ঝলসে যাব জানি পর্ব-০৩

0
189

#ঝলসে_যাব_জানি
#Part_3
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রূপকথা ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে আবারো সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের সামনে এসে দাঁড়ায়। আমিয়া ছুটে আসে তার পিছন পিছন। রূপকথা আমিয়াকে দেখে বলে,”তুই কেন এলি এখানে? আমাকে একটু একা থাকতে দে না!”

আমিয়া রূপকথার কাছে এসে তার কাধে হাত রেখে বলে,”আমি বুঝতে পারছি রূপ তোর কষ্টটা। ভালোবাসার মানুষ কষ্ট দিলে যে সেই কষ্ট বড্ড বুকে লাগে।”

রূপকথা মলিন হেসে বলে,”ভুল মানুষকে ভালোবাসলে কষ্ট তো পেতেই হবে। দোষটা আমারই ছিল। আমি ভেবেছিলাম ভালোবাসা দিয়ে বদলে ফেলব আহনাফকে। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। আহনাফকে ভালোবেসে আমি ওকে বদলাতে পারিনি, বরঞ্চ নিজে ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছি, ঝলসে গেছি একদম।”

এসব কথা বলতে বলতেই রূপকথা আমিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তুই সেদিন বললি না, তোর বাবা তোর জন্য ছেলে দেখছে, তুই একটা কাজ কর তোর বাবার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করে নে। আঙ্কেল বিচক্ষণ মানুষ, তোর জন্য ভালো কিছুই উনি খুঁজে বের করবেন। তুই আমার মতো বোকামি করিস না আমিয়া।”

আমিয়া রূপকথার এমন কথা শুনে খানিক রেগে বলে,”তুই নিজে ভালোবাসা দিয়ে আহনাফ ভাইকে বদলে দিতে পারিস নি জন্য ভাবিস না যে, আর কেউই পারবে না। আমার বিশ্বাস আছে নিজের উপর। আমি জানি,আমি যাকে ভালোবাসব সে যদি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষটাও হয় তবুও আমি নিজের ভালোবাসা দিয়ে তাকে বদলে দেব।”

রূপকথা আবারো মলিন হেসে বলে,”তুই ভুল ভাবছিস। কারো ভালোবাসা কাউকে বদলে দিতে পারে না। এই ভুল ধারণার জন্যই এত মেয়ের কপালে দুঃখ নেমে আসে।”

আমিয়া রূপকথার কথায় কানই দেয়না। রূপকথা যদি জানতে পারে আমিয়ার বাবা তার সাথে প্রফেসর শুভ্রর বিয়ে ঠিক করেছে তাহলে কেমন রিয়্যাক্ট করবে? নিশ্চয়ই বলবে, তুই এত ভালো বর পেতে চলেছিস এটা তোর ভাগ্য। ওনার মতো ভালো মানুষই হয় না। কিন্তু আমিয়া কিভাবে বোঝাবে রূপকথাকে যে এমন ভালো মানুষ তার পছন্দ নয়। তার পছন্দ দূর্জয়ের মতো বেপরোয়া, উশৃংখল ছেলে। আমিয়া দূর্জয়ের কথা ভেবে নিজে নিজেই হাসতে থাকে। রূপকথা সেটা খেয়াল করে বলে,”কিরে? হাসছিস কেন?”

আমিয়া হাসি থামিয়ে বলে,”কিছু না, চল ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

রূপকথাও নিজের চোখের জল মুছে বলে,”হ্যাঁ, চল।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আজ শুভ্রর ক্লাস ছিল আমিয়ার। পুরো ক্লাসে আমিয়া ভীষণ নার্ভাস ছিল। যার কারণে পড়ায় মনযোগ দিতে পারে নি। যদিও শুভ্র ক্লাসের ফাকে একবারো আমিয়ার দিকে তাকায় নি, সে প্রতিদিন যেমন করে ক্লাস নেয় আজও তেমনই নিয়েছে। তদুপরি আমিয়ার কেমন জানি অদ্ভুত লাগছিল। কারণ এই লোকটা কাল তাকে দেখতে এসেছিল। ক্লাস শেষে যে যার মতো বেরিয়ে আসে।

