#জোছনায়_ঘর_তোর_আমার
#পর্ব৮(প্রথমাংশ)
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
পাগ”ল হয়ে গেছেন আপনি রাহাদ?কি সব বলছেন!
রাহাদ চেঁচিয়ে বলে উঠলো—,,রেডি হও।নো মোর ওয়ার্ড’স!
পুষ্পিতা উঠে এসে রাহাদের কলার চেপে ধরে বললো–,,বললেই হলো নাকি?আপনার কথা মতো চলবো আমি?হো আর ইউ!একটা বদ্দ উন্মা’দ মানুষ আপনি রাহাদ, আমি আপনাকে ভালোবাসি না রাহাদ আর না কোনো দিন বাসবো!
রাহাদ পুষ্পিতার হাত ঝাপটা মে’রে ফেলে বললো–,,সত্যি? তুমি আমাকে ভালোবাসো না?আমার চোখের দিক তাকিয়ে বলো!
পুষ্পিতা থমকালো,সে নিজেও জানে না সে কি রকম ফিল করে রাহাদের জন্য, এতোটা টানাপোড়নের সম্পর্কে ভালোবাসা টা ঠিক কোথায় খুঁজে পায় না বুঝে আসে না।তবে পুষ্পিতা চায় না ছেলেটার কোনো ক্ষ’তি হোক!মানুষ টা ভালো থাকুক।
রাহাদ এলোমেলো দৃষ্টি ফেলা পুষ্পিতার দিক তাকিয়ে হাসলো।আলতো হাতে পুষ্পিতার দুই গাল ছুঁয়ে বললো–,,তুমি আমাকে ভালোবাসো না শশী?বলো ভালোবাসো?সত্যি জান দুনিয়ার সব এনে রেখে দিবো পায়ের কাছে শুধু একটি বার বলো ভালোবাসি।শুধু একটি বার,কথা দিচ্ছি আর কোনো দিন জোর করবো না,কষ্ট দিবো না,শুধু একটি বার শুধু একটি বার বলো ভালোবাসি, বলো রাহাদ আমি আপনার!
পুষ্পিতা দীঘল পাপড়ির অধিকারী আঁখিযুগল কেঁপে উঠলো, মেয়েটা ঘামছে রীতিমতো। কি করে ফেলে দেওয়া যায় এই আকুতি,পুষ্পিতার হৃদয় ভার হয়ে আসে,পারছে না ফেলতে না পারছে গ্রহণ করতে, এ কেমন নিপি’ড়ন হৃদয়ের এতো নিদারুণ যন্ত্র’ণায় কেনো দ’গ্ধ করছে তাকে!
কিসের এতো মায়া কিসের এতো টান।কেনো রাহাদের চোখে ফুটে উঠা ভালোবাসা, অজস্র প্রেম পায়ে ঠেলছে পুষ্প, শুধুই কি দুজনের পরিবারের অমিল নাকি অন্য কোনো কিছু?
পুষ্পিতা দুকদম পিছিয়ে গেলো,চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিয়ে বললো–,,রাহাদ প্লিজ বাসায় দিয়ে আসুন আমায়।পাগ’লামো করবেন না,যা সম্ভব নয় তা করতে চাইবেন না দয়া করে।
রাহাদ রাগলো মেয়েটা এতো নি’ষ্ঠুর কেনো?রাহাদের শশী তো হবে কোমল!এতোটা নি’র্দয় মেয়ের প্রেমে কেনো পড়লো সে?মেয়েটা তাকে রোজ পু’ড়ায়,হৃদয়টাকে ক্ষ’ত বি’ক্ষত করে, তার পরও মেয়েটা কে ভুলতে পারছে না, আর না পারছে দূরে সরতে,আর কি করলে বুঝবে এই মেয়ে রাহাদ তাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে। এখানে কোনো স্বা’র্থ নেই, শশী কোনো জে’দ না শশী মানে এক আকাশ সমান মুক্ত ভালোবাসা শশী মানে মায়া,শশী মানে প্রশান্তি,রাহাদের স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ার স্থান, রাহাদের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার মাধ্যম।মানুষ কোনো কারন ছাড়া ভালোবাসে না,হয়তো সে পর্যায়ে রাহাদ ও পড়ে,কিন্তু সে তো শুধু ভালোবাসতে চায় একটু খানি খুশি হতে চায়, ভালোবেসে একসাথে দূর জোছনায় নিজেদের কল্পনার জগৎ সাজাতে চায়,এতটুকু চাওয়া কি বড্ড বেশি ভুল?নাকি দ”ন্ড দেওয়ার মতো অপরা’ধ!
