ঝলসে যাব জানি পর্ব-১৪

0
159

#ঝলসে_যাব_জানি
#Part_14
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আমিয়া আজ খুশি খুশি মনে ভার্সিটিতে এসেছে। গতকাল শুভ্রর সাথে কথা বলার পর থেকে সে স্বস্তি অনুভব করছে। একটা বড় বোঝা যেন কাধ থেকে নেমে গেলো। এখন তার একটাই লক্ষ্য, যেকোন মূল্যে দূর্জয়ের মনে নিজের জন্য অনুভূতি তৈরি করা। আমিয়া এখন সেটাই করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

ভার্সিটিতে এসে দূর্জয়কে খুঁজে চলেছে আমিয়া৷ দূর্জয়ের দেখা না পেলেও শুভ্রর সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখা হয়ে গেলো৷ দুজনেই এতে অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আমিয়া জোরপূর্বক হাসল। শুভ্র পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বলল,”আমি বাসায় কথা বলেছি। তুমি এখন নিশ্চিত থাকতে পারো। আমার বাবা তোমার বাবার সাথে কথা বলে বিয়েটা ভেঙে দেবেন।”

বলেই শুভ্র স্থান ত্যাগ করে। এটুকু বলতেই তার বুকের বা পাশে অদ্ভুত ব্যাথা অনুভূত হয়। এদিকে আমিয়ার মনে প্রশান্তির বন্যা বয়ে যায়।

খুশি মনে সে ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু ক্যান্টিনে প্রবেশ করতেই তার মনের সব খুশি উবে যায়। কারণ ক্যান্টিনে ঢুকেই সে দেখতে পায়, আহনাফ ও রূপকথা একটি টেবিলে বসে একসাথে কফি খাচ্ছে এবং কি একটা বিষয় নিয়ে যেন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। দূর থেকে আমিয়াকে দেখে দূর্জয় উঠে দাঁড়ায়। শান্ত স্বরে রূপকথার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তোমার বেস্টফ্রেন্ড এসে গেছে। মেয়েটা আমাকে একটুও শান্তি দিচ্ছে না। ও কেন বুঝতে পারছে না ওর প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। তুমি একটু ওকে বুঝিয়ে দিও তো।”

রূপকথা মাথা নাড়িয়ে বলে,”আমি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করব। যদিও জানি না, ও কতটুকু বুঝবে। আর তুমি বাপ্পীর কোন খোঁজ পেলে আমাকে জানিও। ঐ শয়তানটার সাথে আমার অনেক বোঝাপড়া বাকি।”

দূর্জয় সম্মতি জানিয়ে বিদায় নেয়। আমিয়ার মুখোমুখি হতেই আমিয়া তাকায় কিছু বলার চেষ্টা করে। কিন্তু দূর্জয় আমিয়াকে পুরোপুরি ইগ্নোর করে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আমিয়া এতে ব্যথিত হয়। অতঃপর সামনে এগিয়ে গিয়ে রূপকথার পাশে বসে। রূপকথা আমিয়ার দিকে তাকায়। আমিয়া রূপকথাকে শুধায়,”তোরা দুজন কি কথা বলছিলি?”

“কিছু জরুরি কথা ছিল আহনাফের বিষয়ে।”

“ওহ আচ্ছা।”

রূপকথা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আমি তোকে আগেও বলেছি আজ আবারো বলছি, দূর্জয়ের আশা তুই ছেড়ে দে৷ ও তোকে পছন্দ করে না আজ নিজে আমায় বলেছে। তোর উপস্থিতি শুধু ওকে বিরক্তি দেয়।”

“এই বিরক্তিই একদিন ভালোবাসায় পরিণত হবে দেখিস।”

রূপকথা আমিয়ার এ কথার পিছে আর কিছু বলতে পায় না। মেয়েটা যে অসম্ভব জেদি আর ঘাড়ত্যাড়া সেটা সে জানে। তবুও কিছু সময় চুপ থেকে বলে,”শুভ্র স্যারকে তাহলে আর দোটানায় রাখিস না। তোর মনে যদি দূর্জয়কে নিয়ে অনুভূতি থাকে তাহলে ওনার সাথে যে তুই এনগেজমেন্ট হয়ে আছিস তার কি হবে?”

