ঝলসে যাব জানি পর্ব-০২

0
191

#ঝলসে_যাব_জানি
#Part_2
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আমিয়া ঘরের দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে আসে। আশরাফ শরীফ আমিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আর কত ক্ষণ এভাবে নিজের জেদ বজায় রাখবে? নিজের ভালোটা তো এবার বোঝো তুমি। শুভ্র ভালো ছেলে, ওর সাথে তোমার জীবন অনেক সুখের হবে।”

আমিয়া বলার মতো কিছু খুঁজে পায়না। সে কিভাবে বলবে তার শুভ্রকে একদম পছন্দ হয়নি। সে শুভ্রকে একদম সহ্য করতে পারে না। এত ভালো কেন হবে একটা মানুষ? তবে শুভ্রর একটা দোষ খুঁজে বের করতে পারলো আমিয়া। শুভ্রর বয়স একটু বেশি, প্রায় ৩২/৩৩ আর আমিয়ার বয়স ২২. এই বয়সের পার্থক্যটাকেই সে এখন নিজের অস্ত্র বানাতে চাচ্ছে। তাই আমিয়া আশরাফ শরীফের উদ্দ্যেশ করে বলল,”এ তুমি কেমন ছেলে পছন্দ করেছ? বয়স তো আমার থেকে অনেক বেশি।”

“অনেক না,মাত্র ১০ বছরের বড়। এটাকে নিয়ে ইস্যু তৈরি করো না। ও একজন যোগ্য ছেলে। তোমাকে সুখী রাখবে।”

“আমার সুখ তুমি যদি বুঝতে তাহলে হয়েই যেত বাবা। তুমি কখনো আমাকে বুঝতে পারো নি।”

“আমি এত তর্ক করতে চাইছি না। আমার শুভ্রকে পছন্দ হয়েছে এবং ওর সাথেই আমি তোমার বিয়ে দেব এটাই শেষ কথা।”

আমিয়া আর কিছু বলতে পারল না। আশরাফ শরীফ তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রস্থান করল। আমিয়াও মনে মনে বলল,”বিয়ে তো আমি নিজের পছন্দের ছেলেকেই করব। তুমি আমার উপর কোন জোর জবরদস্তি করতে পারবে না।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শহরের একটি নামীদামী হোটেল ব্লু অরিজিন। এই হোটেলের একটি বিলাসবহুল কক্ষে বসে আছে টিনা মির্জা। টিনার হাত পা কাপছে। বাপ্পি চৌধুরীর গার্লফ্রেন্ড সে। শর্তে হেরে যাওয়ায় তাই সে টিনাকে পাঠিয়ে দিয়েছে আহনাফের শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার জন্য। টিনার অবশ্য এতে তেমন অসুবিধা নেই। কারণ সে লোভী প্রকৃতির মেয়ে। এর আগেও তার দুজন বয়ফ্রেন্ড ছিল এবং তাদের সাথে রুমডেটও সে করছে। শুধু তাই নয়, আরো কিছু ছেলের সাথেও রুমডেট করেছে যাদের সে জাস্ট ফ্রেন্ড মনে কর‍তো। বাপ্পির মতো মালদার পার্টি পেয়ে সে বাপ্পিতে মজেছিল। বাপ্পির সাথে প্রেম করে তার লাভ বই ক্ষতি হচ্ছে না। মাসে মাসে তার দামি মেকআপ সামগ্রীর খরচ এবং অন্যান্য ভোগ বিলাসের টাকা বাপ্পিই তো দিচ্ছে। তাই বাপ্পি যখন তাকে আহনাফের কাছে আসতে বলত তখন শুরুতে গাইগুই করলেও পরে নিজের স্বার্থে রাজি হয়ে যায়। বাপ্পি বেকে বসলে তো সে সব হারাবে। তার বিনিময়ে নাহয় আরেক ছেলের সাথে রাত কাটাবে। এতে তো কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু এত সময় ধরে অপেক্ষা করতে তার একদম ভালো লাগছে না। টিনা অধৈর্য হয়ে উঠল। উঠে চলে যেতে নেবে এমন সময় দরজা খুলে রুমের ভেতরে প্রবেশ করল আহনাফ। তার চোখমুখ শক্ত। টিনা আহনাফকে দেখে বললো,”আমি আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। আমি টিনা মির্জা, বাপ্পির গার্লফ্রেন্ড।”

বলেই সে বিছানায় বসে নিজের পোশাক সরিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে। আহনাফ এগিয়ে এসে টিনার মুখে থুথু মা*রে। আচমকা এমন ঘটনায় টিনা হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে। রুষ্ট হয়ে বলে,”এটা কি করলেন আপনি?”

