জোৎস্না রাতে তুমি আর আমি পর্ব-০২

0
1

#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি — [২]
#রুদ্রিকা_বেদী

২.
__”কী হলো মিস,,,দেবাদৃতা?” হঠাৎ গুরুগম্ভীর কন্ঠটি আবারও দ্যূতির কানে ভেসে আসলো।

দ্যূতি সোজা হয়ে বসে সামনের ব্যক্তির দিকে তাকালো। ধারালো অস্ত্রের ন্যায় তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে দ্যূতিকে। দ্যূতি মুখে শান্ত ধীর হাসি ফুটিয়ে বলল,

__”অল্প বয়সে যেহেতু চাকরি খুঁজছি, তাহলে নিশ্চয়ই টাকার প্রয়োজন।”

দ্যূতি ভিতরে ভিতরে রেগে উত্তপ্ত হয়ে গেছে যার ফল স্বরূপ এই তিতা বাণী ঝরলো তার মুখ দিয়ে। দ্যূতি মনে মনে বিড়বিড় করল,

__”অসভ্য লোক একটা, চাকরি তো এমনিতেই দিচ্ছেন না তাহলে এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার কি আছে!? ছাগল!”

__”আপনার কাছ থেকেই জানতে পারলাম আপনি তিনটি টিউশনি করান, আর ঢাকার এতো বড়ো ইউনিভার্সিটি থেকে এতো ভালো একটা বিষয়ে পড়ছেন, টিউশনির পেমেন্ট এম্যাউন্টও বেশি হওয়ার কথা,তারপরও মানি প্রবলেম?”

দ্যূতির দাঁতে দাঁত চেপে বসলো। বিরক্ত করার একটা সীমা থাকা প্রয়োজন। দুনিয়ার সব অদ্ভুত বিদঘুটে প্রশ্ন করছে এই লোকটা! কে বসিয়েছে এই লোকটাকে এই ইন্টারভিউয়ার প্যানেলে? কোনো যোগ্যতা নেই!

দ্যূতি ঝটপট করে কিছু একটা ভেবে বলল,

__”সংসারে যতোই আয় করা হোক না কেন সেটা কম, আর আপনি বললেন না, ঢাকার বড়ো ইউনিভার্সিটিতে পড়ে ভালো বড়ো রকমের পেমেন্ট পাই পড়ানোর, তেমনি ঢাকার শহরে থাকার জন্য তার থেকেও দ্বিগুণ ব্যয় করতে হয়। এই বিষয়টি ঢাকার প্রত্যেকটা মধ্যবিত্ত পরিবার জানে স্যার!”

ইন্টারভিউয়ার প্যানেলের সবাই তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, যেন সে বিশাল বড়ো কোনো অপরাধ করেছে। দ্যূতির তাতে পাত্তা দিলো না। সে নিজের দেওয়া জবাবে বেশ গর্ব অনুভব করছে।

সামনের ব্যক্তিটির মুখে হালকা রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল। দ্যূতি সেই দিকে চেয়ে বিন্দু মাত্র চিন্তা করল না। ওকি থোরাই কেয়ার করে।

এক প্রস্থ প্রশ্নের উত্তর পর্ব শেষ করে দ্যূতি বিদায় নিলো, 𝑪𝑯𝑶𝑼𝑫𝑯𝑹𝑼𝒀 𝑳𝑬𝑮𝑨𝑪𝒀 𝑮𝑹𝑶𝑼𝑷 থেকে। গরমের মাঝে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নিজের সাথে অনেকক্ষণ ধরে বকবক করতে লাগলো দ্যূতি। রাস্তায় যারা দ্যূতির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল তারা একবারের জন্য হলেও দ্যূতিকে পাগল ভেবেছে,

__”অসভ্য লোক, দেখবি তোর কপালে বউ জুটবে না,যদি জুটেও বাসর রাতে পালিয়ে যাবে, শুধু দেখ ,আমার কথা মিলিয়ে নিস! অসভ্য লোক!”

______

আরুশ চৌধুরী। বয়স ত্রিশ। গোলাপী ফর্সা গায়ের রং। সু প্রস্থ কাঁধ । দীর্ঘ দেহী। উচ্চতা ছয় ফুটের কাছে। হাতে দামী ব্র্যান্ডের ব্ল্যাক ওয়াচ।

