জোছনায় ঘর তোর আমার পর্ব-০৪

0
42
জোছনায় ঘর তোর আমার
জোছনায় ঘর তোর আমার

#জোছনায়_ঘর_তোর_আমার
#পর্ব৪
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
বার বার নোটিফিকেশনের শব্দে অ’তিষ্ঠ প্রায় পুষ্পিতা।কি এক বিপ’দে পড়লো সে, কেনো এই তেঁদড় ছেলের নজরে পড়লো বুঝে আসে না।এখন তো মনে হচ্ছে গ্রামের ছেলে গুলা এক প্রকার নিজেদের মধ্যে কম্পিটিশন লাগিয়ে দিয়েছে।গ্রামে কি মেয়ের অভাব পড়লো নাকি?দেশে!

এই তো আজ পুষ্পির বাবা এসে হেসে হেসে বলছিলো গ্রামের কোন সম্পদশালী ব্যক্তির ছেলে বিদেশ ফেরত ভালো টাকা পয়সা ইনকাম করে পুষ্পিতা কে পছন্দ হয়েছে।শেফালী বেগম বিরক্ত হলেন স্বামীর রসিকতায়,পুষ্পির বয়সই বা কতো হলো,তিনি মানছেন সতেরো বছরে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যায় গ্রামে তো তেরো বছর বয়সেই বিয়ে দিয়ে মেয়ে বিদায় করে মানুষ, তাদের এতো কিসের তাড়া?মেয়েটা কলেজটাই পাড় করতে পারলো না এখনো!

পুষ্পিতা ম্যাসেজ সিন করে ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে,অনলাইনে একটা লাইভ ক্লাস করছিলো পদার্থের কিন্তু এই অপদার্থ ছেলেটার জন্য তা হলো কোথায়?পাপড়ির উপর রাগ ঝেড়েছে আজ তবুও কাজের কাজ কিছু হলো না মেয়েটা ম্যাসেন্জার ডাউনলোড করে কি না তাকে না জানিয়েই ওই ছেলেটাকে রিপ্লাই দিয়ে দিলো!আর এখন এই ছেলে ওর মাথা খে’য়ে ফেলছে।

পুষ্পিতা বিরক্ত হলো প্রচুর এ পর্যন্ত তিন বার ব্লক করেছে নতুন নতুন আইডি সমেত হাজির হচ্ছে ছেলেটা।এবারের ম্যাসেজ দেখে তো আরো রাগলো পুষ্পিতা

–,,এই তুমি যে আমার ম্যাসেজ সিন করছো প্রেমে পড়ে যাও নি তো পুষ্প কানন!

পুষ্পিতা লিখলো–,,আমার কয়েকদিন পর বিয়ে বুঝলেন বাবার কাছে গ্রামের কে জানি প্রস্তাব রেখেছে, আপনি যে হারে বিরক্ত করছেন, এমনিতেও তো ফেইল আসবে পড়াশোনা করতে না পারলে ফেইল মানেই বিয়ে।ফেইল করে মানসম্মান নষ্ট করে বিয়ে করার থেকে ভালো এখনই করে ফেলি।বাবা বললো ছেলেটা নাকি সুন্দর আছে আমার সাথে মানাবে বেশ!

রাহাদের রাগে কপাল ফুলে উঠলো মেয়েটার সাহস কতো বড় অন্যের সাথে নিজেকে মানানসই ভাবছে!কলি’জা কতো বড়।সে রাগে গজগজ করতে করতে বললো–,,শশীর সাথে শুধু নিশাদ কেই মানায় ভুলে যাবি না তুই!যদি অন্য কারো নামও মুখে আনিস তো ভালো হবে না শশী।সুযোগ দিচ্ছি ভালো ভাবে বলছি আমার হয়ে যা। যদি না হোস তো কিভাবে নিজের করতে হয় তা আমার ভালো করেই জানা আছে!

