#জোছনায়_ঘর_তোর_আমার
#পর্ব৭
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
বিকেলের মৃদু রোদ এসে পড়ছে পুষ্পিতার টেবিলের উপর, সেখানেই মাথা ঠেকিয়ে মেয়েটা ব্যস্ত নানান চিন্তায়।
দরজায় আওয়াজ হলো তবুও উঠতে ইচ্ছে হলো না তার। চুপচাপ দু হাঁটুতে থুতনি ঠেকিয়ে বসে রইলো। দরজা খোললেন শেলিনা বেগম। অনেক দিন পর বান্ধবী কে দেখে চোখে মুখে ফুটে উঠলো খুশির ঝিলিক। মনিরা বেগম নিজের প্রিয় বান্ধবী কে জড়িয়ে ধরলেন।কোনো দিন এতো কাছাকাছি থাকা হবে, আবারও দেখা হবে ভাবতেই পারেনি বিয়ের পর।হঠাৎই ছেলেকে স্কুলে দিতে গিয়ে জানতে পারলো বান্ধবী সেখানে কর্মরত!
তার পর থেকেই তো সুযোগ পেলেই কথা হতো আগের মতো না হলেও টুকটাক নানান কথা হয়।
মনিরা বেগম কে নিয়ে ভিতরে আসলেন শেলিনা বেগম।সোফায় বসলেন দুজন।খোলা হলো জমানো কথার ঝুলি!
পুষ্পিতা শুনলো বুঝলো কেউ এসেছে, তবুও উঠতে ইচ্ছা হলো না,তার ফাঁকা মস্তিষ্ক জুড়ে শুধু রাহাদের কথা।ছেলেটা কে কি পুষ্পিতা পছন্দ করে?অন্য কোনো ক্ষেত্রে না শুধু মানুষ হিসেবে?হিসেব মিলে না অজানা অনুভূতির নাম জানতে পারে না পুষ্পিতা, কেনো পারে না জানে না, কিছু ভাবতে গেলেই অনেক ধরনের অসামঞ্জস্যতা চলে আসে। কোনো দিনও কি এসব হওয়ার যা যা রাহাদ নামক ব্যক্তি আশা করে!ভালোবাসা টা কি আদো জন্ম নিবে পুষ্পর মনে সে কি কোনো দিন প্রেমে পড়বে রাহাদের?ভালোবাসবে তাকে!
মাথা চেপে ধরলো পুষ্পিতা কি সব ভাবছে ও,কি করে হয় এসব।অসম্ভব! রাহাদ আর পুষ্প দুই মেরুর মানুষ কোনো কিছুর মিল নেই হবে কি করে এতো অমিলেও তাদের মিল!কেনো রাহাদ জে’দ করে বসে আছে জানে না পুষ্পিতা।
হঠাৎ ডাকে পুষ্পিতার ভাবনায় ছেদ পড়ে। সে উঠে যায় বসার ঘরে।রাহাদের মাকে দেখে চিনতে ভুল করলো না,সালাম দিয়ে ভালো ম’ন্দ জিজ্ঞেস করে ফেললো ফটাফট।
অমায়িক হাসলেন মনিরা বেগম।পুষ্পিতা কে দেখেছে আরো কতো বছর আগে,শেলিনার সাথে দেখা হলেও পুষ্পিতার সাথে দেখা হয়নি বেশির ভাগ সময়।
মনিরা বেগম হেসে বললো–,,পাশে এসে বসো মা।
পুষ্পিতা একবার মায়ের দিক তাকালো পরে গিয়ে বসলো পাশে।পড়াশোনা পরবর্তী কি পরিকল্পনা সব কিছু জিজ্ঞেস করলেন মনিরা বেগম।মৃদু কন্ঠে সব কিছুর উত্তর করলো পুষ্পিতা।মনিরা খুশি হলেন,তার বাঁদ’র ছেলেটা কে ঠিক করার জন্য তো এরকম শান্ত মাঝেমধ্যে রেগে বো’মা হয়ে যাওয়া মেয়েই প্রয়োজন।মাশা-আল্লাহ চেহারায় কতো মায়া ঢেলে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা,মুগ্ধ নয়নে কতোক্ষণ তাকিয়ে থেকে মনিরা বললেন –,,শেলিনা তোর মেয়েটা কিন্তু একদম মায়াপরী।
