ঝলসে যাব জানি পর্ব-০৭

0
178

#ঝলসে_যাব_জানি
#Part_7
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আমিয়া আজ উদাস মনে ভার্সিটি প্রাঙ্গনে পা রাখল। গতকালকের ঘটনার পর তার মন পুরোদমে ভেঙে গেছে। অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও তাকে শুভ্রর সাথে আংটি বদল করতে হয়েছে। যা তার জন্য যথেষ্ট পীড়াদায়ক। এখন আবার নতুন সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে তার জীবনে শুভ্রর আগমন। দূর্জয়ের প্রতি অনুভূতিও সে কোনভাবে অস্বীকার করতে পারবে না। এসব কিছু ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আমিয়া। জীবনে অনেক বদল এসেছে তার। তবে এখন পরিবারের স্বার্থে নিজের ভালোবাসাকে তাকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। ভিতর ভিতর এটা নিয়েই সে সম্পূর্ণ ঝলসে যাচ্ছে। এই অনুভূতির লড়াই তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। এর মাঝেই কোথা থেকে যেন দূর্জয় তার সামনে এসে দাঁড়ায়। দূর্জয়কে হঠাৎ এভাবে নিজের সামনে দেখে অবাক হয়ে যায় আমিয়া। মন খারাপ করে বলে,”আপনার কি কোন কিছুর প্রয়োজন?”

দূর্জয় আমিয়ার হঠাৎ এভাবে বদলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারল না। যেই মেয়ে কাল তাকে ভালোবাসার দাবি নিয়ে সামনে এলো সে আজ এমন শীতল ব্যবহার করছে। ব্যাপারটা সন্দেহজনক। দূর্জয় আমিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তুমি না বলে ছিলে যে, আমাকে ভালোবাসো? আমি তোমার পরীক্ষা নিতে চাইছিলাম মনে আছে?”

আমিয়া উপর নিচে মাথা নাড়ায়। দূর্জয় বলে ওঠে,”তুমি কি সেই পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত?”

আমিয়া এবার আর কিছু বলে না। একবার নিজের হাতের দিকে তাকায়। তার অনামিকা আঙুলে শোভা পাচ্ছে শুভ্রর পরিয়ে দেওয়া আংটি। এখন সে অন্য কারো বাগদত্তা। দূর্জয়ের কাছে ভালোবাসার পরীক্ষা দেওয়ার এখন সত্যি কি কোন মানে আছে? এ প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পায় না আমিয়া। দূর্জয় আমিয়াকে এমন চুপ দেখে বিরক্ত হয়ে বলে,”তুমি কি পরীক্ষা দিতে ভয় পাচ্ছ?”

আমিয়া কোন জবাব দিতে পারে না। দূর্জয় এর ধৈর্যের বাধ ভেঙে যেতে থাকে। সে এক প্রকার চেচিয়ে বলে,”এই মেয়ে তখন থেকে আমি কি বলে চলেছি তুমি শুনতে পাচ্ছ না? এভাবে চুপ করে স্ট্যাচু হয়ে আছ কেন?”

আমিয়া নিজেকে সামলে বলে,”আই নিড টু গো।”

আমিয়া যেতে নিতেই দূর্জয় তার হাত চেপে ধরে। আমিয়া হতবাক হয়ে পিছনে ফিরে তাকায়। দূর্জয় এগিয়ে এসে আমিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমাকে ভালোবাসার কথা বলে এখন এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ কেন?”

আমিয়া কিছু বলে ওঠার আগেই শুভ্র সেখানে চলে আসে। দূর্জয়কে এভাবে আমিয়ার হাত ধরে থাকতে দেখে ভীষণ রেগে যায় শুভ্র। দ্রুত ছুটে এসে দূর্জয় এর থেকে আমিয়ার হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,”নিজের হাত সামলে রেখো। আমার বাগদত্তার থেকে দূরেই থাকবে।”

দূর্জয় অবাক চোখে তাকায় আমিয়ার দিকে। এই মেয়েটা কাল তাকে ভালোবাসার কথা জানিয়েছে অথচ আজ জানতে পারছে সে অন্য কারো বাগদত্তা। এ কোন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে দূর্জয়কে। তদুপরি দূর্জয় নিজের অবাক হওয়া কাটিয়ে উঠে আমিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”নিজের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য শুভকামনা রইল। আমার সাথে এই মজাটা না করলেই ভালো হতো।”

বলেই উদাস মন নিয়ে প্রস্থান করল সে। আমিয়া দূর্জয় এর যাওয়ার পানে করুণ চোখে তাকিয়ে রইল। শুভ্র আমিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলল,”ঐ ছেলেটা কি তোমায় ডিস্টার্ব করছিল নাকি? এমন গুণ্ডাপাণ্ডা ছেলেদের থেকে দূরেই থাকো তো ভালো হয়।”

আমিয়া কিছু বলে উঠতে পারে না।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বাপ্পী চৌধুরী তার মামা আসিফ চৌধুরীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর আসিফ চৌধুরী অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন,”আমার ছেলে মেয়েরা সবাই বিদেশে সেটেল্ড। তাই আমি ভেবেছিলাম আমার ভাগ্নে হিসেবে আমার পরবর্তীতে ছাত্র সংগঠনে তোমাকেই নিজের স্থানটা ছেড়ে দেব। আর তুমি কি করলে? সামান্য একটা ছেলের কাছে বাজিতে হেরে চূড়ান্ত অপমানিত হয়ে পরে তার হাতেই মার খেলে। নিজের সাথে সাথে আমার সম্মানও মাটিতে ডুবিয়ে দিলে। এখন তো কেউ আর আমাকে মানতেই চাইবে না।”