তোকে বিয়ে করা তো দূর বাড়ি অব্দি যাওয়ার সাহস কোনো মায়ের ছেলে করবে না যদি জা’নের মায়া থাকে!শশী তোর গায়ে বিয়ের বেনারসি শুধু আমার নামেই জড়াবে,তোর হাতে বিয়ের মেহেদী আমার নামে রঙিন হবে।যদি তা স্বাভাবিক ভাবে হয় তো ভালো।না হয়,,

পুষ্পিতা শুকনো ঢোক গিললো।জোরে জোরে দুইটা নিশ্বাস নিয়ে বললো–,,দেখুন আবারও বলছি। আমি এসব প্রেম ভালোবাসায় আগ্রহী নই,আমার মোটেও এসব পছন্দ না কেনো বুঝতে চাইছেন না।আমি কোনো দিনও আমার বাবা মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাবো না, তারা আমাকে বিশ্বাস করে তাদের বিশ্বাস আমি ভাগতে পারবো না,অনুভূতি তে জোর চলে না নিশাদ।ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড আমি আপনাকে ভালোবাসি না,আমি অন্য কাউকে পছন্দ করি, যদি সম্ভব হয় তো তাকেই বিয়ে করবো,যদি না হয় তো বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করবো।আমার বাবার পছন্দই আমার পছন্দ। আপনি জোর করলেই তো সব হবে না।আপনি আপনার মতো থাকুন আমাকে আর বিরক্ত করবেন না প্লিজ!

–,,কাকে পছন্দ করো?

–,,বলতে চাই না আমি আপনাকে!

–,,শুধু একবার সেই মানুষটিকে আমি দেখতে চাই যাকে আমার শশী নিজের যোগ্য মনে করেছে,নিজের কি কি কমতি আছে সেগুলো শুধু জানবো।

–,,ব্যক্তিগত বিষয়ে আপনাকে কিছু বলতে চাই না আমি।

–,,শুধু নামটা বলো,তোমাদের কলেজের কিনা বলো?আমি তোমাকে আর বিরক্ত করবো না সত্যি বলছি!

–,,আপনি নিশ্চিত তো?

–,,হ্যাঁ!

–,,আমাদের কলেজেরই একজন নাম আরাফ!দেখুন শুধুই পছন্দ অন্য কিছু না আর না আমি ছেলেটিকে কোনো দিন বলবো!

–,,সেকেন্ড ইয়ার অর ফাস্ট ইয়ার?

–,,এতো কিছু কেনো বলবো?শর্ত মতো এখন থেকে আর ম্যাসেজ দিবেন না দয়া করে!

পুষ্পিতা ফট করে নিশাদ নামক আইডিটা ব্লক করে দিলো।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।এবার একটু শান্তিতে পড়তে পারবে।

রাহাদ রাগে নিজের ফোনটা আছড়ে ফেললো,আরাফ কে এই আরাফ,শশী তুই শুধুই আমার আরাফ নামের কারো অস্তিত্বই রাখবো না, পছন্দ কি করে করিস আমিও দেখবো!

তিশা তিহান কে ডেকে পাঠালো রাহাদ।দুই জন এসে কাচুমাচু হয়ে দাড়ালো কি এমন হলো ওরা দুজন কি কিছু করেছে? না হয় ভাই হল থেকে ফিরেই তাদের ডাকলো কেন?

রাহাদ রাগী রাশভারি কন্ঠে বললো–,,তোদের ক্লাসের পুষ্পিতা নামক মেয়েটাকে চিনিস?

দুজন একত্রে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।

–,,ওকে কি কলেজে কারো সাথে কথা মানে কোনো ছেলের সাথে প্রেম করতে দেখেছিস?বা সেকেন্ড ইয়ারের কারো সাথে মিশতে!

তিশা তিহান মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো,পুষ্পিতার বিষয়ে এতো কিছু কেনো জানতে চাচ্ছে তাদের ভাই!

তিশা বললো–,,ভাইয়া, ও ছেলেদের সাথে মিশা তো দূর দুইটা ফ্রেন্ড আছে ওদের ছাড়া কারো সাথেই মিশে না।মেয়েরা সাহায্য চাইলে করে, ছেলদের সাথে অতিরিক্ত প্রয়োজন না পড়লে ভুলেও ফিরেও তাকায় না।মেয়েটা কেমন জানি, ক্লাস ঠিক মতো করে না, টিচার রা তো কতো ব’কে ক্লাসে তাও মেয়েটার মাঝে কোনো পরিবর্তন হয় না।কিছু যেনো গায়েই মাখে না!

রাহাদ তিহানের দিকে তাকিয়ে বললো–,,সেকেন্ড ইয়ারে আরাফ নামের কেউ আছে?জানিস!

তিহান বললো–,,না ভাই আমি তেমন কাউকে চিনি না!

তিশা বললো–,,কেনো ভাইয়া এই মেয়ে কি করেছে?তুমি এতো রেগে আছো কেনো?

রাহাদ রাগে দেয়ালে ঘু’ষি মে’রে বসলো তিশা চেঁচিয়ে উঠলো –,,কি করছো কি ভাইয়া!

