জুলিয়েট পর্ব-১৮

0
40

গল্প #জুলিয়েট
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

১৮.

জেসমিন আস্তে করে একটা হাত রূপসার মাথায় রাখলেন।এলোমেলো হয়ে থাকা চুল বিন্যস্ত করে দিতে চাইলেন।রূপসা বাধ্য মেয়ের মতো দুই হাত আড়াআড়ি করে বসেছিল।তাদের সামনের সোফায় জোহরা বসেছিলেন।

জোহরা অনেকটা সময় চুপ থাকলেন।শেষে দু’বার কেশে কন্ঠ পরিষ্কার করে বললেন,’ডিভোর্সই কি সবকিছুর সমাধান রূপসা?আমার ছেলে যা করেছে,সেটা অন্যায়।আমি মানছি।কিন্তু সবকিছুর শেষে ডিভোর্স হলেই জীবন আগের মতো হয়ে যাবে?তুমি একবার ভেবে বলো তো?সত্যিই কি জীবন আগের মতো হবে?’

রূপসা কোনো উত্তর দিলো না।উত্তরটা জটিল।ডিভোর্স হলে সে এই যন্ত্রনাময় সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাবে।কিন্তু জীবন কি তখন খুব বেশি সুন্দর হবে নাকি এই প্রশ্নে রূপসা বরাবরই থমকে গেছে।ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেছে,একবার বিয়ে হয়ে গেলে তারপর আর নতুন সূচনা বলতে কিছু হয় না।যেটা হয়,সেটা হলো দ্বিতীয় সূচনা।অবিবাহিত এবং ডিভোর্সড,,দু’টো শব্দ তো এক না।কোনো দিক দিয়েই এক না।

জেসমিন শান্ত হয়ে বললেন,’আরেকবার ভেবে দেখো রূপসা।আমি কখনোই তোমাকে জোর করবো না।এটা তোমার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।যদি তোমার মনে হয় যে কোনোভাবেই তুমি ঐ সংসারটা করতে পারবে না,তাহলে ডিভোর্সের সিদ্ধান্তেই অটল থাকো।নয়তো পুরো বিষয়টা আরো একবার ভেবে দেখো।’

রূপসা শূন্য চোখে জেসমিনের দিকে তাকায়।কাঁপা স্বরে বলে,’শোহরাবের বাবা কে দেখলেই তো আমি ঠিক থাকতে পারবো না মণি।’

জোহরা লজ্জায় মাথা নুয়ালেন।অপরাধবোধে তার শরীর আড়ষ্ট হলো।তিনি আর সহজে মেঝে থেকে চোখ তুললেন না।
জেসমিন বললেন,’আমি সবটাই বুঝি রূপসা।সেজন্যই সিদ্ধান্তটা তোমার উপর ছেড়ে দিলাম।তুমি যা ভালো মনে করো,সেটাই করবে।তোমার সব সিদ্ধান্তেই আমরা তোমার সাথে আছি।’

রূপসা তাৎক্ষণিক কিছুই বলল না।দু’দিন যাবত সে কেবল ঘরের এক কোণায় বসে বসে ভাবল।কি ভাবলো,সেটাও সে জানে না।সবসময় মাথাটা ভার ভার হয়ে থাকে,চারপাশ ঘোলা দেখায়।মনে হয় এক্ষুণি সে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবে।কিন্তু সে পড়ে না।তার মাঝে মাঝে মনে হয়,তার দম আটকে গেছে।অথচ সেটাও আটকায় না।সে দিব্যি শ্বাস নিচ্ছে।কি সুন্দর বেঁচে আছে!

এক জীবনে কি মানুষ সবকিছু পায়?রূপসা সিদ্ধান্ত নিল সে জোহরার কথাই শুনবে।সে সংসার করবে।যদিও সেই সংসারে প্রেম কবে আসবে,সে জানে না।আদৌ প্রেম হবে নাকি সেটাও জানে না।যেটা হবে তা হলো মাটি কামড়ে পড়ে থাকা।দাঁত খিঁচে সবটা মেনে নেওয়া।ব্যাস ঐটুকই।যাক।সেটাই নাহয় হবে।ডিভোর্স হলেও বা রূপসা কোথাকার রাজ্য জয় করবে?ঐ ঘুরে ফিরে এক ই কথা।

__

শোহরাবের বোধহয় দু’তিন দিন পর ডিসচার্জ হবে।গত মাস থেকেই সে হাসপাতালে আছে।এখন অবস্থা বেশ ভালো।

রূপসা সেদিন হাসপাতালে গেল।মনে মনে সে মনঃস্থির করে নিয়েছে।রূপম সবটা শুনতেই রাগ দেখিয়ে বলল,’মানুষের কথায় তুমি নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছ দিদিয়া! তুমি সত্যিই পারবে ঐ ছেলের সাথে সংসার করতে?’