বাপ্পী চৌধুরী মাথা নিচু করে বলে,”আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। তুমি আমায় আরেকটা সুযোগ দাও। আমি নিজেকে প্রমাণ করে দেব।”

আসিফ চৌধুরী বলেন,”সুযোগ বারবার আসে না। কিন্তু তুমি যেহেতু আমার ভাগ্নে তাই তোমাকে একটা দ্বিতীয় সুযোগ দিয়ে দেখতে পারি। তবে এটাই শেষ সুযোগ। আর হ্যাঁ, একটা পরামর্শ দেই। শত্রুর সাথে সবসময় অস্ত্র দিয়ে লড়াই করতে হয়না, মাঝে মাঝে ব্রেইন গেমও খেলতে হয়। আর এর জন্য প্রয়োজন শত্রুর দূর্বলতা খুঁজে বের করা।”

বাপ্পী চৌধুরী বাকা হেসে বলে,”ধন্যবাদ, মামা। এত সুন্দর পরামর্শ দেওয়ার জন্য।”

“এবার জলদি কাজে লেগে পড়ো। যারা তোমার আর আমার সম্মানে হাত দিয়েছে, আমাদের পথে কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বুদ্ধির মাধ্যমেই তাদের দূর্বলতা খুঁজে বের করে পথ থেকে উপড়ে ফেলো।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
দূর্জয় উদাস মনে ক্যান্টিনে বসে ছিল। সাগর তাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে শুধায়,”কি রে তোকে এত উদাস উদাস লাগছে কেন? কিছু কি হয়েছে?”

দূর্জয় মলিন হেসে বলে,”পৃথিবীতে কিছু অভাগা মানুষ থাকে জানিস, যাদের ভালোবাসার মতো কেউ থাকে না এই পৃথিবীতে।”

“হঠাৎ এই কথা কেন বলছিস তুই?”

দূর্জয় আর কিছু বলে না। মুন্না বলে ওঠে,”বুঝি না আজকাল কি হচ্ছে। একদিকে ঐ ব্যাটা আহনাফ মজনু হয়ে একটা মেয়ের পিছনে ঘুরছে তার মান ভাঙানোর জন্য আর এদিকে দূর্জয় এর না জানি কি হয়েছে যে এমন কথা বলছে।”

দূর্জয় হঠাৎ করে সাগর ও মুন্নার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আচ্ছা, আমি কি খুব খারাপ? আমাকে কি ভালোবাসা যায়না?”

“হঠাৎ এমন কথা কেন বলছিস তুই?”

সাগরের এমন প্রশ্নের জবাবে কি বলবে দূর্জয়ের সেটা জানা নেই। তাই সে চুপ থাকাকেই শ্রেয় মনে করে।

কাল যখন আমিয়া তাকে পছন্দ করে বলেছিল তখন এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছিল। তার মতো উশৃংখল ছেলেকে কেউ একজন পছন্দ করে এটা ভাবতেই মনে আনন্দের সঞ্চার হয়েছিল। দূর্জয় চেয়েছিল মেয়েটার ভালোবাসা পরখ করে দেখতে। যদিও তার আমিয়ার প্রতি কোন অঅনুভূতি ছিল না কিন্তু এই প্রথম কোন মেয়ে তার কাছে ভালোবাসার স্বীকারোক্তি করেছিল, তাই ভালো লাগা কাজ করছিল। কিন্তু আজ সেই সব ভালো লাগা বিলীন হয়ে গেল। দূর্জয় একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আমি বুঝি অনেক খারাপ একটা মানুষ। যে কারো ভালোবাসা ডিজার্ভ করি না।”

বলে আবারো একটা সিগারেট ধরায়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~
আহনাফ আজও রূপকথার পিছু নিয়েছে। রূপকথা আজ বিরক্ত হয়ে আহনাফকে বলেই দিলো,”তুমি কেন বুঝতে পারছ না, তোমার উপস্থিতি আমায় বিরক্ত করছে?”

আহনাফ বলে,”আমি নিজের সব ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছি তো। তাহলে তুমি কেন এমন পাষানের মতো আচরণ করছ?”

“কারণ আমি এত সহজে তোমায় ক্ষমা করতে পারবো না। আমি এখনো পারছি না সেই দিনটা ভুলতে। তুমি প্লিজ আর আমাকে ফলো করো না। তোমার উপস্থিতি আমার অস্বস্তির কারণ। তুমি আশেপাশে থাকলে আমার ভীষণ বিষাক্ত অনুভূতি হয়। যদি সত্যি আমায় ভালোবাসো তাহলে আমাকে একা থাকতে দাও।”

আহনাফের হঠাৎ ভীষণ কান্না পায়। সে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে,”ঠিক আছে, তুমি যা চাও তাই হবে রূপ। তুমি যতক্ষণ না চাইবে আমি আর তোমার সামনে আসব না। আশা করি, তোমার এই অভিমান কেটে যাবে। আমি অনন্তকাল অপেক্ষা করতে রাজি আছি সেই সময়টার জন্য, যখন তুমি আমাকে অন্তর থেকে ক্ষমা করতে পারবে। তবে একটা কথা জেনে রেখো, আমার ভালোবাসা তোমার প্রতি সবসময় একই ছিল এবং একই থাকবে। কোন একদিন আমি নিজের জীবন দিয়ে হলেও এই ভালোবাসার প্রমাণ দেব।”

বলেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করে আহনাফ। রূপকথা তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
to be continue…..