রূপকথা তো শুভ্র স্যারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কারণ সে অনেক ভালো ভাবে ক্লাস নেয়। রোজকার মতো আজও রূপকথা শুভ্রর প্রশংসা করতে করতে বলে,”শুভ্র স্যারের ক্লাসগুলো একদম মিস করা যায়না। ওনার মতো এত ভালো করে আর কোন স্যারও পড়া বোঝাতে পারেন না।”

রূপকথার কথায় আমিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,”এই টপিক বাদ দে তো।”

রূপকথা বুঝতে পারে না আমিয়া হঠাৎ কেন এমন রিয়্যাক্ট করছে। এরইমধ্যে তারা দেখতে পায় ক্যাম্পাসে বেশ ভালোই জটলা লেগেছে। আমিয়া রূপকথাকে বলে,”এই রূপ, ওখানে এত ভিড় কেন?”

রূপকথাও ওদিকে তাকিয়ে বলে,”হ্যাঁ, তাইতো। মনে হচ্ছে কোন ঝামেলা লেগেছে।”

“চল তো গিয়ে দেখি।”

এই কথা বলেই আমিয়া রূপকথার জন্য অপেক্ষা না করে নিজেই ছুটে যায়। রূপকথাও যায় তার পিছু পিছু। আমিয়ার বরাবরই এসবে আগ্রহ বেশি।

গতকালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দূর্জয়,আহনাফদের সাথে বাপ্পীর ঝামেলা লেগেছে। বাপ্পীকে টিনা আহনাফের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়েছে, যার দরুণ বাপ্পী আজ ভার্সিটিতে এসেই হাঙ্গামা শুরু করে দিয়েছে। বাপ্পীর দলবলের সাথে দূর্জয়দের ভালোই ফাইটিং চলছিল৷ এরমধ্যে বাপ্পী একটা হকি স্টিক নিয়ে দূর্জয়কে মা*রতে উদ্যত হয়। কিন্তু আহনাফ দূর্জয়কে সরিয়ে মাঝখানে চলে আসে যার ফলে তার মাথায় আঘাত লাগে। সাথে সাথেই তার মাথা ফেটে যায় এবং সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সাগররা এগিয়ে এসে আহনাফকে আগলে নেয়। দূর্জয় নিজের বন্ধুর এই অবস্থা দেখে ভীষণ রেগে যায়। আহনাফ তার সবথেকে দূর্বলতার যায়গা। তাই দূর্জয় ছুটে এসে বাপ্পীকে মা*রতে শুরু করে। সাগরের উদ্দ্যেশ্যে চেচিয়ে বলে,”আহনাফকে হাসপাতালে নিয়ে যা।”

সাগর তার কিছু বন্ধুকে সাথে নিয়ে আহনাফকে নিয়ে রওনা দেয় হাসপাতালের দিকে। এদিকে বাপ্পীর প্রতি দূর্জয়ের রাগ মাত্রা ছাড়িয়ে দেয়। সে মা*রতে মা*রতে বাপ্পীকে মাটিতে শুইয়ে দেয় এবং নিজের হাতে একটি ইট তুলে নেয়। উদ্দ্যেশ্য বাপ্পীর মাথা থেতলে দেয়া। দূর্জয় ইট দিয়ে বাপ্পীর মাথায় আঘাত করতে যাবে তার আগেই শুভ্র সেখানে পৌঁছে যায়। সে ছুটে এসে দূর্জয়কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলে,”কি করছ টা কি? ওকে মে*রে ফেলবে নাকি?”