রাহাদ লম্বা শ্বাস টেনে বললো–,,রেডি হওয়া লাগবে না চলো।
পুষ্পিতা বলে উঠলো—,,ক…কই!
–,,কাজি সাহেব অপেক্ষা করছে,চলো!
পুষ্পিতা ছলছল চোখে তাকালো করুন কন্ঠে বললো–,,প্লিজ রাহাদ আমি আমার বাবা মাকে কষ্ট দিতে পারবো না,আমি এই বিয়ে কিছুতেই করবো না!
—,, বাবা মাকে কষ্ট দিতে পারবে না,কিন্তু আমাকে রোজ রোজ নিয়ম করে কষ্ট দিচ্ছো শশী!জানো ঠিক বুকের ভিতরটায় এসে লাগে তোমার সব গুলো কথা,তুমি কি জানো এই কষ্টের তিব্রতা?জানলে এতো টা কষ্ট দিতে পারতে তো?তোমার কি একটু মায়া হয় না আমার জন্য আমি কি এতোটাই অযোগ্য বলো?
পুষ্পিতা ব্যস্ত কন্ঠে বললো–,,আমি চাই আপনি ভালো থাকুন!
রাহাদের দায় ছাড়া কথা–,,তাহলে বিয়ে করো!
–,,বাবা মায়ের অনুমতি না নিয়ে বিয়ে করা যায় না রাহাদ।এই বিয়ে মূল্যহীন।আমার বাবার কাছে প্রস্তাব রাখুন যদি আমার বাবা রাজি থাকে আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিবো না কথা দিচ্ছি!
–,,তোমার বাবা রাজি থাকলে তোমার কোনো আপত্তি নেই তাই তো?
–,,হুম!
–,,তুমি রাজি?
–,,হুম!
–,,এই বিয়ের তো কোনো মানেই নেই তাহলে করতে কি সমস্যা?চলো বিয়ে করবো।পরে আবার তোমার বাবার সামনে করবো!
পুষ্পিতার রাগ লাগলো,কি বেয়া’দব ছেলে একই কথা বার বার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলতেই আছে।
পুষ্পিতা রাগী কন্ঠে বললো–,,না মানে না ই হয় রাহাদ।আজ কোনো বিয়ে হবে না বাসায় পৌঁছে দিন আমায়!
রাহাদ আচমকা পুষ্পিতার সামনে চলে আসলো ওড়না টেনে ভালো করে ঘোমটা টেনে দিলো।এক হাত ধরলো আরেক হাতে একটা মোবাইলে ভিডিও অন করে দিলো।
পুষ্পিতা মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে রাগলো হাত ঝাপটা মা’রার আগেই রাহাদ শক্ত করে চেপে ধরলো।কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো–,,আমি জন্মগত বে’ড বয় জান।তুমি এখন যা বলছো ছাড়া পাওয়ার পর যে সে কথার খেলাপ করবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে?আজ বিয়ে হবে সাথে বাসর, আমিও দেখবো তুই কি করে অন্য কারো হওয়ার কথা বলিস!যা আমার তা আমি যে কোনো মূল্যে হাসিল করি।
পুষ্পিতা মোচড়ানো শুরু করলো,কোনো কাজ হলো না শেষে না পেরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,আপনার পো’ষা কু’ত্তা গুলাকে আমার বাবার সামনে থেকে সরতে বলুন রাহাদ,যদি আমার বাবার গায়ে একটা টোকা ও লাগে, আমি আপনাকে খু’ন করবো!
