#জোছনায়_ঘর_তোর_আমার
#পর্ব১১
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
রুবাইদা দেশের বাহিরে চলে গেছে হঠাৎ, কথাটা কেমন হজম হলো না রাহাদের মেয়েটা তো কম কাহিনি করেনি তবে হঠাৎ করে উদাও হয়ে যাওয়াটা সন্দেহ জনক।কিছু তো একটা খিচুড়ি পাকিয়েছে মনে মনে নজরে রাখতে হবে।
রাহাদ টিভির সামনে বসে বসে এসব ভাবছিলো হাতে তার ফোন ফেইসবুকে নিজের চাচার হেরে যাওয়া মুখ দেখছে,শুধু মাত্র উনার মেয়ে খারা’প কিছু করেছে এমনটা হলে রাহাদ কখনো তার পেশার দিকে হাত বাড়াতো না।রেদোয়ান সিকদারের কোনো কাজেই সততা ছিলো না,রাহাদের থেকে পরামর্শ নিলেও তার পিঠ পিছে তিনি অনৈ’তিক কাজ কর্ম করে বেড়াতেন,এসব জানার পর রাহাদ কিছুতেই এরকম অসৎ মানুষের সাথে কাজ করতো না।তাই যে যোগ্য তারই যোগ্য জায়গায় থাকা উচিত বলে মনে হয়েছে রাহাদের।বিরোধী পক্ষ ভেবে যাকে খারা’প ভেবেছিলো দিন শেষে সে মানুষ টাই আর্দশে টইটুম্বুর সৎ মানুষ হিসেবে বের হয়েছে,আর যাকে এতো দিন বিশ্বাস করলো তার সে চাচা কিনা দিনে দুপুরে চাঁদাবা’জির মতো নোং”রা কাজ করতো!
পুষ্পিতার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গলো রাহাদের,তিন দিন হলো রাহাদের সাথে এসেছে শশী,রাহাদ একটা বাসা নিয়েছে ওদের দুজনের জন্য, টুকটাক জিনিস পত্র কিনে ভালোই গুছিয়ে নিয়েছে সব কিছু।
পুষ্পিতা বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,যদি মোবাইলটার ভিতরেই ঢুকে থাকবে তো টিভি টা কোন দুঃখে চালু রেখেছে এ লোক দুবার নয় এ অব্দি চারবার ডেকেছে রাহাদ কে, কে শুনে কার কথা রাহাদ যেনো শুনতেই পায়নি কি এমন ছাই করছে মোবাইলে?যত্তসব!
রাহাদ কাচুমাচু মুখ করে বললো–,,কি হয়েছে বউ?আমি কি কিছু ভুল করেছি?
পুষ্পিতা অদৃশ্য কপাল চাপড়ালো,সোফার উপর রাখা কুশন টা ছুঁড়ে মার’লো রাহাদের উপর পরে হনহনিয়ে চলে গেলো ভিতরে।
রাহাদ বুঝলো তার শশী রাগ করেছে,মেয়েটা সব রাগ বাসনকোসনের উপর ঝারছে!রাহাদ পা টিপে টিপে ভিতরে গেলো,পুষ্পিতার হাতে খুনতি রাহাদ হুট করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো পুষ্পিতা কে, হঠাৎ শরীর শিরশির করে উঠায় হাত থেকে খুনতি টা ধাপ করে মেঝেতে পরে গেলো।নিশ্বাস ভারি হয়ে আসলো যেনো,কন্ঠ নালি কাঁপছে রাহাদ মুচকি হাসলো,সারাদিন তো এতো তে’জ দেখায় এই মেয়ে আর একটু ছুঁয়ে দেওয়াতেই এই অবস্থা! বউকে জ্বা’লানোর একটা ভালো উপায় যেনো পেয়ে গেলো।
রাহাদ ঘাড়ে মুখ ডুবানোর আগেই পুষ্পিতা কাঁপা কন্ঠে বললো–,,সরে দাঁড়ান প্লিজ!আমার অস্ব”স্তি হচ্ছে রাহাদ।
রাহাদ সরলো না উল্টো আদুরে কন্ঠে বললো–,,কি রান্না করেছো?বেশ ভালো সুঘ্রাণ ছড়িয়েছে,তোমার রান্নার হাত তো অপূর্ব মন চাচ্ছে তোমার হাতটাই আগে টেস্ট করি!
পুষ্পিতা এবার রাগলো কি অদ্ভুত মানুষ, রান্না করলো আজ প্রথম খেয়েই দেখলো না, উল্টো পাল্টা প্রশংসা করা শুরু করেছে।
পুষ্পিতা এক ঝটকায় সরে গেলো।রাহাদের দিক তাকিয়ে নাক ফুলিয়ে বললো–,,একদম এসব আজাইরা কথা বলবেন না।বাসায় আনার পর থেকে শুধু খাটিয়ে মার’ছেন,আপনি তো ভুলেই গেছেন আজকে একবার ভার্সিটি যেতে হবে,ডাকতে গেলাম কানে তুলো গুঁজে বসে ছিলেন,যত্তসব আসার সময় তো বলেছিলেন তোমার সব কথা শুনবো এই করবো সেই করবো,এখন তো কচু করছেন!
