#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি
#পর্ব__১৯
#লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী
________________
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
দ্যূতি তৈরি হয়ে নিয়েছে। আরুশ তখনো খাটের উপর বসে আছে। দ্যূতির দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে। ঘরের ছোট আয়নাটায় দ্যূতি নিজেকে দেখছে। তার চুল এক পাশের কাঁধে রেখে, চিরুনি দিয়ে ঠিক ঠিক করছে। আরুশ মুচকি হেসে খাট থেকে নেমে দাঁড়াল। দ্যূতির দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলো। দ্যূতি নিজের মনেই চুল ঠিক করছিল এমন সময় পিছন থেকে কারো শক্ত বাঁধনে আবদ্ধ হতেই প্রথমে দ্যূতি চমকে উঠে,আরুশ দ্যূতির খোলা কাঁধে থুতনি রেখে আয়নার দিকে তাকালো। সঙ্গে সঙ্গে দ্যূতির ছটফটানিও বন্ধ হয়ে গেলো।আরুশ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে নরম স্বরে বলল,
__“ওহ্! মাই জান! ইউ লুক সো বিউটিফুল!”
দ্যূতির লজ্জা লাগে। আরুশের দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে বলে,
__“তাই বুঝি!”
__“হু!” শব্দ করল আরুশ।
দ্যূতি খিলখিল করে হেসে উঠে। আরুশের দিকে ফিরে দাঁড়াই। আরুশের দুই কাঁধে হাত রেখে আরুশের চোখে চোখ রেখে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তারপর দ্যূতি আস্তে করে আরুশের ওষ্ঠধরের দিকে অগ্রসর হলো। আরুশ দ্যূতিকে কাছে আস্তে দেখে মুখ টিপে হাসে। দ্যূতি নিজের ঠোঁটের সঙ্গে আরুশের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলল,
__“দ্যান! থ্যাংকস মাই কিউট হাবি!”
__“বিয়ের একদিন হতে পারলো না, তুমি এতোটা বোল্ড হচ্ছো জান! তোমাকে তো চিনতে ভুল করেছি!”
আরুশের কথায় দুজনেই হাসলো। দ্যূতির সম্পূর্ণ মুখ লাল হয়ে উঠেছে। লজ্জায় আরুশের চোখের দিকে তাকালো না। আরুশ দ্যূতির থুতনি ধরে উঁচু করে দ্যূতির নাকের সঙ্গে নিজের নাক ঘষে বলল,
__“জান, বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে তোমার গ্লো চার গুণ বেড়ে গিয়েছে!”
__“আমার আপু বলে,বিয়ে ভালো জায়গায় হলে মেয়েদের চেহারার গ্লো বাড়ে!”
আরুশ বাঁকা হাসে। দ্যূতিকে কোলে তুলে খাটের পরে বসায়। আরুশের কর্ম কান্ড দেখে দ্যূতি অবাক হয়ে বলল,
__“কি করছেন আপনি?”
__“তোমাকে ভালো করে দেখছি!” বলল আরুশ
__“কেন আগে দেখেননি?” হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল দ্যূতি।
__“তোমাকে যতই দেখি ততই আমার মনের তৃষ্ণা বাড়ে জান!” বলল আরুশ।
আরুশ কথা শেষ করে দ্যূতির ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। কিছুক্ষণের জন্য তারা আবারও ডুবে গেলো প্রেমে সাগরে……..
________________
মিলি আর শিহাব দুজনে সকাল সকাল বেরিয়ে গিয়েছে আরুশ আর দ্যূতিকে খুঁজতে। কোনো খোঁজ খবর না পাওয়ায় শিহাব টেনশনে পরে গিয়েছে। মিলি প্রথমে চিন্তাহীন থাকলেও এতোক্ষণেও দুজনের না ফিরে আসায়,ওর মনে খারাপ খারাপ চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। দু’জনে সিদ্ধান্ত নিয়ে বেরিয়ে পরেছে….
শিহাব এমনিতে দ্যূতির আর আরুশের লোকেশন জানতো। সেই হিসেবে দুজনে এগিয়ে গেলো সেই পাহাড়ের দিকে। শিহাব আর মিলি দুজন দুজনের হাত খুব শক্ত করে ধরে সামনে এগোচ্ছে। দুজনই সংকল্প করে এসেছে,যদি কোনো বিপদ আসে তাহলে কোনো ভাবে হাত ছাড়বে না…..