রূপসা ভাবলেশহীন হয়ে বলল,’পারবো না কেন?অবশ্যই পারবো।কতো মেয়ে মার খেয়েও সংসার করে।সেখানে আমি কেন পারব না?ঠিক পারব ছোট।তুই অতো ভাবিস না।’

রূপমের ধারণা,দিদিয়া অভিমান করেছে।সবার সাথে তার তীব্র অভিমান।নিজের সাথে অভিমান করেই বোধহয় বিয়েটা মেনে নিয়েছে সে।অথচ কোথায় যেন একটা কিন্তু,একটা অস্বস্তি থেকেই গেল।

____

রূপসা করিডোরে পা রাখতেই দু’টো কন্ঠের কথপোকথনে থেমে গেল।পদযুগল আপনাআপনি মাটির সাথে স্থির হয়ে আটকে গেল।

করিডোরের শেষ মাথায় মারুফ সাহেব আর জোহরা দাঁড়িয়েছিলেন।তারা তখনো রূপসা কে দেখেনি।রূপসা দুই পা পিছিয়ে এলো।এমনভাবে দাঁড়ালো,যেন তারা তার তাকে দেখতে না পায়।

মারুফ সাহেব তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন,’তো তোমার ছেলে ঐ মেয়ের সাথে সংসার করবে বলেই ঠিক করেছে?’

জোহরা মাথা নামিয়ে বললেন,’জ্বী।’

মারুফ সাহেব মুখ বিকৃত করলেন।বিকৃত মুখেরই বললেন,’তোমার ছেলের রুচি!’

জোহরা উত্তর দেয় না।প্রতিক্রিয়াহীন দাঁড়িয়ে থাকেন আগের মতো করে।শুধু একবার মিন মিন করা গলায় বললেন,’আস্তে কথা বলো।রূপসা যেকোনো সময় চলে আসবে।’

মারুফ সাহেব আস্তে কথা বললেন না।উল্টো আরো বেশি ক্ষেপে গিয়ে বললেন,’তো?আসলে?এখন কি ঐ মেয়ের জন্য আমায় মেপে মেপে কথা বলতে হবে?’

‘এমনটা বলি নি।’

‘শোনো জোহরা! ঐ মেয়েকে তোমরা চেনো না।সব তার নাটক।মুখে শুধু বলছে,বিয়ে মানে না,সংসার করবে না হ্যান ত্যান।দেখবে আজ ঠিকই কাচুমাচু হয়ে এসে বলবে বিয়েটা সে মেনে নিয়েছে।ওসব সো কল্ড মধ্যবিত্তদের তুমি চেনো না।এরা খুব লোভী হয়।টাকা দেখলেই এদের হুশ থাকে না।’

জোহরা খপ করে তার একটা হাত টেনে ধরে অনুনয় করে বললেন,’দয়া করে এসব কথা বলবেন না।আপনি তো অন্তত জানেন,আপনার ছেলে যে তাকে চায়।অন্তত সেটা ভেবে চুপ হয়ে যান।রূপসা বোধহয় এতোক্ষণে চলেও এসেছে।এসব কথা সে শুনতে পেলে কি হবে ভাবেন?’

মারুফ সাহেব ঝাড়ি মেরে তার হাত সরিয়ে দিলেন।তাচ্ছিল্য করে বললেন,’শুনলেই বা কি?শোনার পরেও সে ধেই ধেই করে সংসারই করবে।যেই বাড়ি গাড়ি চোখে দেখেছে! আর এই জীবনে ডিভোর্সের নাম মুখেও নেবে না।’

তিনি হনহনিয়ে করিডোর অতিক্রম করে চলে গেলেন।এক জোড়া পা খুব ধীর গতিতে করিডোর থেকে আড়াল হলো।একটা মূর্ছা যাওয়া হৃদয় আরো এক দফা যন্ত্রনায় কাতর হলো।গত দুই এক মাসে প্রতিটা মূহুর্ত কিছু একটা গলার কাছটায় এসে আটকাচ্ছিল।না সে গিলতে পারতো,আর না উগলে দিতে পারতো।

রূপসা এলোমেলো পায়ে শোহরাবের কেবিনে গেলো।শোহরাব তাকে দেখতেই মুচকি হাসলো।উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে বলল,’হেই মিস! এসো।বসো এদিকটায়।তোমার কথাই ভাবছিলাম।’

রূপসা বসলো,ঠিক কোনো জড় পদার্থের মতোই।শোহরাব হসপিটাল বেডে হেলান দিয়ে বলল,’আমার একটা বাজে স্বভাব হয়েছে মিস।’

রূপসা নিরাসক্ত গলায় বলল,’কি?’