শেলিনা মেয়ে কে উদ্দেশ্য করে বললো–,,শশী যা তো আন্টির জন্য চা নাস্তা নিয়ে আয়।
পুষ্পিতা মাথা নেড়ে চলে যায়।কিছুক্ষনের ভিতরই ট্রে সাজিয়ে হাজির হয়।
নাস্তা রেখে ভিতরে চলে যায়।বড়দের মাঝখানে বসে থাকাটা কেমন কেমন জানি।
———-
পুষ্পিতা পাপড়ি কোচিং এ ভর্তি হয়েছে,একটা হোস্টেলে উঠেছে দুজন।জেসি রেজাল্টের পর ভর্তি হবে জানিয়েছে,তিশা বললো ভর্তি হলেও হোস্টেলে থাকা হবে না বোধ হয়,তিশার নানার বাড়ি পাশেই।
হোস্টেলে এসে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে দুজনেরই।একটা রুমে দুইটা বেড,কোচিং এর অরিয়েন্টেশন ক্লাস ছিলো আজ।
কোচিং থেকে ফিরেছে,পুষ্পিতা,পাপড়ি।তিশার সাথেও দেখা হয়েছে জানিয়েছে হোস্টেলে সিফট হবে তিন জন থাকা যাবে এমন রুম যাতে খুঁজে।
ফ্রেশ হয়ে বের হবে এমন সময় রাহাদের কল আসে।পুষ্পিতা রিসিভ করে না হয় এই ছেলে তাকে পাগ’ল করে ছাড়বে।
কানে ধরতেই ওপাশ থেকে রাহাদ বললো–,,ভালোবাসি জান!চলো না বিয়ে করি।
পুষ্পিতা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,আজাইরা কথা বলার জন্য ফোন করেছেন?কি সমস্যা আপনার?
–,,কোনো সমস্যা নাই।কোচিং এ ছেলেদের দিকে তাকাবে না!
পুষ্পিতা ফের বিরক্ত হয় ছেলে আসবে কোথা থেকে।নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো—,, ছেলেদের আলাদা সিফট। আর আপনার মতো একটা শকু’ন থাকতে কি করে কোনো ছেলে আশেপাশে আসবে।
রাহাদ শব্দ করে হাসলো।পুষ্পিতা বললো–,,এখন রাখেন তো যখন দেখো জ্বা’লানো শুরু করে দেন।
ঘুমাবো।
রাহাদ মৃদু সুরে বললো–,,তুমি ঘুমাও আমি আছি তোমার নিঃশব্দে ফেলা নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতেও ভাললাগে।
হতাশ হলো পুষ্পিতা।ফোন কানে রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লো। রাহাদ তার ননস্টপ বক বক করেই গেলো।আজকাল পুষ্পিতা বিরক্ত লাগার ভান করে তার কাছে মনে হয় রাহাদ তার একটা অপছন্দনীয় বদ অভ্যাস
——–
তিশা আসলো মাস খানেক পর।ভাগ্যক্রমে পেয়ে ও গেলো তারা তিন জন একটা রুম।
কোচিং এ পরীক্ষা ছিলো আজ,কয়েকদিন হলো রাহাদ কে ইগনোর করছে পুষ্পিতা, তাও কোনো কারন ছাড়া না।
রাহাদ এসেছিলো হঠাৎ কোচিং সেন্টারের সমানে, পুষ্পিতা খেয়াল করেনি তাকে।একটা ছেলে পরীক্ষার পর তাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করেছিলো,কথা বলার সময় কিছুটা কাছে দাঁড়িয়েছে, হয়ে গেলো রাহাদ রেগে ছলেটাকে মে’রে বসলো।বিরক্ত হয় পুষ্পিতা,সামান্য একটা কারনে অযথা রাগ করার কি মানে,রাগ কি শুধু তার একারই আছে নাকি।
