#জোছনায়_ঘর_তোর_আমার
#সূচনা_পর্ব
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
কোথাকার কোন দু’টাকার মেয়ের জন্য একজন এমপির মেয়েকে রি”জে”ক্ট করছে আপনার ছেলে ভাইজান!
সিকদার পরিবারের মানসম্মান ধূলিসাৎ করে,সরকারি কলেজে গিয়ে ওই মেয়েটার জন্য মারা*মারি করে এসেছে আপনার ছেলে!আমার রেপু’টেশন, এতোদিনের কামানো সম্মান ওর একটা বোকামির জন্য আজ শেষ হতে চলেছে!লোকের মুখে মুখে রটেছে এপমির ভাই পো যেখানে সেখানে গু”ন্ডামি করে বেড়ায়!
আপনি ছেলেকে বুঝাচ্ছেন না কেনো ভাইজান?আমাদের পরিবারে বউ হওয়ার যোগ্যতা কোনো সাধারন পরিবারের মেয়ের হতেই পারে না!
—,,যোগ্যতা বিচার করে ভালোবাসা হয় না রেদোয়ান!
রাহাদ যাকে পছন্দ করবে সে মেয়েই তার জীবনসঙ্গী হবে।এসব বিষয় নিয়ে কথা বলাটা তোমার বা আমার কারোরই সাজে না।ছেলে মেয়েরা বড় হলে তাঁদের নিজস্ব পছন্দ অপছন্দ থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
রাহাদ,রুবাইদা চাচাতো ভাই বোন এতোটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকুক অযথা ঝামে’লা করবে না তুমি বাবা জানতে পারলে ভীষণ রাগ করবে।তোমার এরকম একটা সিদ্ধান্তের জন্য পরিবার ভেঙ্গে যাক তা আমি চাই না!
ভাইয়ের কথা মোটেও পছন্দ হলো না রেদোয়ান সিকদারের,সে শহরের এমপি হলেও ভাই এই এলাকার চেয়ারম্যান!বয়স হয়েছে মানুষ জনের ভালোবাসায় তিনি চেয়েও পারছেন না অন্য কাউকে দায় ভার দিয়ে দিতে।মানুষ হিসাবেও সে এক কথার মানুষ!
রেদোয়ান বলে উঠলো–,,আমার পরবর্তীতে রাহাদ কেই আমি এমপি বানাতে চেয়েছি ভাইজান।আপনার ছেলের জীবন পাল্টে যাবে আমার মেয়েকে বিয়ে করলে!
উসমান সিকদার এবার কিছুটা তেঁতো কন্ঠে বললেন–,,তুই ভালো করেই জানিস রেদোয়ান আমি চাই না রাহাদ রাজনীতিতে জড়িয়ে যাক।তাও তোকে সাহায্য করতে গিয়ে অনেকটাই এগিয়েছে এসবে।আমার ছেলে অন্য দিকে ক্যারিয়ার গড়বে। রুবাইদার জন্য ভালো ছেলে পেয়ে যাবি।আর কোনো কথা না,এসব কথা যেনো তোর পার্টি অফিস পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে!আমাকে এখন চেয়ারম্যান অফিসে যেতে হবে একবার।
উসমান সিকদার চলে যেতেই রাগে দাম্ভি’কতায় গ”র্জে উঠেন রেদোয়ান সিকদার।রাগে হিসহিসিয়ে বলে উঠে–,,আপনি কাজটা ভালো করলেন না ভাইজান।আপনার ছেলে আমার সোনার ডিম পাড়া হাঁস। ওকে তো যে করেই হোক আমার হাতের মুঠোয় রাখবোই!আমার একটা মাত্র মেয়ে মুখ ফুটে যখন আপনার ছেলেকে চেয়েছে তখন তো সে তা পাবেই।রুবাইদার কোনো ইচ্ছেই অপূর্ণ থাকে নি এটাও থাকবে না!
কে সে মেয়ে যার জন্য রাহাদের মতো ছেলে এতোটা বেপ”রোয়া হয়েছে?যার জন্য এতোটা উন্মা”দনায় মেতেছে?ওই মেয়েকে খুঁজে বের করতে তো হবেই!আমি ও দেখবো আমার মেয়ের থেকে কোন দিক দিয়ে বেশি যোগ্য ওই মেয়ে!কিছুতেই রাহাদ ওই মেয়েকে পাবে না।এর জন্য আমার যা করা লাগবে সবই করবো!
