জোৎস্না রাতে তুমি আর আমি পর্ব-০৩

0
1

#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি — [৩]
লেখনীতে;- #রুদ্রিকা_বেদী
৩,
__”আমি আরুশ চৌধুরী!”

নিজের পরিচয় দিয়ে বলল আরুশ। দ্যূতি তখনও থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। পিউ খুশি মনে আরুশের উদ্দেশ্য বলল,

__”আমি পিউ আদ্রিত মজুমদার, আর ও হচ্ছে,,,,”

__”দেবাদৃতা দ্যূতি!”

পিউর কথা মাঝখানে আটকিয়ে আরুশ বলল। আদ্র আর পিউ দুজনই হতবাক হয়ে পড়ল। দু’জনে দ্যূতির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল ব্যপারটা। আদ্র হাস্কি স্বরে বলল,

__”তুমি আমার শালিকাকে চেনো?”

আরুশের ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। পিউ আড়চোখে দ্যূতির দিকে তাকালো। দ্যূতিকে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পিউ বুঝতে পারল কোনো একটা সমস্যা আছে দুইজনের মাঝে। পিউ স্বাভাবিক কন্ঠে আরুশকে উদ্দেশ্য করে বলল,

__”এই সব কথা পরে,আগে ভিতরে আসুন!”

আদ্র আরুশকে নিয়ে সোফায় বসল। পিউ দ্যূতিকে টেনে পাশে নিয়ে গেলো। পিউর আচমকা টানে দ্যূতির হুঁশ ফিরল। পিউ দ্যূতির কোল থেকে রুদ্রকে নিয়ে গলার স্বর একদম খাদে নামিয়ে বলল,

__”ইনিই কি সেই ব্ল্যাক ড্রাগনের মালিক?”

দ্যূতি কোনো কথা না বলে শুধু মাথা নাড়ালো। পিউ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

__”ভালো! ইনি চৌধুরী ইন্ড্রাস্ট্রির CEO,”

__”ওয়াট!” — চেঁচিয়ে উঠলো দ্যূতি। পিউ ওকে চোখের ইশারায় শান্ত হতে বলল। দ্যূতি কপাল চাপড়ে ফিসফিস করে বলল,

__” এই ছাগলটাকে কিভাবে নিজের বিজনেস ফ্রেন্ড বানাতে পারে ভাইয়া?”

__” ওইসব এখন আলোচনার বিষয় নয়। উনি আমাদের অতিথি, উনার সঙ্গে যেন আবার ঝগড়া শুরু করে দিস না। স্বাভাবিক ভাবে ভালো আচরণ করবি!”

দ্যূতিকে বুঝিয়ে বলল। দ্যূতি নিরাশ মুখ করে বলল,

__”ঠিক আছে!”

__”আচ্ছা। তুই দাঁড়া আমি রুদ্রকে রুমে শুইয়ে দিয়ে আসি!”

বলে রুমের দিকে চলে গেল পিউ। দ্যূতি ওখানে দাঁড়িয়ে আরুশের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। মনে মনে একবার বলে নিলো,

__”অভদ্র ছাগল!”

আরুশ আদ্রর সাথে বসে কথা বলছে। শুভ্র সাথে তার খুব ভালো ভাব হয়ে গিয়েছে। দ্যূতি সেখান থেকে একটু দূরে এসে দাঁড়ালো। আরুশ দ্যূতির উপস্থিতি টের পেয়ে সেই দিকে তাকাল। আদ্র আরুশের দৃষ্টি অনুসরণ করে দ্যূতির দিকে তাকালো। দ্যূতি কটমট করে তাকিয়ে আছে। আরুশ সেই দিকে চেয়ে বাঁকা হাসল।……..

