ঝলসে যাব জানি পর্ব-০৯

0
156

#ঝলসে_যাব_জানি
#Part_9(Bonus)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

রূপকথা সাভারে অনুষ্ঠিত বৃক্ষরোপণ মেলায় অংশ নিচ্ছে। নিজের হাতে ভাওর এলাকায় অনেক গাছ লাগাচ্ছে। রূপকথা একজন প্রকৃতিপ্রেমী। তাই তো নিজের জীবনের যাবতীয় সমস্যাকে দূরে ঠেলে দিয়ে প্রকৃতি সেবায় মন দিয়েছে৷ গাছ লাগানোর কাজ চলল সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত পর্যন্ত। ঘড়ির কাটায় তখন রাত ৮ টা। এমনিতে শহর এলাকায় এটা খুব বেশি সময় না, তবে সমস্যা হলো আজ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। যার কারণে রাস্তায় লোকের উপস্থিতি কম। রূপকথা যাবতীয় সব কাজে দ্রুতই রওনা দিলো বাড়ির দিকে। মেইন রাস্তায় এসে দেখল তেমন গাড়ি ঘোড়া নেই। অনেক অপেক্ষার পর একটা সিএনজি পেলো। অতঃপর সেই সিএনজিতেই উঠে পড়লো।

~~~~~~~~~~~
আহনাফ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না বেশিক্ষণ। যদিও সে রূপকথাকে কথা দিয়েছিল যে, আর তার সম্মুখীন হবে না তবুও সকাল থেকে রূপকথার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো রূপকথা একবারও বাড়ি থেকে বের হয়নি৷ ব্যাপারটা বেশ খটকা লেগেছিল আহনাফের। রূপকথার রুমের সামনে বেলকনিতে গিয়েও আহনাফ দেখলো সেখানে কারো অস্তিত্ব নেই। আহনাফের মনে সন্দেহ জাগে, তাহলে কি এখন রূপকথা তার কক্ষে নেই? নিজেকে দমিয়ে রাখতে না পেরে রূপকথাকে ফোন করল আহনাফ। কিন্তু ফোন নট রিচেবল বলছে। আহনাফের মনে ভয় ঢুকে গেল। একবার ভাবলো সব দ্বিধা দূরে ঠেলে রূপকথার বাড়িতে ঢুকে দেখবে৷ কিন্তু এতে যদি রূপকথা আবার রেগে যায় তাই ঝুঁকি নিতে চাইল না। এমনিতেই যথেষ্ট রেগে আছে মেয়েটা, এতদিন চেষ্টা করেও রাগ কমাতে পারছে না। তাই আহনাফ আর ঝুঁকি না নিয়ে নিজের ফোন থেকে রূপকথার ফেসবুক একাউন্ট লগ ইন করল। মেয়েটা এখনো নিজের পাসওয়ার্ড বদলায় নি দেখে স্বস্তি পেলো। রিলেশনে থাকার সময় সে আহনাফকে নিজের ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিয়েছিল, আহনাফও দিয়েছিল রূপকথাকে। রূপকথার আইডিতে লগ ইন করে দেখল সর্বশেষ আমিয়ার সাথে কথা বলেছে। আমিয়া রূপকথার বেস্টফ্রেন্ড। তাই সে রূপকথা কোথায় আছে সেই ব্যাপারে জানতে পারে–ভাবলো আহনাফ। আমিয়া সেই মুহুর্তে একটিভও ছিল। তাই আর দেরি না করে ম্যাসেজ দিয়ে বলে,”হাই আমিয়া, আমি আহনাফ। অনেকক্ষণ থেকে রূপের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু ওর দেখা পাচ্ছি না। আমার মনে হচ্ছে ও বাসায় নেই। এদিকে অনেক রাতও হয়েছে। আমার ওর জন্য বেশ চিন্তা হচ্ছে। তুমি কি জানো রূপ কোথায় আছে এই মুহুর্তে?”

