জোৎস্না রাতে তুমি আর আমি পর্ব-০১

0
1

#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি [০১]
#সূচনা_পর্ব
#রুদ্রিকা_বেদী

১,
__”জানিস বসের একমাত্র ছেলে গতকাল ৬ বছর পর দেশে ফিরেছেন!”

অফিসে চাপা উত্তেজনা। সবার মধ্যেই ফিসফিসানি চলছে। চৌধুরী ইন্ড্রাস্ট্রির মালিক মিস্টার অমর চৌধুরীর একমাত্র নাতি আরুশ চৌধুরী গতকাল ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছে। এর মাঝে চৌধুরীদের CEO মিস্টার তুহিন চৌধুরী গতকালের বোর্ড মিটিংয়ে কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে বসেছেন, তার বাবার জায়গায়।

বেশ জল্পনা কল্পনা হচ্ছিল সবার মাঝে পরবর্তী CEO নিয়ে। যা আজ সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিয়েছে আরুশ চৌধুরীর দেশে ফেরার সংবাদে। অফিসের বিভিন্ন কাজের ফাঁকে মৃদু গুঞ্জন ভাসছে বাতাসে।

__”হুম সত্যি কথা আমিও শুনেছি, বসে জায়গায় তো আজ থেকে তারই বসার কথা।”

প্রতি উত্তরে বলল মিলি। মিলি চৌধুরী ইন্ড্রাস্ট্রিতে কাজ করছে তিন বছর। এই তিন বছরে নিজের কাজে বেশ পাকা পোক্ত হয়ে উঠেছে। সাধারণ ছিমছাম, কিন্তু একটু চঞ্চল। সবাই তার চঞ্চলতার জন্য বেশি পছন্দ করে।

পুরো অফিসের প্রত্যেকটা লোকের মধ্যে উৎকণ্ঠা কাজ করছে। নতুন বসের আগমন, তাদের জন্য কতোটা সুখকর হবে সেটা চিন্তার বিষয়…….
___________

ঘরের এক কোণ থেকে অন্য কোণে ছুটাছুটি করছে দ্যূতি। সম্পূর্ণ নাম দেবাদৃতা দ্যূতি। বাড়ির বড়ো মেয়ে। মাঝারি হাইট। না বেশি লম্বা না বেশি খাটো। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা। কোমর পর্যন্ত কালো স্ট্রেইট চুল। মায়াবতী চাহনি। পাতলা গোলাপী ঠোঁট,ভ্রমর কালো চোখের অধিকারীনি। এবার অর্থনীতি অর্নাস শেষ করেছে। পড়াশোনায় বেশ ভালো। অর্নাসের শেষে তার সিজিপিএ ৩.৮৮। ডিপার্টমেন্টের টপার সে।

এখন সে একটা চাকরির হদিস করছে। মার্স্টাসের আগে একটা চাকরি জোগাড় করতে হবে নাহলে এই মার্স্টাস করায় দায়ী হয়ে উঠবে তার জন্য,
আজকে তার ইন্টারভিউ রয়েছে চৌধুরী ইন্ড্রাস্ট্রিতে। তার এই মুহূর্তে চাকরির অনেক দরকার। [“কেন দরকার তা আমরা সামনে জানতে পারবো”]

দ্যূতি আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি করেছে। এইটা তার সচরাচর হয়না কিন্তু গতকাল রাতে ইন্টারভিউয়ের প্রিপারেশন এবং কাগজ পত্র সব এক জায়গায় করতে যেয়ে বেশ দেরি হয়েছে,যার ফল স্বরূপ সে আজ দেরিতে উঠেছে।

কোনো রকমে শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয় নিয়েছে দ্যূতি। সে আজ একটা অফ ওয়াইট কালারের কুর্তি পরেছে সঙ্গে সাধারণ সাদা ওড়না। চুলগুলো পনি টেইল করেছে। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক এবং চোখে গাঢ় করে কাজল পরেছে। কাজল বেশ যায় দ্যূতির চোখে। একদম শেষে হাত ঘড়ি পরে নিলো।