‘আমার তুমি বাদে কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না।তুমি আসার সময় হলেই আমার খুশি খুশি লাগে।’

রূপসা ছোটো করে বলল,’ওহহ্।’

শোহরাব হাসি থামাল।একবার গলা খাকারি দিয়ে কন্ঠ পরিষ্কার করে বলল,’রূপসা!’

‘হুম।’

‘কি ভাবলে তুমি?কাল তো আমায় ছেড়ে দিবে এখান থেকে।তুমি যাবে আমার সাথে?’

রূপসা তার দিকে তাকাল।সেই চোখে অনেক চেষ্টার পরেও শোহরাব কোনো অনুভূতি দেখতে পায়নি।রূপসা যন্ত্রের মতো করে বলল,’শোহরাব! আমার মুক্তি চাই।আপনি কি প্লিজ যতো দ্রুত পারেন,আমায় ডিভোর্স দিবেন?’

শোহরাব ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকাল।তারপর আনমনে একটা ঢোক গিলল।ফিচেল হেসে বলল,’হুম।’

দখিনের জানালা দিয়ে আজ আর ঠান্ডা বাতাস কেবিনে আসলো না।প্রজাপতিরা ডানা মেলল না,কানের কাছে মিষ্টি শব্দে বাঁশি বাজলো না আর।শোহরাব পুরোপুরি গা ছেড়ে দিয়ে ঠান্ডা স্বরে বলল,’দিবো রূপসা।দিয়ে দিবো তোমায় ডিভোর্স।’
.
.
.
.
অর্ক শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছিল।উচ্চ মাধ্যমিকের শেষ সময়টা সে অমানুষিক খাটুনি খেটেছে।শেষে বাবার মন জুগিয়ে পরীক্ষায় বসার অনুমতিও পেয়েছে।এর আগে অবশ্য বেশ ভালো পরিমান টাকা আয় করতে হয়েছিল।

উচ্চ মাধ্যমিকের পর জীবনটা অর্কর কাছে স্বপ্নের মতোই মনে হলো।তিন মাসের পরিশ্রম শেষে সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে।দেশের সেরা মেডিকেল।যেদিন রেজাল্ট হাতে পেল,সেদিন তার মনে হলো এতোদিনের সমস্ত কষ্ট স্বার্থক।রূপম আর সে সেদিন অনেকটা সময় বাইরে ঘুরল।অর্ক ঘোরাঘুরির মানুষ না।তবে সেদিন কেন যে ঘুরলো।বাড়ি ফেরার আগে শতাব্দীর জন্য এক ডজন চুড়িও কিনলো।

সে তারপর থেকে হোস্টেলেই থাকে।ক্লাস শুরুর পরেই সে বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।বলা যায়,এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাড়ি ছাড়তে হয়েছে তাকে।বাবা চাইছিলো সে মেডিকেলে না পড়ে যেন কোনো বড়ো কারখানায় কাজ নেয়।অর্ক তাকে কতোবার কতোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করল।অথচ তিনি একবারও ছেলের কথা বিবেচনায় নিলেন না।পরে শেষমেশ আর উপায় না পেয়ে অর্ক বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।সে এখন মেডিকেল কলেজের হলেই থাকে।

তার বাড়ি ছাড়ার পর সবচেয়ে বেশি একা হয়েছে শতাব্দী।একমাত্র তার সাথেই সে ভালো করে কথা বলতো,মন উজাড় করে দুঃখের কথা ভাগাভাগি করতো।এখন আর অর্ক বাড়িতে নেই।শতাব্দীর তার কথা খুব মনে পড়ে।মনে পড়লেই তার ভেতরটা কেমন আনচান করে।

বাড়িটা এখন কেমন মরা বাড়ি হয়ে আছে।অর্ক যাওয়ার পর শতাব্দীর চঞ্চলতাও হুট করে কমে গেছে।সারাদিন মায়ের বকুনি আর বাবার উল্টাপাল্টা কথা শুনতে শুনতে তার শরীর বিষিয়ে গেছে।এখন মন চায় সব ছেড়ে ছুড়ে কোথাও চলে যেতে।