আমিয়া খুশি খুশি মনে বলে,”আমি এক্ষুনি তোকে এই ব্যাপারেই বলতাম। এই প্রব্লেম একদম সলভ। শুভ্র স্যারকে গতকাল আমি সব খুলে বলেছি। উনি নিজের পরিবারকে বলে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছেন।”

রূপকথা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,”তাহলে আর কি..এখন মরীচিকার পিছনে ছুটে চল। শুভ্র স্যারের মতো একজন ভালো মানুষকে হারানোর আফসোস হবে একসময় দেখিস।”

“আমার দরকার নেই এমন ভালো মানুষের।”

রূপকথা আমিয়ার কথায় বিরক্ত হচ্ছিল। তাই বলে,”ক্লাসের টাইম হয়ে যাচ্ছে, চল জলদি।”

অতঃপর দুজনেই ক্লাসের দিকে রওনা দেয়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমিয়া যথারীতি খুশি খুশি মনে নিজের বাড়িতে ফিরছিল। বাড়িতে ফিরেই সে দেখে চারিদিকে সাজসজ্জা চলছে৷ ব্যাপারটা দেখে সে ভ্রু কুচকায়। আনমনে বলে ওঠে,”এখন আবার কিসের আয়োজন চলছে?!”

বাড়িতে প্রবেশ করতেই আমিয়া দেখতে পায় তার বাবা আশরাফ শরীফ সাথে তার ফুফা, মামা সবাই উপস্থিত হয়ে একসাথে সবকিছুর তদারকি করছেন। আমিয়ার মামা তাকে দেখে সহাস্যে বলেন,”এই তো বিয়ের কনে উপস্থিত!”

আমিয়া হতবিহ্বল হয়ে যায় তার মামার কথা শুনে। বিস্ময় কাটিয়ে উঠে প্রশ্ন করে,”বিয়ের কনে মানে?”

আশরাফ শরীফ কঠিন স্বরে বলেন,”আমি আর শামসুর মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর ৩ দিন পরই তোমার আর শুভ্রর বিয়ে দেব। শুভ কাজে বেশি দেরি করতে নেই।”

এই কথা শুনে আমিয়া যেন আকাশ থেকে পড়ে। সে মনে মনে বলে,”শুভ্র স্যার তো সকালে বললেন যে উনি তোমার পরিবারকে রাজি করিয়েছেন যাতে বিয়েটা তারা ভেঙে দেয়, তাহলে এখন এসবের কি মানে!”

আমিয়ার ফুফা তার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তুই চিন্তা করিস না, এই ৩ দিনেই আমরা সবাই মিলে সব আয়োজন করে ফেলব। তোর ফুফু, মামি, কাজিনরাও এসেছে। যা সবার সাথে মিলে আনন্দ কর।”

আমিয়া বলে,”কিন্তু এত তাড়াহুড়োর কি আছে?!”

আশরাফ শরীফ মলিন স্বরে বলেন,”আমার শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তাই আমি চাইছি যত দ্রুত সম্ভব শুভ কাজটা সেরে ফেলতে। আশা করছি তুমি আর কোন আপত্তি করবে না।”

