জোছনায় ঘর তোর আমার পর্ব-০৩

0
24
জোছনায় ঘর তোর আমার
জোছনায় ঘর তোর আমার

#জোছনায়_ঘর_তোর_আমার
#পর্ব৩
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
হতভম্বের মতো বসে আছে তিন বান্ধবী, পুষ্পিতা তো কথা বলতে ভুলে গেছে, শেষে কিনা ওই গু’ন্ডাটার নজর ওর উপর পড়লো!গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে জেসি,মাঠের এক কোনে ইটের উপর বসা পুষ্পিতা,
পাপড়ি।
জেসি নখ কাম’রে বললো–,,দোস্ত তখন তো মজা করে বলেছিলাম,সত্যি হয়ে যাবে কে জানতো?

পুষ্পিতা তেতে উঠে বললো–,, এবার তুই খুশি তো?জানিস আমি শুনেছিলাম ওই ছেলেটা সত্যি বা’জে,ওই গ্রামের কোন মেয়ের সাথে নাকি রুম”ডেট করেছে।কতো মানুষ কে মে’রে হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে,এমপি টাকে কি ভালো মনে করিস?কতো ইলি’গ্যাল কাজ কর্ম করে বেড়ায় সে ওই রাহাদ কি জানে না নাকি সব কিছু?আমার তো মনে হয় ওই ছেলেটাই এসব কাজে সাহায্য করে এমপি কে।জানিস তো আমার বাবার মার্কেটে দোকান আছে কাপড়ের।ওখানেও এই এমপির দলের লোকেরা আড়া’লে চাঁদা”বাজি করে, না দিতে চাইলেই হুম’কি দেয় সরাসরি পি”স্তল নিয়ে ঘুরে, পুলিশ গুলো ঘু’ষ খেয়ে মুখ বন্ধ রাখে!আর এই ছেলে কতোটা ভয়ং”কর হতে পারে একবার চিন্তা কর।মা অনেক ভয় পায় এসব,সব সময় বলে এরকম ছেলেদের থেকে দূরে থাকতে এদের নজর যাতে কারো উপর না পড়ে!মা জানলে তো বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিবে আমার।শুধু পরীক্ষার সময় ছাড়া।

পাপড়ি পুষ্পিতার কাঁধে হাত রেখে বলে–,,এটা যেহেতু গুরু”তর সমস্যা আন্টিকে বলা উচিত আমার মনে হয়।পরে দেখা গেলো তোর কথা কেউ বিশ্বাস করলো না।

জেসি বললো–,,হুম নরমাল কোনো বিষয়ে হলে আমরাই সাহায্য করতে পারতাম।কিন্তু এমপি,চেয়ারম্যানের পাও”য়ার বেশি লোকজন আমাদের মতো সাধারণ পরিবারের মানুষের কথা শুনবেই না উল্টো বলে বসবে বড়লোকের ছেলের ফাঁ”সিয়ে এখন নাটক করছে।গ্রামের মহিলা গুলা তো আরো বেশি বেশি তিল থেকে তাল বানাতে বেশি সময় নেয় না!

পুষ্পিতার মুখটা কালো হয়ে আসলো,মেয়েটা কেঁদে দিবে এমন ভাব মাথা নিচু করে বললো–,,তোরা তো জানিস আম্মু কতোটা কড়া!প্রথমেই আমার দোষ দিবে,
পড়াশোনা বন্ধ করে দিলে তখন কি করবো?তোরা তো জানিস পড়াশোনা তে ফাঁকি দিলেও এই একটা জিনিসই আমাকে শান্তি দেয় তোদের সাথে কথা বললে সারাটা দিন ভালো কাটে।শান্তি পাই,মায়ের সাথে কখনো এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারবো না আমি।আপুকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার পিছনেও কিন্তু একটা বখা’টে ছেলের হাত ছিলো!আপু সুখে আছে কিন্তু নিজের স্বপ্ন সব কিছু এক ঝটকায় শেষ হয়ে গেছে।সেই একই জিনিস আমার সাথে হলে আমি মেনে নিতে পারবো না দোস্ত!

দুই বান্ধবী কিছু চিন্তা করে বললো–,,আচ্ছা এখন কিছু বলিস না আন্টিকে।সামনা সামনি তো কিছু করেনি সামান্য চিরকুট দিয়েছে,আর তোর নাম যে শশী এটা তো কলেজের কেউ জানে না এতে তোরও কোনো সমস্যা হবে না।চিন্তা মুক্ত থাক, পড়াশোনায় মনোযোগ দে আগে যে ভাবে ছিলি ওই ভাবেই থাকবি।দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে না হয় তো আংকেল আছেই।তোকে কেউ বিশ্বাস না করলেও আংকেল করবে আমি জানি।

পুষ্পিতা তপ্ত শ্বাস ছাড়লো।পাপড়ি পুষ্পিতাকে টেনে তুলে বললো–,,চল তো ওই পোলা বেশি বাড়াবাড়ি করলে একদম দিবো মাথা ফা’টিয়ে। এখন চল রহমত মামার বিরিয়ানি খেয়ে আসি পেটে কেমন খিদেতে গুড়গুড় করছে!

জেসি বললো–,,পাশে তো আরেকটা নতুন দোকান দিলো,ওটাতে একবার খাওয়া উচিত।নামটা দেখিসনি, মোল্লা বিরিয়ানি ওখানে নাকি পুরান ঢাকার মতো বিরিয়ানি পাওয়া যায়!