ব্যাগ আগেই গোছানো ছিল সেটা নিয়ে বেড়িয়ে পরল রুম থেকে। দ্যূতি একটা ভাষা সাবলেট থাকে। যেহেতু টিউশনি করে তাই বাড়ি ফিরতে দেরি হয় দ্যূতির। হলের গেট ততক্ষণে বন্ধ হয়ে যায়,যার জন্যই এই সাবলেট থাকা।

দ্যূতি দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলল,

__”সুমনা ভাবি,ও সুমনা ভাবি!”

ডাকতেই দ্যূতির পাশের রুম থেকে একজন অল্পবয়সী মহিলা বেড়িয়ে আসলো। পিছন পিছন তার ছেলে এসে দাঁড়ালো। সুমনা দ্যূতির সামনে দাঁড়িয়ে হাসি খুশি মুখে বলল,

__”কী? ইন্টারভিউর জন্য বেড়োচ্ছ?!”

দ্যূতি তাড়াহুড়ো করে জুতা পরছে তার মাঝে সুমনার প্রশ্নের উত্তর স্বরূপ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। সুমনা তাই দেখে বলল,

__”আচ্ছা সাবধানে যেও! বেশি তাড়াহুড়ো করো না।”

শেষের কথাটা দ্যূতির তাড়াহুড়ো দেখে বলল সুমনা। দ্যূতি দরজার খুলে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে।

______________

আজ দ্যূতির কপাল বেশ ভালো। রাস্তার মোড়ে আসতেই একটা সিএনজি পেয়ে গিয়েছে। যা ঢাকা শহরে সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না। দ্যূতি সময় নষ্ট না করে, সিএনজি চালককে অফিসের ঠিকানা বলে বসে পড়ল, গন্তব্যে রওনা হওয়ার জন্য।

গাড়ি কোনো রকম জ্যামে আটকালো না পুরো রাস্তায়। দ্যূতি একটু অবাকই হলো, তার ভাগ্যের কথা ভেবে। কিন্তু বিপত্তি এলো অফিসে পৌঁছানোর ঠিক পনেরো মিনিট আগে। হঠাৎ সিএনজি থেমে যায়। গাড়ি থামতে দ্যূতি উৎকন্ঠায় জিজ্ঞেস করল,

__”কী হলো মামা, থামিয়ে দিলেন কেন?”

দ্যূতির প্রশ্নের জবাব দিতে সিএনজি মামা পিছনে ফিরে নিরাশ কন্ঠে বললেন,

__”আপা,আমি থামায়নি! ত্যাল শ্যাষ হয়ে গেছে! তাই আপনাআপনি থেমে গেছে!”

দ্যূতি চোখ মুখ কুঁচকে তাকালো সিএনজি মামার দিকে। দ্যূতি আর কথা না বাড়িয়ে সিএনজি থেকে নামল। নিজের হ্যান্ড ব্যাগের থেকে টাকা বের করতে করতে বলল,

__”কি মামা, ঢাকা শহরে গাড়ি চালাচ্ছেন, তেল তো ভরা উচিত!”

সিএনজি মামা লজ্জিত স্বরে বললেন,

__”কী কমু আপা, তাড়াহুড়োই ত্যাল ভরতে পারিনি।”

__”ঠিক আছে,এই নেন!”

হতাশাগ্রস্থ মুখ নিয়ে সিএনজি মামাকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়ে, দ্যূতি একপ্রকার ছুট লাগালো। শহরের এই দিকটাই তেমন জ্যাম থাকে না। VIP রোড বললেই চলে। এই রাস্তা দিয়ে বড়ো বড়ো কারই চলে। তাই লোকজনও রাস্তায় কম।

দ্যূতি বেশি জোরে দৌড়াতে পারছে না, দুইদিন আগেই রান্না করতে কিচেনে যাওয়ার সময় পা ফসকে পড়ে যায়। তেমন কোনো গুরুতর আঘাত যত আসলেও, পায়ে বেশ ব্যাথা হয়েছে পেয়েছিল। সেই ব্যাথা এখন দৌড়াতে যেয়ে দ্যূতি আবার অনুভব করছে।
_______________