রেদোয়ান সিকদার নিজের লোককে ডেকে সব খবর নিতে বলে পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে গেলেন!
———
পুষ্পিতা আজও তোর জন্য এতো দেরি হলো আবার আজকে প্রথমেই ওই করমজা স্যারের ক্লাস নিশ্চিত থাক পেঁয়াজ ছাড়াই ভু’না করে ফেলবে!
পুষ্পিতা কথা বলছে না আসলে সে নিজেও জানে সে সব সময় দেরি করে আর ক্লাসে গিয়ে মানই”জ্জত হারানোর মতো ব’কা খায়।কিন্তু মেয়েটার এসব গায়ে লাগে না!
পুষ্পিতা,পাপড়ি কলেজ গেইটে ঢুকতেই দেখলো সব ছেলে মেয়েরা মাঠের আশেপাশে জট’লা পাকিয়ে দাড়িয়ে কিছু একটা নিয়ো ফুসুর’ফাসুর করছে।পাপড়ি পুষ্পিতাকে গুঁতো মে’রে বললো–,,কি রে বন্ধু কাহিনি কি?লম্বু থুরি জেসি টাকে দেখছি না কেনো?ও তো কাইন্ড অফ বিবিসি নিউস কোম্পানির কর্মকর্তা!
এর মধ্যেই সেখানে হুড়মুড় করে এসে পড়ে জেসি।হাঁপাতে হাঁপাতে বললো–,,তোরাও না আজকে একটু আগে আসতে পারতি,যা একটা সিন চলছিলো না কলেজে!প্রাইভেট পড়ে তো আজ কে আমি আর বাসায় যাইনি ভাগ্যিস যাইনি,না হয় এতো ভালো ফা”ইটিং সিন টা মিস করে ফেলতাম!
পুষ্পিতা চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,কাহিনি খোলাসা করে কইয়া ফালাও বান্ধবী।
জেসি গদগদ হয়ে বললো–,,ইশ!ছেলেটা যা ছিলো না!
পাপড়ি বলে উঠলো–,,কলেজে আসার পর এটা তোর কয় নাম্বার ক্রাশ!
জেসি হাতের কড় গুনে বললো–,,এই ধর অরিয়েন্টেশন থেকে শুরু করে একমাসে ত্রিশ জন!
পুষ্পিতা নাক ছিটকে বললো–,,তওবা কা’ট মহিলা!নাউজুবিল্লাহ মার্কা কাজ। আগে কাহিনি বল ওই করিম আলি আবার ম্যাথ করানো শুরু করে দেয় নাই তো?
জেসি বললো–,,আর ক্লাস।ওই এমপির ডান হাত মানে দেখিস না একটা ছেলে যে সব সময় ওনার সাথে থাকে,এমপির ভাইয়ের ছেলে মনে হয়!
পুষ্পিতা থামিয়ে দিয়ে বললো–,,আমি ওই ছেলেকে বিয়ে করবো না বায়ো’ডাটা না দিয়ে আসল কাহিনি বল!
পাপড়ি বলে উঠলো–,,তুই রাহাদ ভাইয়াকে চিনিস না পুষ্প!
পুষ্প দুদিকে মাথা নাড়লো। যার মানে সে চিনে না!পাপড়ি বলে উঠলো–,,এটা তো জানিস সিকদার বাড়ির ছেলে রাহাদ সিকদার।চেয়ারম্যান আংকেলের ছেলে।চেয়ারম্যান আংকেলের ভাই তো এমপি!তোর চেনা উচিত তোদের বাড়ি থেকে মাত্ররো পাঁচ মিনিটের দুরত্বে চেয়ারম্যান বাড়ি!
পুষ্পিতা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,ওই গু’ন্ডা বখা”টে ছেলেটা!যারা দিন দুপুরে মানুষ মে’রে ফেলে রাখে রাস্তার মোড়ে?ওই ছেলের নাম শুনেছি কিন্তু কোনো সরাসরি দেখিনি আর না দেখার কোনো ইচ্ছে ইহকালে আছে!আর চেয়ারম্যান বাড়ি আমাদের বাড়ির আশেপাশে দেখেই যে ওই বাড়ির দিক তাকিয়ে থাকবো এমন তো কোনো কথা নেই।আমি রাজনীতি পছন্দ করলেও যারা রাজনীতির নামে এরকম গুন্ডা’মি করে বেড়ায় তাদের দু চক্ষে দেখতে পারি না!