পুষ্পিতা বলে উঠলো–,,হ যাও তুমি, ওসব নাম টাম দিয়ে কিছু হয় না।বললো এক খাওয়াইলো আরেক পরে পুরাই পেট খারা’প!বাথরুম কে সঙ্গী বানাতে চাচ্ছি না আপাতত।

জেসি বললো–,,আচ্ছা তো চল একটু ঠান্ডা খেয়ে ব্রেন কে কুল বানা।

পাপড়ি মুখ কুঁচকে বললো–,,এই শীতের দিনে, তোরা কি আর মানুষ হবি না?

পুষ্পিতা বললো–,,তুই মানুষ? তুই আগে মানুষ হ আমরাও হবো।না হয় তোর সাথে যতদিন থাকমু ততোদিন মানুষ হওয়া হবে না!

জেসি হু হা করে হেসে দিলো।তিন জন মিলে ঘুরে কাটালো সময়টা।পুষ্পিতা ও কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে তা দেখে স্বস্তির নিশ্বাস নিয়েছে দুজন মেয়েটার কতো স্বপ্ন পাবলিকে পড়বে,মেধাবী ও তো কম না, শুধু নিজেকে নিজে সব সময় লুজা’র বলে বেড়ায় তবে তারা তো ছোট থেকে চিনে মেয়েটাকে পরিশ্রমী অনেক ক্লাস ফাঁকি দিলেও রেজাল্ট তার চোখে পড়ার মতো।এতো ডান’পিটে স্বভাবের হয়েও টিচারদের বরাবরই পছন্দের ছিলো পুষ্প।জেলা পর্যায়ে কতো প্রাইজ পেয়েছে কিন্তু এক ফোটা অহং”কার আসেনি মনে।এমন একজন কে বন্ধু হিসেবে পেয়ে তারা নিজেদের সত্যি ভাগ্যবান মনে করে!পুষ্পিতা বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভুলেই গেলো দুপুরের তীব্র মন খারা’পের কথা!
বন্ধু হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে শান্তির জায়গা,যেখানে সে শান্তিতে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারবে,যেখানে কথা বলতে ফর্মালিটি মেন্টেইন করতে হয় না।সাত পাঁচ ভেবে কিছু করতে হয় না।খাবার থেকে শুরু করে প্রতিটা জিনিস যেখানে ভাগাভাগি করা যায় অনায়াসে।যেখানে থাকলে সময়টা যেনো থমকে যায়,পৃথিবীর সকল ক্লান্তি,চিন্তা,যেখানে এসে সমাপ্তি ঘটে।ফ্রেন্ডদের ফালতু জোকস শুনে যেখানে খিল খিল করে হাসা যায়।মারামা’রি ঝগ’ড়ার পরও যেখানে সম্পর্কের ইতি ঘটে না সেটাই মূলত সত্যিকারের বন্ধুত্ব!
——-
আজকেও পুষ্পিতা প্রাইভেটে যেতে দেরি করেছে।সবাই সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখে পুষ্পিতা ভ্রু কুঁচকে তাকালো!
সানজিদা নামক মেয়েটা হাসি হাসি মুখ করে বসে,যেনো পূর্ণিমার চাঁদ হাতে পেয়েছে!

পুষ্পিতা গিয়ে জেসির পাশে বসলো,ওদের ক্লাসেরই একজন বলে বসলো–,,পুষ্পিতা তুমি তো সব সময় পরীক্ষায় বেশি পেতে,এবার তো মনে হয় পাওনি স্যার যেভাবে বললো।মনে হয় তোমার আজকে খবর আছে!

ছেলেটার কথায় হেসে উঠলো পুষ্পিতা বললো–,,নাম্বার দিয়ে কি আসে যায়!এক পেলেও খুশি একশো পেলেও ঠিক ওই রকম খুশিই হই আমি ভাই, এসব বিষয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই!তা আমাদের মাস্টার মশাই কোথায়,আন্টি আবার স্যার কে সকাল সকাল ভাষণ দিচ্ছে না তো?
পাপড়ি পুষ্পিতা কে গুঁতো মে’রে বললো–,,চুপ কর!স্যার সত্যি রেগে আছে মনে হইলো!

পুষ্পিতা গা ছাড়া ভাব নিয়ো বললো–,,ধুর বাদ দে, রেজাল্ট তো এরকম প্রতি সপ্তাহেই দেয়, এটা নিয়ে ভাবার কি আছে?

এর মধ্যেই উপস্থিত হলো স্যার।এসেই খাতা রোল করে পুষ্পিতার মাথায় একটা দিলো বলে উঠলো–,,এই তোর লিখা কবে ঠিক হবে রে পুষ্প?কি সব লিখিস এসব আমার তো মনে হয় চমশা দিয়েও কেউ বুঝবে না,তুই দেখতো বুঝতে পারিস কিনা?

পুষ্পিতা মাথায় হাত ডলে বলে–,,স্যার এটা তো ভালো লক্ষ্মণ ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার আভাস!

স্যার বিরক্ত হয়ে তাকালো এই মেয়েটা শুধরাবার নয়!

সানজিদা খুশি হয়ে ভাবলো সুন্দর লিখা হলে স্যার রা নাম্বার বেশি দেয় এটা তার জানা ছিলো,তার লেখা নাকি অনেক সুন্দর এখন পর্যন্ত অনেকেই বলেছে তার মানে নিশ্চিত সেই আজকে বেশি নম্বর পেয়েছে!

সে বলে উঠলো–,,স্যার আমাদের খাতা গুলো দিবেন কখন?