অফিস বেশ কাছে আসতে দ্যূতি থমকে দাঁড়িয়ে পরে। সে রাস্তার অপজিট সাইডে কি যেন দেখছে, রাস্তার অপর দিকে একটি ছোট বাচ্চা ফুটপাতে খালি গায়ে বসে আছে। গায়ের রং তামাটে,রোদে পুড়ে হয়েছে, শরীরের হাড় দৃশ্যমান। বোঝায় যাচ্ছে ঠিক ঠাক ভাবে খেতে পায় না। দ্যূতির যেন পুরোনো কিছু স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। দ্যূতির শরীর কম্পিত হয়ে উঠল। দ্যূতি সম্মোহন কাটিয়ে, রাস্তার দুই প্রান্তে চোখ বুলিয়ে নিলো, নিশ্চিত হওয়ার জন্য যে কোনো গাড়ি আসছে কিনা,

দ্যূতি রাস্তার মাঝখানে যেতেই হঠাৎ ফুল ফোর্সে তার পিছন থেকে একটি কালো কুচকুচে কালারের SUV সজোরে তার দিকেই আসছে। মুহূর্তেই দ্যূতি স্তম্ভিত হয়ে পড়ল। তার পা যেন আঁটকে ধরল মাটির নিচ থেকে। দ্যূতির চোখ মুখ কুঁচকে বন্ধ করে নিলো ভয়। তার যেন এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো,হয়তো সব শেষ! ছেলেটাকে বোধহয় আর কিছু খাওয়ানো হবে না তার,,,,,,

_____________________________

কালো কুচকুচে SUV টা শেষ মুহূর্তে এসে থেমেছে। দ্যূতির কানে গাড়ি ব্রেক কষছে তার শব্দ গিয়েছে, কিন্তু সাহস করে চোখ মেলে তাকাতে পারছে না। হঠাৎ দ্যূতির কানে একটা ভারি, রুক্ষ পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসল,

__”ওয়াট দ্যা ফাক্ক গার্ল, সুইসাইড যদি করতে হয় তাহলে নিজের রুমের মধ্যে করো বা বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দাও! আমার গাড়ির সামনে পাথরের মতো জমে আছো কেন??!!!”

তীব্র গর্জনে দ্যূতি দূরত্ব চোখ মেলে চাইলো।

সামনে তার দীর্ঘ দেহের একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। ফর্সা গায়ের রং, কঠিন চাহনি, রুক্ষ চোয়াল শক্ত হয়ে রয়েছে, পুরুষের পরণে ডার্ক রয়েল ব্লু কালারের শার্ট,ব্ল্যাক ফর্মাল প্যান্টের সাথে ইন করা। হাতে। পুরুষটার ওয়েব চুল গুলো তার সম্পূর্ণ লুক এবং পার্সোনাললিটির সঙ্গে বেশ মানিয়েছে। বয়স আন্দাজ ২৮ – ৩০ এর কোঠায়।

পুরুষটির রুক্ষ এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দ্যূতিকে যেন এক মুহুর্তের জন্য দমিয়ে দিতে সার্থক হলো। দ্যূতি ঢোক গিলে, আশেপাশে তাকালো। সত্যিই তো সে কেন রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল? দোষটা তো তার, এইসব ভেবে সরি বলতে যাবে এমন সময় দ্যূতির মাথায় ওর আপুর একটা কথা খেলে গেল,

