#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি ☘️
#পর্ব__১৫[ভুল বোঝাবুঝি এবং অনেক কিছু]
#লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী
{কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌}
____________________
পরদিন সকাল,
রাতে বেশ ভালো ঘুম হয়েছে দ্যূতির! কখন যে ঘুমের ঘোরে ঘরে এসেছে খেয়াল নেই। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে দ্যূতি ফোন হাতে নিলো। ফোনের স্ক্রিন অন করতেই, পিউয়ের সাত মিস্ কল ভেসে উঠল। দ্যূতির চিন্তাহীন সকাল হঠাৎই কম্পিত হয়ে উঠল। পিউ এতোবার কল করেছে তারমানে ভীষণ চিন্তায় আছে, আসার পর থেকেই দ্যূতি শুধু একবারই পিউয়ের সাথে কথা বলেছে,তারপর থেকে ফোনের কাছে আসা হয়ে ওঠেনি দ্যূতির। দ্যূতি ঢোক গিলে ফোন সাইডে রেখে উঠে দাঁড়ালো, লম্বা শ্বাস নিয়ে ওয়াশ রুমের দিকে চলে গেলো,
.
ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসতেই দ্যূতির ফোন বেজে উঠল। দ্যূতি ঝটপট ফোনের কাছে গেলো। ফোন হাতে তুলে নিতেই দেখলো,’ মা ’ বলে সেফ করে রাখা নামটা জ্বল জ্বল করছে। দ্যূতি তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করে কানে ঠেকালো,
“ হ্যালো! মা! ”
“ সকালে খেয়েছিস? ”
অপর প্রান্ত থেকে সাথে সাথে একটা গম্ভীর কন্ঠ স্বর ভেসে আসলো। দ্যূতি আমতা আমতা করে বলল,
“ কেবল উঠেছি! একটু পর নিচে যাবো ব্রেক ফার্স্ট করতে! “
“ কেবল উঠেছিস মানে? তারমানে নির্ঘাত দেরি করে ঘুমিয়েছিস? অসুস্থ হয়ে পরলে তোমাকে দেখার মতো কেউ নেই ওখানে মনে রেখো! ”
দ্যূতি চোখ মুখ বুজে হাসলো। তার মায়ের তার জন্য এই চিন্তা তার ভীষণ প্রিয়। কখনো যদি সে কোনোরকম অনিয়ম করে তখনই তার মা তাকে এই কথাটাই বলে। দ্যূতি এটা ভীষণ উপভোগ করে! মাঝে মাঝে ভাবে,
“ ইশ্! যদি দৌড়ে যেয়ে মায়ের কোলে মাথা রাখা যেতে! “
“ কি হলো? কথা কানে যাচ্ছে? ”
“ হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছে! তুমি চিন্তা করো না, আমি অসুস্থ হয়ে পরবো না! ”
“ হুম ঠিক আছে, সাবধানে থেকো! আর একটা কথা ঠিক ঠাক খাবার খেতে পারছিস তো? না মানে ওখানের সব কিছুই তো নোনতা নোনতা, “
দ্যূতি মা ভীষণ চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন মেয়ের কাছে। দ্যূতি খাটের উপর বসে বলল,
“ না গো! কোনো সমস্যা হচ্ছে না! সব ঠিক আছে এখানে! ”
“ যাক! ”
দ্যূতির মা শান্তির নিশ্বাস নিলেন।
“ আরেকটা কথা! গতকাল পিউয়ের সাথে আমার কথা হলো, ও বলছিলো তোকে নাকি ও বার বার কল করছিল তাহলে ধরিস নি কেন? ”
হঠাৎ দ্যূতির মাথায় বাজ ভেঙে পরল। এতোক্ষণে তার মনে পরেছে যে সে আরুশের কথা তার মাকে বলেনি! দ্যূতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে মনে মনে বলল,
“ এখন থাক! ঢাকায় ফিরে সবাইকে একসঙ্গে জানাবো, পিউ আপিও তো কিছু জানে না! কে জানে সবাই এই কথাটা কিভাবে নেবেই! ”
“ থেকে থেকে কোথায় চলে যাচ্ছিস? ”
মায়ের কথায় দ্যূতি চিন্তার জগত থেকে বেরিয়ে আসলো। মায়ের উদ্দেশ্যে আমতা আমতা করে বলল,
“ আসলে মা, ফোনের কাছে ছিলাম না,তাই আর কল রিসিভ করা হয়নি, আমি আজ সকালেই আপির মিস্ কল দেখেছি,একটু পরই কল করবো! ”
“ আচ্ছা ঠিক আছে। মনে করে ফোন করো! আর নিচে যেয়ে খেয়ে নিয়েও! ”
এরপর দুজনের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো। তারপর কল কেটে দ্যূতি নিচে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো। মিলির ম্যাসেজ এসেছে, সে নিচে দ্যূতির জন্য অপেক্ষা করছে। ও নিচে গিলেই রেস্তোরাঁয় যাবে,,,
দ্যূতি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে গাঢ় করে কাজল পরল। ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক দিলো পিংক সেডের! তারপর রুমের কি কার্ড নিয়ে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে!