ততোক্ষণে তো পুষ্পিতা কে খাতা দিয়ে দিয়েছে স্যার।জেসির মুখে হাসি ফুটে উঠলো নিজে ফেইল করুক তাতে মাথা ব্যাথা নেই, তার বান্ধবী ত্রিশে ত্রিশ পেয়েছে এটাই অনেক।তবে তারা জানে স্যার পুষ্পিতার লিখার জন্য খাতার মাথায় বড় বড় করে লিখে দেয় লিখার জন্য তুই ত্রিশে শূন্য পেয়েছিস পুষ্প লিখা ঠিক কর!

সানজিদা খুশি হলো কারন সে বসার জায়গা থেকে পুষ্পিতার খাতার উপর শূন্য পেয়েছিস লেখা টা দেখে ফেলেছে।সবার খাতা দেওয়ার পর দেখা গেলো সানজিদা ছাব্বিশ পেয়েছে।সাতাশ পেয়েছে ওদের ক্লাসেরই একজন পড়ুয়া বিল্ডিং লিমন!

সানজিদা ভাবলো সেই হয়তো বেশি পেয়েছে। লিমন থমথমে মুখে বলে উঠলো–,,এই কে কতো পেয়েছো বলো তো?

জেসি বললো–,,বাইশ আমি,পাপড়ি পেয়েছে চব্বিশ।
সানজিদা খুশি হয়ে বললো–,,আমি ছাব্বিশ। তুমি?

লিমন সানজিদার কথা শুনে খুশি হলো পরে পুষ্পিতার দিকে তাকিয়ে বললো–,,তুমি কতো পেয়েছো পুষ্পিতা?

পুষ্পিতা চুই”ঙ্গাম চিবাতে চিবাতে বললো–,, ডাবল জিরো!

সানজিদা বলে উঠলো–,,স্যার আপনি তো বললেন আপনাদের পুষ্প কে টেক্কা দিতে পারবো কিনা সে তো শূন্য পেয়ে বসে আছে!

লিমন বললো–,, স্যার আমি তো সাতাশ পেয়েছি!বলুন তো সর্বোচ্চ মার্ক কতো?

সানজিদা চুপসে গেলো সে কিনা ওই ছেলের থেকে এক কম পেয়েছে?এটা মানা যায় না।

স্যার বই বের করে লিখতে দিতে দিতে বললো–,,সর্বোচ্চ মার্ক যত নম্বরে পরীক্ষা হয়েছে ততো!

সানজিদা বলে উঠলো–,,কে পেয়েছে?

লিমন হতাশ হয়ে বললো–,,কে আবার পুষ্প!

সানজিদা অবাক হয়ে বললো–,,ও তো বললো জিরো পেয়েছে!

সানজিদার কথা শুনে সবাই মুচকি মুচকি হাসলো,এমনকি স্যার ও।পাপড়ি বলে উঠলো–,, তুমি নতুন তো তাই পুষ্পকে চিনতে পারছো না,কয়েকদিন যাক ঠিক চিনে ফেলবে!

সানজিদা সন্তুষ্ট হতে পারলো না,নিজের খাতাটা এগিয়ে দিয়ে বললো–,,স্যার আমার বিক্রিয়াটা কেনো ভুল হলো?সব কিছু তো ঠিকই ছিলো!

স্যার বুঝিয়ে দিতে নিলো সানজিদাকে সে মুহুর্তে স্যারের মোবাইলে ফোন এলো।স্যার উঠে গিয়ে মিনিট পাঁচেক পর ফিরে আসলো।

স্যার বলে উঠলো–,,স্যরি তোমাদের আজ আর সময় দিতে পারছি না।কাল বাকি কথা হবে,আর পুষ্প সানজিকে একটু তার প্রবলেম টা বুঝিয়ে দিয়ো তো!

পুষ্পিতা বিরক্ত হলো এই মেয়েটাকে এখন বুঝাতে হবে?অন্য যে কেউ হতো দরকার পড়লে পরীক্ষার খাতা থেকে দেখাতো তার পরও এরকম অহংকা”রী গুলাকে সাহায্য করতে হতো না তার!মেয়েটা প্রথম দিন থেকেই কেমন অযথা কারনে পায়ে পারা মে’রে ঝগ’ড়া করার তাল করতেছিলো!

সানজিদা রাগে খাতা টা দিয়ে বললো–,,তুমি তো আবার বেশি পারো যদি না চাও তো বুঝাতে হবে না!তোমার টা যদি নিয়ে যাই তখন?

লিমন ছেলেটা মোটামুটি ভালো নিজে যা পারে তা সবাই কে বুঝিয়ে দেয় কিন্তু এর একটাই সমস্যা পরীক্ষায় কম পেলে মন খারা’প করে আর পরীক্ষায় একটুও কাউকে দেখাবে না যত ভালো বন্ধুই হোক!

লিমন বলে উঠলো–,,সবাই কে নিজের মতো ভাবো নাকি তুমি?আমাদের ক্লাসমেটদের মধ্যে কেউই এমন নয় যে যা পারে সবাইকে তা বুঝিয়ে সাহায্য করে,তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো জ্ঞান কখনো কমে না যদি অন্যকে বুঝিয়ে দেয় এতে আরো নিজের ভালো একটা বিষয়ে মানুষ তখন পরিপক্ব হয় যখন সে সেটা অন্যকে বুঝাতে সক্ষম হয়!তুমি শহর থেকে এসেছো তো তোমার মন মানসিকতা একটু অন্য রকম হতেই পারে তবে এটা মনে করা ভুল যে গ্রামে বা মফস্বল এলাকার শিক্ষার্থীরা কিছু পারে না!আমার কথায় কিছু মনে করো না, কিন্তু তোমার আচরনে প্রথম দিন থেকেই দাম্ভি”কতা প্রকাশ করছে।কম্পিটিশন করতে হলে সুস্থ ভাবে করো।

লিমন উঠে চলে গেলো,সানজিদা অপমানিত হলো তবুও কিছু বললো না, মনে মনে ভাবলো একটু বেশিই হয়তো করে ফেলেছে!