জেসি বলে উঠলো–,,চুপ করবি তোরা।আমার কথা শোন আগে,এখন বল তো প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের মধ্যে কারো নাম শশী কিনা?
পাপড়ি বলে উঠলো–,,আমি কেমনে কমু?অনার্সের কেউ ও তো হতে পারে!
পুষ্পিতা বললো–,,কেনো শশী আবার কি করলো?
জেসি সাইডে সিমেন্টের বেঞ্চি টাতে বসে বললো–,,ওই মেয়েটা কে নিয়েই তো যত সমস্যা! শশী নামক মেয়টাকে মানবিকের কোনো এক ছেলে নাকি কি বলেছে সে ছেলেটাকেই বেদ’ম পিটি”য়েছে রাহাদ সিকদার! টিচার রা সহ ভয়ে কিছু বলতে পারেনি, কলেজে এমপির অবদান অনেক,তার উপর ছেলেটা এমপির ভাইয়ের ছেলে, তা যাই হোক চল শশী নামক মেয়েটাকে খুঁজি!
পুষ্পিতা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,দুনিয়ায় কি কাজের অভাব পড়েছে যার জন্য ওই গু’ন্ডার প্রেমিকা কে খুঁজতে যাবো?আমি ভাবছি কোন সহজ সরল মেয়েটা জানি এই বা’ঘের মুখে পড়লো!যা খুশি হোক এসব প্রেম ঘটিত জিনিসপাতি আমার বিরক্ত লাগে।ক্লাস না হলে চল ঘুরতে যাই!
পুষ্পিতার কথা শেষ না হতেই পেছন থেকে এক মেয়ে বলে উঠলো–,,এই তোমাদের মধ্যে শশী কে?
ফা’টা চোখে তাকালো তিন বান্ধবী তিনজন যেনো নিজেদের চোখের ভাষা পড়তে পারলো,সামনে আগত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো–,,আমাদের মধ্যে কেউ শশী না!
মেয়েটি কিছু বলবে তার আগে সেখানে আসে তিহান নামক ছেলেটি মেয়েটিকেও চিনে তারা মেয়োটার নাম তিশা আনজুম!দুজনই বিজ্ঞান শাখার স্টুডেন্ট পুষ্পিতা,পাপড়ি,জেসির ক্লাসমেট এবার ওরা ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ছে।
তিহান হেসে বলে উঠলো–,,তিশা তুই এখানে চল বাড়ি যাই আজ তো ক্লাস হবে না!
তিশার হাত ধরে তিহান ওকে টেনে নিয়ে গেলো এক প্রকার,পাপড়ি বলে উঠলো–,,তিশা আর তিহান তো সিকদার পরিবারের জানিস না পুষ্প?
পুষ্পিতা পাপড়ির মাথায় মে’রে বললো–,,জীবনে কোন পা’পের শা’স্তি স্বরূপ ওই বাড়ির মানুষ সম্পর্কে জানবো আমি?ওইখানে চেয়ারম্যান আংকেল ছাড়া কাউকে চিনি না আমি আর না চিনতে চাই!তোরা গেলে আয় না গেলে আমি একাই যাচ্ছি স্কুল মাঠে হাওয়া খেতে।
পুষ্পিতা হাঁটা দিতেই দুই বান্ধবী তার পিছু নিলো,জেসি বলে উঠলো–,,রাগ করিস না ফুল”টুসি কড়া লিকার দেওয়া মামার চা খাওয়াবো!
তিহান তিশার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে।তিশা মুখ ভেংচি কাটলো বলে উঠলো–,,, আজব তো,আমার ভাইয়ের বউ আমাদের ক্লাসমেট এটা জানার পরও তাকে দেখতে পারবো না নাকি?
তিহান বলে উঠলো–,,গা’ধী একটা ভাইয়া জানতে পারলে তোকে আর আমাকে উল্টো ঝুলিয়ে পিটা’বে!শাঁক’চুন্নি নিজে মর’বি সাথে আমাকেও মা”রবি।
তিশা রেগে বললো–,,তিহাইন্না!আমি জানি তুই জানিস শশী কে বল না, আমি সত্যি ওই মেয়েটাকে দেখতে চাই!আমার যে ভাই মেয়েদের দিক কোনো দিন তাকাতো না,আজ জানলাম সে কিনা একটা মেয়ের জন্য কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে ভরা মাঠে মার”পিট করছে!
