জোৎস্না রাতে তুমি আর আমি পর্ব-১৭+১৮

0
1

#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি 🫧🕊️
#পর্ব__১৭[বিয়ের দ্বিতীয় পর্ব]
#লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী
[কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ❌]
__________________
.
__“ আমি বিয়ে করবো না? ”

আরুশের চোখে চোখ রেখে বলল দ্যূতি। দ্যূতির কথায় আরুশের কোনো ভাবান্তর হলো না। আরুশ দ্যূতির চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। দ্যূতি যেন আরুশের কাছ থেকে একটা না একটা প্রতিক্রিয়া আশা করছিল, কিন্তু তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া না আসায় বেশ হতাশ হলো। দ্যূতি আরুশের বক্ষে ধাক্কা মেরে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

__“ কিছু বলছেন না কেন? ”

আরুশ বুকে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে গলায় খাঁকারি দিয়ে বলল,

__“ আর কিছুক্ষণ পর তারা আসবেন, তোমাকে আর আমাকে এই ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাবেন ইমাম সাহেবের সামনে, সেখানে নিকাহ্ এর সব ব্যবস্থা করা থাকবে, সাথে থাকবে কঠোর পাহারা, তুমি চাইলেও পালাতে পারবে না! তাই এই বিষয়ে যুক্তি তর্ক করে শুধু শুধু সময় নষ্ট করার মতো ফালতু এনার্জি আমার নেই! ”

দ্যূতির কান্না পেলো। লোকটা কোনো কিছুতে যদি এক বিন্দু সিরিয়াস হয়? দ্যূতি আরুশের কথার প্রতিবাদ করার জায়গাই মাটিতে বসে পড়ল। আরুশ বেশ অবাক হলো। সে গোল গোল চোখে দ্যূতির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

__“ ওই! নিচে বসলে কেন আবার? ঠান্ডা লাগবে তো? ”

দ্যূতি আরুশের দিকে মুখ ফুলিয়ে তাকায়। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আবারও বলে,

__“ রাখেন আপনার ঠান্ডা! এখানে আমি মিস্ থেকে মিসেস হয়ে যাচ্ছি,উনি এসেছেন ঠান্ডা নিয়ে ভাবতে! ”

দ্যূতি কথাটা শেষ করেই হাত পা ছড়িয়ে কাঁদার ভান করতে লাগলো। আরুশ দ্যূতির অভিনয় বুঝতে পেরে হাঁটু গেঁড়ে মাটিতে বসে দ্যূতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

__“ ভয় লাগছে? ”

আরুশের গলার স্বরে একটা স্বস্তি লুকিয়ে ছিল। দ্যূতির কানে প্রশ্নটা আসতেই ওর দিকে তাকায়। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানায়! আরুশ মুচকি হেসে বলে,

__“ কিসের ভয়? ”

দ্যূতি নিজের হাতের দিকে তাকায়। মনে মনে ভাবে,

__“ লোকটা এতো নিশ্চিত হয়ে কিভাবে কথা বলে? ”

আরুশের হাতের স্পর্শ মুখে পেতেই দ্যূতির চটকা ভেঙ্গে গেল। আরুশের দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে উত্তর দেয়,

__“ মাআআআ! ”

বলেই কান্নায় ভেঙে পরে দ্যূতি। আরুশ বুঝতে পারে পুরো ব্যাপারটা। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,

__“ চিন্তা করো না! তোমার মাকে আমি বুঝিয়ে দিবো! আমার উপরে বিশ্বাস রাখো…! ”

দ্যূতি কান্না থামিয়ে আরুশের দিকে তাকায়। অশ্রু নয়নে বিস্ময়, বিশ্বাস ফুটে উঠল। আরুশের মাত্র দুটি বাক্য দ্যূতির ভয় মুহূর্তে শীতল করে দিলো। আরুশের চোখের চাহনি, দ্যূতির মনে ওর প্রতি নির্ভরতা করে তুলছে, না চাইতেও বিশ্বাস করতে বাধ্য করছে,
.
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবী পথে, সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন….