–,,ওর সাহস বেড়ে গেছে,অন্য ছেলেকে পছন্দ করা,মে’রে ফেলবো একদম!

তিহান বললো–,,ভাইয়া একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

তিশা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো,এদিকে তার ভাই রেগে আছে আর এই ছা’গল হেসে হেসে কিছু জানতে চাইছে?আশ্চর্য!

–,,কর!

–,,পুষ্পিতা কি আমাদের ভাবি শশী!

রাহাদ মাথা না তুলেই বললো–,,তিশা তোর কাজ হচ্ছে শশী,জেসি,পাপড়ির সাথে বন্ধুত্ব করা।আর ওদের সব ইনফরমেশন আমাকে দেওয়া!

তিশা মিন মিন করে বললো–,,ভাইয়া এটা তো অন্যা’য়,আমি এদেরকে ধোঁ’কা দিতে পারবো না!মিথ্যা মিথ্যা বন্ধুত্ব করতে পারবো না।

–,,সত্যিকারের বন্ধু হতে বলেছি,আর আমি এটা বলিনি তোদের সব কথা আমাকে বল,শুধু বলেছি কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে,বা পছন্দ করে এসব জানা।যতোটা না লোক লাগিয়ে জানতে পারবো, তার থেকে বেশি তুই জানতে পারবি!

–,,ওরা আমাকে বন্ধুই বা বানাবে কেনো?

–,,তুই ভালো হলেই বানাবে,এখন যা।

তিহান বললো–, আমার উত্তর টা ভাইয়া?

রাহাদ বললো–,,সব উত্তর মুখে দিতে হয় না!
——-
প্রাইভেটের জন্য বেরিয়েছে পুষ্পিতা, গেইট থেকে বের হতেই ভয় পেয়ে গেলো,নিশাদ দাড়িয়ে কাল রাতে না করে এখন বাড়ির সামনে চলে আসলো!পুষ্পিতা পাত্তা না দিয়ে অটোতে চড়ে বসলো,নিশাদ নিজেও উঠে বসলো।

পুষ্পিতা নিশ্চুপ এমন ভাবে আছে যেন গাড়ির সামনের ব্যক্তি কে সে চিনে না।

–,,এই মেয়ে তুমি তো মিথ্যাবাদী!

পুষ্পিতা চুপ রইলো,রাহাদ বললো–,,আরাফ নামের কাউকে পুরো কলেজ খুঁজেও পাইনি!যদি পেতাম না,,

পুষ্পিতা অস্পষ্ট সুরে বললো–,,আপনি পুরো কলেজে খুঁজেছেন কিন্তু কেনো?

–,,মার’তে!

পুষ্পিতা আঁ’তকে উঠলো।কি খারা’প লোক!রাতে তো মিথ্যা বলেছে সব যদি আরাফ নামের কেউ থাকতো তো কি হতো!

–,,আনব্লক করবে এক্ষুনি!

পুষ্পিতা অটো থেকে নেমে গেলো,রাহাদ এবার চেঁচিয়ে উঠলো বললো–,,এই দাঁড়াও বলছি, না হয় কিন্তু এই মাঝ রাস্তায় লিপ কিস করবো!

পুষ্পিতার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।

সে দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো!
——-
বেশ কিছুদিন কেটেছে,তিশার সাথে সহজে মিশতে অসুবিধে হয়নি পুষ্পিতা, পাপড়ি,জেসির।তিশা সত্যি অসাধারন মেয়ে,খুবই সাদামাটা ঠিক ওদেরই মতো।

আজ কলেজ ছুটির পর পুষ্পিতার বাবার দোকানে এসেছে ওরা মূলত চার জন মিলে ঘুরতে যাবে তিন জন তো আগেই যেতো যেহেতু তিশা নতুন তার উপর তারা জানে তিশা সিকদার বাড়ির মেয়ে,মেয়েটা ভয়েই থাকে কখন কে না কে দেখে ভাইয়ার কানে তুলে, পুষ্পিতা হতাশ হয় বোন বাবা এতো ভালো আর ছেলেটা হলো কার মতো?

পুষ্পিতা তিন বান্ধবী কে নিয়ে বাহিরে দাড়িয়ে ভিতরে আছে কাস্টমার।তিশা কিছুটা চুপসে আছে,দোকানের বাহিরে নিশাদ কে দেখে বিরক্ত হলো পুষ্পিতা।

একটা মেয়ে তিশা কে দেখে ডাকলো–,,তিশু তুই এখানে?কলেজ শেষ নাকি?