আরুশ চৌধুরী নিজের বিশাল বড়ো রাজকীয় কেবিনে বস চেয়ারে গা হেলিয়ে বসে আছে। তার রাশভারী মুখে ঠোঁটের কোণে এক তৃপ্ত হাসি ফুটে রয়েছে।

ছয় বছর পর এই প্রথম অফিসে পা রেখেছে আরুশ। এর আগে প্রায়শই তুহিন সাহেবের সাথে আসতো,কাজ দেখতে। তুহিন সাহেব নিজের চেয়ারটা দেখিয়ে আরুশকে বলতেন,

__”আজ এই চেয়ার নয় আমার, কিন্তু আমার দীর্ঘ বিশ্বাস পরবর্তীতে এই সিংহাসনের সিংহ হবি তুই! তার জন্য যোগ্য হয়ে উঠিস।”

বাবার অদম্য বিশ্বাস এবং নিজের আত্মবিশ্বাস এবং গুণ দিয়ে সত্যিই সে আজ ‘ 𝑪𝑯𝑶𝑾𝑫𝑯𝑼𝑹𝒀 𝑳𝑬𝑮𝑨𝑪𝒀 𝑮𝑹𝑶𝑼𝑷 ‘ এর CEO. কিন্তু আরুশ চিন্তার বিষয় সেটি নয়। সে এখন অন্য চিন্তায় মগ্ন পাখি। এমন সময় আরুশের রাজকীয় রুমের কাঁচের দরজা ঠেলে কেবিনের মুখ্যদ্বারে দাঁড়িয়ে আরুশকে সকালের অভিবাদন জানালো। আরুশ সোজা হয়ে বসল। মুখের চাহনি পুনরায় গম্ভীর করে সামনের ব্যক্তিটির দিকে তাকালো। এই ব্যক্তি সকালের ইন্টারভিউয়ার প্যানেলের মধ্যে ছিলেন। আরুশ তাকে একবার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ভালো ভাবে দেখে নিলো। ব্যক্তির হাতে দুটি ফাইল রয়েছে। আরুশ শীতল কন্ঠে বলল,

__”গুড মর্নিং! ভেতরে আসুন!”

লোকটি সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে ঢুকলো। ঠোঁটের কোণে একরাশ হাসি। আরুশ একটু বিরক্তই হলো। বিনা কারণে খিলখিল করে হাসা ব্যক্তিদের তার বিন্দুমাত্র পছন্দ হয় না। আরুশ নিজের দু হাত একসঙ্গে করে কাঁচের টেবিলের উপর রেখে তার সোজাসুজি দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির দিকে তাকালো। লোকটি আগের মতো হেসে যাচ্ছে।

__”আপনি কি কিছু বলবেন মিস্টার খালেদ?”

মিস্টার খালেদ নড়েচড়ে উঠলেন। তিনি মুখের হাসি বজায় রেখে বললেন,

__”ইয়েস স্যার!”

__”তাহলে বলেন!”

মিস্টার খালেদ হাতের দুইটা ফাইল আরুশের দিকে এগিয়ে দিলো। আরুশ ডান হাত বাড়িয়ে ফাইল দুটো নিয়ে, মিস্টার খালেদের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো, মিস্টার খালেদ হাসতে হাসতে আরুশের দৃষ্টির জবাব দিতে বলল,

__”স্যার, এই ফাইল দুটোর একটাই রয়েছে আজকে নেওয়া ইন্টারভিউয়ের বাছাইকৃত ক্যান্ডিডেটদের নাম এবং অন্য ফাইলটিতে রয়েছে রিজেক্ট করা ক্যান্ডিডেটদের নাম।”

কথাগুলো বলেও আবার হাসলেন খালেদ সাহেব। তার ও ম্যারম্যারে হাসি আরুশের মাথা এবং শরীর গরম করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আরুশ ফাইল দুটোর থেকে বাছাইকৃত ক্যান্ডিডেটদের নাম ওয়ালা ফাইলটি হাতে রেখে অন্যটা টেবিলের উপর রাখলো। ফাইলটি নিঃশব্দে খুলে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখল। ফাইলটি দেখা শেষ হলে আরুশ ফাইলটি টেবিলের উপর রেখে দিলো। খালেদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল,