রাহাদ পুষ্পিতার ঘাড়ে হাত রাখতেই সে চুপ হয়ে গেলো,রাহাদ কিছুক্ষণ গভীর ভাবে তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে বললো–,,এই না হলে আমার বউ,এখন একদম পার্ফেক্ট বউ বউ লাগছে জান!আর বউকে চুপ করানোর ফ”র্মুলাও পেয়ে গেছি,রাহাদ আর একটু দুরত্ব কমিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো–,,আমার পরশেই গলে যাও তুমি মোমকন্যা,আমি গড়ে নিবো তোমায় আবার নতুন ধাঁচে!
পুষ্পিতা লজ্জা পেলো মনে হয়,এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে কানের পাশে চুল গুলো গুঁজে দিয়ে বললো–,,খেতে আসুন!
পুষ্পিতা খাবারের বাটি হাতে নিয়ে পালাতে চাইলো যেনো,রাহাদ হাত চেপে ধরে বললো–,,আমাকে মন থেকে মেনে নিবে না পুষ্প কানন?
পুষ্পিতা বললো–,,চেষ্টা করছি রাহাদ,আশা করছি আপনি আর এমন কিছু করবেন না যার জন্য আপনাকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আমার,আমি সব নতুন করেই শুরু করতে চাচ্ছি, চাইবো আপনি আমাকে ওই সময় টুকু দেন আমার পাশে থাকুন, সম্পর্ক টা এগিয়ে নিতে আমাকে সাহায্য করুন!
রাহাদ কিছু বললো না পুষ্পিতার হাত টেনে নিয়ে গেলো বসলো খাবার টেবিলে,একটা প্লেটে খাবার নিয়ে আগে তুলে দিলো পুষ্পিতার মুখে,পুষ্পিতা কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে মুখে নিলো,সে নিজের মায়ের কথা ভাবছে,রাহাদের হয়তো অনেক খারা’প গুন আছে, এ পর্যন্ত করা সব কিছুই খারা’প তাই বলে যে ওর কোনো ভালো দিক থাকবে না তেমন তো নয়,কয়েকদিনে যা দেখেছে রাহাদ বেশ যত্নশীল গোছানো পুরুষ।মেয়েরা হয়তো স্বামীর মধ্যে এমন গুন গুলোই বেশি আশা করে!
খাওয়া শেষ হতেই রাহাদ পুষ্পিতা কে প্লেট সরাতেও সাহায্য করলো,পুষ্পিতা না করেছিলো কিন্তু ছেলেটা সরলো না।
পুষ্পিতা তো একবার বলেও ফেলেছে–,,এতো যে এখন ভালো সাজছেন কয়েকদিন যাওয়ার পর দেখা যাবে এসবের কিছুই নেই তখন তো আমার কাজ আমাকে একাই করতে হবে,তাই অলস বানানো বন্ধ করেন আমাকে।
–,,সময় হলেই দেখতে পাবে কেমন থাকি!
রাহাদ গিয়ে ড্রয়ার খুলে নিজের সাথে কালার মিলিয়ে পুষ্পিতার জন্য একটা থ্রি পিস বের করে দিয়ে বলে–,,এটা তোমাকে মানাবে বেশ,অবশ্য তোমাকে সব কিছুতেই ভালো মানায়।
–,,ওফ!পাম মারবে’ন না একদম।এখন কি আপনার পছন্দে কাপড় ও পড়তে হবে আমায়?
রাহাদ শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো–,,ইয়েস ম্যাম!
পুষ্পিতা রেডি হয়ে আসার পর রাহাদ বললো–,,শুনো?
–,,হুম!
–,,আগামী সাত দিন তোমার পুরো বিকাল,রাত,সন্ধ্যা সকাল মোট কথা ভার্সিটি ছাড়া বাকি সব সময় আমি কিনে নিলাম!
পুষ্পিতা হেসে বললো–,,কবে কিনলেন?কিসের বিনিময়ে?
–,,ভালোবাসার বিনিময়ে জান,তার পর থেকে খেলা আছে আমার ভীষণ ব্যস্ত থাকবো,তাই এই কয়েকটা দিন আমাকে দিবে না বলো?
পুষ্পিতা ভাব নিয়ে বললো–,,ভেবে দেখবো!
