জোছনায় ঘর তোর আমার পর্ব-০২

0
5
জোছনায় ঘর তোর আমার
জোছনায় ঘর তোর আমার

#জোছনায়_ঘর_তোর_আমার
#পর্ব২
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সাদা টি-শার্টের উপর কালো রঙা জ্যাকেট,সাদা প্যান্ট পরিহিত যুবকটি দেখতে যে ভীষণ সুদর্শন তা কয়েক সেকেন্ডেই বুঝে গেলো পুষ্পিতা!মুহুর্তেই নিজের চোখ নামিয়ে ফেললো,যুবকটির হাতে ক্রিকেট ব্যাট,বল রাখা বড় একটা স্পোর্টস ব্যাগ।এসব কিছু দেখেও পুষ্পিতা মুগ্ধ হতে পারলো না, ছেলেটার করা কিছু সময় পূর্বের কাহিনি মনে পড়তেই মন চাইলো ঠা’টিয়ে এক চ’ড় বসাতে তার গালে!মানুষটির উচ্চতার জন্য হয়তো সেটা সম্ভব হয়ে উঠলো না।চোখে মুখে কাঠিন্যেতা বজায় রেখে বললো–,,এটা কেমন ধরনের অভ’দ্রতা মিস্টার?রাস্তাঘাটে মেয়েদের ওড়না ধরে টান দেওয়াটা কোন ভদ্র পরিবারের ছেলেদের মানায় শুনি?

পুষ্পিতার কথায় সামনে থাকা যুবকটি অধর বাঁকিয়ে হাসলো।হাস্যউজ্জ্বল মুখটা সত্যি চোখের পড়ার মতোই, তবুও ফিরে তাকালো না সামনে থাকা রমনী,তাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না রাহাদের সে জানে তার মনে রাজত্ব করা তার মনের রানী কতোটা নিষ্ঠু”র!মেয়েটার যে প্রেম ভালোবাসার নাম শুনলেই পালাই পালাই স্বভাব তাই সে নিজেকে বেঁধে রেখেছে শক্ত এক খোলসে!
উজ্জ্বল হলদেটে শ্যামলা মুখশ্রী,এই রাগী রূপ টা দেখার লো’ভ সামলাতে না পেরেই তো রাহাদ কিছু মুহুর্ত পূর্বের ঘটনা টি ঘটিয়েছে।

ফাঁকা রাস্তা শীতের দিনে সকাল সারে ছয়টা কেও ভোর বললে ভুল হবে না।কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারপাশ,পুষ্পিতা পড়নে লাল রঙা থ্রি পিস ওড়না টা মাথায় সুন্দর করে পিন আপ করা এক ফোঁটা চুল দেখার জো নেই!কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ গায়ে জড়ানো কালো খয়েরী রঙের শাল।

বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলো রাহাদ মোড়ে কাউকে এতো সকালে দেখে কৌতূহল হয়েছিলো তার,এগিয়ে আসতেই চক্ষু শীতল হলো যেনো মেয়েটাকে সকাল সকাল দেখার সৌভাগ্য হয়ে যাবে কে জানতো।আজ আবার তার খেলা আছে বাস স্ট্যান্ডে যাবে বলে সকাল সকাল বেরিয়েছে!
রাহাদ গিয়ে পাশে দাড়ানোর পরও মেয়েটার মনোযোগ আকর্ষন করতে পারলো না।মেয়েটা এক ধ্যানে হাতে থাকা সাদা কাগজটার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা পড়ছে একটু পর পর রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে গাড়ির অপেক্ষায়।

মেয়েটাকে ছোঁয়ার অধিকার যে তার নেই, এই পবিত্র কায়া কে অপবিত্র করার দুঃসাহস প্রেমিক মন করতে চাইলেও ভালোবাসার মানুষের প্রতি সম্মানবোধ তা করতে বাঁধা দিলো।উপায়ন্তর না পেয়ে ওড়নায় মৃদু টান বসিয়েছিলো রাহাদ!
রাহাদের সম্বিত ফিরলো পুষ্পিতার কন্ঠে–,,কি হলো কথা বলছেন না কেনো?অস’ভ্যতা করে এখন মুখে কুলুপ কেনো এঁটেছেন?