রূপম মাঝে মাঝে বাড়ি আসে।শতাব্দীর সাথে তার টুকটাক কথা হয়।তারপর আবার চলে যায়।রূপম পড়াশোনা করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।অর্কর সাথোও তার যোগাযোগ আছে।সে বাড়ি এলে শতাব্দী একটু স্বস্তি পায়।শান্তিতে অনেকটা সময় কথা বলা যায়।

শতাব্দীর তাকে কোনোদিন জানানো হয় নি,সে তার কাছে আসলে কি।কোনোদিন নিজ থেকে অনুভূতির বর্ণনা করার মতো সাহসী শতাব্দী হয়ে উঠতে পারে নি।প্রতিদিন একবার করে মনে খেয়াল আসতো,,সে চট করে রূপমের হাত টা ধরে তারপর করুণ স্বরে বলবে,’রূপম ভাই! তুমি প্লিজ আরো কিছুটা সময় থাকো।যাওয়ার সময় আমাকেও সাথে নিয়ে যেও।এ বাড়িতে আমার আর ভালো লাগে না।’

অথচ সে কথা কখনই বলা হয় না।রূপম যেই কিছুটা সময় থাকে,শতাব্দী মৌমাছির মতো তার মাথার কাছে ভোঁ ভোঁ করে।রূপম কিছু বলে না।চুপ হয়ে তার কথা শুনে।তারপর সন্ধ্যা নামলে আবার বাড়ি চলে যায়।শতাব্দীর বোকা মস্তিষ্ক কোনোদিন এই কথা জানতে চায়নি,অর্কের বন্ধু কেন অর্কের অনুপস্থিতিতেও তার বাড়ি আসা বন্ধ করেনি।কখনো এই খেয়াল মাথায় আসে নি যে রূপম আসলে কার জন্য বাড়ি আসে?

রূপম কথার ফাঁকেই মাঝে মাঝে আড়চোখে তারদিকে তাকায়।ভারি গলায় প্রশ্ন করে,’কিছু খাবে শতাব্দী?কিছু খেতে ইচ্ছে হয়?’

শতাব্দী মাথা নেড়ে জানায়,’নাহ্।’

রূপম মানিব্যাগ থেকে দু’শো টাকা বের করে তার হাতে দেয়।গম্ভীর হয়ে বলে,’কিছু খেয়ে নিও মন চাইলে।আমার নিজের হাতেও টাকা নেই আপাতত।’

____

রূপসার জীবন চলছিল এক প্রকার দায়সারা ভাবে।সেদিনের ঘটনার প্রায় সাত মাস হয়ে গেছে।রূপম কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা দিয়েছে।রূপসারও একটা ইয়ার ফাইনাল হয়ে গেছে।এতো কিছুর মাঝেও যা হয়নি তা হলো তাদের ডিভোর্স।

শোহরাবের সাথে তার দু’তিন সপ্তাহে একবার কথা হয়।তাও শুধুমাত্র ডিভোর্সের ব্যাপারে।সে প্রতিবারই গড়িমসি করে।আজ এই কাগজ নেই,কাল সেই কাগজ নেই বলে প্রতিদিন নতুন নতুন অযুহাত বানায়।রূপসা এতোদিনে ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে।শোহরাবকে আর সে ফোন দেয় না।তবে শোহরাব মাঝে মাঝে ফোন দেয়,বেশ রাত করে।রূপসা ফোন তুললেই মিষ্টি হেসে বলে,’ফোন কাটবে না।ফোন কাটলে তুমি আমার বউ।’

রূপসা পুরোটা সময় বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে রাখে।শোহরাব তাকে গল্প বলে।জীবনের গল্প।বেঁচে থাকার গল্প।জোনাকিদের গল্প।একটা ফুলের গল্প।রূপসা সেই গল্পে ভাটা দেয়।উদগ্রীব হয়ে বলে,’ডিভোর্স টা কবে হবে সেটা বলুন।’

শোহরাব হাসে।বলে,’হবে হবে।বিচ্ছেদই আমাদের পরিনতি মিস।তুমি না চাইলেও সেটা হবে।’

‘কবে হবে?’