._______________________
“ প্রত্যেক দিন এই ডাল আর পরোটা খেতে খেতে তো আমার মুখ খারাপ হয়ে গেলো! ”
মিলি খাবারের টেবিলে উপর সবে মাত্র রেখে যাওয়া পরোটা আর ডালের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে কথাটা বলল। দ্যূতি মিলির করুণ মুখ থেকে মুখ টিপে হাসল। মিলি গোমড়া মুখ নিয়ে পরোটা নিজের প্লেটে তুলে নিলো। দ্যূতিও তাই করল। আজ শিহাব আর আরুশ তাদের টেবিলে বসেনি। শিহাব আর আর তাদের বিপরীত রো তে বসেছে। দ্যূতি মাঝে মাঝে আড়চোখে সেদিকে তাকাচ্ছে। আরুশের মুখ সবসময়ের মতো গম্ভীর! একটি বারের জন্য দ্যূতির দিকে তাকাচ্ছে না। দ্যূতি তাতে পাত্তা দিলো না। ভেংচি কেটে খাবার খাওয়াতে মনোযোগ দিলো।
________________
“ স্যার আজকে কেন ওই টেবিলে বসলাম না? না মানে আপনি ভাবিজানের সঙ্গে বসতে পারতেন আর আমি আমার মিলির সঙ্গে বসতে পারতাম! ”
শিহাব পরোটার টুকরো ডালে চুবিয়ে নিতে নিতে বলল কথাটা। আরুশ চোখ না তুলেই গম্ভীর স্বরে বলল,
“ যতটা দূরে থাকতে পারো ততটাই ভালো! মানুষের চোখ এড়িয়ে যেতে পারবো বাট ওটো কাছে থাকলে একজন হলেও সন্দেহ করবে! ”
“ যুক্তি আছে! ”
শিহাব মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল। আরুশ মাথা তুলে ওর দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে বলল,
“ আমি সবসময় ঠিক কথাই বলি গাধা! ”
__________________
দ্যূতি আর মিলি খেতে খেতে গল্প করছে। তাদের গল্পের বিষয় বিভিন্ন,কখনো বিদেশ ভ্রমন তো কখনো মায়ের হাতের চমৎকার সব রান্না! হঠাৎ এমন সময় দ্যূতি ডালের বাটি একসাইডের থেকে অন্য সাইডে সরিয়ে রাখতে যেয়ে নিজের কুর্তির উপর খানিকটা ডাল আচমকা পরে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে মিলি দাঁত মুখ খিচুনি দিয়ে উঠলো,
“ ইশ্! এই নে! তাড়াতাড়ি মুছে ফেল! ”
মিলি টেবিলের উপর থেকে টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে এগিয়ে ধরল দ্যূতির দিকে। দ্যূতি বিরক্ত মুখ নিয়ে মিলির হাত থেকে টিস্যু নিয়ে ডাল পরে যাওয়া অংশে ভালো ভাবে মুচতে লাগলো। তখন মিলি দ্যূতির উদ্দেশ্যে বলল,
“ বাবু একটা কাজ কর, তুই ওয়াশ রুমে চলে যা! পানি দিয়ে ভালো করে মুচে ফেল,নাহলে দাগ উঠবে না! ”
দ্যূতি মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল,
“ ঠিক বলেছো! আমি ওয়াশ রুমে যাচ্ছি, তুমি এখানেই বসো! ”
বলে উঠে দাঁড়ালো। মিলি দ্যূতির দিকে তাকিয়ে বলল,
“ একটা কাজ করি,আমি আসি তোর সঙ্গে,”
দ্যূতি না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো,
“ না তুমি বসো আমি আসছি! ”
দ্যূতি কথাটা বলে দূরত্ব হেঁটে রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে যেতে গেলো। এতোক্ষণের সব ঘটনায় আরুশের চোখে পরেছে। সে চুপ চাপ দ্যূতিকেই পর্যবেক্ষণ করছিল।
দ্যূতি দরজার মুখে আসতেই ধরাম করে কারোর সঙ্গে ধাক্কা খেলো। নিজেকে সামলাতে না পেরে দ্যূতি প্রায় ছুটে পিছনে ছিটকে আসলো। দ্যূতি যার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে, তিনি একজন পুরুষ। ধাক্কা খাওয়ার তার হাতে থাকা জুসের খোলা বোতল থেকে জুস তার গেঞ্জিতে পরে গিয়েছে। দ্যূতি সেই দৃশ্য দেখতেই অপরাধী মতো মুখ করে সেই পুরুষটির দিকে এগিয়ে গেলো। কাতর স্বরে বলল,
“ সরি সরি! আমি……!”