পুষ্পিতা যেখানে সানজিদার ভুল হয়েছে সে জায়গাটা একটু করে বলে দিলো।সানজিদা সহজেই বুঝে গেলো,অনেক সময় একটু তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে বিক্রিয়া লিখতেই ভুল হয়ে যায় যেমন টা হয়েছে সানজিদার ক্ষেত্রে!

পুষ্পিতা, পাপড়ি,জেসি বেরিয়ে গেলো।বাকিরাও ধীরে ধীরে বের হলো।

পুষ্পিতা বললো–,,এই জেসির বাচ্চা চল আজকে আমাদের বাড়িতে,পাপড়ি ও তো বাড়িতেই যাবে।

জেসি বললো–,,না না বাপু তোমার আম্মাজান যা মানুষ দেখা হলেই বলবে কি হলো জেসি পরীক্ষায় কতো পাও?ক্লাস করো তো?পড়াশোনা চৌদ্দ গোষ্ঠী টানবে তোর মা!মাঝেমধ্যে মনে হয় আংকেল টিকে আছে কি করে?এরকম পড়াশোনার কথা শুনতে থাকলে ভাই আমি কবে ভেগে যেতাম!আমার তো মনে হচ্ছে তোর মা প্রেম করার সময় ও বলতো (a+b)*(a-b)=আই লাভ ইউ।

পুষ্পিতা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,থামবি তুই?মা বাড়িতে নেই খালামনিদের বাসায় গেছে,মনে হয় দুই দিন আসবে না!পাপড়ি তোকে বলেছে রাতে আমার সাথে থাকতে।

পাপড়ি বললো–,,মা কি রাজি হয়েছে?

–,,হয়েছে। আমার মা গিয়ে বলে এসেছে।

জেসি বললো–,,তাহলে চল যাই,আগে বল কি খাওয়াবি?

পুষ্পিতা বললো–,,এতো ঠেকা পড়ে নাই আমার তোকে খাওয়ানোর যাইলে আয় না হয় বসে থাক।

পাপড়ি অটো ডেকে তাতে উঠে বসলো তিন জন।
পাপড়িকেও টেনে নিয়ে গেলো পুষ্পিতাদের বাড়িতে।

ঘড়িতে তখন আটটা দশ,পুষ্পিতার ছোট ভাই দরজা খুলে দিলো।পাপড়ি, জেসি হেসে বললো–,,কি খবর ছোট ভাই?

–,,বড় আপুদের দেখে এখন ভীষণ ভালো!

পাপড়ি বলে উঠলো–,,তোর অকাজের সাথী আমার ভাইটা কই রে?

–,,দেখো গিয়ে কোন মেয়ের বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে!

পুষ্পিতা বললো–,,সর তো সামনে থেকে, বাবা কি চলে গেছে নাকি?

পুষ্পিতার বাবা পেছন থেকে বলে উঠলো–,,যাইনি তো মা।তা আমার মায়েরা সবাই কেমন আছেন?ভিতরে আসেন।

পাপড়ি, জেসি ভেতরে ঢুকলো হেসে।পুষ্পিতা বললো–,,বাবা তুমি এখন চলে যাবে?

–,,হ্যাঁ মা!আজ কর্মচারী গুলা আসবে না জানালো,তাই আগে যেতে হবে।

–,,সাবধানে যেও বাবা।

পাপড়ি, জেসি গিয়ে পুষ্পিতার রুমে ঢুকলো।খাটের উপর হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়লো।

পাপড়ি বলে উঠলো–,,তুই কি পড়তে পড়তে ম’রে যাস নাকি বইন?বিছানা গুছানোর সময় হয় না তোর?

পুষ্পিতা বললো–,,এতো বিছানা গুছিয়ে কি হবে?সেই তো আবার ঘুমিয়েই পড়বো।

জেসি বললো–,,তোর ফোন খানা দে তো বাপু,আর গিয়ে নুডলস রান্না করে আন!

–,,কামলা পেয়েছিস?নিজে রান্না করে খা,রান্না ঘরে সব আছে গিয়ে দেখ।

জেসি বললো–,,যা না, তোর বাসায় এসেছি একটু তো সম্মান দে!

জেসি পুষ্পিতার ফোন হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো মেয়েটা হয়েছে একটা চি’জ মোবাইলে তো চার পাঁচটা তালা দিয়ে রাখতো পারলে জেসি কিন্তু মেয়েটা সামান্য লক পর্যন্ত করে না!ফেইসবুকে গিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো সে পাপড়ি কে টেনে শোয়া থেকে বসিয়ে দিলো,পাপড়ি বলে উঠলো–,,আরে গরুর মতো টানছিস কেনো ভাই?

–,,দেখ দেখ নিশাদ রাহাদ সিকদার আইডিটা থেকে পুষ্পিতা কে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিয়েছে তাও এক মাস আগে!রাহাদের মতো ছেলেটা আমার বন্ধুর আইডিতে ঝুলে আছে!

পাপড়ি মোবাইল টেনে নিয়ে গেলো রাহাদের পাবলিক আইডিতে ঢুকে পড়লো,ছেলেটা আসল আইডি থেকেই পুষ্প কে রিকুয়েষ্ট দিয়েছে!