__”ক্যান্ডিডেট দেবাদৃতা দ্যূতির নামটি নেই কেন?”

এতোক্ষণে খালেদ সাহেবের ঠোঁটের কোণ থেকে হাসি গায়েব হয়ে গেলো। তিনি ঢোক গিলল গলার স্বর একদম খাদে নামিয়ে বললেন,

__”আসলে আমাদের প্যানেলের সবাই মেয়েটিকে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু মিস্টার হক বাঁধা দিলেন। তিনি বললেন, মেয়েটির ব্যবহার ভালো নয়, আপনার মুখে মুখে তর্ক করেছে তাই!”

মিস্টার রবিউল হক, এই কম্পানির মোস্ট সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনি একজন। তার অভিজ্ঞতা এদের সবার থেকে অনেক বেশি। আরুশ লোকটিকে চেনে। তুহিন সাহেবের অনেক ভালো বন্ধু। আরুশ ফাইলগুলোর দিকে একবার চেয়ে নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো। খালেদ সাহেব তার দিকে তাকিয়ে আছে কোনো প্রতিক্রিয়ার আশায়।

__”মিস্টার হক এর সঙ্গে আমি পার্সোনাল ভাবে কথা বলে নিবো। আপনি ক্যান্ডিডেট দেবাদৃতা দ্যূতির নাম সিলেক্টডদের তালিকায় যোগ করিয়ে দিন।”

শান্ত কন্ঠে বলল আরুশ। খালেদ সাহেবের মুখ থেকে ভয় ভাবটা কেটে যেয়ে পুনরায় খিলখিল করা হাসি ফুটে উঠল। একগাল হাসি নিয়ে জবাব দিলেন,

__”আপনি উনার সঙ্গে কথা বলে নিলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমি এক্ষুনি দেবাদৃতা দ্যূতির নাম বাছাইকৃত ক্যান্ডিডেটদের তালিকায় যোগ করে দিচ্ছি….!”

মিস্টার খালেদ দুটো ফাইল নিয়ে চলে গেলেন। আরুশ চৌধুরী লম্বা শ্বাস ছাড়ল। আরুশের ফোন হঠাৎ বেজে উঠল। আরুশ সেই দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।

কিছুক্ষণ পর ফোনে কথা বলে উঠে দাঁড়ালো আরুশ। কেবিনের বাইরে এসে নিজের সেক্রেটারির কেবিনের দিকে গেল। কেবিনটা বাইরে থেকে সাদামাটা,ভিতরটাও ঠিক তেমনই। আরুশ কেবিনের দরজা ঠেলে সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। কেবিনের ভিতর অবস্থিত একটি ২৭-২৮ বছরের ছেলে আরুশকে দাঁড়াতে দেখে উঠে দাঁড়ালো। তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে দাঁড়ালো আরুশের কাছে। আরুশকে অভিবাদন জানিয়ে বলল,

__”স্যার আমাকে ডেকে নিতেন, আপনি আসতে গেলেন কেন?”

আরুশ হাত ভাঁজ করে বলল,

__”ওতো ফর্মালিটিজ করার দরকার নেই শিহাব।”

শিহাব মৃদু হাসল। শিহাব আরুশের জুনিয়র। শিহাব আরুশের সঙ্গে রয়েছে সেই অর্নাসের প্রথম বর্ষ থেকে আছে। শিহাব আরুশকে বড়ো ভাইয়ের মতো দেখে। যখন ওকে ragging দেওয়া হয় আরুশই ওকে বাচাই। শিহাব বাবা মা নেই। ছোট বেলায় একটি কার এক্সিডেন্টে মারা যায়। এরপর থেকেই একা একা সবকিছু করতে হয়েছে শিহাবের। এমন অবস্থা আরুশ শিহাবকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করতে শুরু করে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত শিহাব আরুশের সেক্রেটারি হয়ে রয়েছে।