রাহাদ হেসে বললো–,,শেলিনা ম্যাম!তোমার বোনের মেয়ে,তোমার ভাই, বোন সবার দিকে আমার নজর আছে!
পুষ্পিতা তেতে উঠলো রাগে হিসহিসিয়ে বললো–,,আই জাস্ট হেইট ইউ মিস্টার রাহাদ সিকদার! ইউ আর এ ব্লা”ডি,,,,।
পুষ্পিতা আরো কিছু বলার আগেই রাহাদ পুষ্পিতার মুখ চেপে ধরলো বলে উঠলো–,,সীমা অতিক্রম করবে না শশী!ধ*ষ’ন করে বিয়ে করতে চাচ্ছি না।
পুষ্পিতা এবার কেঁদে ফেললো রাহাদ নামক মানুষটা এতো টা নি”কৃষ্ট!রাগে ঘৃ’ণায় গা গুলি”য়ে আসলো।মুখ থেকে রাহাদের হাত সরে যেতেই বললো–,,বিয়ের আগে আর পরে অনুমতি ছাড়া ছুঁয়ে দেওয়া ধর্ষ’ণের কাতারেই পড়ে রাহাদ।আপনি যা যা করছেন এর পর তো কোনো দিনও আমি আপনাকে অনুমতি দিবো না স্ব’জ্ঞানে ম’রে গেলেও না!বিয়ে করলেই সব পাওয়া যায় না,ভালোবাসা পবিত্র আপনি আজ পবিত্র তাকে নোং’রামিতে রাঙিয়ে দিলেন!
–,,আমার পুরোটাই অন্ধকার। আমি রাতের আকাশ তাই তোকে চাই, চাঁদ হয়ে আলোকিত কর আমার জীবন!
–,,অন্ধকার শুধু অন্ধকারই ছড়ায়,আপনি ও আজ আমায় তিমিরে ঢেকে দিলেন।আপনার কালো আধারে আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলেন।শশীকে নিজের মনে করতেন তো রাহাদ?
রাহাদ মাথা নাড়লো,পুষ্পিতা তাচ্ছিল্য হেসে বললো–,,আপনার শশী আজ থেকে আর আলো দিবে না রাহাদ, সে নিজের আলো হারিয়েছে, আপনি কেড়ে নিয়েছেন তার সব আলো,তার জীবনের খুশি,তার মুখের হাসি।আপনার শশী আপনাকে কোনো দিন ক্ষ’মা করবে না!
–,,করবে।আমার শশী কোমল নরম।তাকে আমার ভালোবাসার গভীরতা দেখাতে কিছুটা নিষ্ঠুর তো হতেই হবে আমাকে।আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি,আমার শশী আমাকে ভালোবাসবে,আমাকে হৃদয়ে জায়গা দিবে,হাসবে, প্রাণ খুলে বাঁচবে, রাহাদের আকাশে সব সময় জ্বলজ্বল করবে।
পুষ্পিতার কাছে কথা গুলো বি’ষাক্ত লাগলো।এতোটা পাষা’ণ এই ছেলে?জোর করে কিছু পাওয়া যায় না কেনো বুঝছে না!
রাহাদ পুষ্পিতার হাত ধরে বাহিরে গেলো,টুপি পড়া লোকটাকে দেখে হৃদয়টা মোচড় দিয়ে উঠলো পুষ্পিতার,মনে মনে বলে উঠলো–,,মা বিশ্বাস করো তোমার শশী তোমাকে ঠকা’তে চায়নি, তাকে ক্ষ’মা করে দিও!
চললো কিছু সময় নিরবতা, রেজিস্ট্রি পেপার দেখে চোখ থেকে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়লো পুষ্পিতার।
রাহাদের পূর্ণ দৃষ্টি তার শশীর উপর,মেয়েটার চোখের পানি তার ভিতর টা কাঁপিয়ে তুলছে,তবু সে তো নিরুপায়, রুবাইদা!রুবাইদা আর তার বাবার নজর পড়েছে তার চাঁদে,নিজের না করলে কি করে র’ক্ষা করবে?ভাবুক মেয়েটা তাকে খারা’প তবুও সে পারবে না নিজের কলি’জার একটু খানি কষ্ট সহ্য করতে।নিজের না করলে কি করে কোন অধিকারে সব বিপ’দ থেকে বাঁচাবে?কি করে আগলে রাখতে পারবে বক্ষগহ্বরে!