জেসি বললো–,,একসেপ্ট করে দেই?

পাপড়ি বলে উঠলো–,,পুষ্পিতা রেগে গেলে না তোকে উগান্ডা পাঠিয়ে দিবো অকালে মর’তে না চাইলে চুপ থাক!

–,,আরে রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করা তো আর প্রেমের প্রস্তাব একসেপ্ট করা না!

–,,তার পরও,পুষ্পিতা তো চিনেই না রাহাদ কে।আমার তো মনে হয় পুষ্প দেখেই নাই ওরে কে রিকুয়েষ্ট দিছে।

পুষ্পিতা এসে বললো–,,এই তোরা কি নিয়ে বক বক করছিস?

জেসি সন্দিহান কন্ঠে বললো–,,দোস্ত তুই কি সত্যি রাহাদ কে চিনিস না?

–,,না,তোদের মিথ্যা কেনো বলবো?

পাপড়ি কিছু একটা ভেবে মোবাইল থেকে রাহাদের একটা ছবি দেখিয়ে বললো–,,এই ছেলেটার সাথে কি তোর ওই দিন সকালে দেখা হয়েছিলো?

পুষ্পিতা দেখে বললো–,,হুম এটাই তো ওই নিশাদ ছেলেটা!

জেসি চোখ বড় বড় করে বললো–,,তুই এভাবে কথা বলেছিস তোকে কিছু বললো না!

পুষ্পিতা দুজনের হাতে প্লেট ধরিয়ে চলে গেলো।বান্ধবী দুটার মাথা গেছে পুরা।

পুষ্পিতা চলে যেতেই পাপড়ি বললো –,,আমার তো মনে হচ্ছে রাহাদ ভাই সত্যি পুষ্প কে ভালোবাসে জেসি!না হয় তো এরকম করার কথা না।

জেসি বললো–,,চল ওর সাথে রাহাদ ভাইয়ের সেটিং টা করাইয়া দেই।

পাপড়ি বললো –,,আস্তে বল শুনতে পারলে না আমাদের কে মে’রে ভর্তা করবে।আজকে রাতে আসি তখন দেখবোনে কি করা যায়!
———–
কলেজে ঢুকতেই ছোটখাটো এসটা ঝা’মেলা দেখতে পেলো সবাই,মানবিকে এক মেয়ে একটা ছেলেকে পর পর কয়েকটা চ’ড় বসিয়েছে!
কৌতূহল নিয়ে সেদিকে গেলো তিন বান্ধবী, ওদের পাশাপাশি এসে দাড়ালো তিশা নামক মেয়েটি।

ছেলেটিকে দেখে অবাক হলো বাকিরা আরিয়ান!মেয়েটি রাগে হিসহিসিয়ে বলে উঠলো–,,তোকে আমি বন্ধু মনে করতাম আরিয়ান আর তুই কি করলি?ছি!আমার ভাবতেও ঘৃ’ণা হচ্ছে তুই আমাকে নিয়ে এতো বা’জে চিন্তা করিস‌।তোর মতো বন্ধু যাতে কারো না হয়।

নিপা নামক মেয়েটি কলেজে কিছুটা পরিচিত, বিশেষত আরিয়ানের সাথে মিশতো তাই ওকেও সবাই চিনতো কি এমন হলো যার জন্য ফ্রেন্ডশিপ ভেঙ্গে গেলো?কলেজ টায় একের পর এক কাহিনি চলতেই থাকে!

ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে সেখান থেকে চলে গেলো সবাই।
——
রাতে পুষ্পিতা ম্যাথ করতে বসেছে,পাপড়ি বসে বসে ফোন চালাচ্ছে পুষ্পিতা কতোবার বলেছে পড়তে বস একটু পড়ার পর যা খুশি করিস।কিন্তু মেয়েটা এসব শোনার পাত্রী না।

পাপড়ি বলে উঠলো–,,তোর ম্যাসেন্জার নেই পুষ্প?

–,,না।ম্যাসেন্জার দিয়ে কি করবো?

পাপড়ি বিরক্তি নিয়ে বললো–,,তুই একটা অলস বেডি!

পাপড়ির কথায় পাত্তা না দিয়ে অংক করতে লাগলো কাল আবার করিম আলি স্যার উরফে করমজা স্যার পরীক্ষা নিবে তখন দেখা যাবে বন্ধু গুলা তার খাতা দেখেই লিখবে,নিজেরা পরে পরে ফোন গুঁতা”ইবে আর পরীক্ষার দিন বসে বসে কান্না করবে!

পুষ্পিতার ফোনে ম্যাসেন্জার ডাউনলোড করে লগিন করতেই দেখতে পেলো ম্যাসেজ রিকুয়েষ্ট!

পাপড়ি যেনো এর অপেক্ষাতেই ছিলো জানতো এমন কিছু পাবে।ঢুকতেই ওর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক দেখা দিলো।নিশাদ নামক আইডি থেকে ম্যাসেজ এসেছে।

ফটাফট রিপ্লাই করলো পাপড়ি!ও শুধু একটা ম্যাসেজ দিলো –,,কেমন আছেন নিশাদ?

নিশাদ কিছু মুহূর্তেই রিপ্লাই করলো–,,কে তুমি?শশী কোথায়?

পাপড়ি অবাক হয়ে গেলো এ ছেলে বুঝলো কি করে ও শশী না!

–,,আপনি বুঝলেন কি করে?

–,,তুমি কে আগে বলো?

–,,পাপড়ি শশীর ফ্রেন্ড!

–,,শশীর অনুমতি ছাড়া রিপ্লাই করেছো জানলে কি হবে তোমার ভাবতে পারছো?

