#জোছনায়_ঘর_তোর_আমার
#পর্ব৯
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
শশী ঘুমিয়েছে কিছু সময় হলো, ঘড়িতে রাত সাতটা।রাহাদ দূরে বসে তাকিয়ে মেয়েটার মুখের দিক,চোখের নিচে কালি পড়েছে,চোখের পাতা জোড়া ফুলা ফুলা মেয়েটা কে কি বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে?যার জন্য রোজ অশ্রু বিসর্জন দেয় মেয়েটা রাহাদের মন খারা”প হলো কবে মেয়েটা নিজ থেকে তার হবে?কবে ঘটবে অপেক্ষার অবসান!
পুষ্পিতা ঘুমের মাঝে নড়েচড়ে উঠলো রাহাদ উঠে গিয়ে কাঁথা টেনে দিলো, ওড়নাটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে শুয়ে আছে, রাহাদ হাসলো মুগ্ধ হলো এতো এতো আধুনিকতা চারপাশে সব কিছুই কেমন রঙিন, তার শশী কতোটা রঙচটা সহজ সরল সাদামাটা!মেয়েটা সাধারণেই নিজেকে কি সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলে,রাহাদের তো চোখ ফিরে না।মায়া কাটানো কি সহজ কোনো সরল অংক?
রাহাদ হেসে উঠলো আনমনে,মেয়েটা কি জা’দু জানে?কেনো সে আশেপাশে থাকলেই রাহাদ ভাসে স্বপ্নময় সুখের দোলায়।
রাহাদের ফোন বেজে উঠলো, স্ক্রিনে তাকিয়ে রাহাদ কিছুটা বিরক্ত হলো,কেপ্টেন হয়েছে তো কি হয়েছে বাপু সারাদিন ফোন দিতে হবে নাকি?বউ টউ কি সব বাপের বাড়ি রেখে মাঠে পড়ে থাকে নাকি?
রাহাদ ফোন রিসিভ করেই যেনো সবচেয়ে বিরক্তিকর কথাটা শুনলো–,,তোমাকে এখনই একবার আসতে হবে রাহাদ!প্র্যক্টিস ম্যাচ আছে পরের মাসেই তো ফাইনাল,,,
রাহাদ নিশ্চুপ রইলো দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো–,,ওকে!
রাহাদ শশীর ঘুমন্ত মুখের দিক তাকালো বার কয়েক, মেয়েটা এমনি ভয়ে সেটিয়ে আছে একা রেখে যায় কি করে?ঘুমিয়েই তো আছে রাহাদ এগারোটার মধ্যে ফিরতে পারবে!
রাহাদ একটা চুমু দিলো তার বউয়ের কপালে,রাহাদের বউ!কথাটা বার কয়েক ভেবেই মনটা পুলকিত হলো রাহাদের।
আশেপাশে তাকালো রাহাদ,চিরকুট লেখার মতো কিছু পেলো না,একটা কলম শুধু!
কি করবে এখন যদি মেয়েটা জেগে তাকে খুঁজে!শশীর ওড়না, জানে রাহাদ সাদা ওড়নাটা নষ্ট করার দায়ে একশোটা বকা খেতে হবে তাকে,তবুও তার পরোয়া করলো না হাতের নাগালে চোখে পড়ার মতো জায়গাটায় কিছুটা মোটা অক্ষরে রাহাদ লিখলো
“জেগে গেলে অপেক্ষা করো তোমার অধম স্বামী শিগ্রই ফিরে আসবে!”
রাহাদ বের হয়ে গেলো স্পষ্ট দেখলো তার মামী!রুবাইদা কে কল দিতে সময় নিলো না যেনো।
বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো তাদের মাঝে,রাহাদের মামি কিছু একটা ভেবে বললো–,,রাহাদ জানতে পারলে,,,!
রুবাইদা নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো–,,এমন ভাবে সব করবেন যেনো মনে হয় সব দোষ শশীর সে নিজে থেকেই গিয়েছে!
–,,মেয়েটাকে অসুস্থ মনে,,
–,,এতো মায়া লাগলে আমাকে ফোন দিয়েছেন কেনো আন্টি!!