রাহাদ চোখ বন্ধ করে বিরবির করে বললো–,,এই চোখের অশ্রুকনা আজ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ হোক।পরবর্তী সব অশ্রুরা আমার ভাগে আসুক।
স্যরি জান রেলি ভেরি স্যরি!আমাদের নতুন জীবনের সূচনা আরো অনেক বেশি সুন্দর হতে পারতো,হয়তো এটাই আমাদের নিয়তি!
রাহাদ কর্ক’ষ কন্ঠে বললো–,,সাইন করো শশী!
পুষ্পিতার হাত কাঁপলো, এক হাতের উল্টো পাশে চোখের পানি মুছলো,সাইন করে দিলো চোখ বন্ধ করে।
রাহাদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।কাজি সাহেব বিদায় নিতেই
রাহাদের বন্ধুদের মধ্যে থাকা সবাই বিদায় নিলো ফাঁ’কা বাসাটায় একা রইলো রাহাদ,পুষ্পিতা।
পুষ্পিতা জড়োসড়ো হয়ে এক কোনায় বসে রইলো।রাহাদ এগিয়ে আসতেই মেয়েটা ভয়ে দূরে ছিটকে পড়লো।
রাহাদ অনেকটা এগিয়ে গিয়ে শার্টের বোতামে হাত দিতেই পুষ্পিতা জোরে চেঁচিয়ে উঠলো,রাহাদ থামলো না এগিয়ে গিয়ে তাকালো পুষ্পিতার ভয়ার্ত মুখে পর পর হেসে ফিসফিসিয়ে বললো–,,প্রেয়সীর হৃদয় না ছুঁয়ে শরীর ছোঁয়ার মতো কাপুরুষ রাহাদ সিকদার নয়!
চলবে?
#জোছনায়_ঘর_তোর_আমার
#পর্ব৮(শেষাংশ)
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
শশীকে চাই আমার!ওই মেয়েটাকে রাস্তা থেকে সরাতে পারছো না তুমি? তোমাকে কেনো রেখেছে বাবা?কোনো কাজেরই নও তুমি!
–,,সম্ভব নয় ম্যাম!শশী ম্যাম এখন রাহাদ স্যারের ওয়াইফ!তার দিকে হাত বাড়ানো মানে নিজেন জীবনের শেষ দিন গোনা।আপনি ভালো করেই জানেন রাহাদ ভাই না থাকলে আপনার বাবার এসব হম্বিতম্বি কিছুই থাকবে না!রাহাদ ভাইয়ের সাথে বেই'”মানি করতে পারবো না আমি।
দলের ছেলে গুলো হয়েছে রাহাদের পোষা কোনো কাজের নয়। রাগে ফুঁসছে রুবাইদা,রাহাদ শশীকে বিয়ে করে নিলো ওর নাকের ডগা দিয়ে ও কিছুই করতে পারলো না!মেয়েটা তো রাজি ছিলো না হঠাৎ কি এমন হলো যার জন্য বিয়ে করে নিলো?এরকম ফকি’ন্নিদের নিশ্চিত টাকার লোভ দেখিয়ে কিনে নিয়েছে রাহাদ!যত যাই হোক রাহাদ শুধু তার হবে যেকোনো মূল্যে।
রুবাইদার ভাবনার মাঝে ম্যাসেজ আসলো–,,শশীর থেকে দূরে থাক রুবাইদা,তোর ভালোর জন্য বলছি না হয় ভুলে যাবো তুই আমার বোন,আর একজন মেয়ে!