__”দোষ কখনো এক পক্ষের হয় না, দ্যূতি! দুই পক্ষই সমান দোষী হয়।”

দ্যূতি সেই কথা মনে করে,বুকে সাহস এনে সাহস পূর্ণ কন্ঠে জবাব দিলো,

__”শুনুন মিস্টার, রাস্তার মাঝে আমি মরতে দাঁড়াই নি। রাস্তা পাড় হচ্ছিলাম তখন আপনি,,,,”

__”আমি কি?” দ্যূতিকে কথা শেষ করতে দিলো না পুরুষটি। তীব্র কন্ঠে বলতে লাগলো,

__”শোনো মেয়ে, রাস্তা পাড় করার সময় রাস্তার দুই পাশে ভালো ভাবে তাকিয়ে নিতে হয়, ইচ্ছে মতো দৌড় দিলেই হয়না !”

দ্যূতি যেন এইবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। জ্বলন্ত চোখে জবাব দিলো,

__”হ্যালো! জ্ঞান দিবেন না, এইটুকু কমোন সেন্স বাচ্চাদেরও আছে, আমি রাস্তার দু’দিক খুব ভালো করেই দেখেছিলাম, তখন আপনার এই ব্ল্যাক ড্রাগন আমার চোখে বাঁধি নি,” গাড়ির দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল দ্যূতি।

__”আমি কি করে বুঝবো আপনার ব্ল্যাক ড্রাগন আর আপনি চিতাবাঘের বেগে ছুটে আসবেন।”

দ্যূতির কথা শুনে যেন আরো রেগে গেল সামনের ব্যক্তি। রাগান্বিত স্বরে বলল,

__”ওয়াট দ্যা হেল! এখানে আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে, তুমি এতোক্ষণে মাটির সঙ্গে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকতে, বাঁচিয়ে দিয়েছি।”

__”উদ্ধার করেছেন,,,”


বেশ কিছুক্ষণ এই গতিতে ঝগড়া চলল। এক পর্যায়ে যেয়ে দু’জনই বিরক্ত হয়ে পড়ল। দ্যূতি শেষে লোকটার দিকে কটমট করে চেয়ে রাস্তার ওই পাড়ে চলল, লোকটাও বেশী সময় নষ্ট না করে তার ব্ল্যাক SUV তে উঠে পড়ল।

দ্যূতি বাচ্চাটার কাছে এসে বসল। একগাল হেসে বলল,

__”বাবু কিছু খাবে?”

বাচ্চাটা কিছুক্ষণ এক পলকে তাকিয়ে রইল তারপর হাতের ইশারায় কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে। দ্যূতি বুঝলো ছেলেটা কথা বলতে পারে না। দ্যূতির বেশ মায়া লাগলো। উঠে যেয়ে পাশের একটা দোকান থেকে দুইটা পাউরুটি আর চারটা কলা কিনে আনলো ছেলেটার জন্য। খাবার গুলো বাচ্চার কোলে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

এতো কিছুর মধ্যে দ্যূতি একটা জিনিস লক্ষ্য করতে পারল না,সামনের দূর থেকে গাড়ির সাইড মিরর দিয়ে তার পুরো গতিবিধি খেয়াল করেছে।

_____________________

__”ওই বেয়াদব লোকটার কারণে আরো দেরি হলো। যত্তসব,নিজে দোষ করে আবার আমার উপর রোপ দেখায়, কোনোদিন যদি আবার হাতে পাই জেলে ঢুকিয়েই ছাড়বো!”

চৌধুরীদের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে বিড়বিড় করল দ্যূতি। সে বেশি সময় নষ্ট না করে অফিসে ঢুকল।

বিশাল অফিস। আঠারো তলা বিল্ডিং। দেয়াল গুলো কম বেশি কাচের। বাইরে বড়ো করে লেখা,

“𝐶𝐻𝑂𝑊𝐷𝐻𝑈𝑅𝑌 𝐿𝐸𝐺𝐴𝐶𝑌 𝐺𝑅𝑂𝑈𝑃”

বাইরের দৃশ্যটা যেমন সুন্দর ভিতরের পরিবেশও তেমন সুন্দর। দ্যূতি ঝটপট করে রিসেপশনে গেল।
রিসেপশনিস্ট দ্যূতিকে দেখে বলল,