রাহাদ ফিচলে হেসে বললো–,, আপনি গাড়ির নিচে পড়ে যেতেন মিস তাই সাহায্য করতে,,,!

পুষ্পিতা দ্বিগুণ বিরক্ত হলো মিথ্যা বলছে ছেলেটা এই সাজ সকালে?বিশ মিনিট হবে দাড়িয়ে আছে গাড়ির ছিটেফোঁটা নেই সে কিনা বলছে গাড়ির নিচে পড়ছিলো।

–,,অসহ্য!মিথ্যা কথা বলতে লজ্জা করে না?ফালতু মানুষ কোথাকার!

—,,প্রেমিকার মন জয় করতে হলে নির্লজ্জ হতে হয়ে জান!

পুষ্পিতা চোখ বড় বড় করে তাকালো কি সাংঘা”তিক ছেলে জান টান বলে ডাকছে,কেউ শুনতে পেলে কেলে”ঙ্কারি হয়ে যাবে!এমনিতেই বাড়ি থেকে বের হয় না পুষ্প,যত ডা’নপিটে পনা সে কলেজেই দেখায় বাড়ির আশেপাশে মানুষ হয়তো জানেই না তাদের বাড়িতে কোনো মেয়ে আছে,এ পর্যন্ত কোনো বা’জে কথা রটেনি,চরি”ত্র সব মেয়েদেরই কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্বল!

পুষ্পিতা ভেবে নিলো এ ছেলের সাথে আর কথা বলবে না,মানুষ জন এখনই হয়তো আসা শুরু করবে,সবজির ঝুড়ি মাথায় নিয়ে হাঁটে যাওয়ার উদ্দেশ্য।পুষ্পিতা কিছুটা দুরত্বে গিয়ে দাড়ালো দৃষ্টি রাস্তায় নিবদ্ধ।

রাহাদ ফের বললো–,,এখন যত খুশি দুরত্ব বাড়িয়ে নাও,একদিন আমি যত্ন করে সব দুরত্ব ঘুচিয়ে দিবো শশী!
শশী অবাক নেত্রে তাকালো শশী বলে শুধু শেলিনা বেগম তাকে যাকে, স্কুল কলেজ কোথাও শশী নামে পরিচিত নয় তবে এই ছেলে কি করে তার নাম জানলো?

–,,ব্রেনে বেশি চাপ দিও না প্রেয়সী,তুমি বড্ড সহজ সরল,আদুরে এক পুষ্প কানন!তোমার ওই মায়াভরা চোখ,হৃদয় উতাল”পাতাল করা হাসি,দুষ্টুমিতে মেতে থাকা চঞ্চলা তুমিটা আমার ভীষণ ভীষণ রকম প্রিয়!

পুষ্পিতা দফায় দফায় অবাক হচ্ছে, তার নিজেরই বা হলো কি এই ছেলের কথাই বা মুখ বুঁজে শুনছে কেনো?

–,, দেখুন আপনাকে আমি চিনি না,না কখনো দেখেছি তাই ভদ্র ভাবে বলছি,এসব ফা”ও কথা বলা বন্ধ করুন আর রাস্তা মাপুন!

রাহাদ চমৎকার হাসলো,এ গ্রামের মেয়ে হয়ে কিনা তাকে একবারও দেখেনি চিনে না পর্যন্ত!সেদিন তো দলের ছেলেদের কথা বিশ্বাসই হচ্ছিলো না তার,মেয়েটা সত্যিই আলাদা!যা বলছে মুখের উপর।

–,,আসুন পরিচিত হই, চেনা পরিচয় হওয়াটা ভালো,হয়তো এই ক্ষনিকের চেনা পরিচিতির মাধ্যমে সূচনা হবে এক নতুন সম্পর্কের!

–,,দেখুন অযথা কথা বলা আমার পছন্দ না।না আমার আপনার সাথে কোনো সম্পর্ক করার সখ আছে, আর না আছে পরিচিত হওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে!আর একটা কথা বললে অভ’দ্র হতে বাধ্য হবো আমি।

রাহাদ বুকে দুহাত গুঁজে বললো–,,রাগ করলে তোমায় লাগে বেশ!

