#জোৎস্না_রাতে_তুমি_আর_আমি — [৭]
লেখনীতে;- #রুদ্রিকা_বেদী
__”কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?”
আরুশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল দ্যূতি। আরুশ কোনো জবাব না দিয়ে গাড়ি চালানোর দিকে ফোকাস করে আছে। দ্যূতি বিরক্ত হয়ে আবার জিজ্ঞেস করল,
__”কিছু জিগ্গেস করলাম! কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আপনার মতলব তো আমার ভালো লাগছে না! কি করতে চাচ্ছেন আমার সাথে?”
দ্যূতির কপালে ভাঁজের দাগ স্পষ্ট। আরুশ দ্যূতির পানে একবার তাকাল। তাকিয়ে আবার চোখ সামনে নিলো। আরুশের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে ওর কিছুই যায় আসে না। দ্যূতি রাগে হাত ছোড়াছুড়ি শুরু করল। দ্যূতির পাগলামো দেখে আরুশ গাড়ি সাইডে দাঁড় করালো। সঙ্গে সঙ্গে দ্যূতির ছটফটানিও বন্ধ হয়ে গেল। আরুশ নিজের সিট বেল্ট খুলে দ্যূতির দিকে ঝুঁকে গেলো। দ্যূতি জানালার সঙ্গে সেঁটে গেল। আরুশ দ্যূতির বাহু দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
__”আর যদি একটু নড়চড় করো তাহলে পাশে নর্দমা আছে সেখানে চুবনি দিয়াবো বলে রাখলাম।”
কথা বলে আরুশ পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে গাড়ি স্ট্যাট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। গাড়িতে স্ট্যাটাস দেওয়ার আগে আরুশ একটি বারের জন্য দ্যূতির দিকে তাকালো। দ্যূতি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আগের মতো করেই। আরুশ গাড়ি স্ট্যাট করল।
.
গাড়ি এসে থামলো ডাক্তারের চেম্বারের সামনে। পুরো পথে দ্যূতি আর একটাও কথা বলেনি। চুপচাপ করে সামনে তাকিয়ে ছিলো। আরুশ গাড়ি থেকে নেমে দ্যূতির সাইডে যেয়ে দরজা খুলে বলল,
__”নামেন!”
দ্যূতি রাগান্বিত চোখে আরুশের দিকে তাকালো। আরুশ তাতে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে পুনরায় বলল,
__”নামো!”
দ্যূতি উপায় না পেয়ে নেমে পড়ল। দ্যূতি পায়ের ব্যাথা নিয়ে মাটিতে দাঁড়াতেই যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠলো। আরুশ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ঝটপট করে আগের মতো কোলে তুলে নিলো। কোলে তুলেই দ্যূতির দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলল,
__”কোনো কথা বলবা না!”
বলে একমিনিট দাঁড়ালো না। ওখান থেকে ভিতরে ঢুকলো চেম্বারে। আরুশ রিসেপশনিস্ট কাছে গিয়ে বলল,
__”মাহমুদ ভিতরে আছে? ওনার কাছে আমার এ্যাপোইনমেন্ট রয়েছে।”
রিসেপশনিস্ট একবার অবাক চোখে তাকিয়ে নিয়ে বলল,
__”হ্যাঁ উনি ভিতরে আছেন! আপনি ভিতরে যান!”
আরুশ দ্যূতিকে নিয়ে রুমে ঢুকলো। ডাক্তারদের রুম যেমনটি হয় তেমনই। আরুশ দ্যূতিকে চেয়ারে বসিয়ে পাশের টাই নিজে বসল। সামনের ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে বলল,