তিহান তিশার দিক তাকিয়ে বললো–,,জানি না,যদি জানতামও তবুও তোকে বলতাম না!
–,,কেনো রে কি এমন শত্রু’তা আমার সাথে?আজ বাড়ি গিয়েই ছোট মায়ের কাছে তোর নামে বিচার দিবো আমি।
তিহান ভাব নিয়ে হাঁটা ধরলো।তিশা পিছু ডেকে বললো–,,আমাকে তো অন্তত নিয়ে যা ভাই!
তিশার সামনে চলে আসে জিসান নামক ছেলেটি,কমার্সের স্টুডেন্ট, কম্বাইন্ড ক্লাসে দেখা হয়েছিলো একবার তিশা এক প্রকার বাধ্য হয়েই ছেলেটাকে আইসিটি তে সাহায্য করেছিলো তা নিয়ে যা রাগ দেখিয়েছিলো তিহান,পরে তো বাসায় গিয়ে বিচার দেওয়ার হুম”কি ও দিয়েছিলো!
জিসান বলে উঠলো–,,তিশা আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
তিশা আমতা আমতা করছে,এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।এর মধ্যে তিহান এসে বললো–,,বন্ধুত্ব করতে হলে আমার সাথে করো।ওর সাথে বন্ধুত্ব করা যে কথা আমার সাথে করলে একই কথা!
তিশা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো,সরকারি কলেজ দেখে ভর্তি হয়েছে না হয় ছেলেদের দেখলেই অস্বস্তিতে পড়ে যায় মেয়েটা!
জিসার ছেলেটা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তিহান তিশার হাত চেপে ধরে গেইটের বাহিরে বেরিয়ে গেলো,কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো–,,ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করা না?আজই রাহাদ ভাইয়াকে বলে দিবো!
তিশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকায়!তিহান সে সবে পাত্তা না দিয়ে রিকশা ডেকে উঠে পড়ে!সাথে উঠে তিশা।
———-
রুবাইদা রাহাদের ঘরে চুপিচুপি ঢুকেছে রাহাদের ঘরে এক প্রকার চিরুনী ত’ল্লাশি চালাচ্ছে উদ্দেশ্য একটাই শশী নামক রমনী সম্পর্কে জানা!রাহাদ রেদোয়ান সিকদারের সাথে বেরিয়েছে সহজে আসবে না।আবার কাল চলে যাবে ভার্সিটির হলে, তখন থাকবে রুম তালা বদ্ধ চাইলেও ঢুকতে পারবে না কক্ষে আজকের সুযোগ হাত ছাড়া করা যায় না যেনো!
রুবাইদা অনেক খুঁজে কিছুই পেলো না।বেরিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে টেবিলের উপরের তাকে নজর পড়ে একটা ডায়েরির মতো কিছু!রুবাইদা দেরি করলো না এক ছুটে গেলো ডায়েরিটা নিয়ে পেইজ উল্টে পড়া শুরু করলো।
প্রথম পৃষ্ঠায় লিখা–,,সূচনায় তুমি প্রিয় চাঁদ আশা করি উপসংহারে ও থাকবে!
রুবাইদার প্রেমিকা মন যেনো কেঁদে উঠলো! কে সে রমনী যাকে রাহাদ সূচনায় রেখেছে উপসংহারে ও রাখতে চায়।
পরের পৃষ্ঠা উল্টাতেই রুবাইদা বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রইলো!
–,,প্রিয় শশী…
রাহাদ নামক উদ্যানের ঠিক উপরে তিমিরে ছোঁয়া অম্বরে তুমি ভেসে উঠো তাকে আলোকিত করে।অমাবস্যা হয়ো না প্রিয় পূর্ণিমা হয়ে এসো!
তুমি আমার হবে কি হবে না?তা তো জানি না।এতোটুকু জানি রাহাদের জীবনে শশী ব্যতিত অন্য কোনো নারী আসবে না!
তোমায় দেখেছিলাম আমি পুষ্পিত কাননে,ধন্য সে অর্ধ ফুটন্ত গোলাপ যে শোভা পেয়েছে তোমার খোঁপার ও অনলে!
রুবাইদার রাগ হলো হিংসে হলো জ্বলে”পুড়ে গেলো যেনো ওর মনের ভিতরাটা!কেনো ভালোবাসবে রাহাদ অন্য কাউকে?রুবাইদা কে কেনো ভালোবাসলো না।কিসের কমতি রুবাইদাতে?