দ্যূতি তার কথা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই পুরুষটি তার দিকে রক্তচক্ষু তাকালো। দ্যূতি সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল।
“ চোখ কি পিছনে নিয়ে চলো না কি? বেয়াদব মেয়ে,
পুরুষ মানুষ দেখলেই শুধু ঢলে পরতে ইচ্ছে করে তাই না! ”
শেষের বাক্য কানে যেতেই দ্যূতির সারা শরীর ঘৃণায় জ্বলে উঠলো। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে বলল,
“ আপনি ভুল ভাবছেন ওমন…”
“ সব ঠিক ভাবছি! তোমাদের মতো মেয়েদের আমি ভালো করেই চিনি! ”
“ চুপপপপপ! ”
দ্যূতি এবার চেঁচিয়ে উঠলো। লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সংযত করে বলল,
“ অনেক হয়েছে! আপনার বাজে কথা শোনার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে নই, আমি ভুল করেছি সেটা স্বীকার করেছি, কিন্তু আপনি! আপনি…..”
দ্যূতি থেমে গেলো,হঠাৎ পাশে চেনে একজনের উপস্থিতি টের পেয়েছে সে। আরুশ তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তার দিকে তাকালো দ্যূতি। আরুশের চোয়াল শক্ত। চোখে রাগের আগুন। দ্যূতি ঘাবড়ে গেলো। সে পিছনে তাকিয়ে দেখলো, অফিসের লোকরা সবাই পিছনে দাঁড়িয়ে তাদেরই দেখছে। দ্যূতি আরুশের দিকে তাকিয়ে গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল,
“ আমি বুঝে নিচ্ছি, আপনি এখান থেকে যান আরুশ! আমি সামলিয়ে নিতে পারবো! ”
আরুশ দ্যূতির কথার কোনো প্রতিক্রিয়া দিলো না। একই ভাবে ওই পুরুষটির দিকে চেয়ে আছে। আরুশের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে দ্যূতি আবার বলল,
“ সবাই দেখছে! প্লীজ এখানে কোনো সিন ক্রিয়েট করবেন না! আপনি কি আমার কথা শুনছেন? ”
আরুশ দ্যূতির কথাকে কোনো ভাবে পাত্তা না দিয়ে লোকটির কলার চেপে ধরল। আচমকা আরুশের এমন প্রতিক্রিয়ায় সবাই অবাক হয়ে উঠল।
“ মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, তোর পরিবার শিখায়নি? তার ক্যারেক্টার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে লজ্জা করে না? আ ফাকিং ইডিয়ট! ”
বলেই লোকটার মুখে এক শক্ত হাতের ঘুষি মেরে বসলো। লোকটা মেঝেতে বসে পরল। ব্যাথায় সঙ্গে সঙ্গে কুঁকড়ে উঠলো। আরুশ তখনও থামলো না। কোনো রকম না থেমেই লোকটির উপর আক্রমণ করতে লাগলো। দ্যূতি কিছুক্ষণের জন্য হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
“ থামুন! প্লীজ থামুন! ”
দ্যূতি কাতর স্বরে অনুরোধ করল কিন্তু আরুশ তখন আর নিজের মধ্যে নেই। দ্যূতি সবার দিকে তাকিয়ে আরুশের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“ আমি বলেছি থামুন মিস্টার চৌধুরী! ”
এবার দ্যূতির গলার স্বর চওড়া হয়ে গেছে। দ্যূতির আদেশে আরুশ এবার থেমে গেলো। দ্যূতির দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালো। দ্যূতি রক্তাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। আরুশ দ্যূতির দিকে এগিয়ে এসে ওকে কিছু বলতে যাবে, দ্যূতি তখনই ওখান থেকে বেরিয়ে গেলো। আরুশ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দ্যূতির দৌড়ে চলে যাওয়ার দিকে…….