________

পিউ আসার পরই সবাই ডাইনিং টেবিলে বসলো। দ্যূতি প্রথমে যেতে চাচ্ছিল না। পিউ দ্যূতিকে উদ্দেশ্য করে চোখ রাঙালো। পিউয়ের চোখ রাঙানো দেখার পর দ্যূতি কোনো উপায় না পেয়ে এক প্রকার বাধ্য হলো ডাইনিং টেবিলে যেতে।

__”আপনার জন্য সব তৈরি। সব কিন্তু খেতে হবে।”

চেয়ারে বসতে বসতে পিউ আরুশকে বলল। আরুশ হাসল। দ্যূতি পিউর পাশে গোমড়া মুখ করে বসল।

__”তো বিয়ে কবে করছ আরুশ?”

আদ্র রসিকতা পূর্ণ ভঙ্গিতে বলল। আরুশ আদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,

__”আপুর মতো মেয়ে পাইলেই বিয়ে করে নিবো!”

পিউকে উদ্দেশ্য করে বলল। আদ্র উচ্চস্বরে হাসল। পিউও মুচকি হাসল। দ্যূতি পিউয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

__”দেখছ কী অভদ্র! বরের সামনে তার বউকে নিয়ে মজা করছে!”

পিউ হালকা ঘাড় ঘুরিয়ে ফিসফিস করে বলল,

__”সে মজা করছে না গাধী,সে প্রশংসা করছে। বিদেশে মানুষ এইভাবে কথা বলে।”

দ্যূতি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তার কোনো কথায় যেন যুক্তিতে দাঁড়াচ্ছে না তার বোনের কাছে। এই অসম্ভবটার সঙ্গে একই টেবিলে বসে ডিনার করা, দ্যূতির গলা দিয়ে নামছে না।

__”ছয় বছর পর দেশে এসেছ। এক্সপেরিয়েন্স কেমন গেলো?” আদ্র চামচে ভাত তুলতে তুলতে বলল। আরুশ সামনে থাকা জলের গ্লাস থেকে জল পান করে বলল,

__”দারুণ, প্রথম দিনই একটি মেয়ের সঙ্গে দারুণ ঝগড়া করেছি,,,,” — চোখের দৃষ্টি দ্যূতির উপর যেয়ে আটকালো। দ্যূতি আস্তে করে ঢোক গিলল। পিউ আড় চোখে একবার দ্যূতির দিকে তাকিয়ে ঠোট কামড়ে মৃদু হাসল।

__”মেয়েটি আমার গাড়ির সামনে ‘দ্যা নান’ এর ক্যারেক্টারের মতো দাঁড়িয়ে ছিল। প্রথমে তো ভেবেই ছিলাম হয়তো ভূত সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, আমার লম্বা ঘাড় মটকানোর জন্য, পরে ঝগড়া করে বুঝলাম ভূতটা আসলে একটি মানুষ।”

পিউ মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করলো। আদ্র তো হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল আরুশের দিকে। আরুশের দৃষ্টি তখনও দ্যূতির চোখের দিকে। দ্যূতি হাতের চামচটি মুঠোবন্দী করল তাতে নিজের সম্পূর্ণ রাগ ঝাড়ার চেষ্টা করল। দ্যূতি হাতের চামুচ পাশে রেখে নিজেকে শান্ত করে মুখে একটি স্নিগ্ধ হাসি ফুটিয়ে আরুশকে বলল,

__”ঝগড়া যেহেতু হয়েছে তারমানে আপনারও দোষ ছিল। আমার পিউ আপি সবসময় বলে দোষ কখনো একপক্ষের হয় না।”

বলে পিউয়ের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো দ্যূতি। পিউ সেই দিকে চেয়ে মৃদু হাসে। আরুশ হাতের চামুচ রেখে চেয়ারের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দ্যূতির প্রশ্নের উত্তরে বলল,

__”আমি মানছি দোষ দুইজনের ছিল, কিন্তু ঝগড়াটা একপক্ষের দ্বারা শুরু হয়েছিল, সে চাইলেই স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপারটা মিটিয়ে নিতে পারতো।”

__”কীভাবে?” দ্যূতি জিজ্ঞেস করল।

__”সরি বলে,”

__”কেন? সে কেন সরি বলতে যাবে? আপনিও তো সরি বলতে পারতেন! সে নয় রাস্তা পাড় হচ্ছিল, রাস্তা তো পাড় হওয়ার জন্য তৈরি, আপনি কেন গাড়ির স্পিড ক্যান্ট্রোল করতে পারেন নি? বলুন! দোষ তো আপনার বেশি!”