হঠাৎ করে থেমে গেলো আবৃত্তি। মনোমুগ্ধ হয়ে চোখ বুঁজে আবৃত্তি শুনছিল আদ্র আর শুভ্র। পিউ হঠাৎ থেমে যাওয়ায় দুজনের ধ্যান ভঙ্গ হলো। পিউ চুপ করে ব্যালকনির বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্র শুভ্র দু’জনই দুজনের মুখ চাওয়া চাহি করলে একবার,পিউ আগে কখনো আবৃত্তি করতে করতে থেমে যায়নি। ওকে ওমন চুপ করে চিন্তিত হয়েও থাকতে দেখেনি আদ্র। শুভ্র আদ্রর হাত ধরে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

__“ বাবা! মাম্মা.. থেমে.. গেলো কেন? ”

শুভ্র তার বাচ্চা গলায় আদো আদো সুরে বলল। আদ্র ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

__“ মাম্মার এখন আর আবৃত্তি করতে ভালো লাগছে না তাই থেমে গিয়েছে! তুমি একটা কাজ করো বাইরে যেয়ে খেলো! আমি আসছি! ”

বলে ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসলো। শুভ্র মাথা নাড়িয়ে আদ্রর গালে কিস করে পিউ এর দিকে এগিয়ে গেলো। পিউ তখনও বাইরের দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ গালে কারো হাতের স্পর্শে পেয়ে সামনে ফিরে তাকালো। ছেলের মুখ দেখতেই পিউ এর মুখে আপনাআপনি হাসি ফুটে উঠল। শুভ্র একগাল হাসি নিয়ে মায়ের গালে কিস করে বলল,

__“ মাম্মা! আমি বাইলে..যাচি..খিলতে! ”

পিউও ছেলের গালে আদর করে দিয়ে বিদায় জানালো। শুভ্র দৌড়ে বাইরে চলে গেলো। পিউ ছেলের যাওয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে আদ্রর দিকে রাখলো। আদ্র চোখ ছোট ছোট করে ওরই দিকে তাকিয়ে আছে। পিউ উঠে যেয়ে আদ্রর পাশে বসল। ওর কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। আদ্র পিউকে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে নিয়ে বলল,

__“ কি ভাবছ? ”

__“ কিছু না! হঠাৎ ভালো লাগছে না! ”

আদ্র সঙ্গে সঙ্গে পিউ এর কপালে হাত রেখে দেখলো। শরীর বরফের মতো ঠান্ডা। জ্বর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। পিউ নিজ কপাল থেকে আদ্রর হাত সরিয়ে ওর দিকে তাকালো। হেসে বলল,

__“ ওলে আমার প্রিয় হাজবেন্ড! এইটুকুতেই ভয় পেয়ে গেলেন? ”

আদ্র ওর দিকে নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

__“ তোমার শরীরে ফুলের টোকা পরলেও আমি ঘাবড়ে যাই আর তোমার ভালো লাগে না,এই কথা শুনলে কিভাবে শান্ত থাকবো শুনি! ”

পিউ ঠোঁট কামড়ে হাসলো। আদ্র আর কিছু না বলে পিউ এর কপালে আলতো করে চুমু দিল। পিউ সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

__“ বসো! আমি দুই কাপ চা করে নিয়ে আসি! একসঙ্গে বসে খাবো! ”

বলেই পিউ যাবে তার আগেই আদ্র ওর শাড়ির আঁচল টেনে ধরে। পিউ সঙ্গে সঙ্গে কাঁধে হাত দিয়ে পিছনে সরে এসে দাঁড়ালো। আচমকা আদ্রর এমন কর্মে পিউ হকচকিয়ে উঠলো। পিউ আদ্রর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আদ্র উঠে দাঁড়িয়ে পিউ এর দিকে নরম তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