শিহাব আরুশের কাছে এসে দাঁড়ালো। আরুশের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ ভাবিজান কি রেগে গিয়েছেন? ”
আরুশ কোনো জবাব দিলো না। ওর মনের মধ্যে যে উত্তাল হয়ে যাচ্ছে……
_______________________
দ্যূতি সাগরে পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখের চাহনি অভিমানী। চোখে বিষন্নতা। চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে গাল ছুঁইয়ে। মাঝে সাঝেই ফুঁপিয়ে উঠছে,
আরুশ নিঃশব্দে দ্যূতির পাশে এসে দাঁড়াল। সামনে দৃষ্টি স্থির রেখে বলল,
“ আমি কি ভুল কিছু করেছি? ”
“ আপনাকে যখন থামতে বললাম, আপনি থামলেন না কেন? ”
গলা শক্ত রেখে গম্ভীর স্বরে বলল দ্যূতি। আরুশ দ্যূতির দিকে তাকিয়ে বলল,
“ ওই লোক তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিল আমি কিভাবে চুপ থাকতাম,তুমিই বলো? ”
দ্যূতি আরুশের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।
“ আমি যখন বলেছি, আমার কথাকে রেসপেক্ট করে আপনার থেমে যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু আপনি থামলেন না, আপনার কাছে আমার কথার কোন গুরুত্ব নাই ! ”
আরুশ বুঝলো না সে কি উত্তর দেবে? কিছুক্ষণ চুপ থেকে দ্যূতির চোখে চোখ রেখে বলল,
“ তুমি আমাকে ভুল বুঝছো দ্যূতি! ”
“ থামুন! আমি সব বুঝি, আমি জানতাম আপনারা সকল পুরুষ মানুষ একই। আপনারা শুধু মনে করেন নারীরা আপনাদের পায়ের নিচে থাকবে আপনাদের কথা মত উঠবে বসবে। নিজেদের মতামত নারীদের উপর ঠোঁপে দেবেন! আমাদের কথার তো কোনো গুরুত্ব আপনাদের মতো পুরুষ মানুষের কাছে নেই! ”
দ্যূতি থামলো, সমুদ্রের পানে করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে আবার বলল,
“ আপনাদের বিশ্বাস করাই আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল! সবাই সমান ,আপনারা সবাই সমান! ”
দ্যূটি কথাটা বলেই আর এক মুহূর্তের জন্য সেখানে দাঁড়ালো না, আরুশের পানে একবার চেয়ে ওখান থেকে চলে গেল।আরশ নির্বাক এবং পাথরের ন্যায় ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো, তার মুখের ভাষা যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে! তার মনে হতে লাগলো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার পুরো পৃথিবী উল্টে পাল্টে গেছে……
_________________
সকাল গড়িয়ে দুপুরের পরে বিকেল হতে চলল আরশ চুপচাপ ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে।তার মন কোন কিছুই করতে চাচ্ছে না, হঠাৎ শিহাব তার পাশে এসে দাঁড়ালো। সংকুচিত গলায় বলল,
“ স্যার! ভাবিজানের কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না! রিসোর্টে নেই! কোথায় গিয়েছে কাউকে কিছু বলে যায়নি! ”
শিহাবের মুখে অমন কথা শুনে আরুশ শিহাবের দিকে তাকায়, অবিশ্বাস্য চোখে তীব্র কণ্ঠে বলে ওঠে,
“ কি বলছিস? তোর মাথা ঠিক আছে তো! দ্যূতি এখানেই আছে, ভালো করে খোঁজ! আশেপাশেই কোথাও গিয়েছে হয়তো! ”
শিহাব করুণ চোখে মাথা নাড়ায়,
“ স্যার! সত্যি বলছি, ভাবিজান কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি সব জায়গায় খুঁজেছি, কোথাও নেই! ”
আরুশ জ্বলে উঠলো। শিহাবের দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বলল,
“ খুঁজে পাচ্ছিস না বললে হবে না, দ্যূতি কোথায় আছে সেটা আমাকে জেনে বলবি, এক্ষুনি মানে এক্ষুনি! ”
আরুশের ওমন কণ্ঠ শুনে শিহাব রীতিমতো চমকে উঠলো। ঢোক গিলে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“ ওকে স্যার! ”
আরুশ চোয়াল শক্ত করে সমুদ্রের পানে তাকালো। নিজের চুল বাম হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে বিড়বিড় করে বলল,
“ কেন করো এমন দ্যূতি? আমাকে কি দুদণ্ড শান্তি দেবে না তুমি? ”
চলবে………
#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি — [১৬]
#লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী {বিয়ে প্রথম পর্ব}
[ কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌ ]🕊️
__________
__“ স্যার খবর পাওয়া গিয়েছে! ”
শিহাব দৌড়ে রুমে ঢুকলো। আরুশ চোয়াল শক্ত করে রুমের এক কোণায় থাকা সিঙ্গেল সোফায় বসে আছে। শিহাব দরজা মুখে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে কথা বলল। আরুশ শিহাবের কথা শুনতে উঠে দাঁড়ালো,এগিয়ে গেলো তড়িঘড়ি করে। আরুশ শিহাবের কাঁধে হাত রেখে তীব্র কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
__“ কোথায় আমার দ্যূতি? কোথায় রয়েছে ও? ”
আরুশের গলা পাগলের মতো লাগলো। শিহাব আরুশের সঙ্গে কথা শেষ হতেই উত্তর দিয়ে উঠলো,
__“ পাশেই একটু দূরে গিলে একটা পাহাড় রয়েছে, খোঁজ খবর নিয়ে জানা গিয়েছে,ভাবিজান ওখানেই গিয়েছেন! ”
__“ তুই সিউর তো? ”
শিহাবের দিকে হালকা ঝুঁকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল আরুশ। তার কন্ঠ ভীষণ ভারী। শিহাব আরুশের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে জানালো,
__“ হ্যাঁ! কিন্তু…..! ”
__“ কিন্তু কি? ”
শিহাব কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তার মুখে কালো মেঘের ছায়া এসে জমেছে। আরুশ শিহাবের কাঁধ শক্ত করে ধরে বলল,