__”আজ আমার একটি ফ্যামিলি বিজনেস মিটিং আছে জানিস তো!”

__”ইয়েস স্যার! আজ সন্ধ্যা ছয়টায় আপনার মিটিং রয়েছে।” নিজের হাতের ট্যাবলেটে স্ক্রল করতে করতে বলো শিহাব।

আরুশ নিজের হাতের ব্ল্যাক ওয়াচের দিকে তাকিয়ে বলল,

__”ওই মিটিংয়ের আগে যেসব মিটিং রয়েছে সব ক্যান্সেল করে দে,আমি সোজা ছয়টার মিটিং যাবো!”

__”কিন্তু,,,” চিন্তিত স্বরে কথা বলতে যাচ্ছিল শিহাব। আরুশের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির কারণে থেমে গেলো।

___________

দ্যূতি নিরাশ মুখ নিয়ে এসে থেমেছে একটি বিশাল বড়ো লৌহ গেটের সামনে। পাশের দেওয়ালে খোদায় করে লেখা ‘ প্রিয় নিবাস ‘ তার নিচে লেখা পিউ আদ্রিত মজুমদার এবং আদ্রিত মজুমদার আদ্র। দ্যূতি সেই দিকে তাকিয়ে স্লান হাসল। দারোয়ান দ্যূতিকে দেখেই চিনতে পেরেছে। তিনি লৌহের গেট খুলে দিলেন। দ্যূতি নিঃশব্দে ভিতরে ঢুকলো। ভিতরে ঢুকতেই তার চোখ পড়লো সামনের বাগানের একটা গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে আদ্রর প্রিয় জার্মান সেপার্ড ‘লিও’ কে। দ্যূতি অবশ্য ভীষণ ভয় পায়। এড়িয়েই চলে লিওকে ও। দ্যূতি সোজা হেঁটে বিশাল বলো ভিলার রাজকীয় কাঠের দরজার সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। কলিং বেল বাজিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো দরজা খোলার।

একমিনিট পর দরজা খুলে গেলো। দ্যূতির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। যার কাছে সব কিছু খুলে বলতে আসে।

__”দ্যূতি,বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ভিতরে আয়!”

দ্যূতি হেসে ভিতরে ঢুকল। জড়িয়ে ধরে বলল,

__”পিউ আপি! আই মিস ইউ সো মাচ!”

পিউ দ্যূতিকে জড়িয়ে ধরে বলল,

__”আই অলসো মিস্ ইউ রসগোল্লা [ দ্যূতিকে আদর করে করে ডাকে পিউ ]

দ্যূতি পিউকে উপর নিচ পর্যন্ত একবার পর্যবেক্ষণ করে বলল,

__”কোথাও বেড়চ্ছ?”

পিউকে দ্যূতির কাছে পরীদের মতো লাগে। তার লাবণ্য যেন আরো বেড়েছে দ্বিতীয় প্রেগন্যান্সির পর থেকে। কেউ দেখে বলবে না চার বছর আর ছয় মাসের দুই ছেলের মা। চোখে গাঢ় করে কাজল পরা। যা পিউ প্রতিদিন দেই চোখে। তার চোখের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। ঠোঁটে গাঢ় খয়েরি লিপস্টিক। পরণে খয়েরী রঙের শাড়ি। বাম হাতে ওয়াচ। ডান হাতে সবসময় পরে থাকা সোনোর ব্রেসলেট। ঠোঁটের কোণে লেগে রয়েছে সুমধুর হাসি। হাসির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলছে দুই গালের টোল।

দ্যূতি বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে পিউর পানে। সে অনেক সময় অবাক হয়,তার পিউ আপি কিভাবে এতো সুন্দর করে সব কিছু সাজিয়ে রাখে। মেডিকেলে পড়ে,ঘর সংসার করে স্বামীর খেয়াল রাখে দুটো বাচ্চাকে মানুষ করা তারপর নিজের প্রতিও খেয়াল রাখা কিভাবে সম্ভব একটি সাধারণ মেয়ের দ্বারা।

দ্যূতিকে হারিয়ে থাকতে দেখে পিউ ওর সামনে তুড়ি বাজিয়ে হাসতে হাসতে বলল,

__”কোথায় হারিয়ে গিলি?”

দ্যূতি তাড়াতাড়ি করে বলল,

__”আরে না কোথায় আর হারাবো,তুমি বলো, তুমি কোথাও যাচ্ছিলে?”

__”আরে না, আসলে তোর ভাইয়ার আজকে একটা ফ্যামিলি বিজনেস মিটিং রয়েছে,তাই একটু তৈরি হয়েছি।”

দ্যূতি পিউর কথা শুনে বিস্মিত স্বরে বলল,

__”সেটা আগে বলবা না,আমি তোমার ঝামেলা বাড়াতে চলে এসেছি। এক কাজ করি, আমি এখন যাই পরে আবার আসবো।”

বলে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যেতে যাবে পিউ পিছন থেকে ওর হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো। চোখ পাকিয়ে বলল,