আমি রা,, না মানে আমি নিশাদ।তুমি রাহাদ কে চিনো?চেয়ারম্যান বাড়ির ছেলে!

পুষ্পিতার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গলো তেতে গিয়ে বললো–,,ওই গু”ন্ডা টাকে চিনে আমি কি করবো ভাই?কি সমস্যা আপনার বেহা’য়ার মতো কথা বলেই যাচ্ছেন যখন দেখছন অপর পক্ষ কথা বলতে ইচ্ছুক না।আমাকে কি ওই সকল মেয়েদের মতো মনে করছেন?যাদের প্রশংসা করলেই গলে যায়!আমার তো মনে হয় ওই গু”ন্ডা আপনার কিছু হয়,আপনি ও একটা চর’ম অস’ভ্য লোক।

রাহাদের পেট ফেটে হাসি আসতে চাইলো,তার ধারনাই ঠিক এই মেয়ে সত্যি তাকে চিনে না!না চিনেই এতো রাগ পু’ষে রেখেছে?
তখনই একটা অটো আসলো,পুষ্পিতা দ্রুত পায়ে হেটে গেলো পেছন থেকে রাহাদের গম্ভীর কন্ঠস্বর–,,শুনো মেয়ে!

পুষ্পিতা বিরক্তি নিয়ে তাকালো,রাহাদ বলে উঠলো–,,ওই মায়াভরা হরিণি চোখে একবার কাজল পড়লেও তো পারো!

পুষ্পিতা গাড়িতে চড়ে বসলো।গাড়ি চালক একটা অল্প বয়সী ছেলে।ছেলেটা একবার পুষ্পিতা তো একবার বাহিরে দাঁড়ানো ছেলেটার দিক তাকালো!

ছেলেটা হাঁক ছেড়ে বললো–,,ভাইজান আপনি কি যাইবেন?

–,,না,রিফাত তুমি ওকে সাবধানে পৌঁছে দিও!

পুষ্পিতা শুনেও না শোনার ভান ধরলো,যত্তসব বা’জে ছেলে, নিশ্চিত গাড়ি ওলা ছেলেটাকে চিনে।

গাড়ি চলে গেলো, আজকে দেরি হয়েই গেলো প্রাইভেটে যেতে পুষ্পর একে তো গাড়ি আসেনি তার উপর ওই ছেলের বক বক।রসায়নের সব বিক্রিয়া নিশ্চিত মাথায় তালগোল পাকিয়ে গেছে,আজ তো আবার স্যার পরীক্ষা নিবেন, এক মিনিটও তো বেশি সময় দিবে না।ভাললাগে না!

গাড়ি চালক হঠাৎ বলে উঠলো–,,আফামনি,ভাইজান আপনার কে হয়?

পুষ্পিতার তে’জ মিশ্রিত কন্ঠ–,,কেউ না!

ছেলেটা কিছু বলতে নিলো পুষ্পিতা থামিয়ে দিয়ে বললো–,,দয়া করো ভাই।ওই ছেলের নামে একটা কথা ও বইলো না,আমি শুনতে চাই না!

গাড়ি চালক ছেলেটি অবাক হলো।রাহাদ ভাইকে নিয়ে তার গাড়িতে চড়েই কতো মেয়ে কতো কথা বললো,নাম শুনেই তো আগ্রহ নিয়ে বলে আর কি জানো অটোওলা ভাই!খুশি হয়ে ভাড়াও বাড়াইয়া দেয়,আর এ মেয়ে নাম শুনতেও নারা’জ।চেয়ারম্যানের পোলা, এমপির ভাইয়ের ছেলে, তার উপর রাহাদ ক্রিক্রেট খেলে শুনেছে রিফাত,বলতে গেলে আশেপাশে এলাকার বেশির ভাগ সুন্দরী মেয়ের স্বপ্নের পুরুষ রাহাদ।ফেইসবুকে তো ছবি ছাড়ার সাথে সাথে মাইয়ারা এক প্রকার হাম’লে পড়ে যেনো,আর মেয়ে ভাইকে পাত্তাই দিলো না!