__“ কি হলো বল? ”
শিহাব চোখ তুলে আরুশের চোখে চোখ রেখে বলল,
__“ পাহাড়টা বাইরের মানুষদের জন্য ভালো না! আর ভাবিজান একা…!!”
শিহাব তার কথা শেষ করতে পারলো না। আরুশ কিছু না বলেই দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। শিহাবও তার পিছনে ছুট লাগালো। দুজনে প্রায় একসঙ্গে দৌড়ে লিফটে উঠল।
__“ সেই পাহাড়ের লোকেশন আমাকে পাঠা এক্ষুনি! ”
__“ স্যার লোকেশনের কি দরকার? আমি সঙ্গে যাচ্ছি তো! ”
শিহাব হাঁপাতে হাঁপাতে বলল। আরুশ ফোন হাতে বিরক্ত মুখে তাকালো শিহাবের দিকে,
__“ না তুই যাবি না! আমি একা যাবো! দুজনই যদি চলে যাই তাহলে এখানের সবাইকে সামলাবে কে? ”
আরুশের কথা যুক্তি সংগত। সবাই একসঙ্গে হাওয়া হয়ে গিলে সবাই নানা প্রশ্ন করবে। তখন আরেক ঝামেলা হবে, কেউ একজনের থাকার দরকার আছে এখানে। তাই শিহাব আর কোনো কথা বলল না। সে চুপ চাপ নিজের ফোন থেকে স্থানটির লোকেশন আরুশের ফোনে পাঠিয়ে দিলো। লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোর এসে থামলো। দুজনে একসঙ্গে বেরিয়ে আসলো।
সন্ধ্যা হতে চলেছে। দ্যূতি যেকোনো বিপদে পরতে পারে। পাহাড়ের জায়গা, এমনিতে হিংস্র পশু দেখতে পাওয়া যায় তারউপরে শিহাব আসার সময় আরুশকে বারবার করে বলেছে,
__“ স্যার সাবধান! জায়গাটা মোটেও সুবিধার না! ওখানে বিভিন্ন হত্যা হয়েছে! মানুষ নিখোঁজ হয়েছে! আবার মানুষজনরাও ওখানকার ভালো নয়! ”
আরুশের হৃৎস্পন্দন যেন মুহূর্তেই আবারও বেড়ে গেলো। আরুশ শিহাবের দিকে মাথা নাড়ালো, সে সাবধানে থাকবে, কিন্তু ওর যাওয়ার আগে যদি দ্যূতির কিছু হয়ে যায় তাহলে?
.
লোকেশন বেশি দূরের নয়। জোরে হাঁটতেই দশ মিনিটের পথ। আরুশ সামনে পিছনে না দেখেই দৌড়াচ্ছে। এই রাস্তায় কোনো যানবাহন চলে তা দেখে বোঝা যাচ্ছে। এক মানুষের হাঁটার মতো পথ। পাহাড়ি রাস্তা উপরে উঠে যাচ্ছে। আশেপাশে ঝোপঝাড় দিয়ে ভরা। এমন অরণ্যে কাউকে তুলে নিয়ে আসলে কেউ টের পাবে না! মানুষের যাতায়াতও কম এখানে।
লোকেশনের মতে আরুশ চলে এসেছে। একটি বড়ো উঁচু টিলার মতো। সূর্য প্রায় অস্তাচলে, তার সোনালী আভা চার পাশে আরো আকর্ষণীয় করে তুলছে। এখান থেকে রাস্তা আরো সামনে চলে গিয়েছে। এখানে বসতি বলতে কিছুই নেই। হয়তো সামনে আছে, কিন্তু প্রশ্ন এখন দ্যূতিকে খুঁজে পাওয়ার, জায়গা যত বেশি সুন্দর তার পিছনে লুকিয়ে থাকে তত বেশি ভয়ংকর জিনিস। আরুশ কোনো রকম সময় নষ্ট না কে দ্যূতিকে খুঁজতে লেগে পরলো।
__“ দ্যূতি! দ্যূতি! জান! কোথায় তুমি? ”
আরুশ হাঁক ছেড়ে এগিয়ে যেতে লাগলো,
.