__“ আজকের চা করার পরম সৌভাগ্য সুযোগটা আমাকে দাও! আমি আমার বাড়ির রাজরানীর জন্য এক কাপ চা করে আনি! ”

আদ্র হাস্কি স্বরে কথা বলল। পিউ রাজি না হয়ে উপায় পেলো না। সে হাসতে হাসতে মাথা নাড়িয়ে অনুমতি প্রদান করল। আদ্র পিউ এর গালে আদর করে চা বানানোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো। পিউ ব্যালকনির রেলিংয়ের উপর এসে হাত রাখলো। বাইরের দিকে তাকালো,আবারও তার চোখে জমতে লাগলো বিষন্নতা!
.
আরুশ আর দ্যূতিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিয়ের জায়গায়। দ্যূতি আরুশের হাত শক্ত করে ধরে আছে। মনে মনে খুব করে চাচ্ছে,কোনো ভাবে যেন এই বিয়ের হাত থেকে তারা রক্ষা পায়! কোনো ভাবে যেন তারা পালানোর পথ খুঁজে পায় এখান থেকে। কিন্তু দ্যূতির সব ইচ্ছাতে জল পরে গেলো,সামনে বিয়ের আসর দেখা মাত্রই। গোল করে টেবিল সাজানো। তার একপাশে ইমাম সাহেব বসে আছেন। এবং তাকে গিলে দাঁড়িয়ে আছেন বাকি আদিবাসীরা। দ্যূতির মন সঙ্গে সঙ্গে ধপ করে উঠলো। আরুশের দিকে রক্তশূন্য চোখে তাকিয়ে বলল,

__“ চলেন পালিয়ে যাই! ”

আরুশ দ্যূতির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। না সূচক মাথা নাড়িয়ে বলল,

__“ আর পথ নেই! ”

সত্যিই আর পথ নেই। এখান থেকে পালাতে চাইলে এদের হাতে খুন হতে হবে! এরা কতোটা ভয়ংকর তা দ্যূতিও জানে! তাদের পিছনে যে দুইজন তাদের পাহারা দিয়ে এই পর্যন্ত নিয়ে এসেছে, তাদের হাতে ধার দেওয়া ছুড়ি! পালানোর চেষ্টা করলেই বসিয়ে দিবে। আর কোনো অপশন নেই। দুজনই চুপচাপ চেয়ারে যেয়ে বসল।

__“ নেন! কনে আর বর দুজনই এসে বসে গিয়েছে! ইমাম সাহেব আপনি বিয়ে পড়ান! ”

নেতা গোছের লোক সামনে এগিয়ে এসে বলল। ইমাম সাহেবের মুখের চাহনি ভীতুস্থ হয়ে রয়েছে। তিনি নিজেও যে লোকটাকে ভয় পাচ্ছেন সেটা তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে। ইমাম সাহেব এই আদি বাসীদের লোক নন। ইমাম সাহেব কথা না বাড়িয়ে বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।

তিনি চোখ বুজে মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলেন। দ্যূতি ততক্ষণে ঘামে পুরো ভিজে গিয়েছে। সে এক নজরে আরুশের দিকে চাইলো। আরুশ কোনো চিন্তা ছাড়া বসে আছে। তার কপালে চিন্তার একটা দাগও নেয়। দ্যূতির গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো।

ইমাম সাহেব চোখ খুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল,

__“ দুজন সাক্ষী কে হবে? ”

__“ এই তো দুজন সাক্ষী! এরা হবে এই বিয়ের প্রত্যক্ষ সাক্ষী! ”

এই কথা বলে নিজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তারই মতো দু’জন লোককে দেখিয়ে দিলো। ইমাম সাহেব আরুশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

__“ দেনমোহর কতো নির্ধারিত করবো? ”

আরুশ এতোক্ষণে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো। সে ইমাম সাহেবর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবতে লাগলো। নেতা গোছের লোকটা তখন হাত কচলাতে কচলাতে বলে উঠলো,

__“ প্রথম বার বিয়ে করার সময় কতো ঠিক করেছিলিস? ”

আরুশ আর দ্যূতি দু’জনে একসঙ্গে লোকটার দিকে তাকালো। দ্যূতি ভীতু চোখে আরুশের দিকে তাকালো। আরুশের চোখ মুখ তখনো অবিচল। কোনো ভয় তার মধ্যে দেখা গেলো না। দ্যূতি এবার বেশ অবাক হলো! আরুশের গলা বিন্দু মাত্র না কেঁপে বলল,

__“ আপনার কতো মনে হয়? ”

লোকটা আরুশের দিকে তাকিয়ে ব্যাঙ্গ করে হাসল। তারপর বলল,

__“ দেখে তো বড়ো লোকই মনে হয়! ত্রিশ পঞ্চাশ তো হবেই! ”

আরুশ বাঁকা হাসলো! ইমাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল,

__“ পঞ্চাশ লাখ ধরেন! ”

দ্যূতির চোখ যেন বেরিয়ে আসতে চাইলো। ভ্রু কুঁচকে আরুশের দিকে তাকিয়ে ওর দিকে হালকা ঝুঁকে গিয়ে বলল,