রাত আটটা,তিশা দৌড়ে এসে বললো–,,তুই কি ভাইয়া কে এখনো ব্লক করে রেখেছিস?প্লিজ তাড়াতাড়ি আনব্লক করে দেখ ভাইয়া কি সব পাগলা’মি করছে।সুইসা”ইড করতে যাচ্ছে!দোস্ত আমার কিন্তু সত্যি ভয় করছে,ভাইয়া যা বলে করে,নিজের বড় কোনো ক্ষ’তি না করে দেয়।
পুষ্পিতার ও মনে ভয় ঢুকে গেলো,পা’গল নাকি এতো বড় লোক হয়ে বাচ্চাদের মতো কাজ করতে যাচ্ছে।
পুষ্পিতা দ্রুত মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো।যা দেখলো তাতে ওর হাত পা ঠান্ডা হওয়ার উপক্রম।হাতে ধারালো ছু’রি নিয়ে একদম ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে বসে আছে।
পুষ্পিতা দ্রুত ফোন দিলো রাহাদের নাম্বারে। একবার কেটে গেলো,রাগে মাথা ফে’টে যাচ্ছে পুষ্পিতার,কি পেয়েছে এই রাহাদ।যা খুশি করবে নাকি।আবার ফোন দিতেই রিসিভ হলো,রাগে চেঁচিয়ে উঠলো পুষ্প বললো—,,তুই এখন এসে আমার সাথে দেখা করবি। এখন মানে এখনই আমি রবীন্দ্র সরোবরে যাচ্ছি!
রাহাদ চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলো,মেয়েটা নিজ থেকে আসবে দেখা করতে?এটাও হওয়ার ছিলো।
আধঘন্টা পর রাহাদ আসলো, পুষ্পিতা গিয়ে দেখলো দাড়িয়ে, আশেপাশে কে আছে কে নেই দেখলো না পর্যন্ত।রাহাদ কে গিয়ে দুইটা চ’ড় মা’রলো পর পর। রাগে কাঁপছে পুষ্প রীতিমতো।
রাহাদ হাসলো।তিশা,পাপড়ি পাশে দাড়িয়ে।
এর মধ্যেই গমগমে কন্ঠে একটা মেয়ে বলে উঠলো—,,এই মেয়ে সাহস তো কম না। আমার ফ্রেন্ড কে থাপ্প’ড় মারা’র সাহস কোথায় পেলে তুমি!
পুষ্পিতা রাগী চোখে তাকিয়ে বললো–,,তোকে মে’রেছি?তোর এতো কিসের সমস্যা? আমাদের মাঝখানে একদম কথা বলতে আসবি না!
রিয়া মেয়েটির রাগ লাগলো,তার বন্ধু তার উপর পছন্দের মানুষ কে মার’বে আবার তাকে চুপ করতে বলছে,এই মেয়ে কে তো আজকে,,,।
এর মধ্যে রাহাদ পুষ্প কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।পুষ্পিতা হঠাৎই চোখ বন্ধ করে ফেললো,হাত দুটি দু পাশে ঝুলছে তার । রাহাদ জড়িয়ে রেখেই বললো–,,ভালোবাসি!
পুষ্পিতা কিছু সময় চুপ থাকলো, রাহাদ কে ধাক্কা মে’রে সরিয়ে বললো–,,এগুলা কেমন ধরনের কাজ রাহাদ?পাগ’ল হয়ে গেছেন নাকি?
রাহাদ ঠোঁটের কোনে হাসি রেখেই বললো–,,হ্যাঁ পা’গল হয়েছি,আরো পাগ’লামি করবো।যদি তুমি দুরত্ব বাড়াতে চাও তো আবার ও একই কাজ করবো।
পুষ্পিতা চেঁচিয়ে উঠলো, রাহাদের কলার ঝাকিয়ে বললো–,, তাই বলে আ’ত্নহত্যা?অন্য কোনো কিছু করার জন্য পান না?কেনো এমন করছেন?কি চাই আপনার?