গম্ভীর শক্তপোক্ত কন্ঠের কথাটা শুনেই হাত থেকে ডায়েরি টা ধপ করে নিচে পড়ে গেলো রুবাইদার!
–,,আমার রুমে এসে আমার ব্যক্তিগত জিনিসে হাত দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে তোকে রুবাইদা?সাহস বেড়ে গিয়ে তো দেখছি আকাশচুম্বী!
রুবাইদা ভয়ে ঠেসে গেলো যেনো!রাহাদ কি করে আসলো এতো তাড়াতাড়ি।
রুবাইদা ভয় গিলে ফেললো নিজেকে স্বাভাবিক করে জিজ্ঞেস করে উঠলো–,,শশী কে রাহাদ!
রাহাদ হাত থেকে ঘড়ি খুলে শান্ত কন্ঠে বললো–,,শশী কে তা জেনে কি করবি তুই?আর তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি তোর বড় ভাই।নাম ধরে ডাকাটা নিশ্চয়ই তোর মুখে শোভা পায় না!এমপি মহাশয়ের কন্যার হওয়া উচিত উচ্চ আদব কায়দা সম্পন্ন তা তোর এতো অধপ”তন কেনো শুনি?
রুবাইদা পূর্বের ন্যায় আবার বললো–,,বলো না শশী কে?তাকে আমি শুধু একবার দেখতে চাই!
রাহাদ খাটের উপর বসে বললো–,,নেক্সট টাইম আমার কোনো জিনিসে হাত দিলে পরিনাম ভালো হবে না।এবারের মতো মাফ করলাম।
একটা কথা শুনে রাখ এতো বেশি কৌতূহল ভালো না।
জেনে শুনে নিজের ব্যক্তিগত নারীকে সবার সামনে উপস্থাপন করা কোনো সুপুরুষের কাজ নয়!
আমার বউ হওয়ার আগ পর্যন্ত শশী কে তুই কেনো আমি না চাইলে অন্য কেউ দেখতে পারবে না!
রাহাদ হাই তুলে বললো–,,একটা প্রশ্নের উত্তর দে তো রুবাইদা।
–,,কি প্রশ্ন?
–,,শকু”ন চিনিস?ওদের কাজ কি জানিস?আমার চারপাশে ও অনেক শকু”ন আছে!তাই ঝুঁ’কি নিতে চাচ্ছি না তুই এবার আসতে পারিস।
–,,মেয়েটা বুঝি অনেক সুন্দর?তার রূপ কি চোখ ঝল”সানো? যাকে তুমি একবার দেখলে আর চোখে ফিরাতেই পারলে না রাহাদ ভাই?
রাহাদ মুখ গম্ভীর করে বললো–,,রুম থেকে বেরিয়ে যা রুবাইদা।
এর মধ্যে রুমে আসলো মনিরা বেগম ছেলের ঘরে রুবাইদা কে দেখে বললো–,,রুবা বাহিরে যা দাড়াবি কেমন তোর সাথে আমার কথা আছে!
রুবাইদা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।রাহাদের মা রাহাদের দিক তাকিয়ে বললো–,,বাবা তুই নাকি মারা”মারি করেছিস?
রাহাদ মাকে টেনে নিয়ে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো,রাহাদের মা রাহাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। মায়ের থেকে কিছুই লুকানোর নেই তার!
রাহাদ ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো–,,রিহানের ভাই আরিয়ান,আমার শশীকে নিয়ে বা’জে কথা বলেছে মা!ওর চোখ তু”লে ফেলতে পারলে শান্তি হতো আমার ওই চোখ দিয়ে বা’জে ভাবে তাকিয়েছে আমার শশীর দিকে!ওই নোং’রা জবান দিয়ে ওর নামে অশ্লী”ল কথা বলেছে আমি কি করে সহ্য করি বলোতে!যতই হোক তুমি তো জানো তোমার ছেলে বে’ড বয়।
মনিরা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো–,,তাই বলে এরকম করাটা উচিত হয় নাই বাবা!বউমা কে কি আমারও দেখার সময় হয়নি নাকি?কবে দেখাবি বল?
–,,তোমার বউমা মহারানী বুঝেছো, তাকে আমি মেসেজ দিয়েছি একমাস হতে চললো কি অ্যাটি”টিউড বাবা মেয়েটা রিপ্লাই তো দূর সিন পর্যন্ত করলো না!