__“ আপনি কি পাগল? পঞ্চাশ লাখ কেন? ”

আরুশ মুচকি হেসে বলল,

__“ আমার একমাত্র বউ তার জন্য তো এটাও কম! সামনে যখন ভালোভাবে নিকাহ্ হবে তখন দেনমোহর আরো বেশি থাকবে! ”

আরুশের কথা শুনে দ্যূতি গাল ফুলিয়ে বলল,

__“ আবার বিয়ে করার শখ আপনার মাঝে আছে? ”
আরুশ কোনো উত্তর দিলো না। নির্বাক হেসে সামনে তাকালো। ততক্ষণে ইমাম সাহেব দেনমোহর পঞ্চাশ লক্ষ টাকা বলে সাক্ষী দুজনের নাম নিয়ে বললেন,

__“ পাত্র আর পাত্রীর নাম কী? ”

আরুশ আর দ্যূতি দুজনে পর পর নিজের নাম বলে একে অপরের দিকে তাকালো। ইমাম সাহেব দু’জনের নাম নিয়ে বললেন,

__“ দেবাদৃতা দ্যূতি,আপনি কি আরুশ চৌধুরীকে নির্ধারিত পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দেনমোহরে নিকাহ্ করতে রাজি আছেন? ”

ইমাম সাহেবের কথা যেন দ্যূতির কানেই গেলো না। সে চুপ করে সামনের দিকে চেয়ে আছে। হঠাৎ নিজের হাঁটুতে কারোর হাতের চাপ অনুভব করতেই দ্যূতি চমকে আরুশের দিকে তাকালো। আরুশ দ্যূতির দিকে তাকিয়ে ইশারা করল। দ্যূতি তাড়াতাড়ি করে ইমাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল,

__“ আমি রাজি! ”

__“ তাহলে তিনবার কবুল বলুন! ”

দ্যূতি আবার থেমে গেলো। সে আরুশের হাত শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে কাঁপা কন্ঠে উচ্চারণ করল,

__“ কবুল!… কবুল! ….কবুল! ”

তিনবার কবুল বলতেই দ্যূতি হাঁপ ছেড়ে চোখ খোলে সামনে তাকালো। সবকিছু কেমন যেনো ঘোলাটে লাগতে শুরু করেছে ওর কাছে!

ইমাম সাহেব আরুশের কাছে জিজ্ঞেস করল। আরুশ দ্যূতির দিকে তাকিয়ে মুখে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলল,

__“ কবুল কবুল কবুল! ”

সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে আনন্দ আর উল্লাসের ধ্বনি ছড়িয়ে পরতে শুরু করল। ইমাম সাহেব দোয়া পড়তে বললেন সবাইকে। কিছুক্ষণের জন্য সবাই আবার চুপ করে গেলেন। ইমাম সাহেব দোয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি তাড়াহুড়ো করে ওই লোকটার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। দ্যূতিও উঠে দাঁড়ালো। আরুশও উঠে দাঁড়ালো। দ্যূতি নিজেকে সামলাতে না পেরে পরে যাচ্ছিল এমন সময় আরুশ দ্যূতিকে সামলিয়ে নেই। দ্যূতি সেই দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি করে সরে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

__“ খবরদার আমাকে ধরবেন না! ”

__“ কেন? এখন তো আমরা স্বামী-স্ত্রী! ”

__“ আহা! স্বামী স্ত্রী, জানেন না মোহর না দিয়ে বউয়ের কাছে আসা উচিত নয়! ”

আরুশের মুখ গোমড়া হয়ে উঠলো। দ্যূতির দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

__“ মোহর তো এখন দিতে পারবো না! সেটা বাসায় যেয়ে দেওয়া যাবে! তুমি ঢাকায় চলো, সব তোমার হাতে তুলে দিবো! ”

__“ তাহলে তো বিয়েটাও ঢাকায় যেয়ে করলেই পারতেন! ”

দ্যূতি কড়া চোখে তাকিয়ে বলল। আরুশ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,

__“ আবার এই নিয়ে তর্ক করছো? তুমি এখানের পরিস্থিতি এখনো বুঝতে পারোনি! কেন এতোটা অবুঝ হচ্ছ? ”

দ্যূতি কোনো উত্তর দিলো না। আরুশ দ্যূতির দিকে তাকিয়ে নিজের প্যান্টের পকেট ভালো করে হাঁতড়ে একটা একশো টাকার নোট বের করে দ্যূতির হাতে সঁপে দিলো। দ্যূতি অবাক হয়ে আরুশের দিকে তাকালো। আরুশ মুচকি হেসে বলল,

__“ মানিব্যাগ রিসোর্টে ফেলে এসেছি! এখন পকেটে একশো টাকায় আছে এইটা দিই তোমাকে চাচ্ছি, বাকি চল্লিশ হাজার রিসোর্টে ফিরে তোমার হাতে তুলে দিবো আর বাকি….”