মহিলা চুপসে গেলেন,কাজ হয়ে যাবে বলে ফোন কা’টলো।
পুষ্পিতার চোখে মুখে ঘুম,গায়ে প্রচুর জ্বর!সে বুঝতে পারছে কেউ কিছু বলছে কিন্তু বুঝার বোধ শক্তি হারিয়েছে যেনো।
পুষ্পিতার হাত টেনে ধরলো রাহাদের মামী নাজমা,পুষ্পিতার মাথা ঘুরছে অনেক কষ্টে চোখ খুলে কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে–,,কি করছেন আন্টি?রা,,হাদ কই!
আশেপাশে চোখ বুলালো পুষ্পিতা রাহাদ নেই!তাকে রেখে চলে গেলো?কোথায় গেলো?পুষ্পিতার হাতে ব্যাথা লাগলো তবুও ছাড়লেন না নাজমা বেগম পুষ্পিতা আকুতি ভরা নয়নে তাকালো, নাজমা বেগম নির্দ’য় হলেন ধাক্কা মে’রে বাহিরে বের করে দিলো পুষ্পিতাকে।
কঠোর কন্ঠে বলে উঠলেন–,,বের হো ছোটলোক,আমার ভাগনে কে পটিয়ে কি ভেবেছিস সব কিছু নিজের ইচ্ছে মতো করবি?আমার ভাগনের জীবনে ফিরে আসবি না কোনো দিন তোর নখের যোগ্যতাও নেই ওর পাশে দাঁড়ানোর।পুষ্পিতা অবাক নেত্রে তাকিয়ে নির্বাক সে, রাহাদ এখানে কেনোই বা নিয়ে আসলো?অপমা’ন করার জন্য!
পুষ্পিতা জিজ্ঞেস করলো–,,রাহাদ কোথায় বলুন না?শুধু একবার ওর সাথে আমি দেখা করতে চাই!
–,,তোমাকে রেখে চলে গেছে,তোমাকে বের করে দিতে বলেছে,যাও এখান থেকে!
পুষ্পিতা বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলো রাহাদ এমন কথা বলেছে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারলো না যেনো।
নাজমা বেগম দরজা টা মুখের উপর আটকে দিলো, পুষ্পিতা আবছা আলোতে চারদিকে তাকালো,কোথায় যাবে এখন?কোথায় এসেছে এটাও তো জানে না ঢাকা শহরের রাস্তায় রাতে একটা মেয়ে একা চারটে খানে কথা না। নিজের সম্মান কি করে বাঁচাবে, কেঁদে উঠলো পুষ্পিতা, রাহাদ কে এক মুহুর্তের জন্য দো’ষী ভাবলো,হাতের এক অংশ ছি’লে গেছে সাদা ওড়নাটায় রক্তের ছাপ কিছুটা।মাঝরাস্তায় দাড়িয়ে পড়লো দুপাশে তাকালো শুধুই হেড লাইটের আলো,বড় বড় গাড়ি গুলোর ভিড়ে নিজেকে বড্ড ছোট মনে হলো পুষ্পিতার।
অসহায়ত্ব যেনো ঝেঁকে বসলো মাথায়।মুখ চেপে ধরে কাঁদলো,জ্বরে শরীর কাঁপছে,এক দিক ধরে হাঁটা ধরলো, মনে মনে বললো–,,আল্লাহ সাহায্য করো আমায়,কেনো এতো পরীক্ষা নিচ্ছো আমার, আমি তো চাইনি কিছু কেনো এসবে জড়িয়ে দিলে,সকল দো’ষের দো’ষী বানালে বিনাদো’ষে!
পুষ্পিতা এলোমেলো পায়ে হাঁটছে, কখন মাঝরাস্তায়
এসেছে বুঝলো না দুপাশে সিমেন্টের উঁচু পিলার রাস্তা পাড় হতে পারবে তো আদোও? হঠাৎ মাথা ঘুরে উঠলো লাইটের আলোটা সরাসরি চোখে পড়লো,পুষ্পিতা বুঝলো এই হয়তো শেষ বার সে পৃথিবীর আলো দেখলো,কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়িটা এগিয়ে আসলো জ্ঞান হারালো সাথে সাথে।
একটা চাপা আর্ত’নাদ ভেসে আসলো গাড়ির ভিতর থেকে, পুষ্পিতার কান অব্দি পৌঁছালো না হয়তো।
গাড়ি থেকে এক প্রকার লাফিয়ে বেরিয়ে আসলো রাহাদ,এই রাস্তায় কি করছে শশী!