ছেলেটা এসব ভাবতে ভাবতে বলে উঠলো–,,আফা নামেন আইসা পড়ছি!

পুষ্পিতা হাত ঘড়িতে তাকালো সাতটা পয়ত্রিশ যাহ্ বাবা পুরো বিশ মিনিট লেইট শীত কাল দেখে স্যার সাতটা পনেরো তে পড়ানোর সময় দিয়েছিলো।তাও সময় মতো আসতে পারে না পুষ্প।ভাড়া দিয়ে এক প্রকার ছুটে গেলো সামনে থাকা পাঁচতলা ভবনটির দিকে যার দ্বিতীয় তলায় স্যারের বাসা।ছুটে গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ভিতরে ঢুকলো পুষ্পিতা,ভেতরে ঢুকে গিয়ে যেই না কিছু বলতে যাবে তখনই স্যার বলে উঠলো–,,এই তো এসে গেছে আমার পাংচু’য়াল স্টুডেন্ট!মানুষের থাকে দু হাত তার আবার তিন হাত,ডান হাত বাম হাত আর অযুহাত।

পুষ্পিতা ফিক করে হেসে বললো–,,স্যার মাত্ররো তো বিশ মিনিট দেরি হয়েছে!

তখনই ভেতর থেকে একটা মেয়ের কন্ঠ শোনা গেলো–,,যাদের সময়ের প্রতি জ্ঞান কম থাকে তারা কোনো দিন ভালো ছাত্র হতে পারে না!সময়-জ্ঞান থাকাটা অত্যন্ত জরুরি তাই না স্যার?

পুষ্পিতা ভ্রু কুঁচকে সামনের বেঞ্চে বসে থাকা তার দুই বান্ধবীর দিকে তাকালো তারা কিছু বলতে গিয়ে পাড়লো না।
পেছন থেকে পুরুষালী কন্ঠটা কানে আসলো তার–,,আমার ভাগনি কিন্তু ঠিক কথাই বলেছে স্যার!দেখতে হবে না কার বোনের মেয়ে।

শহরের এমপি কে নিজের বাসায় দেখে স্যার উঠে গেলেন।সৌজন্যে মূলক হেসে বললো–,,আপনি আসতে গেলেন কেনো?আপনাদের মেয়েই তো সব বললো আমায়!

স্যারের সাথে গেলেন ভদ্রলোক অন্য ঘরে,স্যারের চার রুমের বাসার এক রুমে ছাত্র পড়ায় বাকি রুমে স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন।পুষ্পিতা দেখলো মেয়েটাকে তার রোজকার বসার জায়গাটা দখল করেছে,আজকে স্টুডেন্ট বেশি মনে হলো,সকালে শুধু পুষ্পিতা আর তাদের ক্লাসের কয়েকজন পড়তো।বাকিরা কলেজের বাহিরে স্যারের প্রাইভেট রুমে পড়ে।পুষ্পিতা আশেপাশে দেখলো আলাদা চেয়ারের সাথে ছোট্ট টেবিলটায় স্টুডেন্ট বেশি হলেই বসা হয়,সেখানে বসে পড়লো।এসব মেয়ের সাথে অযথা ঝা’মেলা করে লাভ নেই।

কিছুক্ষণ পরই স্যার ফিরে আসলো।এসেই বললো তা কি যেনো নাম তোমার?

মেয়েটি হেসে বললো–,,সানজিদা স্যার!

স্যার কি রকম মানুষ তা পুষ্পিতা রা ভালো করেই জানে,স্টুডেন্ট দেখেই বিচার করেন তিনি কোন স্টুডেন্ট কতোটুকু পড়াশোনায় ভালো তার উপর নির্ভর করে সবকিছু স্যারের চোখে সব স্টুডেন্ট সমান।এমপি,মন্ত্রীর মেয়ে হলেও অতিরিক্ত ভালো মানুষী দেখানোটা স্যারের স্বভাব না!স্যার হেসে বললো–,, তা শুনলাম নতুন টি’সি নিয়ে এসেছো,পড়াশোনায় ও নাকি ভালো, তা এবার কাজে দেখানোর পালা।আমাদের পুষ্পকে টেক্কা দিতে পারবে তো সানজিদা?এমপির ভাগনে শুধু নামে নিজের নামে পরিচিত হতে হলে পড়াশোনা টা কিন্তু ঠিক মতো করতে হবে কেমন?