আরুশ তার কথা আর শেষ করতে পারল না। দ্যূতি তার মুখে হাত রেখে বলল,

__“ থাক! এই একশো টাকাতে হবে বাকি, ৪৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা আপনি ঢাকায় যেয়ে দিয়েন! ”

আরুশ বেশ অবাক হলো এমন এক খানা মুখ করে দ্যূতির দিকে তাকালো, ভ্রু জোড়া কুঁচকে একটু ঝুঁকে এসে বলল,

__“ বাহ্! হিসেব দেখছি ভালোই কষো! ”

দ্যূতি আরুশের বক্তব্য শুনে চোখজোড়া ছোট করে তাকালো কোমরে হাত রেখে প্রতিবাদ করে বলে,

__“ আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমি কোন বিষয়ের ছাত্রী! ”

__“ ভুলেনি পুঁচকি, খুব ভালো করে মনে আছে তুমি কোন বিষয়ের ছাত্রী! যতটা ভালো এই টাকার হিসাব তুমি রাখলে ওতো সুন্দর করেই আমার মনের ভালোবাসার হিসেবটাও রেখো! ”

দ্যূতি রেগে মেগে উঠলো। আরুশের দিকে আঙুল তাক করে কিছু বলতে যাবে তার আগে দু’জন পুরুষ আর একজন মহিলা এসে দাঁড়ালো তাদের কাছে। তাদের নিজেস্ব ভাষায় কিছু বলে আরুশ আর দ্যূতির হাত ধরে কোথায় যেন নিয়ে যায়। দ্যূতি ভীতু চোখে আরুশের দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিগ্গেস করে। আরুশ দ্যূতির ইশারা বুঝতে পেরে, ইশারা করেই শান্ত থাকতে বলে।
.
__“ স্যার এখনো আসছে না কেন? ”

শিহাব আর মিলি দু’জনে ক্যাফেতে বসে আছে। দুজনের মুখই টেনশনে ভারী হয়ে গেছে। দুজনের কপালেই চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট। শিহাব কপালে হাত দিয়ে মিলির উদ্দেশ্যে চিন্তিত স্বরে প্রশ্নঃ করল। মিলি উঠে এসে শিহাবের পাশে বসে ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলল,

__“ তুমি চিন্তা করো না! এসে যাবে! তুমি কল করতে থাকো! ”

শিহাব কপাল থেকে হাত নামিয়ে মিলির দিকে অস্পষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

__“ ট্রাই তো কখন থেকেই করছি কিন্তু স্যারের ফোনে কল ঢুকছেই না! বারংবার সংযোগের বাইরে দেখাচ্ছে! ”

__“ পাহাড় জঙ্গল দুটোই ওখানে রয়েছে,সেই জন্য হয়তো নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না! ”

__“ তা নয় বুঝলাম, কিন্তু এতো দেরি হচ্ছে কেন আসতে! ”

উত্তেজিত হয়ে উঠল শিহাব।মিলি ওকে শান্ত করতে করতে বলল,

__“ একটা কাজ করি! আমরা ওদের খুঁজতে ওখানে যাই! ”

মিলির কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে শিহাবের চোখ চকচক করে উঠলো। মিলির দিকে তাকিয়ে হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে মাথায় আদর করে বলল,

__“ আই লাভ ইউ বাবু! ”

মিলি শিহাবের এমন কান্ড দেখে মনে মনে ভাবল,

__“ এতে আবার আই লাভ ইউ বলার কি আছে! আমি তো কোমানসেন্স ইউজ করেছি…..!”
_____________

দুজনকে এবার আর সেই ঝুপড়িতে রাখল না। দুজনকে একটা সুন্দর ঘরে এনে দাঁড় করেছে। এটা বাঁশ দিয়ে তৈরি ঘর। এখানে জীবন যাপন করার মতো সব কিছু আছে। খাট রয়েছে। বসার জন্য বেতের চেয়ার আছে, ছোট আয়না আছে, জামা কাপড় রাখার তাক রয়েছে। তিনজনই ওদের ঘরে রেখে বাইরে চলে গেলো। ওদের যেতেই আরুশ গুটি গুটি পায়ে খাটে গাঁ হেলিয়ে বসলো। দ্যূতি ঘরের মাঝে দাঁড়িয়ে পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে দেখছিল। আরুশ সেই দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