দ্যূতি উত্তেজিত হয়ে উঠে। পাশের থেকে পিউ ওর হাত চেপে ধরে। চোখ ইশারায় শান্ত হতে বলে। আরুশ দ্যূতির এমন প্রতিঘাতে কোনো রকম উত্তর দিলো না। তার ঠোঁটের কোণে ভেসে উঠলো প্রশান্তময় হাসি। আদ্র ভ্রু কুঁচকে একবার দুইজনের পানে তাকিয়ে পিউয়ের উপর দৃষ্টিতে স্থির করে বলল,

__”আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মেয়েটি তোমার বোন।”

পিউ চাপা হাসলো। আরুশ টেবিলের উপর থেকে ওয়াইনের গ্লাসটি তুলে চিয়াস করা ভঙ্গিতে রাখল। আদ্র নিজের কাপ নিয়ে আরুশের সঙ্গে চিয়াস করল। দুইজনই গ্লাসে চুমুক দিলো।
___
ডিনার পর পুনরায় সবাই লিভিং রুমে বসলো। এরমাঝে পিউ শুভ্রকে নিয়ে রুমে গিয়েছিল ঘুম পারিয়ে দিতে। ঘুম পারিয়ে পিউ এসে বসল আদ্রর পাশে। স্নিগ্ধ হাসি নিয়ে পিউ আরুশকে জিজ্ঞেস করল,

__” সব খাবার পছন্দ হয়েছে তো?”

আরুশ হাতের আইসক্রিমের বাটিটি টি টেবিলের উপর রেখ বলল,

__”খাবার তো পছন্দ হয়েছে সাথে আপনার মতো স্ট্রং পার্সোনালিটির মেয়ের সঙ্গে দেখা করে খুব ভালো লেগেছে। আগে ভাবতাম ভাইয়া আপনার ভয়ে আপনার প্রশংসা করে, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কেন সবসময় আপনার প্রশংসা করে! সিরিয়াসলি আপনার মতো মেয়ে এই বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া একটু টাফ!”

__”বাব্বাহ! আদ্র কাজের সময় আমার প্রশংসা করে? বিশ্বাস হয় না?”

পিউ আদ্রর দিকে তাকিয়ে অবিশ্বাস্য কন্ঠে কথা গুলো বলল। আদ্র পিউয়ের কথা শুনে হকচকিয়ে গিয়েছে এমন ভান করে বলল,

__”নিজের বরকে এতোটাই আনরোমান্টিক ভাবো নাকি সুইট হার্ট?!”

__”আমি শুধু ভাবি না বর আমি মনে প্রাণে সেটাই বিশ্বাস করি!”

পিউর কথা শুনে আদ্র আর আরুশ দুজনেই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হাসে। আরুশ টেবিলের উপর থেকে আইসক্রিমের বাটি তুলে নিয়ে বলল,

__”গ্রেট সেন্স অফ হিউমর আপু!”

বলেই আরুশ দ্যূতির দিকে তাকালো। দ্যূতির হাতের দিকে তাকালো ,তার হাতে থাকা আইস্ক্রিম সম্পূর্ণ গলে গিয়েছে। দ্যূতি অন্যমনস্ক হয়ে বসে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।
______

__”আবার আসতে হবে কিন্তু!”

আদ্র আর আরুশ একে অপরকে জড়িয়ে আদ্র বলল। আরুশ বলল,

__”অবশ্যই! আপুর হাতের রান্না ঠিক আমার মায়ের মতো, মায়ের রান্না যখন খেতে ইচ্ছে করবে তখনই চলে আসবো!”

__”অবশ্যই! একবার আপনার মাকেও নিয়ে আসবেন, একসঙ্গে রান্না করে খাওয়াবো!”
পিউ আরুশের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে বলল। পিউয়ের কথায় আরুশের মুখের শোভন হাসি হালকা বিলীন হয়ে গেলো। আদ্র পিউয়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