__”welcome mam! How may I help you?”

মিষ্টি কন্ঠে অভ্যর্থনা জানিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল দ্যূতিকে। দ্যূতি তাড়াহুড়ো করে বলল,

__”আসলে আজ আমার ইন্টারভিউ ছিল এজ আন ইন্টার্ন ইন ইকোনমি ব্যাকগ্রাউন্ড!”

দ্যূতির কথা শুনে রিসেপশনিস্ট তার সামনে থাকা কম্পিউটারে কিছু একটা দেখে, দ্যূতিকে পুনরায় জিজ্ঞেস করল,

__”mam what is your full name?”

__”দেবাদৃতা দ্যূতি!” সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলো দ্যূতি।

দ্যূতির নাম শুনেই রিসেপশনিস্ট বলল,

__” সরি ম্যাম, আপনি লেট করে ফেলেছেন, ইন্টারভিউ প্রায় পনেরো মিনিট আগে শুরু হয়ে গেছে, এবং আপনার নাম আগে ছিল!”

রিসেপশনিস্ট কথা বলে শুকনো হাসল।

__”একটু দেখুন! আমি আসলে একটু জ্যামে পরে গিয়েছিলাম,সেই জন্য লেট হয়ে। আপনি আপনার ম্যানেজার বা যে কাউকে বলে একটু ইন্টারভিউটা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন, প্লীজ!”

দ্যূতি কাকুতি মিনতি করে বলল। রিসেপশনিস্ট কি বোঝল, সে সামনে রাখা ল্যান্ড ফোন তুলে কাকে যেন কল করল। দ্যূতি এই দিকে ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং মনে মনে বিড়বিড় করল,

__”ওই শয়তানের চক্করে এখন এই অবস্থা! বেয়াদব একটা,সামনে যদি আর পাই নাকে তুলে ঘুষি মারবোই!”

__”ম্যাম,,,!”

রিসেপশনিস্টের ডাকে দ্যূতির ধ্যান ভঙ্গ হলো। দ্যূতি স্বাভাবিক হয়ে বলল,

__”ইয়েস!”

__”ম্যাম আপনার 𝑪𝑽 টা দেন!”

দ্যূতি কোনো প্রশ্ন ছাড়াই নিজের হ্যান্ড ব্যাগ থেকে CV সহ যত কাগজ পত্র ছিল সব বের করে ওখান থেকে রিসেপশনিস্টকে CV টা দিলো। CV দেওয়ার পর দ্যূতি জিজ্ঞেস করল,

__” CV কেন?”

__” ম্যাম, আমি ম্যানেজার স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি আপনার বিষয়ে,উনি বললেন আপনার CV ইন্টারভিউ রুমে দিতে, হায়ারিং ম্যানেজাররা যদি আপনার CV সিলেক্ট করে তাহলে আপনি ইন্টারভিউ দিতে পারবেন,তাই আপনার কাছ থেকে CV টা নিলাম।”

মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে বলল রিসেপশনিস্ট। দ্যূতি আশা ফিরে। রিসেপশনিস্ট তাকে ওয়েটিং এরিয়ায় বসতে বলল। দ্যূতি আর কোনো প্রশ্ন না করে চুপচাপ বসে পড়ল।

__________________

বেশ কিছুক্ষণ পর রিসেপশন থেকে ডাক এলো দ্যূতির জন্য। দ্যূতি তাড়াতাড়ি করে রিসেপশনে এসে হাজির হলো। রিসেপশনিস্ট আগের মতোই মিষ্টি হাসি ধরে বলল,

__”ম্যাম আপনি ইন্টারভিউ দিতে পারবেন। এখানে অপেক্ষা করেন দয়া করে, আর একজনের পর আপনার ডাক আসবে!”

দ্যূতি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো,যাক একটা ব্যবস্থা হয়েছে। দ্যূতি নিঃশব্দে হাসল। কাউন্টারেই অপেক্ষা করতে লাগলো।