‘সেটা আমি জানি না।আল্লাহ ভালো জানে।’

রূপসা আরেকদফা বিরক্তিতে মুখ কুঁচকায়।শোহরাব ইদানিং খুব হেয়ালি করে কথা বলে।সেই কথা রূপসার বোধগম্য মনে হয় না।সে তাকে কতোরকম গল্প শোনায়।রূপসা কানে ফোন চেপেই ঘুমিয়ে যায়।সে গল্পের অর্থ আর জানা হয় না।

___

শতাব্দীর বিয়ে ঠিক হয়েছে।তার বাবা হঠকারিতায় এই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পাত্র তার চেয়ে এক যুগ বড়ো।দেখতে ভালো না,আচরণ ভালো না।কথাবার্তায় কোনো মাধুর্য নেই।তার সাথে প্রথম দেখা হতেই শতাব্দীর বুক ফেঁটে কান্না এলো।

এই খবরটা অর্ক কে দেওয়া হয় নি।বাবা কঠিন মুখে বারণ করেছে।বার বার বলেছে,অর্ক পর্যন্ত যেন এই খবর না যায়।শতাব্দী শুধু বলেছিল,এই লোক এতো বুড়ো।আমি তাকে বিয়ে করবো না।

তাতেই তার গালে পড়েছে শক্ত হাতের তিনটে টসটসে চড়।আর সাথে সারা শরীরে অগণিত প্রহার।বাবার দ্বারা আঘাত পাওয়া শতাব্দীর জন্য নতুন কিছু না।তবে এবার যেন সবকিছুই মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল।বাবা নাছোড়বান্দা।এই বিয়ে দিবেই দিবে।শতাব্দীর হাতে উপায় বলতে যেটা অবশিষ্ট ছিলো,তা হলো গলায় দঁড়ি দেওয়া।কিন্তু আত্ম’হ’ত্যা করতে বুকে যে সাহস লাগে,শতাব্দীর সেটাও ছিলো না।ফলে অপ্রত্যাশিত এবং দুঃস্বপ্নের মতো মনে হওয়া সেই বিবাহের অপেক্ষা করা ব্যতীত শতাব্দীর আর কিছুই করার ছিলো না।

রূপম এক বিকেলে তাদের বাড়ি এলো।শতাব্দী ছিলো নিজের ঘরে।বাইরের ঘরে তার কন্ঠস্বর শুনেই সে ছুটে এলো।মা তখন বাসায়।শতাব্দী দরজায় দাঁড়াতেই রূপম তাকে দেখল।শতাব্দীর ইচ্ছে হলো ছুটে গিয়ে তার হাত দু’টো আঁকড়ে ধরতে।তারপর কেঁদে কুটে বলতে,’রূপম ভাই! তুমি কিছু একটা করো।’
কিন্তু মায়ের তুখোড় দৃষ্টির সামনে শতাব্দী আর কিছুই বলতে পারে নি।

রূপম তাকে দেখতেই সৌজন্য দেখিয়ে হাসল।বলল,’কেমন আছো শতাব্দী?’

‘জ্বী ভালো।’

‘তোমার নাকি কিছুদিন বাদে বিয়ে?’

শতাব্দী কোনোরকমে বলল,’হুম’

‘বাহ্।’
রূপম স্থির হয়ে বসে থাকল।বুকের বা পাশের যন্ত্রনা ছ্যাৎ করে উঠে আবার একেবারে শান্ত হয়ে গেল।শতাব্দী দু’হাতে পরনের কাপড় টা খাঁমচে ধরে দরজা থেকে সরে এলো।মা ইচ্ছে করে আজ বসার ঘর থেকে সরেনি।যেন শতাব্দী রূপম কে কিছু বলতে না পারে।

বলা হয়,চোখ নাকি মনের আয়না।তাহলে রূপম কি সে আয়নার উঁকি দিয়ে একবারও শতাব্দীর মনের কথা জানতে চায়নি?বুঝতে চায়নি যে শতাব্দী আসলে কি চায়?

রূপমের সাথে এরপর তার আর দেখা হয়নি।দিবা রাত্রির পর্যায়ক্রমে একেকটা দিন শেষ হয়ে আসছিল।শতাব্দী রুদ্ধশ্বাস নিয়ে অপেক্ষা করছিলো তার বিয়ের দিনের।অর্ক ভাইয়া কি একবারো আসবে না?কোনো ভাবেই কি শতাব্দী এই যাত্রায় উদ্ধার হবে না?

____

রূপম ভবঘুরে হয়ে গলির মাথায় হাঁটাহাঁটি করছিল।তৎক্ষণাৎ একটি বাইক তার সামনে এসে থামল।সে হকচকিয়ে উঠে দু’কদম পিছিয়ে এলো।প্রথমে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ হেলমেট পরা লোকটার দিকে তাকালো।তারপর কেমন করে যেন তাকে চিনে নিল।

শোহরাব হেলমেট খুলল।তার মুখে বরাবরের মতোই স্নিগ্ধ হাসির রেখা।রূপম বলল,’তুমি এদিকে?’