__“ এখানে সারা জীবন থেকে যেতে চাইলে বলো, এক্ষুনি ব্যবস্থা করবো! ”

দ্যূতি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কাটলো। আরুশের দিকে এগিয়ে এসে মুখ ফুলিয়ে বলল,

__“ থামুন এবার! অনেক হয়েছে! জীবনে এমন বিয়ে কারো দেখিনি! জিন্স আর কুর্তিতে যে বিয়ে করতে হবে স্বপ্নেও ভাবেনি, শুধু মাত্র আপনার কারণে, আপনার কারণে আমার জীবনটাই তেজপাতা হয়ে গেলো! ”

দ্যূতি কথাগুলো বলতে বলতে মুখ একদম চুপসে গেলো। সেই দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হেসে আরুশ বলল,

__“ আমি তো সব সময় বলি, তুমি স্পেশাল তাই তাই তোমার সাথে সবই স্পেশাল হয়! তোমার কাজও স্পেশাল হয় নাহলে কেউ রাগারাগি করে এমন ভূতুরে জঙ্গলে আসে, এতো সুন্দর সুন্দর জায়গা থাকতে?

চলবে……

#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি
#পর্ব__১৮
লেখনীতে~#রুদ্রিকা_বেদী
__[কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ]__
.
__“ মাতো আমার মুখই দেখবে না! যখন এইসব বিষয়ে জানবে! ”

দ্যূতি খাটের উপর জড়সড় হয়ে বসে আছে। আরুশ তারই পাশে শুইয়ে ছিলো। হঠাৎ দ্যূতির হালকা করুণ স্বর শুনে সে দ্যূতির পানেই চাইলো। চোখ মুখ কুঁচকে বলল,

__“ বাসর ঘরে শ্বাশুড়ি মাকে আবার মনে করছো কেন? ”

দ্যূতি জ্বলজ্বল চোখে আরুশের দিকে তাকালো। সেই দিকে কিছু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। আরুশ বুঝলো সময়টা মোটেও মজার করার নয়। আরুশ উঠে আধশোয়া হয়ে বসল। দ্যূতির হাত ধরে কাছে টেনে নিলো। দ্যূতি আরুশের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল। আরুশের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত স্বরে বলল,

__“ কি করছেন?! ”

আরুশ দ্যূতির প্রশ্নকে একদম পাত্তা দিলো না। দ্যূতির শরীর নিজের বাহুতে বন্দি করে ওর দ্যূতির মাথা নিজের বুকের উপর ঠেকিয়ে বলল,

__“ শোনো, টেনশন করাটা তোমার বদ অভ্যাসের মধ্যে একটা! আন্টি রাগ করবে কেন শুনি? আমরা যে পরিস্থিতি পরেছিলাম তার বিবরণ শুনলেই আন্টি বুঝবেন, কেন বিয়ে করতে হলো! ”

দ্যূতি আরুশকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। দ্যূতির খুব করে ইচ্ছে করছে এই মানুষের মাঝে সমাধি নিতে, হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে! এই অদ্ভুত দুনিয়ার থেকে, এই মানুষের মনে নিজেকে লুকিয়ে নিলে আর কেউ তার উপর প্রশ্ন করবে না, কেউ আঙ্গুল তুলবে না!

__“ আপনি আমার মাকে চেনেন না! তিনি আমাদের কারো কথাই শুনবে না…. ”

দ্যূতি আরুশের শার্ট খামচে ধরল। আরুশ বিষয়টি বুঝতে পারছে। দ্যূতির ভয় পাওয়াটাও তার জন্য আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে, আরুশ সোজা হয়ে বসল। দ্যূতির ক্লান্ত মুখে তুলে চোখে চোখ রাখলো আরুশ। হাস্কি স্বরে বলে উঠলো,

__“ আমি তোমার মাকে পরে সময় করে ভালো ভাবে চিনে নিবো, কিন্তু আজকে যদি চিনতে যাই তাহলে যে সময়টা চলে যাবে তা আর কখনো ফিরবে না,”

