ঝলসে যাব জানি পর্ব-০৪

0
170

#ঝলসে_যাব_জানি
#Part_4
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আহনাফের জ্ঞান ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। সাগর, মুন্না সহ তার কিছু বন্ধু তাকে ঘিরে রেখেছে। কিন্তু আহনাফের চোখ খুঁজছে অন্য কাউকে। সাগর আহনাফকে বলে,”কেমন আছিস তুই এখন? মাথায় কি এখনো ব্যাথা আছে?”

আহনাফ উত্তর দেয়,”না। আচ্ছা, দূর্জয় কোথায় রে? ওকে তো দেখছি না।”

সাগর কিছু বলার আগেই মুন্না বলে,”দূর্জয়কে তো পুলিশ এরেস্ট করেছে!”

আহনাফ হতাশার শ্বাস ফেলে। সাগর বলে,”তুই চিন্তা করিস না। আঙ্কেল ঠিকই ওকে ছাড়িয়ে আনবে।”

আহনাফ বলে,”সেটা তো জানি আমি। কিন্তু….আচ্ছা রূপও কি আমায় দেখতে আসেনি?”

“কই, নাতো।”

আহনাফের এবার ভীষণ খারাপ লাগে। রূপকথা তো তাকে ভালোবাসে। আজ তো মেয়েটা ভার্সিটিতেও এসেছে। তাহলে ওর এরকম অবস্থার কথা জেনেও কেন দেখতে এলো না? আহনাফের মনে হলো, রূপকথা এবার তার উপর একটু বেশিই রেগে আছে। কিন্তু এই রাগ যে তাকে ভাঙাতেই হবে। আহনাফ রূপকথাকে ভালোবাসে,ঐ মেয়েটা তাকে ভীষণ স্বস্তি দেয়। রূপকথা ছাড়া অন্য কোন মেয়ের দিকে কখনো তাকাওনি। রূপ ছাড়া অন্য কোন মেয়ের কথা সে ভাবতেও পারেনা। সেদিন যদি দূর্জয় বাজিতে হেরেও যেত তাহলেও রূপের গায়ে আঁচড় লাগতে দিতো না। কিন্তু রূপকথা এই বিষয় নিয়েই তার উপর রেগে আছে। এবার আহনাফ আর নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। রূপকথাকে ছাড়া সে ভালো থাকবে না। যত দ্রুত সম্ভব তাকে রূপকথার মান ভাঙাতে হবে।

আহনাফের ভাবনার মাঝেই তার সামনে উপস্থিত হলো আমিয়া। কেবিনের বাইরে থেকে বলে উঠলো,”আসতে পারি?”

আহনাফ ভ্রু কুঁচকে আমিয়ার দিকে তাকালো। তাকে দেখতেই চোখটা চিকচিক করে উঠল। আমিয়া এসেছে তার মানে কি রূপও এসেছে? আহনাফের মনে আশা জাগ্রত হলো। মনে মনে বললো,”আমি জানি,রূপ মুখে যাই বলুক ও আমাকে ছাড়া ভালো থাকবে না।”

“হ্যাঁ, এসো।”

আহনাফের অনুমতি পেয়ে আমিয়া হাফাতে হাফাতে ভেতরে এলো। আহনাফ আমিয়াকে একা দেখে হতাশ হলো। শুধালো,”তুমি একাই এসেছ? রূপ আসেনি তোমার সাথে?”

আমিয়া দুপাশে মাথা নাড়ায়। আহনাফের হতাশা বাড়ে। আমিয়া বলে,”আমি আপনার খোঁজ নিতে এলাম ভাইয়া। আরও একটা বিশেষ দরকারে এসেছি।”

“কি দরকার?”

আহনাফ সন্দিহান স্বরে বলে ওঠে। আমিয়া একটু ভীত স্বরে বলে,”আমার আপনার বন্ধু দূর্জয়ের ব্যাপারে জানা ছিল। কোথায় আছেন এখন উনি?”