পাপড়ি হাসির ইমুজি সেন্ড করে বললো–,,ভাইয়া আপনি সত্যি জিনিয়াস!শশী জানলে কি হবে তা তো জানি না, তবে আপনাকে কিন্তু দুলাভাই হিসেবে আমাদের পছন্দ হয়েছে।তবে শশী মনে হয় না আপনাকে কোনো দিন পছন্দ করবে,যা রাগ আপনার উপর আবার যদি জানে আপনি রাহাদ, নিশাদ নাম বলেছেন নিজের তখন তো আরো আগে অপছন্দ করবে আপনাকে!মিথ্যা বলা একদম পছন্দ না ওর।

–,,শালিকা এতো চাপ নিচ্ছো কেনো?আমার বউ আমি ঠিক সামলে নিবো!তোমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তাকে দেখে শুনে রাখা।

–,,তা তো অবশ্যই ভাইয়া!

–,,তা বলে ফেলো আমার এক মাত্র বউ কি করছে?

–,,পড়াশোনায় ব্যস্ত কাল পরীক্ষা আছে তো!আমাদের একমাত্র ভরসা।
বলেই হাসলো পাপড়ি,পুষ্পিতা একবার তাকিয়ে ইশারা করলো কি?

পাপড়ি সে মুহুর্তেই পুষ্পিতার একটা ছবি তুলে ফেললো মেয়েটাকে এরকম এলোমেলোই বেশি মানায়!

পাপড়ির থেকে আরো বেশ কিছু ইনফরমেশন জেনে নিলো রাহাদ!মেয়েটার কিছু কিছু অদ্ভুত অভ্যাস শুনে আনমনেই হেসে নিলো।
———–
কাটলো কয়েক টা দিন,এর মধ্যে একদিন পুষ্পিতা বাড়ি ফিরছিলো, তার বাবার দোকান থেকে বের হলো, দোকানের এক কর্মচারী কে এগিয়ে দিতে সাথে পাঠালো পুষ্পর বাবা।
ভাগ্য ক্রমে রাহাদের তা চোখে পড়লো!সে তো রাগে মুহুর্তেই লাল হয়ে গেলো হাত মুষ্টিবদ্ধ করে এগিয়ে এসে বললো–,,এই ছেলে কে শশী?

পুষ্পিতা হঠাৎ শশী নাম শুনে অবাক হয়ে তাকায়।নিশাদ কে দেখে বিরক্তি নিয়ে বললো–,,আরে ভাই আপনি আবার এখানে?

ততক্ষণে রাকিব ছেলেটি চলে গেছে পুষ্পিতাই বলেছে আমি একা যেতে পারবো ভাইয়া আপনি চলে যান!

রাহাদ পুষ্পিতার এক হাতে জোরে চেপে ধরে আড়ালে টেনে নিলো, পুষ্পিতা অবাকের চূড়ায় কি ছেলেরে বাবা বলা নেই কওয়া নেই হাত ধরে ফেললো!
পুষ্পিতা কে একটা ধ’মক দিয়ে বললো–,, বল ওই ছেলে কে? কি করছিলি ওর সাথে?তুই শুধু আমার শশী,অন্য কারো সাথে তোর ছায়া কেও সহ্য করবো না আমি!

পুষ্পিতা রেগে এক চ’ড় বসিয়ে দিলো রাহাদের গালে!

–,,আপনার সাহস তো কম না?আমার হাত ধরেছেন কোনো আবার তুইতোকারি করছেন?অভদ্রতার একটা সীমা থাকা দরকার!রাস্তা ঘাটে মাস্তা’নি করতে লজ্জা করে না।আর একদিন যদি আমার সামনে এসেছেন তো বেশি ভালো হবে না।অস’হ্যকর মানুষ!

রাহাদ শুধু তাকিয়ে আছে,পরেই হু হা করে হেসে উঠলো ভরকে গেলো পুষ্পিতা।কি অদ্ভুত মানুষ!

রাহাদ গালে হাত বুলিয়ে বললো–,,তোমার ছোঁয়া জান, হোক তা থাপ্প”ড় বা চুমু আমার কাছে সবই এক!

পুষ্পিতার কপাল চাপড়াইতে মন চাইলো।বিরবির করে বললো–,,নির্লজ্জ!

–,,এই শোনো!

পুষ্পিতা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো রাহাদ বলে উঠলো–,,ম্যাসেজ সিন করার জন্য ধন্যবাদ জান!আর একটা কথা

“লোকে পাগ’ল বলুক, মাতা’ল বলুক আমি তোমার পিছু ছাড়বো না!”

পুষ্পিতা হন হন করে চলে গেলো,একদিকে ওই রাহাদ আবার এই নিশাদ কোথায় যাবে সে।রাহাদ ছেলেটা খারা’প কখন জানি এই নিশাদ টার বারোটা বাজিয়ে দেয় এই নিশাদ টাও একটা বজ্জা’ত দুইটা লাগুক পরে মারা’মারি করে ম’রে যাক অন্তত পুষ্পিতা বেঁচে যাক!

পুষ্পিতা চলে যেতেই রাহাদের দলের ছেলে এসে বললো–,,ভাই মেয়েটার এতো বড় সাহস আপনাকে চ’ড় মে’রেছে!বলুন তো তুলে নিয়ে আসবো।

–,,তোর ভাবি ইমন,সম্মান দিয়ে কথা বল!

ইমন মাথা চুলকে বললো–,,শশী ভাবি ভাই?