সানজিদা ক্ষু”ব্ধ চোখে তাকালো পুষ্পিতার দিকে,এই সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েটার সাথে স্যার তার তুলনা দিচ্ছে?

পুষ্পিতা বলে উঠলো–,,স্যার আপনিও না, আমার মতো একটা ফেল’টু তার উপর অলস,যার পড়াশোনায় এলা’র্জি তাকে কিনা আপনি শ”ত্রু পক্ষ বানিয়ে দিচ্ছেন?এসব মানা যায় না।

জেসি বললো–,,স্যার আজকের পরিক্ষা টা কি হবে?

পাপড়ি বলে উঠলো–,,ভুতের মুখে আইতুলকুরসি!আজকে তো আর সূর্যই উঠবে না স্যার।

স্যার বলে উঠলো–,,পরীক্ষা তো অবশ্যই নিবো, আজকে পরের ব্যাচ আসবে না,মহিলা কলেজের মেয়ে গুলা ছুটি নিয়েছে আজকে।

জেসির মুখটা চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো হলো,সে তো সময় নেই দেখে একটু ভাব মা’রাতে গিয়েছিলো!ওদের ক্লাসের জাবেদ নামক ছেলেটি বলে উঠলো–,,স্যার আজকেও পরীক্ষা নিবেন, আজকে তো নতুন মানুষ আসলো একদিন পর নেন!

পুষ্পিতা বলে উঠলো–,,স্যার পরিক্ষা টা না নিলেই তো হয়।না মানে শুধু পড়াশোনা পর্যন্তই সব ঠিক আছে পরীক্ষাটা বিলাসিতা!

সানজিদা বলে উঠলো–,,ভালো স্টুডেন্ট রা বার বার পরীক্ষা দিতে চায়, এতে নিজের যোগ্যতা যাচাই করা যায়,কনফিডেন্স বাড়ে!

পুষ্পিতা হাই তুলে বলে–,,শুনো ভাই আমার এসব কনফিডেন্সের দরকার পড়ে না,পরীক্ষার আগের রাতে পড়ে পরীক্ষা দেওয়া পাবলিক তোমার মতো ব্রিলিয়ান্টরা বুঝবে না!আমাদের একটাই লক্ষ্য টেনেটুনে পাশ!

স্যার পুষ্পিতার মাথায় খাতা দিয়ে একটা মে’রে বললো–,,পড়াচো’র কোথাকার।তোমার মায়ের কাছে বিচার টা কি দিবো?কাল তো তিন বাঁদ’র মিলে ধুলাবালির মাঝখানে বসে মুড়ি খাচ্ছিলে জানাবো নাকি বাসায়?পরে ধরে বিয়ে সাদি দিয়ে দিবেনে স্বামীর বাড়ি গিয়ে বাসন মাজতে ভালোই লাগবে!

জেসি বললো–,,স্যার বাবা তো বিয়ে দিচ্ছে না বিক্রিয়ার থেকে সহজ সংসার করা!

সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। স্যার পাত্তা দিলেন না সব কটা বাঁদ’র তিনি পড়ান, একটাও মানুষের কাতারে পড়ে না।ইয়াকুব স্যার সানজিদা কে বললো–,, তুমি বরং বই দেখো ওরা পরীক্ষা দেক!

সানজিদা নাকোচ করে বললো–,,স্যার আমিও পরীক্ষা দিবো!

স্যার আর কিছু বললো না সবার হাতে একটা করে প্রশ্ন তুলে দিলেন।

জেসি বললো–,,স্যার পুষ্পিকে আমার সাথে বসান!

স্যার বললো-,,দিবো একটা চ’ড় পড়ানোর সময় মন কই থাকে?চুপচাপ লিখো নিজ৷ যা পারো!

পুষ্পিতা জেসির দিকে চুমু ছুঁড়ে বললো–,,জানটুস এবারের মতো লিখে ফেল পরের বার আমরা টুক’লি করেই লিখবো!