__”খবরদার,তুই কি পরিবারের মধ্যে পরিস না! তোর ভাইয়া যদি শোনে তার শালিকা তার মিটিং কারণে চলে গিয়েছে,রেগে অগ্নিবাণ ঝাড়বে।”

বলে দ্যূতিকে টেনে লিভিং রুমে নিয়ে আসলো। ওকে সোফায় বসিয়ে নিজেও সোফায় বসল পিউ।

__”আজ তো তোর ইন্টারভিউ ছিল। তা কেমন হয়েছে?”

ইন্টারভিউয়ের কথা উঠতেই দ্যূতির মুখ লাল হয়ে গেলো। ফোঁস করে উঠে বলল,

__”জিজ্ঞেস করো না, ইন্টারভিউ তো না ঝগড়ার যুদ্ধ ছিল!”

__”মানে!?” অবাক হয়ে গেল পিউ। দ্যূতি সম্পূর্ণ ব্যাপার খুলে বলল। পিউ সব শুনে কি বলবে বুঝতে পারল না।

__”ওই গাধাটারে কে যে প্যানেলে বসিয়েছিল কে জানে? গাধাটার জন্য আমার হয়ে বসে থাকা চাকরি হাত ফসকে পালালো! গাধা!”

পিউ দ্যূতির দুই গাল আলতো করে টিপে বলল,

__”এতো রাগ শরীরের পক্ষে ভালো না দ্যূতি! যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে। ওই সব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। সামনে কোনো ইন্টারভিউ আছে?”

__”না গো! খুঁজতে হবে!” নিরাশ কন্ঠে উত্তর দিলো দ্যূতি।

__”চিন্তা করতে হবে না, একটা না একটা চাকরি ঠিক হয়ে যাবে। খালামণির মাথায় হঠাৎ করে এমন ভূত কেন চাপলো সেটাই চিন্তার বিষয়?…..”

হঠাৎ দ্যূতির রাগান্বিত মুখ জলের ন্যায় শীতল হয়ে গেল। পিউ দ্যূতির আরো কাছে সরে বসল। দ্যূতিকে জড়িয়ে ধরল। দ্যূতি পিউর দিকে তাকিয়ে বলল,

__”আমি জানি মায়ের কানে আমার বিয়ে দেওয়ার বাণী ওই অদিতিই দিয়েছে,,, ভূতনী কোথাকার!”

পিউ এবার হেসেই ফেলল। দ্যূতি সেই দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল,

__”হাসছ কেন? তুমি বুঝি জানো না, কে করতে পারে এইসব কাজ কর্ম!?”

বলেই দুজনে একসঙ্গে হাসতে শুরু করল।
_______

__”আচ্ছা আপি, দুপুর থেকে শুভ্রকে দেখছি না! কোথায়?”

পিউ সন্ধ্যার মিটিংয়ের জন্য ডাইনিং টেবিলে পাত্র সাজাচ্ছিল। দ্যূতি তাকে হাতে হাতে সাহায্য করছিল এমন সময় প্রশ্ন করাই পিউ হাসি মুখে উত্তর দেয়,

__” সে তো আজ বাবের সাথে অফিসে গিয়েছে, এই জন্যই তুমি তাকে দেখছো না আর রুদ্র ঘুমোচ্ছে।”

__”ভাইয়ার কারণে তোমার কতো কাজ কমে গিয়েছে!”

পিউ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কোমরে হাত রেখে বলল,

__” কেন,তোর ভাইয়া আবার কাজটা কমিয়ে দিলো শুনি?”

দ্যূতি হাতের কাপগুলো টেবিলের উপর রেখে বলল,

__”কেন ছেলেকে নিয়ে গিয়েছে অফিসে, শুভ্র থাকলে তোমার কতো কাজ করতে হতো ওর জন্য, ভাইয়া তোমার জন্য কতো কি করে, এই পুরো ভিলাটা তোমার নাম দিয়ে তৈরি করেছে,এই রকম বর কোথায় পাওয়া যায়?”