আমিয়া আর বলার মতো কিছু খুঁজে পায় না। কিন্তু তার ভীষণ রাগ হয়। আর এই সব রাগ গিয়ে জমা হয় শুভ্রর উপর। লোকটা তাকে এমন ভাবে ঠকালো। রাগে, দুঃখে আমিয়া দৌড়ে নিজের কক্ষে গিয়ে উপস্থিত হয়। দরজা আটকে দিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করে। তার মুখের সামনে দূর্জয়ের মুখশ্রী ভেসে ওঠে। রাগে ফোন বের করে শুভ্রর নাম্বার ডায়াল করে কল করে। কিছুক্ষণ রিং হবার পর শুভ্র ফোনটা রিসিভ করতেই তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলতে শুরু করে,”আপনাকে তো আমি ভদ্রলোক ভেবেছিলাম, স্যার। এই তার নমুনা? আপনি আমার সাথে এমন চিটারি করলেন? বিয়ে ভাঙার আশ্বাস দিয়ে এখন আবার জলদি বিয়ের বন্দোবস্ত করে ফেললেন। বাহ! আপনার অভিনয় থেকে আমি মুগ্ধ। আপনার তো প্রফেসর না অভিনেতা হওয়া উচিৎ ছিল..কি সুন্দর নিখুঁত অভিনয়। আমাকে কি বোকাটাই না বানালেন।”

“আমিয়া লিসেন…”

“আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাই না। আপনি একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন..আমি ম*রে যাবো তবু আপনাকে বিয়ে করবো না।”

বলেই সে ফোন রেখে দিলো। এদিকে শুভ্র হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পড়লো। সে তো নিজেই সবকিছুর হিসাব মিলাতে পারছে না। গতকাল রাতে সে তার বাবাকে বলেছিল সে আমিয়াকে বিয়ে করতে চায় না। তার বাবাও বলেছিল তার মত না থাকলে এই বিয়ে ভেঙে দেবেন। কিন্তু আজ বাড়িতে ফিরেই সে জানতে পারে তার বাবা এবং শরীফ আঙ্কেল মিলে বিয়ের ডেট এগিয়ে এনেছেন এবং ৩ দিন পরেই তাদের বিয়ে। ব্যাপারটায় সে নিজেই শকড! তার মধ্যে আমিয়ার তার প্রতি এই অভিযোগ তাকে আরো অসহায় করে তুলল। শুভ্র একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,”আমি কিছু না করেই এভাবে অপরাধী হয়ে গেলাম!”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~`
শামসুর চৌধুরী ও আশরাফ শরীফ একান্তে কথা বলছিলেন ফোনে। আশরাফ শরীফ কৃতজ্ঞতার সুরে বলেন,”আমি খুব খুশি যে তুই আমার অনুরোধটা রাখলি।”

“প্রথমে তো যখন শুভ্র জানালো যে, সে আমিয়াকে বিয়ে করতে চায়না তখনই আমি সন্দেহ করেছিলাম। কারণ শুভ্র তো বলেছিল তার আমিয়াকে পছন্দ। এরপর তোর কথাতেই সবটা নিশ্চিত হই।”

“আমি নিজের মেয়েকে হারে হারে চিনি শামসুর। ভাগ্য ভালো আমার এক কর্মচারী ওদের দুজনকে ক্যান্টিনে কথা বলতে দেখেছিল। তাই আমি বুঝে যাই শুভ্র নিজে থেকে এই বিয়েটা ভাঙে নি৷ আমিয়াই ওকে বলেছে এমন করতে।”

“কিন্তু তবুও রে আমি নিশ্চিত হতে পারছি না। আমিয়া মা যদি এই বিয়েটায় রাজি না থাকে তাহলে ওর অনিচ্ছায় এই বিয়েটা দেয়া কি ঠিক হবে?”

আশরাফ শরীফ বলেন,”আলবাত ঠিক হবে। আমি আমার মেয়েকে চিনি শামসুর। ও নিজের ভালোটা কখনো বোঝে না। ও গায়ে গতরেই যা বেড়েছে বুদ্ধি একদম হাটুর তলে। তাই আমাকেই দায়িত্ব নিয়ে ওর জীবনটা গুছিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তুই চিন্তা করিস না,আমি আমার মেয়েকে চিনি। একবার যদি বিয়েটা হয়ে যায় তারপর দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। একসময় ও ঠিকই শুভ্রকেও মেনে নেবে।”

“তাই যেন হয়।”

বলেই তারা কথোপকথন শেষ করে।

to be continue…..