সানজিদা মনে মনে বিরক্ত হলো স্যার কিনা এই মেয়ের সাথে তাকে তুলনা দিলো?যারা কিনা এসব করে লিখে, পড়া চো’র, কি সবের মাঝখানে এসে পড়লো?শহরে তো সব ভালোই ছিলো বাবা মায়ের কেনো যে হঠাৎ দেশের বাহিরে যেতে হলো!

লিখা শেষ হতেই সবাই একে একে বের হতে নিলো স্যার ডেকে বললো–,,পুষ্পি দাড়া তো কথা আছে।আর শোনো বাকিরা কাল প্রথম পত্রের দ্বিতীয় অধ্যায়ের অর্ধেক পড়া, পুরনো পড়া ভুল হলে সব কটাকে বেঁধে পি’টাবো!

সবাই বের হলো একে একে পুষ্পিতাকে স্যার বললো–,,পুষ্প প্রিপারেশন কেমন?কুইজ কম্পিটিশনে তোমার নাম দিয়েছি আমি এবার জেলা পর্যায়ে।

পুষ্পি মুখ উল্টে বললো–,,আবার পড়াশোনা!স্যার আমার নাম বাদ দিয়ে দিন, আম্মু যেতে দিবে না।

–,,বাহানা দেওয়া বন্ধ, তোমার আম্মু আরো আগে পাঠাবে তোমাকে,শেলিনা ম্যামের সাথে কথা বলবো আমি!আর কিন্তু দশদিন বাকি বিষয়বস্তু গুলো কলেজে গিয়ে জানবে আজ!
পুষ্পিতা বেরিয়ে গেলো আজ বড় আফসোস হচ্ছে কেনো যে স্যারের পুরনো ছাত্র হতে গেলো।না হয় তো বাকি শিক্ষকদের মতো ইয়াকুব স্যার ও তাকে বা’জে, গা’ধা স্টুডেন্ট ভাবতো আর সে চিল করে বেড়াতো!

পুষ্পিতা বাহিরে এসেই পাপড়ি,জেসি কে বললো–,,জানিস সকালে কি একটা কা’ন্ড ঘটলো?

পাপড়ি বলে উঠলো–,,তুই প্রেমে পড়েছিস বন্ধু?

জেসি বললো–,,রাহাদের শশী খুঁজে পেয়েছিস?

শশী নাম শুনেই পুষ্পিতা বললো–,,সিউর করে বলতো শশী কি ফাস্ট ইয়ারের?

জেসি বললো–,,জানি না খোঁজ নিতে হবে।

–,,তাড়াতাড়ি নিস,আমার না কেমন টেন’শন হচ্ছে!

দুজন একত্রে বলে উঠলো–,, কেনো?

–,,তোরা কি আমার পুরো নাম জানিস না?

পাপড়ি,জেসি দুজনই পুষ্পিতার স্কুল ফ্রেন্ড!পাপড়ি বলে উঠলো–,,এই পুষ্প আন্টি তোকে শশী বলে ডাকে না?

পুষ্পিতা উপর নিচ মাথা নাড়ালো।জেসি খুশিতে গদগদ হয়ে বললো–,,হাও কিউট!আমার বন্ধু হবে রাহাদের বউ ভেবেই ভাললাগছে।ছেলেটা যা সুন্দর না কি বলবো!

পুষ্পিতা জোরে চেঁচিয়ে বললো–, খবরদা’র জেসি একদিন বলেছিস তো বলেছিস জীবনে এসব কথা মুখে ও আনবি না,জেনে শুনে কেউ কুয়ো তে ঝাপ দেয় না!

পাপড়ি হেসে বললো–,,দেয় দেয় বন্ধু।জানো না
পিরিতি কাঁঠালের আঠার মতো লাগলে পরে সহজে ছাড়ে না!

পুষ্পিতা বলে উঠলো–,,এসব কথা ছাড় সকালের কাহিনি শোন।
দুজন মনোযোগী হলো,পুষ্পিতা একে একে সব বলতেই,দুজন লাফিয়ে উঠলো।বলে উঠলো–,,তোরে তো দেখি সবাই শুধু প্রস্তাব দিচ্ছে কি ব্যাপার গ্লো করছিন নাকি ইদানীং কি মাখছিস?