‘হুম।তোমাদের দেখতে এলাম।’

‘তোমার দেখার কোনো প্রয়োজন নেই আমাদের।’

শোহরাব বাইক থেকে নেমে স্বাভাবিক গলায় বলল,’তা হয়তো নেই।কিন্তু আমার তোমাদের দেখতে ভালো লাগে।এখন বলো,মুখ লটকে রেখেছো কেন?’

‘মুখ লটকে রাখিনি।আমার মুখ এমনই।’

শোহরাব সাথে সাথে কিছু বলল না।একটু পরে দুই হাত বুকে বেঁধে সন্দিহান হয়ে বলল,’প্রেম জনিত কোনো সমস্যা?’

রূপম তাকালো তার দিকে।শক্ত হয়ে বলল,’নাহ্।এমন কিছুই না।’

‘আমায় কিন্তু বলতে পারো।টিপস দিতে পারি।’

রূপম বাঁকা চোখে তার দিকে তাকালো।তাচ্ছিল্য করে বলল,’তোমার থেকে টিপস নিবো?তুমি কেমন করে আমার বোন কে বিয়ে করেছো মনে নেই?’

শোহরাব গম্ভীর হয়ে বলল,’সেজন্যই তো আমাদের আর সংসার হয়নি।তোমায় ওমন কিছুই করতে হবে না।আগে বলো কাহিনি কি?’

রূপম বিরক্ত হয়ে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।শোহরাব নড়ল না।তার ধারণা,রূপম কোনো কিছু নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত।সে আর দু’মিনিট পরেই নিজ থেকে শোহরাবের কাছে সবটা খুলে বলবে।শোহরাব অপেক্ষা করে।তার পেছন ফিরার অপেক্ষা,শোহরাবকে সবটা খুলে বলার অপেক্ষা।

তার ধারণা কে সত্যি প্রমাণ করে রূপম একটু পরেই তার দিকে ফিরল।প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করল।তারপর খোলাসা করে বলল,’আমার বন্ধুর বোনের বিয়ে দু’দিন পর।’

‘হুম।তো?’

আরেকদফা অস্বস্তি।রূপম গলা খাকারি দিয়ে বলল,’তো কাল তার বাড়ি যাওয়ার পর তার সাথে দেখা হলো।আমার কেন যে মনে হচ্ছে সে এই বিয়েতে রাজি না।’

শোহরাব ভাবুক হয়ে বলল,’বড়ই চিন্তার বিষয়।’

রূপম বলল,’তার ভাই কে ফোন দিবো নাকি বুঝতে পারছি না।পারিবারিক বিষয়।তার উপর অর্কর নাকি পরীক্ষা।এই নিয়ে খুব দোলাচালে ভুগছি।’

‘তুমি মেয়েটাকে পছন্দ করো?’

শোহরাব সানগ্লাস খুলে সরাসরি রূপমের দিকে তাকালো।রূপমের অস্বস্তি বেড়ে হলো দ্বিগুন।চোখের দৃষ্টি নিচে নামতে নামতে জমিন পর্যন্ত এসে থামলো।সে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে একেবারে ক্ষীণ স্বরে বলল,’হুম।কিছুটা।’

‘গুড।আর মেয়েটা?’

‘জানি না।’

শোহরাব নির্বিকার হয়ে বলল,’যদি মেয়েটাও পছন্দ করে,তাহলে এক কাজ করো।’

রূপম কপাল কুঁচকে বলল,’কি কাজ?’

‘তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলো।’

রূপম আঁতকে উঠল।অবিশ্বাস্য স্বরে বলল,’কিহ!!পা’গল তুমি?’

‘উহু।পা’গল না।এটাই সবচেয়ে বেস্ট সলিউশন।’

রূপম একহাত সামনে তুলে বলল,’ধন্যবাদ তোমার সলিউশনের জন্য।তোমার মাথায় এসবই আসবে।যে লোক এমন ধরে বেঁধে বিয়ে করতে পারে,তার কাছে উপায় জানতে চাওয়াই আমার ভুল হয়েছে।’

শোহরাব ঠোঁট উল্টে বলল,’ঠিক আছে।যা তুমি ভালো বোঝো।আমার নম্বর তো আছেই তোমার কাছে।যদি তুলে নেওয়ার দরকার পড়ে,তাহলে আমাকে বলবে।আমি তোমায় সাহায্য করব।’

রূপম বিরক্ত হয়ে বলল,’তুমি যাও তো।তোমার এসব বুদ্ধি তোমার কাছেই রাখো।’

