ঝলসে যাব জানি পর্ব-০৮

0
192

#ঝলসে_যাব_জানি
#Part_8
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আমিয়া বাসায় এসে মন খারাপ করে বসে আছে। তার বারবার মনে পড়ছে দূর্জয়ের ঐ অসহায় মুখশ্রী। যা তাকে বিন্দুমাত্র শান্তি দিতে চাইছে না। একটা ছেলে যাকে সে গতকাল ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আজ তাকে এমন ভাবে ঠকালো! হ্যাঁ, এটা তো এক প্রকার ঠকানোই হয়। নিশ্চয়ই ছেলেটা অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে। এটা ভেবেই সে গুমড়ে মরছে। আমিয়ার সাথে এমন আগে কখনো হয়নি। আমিয়া বুঝতে পারছে না এই পরিস্থিতিতে কি করা উচিৎ। এমন সময় তার ফোনে কল আসে। রূপকথা ফোন করেছে। আমিয়া এত বিরক্তির মাঝেও ফোনটা রিসিভ করে বলে,”হ্যাঁ, রূপ। বল কি বলবি!”

“তুই ঠিক আছিস আমিয়া?”

“হ্যাঁ…ঠিক থাকবো না কেন?”

“তোর গলা শুনে আমার কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে।”

“গলাটা একটু খারাপ হয়েছে।”

“আমার সাথে মিথ্যা বলে লাভ নেই আমিয়া, আমি তোর মনের কথা বুঝতে পারি এটা ভুলে যাস না। এমনি এমনি তোর বেস্টফ্রেন্ড হইনি। বল আমায় কি হয়েছে?”

আমিয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। কিভাবে এখন সে সব ঘটনা খুলে বলবে। বলতে ইচ্ছাও করছে না। আবার রূপের কাছে মিথ্যা বলেও লাভ নেই। তাই সে বলে,”বাবা আমার বিয়ে এক প্রকার ঠিক করে ফেলেছে। গতকাল আংটি বদলও হয়ে গেছে।”

রূপকথা অবাক হয়ে বলল,”এত কিছু হয়ে গেল অথচ তুই আমায় জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না? এ কেমন বন্ধু তুই আমার?”

“জানানোর সময়ই পাই নি। সব কিছু এত জলদি হয়ে গেল যে…তাছাড়া আমি এটা মন থেকেও মেনে নিতে পারছি না।”

“কি সমস্যা হয়েছে বল আমায়।”

“আমার হবু বর কে জানিস?”

রূপকথা সন্দিহান স্বরে বলে,”না। কে? আমি কি তাকে চিনি?”

“হ্যাঁ, খুব ভালো করেই চিনিস। তিনি আর কেউ নন তোর প্রিয় টিচার, প্রফেসর শুভ্র।”

রূপকথা বিস্মিত হয়ে যায় আমিয়ার কথা শুনে। অবাক স্বরে বলে ওঠে,”তুই সত্যি বলছিস আমিয়া? শুভ্র স্যারের সাথে তোর বিয়ে হবে?”

আমিয়া উদাস সুরে বলে,”জ্বি।”

“এটা তো খুব ভালো ব্যাপার। শুভ্র স্যার অনেক ভালো মানুষ। কলেজে ওনার কত সুনাম, কোন স্ক্যান্ডালে লোকটার নাম নেই। এমন কাউকে বর হিসেবে পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার। তাহলে তুই মন খারাপ করছিস কেন?”

আমিয়া এমনিতেই বিষন্ন মনে ছিল। এখন আবার রূপকথার এমন কথা তার রাগের পারদ আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই তো সে বলে,”তোর যখন এত পছন্দ হচ্ছে তো তুই ওনাকে বিয়ে করে নে। আমায় কেন বলছিস? ”

“তুই তো বললি, তোর বাবা বিয়ে ঠিক করে বলেছে। তার মানে, জোরপূর্বক হোক বা স্বেচ্ছায় তুই মত দিয়েই ফেলেছিস তাইনা?”

“হুম। আচ্ছা রূপ..তুই কি পারবি আহনাফ ভাইকে ছেড়ে অন্য কাউকে বেছে নিতে?”

হঠাৎ আমিয়ার এমন প্রশ্নে তব্দা খেয়ে যায় রূপ। বলার মতো কিছু খুঁজে না পেয়ে প্রসঙ্গ বদল করে বলে,”এসব কথা থাক। যে জন্য তোকে ফোন করছি সেটা বলি। আজ আমি একটা বৃক্ষরোপণ মেলায় অংশ নেয়ার জন্য সাভারের ঐদিকে যাচ্ছি। ফিরতে একটু রাত হবে। আমি চাচ্ছি, তুই আমার সাথে আয়।”

আমিয়া বলে দেয়,”আমি যেতে পারব না রে। আমার মন মানসিকতা বেশি ভালো নেই।”

“এসব বললে আমি শুনবো না, তোকে আসতেই হবে।”

“বোঝার চেষ্টা কর রূপ। আমি যেতে পারব না। তুই আহনাফ ভাইকে নিয়ে চলে যা।”

“ঠিক আছে, তোদের কাউকে আসতে হবে না। আমি একাই চলে যাব।”