পিউর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। সত্যি আদ্র ওকে মজুমদার বংশের মুকুট করে রেখেছে। ও দ্যূতির দিকে তাকিয়ে লজ্জা মাখা কন্ঠে বলল,

__”আর প্রশংসা করতে হবে না, ভাইয়ার প্রশংসায় সবসময় পঞ্চমুখ হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে ভাবি তুই আমার বোন নাকি আদ্রর বোন ?”

__”অবশ্যই,,,, ভাইয়ার বোন!”

পিউ চোখ পাকিয়ে উঠে….

___________

সন্ধ্যা ছয় টা বাজতে আর পনেরো মিনিট। একটু আগে আদ্রর কল এসেছিল পিউর কাছে। আদ্র বলেছে একটু পরই সে আর তার বিজনেস ফ্রেন্ড ভিলাতে আসছে। পিউ তাড়াতাড়ি করে মেডদের সাহায্য নিয়ে সব গুছিয়ে নিলো। দ্যূতি রুদ্রকে কোলে নিয়ে খেলা করছে। দুইটা ছেলেই বাবার মতো হয়েছে গম্ভীর, শান্ত, কান্না কাটি নেই। দ্যূতিকে দেখলে খিল খিল করে হাসে। রুদ্রর সাথে খেলতে ওর ভীষণ ভালো লাগে…….

কলিং বেল বেজে উঠল পিউ উঠে যেয়ে দরজা খুলল। দরজা খুলতেই শুভ্র এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,

__”মাম্মা,আমি এসে গিয়েছি!”

__”আমার সোনা! দেখ কে এসেছে,তোমার খালা এসেছে।”

পিউ দ্যূতির দিকে ইশারা করে দেখালো। চার বছরের শুভ্র দ্যূতিকে দেখে দৌড় দিলো ওর দিকে। এরপর আদ্র প্রবেশ করল,পিউকে জড়িয়ে ধরে বলল,

__”আই মিস ইউ মাই সুইট হার্ট!”

পিউ আদ্রকে জোর লাগিয়ে নিজের থেকে আলাদা করতে চাইল। বিরক্ত কন্ঠে বলল,

__”ছাড়ো, তোমার ছেলে আর শালীকা দেখছে!”

দ্যূতি শুভ্রকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলো যাতে পিউ আর আদ্রকে না দেখতে পারে। দ্যূতি মিট মিট করে হাসছে দুই জনকে দেখে।

সুপুরুষটি পিউকে ছেঁড়ে দিলো। হলদে রাঙা গাঁয়ের রং। বয়স বত্রিশ বছর।দীর্ঘ উচ্চতা ছয় ফুট। গাঢ় বাদামী চোখ। পরণে রয়েল ব্লু ফর্মাল শার্ট কুনুই পর্যন্ত ভাঁজ করা। কালো ফর্মাল প্যান্ট। হাতে সিলভার ক্যাসিও ওয়াচ। আদ্রর ডান হাত অন্যদের মতো কাজ করে না তার সব বল বাম হাতে।

__”মিস্টার চৌধুরী কোথায়?”

__”তিনি আসছেন…!”

পিছনে ইশারা করে দেখালো। পিউ বাইরের পানে তাকিয়ে দেখলো। দরজার সামনের সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে ব্ল্যাক কোর্ট পরিহিত একটি পুরুষ। তিনি আদ্রর পাশে এবং পিউর মুখমুখি হয়ে দাঁড়ালো। দ্যূতি পুরুষটিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য উঠে দাড়ালো। শুভ্রকে নিয়ে পিউর পাশে যেয়ে দাড়াতেই দ্যূতি থমকে গেল। পুরুষটি তার দিকেই ক্রুল হাসি হেসে তাকিয়ে আছে। দ্যূতির চোখ আকাশে উঠে গেলো। ছোট করে ঢোক গিলে নিয়ে বলল,

__”ছাগলটা এখানে কি করছে…..?”

চলবে……

রুদ্রিকা বেদী-Rudrika Bedi