__“স্যার! কোথায় আপনি?”
শিহাব চেঁচিয়ে হাক ছাড়লো। মিলিও সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
__“দ্যূতি! বাবু কোথায় তুই?”
শিহাব থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। মিলি অবাক দৃষ্টিতে তাকালো শিহাবের দিকে। শিহাব চোখ ছোট ছোট করে বাচ্চা স্বরে বলল,
__“ভাবিজান যদি তোমার বাবু হয় তাহলে আমি কি তোমার?”
শিহাব কথা শুনে মিলি কপাল চাপড়ে তাকালো। শিহাবের বাচ্চা চাহনি দেখে না চাইতেও হেসে ফেলল সে। শিহাবের কাছে এসে ফিসফিস করে বলল,
__“তুমি তো আমার বাবুর বাবা!”
__“মানে,,! আমি ভাবিজানের বাবা হতে যাবো কেন?” শিহাব চেঁচিয়ে উঠলো।
মিলি দাঁতে দাঁত চেপে শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলল,
__“আরে! গাধা,আমি আমাদের বাচ্চার কথা বলছি, আনরোম্যান্টিক লোক একটা…..!”
_______________
__“দেখছেন আপনার জন্য কি হয়েছে?”
দ্যূতি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখ ফুলিয়ে বলল। আরুশ নিজের চুল ঠিক করতে করতে এগিয়ে আসলো দ্যূতির দিকে। দ্যূতিকে জড়িয়ে ধরে বলল,
__“আমি তো অনেক কিছু করেছি! তুমি কোনটার কথা বলছো জান?”
__“এই দেখুন! লাল হয়ে গিয়েছে!”
দ্যূতি নিজের গলার কাছে লাল হয়ে থাকা কামড়ের দাগ গুলো দেখিয়ে বলল। আরুশ সেই দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। দ্যূতি বিরক্ত হয়ে বলে,
__“আমি এখন বাইরে যাবো কিভাবে?”
__“যেভাবে প্রত্যেকটা মেয়ে বাইরে যায় তুমিও তেমন ভাবে যাবে!” আরুশ একদম সহজ সরল গলায় বলল কথাটা।
__“সব মেয়েরা তো আর কামড় নিয়ে বাইরে যায় না।”
__“জান এই গুলো কামড় নয়, তুমি যে আমার তার সুন্দর প্রমাণ!” বলল আরুশ।
দ্যূতি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। আরুশের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে,
__“আপনার প্রমাণ আপনি রাখুন, বাকিদের জানাতে হবে না!”
__“আচ্ছা! এ্যাজ ইউর উইস জান!”
বলে দ্যূতিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। দ্যূতি নিজের জোড় লাগিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। আরুশ যেন ততই বেশি শক্ত করে ধরার বাহানা খুঁজে পাচ্ছে। এক পর্যায়ে দ্যূতি নিজের বল প্রয়োগ করা বন্ধ করে দিলো। দ্যূতি শান্ত হতেই আরুশ দ্যূতির কাঁধে মুখ ডুবিয়ে দিলো……
__________
দ্যূতি নিজের গলা ওড়না দিয়ে ভালো করে পেঁচিয়ে নিয়েছে। তারপর নিজের চুলগুলো সামনে এনে দিলো। ঘরের থেকে বেরোনোর একদম আগ মুহূর্তে দ্যূতি আরুশের দিকে ছোট ছোট করে তাকিয়ে ইশারায় বুঝিয়ে দিলো,
__“বাইরে যেয়ে উল্টা পাল্টা কাজ করবেন না!”
আরুশ তার প্রতি উত্তরে মুচকি হেসে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বাইরে আসে। সকালের শুভ্র রোদ দ্যূতির মুখে পরতেই হাত সামনে উঠে আসলো। রাতে ওতোটা ভালো করে দেখা হয়নি কিন্তু সকালের এই শান্ত মধুর পরিবেশ দ্যূতির মন কেড়ে নিয়েছে। দ্যূতি চোখ ভরে চারপাশে তাকাচ্ছে আর আরুশ তার দিকে….