শোহরাব হাসল।কাঁধ উঁচিয়ে বলল,’ওকে শালা বাবু! এজ ইউ উইশ।’

বলেই সে বাইকে বসে চাবি ঘোরালো।তারপর চোখের নিমিষে কালো রঙের বাইকটা সাঁ সাঁ করে দৃষ্টির আড়াল হলো।রূপম দাঁত কিড়মিড় করে বলল,’অতো বড় এক্সিডেন্টের পরেও বাইকে হাত দিচ্ছে।শিক্ষা হয় না।’
.
.
.
অনুভূতি শব্দটা বরাবরই ভীষণ জটিল।অনেক কিছুই ঘটে যাওয়ার আগে বেশ স্বাভাবিক মনে হলেও ঘটে যাওয়ার সময়,কিংবা ঘটে যাওয়ার পর বেশ অস্বাভাবিক লাগে।

শতাব্দীর বিয়ের ক্ষেত্রেও এমনটাই হলো।বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসতেই রূপমের হৃদস্পন্দন তরতর করে বাড়তে লাগলো।একটা অদ্ভুত কষ্ট তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়াতো।রূপম সেই কষ্ট সহ্য করতে পারতো না।

শতাব্দীর বিয়ের আগের দিন রাতে সে খুব করে ভাবল।তারপর একসময় নিজের অনুভূতির কাছে পরাস্ত হয়ে সে একজন কে ফোন দিলো।দিয়ে বলল,’আমি আর পারছি না।তুমি প্লিজ তোমার বাইকটা নিয়ে আমাদের বাড়ির সামনে এসো।’

___

আরো একটি নির্ঘুম রজনী।শতাব্দী মায়ের পাশে শুয়ে ঘন ঘন শ্বাস ফেলছিলো আর আকাশ দেখছিলো।তাদের খাট জানালার পাশে রাখা।সেখান থেকে আকাশ দেখা যায়।শতাব্দী আকাশ দেখে,তারা দেখে,তারপর দেখে ভোর হওয়া।
গত কিছুদিন যাবত সে এভাবেই জেগে জেগে রাত পার করছে।তার ঘুম আসে না।কেমন যেন ছটফট লাগে।সিলিংয়ের দিকে তাকালেই মন চায় একটা অঘটন ঘটাতে কিন্তু। অতো সাহস তার কবেই বা ছিলো?

___

‘শতাব্দী! ‘ একটা পুরুষালী কন্ঠ হিশহিশ করে তার নাম নিলো।
শতাব্দী ধড়ফড়িয়ে উঠল।সেই একই কন্ঠটা আবারো ডাকে,’শতাব্দী! শুনছো?’

শতাব্দীর তখন রুদ্ধশ্বাস অবস্থা।সে বুকে হাত দিয়ে বিড়বিড় করে দুরুদ পড়া শুরু করল।সেই হিসেবে জ্বীন ভূত হলে এতোক্ষণে চলে যাবার কথা।কিন্তু পুরুষালি কন্ঠটা আগের মতো করেই ডাকে,’শতাব্দী এদিকে তাকাও।আমি রূপম।’

শতাব্দী দ্রুত জানালার দিকে তাকায়।রূপম জানালার এক কোণায় জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে হামাগুড়ি দিয়ে জানালার কাছে এলো।জানালার শিকে হাত রেখে ফিসফিস করে বলল,’তুমি?’

রূপম শুরুতে কেমন হচকচাল।শেষে মৃদুস্বরে বলল,’শতাব্দী তুমি কি সত্যিই বিয়েটা করতে চাও?’

শতাব্দীর দু’চোখ ভরে এলো।সে দু’দিকে মাথা নেড়ে বলল,’না না।করতে চাই না।বাবা জোর করে দিচ্ছে।’

রূপম কিছুক্ষণ নিরব থাকে।শেষে অত্যাধিক চাপা স্বরে বলে,’পালাবে শতাব্দী?আমার ভরসায় পালাতে হবে।এরপর কি হবে জানি না।’

___

রূপসা দরজা খুলতেই হতভম্ব হয়ে গেল।রূপম একটি মেয়েকে পাশে নিজে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটার মুখে ভয় আর অস্বস্তি মিশে আছে।রূপমকেও বেশ অপ্রস্তুত দেখালো।তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে শোহরাব,বুকে হাত বেঁধে।

রূপসা আশ্চর্য হয়ে বলল,’তোমরা?এই মেয়ে কে?’