সাগর বলে,”ও তো জেলে..”

“হ্যাঁ, সেটাই জানতে চাচ্ছি কোন জেলে আছে আপনারা কি বলতে পারবেন?”

আহনাফের ব্যাপারটা খটকা লাগে। সে আমিয়াকে প্রশ্ন করে বসে,”দূর্জয়ের ব্যাপারে জেনে তুমি কি করবে?”

আমিয়া কিভাবে বলতে গিয়েও থেমে গেলো। সত্যি তো, দুশ্চিন্তার বসে এখানে চলে আসলেও এখন তো কোন যুক্তি দেখাতে পারছে না। আমিয়াকে চুপ দেখে আহনাফ বলে উঠলো,”তুমি কি দূর্জয়কে পছন্দ করো?”

আমিয়ার বুক কেপে উঠল। এই সত্যটা প্রকাশিত হয় সে চায়নি। তবে এখন আর অস্বীকারও করতে চায়না। তাই স্বীকার করে নিলো,”হ্যাঁ, আমি দূর্জয়কে পছন্দ করি।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিশাল মার্টিনেজ গাড়ি নিয়ে পুলিশ স্টেশনে উপস্থিত হলেন আজিজুল চৌধুরী। তার চোখ-মুখেই বিরক্তির ভাব স্পষ্ট। এই নিয়ে কবার তাকে জেলে আসতে হলো তিনি জানেন না৷ সবই হয়েছে এই ছেলের জন্য। নিজের ছেলে জন্য তাকে ফেলেও দিতে পারছেন না। আবার শান্তিও নেই। আজও যথারীতি থানায় উপস্থিত হয়ে পুলিশ কমিশনারের সাথে দেখা করলেন তিনি। পুলিশ কমিশনার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,”আপনার ছেলেকে বন্দি করে রাখতে পারে এমন শক্তি কি কোন থানার আছে? দোষ নেবেন না, একটা পরামর্শ দিন। নিজের ছেলেকে একটু শুধরে যেতে বলুন। এভাবে ওর জন্য আর কতবার থানায় এসে অপদূর হবেন?”

আজিজুল চৌধুরীর মুখ থমথমে হয়ে গেলো। তিনি একজন বিশাল ব্যবসায়ী হবার পাশাপাশি শহরের অন্যতম বনেদি পরিবারের সদস্য। যার যথেষ্ট সুনাম শহরে। কিন্তু এই ছেলের জন্য তার সুনাম মাটিতে মিশে যাবার জোগাড়।

কয়েকজন পুলিশ সদস্য দূর্জয়কে এনে দাড় করালো আজিজুল চৌধুরীর সম্মুখে। আজিজুল চৌধুরী ঘৃণায় বিষিয়ে গেলেন। দূর্জয় পুলিশদের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,”কি বলেছিলাম না..কারো বাপের শক্তি নেই এই আরহাম চৌধুরী দূর্জয়কে আটকে রাখার।”

আজিজুল চৌধুরী আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন দূর্জয়ের গালে। দূর্জয় বিনিময়ে হালকা হাসল। এসব আর তার গায়ে লাগে না। আজিজুল চৌধুরী এতেই ক্ষান্ত হলেন না৷ তীব্র আক্রোশে বললেন,”তোমার জন্য কি আমি একটুও শান্তি পাবো না? তোমার মা নিজে একা মরল কেন? তোমাকে নিয়েও মরত। তাহলে আমি একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম।”

দূর্জয় বাকা হেসে বলে,”মা চায়নি তুমি শান্তিতে থাকো। তাই তোমার চির অশান্তির বন্দোবস্ত করতে আমাকে রেখে গেছে।”

আজিজুল চৌধুরী বিড়বিড় করে আরো কিছু কটুবাক্য বলেন। দূর্জয় সেসবকে পাত্তা না দিয়ে বলে,”জনাব, আপনার কাজ হয়ে গেছে। এবার আপনি আসতে পারেন।”