–,,অবশ্যই! আমার কি দুইটা বউ নাকি আমি এক নারীতে আস’ক্ত ইমন, শশীই প্রথম শশীই শেষ!

–,,ভাই, এমপি সাহেব পার্টি অফিসে যেতে বলেছেন একবার, বিরোধী পক্ষের সাথে ঝামে’লা বেঁধে গেছে একটা!

রাহাদ চুল গুলো ঠিক করে বাইকের কাছে এগিয়ে গেলো!সামনেই হট্টগোল দেখে থেমে গেলো শশী তো এ পথেই যাবে,মেয়েটা ঠিক ঠাক যেতে পেরেছে তো?

ভয় পেয়ে গেলো রাহাদ,এই রাজনীতিতে মানুষের দয়া মায়া কিছু নেই সাধারাণ মানুষের ক্ষ’তি তাদের কিছু যায় আসে না! ক্ষ’মতার জন্য মানুষ কতো কি না করে।বাইক থেকে নেমে গেলো সে ইমনের হাতে চাবি দিয়ে দৌড় লাগালো, ইমন পেছন থেকে ডাকলো ভাই যাবেন না ওখানে বিরোধী পক্ষের লোক আপনাকে একা পেলে কিছু করে বসবে!

রাহাদ সে সব যেনো শুনলো না তার দুচোখ খুঁজতে ব্যস্ত মেয়েটাকে।কলি’জা হাতে নিয়ে ছুটছে যেনো রাহাদ।চারদিকে মানুষ ছুটোছুটি করছে ভয়ে।মোড়ের এক পাশে জড়োসড়ো হয়ে দাড়ানো মেয়েটাকে চিনতে একটুও সময় নিলো না রাহাদ। মন চাইলো এক ছুটে গিয়ে জড়িয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিতে!

পুষ্পিতা ভয় পেয়ে গেছে, মানুষ গুলোর হাতে লাঠিসোঁটা!এতো এতো মানুষ কে ঠেলে কোথাও লুকানোর জায়গা পাচ্ছে না যেনো,রাকিব ভাইয়ার সাথে আসলেই ভালো হতো মনে হয়!এসব সমাবেশ সম্মেলন হলেই মানুষ গুলো জানোয়া’রের মতো হয়ে বসে।

একটা লাঠি পুষ্পিতার দিকে এগিয়ে আসতে দেখেই মেয়েটা ভয়ে একপাশে ঝুঁকে গেলো।তার আগেই এক জোড়া হাত এসে দুপাশ থেকে আড়াল করে ফেললো তাকে।পুষ্পিতা ভয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।চোখ খোলার সাহস পাচ্ছে না।তখনই একটা উদ্বিগ্ন কন্ঠ কানে আসলো–,,ঠিক আছো শশী?

পুষ্পিতা চোখ খুলে তাকালো মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না যেনো।

রাহাদ আবার বলে উঠলো–,,ঠিক আছো?কোথাও লাগেনি তো?ভয় পেয়েছো?

পুষ্পিতা নিশ্চুপ।রাহাদ রেগে বলে উঠলো–,,একদম চুপ থাকবে না রা’বিশ! তোমার এই চুপ করে থাকাটা আমার জা’ন বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম করে দিচ্ছে এদিকে।
বলো না তুমি ঠিক আছো?

রাহাদের রাগী পর পরই করুন কন্ঠটা শুনে পুষ্পিতার ভেতরটা কেঁপে উঠলো,কে সে একজন সামান্য মেয়ে তার জন্য কেনো এতো উতলা হচ্ছে ছেলেটা!

হঠাৎ করেই রক্ত দেখে পুষ্পিতা চেঁচিয়ে উঠলো–,,রক্ত!

পুষ্পিতার হাত আপনা আপনি উঠে গেলো রাহাদের কপালের দিকে তবুও ছুঁয়ে দিলো না মেয়েটা!

–,,এই মেয়ে বলছো না কেনো?বলো কোথায় লেগেছে?যদি নিজে মুখে না বলো তো এখনই আমি তোমাকে ছুঁয়ে দিবো, নিজ হাতে চেক করবো!

পুষ্পিতা বললো–,,দূরে যান প্লিজ আমার অস্ব’স্তি হচ্ছে!

–,,আগে বলো!

এ কেমন নাছোড়বান্দা! পুষ্পিতা বলে উঠলো–,,হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছি!আগে নিজের চিন্তা করুন!

–,,এটা এমন কিছু না, চলো বাড়ি যাবে!

–,,আমি একা যেতে পারবো,আপনার কপাল কে’টে গেছে যান বে”ন্ডেজ করান!

–,,না!

পুষ্পিতা আশেপাশে তাকালো কোথাও ফার্মেসি নেই।কিছুটা দূরে একটা টিনের তৈরি বেড়া দেখলো, একবার তাকালো নিজের ওড়নার দিকে।আকাশী রঙা ওড়নাটার একপাশে কে’টে নিলো রাহাদের দিক এগিয়ে দিয়ে বললো–,,বেঁধে নিন!

–,,তুমি করে দিলেই পারো!

পুষ্পিতার সোজাসাপটা জবাব–,,পরপুরুষ কে ছুঁয়ে নিজের স্বামীর হক নষ্ট করতে চাচ্ছি না মিস্টার!

রাহাদ হেসে ফেললো নিজেই ওড়নার টুকরো টা দিয়ে মাথা বেঁধে ফেললো,কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো–,,বেস্ট বেন্ডে’জ ওফ দ্যা ওয়ার্ল্ড!