সূর্যের সোনালী আভা চারিদিকে ছড়িয়ে পরেছে। দ্যূতি টিলার একদম কিনারায় দাড়িয়ে আছে। দু হাত বুকের কাছে ভাঁজ করে। মুখের চাহনি অশান্তময়। চুলগুলো কোনোরকম করে হাত খোঁপা করে রেখেছে দ্যূতি। কয়টা বাজতে চলেছে তা দ্যূতি জানে না, হাত ফোন নেই,রুমে ফেলিয়ে এসেছে সে, ইচ্ছে করে! ঢাকার আর এখানের টাইমিংয়ের অনেক পার্থক্য। দ্যূতি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে সামনে তাকালো।
__“ সব পুরুষরাই একই হয়! শুধু নিজের টা বোঝে! কাউকে ভালো ভাবাই যায় না! তাদের বেশি লাই দিলে মাথা চড়ে উঠে! ”
দ্যূতি নিজের উদ্দেশ্যে বিড়বিড় করে বলল,
__“ আর যদি সেই পুরুষ মানুষ তোমাকে মাথায় চড়িয়ে আবার নিচে ফেলে দেয় তখন যে ব্যাথা পেতে হয় সেটা বেশি মারাত্মক! ”
দ্যূতি চমকে উঠলো। হঠাৎই ভারী কঠিন কন্ঠ কানে ভেসে আসতেই দ্যূতি পিছনে ফিরে তাকালো। সাক্ষাৎ আরুশ চৌধুরী তার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার দিকে রক্তাক্ত চোখে তাকিয়ে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বলল আরুশ। দ্যূতি আরুশের এমন কড়া মূর্তি আগে কখনো দেখেনি। দ্যূতি একপ্রকার ভয় পেয়ে গেলো। ছোট ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,
__“ আ…আপনি… এখানে….কি … কি… করছেন? ”
__“ কানের নিচে চড় পরলেই বুঝতে পারবা,আমি কি করছি এখানে! ”
দ্যূতি প্রশ্ন শেষ করতেই আরুশ গর্জে উঠলো। দ্যূতি ভয়ে দুই পা পিছিয়ে গেলো। দ্যূতিকে পিছিয়ে যেতে দেখে বলল আরুশ,
__“ এই বার কি খাদে পরতে চাও? ”
দ্যূতি আরুশের কথা শুনে পিছনে ফিরে তাকায় আস্তে করে। একপা পিছনে সরলেই খেল খতম! দ্যূতি সেই দৃশ্য দেখে দৌড়ে আরুশের পিছনে যেয়ে দাঁড়ালো। আরুশ রাগান্বিত চোখে দ্যূতির দিকে তাকিয়ে বলল,
__“ রাগ দেখানোর জন্য অন্য কোনো জায়গা তুমি পাওনি? এই পাহাড়ে মরতে চলে এসেছ! ”
দ্যূতি আরুশের কথার কি উত্তর দিবে ভেবে পেলো না। সে নিজের মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
__“ আপনার না আসা পর্যন্ত তো সবই ঠিক ছিল, আপনি এসেই তো সব গন্ডগোল বাঁধিয়ে ফেলেছেন! ”
__“ মনে মনে আমাকে দোষ দেওয়া হয়ে গিলে এখন বাড়ি ফেরা যায়? ”
দ্যূতি চমকে উঠলো। আরুশের দিকে সন্নিহিত চোখে তাকালো। আরুশের সেই দিকে তাকিয়ে বলল,
__“ কি হলো তোমার? ওমন কাউয়ার মতো মুখ করে আছো কেন? ”
__“ আপনি কি ব্ল্যাক ম্যাজিক পারেন নাকি? ”
দ্যূতি আরুশের কাছ থেকে একটু দূরে সরে গেলো। আরুশ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
__“ মানে? ”
__“ আমি শুনেছি যারা ব্ল্যাক ম্যাজিক করে তারা মনের কথাও পড়তে পারে! ”
আরুশ দ্যূতির দিকে দু কদম এগিয়ে গেলো। দ্যূতি আরুশকে এগিয়ে আসতে দেখে ছুট লাগাতে যাবে তখনই আরুশ দ্যূতির কোমর জড়িয়ে ধরে। একদম শক্ত করে। দ্যূতি বিস্ফারিত দৃষ্টিতে আরুশের দিকে তাকালো। আরুশ দ্যূতির চোখে চোখ রেখে ঘোর লাগানো কন্ঠে বলল,