__”আন্টি আমাদের মধ্যে নেই সোনা!”

পিউয়ের মুখের হাসি একদম গায়েব হয়ে গেলো। দ্যূতি পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল, আরুশের মায়ের কথা শোনা মাত্রই সেও বিস্মিত হয়ে দাঁড়ালো।

__”আমি আসি!”– আরুশ বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে গেলো। আদ্র আর একটি বারের জন্য আটকালো না। দ্যূতি পিউয়ের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরল। দ্যূতি জানে পিউ অনেক সেনসিটিভ। পিউ একবার আদ্রর দিকে তাকিয়ে চুপচাপ রুমে চলে গেলো। আদ্র দ্যূতির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

__”এর কারণে তোমার বোনের কতো দিন মুড অফ থাকবে কে জানে! বুঝালেও বোঝবে না অবুঝ কোথাকার!”

দ্যূতি আদ্রর দিকে তাকিয়ে শ্রান্ত হাসল। তারও তো খারাপ লাগছে……!

________

এক সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে, দ্যূতি চৌধুরী ইন্ড্রাস্ট্রিতে ইন্টারভিউ দিয়েছে। এখনো কোনো উত্তর আসেনি। দ্যূতি তাতে হতাশ হয়েছে সেটাও না। সে এটাই যেন এটাই আশা করে ইন্টারভিউতে উত্তর দিয়ে এসেছে। চিন্তা দ্যূতি অন্য জায়গায়, এই এক সপ্তাহের মধ্যে দ্যূতির মা প্রায় একশত বার কল করে একই কথা বলেছেন,

__”একটা ভালো ছেলে দেখেছি,চাকরি জোগাড় করতে তো পারছিস না,বিয়েটাই নয় করে নে!”

দ্যূতি শতবার ফোনকলে তার মাকে ইগনোর করতে চেয়েছে, কিন্তু কতোক্ষণ সম্ভব? দ্যূতির মায়ের হঠাৎ করে মুড সুইং দ্যূতির জন্য স্বাভাবিক বিষয়, সে ছোট বেলা থেকেই অভ্যস্ত। কোনো কারণ ছাড়া মায়ের কথা শোনা, মায়ের রাগ দেখা, অন্যের সঙ্গে তুলনা, অভিযোগ নিয়ে নিয়েই দ্যূতি বড়ো হয়েছে। তার মায়ের জন্য কতরাত কেঁদে বালিশ ভিজিয়েছে দ্যূতিও তার ঠিক হিসেব দিতে পারবে না হয়তো।

দ্যূতি নিজের রুমের সঙ্গে লাগোয়া ছোট ব্যালকনিতে এসে বসেছে। পরণে সাদা কূর্তি আর পাজামা। স্ট্রেইট সিল্কি চুলগুলো হাত খোঁপা করে হেয়ার ক্লিপ দিয়ে আটকানো। বাইরের মৃদু বাতাস আর পূর্ণিমা রাতের চাঁদের কিরণ ঢাকা শহরকেও জোৎস্না রাতে পরিপূর্ণ করে তুলছে। দ্যূতি দুই হাটুর ফাঁকে মুখ গুঁজে দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। দিন দিন তার অস্বস্তি বেরেই চলছে।

__”ধুর! আর ভালো লাগে না, সবাই জীবনে প্রেম করার মানুষ চাই আর আমি এমন একজন মানুষ চাই যে কিনা আমার জীবনে একটা চাকরি এতে দেবে, সেটাও হয় না প্রেমও হয় না! জীবনে করলামটা কী?”

দ্যূতি জোৎস্না ময় আকাশের পানে তাকিয়ে নিজের মনে নির্বাক অনুভূতি প্রকাশ করল। মুখটা আরো একটু কাচুমাচু করে বিড়বিড় করে বলল,

__”একটা চাকরি! আর কিচ্ছু চাই না! আমাকে একটা চাকরি দিয়ে দিলে তোমার ব্যাংকের থেকে কি চাকরির সটেজ পরে যাবে না কী? দাও না প্লীজ!!!”