তিশা এগিয়ে গেলো মেয়েটার দিক,জড়িয়ে ধরে বললো –,,আপাই কবে কখন এসেছো?তুমি আসবে জানাও নি কেনো?

–,,সারপ্রাইজ দিবো বলে রে পাগ’লি!

–,,এই অবস্থায় এখানে আসলে কেনো?ভাইয়া কে বলতে তোমার যা লাগবে নিয়ে যতো।

লিলি হেসে বললো–,,তোর ভাগনা ভাগনির একটু হাঁটতে মন চাইলো,পেটে থেকে থেকে তারা বোর হচ্ছিলো!

রাহাদ এসে বললো–,,আপু আর বলিস না তো বাকি ব’দ গুলাকে আনাই ভুল হয়েছে,ঘুরছে তো খবর নেই একেক জন একেক জায়গায়!

রাহাদ পুষ্পিতার সাথে তিশা কে দেখলো!

হঠাৎ করেই লিলির শ্বাসক’ষ্ট শুরু হয়ে যায়।আজ রোদ টা একটু কড়াই উঠেছে যদিও শীত কাল তার পরও গরম লাগছে আজ।

রাহাদ তিশা এগিয়ে আসলো,ঠিক আছো, দুজনই ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

পুষ্পিতা বিরক্ত হয়ে বললো–,,এই যে মিস্টার নিশাদ যান গিয়ে পানি নিয়ে আসুন।পারেন তো শুধু মানুষকে বিরক্ত করতে একটু ভালো কাজ করলে ও তো পারেন।আপু কষ্ট পাচ্ছে গরম বেশি, তার উপর উনি প্র্যাগ’নেন্ট।

রাহাদ সত্যি পানি নিতে যেতে হবে ভুলে গেছে দৌড়ে গেলো, পুষ্পিতা দোকান থেকে টুল এনে বসতে দিলো তিশা বাতাস করছে।রাহাদ পানি নিয়ে এসে দিলো,লিলি বলে উঠলো–,,এই পানি খেতে পারি না আমি।বাসায় চল।

পুষ্পিতা কি মনে করে নিজের ব্যাগে তাকালো ও তো পানি এনেছে।দ্রুত ব্যাগ থেকে মাম পট টা বের করে দিলো।

লিলি কে দিতেই সে নিয়ে খেলো এবার একটু শান্তি পেলো যেনো।পুষ্পিতার দিক তিশা তাকিয়ে বললো–,,তুই তো এই বোতল থেকে কাউকে পানি খেতে দিস না তবে এখন দিলি যে!

পুষ্পিতা বলে উঠলো–,,এটা কি বললি, প্রথমে মনে থাকলে তো প্রথমেই দিতাম।একজন মানুষ কষ্ট পাচ্ছে তাকে সামান্য পানি দিবো না আমি?

লিলি বোতলের মাথায় একটা কিছু আটকানো দেখলো যার অর্ধেক অংশ নেই।সে পুষ্পির দিকে তাকিয়ে বললো–,,এ গোলাপটার বাকি অংশ কোথায় পুষ্প?

পুষ্পিতা ঠোঁট উল্টে বললো–,,হারিয়ে গেছে আপু!

লিলি একবার রাহাদের দিক তাকালো পরে হেসে বললো–,, অনেক পছন্দের ছিলো নাকি?

–,,হুম!

লিলি আবারও হেসে বললো–,,তাই তো বলি কেউ এতো যত্নে একটা সামান্য ফুলের অংশ কেনো রেখে দিয়েছে!

পুষ্পিতা বলে উঠলো–,,তিশা চল ঘুরতে যাই,আপু তো তোর বাড়িতেই থাকবে,আজকে না গেলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে পরে সে পুরনো দেখা লাগবে আজ ওপেনিং আজকেই যাবো!
তিশা ঢুক গিলে রাহাদের দিক তাকায়।পুষ্পিতা বলে উঠলো–,,আরে কি হলো এখানে তো তোর ওই ইবলি’শ ভাইটা নাই কেনো এতো ভয় পাচ্ছিস!তোর ভাইটা না একটা আস্ত খবি’শ।যাকে বলে গু’ন্ডা মা’স্তান লোক!

রাহাদ মৃদু ধমকের সুরে ডেকে উঠে–,,শশী!

পুষ্পিতা থমকে যায়,লিলি শশী নাম শুনেই নিশ্চিত হলো এটাই রাহাদের শশী।পরে হো হো করে হেসে উঠলো সে।ইশ তার ভাইটা নিজের বদ’নাম কিনা নিজেই শুনছে!

চলবে,,,,