আজিজুল চৌধুরী কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। স্থান ত্যাগ করলেন দ্রুত। যাওয়ার আগে স্পষ্টতই হুমকি দিয়ে বললেন,”এটাই শেষ বার। এরপর আর কখনো এই আজিজুল চৌধুরী তোমাকে জেল থেকে ছাড়াতে আসবে না।”

দূর্জয় গ্রাহ্য করলো না তার কথা। কারণ এমন হুমকি সে আগেও শুনেছে। কিন্তু সে জানে এটা কেবল ফাকা বুলি। দূর্জয়কে ভালোবেসে না হলেও নিজের সম্মান বাঁচানোর জন্য হলেও আজিজুল চৌধুরী এভাবে বারবার ছুটে আসতে রাজি।

~~~~~~~~~~~~~
আমিয়া মন খারাপ করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছে। আহনাফের কাছে দূর্জয়কে পছন্দ করার কথা বলার পর ওরা সব বন্ধুরা মিলে হাসাহাসি করেছে আমিয়ার উপর। মুন্না নামক ঐ ছেলেটা তাকে বলেছে,”দূর্জয়কে ভালোবাসতে যেও না মেয়ে, ঝলসে যাবে।”

আহনাফও বলেছে,”দূর্জয় হলো আগুন আর তুমি পানি। তোমাদের এক হওয়া অসম্ভব। তাই মনে এসব আশা পুষে না রাখাই তোমার জন্য বেটার।”

আমিয়া এসব কথা গ্রাহ্য করতে চায়না। সে জানে সে একদিন ঠিকই দূর্জয়ের মনে ভালোবাসার সঞ্চার করবে। তাতে যদি তাকে ঝলসে যেতে হয় তাহলে তাতেও রাজি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আজ শুভ্র বাড়িতে ফিরতেই শামসুর চৌধুরী তাকে জোর দিয়ে বলল,”সেদিন মেয়েটাকে দেখে আসার পর তো তোমার থেকে আর কোন সাড়া পেলাম না। তুমি কি এই বিয়েটা করতে চাওনা? আপত্তি থাকলে বলত পারো। আমি জোর করবো না।”

শুভ্র জানে এটা ডাহা মিথ্যা কথা। সে যদি আপত্তিও জানায় তবুও তার বাবা এই বিয়েটা দেবেন। কারণ সেই বাল্যকালে দুই বন্ধু মিলে ঠিক করেছিলেন তাদের দুজনের ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেবেন।

শুভ্রও চায়না বারণ করতে বা আপত্তি জানাতে। আমিয়া মেয়েটা ভারী মিষ্টি, একদম ভালো লাগার মতোই। শুভ্রর বেশ ভালো লেগেছিল মেয়েটাকে যেদিন প্রথম দেখেছিল। নিজের ছাত্রী ভেবেই এতদিন দূরে ছিল, নেহাতই ভদ্রলোক বলে। তবে এখন যখন সুযোগ এসেছে তখন হাতছাড়া কেন করবে? শুভ্র সম্মতি জানিয়ে বলে,”আমার তোমার পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে কোন আপত্তি নেই। যদি ঐ মেয়েরও এই বিয়েতে কোন আপত্তি না থাকে তো তুমি কথাবার্তা আগাতে পারো।”

শামসুর চৌধুরী প্রসন্ন হয়ে বলেন,”আমার আশরাফের সাথে কথা হয়েছে। আমিয়া এই বিয়েতে দ্বিমত করেনি। এখন তুইও যখন মত দিয়েছিস তখন আমি নিশ্চিন্তে বিয়ের কথাবার্তা আগাতে পারব।”

কথাটা শুনতেই অদ্ভুত প্রশান্তি বয়ে গেলো শুভ্রর মনে।

to be continue…..