গাড়ির উপর নেতিয়ে পড়া পুষ্পিতার দেহটা নিজের কাছে আগলে নিলো রাহাদ ওড়না ভিজে গেছে লাল রঙা তরলে।কপাল কে’টে গেছে রাহাদের দুনিয়া যেনো থমকে গেলো কাঁপা কন্ঠে ডাকলো কণ্ঠনালি ভেদ করতে চাইলো না শব্দটা।
জোরে ডেকে উঠলো রাহাদ–,,পুষ্প কানন!
রাহাদ দ্রুত গাড়িতে উঠালো এলোমেলো হাতে গাড়ি চালালো,হাতে শার্টে রক্ত, তার শশীর রক্ত, হৃদয় টা কেঁপে উঠলো রাহাদের, সুস্থ মেয়েটা কে রেখে এসেছিলো কি এমন হলো মাত্ররো কিছু সময়ের ব্যবধানে?
রাহাদের কোলে ছোট্ট দেহটা হসপিটালে ঢুকে পুষ্পিতাকে বেডে রেখেই মেঝেতে বসে পড়লো সব শক্তি যেনো হারিয়েছে ছেলেটা।চোখ বন্ধ করতেই দু ফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়লো।
নার্স ডাকলো হয়তো কয়েকবার স্যার রোগীর কি হোন আপনি!
রাহাদ হ্যাঁ হ্যাঁ করে জবাব দিলো–,,স্বামী!
রাহাদ কেবিনে বেডের পাশে বসে আছে পুষ্পিতার মাথায় হাতে বেন্ডে’জ।মুখটা শুকিয়ে গেছে,যে এর জন্য দা”য়ী তাকে কিছুতেই ছাড়বে না রাহাদ।
———-
রাত চারটা কলিং বাজতেই দরজা খুললেন নাজমা বেগম।রাহাদ কে দেখে অবাক হয়ে গেলেন,কোলের মানুষ টা কে দেখে তিনি হা হয়ে গেলেন শশী!
রাহাদের চাহনিতে নামজা ভয় পেলেন।ভিতরে ঢুকতে জায়গা দিলেন।রাহাদ চুপচাপ শশীকে রুমে রেখে আসলো দূত পায়ে ঢুকলো ফারহানার রুমে নামজা বেগম চেঁচিয়ে বলে উঠলো– আমার মেয়ের ঘরে কেনো যাচ্ছ?
রাহাদ একটা ছু’রি হঠাৎ ধরলো ফারহানার গলায় নাজমা বেগম আঁতকে উঠলেন।
রাহাদ স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করলো–,,কার কথায় করেছেন এসব মামি?নিজের মেয়ে মেয়ে আর অন্যের মেয়ে ছোটলোক!আপনার বাড়িতে আসতেই চাইনি আমি শুধু মায়ের কথা রাখতে গিয়ে,আমার প্রাণে হাত রাখার সাহস হলো আপনার!আপনার কলি’জায় হাত দিতেও যে দুবার ভাববো না আমি কেনো বুঝতে পারেননি!
নাজমা বেগম কেঁদে উঠলো বললো–,,বাবা রুবাইদার কথায়,,,!
রাহাদ রেগে বললো–,,ছি!মামি।
রাহাদ রুম থেকে বেরিয়ে দলের কাউকে ফোন করলো,সোজাসাপটা বললো–,,, আজ থেকে রেদোয়ান সিকদারের কোনো কাজে নেই রাহাদ।আর রেদোয়ান সিকদার যেনো কোনো ভাবেই জিততে না পারে এবার।
——
পুষ্পিতা সকালে চোখ খোলতেই নিজের মাকে দেখতে পেয়ে কেঁদে উঠলো শেলিনা বেগম নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো।
শেলিনা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে বললো–,, এভাবে কাঁদে না মা।সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে মা আছে তো।রাহাদ সব বলেছে আমায় কোনো চিন্তা নেই,আমি বিশ্বাস করি আমার শশীকে!
পুষ্পিতা দরজায় দাড়িয়ে থাকা রাহাদের দিক অবাক হয়ে তাকালো নিজের দিক ও দেখলো কয়েকবার, কালকের পোশাক বে”ন্ডেজ! রাহাদ কি এমন বললো ওর মাকে যার জন্য সে এমন কথা বলছে?সকালে মা আসলোই বা কি করে!
মনিরা বেগম কে দেখে আরেক দফা অবাক হলো,রাহাদের দিক তাকাতেই সে মুচকি হেসে চোখ মা”রলো!
পুষ্পিতা বোকার মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো শুধু!
চলবে?