ম্যাসেজটা পাঠানোর কিছু মুহুর্তের মধ্যেই নোটিফিকেশনের আওয়াজে বিরক্ত হয়ে ম্যাসেজটা সিন করলো আমিয়া। পুরো ম্যাসেজটা পড়ে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই নিলো। কারণ রূপকথা তাকে বলেছিল তার আইডির পাসওয়ার্ড আহনাফের কাছেও আছে। এদিকে এত রাতেও রূপকথা বাড়িতে ফেরেনি ভেবে আমিয়া দুশ্চিন্তায় পড়লো। মেয়েটা একা এত দূর সাভারে আছে। এই ঝড় বাদলের দিনে কোন বিপদে না পড়ে সেই ভাবনা থেকেই দ্রুত টাইপিং করে বলল,”ভাইয়া, রূপ সাভারে বৃক্ষরোপণ মেলায় অংশ নিতে গেছে। এতক্ষণে তো ওর ফেরার কথা। আপনি একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন। মেয়েটা সম্পূর্ণ একা গেছে।”

আমিয়ার ম্যাসেজটা দেখেই আহনাফের বুক ধক করে উঠল। এত রাতে মেয়েটা একা এত দূরে! যদি কোন বিপদে পড়ে! আর ভাবতে পারলো না আহনাফ। দ্রুত নিজের বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো সাভারের উদ্দেশ্যে। গাড়ির স্পিড যথাসম্ভব বাড়িয়ে নিলো। মনে মনে বলতে লাগল,”তুমি চিন্তা করো না রূপ। আমি এক্ষুনি আচ্ছি তোমার কাছে। আমি বেঁচে থাকতে কোন বিপদের আঁচ তোমার গায়ে লাগতে দেব না।”

এদিকে আমিয়াও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লো রূপকথার জন্য। এখন তার নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে। যদি সেও রূপকথার সাথে চলে যেত তাহলে ভালো হতো। এখন যদি রূপকথার কোন বিপদ হয়ে যায় তাহলে সে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। এদিকে আশরাফ শরীফও কোনমতে আমিয়াকে এত রাতে বের হতে দেবেন না। তাই আমিয়া আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর‍তে লাগলো যেন আহনাফ দ্রুত রূপের কাছে পৌঁছে যায় এবং সম্ভাব্য বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রূপকথা অনেকক্ষণ থেকে খেয়াল করছে একটা গাড়ি সমানে তাদের পেছনে পেছনে আসছে। তারা যেদিকে মোড় নিচ্ছে গাড়িটাও সেদিকে আসছে। ব্যাপারটা রূপকথার মনে ভয় সৃষ্টি করলো। ফোন বের করে দেখল নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না। একেই বোধহয় বলে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। এতক্ষণ তাও একটু আধটু মানুষ থাকলেও এখন তারা যেই রাস্তায় উঠেছে সেটা একদম ফাকা। চারদিক জনমানবহীন। দূর দূরাত্ব পর্যন্ত কোন লোকালয় নেই। ব্যাপারটা ভাবতেই রূপকথার শ্বাস বন্ধ হবার জোগাড়। মনে মনে আয়তুল্লাহ কুরেসি জপ করতে লাগল সে। এখানে একা আসাটাই ভুল হয়েছে। বাসায় না পৌঁছানো পর্যন্ত তার শান্তি নেই।

রূপকথার এসব ভাবনার মাঝেই হঠাৎ গাড়িটি বেশ জোরে ব্রেক কশে। রূপকথা বলে ওঠে,”কি হলো ভাইয়া? আপনি হঠাৎ থামলেন কেন?”