দশ মিনিটের মধ্যেই দ্যূতির বোর্ড রুমে ডাক পরল। দ্যূতি নিজেকে যথাযথ তৈরি করে, বোর্ড রুমের দিকে অগ্রসর। বোর্ড রুমটি বেশি খুঁজে হয়নি দ্যূতির। একজন পিয়ন সঙ্গে ছিল দ্যূতির, বোর্ড রুমটি গ্রাউন্ড ফ্লোরেই। দুই মিনিটেই পৌঁছে গেল দ্যূতি।

দ্যূতি দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই, দ্যূতি বুঝতে পারল ভিতরে এখনো ইন্টারভিউ চলছে। অপেক্ষা করতে লাগলো, কিছুক্ষণের মধ্যে একটি ছেলে বেড়িয়ে আসলো গোমড়া মুখে। তাকে দেখে দ্যূতির গলা শুকিয়ে আসল মুহূর্তেই, ভিতর থেকে ‘next’ শব্দটি আসতে, দ্যূতির দরজা কাছে যেয়ে দাঁড়ালো। দরজা আধখোলায় ছিল, দ্যূতি সেখান থেকে মুখ গলিয়ে বলল,

__”স্যার ভিতরে আসবো?”

ভিতর থেকে গম্ভীর কন্ঠে একটা আদেশ ভেসে আসলো,

__”কাম ইন!”

দ্যূতি আস্তে আস্তে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল। ইন্টারভিউয়ার প্যানেলদের দিকে চোখ বুলাতে যেয়ে থমকে গেল দ্যূতি। তার একদম সোজাসুজি বসে আছে, আজকের সকালের সেই পুরুষটি। যার সঙ্গে দ্যূতির এতো বড়ো ঝগড়া হয়েছিল। দ্যূতি যেন দুঃস্বপ্ন দেখছে।

পুরুষটি একা চিত্তে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ যেন ব্যঙ্গ করছে দ্যূতির দিকে তাকিয়ে। দ্যূতি একটি বারের জন্য মনে মনে বলল,

__”হয়ে গেলো আমার চাকরি!”

দ্যূতি জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,

__”গুড মর্নিং!”

ইন্টারভিউয়ার প্যানেলের সবাই প্রতি উত্তর জানালেও, একদম মাঝামাঝি বসে থাকা পুরুষটি কোনো উত্তর দিলো না। ইন্টারভিউয়ার প্যানেলের একজন দ্যূতিকে চেয়ারে বসার ইশারা করল। দ্যূতি আস্তে করে সামনে থাকা চেয়ারে বসল।

কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে ইন্টারভিউ শুরু হয়ে গেছে। সব প্রশ্নের খুব সুন্দরভাবে উত্তর দিলো দ্যূতি। এর আগে ভার্সিটিতে ভাইভা আর বিভিন্ন এনজিও তে ইন্টারভিউ দেওয়ার ফলে, এতো কম বয়সে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পারছে দ্যূতি।

এই পর্যন্ত দ্যূতির সামনাসামনি বসে থাকা গুরুগম্ভীর চাহনির তীক্ষ্ণ দৃষ্টির অধিকারী পুরুষ কোনো প্রশ্ন করেননি। দ্যূতি পুরুষটির ভাবভঙ্গি কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।

ইন্টারভিউয়ের একদম শেষ মুহূর্তে ইন্টারভিউয়ার প্যানেলের একজন পুরুষটির দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করল,

__”স্যার আপনার কী কোনো প্রশ্ন আছে?”

দ্যূতি যেন এইবার আকাশ থেকে খেজুরের গাছে এসে পড়ল। পুরুষটিকে স্যার বলে অভিহিত করল, তার মানে পুরুষটি কোনো উচ্চ পদে রয়েছে হয়তো এই কম্পানির CEO ও হতে পারে! দ্যূতি আঁতকে উঠল, পুরুষটি গম্ভীর কন্ঠে বলল,

__”সো মিস দেবাদৃতা, এতো অল্প বয়সে চাকরির দরকার পড়ল কেন?”

চলবে?,,,,,,