মনিরা বেগম হাসলেন।–,,দেখতে হবে না বউমা টা কার?আমার ছেলের পছন্দ বলে কথা কোনো সাধারন মেয়ে তো হতেই পারে না।তুই ঘুমা আমি রান্না ঘরে যাচ্ছি কাজ আছে!
মনিরা বেগম বেরিয়ে যেতেই রুবাইদা ঠিক ঠাক হয়ে দাড়ালো এতোক্ষণ সে আড়ি পাতছিলো দরজায়!
মনিরা বেগম রুবাইদা কে বললো–,,বড় হয়েছিস মা,এখন যা ইচ্ছে তাই করা যাবে না,লোকে ম’ন্দ বলবে তো!
এই যে যখন তখন রাহাদের ঘরে চলে যাস এটা তো ঠিক না ও তোর বড় ভাই মানছি কিন্তু বাড়িতে বাহিরের মানুষ আসে কাজের লোক আছে কখন কি খারা’প কথা রটাবে তার তো ঠিক নেই!ও ঘরে আর যাস না কেমন?
রবাইদা মাথা নেড়ে বললো–,,ঠিক আছে বড় মা!
———-
পুষ্পিতা বাড়ি এসেছে বিকাল তিনটে, কলেজ ছুটির পর আজ প্রাইভেট ছিলো যেহেতু ক্লাস ছিলো না তাই ক্লাসের সময় টুকু তিন বান্ধবী মিলে আড্ডা দিয়ে কাটিয়েছে তাদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গায়!
পুষ্পিতা কলিংবেল দিতেই দরজা খুললো তার মা শেলিনা বেগম মাকে এ সময় বাড়িতে দেখেই পুষ্পিতা অবাক হয়েছে কারন মায়ের স্কুল ছুটি হওয়ার কথা চারটার পর!
শেলিনা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,এতোক্ষণে আসলি যে শশী?
পুষ্পিতার মা যত নরম মনেরই হোক, নিয়মে তিনি ভীষণ কড়া!স্কুলে তো নিশ্চিত স্টুডেন্ট রা আঁড়ালে তাকে হিট”লার বলে ডাকে।ছেলে মেয়ে উভয়ের মধ্যেই কাউকে পড়াশোনায় এক চুল ও ছাড় দেন না!বাড়িতে তো বুঝাই যায় না কখন রেগে আছে আর কখন হাসিখুশি!
পুষ্পিতা এমন প্রশ্নে চুপসে গেলো, মা জেনে যায় নি তো ক্লাস না করে আড্ডা দিয়েছে?
পুষ্পিতা আমতা আমতা করে বললো–,,মা প্রাইভেট ছিলো তো রসায়ন!
–,,কলেজে তো আজ ঝা’মেলা হলো শুনলাম!ক্লাস হয়েছে?
–,,না….!
পুষ্পিতার বাবা এসে বললো–,,পুষ্পিতা মা কলেজ থেকে এসে বাহিরে দাঁড়িয়ে যে?ঘরে যা।কোনো মানুষের তো কান্ড’ক জ্ঞান নাই মেয়েটাকে বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে!
শেলিনা বেগম বলে উঠলো–,,শশী তোর বাবা কে বলে দে মেয়ের সম্পর্কে জানার অধিকার আমারও আছে!
–,,পুষ্পি তুই ও বলে দে আমিও কাউকে না করিনি!শুধু বলেছি বাহিরে দাড় না করিয়ে এসব কথা তো ঘরে গিয়েও জিজ্ঞেস করতে পারে নাকি!
পুষ্পিতা হতাশ হয়ে দুজনের দিক তাকালো এরা দুজন লাগবে মাঝখান থেকে পুষ্পিতা কে কাবাবে হাড্ডির মতো বসিয়ে রেখে যোগাযোগ মাধ্যম বানাবে!
পুষ্পিতা দরজা দিয়ে ভিতরে গেলো নিজের ঘরে গিয়ে টেবিলে ব্যাগটা রাখলো হিজাব খুলতে খুলতে কিছু একটা মনে পড়তেই হাত থেমে গেলো তার!
নিজের নামটা একবার নিজেই আওড়ালো—,,পুষ্পিতা আইনূন শশী!
চলবে?
(নতুন গল্প কেমন লাগলো জানাবেন!)