__“ তোমার মন পড়ার জন্য ব্ল্যাক ম্যাজিক শেখার কোনো দরকার নেই, তোমার চোখই যথেষ্ট! ”
দ্যূতি আরুশের কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য বরফের ন্যায় জমে গেলো। আরুশের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল। আরুশ দ্যূতির চোখের দিকে তাকিয়ে হাসল। দ্যূতির সামনে এসে পরা চুল গুলো সুন্দর করে কানের কাছে গুঁজে দিয়ে বলল,
__“ অনেক তাকিয়েছ! এখন রিসোর্টে চলো! ওখানে যেয়ে হিসেবে নিকাশ রয়েছে সে গুলো সামনা সামনি বসে মিটাতে হবে! ”
দ্যূতির ধ্যান ভাঙল। আরুশের কথা ঘাবড়ে যেয়ে দ্যূতি বলল,
__“ কিসের হিসেবে নিকাশ? ”
__“ রিসোর্টে ফিরলে জানতে পারবা! ”
বলেই আরুশ দ্যূতির হাত ভালো করে ধরে ফিরে যাওয়ার পথ ধরল। দ্যূতি আর কোনো কথা না বলে আরুশের সঙ্গে এগিয়ে গেলো। সূর্য ডুবে গিয়েছে। চারদিকটা অন্ধকার। আরুশ নিজের ফোনের ফ্যাশ অন করে নিয়েছে। দ্যূতি আরুশের বাহু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আরুশের তালে তাল মিলিয়ে হাঁটছে। অন্ধকার হয়ে আসার পর থেকেই দ্যূতির মনে কেমন কূ ডাকছে। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চারি পাশে তাকাচ্ছে। অন্ধকারে সবই ঘোলাটে থেকছে দ্যূতির কাছে।
__“ ভয় পেয়েও না, আমরা সাবধানে ফিরবো! ”
আরুশ দ্যূতির মুখের দিকে তাকিয়ে বলল। দ্যূতি আরুশের দিকে চমকে তাকালো। সত্যিই লোকটা তার চোখ মুখ দেখলেই সব বুঝতে পারে। আরুশের দিকে তাকিয়ে স্লান হাসল দ্যূতি।
__“ ওখানেই থেমে যা! ”
হঠাৎ পিছন থেকে ভারী কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। দ্যূতি সঙ্গে সঙ্গে আরুশের হাত চেপে ধরলো। আরুশের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো। আরুশ দ্যূতির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো,“ চিন্তা করো না কিচ্ছু হবে না! ”
দুজনে একসঙ্গে পিছনে ফিরে তাকালো। অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে মশার হাতে দাঁড়িয়ে আছে কয়েক বেটে লোক। বেটে হলেও তাদের গায়ের জোর যে কতো খানিক তা তাদের শরীর দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এরা এখানের আদি বাসী। আরুশ দেখতেই বুঝে গিয়েছে। ছোট ছোট, মাথায় কাপড় বাঁধা। হাতে মশাল, এগুলো এরাই ব্যবহার করে। শিহাবের এদের ব্যপারেই বার বার সাবধান করে দিচ্ছিল সেই সময়। আরুশ স্বাভাবিক ভাবে দ্যূতিকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিলো। আরুশ টের পেলো সে ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে।
লোকগুলো এগিয়ে আসলো ওদের দিকে। দ্যূতি তাদের এগিয়ে আসতে দেখে ফিসফিস করে বলল,
__“ আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি কেন? দৌড়ালে পারি না? ”
আরুশ দৃষ্টিতে সামনে স্থির রেখে গলার স্বর একদম খাদে নামিয়ে বলল,
__“ না পারি না! এখান থেকে দৌড়ালে ভাববে আমরা কোনো অপরাধী, পরে ধরা পরলে সমস্যা আর দৌড়াতে গেলে এই পাহাড়ি রাস্তা উষ্ঠা খেতেই হবে, ধরা আমরা এমনিতেই পরবো! ”