তখন ভোরের আলো ফুটেছে মাত্র।শোহরাব বিরক্ত হয়ে বলল,’সব বাইরে থেকে শুনবে নাকি?ভেতরে আসতে দাও।’

রূপসা দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো।শোহরাব ঘরে এসে বলল,’ওর নাম শতাব্দী।ওর বাবা ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার বিয়ে ঠিক করেছেন।তাই আমরা তাকে তুলে এনেছি।’

রূপমা চেঁচিয়ে উঠলো,’কি?কি করেছেন?’

‘তুলে এনেছি।’

‘কেন?’ চাপা আর্তনাদ করে প্রশ্ন করল সে।

শোহরাব নির্বিকার হয়ে বলল,’কারণ আর কোনো উপায় ছিলো না।’

রূপসা বড় বড় পায়ে রূপমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।তার কাঁধে হাত রেখে অবাক হয়ে বলল,’ছোট! এটা সত্যি?ঐ লোক যা বলছেন সেটা কি সত্যি?’

রূপম জবাব দিলো না।মাথাটা আরো বেশি নিচে নামিয়ে কেমন যে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।রূপসার সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হলো।রূপম যে এই কাজ করতে পারে,সেটা কখনো তার ভাবনায় আসে নি।সে পেছন ফিরে মেয়েটাকে দেখল।তার গালে হাত ছুঁয়িয়ে বলল,’তোমায় কেউ জোর জবরদস্তি করে আনে নি তো শতাব্দী?আমাকে বলো।’

শতাব্দী ডানে বায়ে মাথা নাড়ল।রূপসা স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ছাড়লো।তারপর পাশ ফিরে দু’হাত কোমরে রেখে প্রশ্ন করল,’এখন?তুলে তো এনেছেন।বাকি ঝড় আমি সামাল দিবো কেমন করে?’

শোহরাব সোজাসাপ্টা উত্তর দিলো,’বিয়ে করিয়ে দাও।সব ঝামেলা মিটে যাবে।’

*

বিয়ে করাতে গিয়ে বাঁধলো আরেক ঝামেলা।শতাব্দীর এখনো এনআইডি হয় নি।সুতরাং রেজিস্ট্রি বিয়ে তার পক্ষে সম্ভব না।অবশেষে আর উপায় না পেয়ে কাজি ডেকে তাদের বিয়ে পড়ানো হলো,একদম ইসলামী রীতি অনুযায়ী।বিয়ের প্রধান সাক্ষী হলো শোহরাব।সাক্ষী হতে পেরে তার আনন্দ ছিলো আকাশ ছোঁয়া।রূপসা লটকানো মুখে তার সমস্ত অভিব্যক্তি দেখে।

বিয়ের পর শতাব্দীর বাড়ি থেকে আসা সমস্ত ঝামেলার দায়ভারও শোহরাবই নিল।রূপসা জানে না কোন যাদুবলে শোহরাব এই কাজ করেছে।কিন্তু বিয়ের বিশ দিনের মাথায় শতাব্দীর পরিবার নরম হয়ে এলো।তারা সবাই শেষ পর্যন্ত বিয়েটা মেনে নিল।যেটা রূপসা স্বপ্নেও ভাবেনি।এক শুক্রবারে অর্ক সহ তারা সবাই তাদের বাড়িতে নেমতন্ন খেয়ে গেল।রূপসা আবার ভদ্রতা দেখিয়ে শোহরাবকেও ডাকলো।

পরে যখন মেহমান ধীরে ধীরে কমতে শুরু করল,তখন শোহরাবের মুখোমুখি হয়ে বলল,’শোহরাব! আপনি সবকিছুর সময় পাচ্ছেন।কিন্তু ডিভোর্সের সময় পাচ্ছেন না।এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?’

শোহরাব হাসল।
‘নাহ্।অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য না।আমি আসলে কাগজে কলমে তোমায় ছাড়ছি না।’

রূপসা ভ্রু কুটি করল।
‘মানে?’

শোহরাব হাতটা আকাশের দিকে টেক-অফ করার ভঙ্গিতে বলল,’আমি আর কিছুদিনেই উড়াল দিচ্ছি।তুমি বসে থাকো তোমার ডিভোর্স নিয়ে।’

সেদিন রূপসা তার কথা বুঝেনি।পরে অবশ্য বুঝেছিলো।যখন শুনলো,শোহরাব হঠাৎই কাউকে কিছু না জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছে।যেতে যেতে রূপসার সাথে তার আর দেখা হয়নি,আর না হয়েছিল কাগজে কলমের বিচ্ছেদ।

চলবে-