পুষ্পিতার হাতে লিপ গ্লস লাগানোর সাথে সাথে হাতে টান পড়লো,পুষ্পিতার খোলা চুল গুলো এসে বারি খেলো রাহাদের মুখে ছড়ালো তার পুরো মুখে,কয়েকটা আটকালো রাহাদের খয়েরি রঙা শার্টের বোতামে।
পুষ্পিতার চিকচিক করা ঠোঁটে চুল আটকেছে সরাতে নিলে রাহাদ হাত থামিয়ে দিলো নিজে যত্ন সহকারে চুল গুলো সরালো,কানের পাশে গুঁজে দিলো ঠোঁটের উপরিভাগে অতিরিক্ত লেগে যাওয়া প্রসাধনি মুছলো ঈষৎ কেঁপে উঠলো পুষ্পিতা চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।
রাহাদ কোমর জড়িয়ে ধরা মাত্ররো হাত থেকে ছিটকে পড়ে গেলো হাতে থাকা বস্তুটি।
রাহাদ হেসে উঠলো পুষ্পিতার কপালে টোকা মে’রে বললো–,,অনুমতি ছাড়া কিছু করবো না,যে হারে কাঁপা কাঁপি করছো বাবা রে বাবা না জানি কিছু করলে কি হয় এই মেয়ের।
পুষ্পিতা রাহাদের বুকে দিলো একটা ধাক্কা পরে নিজের চুল আঁচড়ানো তে মনোযোগ দিলো।
———
ভার্সিটির কাজ শেষ করে পুষ্পিতা তিশা,পাপড়ির সাথে দেখা করে বেরিয়েছে,রাহাদ এসে ওর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিলো,রাস্তা পাড় হলো সূর্য তখন হেলে পড়েছে ঘড়িতে সময় বিকেল তিনটে ত্রিশের আশপাশ হবে।
–,,পুষ্প?
পুষ্পিতা জবাবের পরিবর্তে রাহাদের দিক তাকালো,তার পূর্ণ দৃষ্টি রাহাদের চোখের দিকে,রাহাদ রাস্তার দিক তাকিয়ে জিজ্ঞাসু সুরে বললো–,,আমার সাথে হাতে হাত রেখে হাঁটবে? টং এর চা শহরের ধুলো জমা পথ,তুমি আমি আর একটা লাল গোলাপ!হবে কি আমার বিংশশতাব্দীর প্রেমিকা?
পুষ্পিতা হাসলো–,,প্রেমিকা প্রেম ছাড়া কিছু বুঝে না,প্রেম কিন্তু ক্ষনস্থায়ী! আজ কি তবে শুধু প্রেম বিনিময় হবে মিস্টার রাহাদ? যা আজকের গোধূলীর সন্ধ্যার সাথে সাথে শেষ,,নাকি হবেন আমার বিশস্ত চিরস্থায়ী বন্ধু!
রাহাদ আশেপাশে তাকালো ফুলের দোকান থেকে একটা টিউলিপ ফুল নিলো।এসে পুষ্পিতার হাতে দিয়ে বললো–,,বন্ধুর জন্য টিউলিপ, যেদিন ভালোবাসবে প্রেয়সী হবে সেদিন না হয় গোলাপ দিবো!
–,,আজকের দিনটা বেশি সুন্দর নাকি আমার পাশে থাকা পুরুষটি বেশি সুন্দর রাহাদ?
–,,ফ্লা”টিং করা শিখছো?করছো করো আমি অব্দি যেনো সীমাবদ্ধ থাকে না হয় পা ভে’ঙ্গে বসিয়ে রাখবো!
–,,এই তো বেরিয়ে আসলো আসল রুপ,ঝগ’ড়ুটে একটা।
–,,কি বললে আমি ঝগ”ড়ুটে?
–,,না আমার জামাই!
–,,হুহ্!
পুষ্পিতা হেসে কুটি কুটি হলো ছেলেরা এভাবে নাক ফুলায় নাকি?হো হো করে হাসছে পুষ্প,এ রাগী ছেলে যে এরকম নাক ও ফুলাতে পারে না দেখলে তো বুঝতোই না।
পুষ্পিতা রাহাদ কে সুরসুরি দিলো,রাহাদ এপাশ ওপাশ করে ছুটলো,শেষে না পেরে পুষ্পিতার দু হাত চেপে ধরে হাঁটা শুরু করলো আর পুষ্পিতা হেসেই চলেছে।
রাহাদ এসে থামলো একটা নদীর পাড়,পাশেই একটা চায়ের দোকান।পুষ্পিতা সূর্যাস্ত দেখতে ব্যস্ত রাহাদ চা নিয়ে এসে পাশে দাঁড়ায়।
চা দিয়ে বললো–,, এখানেই থমকে যাক সময়,এই সময়ে থাকা স্মৃতি যেখানে তুমি আমি পাশাপাশি আছি বেশ!
পুষ্পিতা ধোঁয়া উঠা চা মুখে দিলো চোখ বন্ধ করে বললো–,,সুন্দরতম দিন উপহার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, আমার দিনটাকে সুন্দর করার জন্য ধন্যবাদ রাহাদ!
রাহাদ হতাশ কন্ঠে বললো–,,কবে ভালোবাসবে পুষ্প কানন?
পুষ্পিতা চোখ পিট পিট করে তাকালো রাহাদের মুখের দিক কিছুটা ঝুঁকে বললো–,,কখনো না!
রাহাদ পুষ্পিতার গাল টেনে ধরে বললো–,,একদম দিবো নাকি পানিতে ফেলে?
–,,এতো সাহস?দিবো নাকি আপনার চুল ছিঁড়ে? ব’দ লোক চলুন বাসায় যাবো!
চলবে?