কাতর স্বরে বলতে লাগলো।
______

ডাইনিং টেবিলে তুহিন সাহেবের সঙ্গে আজ একসংঙে আরুশ ডিনার করবে। কতো বছর পর আরুশকে কাছে পেয়েছে। ছয় বছরের আগে আরুশের মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই আরুশ অনেক চুপ হয়ে পরে। তুহিন সাহেবের এখনো পুরোনো স্মৃতি গুলোর কথা মনে পড়লে শরীর শিহরিত হয়ে উঠে। তার ছেলে মায়ের মৃত্যুতে নিজেকে ছয় মাসের জন্য রুমে বন্দী করে ফেলে। কারোর সঙ্গে কোনো কথা নয়,খাওয়া দাওয়া নায়,ছেলে অবস্থা দেখে তুহিন সাহেব সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে পরেন। এক পর্যায়ে তাকে হসপিটালাইজ করতে তখন যেয়ে আরুশ স্বাভাবিকে ফিরে আসে,বাইরে যাওয়া শুরু করে। তুহিন সাহেব সুস্থ হওয়ার পর পরই আরুশ বিদেশে চলে যায়। আজ তুহিন সাহেবের অনুরোধে ফিরে এসেছে ঘরের ছেলে ঘরে।

__”আরুশ রাগ না করলে একটা কথা বলবো!”

__”বাবা যা বলার বলে ফেলো!”

তুহিন সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে আরুশকে দেখে নিলো। আরুশ স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে আছে তার প্লেটের দিকে। তুহিন সাহেবের বলতে দেরি দেখে আরুশ বলল,

__”তুমি কি বলবে?”

তুহিন সাহেবের ঝটকা ভাঙলো। তিনি বললেন,

__”তোর মায়ের পর এই বাড়ি কোনো মেয়ে আসেনি তাই আমি বলতে চাচ্ছিলাম,,,,,”

__”করো বিয়ে! এতে আবার আমাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে!”

__”ধুর ছাগল!!!” তুহিন সাহেব বজ্রাঘাতের ন্যায় বলে উঠলেন। আরুশ খাওয়া থামিয়ে তুহিন সাহেবের দিকে তাকালো।

__”তোর বাপ আমি,,, বাপের সামনে এইভাবে কথা বলতে হয়?”

__”ভুল কী বললাম, তোমার উল্টে বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে,বিয়ে করতে চাচ্ছো লজ্জা তো তোমার করা উচিত!”

__”বেয়াদব ছেলে! কে বলেছে আমি বিয়ে করতে চেয়েছি,আমি তোর বিয়ের কথা বলছিলাম! পুরো কথা না শুনে বাজে বকে!”

আরুশ বাপের কথা শুনে হাসে। প্লেটে জল ঢেলে উঠে দাঁড়াই। কিচেনে যেয়ে প্লেট রেখে হাত ধুয়ে পুনোরায় ফিরে আসলো নিজের স্থানে। তুহিন সাহেব ছেলের দিকে অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছে।

__”কি বল! কোনো মেয়ে কি পছন্দ আছে?”

__”মেয়ে তো পছন্দ আছে, শুধু বিয়ের জন্য তোমার বৌমা হ্যাঁ বললেই অর্ধেক বিয়ে কমপ্লিট !”

__”কী বলিস!? তুই দেখছি আমার থেকেও ফাস্ট! মেয়ে কী করে?”

__”এখন অর্নাস কমপ্লিট করেছে। সামনে আমাদের কম্পানিতে চাকরি করবে!”

__”মানে?” বিস্মিত স্বরে কৌতুহলীক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল তুহিন সাহেব। আরুশ প্রতি উত্তরে মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো। তুহিন সাহেবও উঠে দাঁড়ালো। আরুশ চুপ করে উপরে যেতে লাগলো। তুহিন সাহেব বললেন,