রুবাইদা ফোন মেজেতে আছাড় মার’লো।রাত দশটা এখন কি রাহাদ ওই মেয়েটার সাথে আছে?ওরা কি এক সাথে থাকবে?আজ তো ওদের বাসর!রুবাইদা নিজের কান চেপে ধরলো এতো কিছু করেও সে রাহাদ কে পেলো না,ওর বাবার এতো ক্ষমতা কিন্তু? কই কিছু ওই তো হলো না রাহাদের ভালোবাসা পেলো না সে, যদি লোক চোখে দেখা হয় রুবাইদা শশীর তুলনায় বেশি সুন্দর,
কিন্তু রাহাদের প্রেমিক চোখে শশী!ইশ ওই চোখে কেনো একবার রাহাদ মুগ্ধতা নিয়ে তাকালো না, রুবাইদার ভালোবাসা কি সত্যি ফেলনা?নাকি সে নিজেকে বেশি বিলিয়ে দিয়েছে, ছোট করেছে আত্নসম্মান শেষ করে নিজেকে নিচে নামিয়ে, সবটা দিয়ে রাহাদ কে চেয়েছে এটাই তার ভুল!রুবাইদা কেঁদে উঠলো ভালোবাসায় সব মানুষ হারতে পারে না রুবাইদাও সেই দলের।তবে দিন শেষে সে ভালোবাসার মানুষ কে পাবে না।একজন জায়গা না ছেড়ে দিলে অন্য জন কি করে তার যোগ্য জায়গা পাবে,ভালোবাসার দারি পাল্লায় সব সময় একজন কে হেরে যেতে হয়।একজন তীব্র ভাবে বিষন্ন হৃদয় নিয়ে অন্যজনের হৃদয়ের পূর্ণতা দেখে!কি নিদারুণ যন্ত্র’ণা পুষে,যে পূর্ণতা পেলো সে কি জানে?হৃদয় ভাঙ্গার শব্দ কেমন?কেমন নিঃশব্দে নিরবে ভেঙ্গে যায় পাঁজরের হাড়!মানুষটার ওই সুক্ষ্ম হাসির ভাজে থাকে কতো শতো কষ্টের দীর্ঘশ্বাস?এতোই কি সহজ? যে মানুষটাকে নিজের ভাবলো সে মানুষটাকে অন্য কারো বক্ষে শায়িত দেখতে কয়জন পারে?কাকে কাকে এতোটা শক্তি ধৈর্য দেয় সৃষ্টিকর্তা!
রুবাইদার তো সহ্য হচ্ছে না সে তো মহান হতে পারছে না,ভালোবাসার মানুষ কে ভাগ করতে পারছে না,এখানে একটু স্বার্থ’পর হওয়াটা কি দোষের?কেনো এতো কিছু করেও নিজেকে দোষ দিতে পারছে না।নাকি ভালোবাসার কাঠগড়ায় সবাই নিরপরাধ!
রেদোয়ান সিকদার হন্তদন্ত পায়ে ছুটে আসলেন মেয়ের ঘরে।মেয়েকে কাঁদতে দেখে তিনি খৈ হারালেন একটা মাত্র মেয়ে তার,কিছুর অভাব রাখেনি তারা মেয়েটার হৃদয়ের মানুষ সখের পুরুষটাকেই দিতে পারলো না।অন্য কিছু হলে যে কোনো ভাবে এনে দিতো সে কিন্তু আজ পারলো না ব্যর্থ বাবার ট্যাগ টা নিজেকে দিয়ে দিলেন আনমনে।সন্তানের কাছে বুঝি পিতা মাতাও নিরুপায়, সন্তানের সাত খু”ন মাফ করে দেন তারা।
রুবাইদা কাঁদতে কাঁদতে বললো–,,রাহা,,দ!বাবা রাহাদ শশীকে বিয়ে করে নিয়েছে,ওই মেয়েটাকে ছুঁয়ে দিয়েছে, অন্য কাউকে আপন করে নিয়েছে আমার কলি’জা ফে’টে যাচ্ছে বাবা আমি সহ্য করতে পারছি না!ওকে জিজ্ঞেস করো না কি কমতি ছিলো আমার চাওয়াতে আমার ভালোবাসাতে?কেনো আমার হলো না সে!