পুষ্পিতা বিরক্ত হয়ে বললো–,,আপনি আমাকে সাহায্য করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ কিন্তু তাই বলে আপনার করা অসভ্য”তা গুলো ভুলে যাইনি।সরুন সামনে থেকে এর মধ্যে পুষ্পিতার বাবা ছুটে এসে মেয়েকে দেখেই জড়িয়ে ধরলেন ব্যস্ত কন্ঠে বললো–,,মা ঠিক আছিস তো?আমার তো ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো মা।

পুষ্পিতা নিজের বাবা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,ঠিক আছি তো বাবা কিচ্ছু হয়নি দেখো!

রাহাদ সেখান থেকে আড়াল হয়ে গেলো, পুষ্পিতা দুই একবার উঁকি দিয়ে দেখলো না নেই, যাক বাবা, বাবা দেখেনি!কি না কি ভাবতো।
——-
পুষ্পিতা বিরক্তি অনেক বিরক্ত সে নিশাদ নামক আইডিটা জ্বা’লিয়ে মার’ছে আরে এতো ঘাড়ত্যাড়া মানুষ হয় নাকি?আজব!
কথায় কথায় বলে উঠে মেসেজ সিন না করলে বাড়ি এসে বলবে–,,সে পুষ্পিতার প্রেমিক!কি ভয়ান’ক কথা বার্তা ছেলেদের থেকে দশ হাত দূরে থাকা পুষ্পর কিনা প্রেমিক?
পুষ্পিতা দাদীর চোখের আড়ালে তার দাদীর অ- মৌসুমে ফলা আম গাছটা থেকে আম চু’রি করছে আর এসব ভাবছে।নিজেদের গাছ থেকে চু’রি করা লাগছে হায়রে কপাল বুড়িটা ও না।না পাঁকতে ধরতে দিবে না, পুষ্পিতা কি তা মানবে নাকি,কাঁচা আম খাওয়ার মজাই আলাদা,তিনটা আম পেরে নিলো অনায়াসে নিজেদের একতলা বিল্ডিংটার পাশেই রান্নাঘরের ছোট ছাদটার সাথে আম গাছটা,আম পাড়া শেষ হতেই কানে আসলো পরিচিত সে কন্ঠস্বর

–,,এই মেয়ে এরকম বাঁদ”রের মতো গাছে উঠে বসে আছো কেনো?পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙ্গলে পরে তো বিয়ে সা’দি কিছু হবে না!

পুষ্পিতা তীব্র বিরক্তি নিয়ে তাকালো নিশাদ নামক ছেলেটির দিকে,একটা মানুষ কি করে এতো অপমা”নিত হওয়ার পরও সামনে এসে দাঁত কেলিয়ে কথা বলতে পারে তার বুঝে আসে না!

পুষ্পিতা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,আমার বিয়ে হলে হবে না হলে নাই।আপনার থেকে শুনতে চেয়েছি আমি?অদ্ভুত লোক।আমাদের বাড়িতে এসেছেন কেনো?

রাহাদের সহজসরল স্বীকারোক্তি –,,তোমাকে দেখতে!

পুষ্পিতা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,প্লিজ এখান থেকে চলে যান।কেউ দেখলে খারা’প ভাববে!

বলেই পুষ্পিতা হল ছাদ থেকে উপরের ছাদের রেলিং বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।

তা দেখে রাহাদ চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,কি করছো পরে যাবে তো!

পুষ্পিতা তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে মাথার ঘোমটা সরে চুল গুলোর খোঁপা উন্মুক্ত হলো হাঁটু সমান চুল গুলো বিছিয়ে পড়লো রেলিং এর উপর!

রাহাদ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, পরেই একরাশ মুগ্ধতা এসে ভীড় করলো ওর চোখে মুখে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো–,,মাশাআল্লাহ!

পুষ্পিতা উঠে গিয়েও থমকে দাড়ালো রাহাদের কন্ঠস্বরে

–,,তুমি রোজ রোজ এভাবে গাছে চড়ে বসে থাকো।এক দুইটা হাত পা ভাঙ্গলেও সমস্যা নাই।বিয়ে করার জন্য আমি আছি!এতো কিছু হওয়ার পরও যদি এতো সুন্দর কিছু দেখতে পাই তবে তাতে ম’ন্দ কিছু নেই!

তোমার ওই রেশম দীঘল কালো চুল দেখার সৌভাগ্য হওয়ায় আমার চোখ আজ চিৎকার করে করে জানান দিচ্ছে সে ধন্য।তার দৃষ্টিতে দেখা সবচেয়ে মুগ্ধকর জিনিস টি হলো তার প্রিয়তমার ঘন কালো কেশ!

পুষ্পিতার দাদীর কন্ঠ শুনেই পুষ্পিতা লুকিয়ে পড়লো।রাহাদ হেসে তাকে বললো–,,কি অবস্থা বুড়ি?আমার বউয়ের এক মাত্র সতীন হিসেবে তোমাকে কিছুতেই মানতে পারছি না গো আমি!

–,,তবে রে ছোকরা! আমি কি কম সুন্দর নি?কতো পোলা লাইন মার’তো জানোস কিছু?তা তোর বউ টা কে?কোন সে মাইয়্যা তোর মতো বাঁদ”রের গলায় ঝুলবো?

পুষ্পিতার আ’ত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে এ ছেলে কি এখন বলে দিবে নাকি?ইয়া আল্লাহ এবারের মতো রক্ষা করো মাবুদ!

পুষ্পিতা চোখ মুখ খিঁচে দোয়া পড়তে লাগলো।
তখনই রাহাদ বলে উঠলো—,,তোমার ঘরের মুক্তার মালা গো দাদী!

চলবে?