__“ তাহলে এখন?”
__“ যেমন দাঁড়িয়ে আছে তেমনই থাকো! ”
লোক গুলো ততক্ষণে এগিয়ে একদম সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের চোখ দেখলেই পরাণ থেকে জল শুকিয়ে যায় অর্ধেক। তাদের মধ্যে থাকা নেতা গোছের লোকটা বলে,
__“ কি করতে এসেছিলিস ইহানে? ”
লোকটা কি বোঝাতে চাইল ,তা দ্যূতি বুঝলো। আরুশ লোকটার উদ্দেশ্যে বলল,
__“ ঘুরতে এসেছি! ”
__“ তাই বুঝি! ঘুরতে এসেছো নাকি বাড়ির থেকে পালিয়ে অন্য কিছু করতে এসেছো? ”
এতোক্ষণে দ্যূতি বুঝতে পারল লোকটার কথার অর্থ। বুঝতেই দ্যূতির মাথা গরম হয়ে উঠলো। নিজে থেকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরুশ ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে। আর চোখের ইশারা করে ওকে কিছু বলতে বারণ করে। দ্যূতি থেমে গেলো। আরশ নম্র গলায় বলল,
__“ আপনারা যা ভাবছেন তেমন কিছু না! ”
লোকটা আরুশের একদম কাছে এসে দাঁড়ালো। দুজনের মাঝের দূরত্ব একহাতও হবে না। দ্যূতি সেই দৃশ্য দেখে মনে মনে ভাবল,
__“ ইশ্! আমি গার্লফ্রেন্ড হয়েও এতোটা কাছে যাইনি আর এই লোকটা! ”
__“ আমরা যা ভাবছি সেটা ঠিক কিনা তা এক্ষুনি জানতে পারবো! ”
দ্যূতির দিকে তাকিয়ে বলল লোক। দ্যূতি আরুশের দিকে ভয় তাকালো। লোকটার ওই কথা বলতেই আরুশ দ্যূতিরকে নিজের পিছনে সরিয়ে দিলো।
__“ তোদের মাঝের সম্পর্ক কি? ”
আরুশ থেমে গেলো কিছুক্ষণের জন্য। তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
__“ আমি ওর স্বামী! ”
দ্যূতি সঙ্গে সঙ্গে সরে দাঁড়ালো। আরুশের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। আরুশ সেই দিকে বিন্দুমাত্র মাত্র পাত্তা দিল না। লোকটা দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। লোকটা মুচকি হেসে বলল,
__“ সত্যি বলছিস? ”
__“ হুঁ! সত্যি বলছি! আমরা নতুন বিয়ে করেছি! হানিমুনে এখানে এসেছি! ”
মিথ্যা কথাগুলো বলতে যেয়ে আরুশের বিন্দু মাত্র গলা কাঁপল না। দ্যূতি এই দিকে বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে চলে গিয়েছে।
__“ তোদের মুখের কথায় তো আমরা বিশ্বাস করবো না! আমরা চোখে দেখে বিশ্বাস করি! ”
লোকটা কথা বলে হেসে উঠলো। আরুশের গলা শুকিয়ে আসতে শুরু করলো। দ্যূতির দিকে একবার ফিরে বলল,
__“ কি করলে বিশ্বাস করবেন? ”
লোকটা হাসতে হাসতে আরুশের দিকে ঝুঁকে এসে বলল,
__“ তোদের বিয়া দেখি! এই তোরা এদের নিয়ে আয়! আর ইমাম সাহেব কে খবর দে! আজ তো বিয়া হবে এখানে! ”
লোকটা কথাটা বলে চলে যেতে শুরু করলেন। লোকটার আদেশ মতো বাকি যারা ছিল তারা আর আরুশকে বন্দি করলো। দ্যূতি আবারও দৌড়ে এসে আরুশের হাত ধরল। ওর দিকে জিজ্ঞাসু আর করুন দৃষ্টিতে তাকালো,
.
দ্যূতি আর আরুশকে একটি ঝুপড়ির মতো ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। ঝুপড়ির মধ্যে তেমন কিছুই নেই। দ্যূতি মাটিতে বসে হাত ছড়িয়ে কান্না কাটি করছে। আরুশ ঝুপড়ির এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। দ্যূতিকে দেখছে মনোযোগ দিয়ে। দ্যূতি অশ্রু নয়নে আরুশের পানে তাকিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
__“ কি দরকার ছিল ওতো আগ বাড়িয়ে কথা বলার? ”
দ্যূতির প্রশ্নে আরুশের ভ্রু কুঁচকে গেলো। অবাক দৃষ্টিতে দ্যূতির দিকে তাকিয়ে বলল,
__“ আমি আবার আগ বাড়িয়ে কি বললাম? ”
দ্যূতি উঠে দাঁড়ালো। লাল চোখে আরুশের দিকে এগিয়ে গেল।
__“ আগ বাড়িয়ে আপনি কথা বলেননি? তাহলে কেন বলতে হলো আমরা বিবাহিত? ”
আরুশ দ্যূতির চোখে চোখ রেখে উত্তর দিলো,
__“ মিথ্যা কথাটা না বলে যদি সত্যি কথা বলতাম তাহলে মারতো এবং মেরে তারপর যদি বেঁচে থাকতাম তাহলে তোমার আর আমার বিয়ে দিয়েই ছাড়তো! ”
__“ কিন্তু!”
দ্যূতি কান্নায় ভেঙে পরল। আরুশ দ্যূতির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,
__“ সমস্যা কি! প্রেমিকের সাথেই তো বিয়ে হচ্ছে এমন তো আর না যে তোমার চির শত্রুর সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে? ”
দ্যূতি আরুশের কথা শুনে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বলল,
__“ আপনি আমার সাত জন্মের শত্রু! ”
চলবে…