রেদোয়ান সিকদার মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন,কি করে বুঝাবেন মেয়েকে ভালোবাসায় জোড় খাটে না,বিয়ে উপরওলা ঠিক করেন। জোড়া তিনি বানান কারো জোর খাটে না!মেয়ের জন্য তিনি ও তো ভুল কম করেনি তবুও তো জানেন এসব সম্ভব নয়।মেয়েকে সান্ত্বনা দিবেন কি করে!
——–
পুষ্পিতা হোস্টেলে ফিরেছে রাহাদের কোলে চড়ে তবে মেয়েটা জানেই না। সে তো কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়েছে কি গভীর সে ঘুম।মেয়েটা চোখ খুলে পরিচিত বান্ধবীর মুখ দেখে উঠেই তাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো!
পাপড়ি জড়িয়ে নিলো দু হাতে।তিশা খাবারের প্লেট এগিয়ে আনলো।পানি দিলো,পুষ্পিতা পানি টুকু খেয়ে নিলো।মেয়েটার ফোলা ফোলা চোখ, মুখ দেখে দুই বান্ধবীর মন কেঁদে উঠলো, জেসি ফোন দিয়েছে তখনই,ভিডিও কলে পুষ্পিতা বলে ডেকে মেয়েটা কেঁদে ফেললো!তিশা নিজের ভাইয়ের প্রতি ক্ষি”প্ত, কেনো এতোটা কাঁদায় মেয়েটাকে।কি না কি করেছে সেখানে কে জানে।
পুষ্পিতা পাপড়িকে বললো–,,আম্মু আমাকে অনেক খারা’প মেয়ে ভাববে পাপড়ি,সে আর তার শশীকে ভালোবাসবে না, বাবা আর তার পুষ্পকে আদর করে মা ডাকবে না।যদি আজকের ঘটনা জানে তো কোনো দিন ক্ষমা করবে না।
জেসি ফোনের অপাশ থেকে অধৈর্য হয়ে বললো–,,কি হয়েছে বল না পাখি,এভাবে কাঁদিস না আমার কিন্তু টেনশন হচ্ছে!
তিশার ভিতরটা অপরাধ”বোধে কেঁপে উঠলো, কেঁদে ফেললো বলে উঠলো–,,সব দোষ আমার।আমার উচিত ছিলো ভাইয়াকে থামানো,আমি পারিনি বন্ধুত্ব রক্ষা করতে, বন্ধুর বিপ’দে পাশে থাকতে।
পাপড়ি বললো–,,নিজেকে দোষ দিচ্ছিস কেনো?তোর তো কোনো দোষ নেই, যা করেছে তা তোর ভাই।
তুই বল না পুষ্পিতা কি হয়েছে?
পুষ্পিতা ঠোঁট উল্টে বললো–,,রাহা,,দ!রাহাদ আর আমার বিয়ে হয়ে গেছে আজ!
জেসি চেঁচিয়ে উঠে বললো–,,এটা কিভাবে সম্ভব!রাহাদ ভাই এতোটা কঠোর কি করে হলো?
পাপড়ি চুপ মে’রে গেলো।তিশা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে।রুমের দরজা থেকে সরে গেলো রাহাদ!সে জানে তাকে কি করতে হবে,কি করে নিজের বউয়ের সম্মান বাঁচাতে হয় ভালো করেই জানা তার।
———
বেশ কিছুদিন পার হয়েছে পুষ্পিতার ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যে বেশ কয়েটা ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিয়েছে,যদিও মনোযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হয়েছে তার পরেও বাড়ির মানুষের এতোদিনের আশা ভরসা, নিজের স্বপ্ন একটা দুর্ঘট’নার জন্য কিছুতেই খারা”প হতে দিতে চায় না সে।প্রস্তুতি ভালে থাকায় বেশি বেগ পেতে হয়নি,এতোদিন রাহাদ কে পুরো ধমে ইগনোর করেছে, ছেলেটাও তেমন ঘাটেনি, কারন টা অবশ্য জানে পুষ্পিতা, পড়াশোনার দিকে রাহাদ বেশ গোছানো। বউয়ের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটাতে চায়নি।
কিন্তু আজকে সে এসে হাজির পরীক্ষা শেষ জেনেই হাজির ব”দ টা।পুষ্পিতা নাক মুখ কুঁচকে ফেললো।রাহাদ চমৎকার হেসে বললো–,,শুভ সন্ধ্যা মিসেস!