__”সম্পূর্ণটা বলে যা!”

__”আগে প্রেম করি তারপর পুরো টুকু বলবো!”
_________

সকালে ফোনের রিং এ ঘুম ভাঙল দ্যূতির। ঘুম জড়ানো চোখে দ্যূতি নাম্বার না দেখেই কল রিসিভ করে কানে ধরল। ঘুম জড়ানো স্বরে বলল,

__”হ্যালো?!”

__”মিস্ দেবাদৃতা দ্যূতির সঙ্গে কথা বলছি?” — কলের অপর প্রান্ত থেকে একটি মেয়ে মিষ্টি গলায় জিজ্ঞেস করল।

__”জ্বী বলছি!”

__”আমি ‘𝑪𝑯𝑶𝑾𝑫𝑯𝑼𝑹𝒀 𝑳𝑬𝑮𝑨𝑪𝒀 𝑮𝑹𝑶𝑼𝑷’ থেকে বলছি! আপনি ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন,,,”

__”জ্বী দিয়েছিলাম।”। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল দ্যূতি।

__”আপনি সিলেক্ট হয়েছেন!”

__”কীঈঈঈঈঈঈঈঈ?”। লাফিয়ে উঠল দ্যূতি।

খাটের পরে পায়ের উপর ভাঁজ করে বসে অবাক চোখে সামনে তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে রইল দ্যূতি।

__”জ্বী! আপনি সিলেক্ট হয়েছেন এবং কালকে থেকে জয়েন্ট করতে হবে এ্যাজ এন ইন্টার্ন ইন ইকোনমি সেক্টর!”

বলে কল কেটে গেলো। দ্যূতি কানের থেকে ফোন খাটের উপর রেখে নিজের চুল টানতে শুরু করল।

__”কী ভাবে সম্ভব? কীভাবে সম্ভব? ওই ছাগলটা আমাকে কিভাবে চাকরি দিতে পারে?”

_______

দ্যূতি খাবারের প্লেট নিয়ে খাটে বসল। মুখ বেজার হয়ে রয়েছে। এই চাকরি সে নেবে নাকি নেবে না। সে কনফিউজ হয়ে পরেছে। এখন উপায়?

দ্যূতি তাড়াতাড়ি করে পাশের থেকে ফোন হাতে নিয়ে পিউকে কল করল। চার বার রিং হতেই কল রিসিভ হলো,

__”পিউ আপিইইইইইই!!”

__”কী হয়েছে?”

__”চাকরি হয়ে গেছে!”

__”তাহলে এতো টেনশনে কেন?”

__”ছাগল টা আমাকে চাকরি দিয়েছে!”

__”কে ছাগল?” পিউ বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করল।

__”আরে! ওই যে ওই ছাগলটা, নাম টা যেন কী,আরুশ না ফারুশ!…”

__”আরুশ!?”

__”হুম তো ভালো তো!”

__”কী ভালো? যাকে এতো বাজে অপমান করলাম সে আমাকে চাকরি দেবে কেন? কোনো তো রহস্য রয়েছে এর পিছনে…..?”

দ্যূতি গলাটা একদম খাদে নামিয়ে কথাটা বলল।

__”হ্যাঁ তোরে তো কিডন্যাপ করবে তাই তোকে চাকরি দিয়েছে…..”

__”আপিইইইই!!!!”

__”কী আপি! তারা কি চাকরি চেহারা দেখে দেই নাকি?, যোগ্যতা দেখে দেই? তোর যোগ্যতা আছে তাই তোকে দিয়েছে!”

__”কিন্তু…?”

__”বেশি বেশি ভাবছো তুমি…..”

দ্যূতিকে বুঝিয়ে বলল পিউ। এরপর অনেক কথা হলো দু’জনের মাঝে। দ্যূতি এখনো কনফিউজড! তার মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,,

__”ছাগলটা আমাকে চাকরি কেন দিচ্ছে?”

চলবে………

[কেমন লেগেছে জানাবেন🥰]