আহনাফ দ্বিগুণ রাগে টিনার গলা চেপে ধরে বলে ওঠে,”তোর বাপ্পীকে কি বলে দিস এই আহনাফ কারো এঁটো মা*ল খায় না। তোর জন্য এই থুথু ছাড়া আমার কাছে কিছু নেই। তোর মতো বাজারের মেয়েকে স্পর্শ করতেও ঘৃণা লাগে।”

বলেই আহনাফ দ্রুত বেগে বেরিয়ে যায়। লজ্জায় অপমানে কাপতে থাকে টিনা। আহনাফের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,”এর পরিণাম আপনাকে ভোগ করতে হবে আহনাফ চৌধুরী।”

~~~~~~~~~~~~~
রুপকথা আজ ভার্সিটিতে এসেই ক্যাম্পাস থেকে দূরে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের সামনে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আহনাফ গতকাল অন্য একটা মেয়েকে স্পর্শ করেছে, তার সাথে থেকেছে ভাবতেই ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসছে। রূপকথা যে বড্ড ভালোবাসে আহনাফকে। সেই স্কুলজীবন থেকে লোকটাকে ভালোবেসেছে। সেই প্রেমকে ভুলে যাওয়া কি এতই সোজা? কিন্তু এক চরিত্রহীন ছেলের সাথেও সে নিজেকে জড়াতে চায় না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যতই কষ্ট হোক না কেন এই সম্পর্কটা আর রাখবে না। আহনাফের সাথে ব্রেকাপ করবেই।

আহনাফ ভার্সিটিতে এসে দূর্জয়, সাগরসহ তার বন্ধুদের সাথে ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে। রূপকথাকে নিয়ে যেন তার কোন ভাবনাই নেই। আচমকা কেউ এসে তাদের টেবিলে জোরে শব্দ করে। আহনাফ শব্দ অনুসরণ করে তাকাতেই দেখতে পায় আমিয়াকে। আহনাফ যতদূর জানে এই মেয়েটা রূপকথার বেস্ট ফ্রেন্ড। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বলল,”কি সমস্যা তোমার?”

আমিয়া একপলক দূর্জয়ের দিকে তাকালো। সে নিজের মতো কফি খেতে ব্যস্ত। দূর্জয়ের থেকে চোখ ফিরিয়ে আহনাফকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,”আপনি তো দেখছি ভীষণ বদ লোক আহনাফ ভাই। ঐদিকে রূপ আপনাকে মনে করে কেঁদে চলেছে আর আপনি এখানে বসে আড্ডা দিচ্ছেন? আপনার কি ওর প্রতি কোন অনুভূতি নেই?”

“আমার অনুভূতি আছে কি নেই সেই কৈফিয়ত নিশ্চয়ই তোমাকে দেব না। আর তুমি আমাদের মাঝে ঢোকার চেষ্টা করো না। রূপের বেস্ট ফ্রেন্ড আছ সেটা হয়েই থাকো। অনাধিকার চর্চা আমার পছন্দ না।”

আহনাফ রেগে গেছে ভীষণ। এদিকে দূর্জয় আচমকা বলে ওঠে,”ছাড় না, এসব মেয়েদের কথায় এত পাত্তা দিতে নেই। এদের কাজই ঘেউঘেউ করা।”

আমিয়ার মাথা হঠাৎ ভীষণ গরম হয়ে গেল। সে দূর্জয়ের উদ্দ্যেশ্যে বলল,”মেয়েদের সম্পর্কে কোন মন্তব্য করার আগে মনে রাখবেন যে আপনার মাও একজন মেয়ে। তাই ভদ্রতা ভুলে যাবেন না।”

দূর্জয় আচমকা উঠে দাঁড়িয়ে আমিয়ার কাছাকাছি এসে তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলে,”আমাকে ভদ্রতা শেখাতে এসো না মেয়ে, আমি অভদ্রতায় পিএচডি করেছি।”

আমিয়া বলার মতো কিছু খুঁজে পায় না। দূর্জয় কাছে আসায় তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেছে। সে বুঝতে পারছে না এই অনুভূতির কারণ। কিন্তু দূর্জয়কে দেখলেই তার এমন অনুভূতি হয়।

রূপকথাও ইতিমধ্যে সেখানে পৌঁছে গেছে। সে এসে আমিয়ার হাত টেনে ধরে বলে,”তুই এদের সাথে মুখ লাগাতে আসিস না আমিয়া। চল এখান থেকে।”

“রূপ, ওয়েট।”

আহনাফের করুণ কন্ঠস্বর। রূপকথা না দাঁড়ালেও আমিয়া থেমে যায়। রূপকথা রেগে বলে,”আমিয়া তুই দাড়াচ্ছিস কেন?”

“আহনাফ ভাই কি বলতে চায় শোন, তুই তো ওনাকে ভালোবাসিস। ওনাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবি না।”

“তাই বলে একজন চরিত্রহীন লোকের সাথে আমি থাকতে পারব না। আমার ভালোবাসা বেশি দামি নয়, আমি সেই পুরুষের সাথে থাকতে পারব না যার দেহে অন্য নারীর স্পর্শ আছে।”

আহনাফ রূপকথার সম্মুখে এসে তাকে আকড়ে ধরে বলে,”লুক এট মাই আই, রূপ। তোমার কি মনে হয়, আমি তুমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকাবো?”

রূপ তাকায় না আহনাফের দিকে। কারণ সে জানে তাকালেই দূর্বল হয়ে পড়বে। বরঞ্চ সে হাত ঝাড়া দিয়ে বল,”যেই পুরুষ তার প্রেমিকাকে নিয়ে সওদা করে,সে কাপুরুষ। আর আমি কোন কাপুরুষের সাথে সম্পর্কে থাকতে চাই না। আর না তো এমন কোন পুরুষের সাথে যে অন্য নারীর সাথে..।”

“রূপ..”

রূপকথা কোন কথা গ্রাহ্য না করে হাত ঝটকা দিয়ে চলে যায়।

to be continue…..