সিএনজি চালক অসহায় কন্ঠে বলল,”আমাদের সামনে থেকে একটা গাড়ি আটকে ধরেছে।”

রূপকথার মনে যেটুকু সাহস ছিল সেটাও আর রইলো না। ভয়ে অন্তরাত্মা কেপে উঠল। সম্ভাব্য ফলাফল অনুধাবন করতে পেরে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পেছন দিকে দৌড় দিলো। ৪-৫ জন লোক তার পেছনে দৌড়াতে লাগল৷ এদিকে একজন এগিয়ে এসে সিএনজি চালকের গলার চাকু ধরে বলল,”একদম বাড়াবাড়ি না, চুপচাপ সিএনজিতে উঠে বস। এখানে যা কিছু হচ্ছে তার সাথে তোর কোন লেনাদেনা নেই।”

সিএনজি চালক ভয়ে গুটিসুটি মেরে থাকে।

রূপকথা প্রাণপণে দৌড়ে চলেছে। থামলেই বিপদ, তাই দেহের সমস্ত শক্তি কাজে লাগিয়ে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ? তাই সুযোগ বুঝে একটা পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে ঢুকে লুকিয়ে থাকে রূপকথা। তাকে ধাওয়া করতে করতে কয়েকজন লোকও চলে আসে সেই স্থলে। তাদের মধ্যে ছিল বাপ্পী চৌধুরীও। সে তার অনুসারীদের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আমার মনে হয় ঐ মেয়ে এখানেই কোথাও লুকিয়ে বসে আছে। তোরা চারিদিকে খোঁজ। ওকে কিছুতেই পালিয়ে যেতে দিলে চলবে না। ঐ আহনাফের প্রাণভোমরা আছে ওর মধ্যে।”

রূপকথা বুঝল এভাবে বেশিক্ষণ টিকতে পারবে না। লুকিয়ে থেকে সে ওদের সব কথা শুনল। যতদূর বুঝল আহনাফের সাথে শত্রুতার জেরেই এই লোকগুলো তার পিছু নিয়েছে। রূপকথা নিজের ফোন বের করলো। অল্প অল্প নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে। রূপকথা যেন আশার আলো খুঁজে পেলো। ৯৯৯ এ ফোন করতে যাবে এমন সময় তার ফোন বেজে উঠল। আহনাফের কল।

ফোনের রিংটন শুনে সবাই দাঁড়িয়ে গেল। বাপ্পি সবার উদ্দ্যেশ্যে বলল,”শুনতে পাচ্ছিস? মেয়েটা মনে হয় ঐদিকে লুকিয়ে আছে। চল, আমার সাথে।”

রূপকথা বুঝল বাঁচার আর কোন উপায় নেই। এভাবে আর বেশিক্ষণ টেকা যাবে না। তাই সে পাশে পড়ে থাকা একটি রড তুলে নিয়ে এগিয়ে এলো। বাহাদুরির সাথে বলল,”কেউ এক পা সামনে আগাবি না। নাহলে কিন্তু আমি এখানে একদম রক্তারক্তি বাধিয়ে ফেলব।”

বাপ্পী সহ তার অনুগতরা সবাই হেসে উঠল রূপকথাকে দেখে। বাপ্পীর চ্যালা মান্না বলল,”তুই একা মেয়ে আমাদের কি করবি বে? শুধু চেয়ে চেয়ে দেখ আমরা তোর কি অবস্থা করি…”

রূপকথা যতই সাহসিকতা দেখাক সে জানে এদের সবার সাথে সে একা পেরে উঠতে পারবে না। তবু সে এত সহজে হার মানবে না। নিজেকে বাঁচাতে শেষ অব্দি লড়বে। হয় মারবে নাহয় মরবে। কিন্তু বিনা যুদ্ধে নাহি দিবে সুচক্র মেদেনী।

রূপকথা লোহার রডটা হাত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মান্না তার দিকে এগোতে নিতেই তার মাথায় আঘাত করে। মান্না মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। কিন্তু দ্রুতই উঠে বসে। ওরা ৫-৬ জন একসাথে এবার এগিয়ে আসে। রূপকথা বাপ্পীকে আঘাত করতে নিতেই সে রডটা ধরে ফেলে বলে,”ব্যস, অনেক দেখেছি তোর সাহসিকতা…এবার অন্যকিছু দেখি..”

বলেই রূপকথার দেহের দিকে লোলুভ দৃষ্টিতে তাকায়। বৃষ্টিতে ভেজায় তার সালোয়ারকামিজ শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। রূপকথা হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে। বাপ্পী তাকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,”বুলবুলি..তাকি ধুম..”

রূপকথা এখনো আশা ছেড়ে দেয়না। তার মনে হয় এক্ষুনি কেউ তাকে বাঁচাতে আসবে।

to be continue…..