দূর্জয় বলে ওঠে,”সরে যান সামনে থেকে। ওর এত বড় সাহস আমার দোস্তের গায়ে হাত তোলে। আজকে ওকে আমি শেষ করে দিব।”

ততক্ষণে পুলিশও উপস্থিত হয় ঘটনাস্থলে। ঝামেলা আন্দাজ করতে পেরে শুভ্রই অনেক আগে পুলিশকে ডেকে পাঠিয়েছে। পুলিশ এসে দূর্জয়ের হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ায়। দূর্জয় পুলিশের উপরও চোটপাট করতে থাকে। বলতে থাকে,”তোরা সর,ওকে না মে*রে আমি শান্তি পাবো না।”

পুলিশ টানতে টানতে দূর্জয়কে নিয়ে যায়। দূর থেকে এই ঘটনার সাক্ষী হয় আমিয়া ও রূপকথা। কয়েকজন স্টুডেন্ট বলাবলি করছিল,”শুনেছি এই দূর্জয়ের বাবা বিশাল বড়লোক ব্যবসায়ী। দেখবি ঠিকই আবার বের করে আনবে।”

“যা বলেছিস। জেল তো আমাদের মতো মধ্যবিত্ত আর গরীবদের জন্য। বড়লোকদের আবার কিসের জেল!”

শুভ্র সব স্টুডেন্টের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তোমরা সবাই যে যার ক্লাসে যাও।”

বাপ্পির অবস্থা ভীষণ খারাপ হয়ে যাওয়ায় তার বন্ধুরা তাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছোটে।

এদিকে রূপকথা ছটফট করতে থাকে। কারণ আহনাফ আঘাত পেয়েছে। আমিয়া সেটা খেয়াল করে রূপকথাকে বলে,”তুই কি আহনাফ ভাইকে দেখতে হাসপাতালে যাবি?”

রূপকথা নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে,”না, যাবো না।”

“কেন?”

“দেখ, আমি চাইনা ওর প্রতি আর কোন দূর্বলতা রাখতে। ও কেন গেছিল মা*রামারি করতে? আমি তো যেতে বলিনি। নিজের দোষে মাথা ফাটিয়েছে এবার নিজে বুঝে নিক। তাছাড়া ওর বন্ধুরা আছে ওকে সামলানোর জন্য। আমাকে ওর প্রয়োজন পড়বে না।”

বলেই রূপকথা ক্লাসের দিকে রওনা দেয়। এদিকে আমিয়ার মন খারাপ হয়ে গেছে কারণ দূর্জয়কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শুভ্র আমিয়াকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে। আমিয়ার কাছাকাছি এসে বলে,”তুমি এখানে কি করছ? যাও ক্লাসের দিকে যাও।”

শুভ্রর উপস্থিতি আমিয়াকে অস্বস্তি বোধ করায়৷ তাই সে আর না দাঁড়িয়ে ক্লাসের দিকে যায়। আমিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে শুভ্র। গতকাল এই মেয়েটিকে তার বাবা দেখে এসেছে তার বউ করার জন্য। ফিরে এসেছে থেকে মেয়েটার চিন্তা তার মাথা থেকে যাচ্ছে না। শুভ্রর সাথে আগে কখনো এমনটা হয়নি। তার বাবাকে যতটা সিরিয়াস মনে হয়েছে তাতে সে একপ্রকার নিশ্চিত এই মেয়েটাই তার বউ হবে। ব্যাপারটা ভাবতেই শুভ্রর হৃদয়ে তোলপাড় শুরু হয়।

~~~~~~
ভার্সিটি ছুটি হতেই আমিয়া রূপকথাকে জোর করতে থাকে আহনাফকে দেখতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রূপকথা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়,”তোর যদি যাওয়ার হয় যা কিন্তু আমাকে একদম জোর করবি না। অনেক ছোট হয়েছি আমি আর না। নিজেকে এত সস্তা বানানোর রুচি আমার নেই।”

বলেই সে নিজের বাসার উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। এদিকে আমিয়া বলে ওঠে,”আমাকে আহনাফ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যেতেই হবে। দূর্জয় এখন কেমন আছে না জানা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।”

to be continue…..