–,,তোমাকে চাই,শুধু তোমাকে। দাও নিজেকে, কথা দিচ্ছি আর কোনো দিন এসবের নামও নিবো না।
পুষ্পিতা দুকদম পিছিয়ে গিয়ে বললো–,,যা খুশি করেন। এই ঘটনার পর তো আমি আপনাকে আরো বেশি করে এরিয়ে চলবো, সব সময় কি আপনার মতো হবে নাকি সব।যা হওয়ার নয় তা নিয়ে আর কোনো কথা বলবেন না রাহাদ।
পুষ্পিতা হনহনিয়ে বাসার দিক চলে গেলো।তিশা একবার নিজের ভাইয়ের দিক তাকালো,রাহাদ তাকে ডাকলো কিছু একটা বলতেই তিশা বললো–,,ভাইয়া এটা বারাবাড়ি, পুষ্পিতা অনেক রাগ করবে।এসব করে কিছু হবে না!
রাহাদ নিজের চুল গুলো টেনে দিয়ে বললো–,,যা বলেছি কর।এতো কিছু ভাবতে হবে না তোর!
তিশা পাপড়ির সাথে গেলো পুষ্পিতার সাথে।
রাহাদ মনে মনে বললো–,,আর মাত্ররো একদিন শশী,তোমাকে তো এই অন্ধকার জীবনে চাঁদ হয়ে আসতেই হবে।আজ তো জেনেই গেলাম তুমিও আমাকে ভালোবাসো।জানার জন্য এই ছোট্ট নাটক টা করতে হলো আমাকে।স্যরি পুষ্প কানন!
হোস্টেলে ফিরেই কেঁদে উঠলো পুষ্পিতা, কেনো যে রাহাদের নজরে তাকেই আসতে হলো বুঝে আসে না।দুনিয়ায় কি মেয়ের অভাব পড়েছিলো।কেনো ওর জীবনেই কাল হয়ে আসতে হলো নিশাদ রাহাদ সিকদার নামক অন্ধকার কে?ওর জীবনটাও রাতের মতো অন্ধকারে ছেয়ে দিয়েছে ছেলেটা।
কাঁদতে কাঁদতে বিছানার সব ছুঁড়ে ফেলেছে নিচে,কিছুই যেনো সহ্য হচ্ছে না ওর।কেনো এমন হতে হলো?এমনটা না হলে কি খুব বড় ক্ষ’তি হতো।রাহাদ কে গলার কা’টার মতো লাগছে এখন।না পারছে ফেলতে না পারছে গিলতে।
কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়লো মেয়েটা,তিশা পাপড়ি দুজনই হতাশার শ্বাস ছাড়লো।কি থেকে যে কি হবে ওটা নিয়েই ভাবছে।
———
দুদিন পর তিশার সাথে রিকশা করে যাচ্ছে এমন সময় একটা কালো রঙের গাড়ি এসে থামলো সামনে।
তিশা, পুষ্পিতা অবাক হলো সাথে ভয়ও পেলো।কারা এরা?
কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি থেকে দুজন নেমে এসে পুষ্পিতাকে টেনে ধরে নিয়ে গেলো।তিশা কি বলবে বুঝলো না।
সে তো জানে রাহাদই এরকম করেছে।সে কি বান্ধবী কে না সাহায্য করে অপরা’দ করছে?সে তো জানে তার ভাই কতোটা ভালোবাসে পুষ্প কে, কতোটা ভালো রাখবে।কিন্তু বন্ধুত্ব?বিবেকের কাছে হেরে যাচ্ছে তিশা।চুপচাপ দেখলো গাড়িটির প্রস্থান!
—–
অন্ধকার ঘরে নিজেকে বদ্ধ পেয়ে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো পুষ্পিতা। তখনই লাইট জ্বলে উঠলো।পুষ্পিতা চোখ কচলে তাকিয়ে বলে উঠলো–,,রাহাদ!আপনি?
রাহাদ পুষ্পিতার দিকে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বললো–,,রেডি হও কিছুক্ষণ পর আমাদের বিয়ে!
পুষ্পিতা চোখ বড় বড় করে তাকালো।বললো—,,কি বলছেন এসব!
রাাহাদ গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,চুপ!সোজাসাপটা বলে ছিলাম রাজি হসনি তাই এখন রাহাদের স্টাইলে বিয়ে হবে।
রেডি হয়ে নে!
চলবে….