__“ মানে? ” দ্যূতি ক্লান্ত চোখে জিজ্ঞেস করল।

আরুশ মুচকি হেসে দ্যূতির কপালে আলতো করে চুম্বন করে ফের চোখে চোখ রেখে বলল,

__“ আজ আমাদের বাসর রাত, জীবনে এই বাসর রাত কখনো আর ফিরে আসবে না নূর! আজকে নয় এই রাতটাকে উপভোগ করি! প্লীজ! ”

দ্যূতি বাচ্চাদের মতো ওর দিকে তাকিয়ে রইল। কোনো উত্তর দিলো না। আরুশ দ্যূতির ওষ্ঠধরের দিকে আস্তে আস্তে ঝুঁকে আসলো। দ্যূতির ঠোঁটে কাঁপছে, আরুশের ঠোঁট দ্যূতির ঠোঁটে লাগতে যাবে তখন দ্যূতি আরুশকে আটকিয়ে জিজ্ঞেস করল,

__“ আপনি কী করতে চাচ্ছেন? ”

আরুশ হালকা হেসে,নজর দ্যূতির ঠোঁটের উপর রেখেই বলল,

__“ বাসর ঘরে স্বামী স্ত্রী যা করে তাই করতে চাচ্ছি! ”

__“ কিন্তু …..? ” দ্যূতি প্রতিবাদ করতে যাবে তার আগেই আরুশ দ্যূতির ঠোঁটের সঙ্গে নিজের ঠোঁট মিশিয়ে নিলো,

দ্যূতি আরুশকে বাঁধা দিতে চেয়েও দিলো না, আরুশ চুল খামচে ধরে সে। দুজনই প্রেমের জোয়ারে ভাসতে শুরু করেছে, তারা এখন কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছে না। তারা ভালোবাসায় ভিজছে, দুজনের গাঢ় ঘন গরম নিঃশ্বাস,দুজনকে আরো বেশি একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট করছে… বাইরে জোৎস্নায় পুরো পরিবেশ রাঙিয়ে যাচ্ছে আর ভিতরে দুজন মানুষের মিলন দুজনের মনকে রাঙিয়ে দিচ্ছে ……………..
___________

সোনালী সকাল,
হঠাৎ দরজায় ঠক ঠক শব্দে দ্যূতির ঘুম ভাঙল। দ্যূতি ঝাঁপসা চোখে দেখলো আরুশের শরীর তাকে জাপটে জড়িয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে, দুজনের দেহে কোনো কাপড় নেই, তাদের উলঙ্গ শরীর একে অপরের মধ্যে লেপ্টে রয়েছে আর তার উপর থেকে বিছিয়ে আছে একটা ফিনফিনে পাতলা সুতির চাদর, দ্যূতি আরুশের বুকের উপর থেকে মাথাটা আনল।

ততক্ষণে দরজায় ঠক ঠক শব্দ বন্ধ হয়ে গেছে। হয়তো কেউ তাদের ডাকতে এসেছিল,সকাল হয়ে গেছে বলে, কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়ায় ফিরে গিয়েছে! দ্যূতি ওসব নিয়ে বেশি ভাবলো না! দ্যূতি নিজের পেটের ওপর থেকে আরুশের ভার ছেড়ে দেওয়া হাত কষ্ট করে সরিয়ে উঠে বসতে গেলো। উঠে বসতেই সে টের পেলো কোমরে প্রচুর ব্যাথা হচ্ছে! নড়তে পারছে না বিন্দু মাত্র! সেই ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো,আরুশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করল,

__“ সব এই লোকটার কারণে হয়েছে! অসভ্য! ”

দ্যূতি আশেপাশে চোখ বুলালো! তার জামা খুঁজছে! চোখ যেয়ে আটকালো আরুশের পায়ের কাছে যেয়ে আটকালো, আরুশের পায়ের কাছে তার জামা রাখা! দ্যূতি হাত বাড়িয়ে দিলো আরুশের পায়ের কাছে,একটু নড়তেই কোমরে ভীষণ ব্যথা হয়ে উঠল, ব্যাথায় ছটফট করে চিৎকার করে উঠল! নিজের অজান্তেই শব্দ হওয়ায় দ্যূতি সঙ্গে সঙ্গে নিজের মুখে হাত চাপা দিলো, সে আড়চোখে আরুশের মুখের পানে চাইলো! আরুশ ততক্ষণে চোখ পিটপিট করে ঝাঁপসা চোখে দ্যূতির দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে! দ্যূতির মুখও সঙ্গে সঙ্গে বিকৃত হয়ে গেলো, যে ভয়টা পেয়েছিল সেটাই হলো! ওর কারণে বেচারার পাকা একটা ঘুম ভেঙ্গে গেলো! দ্যূতি মুখ থেকে হাত সরিয়ে চাদরটা ভালো করে জড়িয়ে বলল,