__”এই নে তোর রোগী! পায়ে মোচ এসেছে! দেখ কেটে কুটে ঠিক করা যায় কিনা?”
আরুশের কথা শুনে অবাক ভয়ার্ত রাগান্বিত সব অনুভূতি মিশিয়ে তাকালো। সামনের মানুষটা আরুশের কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো। দ্যূতি তার দিকে কাতর দৃষ্টিতে তাকালো।
মাহমুদের দৃষ্টি দ্যূতির উপর পরতেই কিছুক্ষণের জন্য স্থির হয়ে গেলো। সেই স্থিতিশীলতা আরুশের চোখ এড়িয়ে গেলো না। আরুশ গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
__”তুই কি দেখবি?”
__”আমি তো দেখছিই” মাহমুদ মুগ্ধ নয়নে দ্যূতির পানে তাকিয়ে উত্তর দিলো। আরুশ টেবিলের উপর সশব্দে হাত রেখে বলল,
__”পা দেখতে বলেছি!”
মাহমুদের হুঁশ ফেলল। দ্যূতি আরুশের রগচটা চেহারা দেখে ঢোক গিলল ছোট করে। মাহমুদ আরুশের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দ্যূতির কাছে এসে বলল,
__”আপনি একটু এখানে বেডে শুইতে পারবেন?”
পাশের চেক আপ বেডের দিকে ইশারা করে বলল। আরুশ উঠে দাঁড়িয়ে দ্যূতিকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিলো তারপর মাহমুদের দিকে তাকিয়ে বলল,
__”এইবার ভালো করে পা দেখ! শুধু পা’ই দেখবি!”
মাহমুদ আস্তে আস্তে দ্যূতির পায়ের দিকে এগিয়ে আরুশের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আবার পায়ের দিকে তাকালো। আরুশের দৃষ্টি মাহমুদের উপরই বন্দি।
.
অনেকক্ষণ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে মাহমুদ হাসিমুখে আরুশের দিকে তাকিয়ে বলল,
__”ভাই চিন্তা করিস না! পা ভেঙ্গে যায়নি। সব ঠিক আছে! ঔষধ দিচ্ছি লিখে খাইলে আর একটা মলম দিচ্ছি সেটা মালিশ করলেই ঠিক হয়ে যাবে।”
আরুশ দ্যূতির দিকে তাকালো। দ্যূতি বাচ্চাদের মতো মুখ করে ওদের দুজনের কথা শুনছিল। আরুশ দ্যূতির দিক থেকে নজর সরিয়ে বলল,
__”থ্যাংকস! তোর ফি কত?”
আরুশের কথা মাহমুদ রেগে গিয়েছে এমন ভান করে বলল,
__”ফি? সিরিয়াসলি? তোর কাছ থেকে যদি আমার ফি নিতে হয় তাহলে আমার ডাক্তার হওয়ার দরকার কি ভাই?”
__”কিন্তু?”
মাহমুদ থামিয়ে দিলো আরুশ কে। তারপর বলল,
__”তোর যদি আমার ফি দিতেই হয় তাহলে তাড়াতাড়ি তোদের বিয়েতে দাওয়াত কর সেটাই অনেক বড় ফি হবে!”
মাহমুদের কথা শুনে আরুশের গম্ভীর মুখ বাচ্চাদের মতো খুশি হয়ে উঠল। দ্যূতি বিষম খেয়ে উঠে বসল। মাহমুদের উদ্দেশ্য করে বলল,
__”আমি উনার গার্লফ্রেন্ড না! আপনি ভুল ভাবছেন!”
মাহমুদ দ্যূতির কথা শুনে আরুশের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। আরুশ বলল,
__”তোকে আমি পরে বোঝাচ্ছি!” বলে দ্যূতিকে পুনরায় কোলে তুলে নিলো।
মাহমুদের দিকে তাকিয়ে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে আসলো। দ্যূতি আরুশের দিকে তাকিয়ে বলল,
__”ভিতরে ওইটা কি হলো? আপনার ফ্রেন্ড ওমন বলল কেন? আর আপনিই বা কি বোঝাবেন পরে?”
আরুশ গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো। দ্যূতিকে নরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
__”তোমাকেও পরে বোঝাবো!”
বলে গাড়ির দরজা খুলে ওকে ভিতরে সাবধানে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে যেয়ে বসল। দ্যূতি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,
__”আমি সত্যিই বলতাম,আপনি একটা অসভ্য ছাগল!”
চলবে…..