পুষ্পিতা বিরক্ত নিয়ে কঠোর কন্ঠে বললো–,,এসব বিয়ে আমি মানি না দূরে সরুন আমি মিসেস না মিস!
রাহাদ পুষ্পিতার এক হাত টেনে সামনে নিলো পর পর হাতের পিঠে চুমু খেলো,পুষ্পিতা কিছু সময়ের জন্য চুপসে গেলো।রাহাদ তাকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে দিলো,পরে বললো–,,কিছুদিন আমার সাথে থাকবে শশী,অনুমতি চাইছি না বা তোমাকে অনুরোধ ও করছি না, আদেশ করছি!বাড়ি চলে যাবে কয়েকদিন পর, নিজের ভালো চাইলে থাকতে না করবে না আশা করি?
পুষ্পিতা শান্ত চোখে তাকিয়ে, কিছুই বললো না,যেনো তার কিছু বলারই নেই,শরীরটা কেমন দুর্বল লাগছে,এতোদিন রাত জেগে পড়াশোনা সব মিলিয়ে ভীষণ ক্লান্ত।চোখ বন্ধ করতেই ঘুমিয়ে পড়লো।রাহাদ এগিয়ে এসে সিট বেল্ট লাগালো,পুষ্পিতার কপালে চুমু খেয়ে বললো–,,ভালোবাসি পুষ্প কানন, তুমি এতো কাছে তবুও কেনো আকাশ সম দুরত্ব আমাদের মাঝে বলতে পারো?কবে ভাঙ্গবে এই দুরত্বের দেয়াল জান?আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না আর কতো পুড়া’বে এই কয়লাকে! আর কতো প্রমান দিতে হবে ভালোবাসার?
চোখ বন্ধ করে রাখলো রাহাদ,কিছু সময় মেয়েটার ঘুমন্ত মুখ দেখলো তার পর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
মৃদুমন্দ বাতাসে মেয়েটার শীত লাগলো হয়তো।কেঁপে উঠলো খানিক টা।রাহাদের গাড়ি এসে থামলো তার নানার বাড়ির সামনে,মনিরা বেগমই এখানে আসতে বলেছে তাকে, পরের দিনই তিনি আসবেন শশীর সাথে দেখা করতে, আজকে যেনো এখানেই থাকে রাহাদ শশীকে নিয়ে তিনি কড়া করে বলেছেন।না হয় রাহাদ কখনো আসতো না।
কলিং বেল বাজাতেই ভিতর থেকে তার মামি বেরিয়ে আসলো।পুষ্পিতা ঘুমু ঘুমু চোখে সব দেখলো অপরিচিত সব তাই রাহাদের পিছনে চুপটি করে সেঁটে রইলো।রাহাদের মামি মুখ বাকিয়ে দেখলো শশীকে,সাদামাটা থ্রি পিসে একটা ছোট্ট গড়নের মেয়ে দাঁড়ানো!এটাকে মনে ধরতে হলো ভাগনের?নিচু জাত! শেষে কিনা মধ্যবিত্ত? ভাগনের সামনে কিছু তো বলাও যাবে না মেয়েটা বামন হয়ে চাঁদ ছুঁতে চায় একবার সুযোগ পাক মেয়েটাকে বুঝিয়ে দিবে বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা কেমন বেমানান।রুবাইদা কেই তো মানাতো রাহাদের পাশে, এই মেয়ের তো গায়ের রঙটাও চাপা!
রাহাদ পুষ্পিতার হাত ধরে গেলো ভিতরে কাউকে কিছু বলার ইচ্ছে হলো না তার।আপাতত রেস্ট দরকার মেয়েটার।
চলবে?