__“ সরি সরি! আমার জন্য আপনার ঘুম ভেঙ্গে গেলো! ”

আরুশ ততক্ষণে উঠে বসেছে। দ্যূতির কথা শেষ হতেই আরুশ ওর গালে আলতো ছোট করে চুমু খেলো, তারপর মুখ গলায় গুঁজে দিয়ে বলল,

__“ তোমার দ্বারা করা কোনো কাজেই আমি বিরক্ত হই না নূর! আর খবরদার বার বার সরি বলবে না! ”

ঘুম জড়ানো গলায় কথা গুলো বলে গালে কামড় দিলো আরুশ। দ্যূতি আরুশের চুল খামচে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করার চেষ্টা করল। আরুশ দ্যূতিকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে, দ্যূতির যেন দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইল ব্যাথায়! তারপরও সে আরুশকে ছাড়তে বলল না। ঠোঁট কামড়ে আরুশের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে দ্যূতি বলল,

__“ সকাল… সকাল… আবার শুরু… করলেন আপনি! ”

দ্যূতি কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। আরুশ কথা বলার ধরণ শুনেই বুঝতে পারলো, পরমুহূর্তেই আরুশ দ্যূতির থেকে আলাদা হয়ে দ্যূতির দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,

__“ কি হয়েছে তোমার? ”

দ্যূতি ঢোক গিলে আরুশের দিকে তাকালো,আমতা আমতা করে বলল,

__“ কী…কিছু তো…হয়নি! ”

__“ মিথ্যে বলছো কেন? আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি তোমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে, কি হয়েছে? সত্যি করে বলো! ” আরুশের গলার স্বর চওড়া হয়ে উঠল।

দ্যূতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিচে তাকালো। দ্যূতি হাত বাড়িয়ে তার জামা কাপড় দেখিয়ে দিয়ে বলল,

__“ বলছি! তার আগে আমার পোশাক দেন! ”

আরুশ কথা বাড়ালো না। চুপ চাপ দ্যূতির দিকে তার জামা কাপড় এগিয়ে দিলো। দ্যূতি ঝটপট কাপড় হাতে নিলো।

__“ এবার বলবে কি হয়েছে?! ”। আরুশ জিজ্ঞেস করল।

__“ আসলে, কোমর আর পেট ভীষণ ব্যথা করছে! ” দ্যূতি মুখ নিচু করে উত্তর দিলো আরুশের।

__“ তো সেটা বললেই…..! ” আরুশ কথা বলতে বলতে থেমে গেলো। ব্যাথা হওয়ার কারণ বুঝতে পেরেছে। আরুশ দ্যূতির মুখ উঁচু করে অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

__“ আই অ্যাম সরি! এক্সুয়ালি….! ”

দ্যূতি আরুশের মুখে হাত রাখলো। মাথা নাড়িয়ে বারণ করলো কিছু বলতে, আরুশের দিকে একটু ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বলল,

__“ থাক! আপনার আর ফিরিস্তি দিতে হবে না, যা হয়েছে তার সাক্ষী আমি স্বয়ং গতরাতে ছিলাম তাই আবারও নতুন করে কিছু বলতে হবে না…. শুধু !”

দ্যূতি থামলো। আরুশ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

__“ শুধু কী? ”

__“ শুধু…আজ হাঁটার…সময় একটু সাহায্য করলেই হবে! মনে হয় না হাঁটতে পারবো! ” দ্যূতি আমতা আমতা করে বলল।

আরুশ দ্যূতির গাল আলতো করে আবদ্ধ করে নিয়ে বলল,

__“ এনিথিং ফর মাই সুইট ওয়াইফি! ”

বলে আরুশ দ্যূতির কপালের সঙ্গে নিজের কপাল লাগিয়ে দিলো। ……

চলবে……