বলেই রূপকথা ফোন রেখে দেয়। আহনাফের সাথে দূরত্ব তৈরির পর তার কারো সঙ্গের প্রয়োজন। অথচ তার প্রিয় বান্ধবী তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। এর থেকে কষ্টের আর কি হতে পারে? রূপকথা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এখন সে একাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। এই উপলক্ষে মনকে একটু অন্যদিকে ডাইভার্ট করা যাবে।

~~~~~~~~

❝ফাগুন মাসে কাঁচা বাঁশে
গুনগুনিয়ে ভ্রমর আসে,
হায় ফাগুন মাসে কাঁচা বাঁশে
গুনগুনিয়ে ভ্রমর আসে,
প্রেমের লাগে বুকটা করে আ আ উ
দুষ্টু কোকিল ডাকে রে কুকু কুকু, কুকু কুকু
মনে বাঁশি বাজে রে কুকু কুকু, কুকু কুকু।

চোখে চোখে কথা বলো
মুখে কিছুই বলো না,
ভালোবাসার নামে কেন
করো শুধুই ছলনা।
হ্যাঁ, চোখে চোখে কথা বলো
মুখে কিছুই বলো না,
ভালোবাসার নামে কেন
করো শুধুই ছলনা।

থাকলে তুমি আশেপাশে
মনে আমার আবেগ আসে,
প্রেমের লাগে বুকটা করে আ আ উ
দুষ্টু কোকিল ডাকে রে কুকু কুকু, কুকু কুকু
মনে বাঁশি বাজে রে কুকু কুকু, কুকু কুকু।❞

ঢাকার একটি স্বনামধন্য বারে বসে উক্ত গানে বার ডান্সারদের নাচ উপভোগ করে চলেছে বাপ্পি চৌধুরী। তার মাথায় এখন প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। তার থেকে খানিক শান্তি পেতে এখানে আসা। একের পর এক মদের গ্লাস ফাকা করে চলেছে সে। মনে তবুও শান্তি আসছে না। আহনাফের করা সেদিনের অপমান এখনো বুকে বাজছে না। ছেলেটার এত বড় সাহস তার গার্লফ্রেন্ডের গায়ে থু থু ছিটায়, এর প্রতিশোধ নিতেই হবে।

বাপ্পী চৌধুরী বসে বসে এসবই ভাবছিল তখনই তার চেলা মান্নার আগমন ঘটে। মান্নাকে দেখেই বাপ্পী বলে ওঠে,”কিরে?! যার খোঁজ নিতে পাঠালাম তার খোঁজ কি পেলি?”

মুন্না বিদঘুটে হেসে বলে,”আপনার দেওয়া কাজে আমার কখনো ভুল হয়েছে ওস্তাদ? আজকেও হয়নি৷ আমি ঐ আহনাফের দূর্বলতার সব খোঁজ এনেছি। মেয়েটার নাম হচ্ছে রূপকথা খানম। বাসা মিরপুরে তবে…”

“তবে কি?”

“আজ মেয়েটা সাভারে বৃক্ষরোপণ মেলায় যাচ্ছে, তাও সম্পূর্ণ একা। ফিরতে বেশ রাত হবে।”

মান্নার কথা শুনে বাপ্পী চৌধুরী আরেক পেগ ঢোক গিলে ফিচলে হেসে বলে,”রাত যত গভীর হয়..ততোই তো মজা।”

সাথে সাথে মুন্নাও হেসে ওঠে। বাপ্পী চৌধুরী বলে ওঠে,”আহনাফ..তুই আমাকে যতটা অপমান আর কষ্ট দিয়েছিস তার থেকে কয়েকগুণ বেশি কষ্ট তোকে ফিরিয়ে দেব। তুই শুধু তৈরি থাক সেটার জন্য।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সব বন্ধুদের মাঝে উপস্থিত থেকেও আহনাফ আজ যেন এখানে নেই। আহনাফের অন্যমনস্ক দূর্জয়, সাগর, মুন্না কারো নজর এড়াচ্ছে না। দূর্জয় একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলে,”তোর এই দেবদাস মুড আর কয় বছর চলবে বা*ল? একটা মেয়ের জন্য এত কেন ভাবিস? দেখতে ভালো আছিস, ওর মতো হাজারটা মেয়ে পেয়ে যাবি।”

আহনাফ মলিন হেসে বলে,”কিন্তু আমার যে শুধু ওকেই চাই।”

“ঢং।”

“ঢং না দূর্জয়, এটা আমার ভালোবাসা। তুই সেটা বুঝবি না। আগে কাউকে ভালোবাস, তারপর বুঝতে পারবি।”

আহনাফের কথাটা শুনেই দূর্জয়ের মনে পড়ে যায় আমিয়া নামক মেয়েটার কথা। মেয়েটা তার সাথে ভালোবাসার নামে ছলনা করেছে। তাকে ভালোবাসার কথা বলে অন্য একটা লোককে বিয়ে করতে চলেছে। ব্যাপারটা ভাবতেই তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে। দূর্জয় জোরে শব্দ করে বলে,”ভালোবাসার মায়েরে চু**। আমার লাগবে না ভালোবাসা।'”

বলেই সে গটগট পায়ে হেটে চলে যায়। আহনাফ যেহেতু আমিয়া আর দূর্জয়ের ঘটনা বিস্তারিত জানেনা তাই সে অবাক স্বরে বলে,”এর আবার কি হলো? এমন রিয়্যাক্ট করছে কেন?”

সাগর বলে ওঠে,”ওর মন আবারো খুব বাজে ভাবে ভেঙে গেছে। ওর মনে ভালোবাসার ফুল ফোটার আগেই কেউ সেটা বাজেভাবে ঝলসে দিয়ে গেছে। নিজের মায়ের পরিণতির জন্য এমনি সে ভালোবাসায় বিশ্বাস করত না এখন তো আরো করবে না।”

to be continue…..