দুজন বেড়োতে সেই নেতা গোছের লোকটা কোথা থেকে যেন আবিষ্কার হলো। দাঁত বের করে খিল খিল করে হেসে বলল,
__“তোদের ঘুম হয়েছে ঠিক ঠাক?”
লোকটাকে দেখতেই দ্যূতির সাড়া শরীর জ্বলে উঠলো। আরুশ স্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে বলল,
__“জ্বি! দারুণ হয়েছে!”
__“যাক! তো……?” লোকটা আরো কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই,
__“স্যারঅঅঅঅঅ!”
তিন জনে একসঙ্গে ফিরে তাকালো। দূরে শিহাব আর মিলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। দ্যূতির মুখের হাসি আরো চওড়া হয়ে উঠল। মিলি দৌড়ে এগিয়ে আসলো ওদের দিকে। পিছনে শিহাব….মিলি এক দৌড়ে দ্যূতিকে ঝাপ্টে ধরল। দ্যূতি হালকা ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো। আরুশ সঙ্গে সঙ্গে দ্যূতিকে আলদা করে নিলো মিলির কাছ থেকে। শিহাব হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
__“স্যার! কোথায় ছিলেন গতরাতে? কত চিন্তায় পরেছিলাম আমরা?”
__“চিন্তা থেকে উঠাতে এসেছিস নাকি চিন্তায় ফেলতে এসেছিস,সেটাই প্রশ্ন?” আরুশ মনে মনে বিড়বিড় করে বলল।
চলবে……
দ্যূতি আরুশের পানে এক দৃষ্টে চেয়ে রইল। আরুশ মুচকি হেসে দ্যূতির গাল আলতো করে স্পর্শ করে বলল,
“ আচ্ছা জান! একটা প্রশ্ন আছে! ”
দ্যূতি আরুশের দিকে ওমনিই ভাবে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো, ইশারায় জানতে চাইলো, আরুশের প্রশ্নটা কী? আরুশ দ্যূতির দিকে ঝুঁকে পড়ল। গলার স্বর খাদে নামিয়ে হাস্কি স্বরে বলে উঠল,
“ আমাদের যদি বাচ্চা হয় তাহলে কার মতো দেখতে হবে জান? ”
দ্যূতি আরুশের প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে তাকালো। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ মানে? ”
আরুশ হাই বেঞ্চির উপর হাত রেখে তার সাথে মাথা ঠেকিয়ে দিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো দ্যূতির দিকে। দ্যূতি আরুশকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“ কী হলো বলো? ”
আরুশ নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল,
“ অর্থাৎ যদি বাচ্চা হয় তাহলে কী তোমার মতো দেখতে হবে না কী ছাগলের মতো দেখতে হবে? ”
দ্যূতির চোখ কপালে উঠে গেলো! লোকটা বলে কি? ভ্রু জোড়া কুঁচকে আরুশের কথার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন করল,
“ তুমি এ সব কি বলছো? পাগল হয়ে গিয়েছ নাকি? ”
“ আমি পাগল হবো কেন জান? আমি তো তোমার হিসেবে বলছি, বাচ্চা মা বাবাদের মতো হয়, সেই হিসেবে নয় তোমার মতো হবে নয় ছাগলের মতো হবে! ”
“ কি ছাগলের মতো কেন হবে? ” দ্যূতি চেঁচিয়ে উঠলো।
“ তুমি তো আমাকে ছাগল বলেই ডাকো! তোমার ভাষ্যমতে আমি ছাগলের হেড তাহলে আমাদের বাচ্চাও ছাগলের মতো দেখতে হবে,এইটাই স্বাভাবিক! ”
আরুশের কথা শুনে দ্যূতি ভীষণ লজ্জা পেলো। আরুশের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মাটির দিকে নিলো। লাজুক কন্ঠে বলল,
“ ইশ্! লজ্জা দিচ্ছ কেন? ”
আরুশ মুখ টিপে হাসলো! দ্যূতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“ লজ্জা পাওয়ার কী আজে জান! ছাগল নিক নেম টা আমার অনেক প্রিয়! তুমি দিয়েছ বলে কথা! ”
দ্যূতি বেঞ্চি থেকে উঠে দাঁড়ালো। আরুশের থেকে দুই কদম সামনে এগিয়ে, গলার স্বর একদম নরম করে লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
“ থামো! আর না! বিয়ের আগে ছাগল বলতাম বলতাম! এখন আর বলি না, তুমিও আমাকে লজ্জা দিবে না! ”
আরুশ উঠে এসে দাঁড়ালো পাশে। আরুশ দ্যূতিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজে দিয়ে বলল,
“ আমার লজ্জাবতী লাজুক’কন্যা! এমন লজ্জায় থাকতে পারো তো, খুব সুন্দর লাগে….”
#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি
#পর্ব_যেকোনো ~ আংশিক
#লেখনীতে_রুদ্রিকা_বেদী
#দ্বিতীয়_ভাগ