পুষ্পিতা চোখ মুখ কুঁচকে বললো–,,গোরব তোরা মাখবি!
আমি মর’ছি আমার জ্বা’লায় তোরা আছিস রঙ্গ নিয়ে,বাসায় গেলাম আমি,কলেজে আসবো না!

পাপড়ি এক দিকে জেসি এক দিকে টেনে ধরলো পুষ্পিতাকে, তাহলে আজকে আর বাসায় যাবি না।চল নাস্তা করবো পরে সোজা কলেজে!

–,, আরে মা রাগ করবে তো!

–,,আন্টিকে বলবি পরীক্ষা শেষ করে সময় ছিলো না!

–,,আরে আমার কলেজ ড্রেস।
–,,বলবি ছিঁড়ে গেছে,না হয় কাঁদা তে মাখামাখি হয়ে গেছে।
হতাশ হলো পুষ্পিতা কি বন্ধু জুটিয়েছিলো কপাল করে।
নাস্তা করে কলেজে গিয়ে ঢুকলো সকাল নয়টা কলেজে স্টুডেন্ট আসা শুরু হয়েছে।

ক্লাস রুমে না গিয়ে বেঞ্চে বসলো, তাদের সামনে উদয় হলো এক ছেলে মাথায় বেন্ডে”জ করা,পড়নে কলেজ ইউনিফর্ম চুল গুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে শুভ্র রঙা বেন্জে’জের উপর!

ছেলেটা হেসে হাত বাড়ালো পুষ্পিতার দিকে হেসে বললো–,,শশী রাইট?বন্ধু হতে পারি?

পুষ্পিতা, পাপড়ি,জেসি মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো এ কোন আপ’দ উড়ে এসে জুড়ে বসলো!
জেসি বললো–,,এই তুমি কালকে মা’র খাওয়া ছেলেটা না?আবার এসেছো কেনো?ও পুষ্পিতা কোনো শশী না যাও ভাগো তো!

আরিয়ান হাসলো হেসে বললো–,,পুষ্পিতা সুন্দর নাম!তা তুমি কোন পুষ্প?গোলাপ?বেলি নাকি কামেনি?নাকি আমার পছন্দের কৃষ্ণচূড়া!

পুষ্পিতা জবাব দিলো না বরাবরের মতোই ছেলেদের ইগনোর করে সে।বন্ধুত্ব তো বহুদূর!

–,,যাই হোক পুষ্প বলতেই হবে কারো কারো পছন্দ সত্যি অসাধারণ!আগের বার তো না জেনে রুপের বর্ণণা করেছিলাম তোমাকে ছোঁয়ার মতো ইচ্ছে পোষণ করেছিলাম।এবার মনে হচ্ছে কালকের মা’র খাওয়াটা সার্থক!তোমার উপর নজর পড়লো বুঝলে রমনী!

পুষ্পিতা মনে মনে বললো–,,দিনটাই খারা’প আজ!

ক্লাসের উদ্দেশ্যে চলে গেলো সবাই।গনিত ক্লাস শেষ করে বাহিরে এসে দাঁড়িয়েছে,আজকেও সব গুলো ক্লাস করার ইচ্ছে নেই ওদের সুযোগ বুঝে পালাবে!

এর মধ্যেই একটা মেয়ে এসে পুষ্পির হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিলো।পুষ্পিতার নিজের চুল ছিঁড়তে মন চাইলো এখন, কি বি’পদ তাকে নিয়ে কেনো এতো টানাহেঁ”চড়ার করা হচ্ছে?

জেসি হাত থেকে কাগজ টা নিয়ে পড়লো–,,পুষ্প কানন!
সাবধান করছি আরিয়ানের থেকে দূরে থাকবে, না হয় আমার থেকে খারা’প কেউ হবে না।রাহাদের শশী শুধু তার নিজস্ব আকাশেই শোভা পায়, অন্য কোথাও না!

ইতি তোমার,,, “গু’ন্ডা প্রেমিক”!
চলবে?