস ছাড়লো।মাথা নামিয়ে বলল,’আচ্ছা।তোমার মানতে হবে না।কিন্তু আমি মানছি।শোনো রূপসা।আই এ্যাম সরি।আমার তোমাকে ওমন করে বিয়ে করা উচিত হয়নি।আরো অনেকভাবে বিষয়টা হ্যান্ডেল করা যেত।আমি খুবই বাজে পন্থা অবলম্বন করেছি।তবে সেটা না করলে তুমি সাইফকে বিয়ে করে নিতে।আমার মাথায় তাৎক্ষণিক এই চিন্তাই মাথায় এসেছিল।সরি।অনেক অন্যায় করেছি তোমার সাথে।’
রূপসা আচমকাই খিলখিল করে হাসলো।শোহরাব ভড়কে গিয়ে তার দিকে তাকালো।দেখলো রূপসার চোখে জল জমেছে।হাসতে হাসতেই সে অতি অবহেলায় পানিটুকু মুছে নিল।তারপর হুট করেই সে হাসি মিলিয়ে গেল।রূপসা তাচ্ছিল্য করে বলল,’গোটা জীবন এলোমেলো করে সরি বলা হচ্ছে।এই সরিতে আমার জীবন ঠিক হবে?আমার বাবা নিশ্চয়ই পদে পদে অপদস্ত হচ্ছে।তার কি হবে?’
‘আমি তোমার বাবার কাছেও ক্ষমা চাইবো।’
‘তোর ক্ষমা তে কোনো কিছুই পাল্টাবে না।’
‘আমি তবুও চাইবো।’
।
।
~~~~~
।
।
শাহাবুদ্দীন আহমেদ পূর্ণ দৃষ্টিতে সামনে তাকা মেয়েটার দিকে তাকালেন।মেয়েটার মুখে তখনও হাসি।সে হাসছিলো।অথচ তার চোখ দু’টো বার বার ভিজে উঠছিল।
শাহাবুদ্দীন নমনীয় স্বরে বললেন,’মিস রূ…’
চট করে চোখ তুলল সে।শাহাবুদ্দীন আহমেদ থতমত খেয়ে বললেন,’সরি।রিয়েলি সরি।রূপসা।এরপর কি হলো?আপনার হাসবেন্ড আপনার বাবা কে সরি বলেছিল?আপনার বাবা কি তাকে মাফ করেছিল?’
রূপসা হাসলো।রহস্য করে হাসা যাকে বলে।শাহাবুদ্দীনের কাছে সেই হাসি দুর্বোধ্য ঠেকালো।চোখে যন্ত্রনা,অথচ মুখ জুড়ে হাসির রেখা।শাহাবুদ্দীন অপেক্ষায় থাকলেন তার জবাবের।রূপসা কয়েক মুহূর্ত পরেই স্বাভাবিক গলায় বলল,’সরি বলবে কেমন করে?আমার বাবার সাথে তার কোনোদিন কথাই হয়নি।মাফ করার তো প্রশ্নই আসে না।’
চলবে-