#ঝলসে_যাব_জানি
#Part_16
#ইয়াসমিন_খন্দকার
আমিয়া ও শুভ্রর বিয়ে সম্পন্ন হলো। স্বভাব বশত বিয়ের পর বিদায়ের পালা আসতেই সকল মেয়ের চোখে অশ্রুর ঢ্ল নামে। কিন্তু ব্যতিক্রম আমিয়া। তার চোখে নেই বিন্দু মাত্র অশ্রু। আবার হাসিও শোভা পাচ্ছে না বদনে। সে যেন পুরোপুরি নিথর পাথরে পরিণত হয়েছে। পরিপূর্ণ আবেগহীন। শুভ্র আমিয়ার এই অবস্থা দেখে গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মেয়েটার জন্য তারও খারাপ লাগছে। হয়তো সে এই বিয়েতে রাজি ছিল না। কিন্তু শুভ্রও কিছু করার ছিল না। তার বাবা তাকে একপ্রকার হুমকি দিয়েই রাজি করিয়েছে এই বিয়েতে। শামসুর চৌধুরী তাকে বলেছিল, যদি সে এই বিয়েটা না করে তবে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন। এমনকি কারো সাথে আর যোগাযোগ রাখবেন না। নিজের বাবার এমন জেদের কাছে শুভ্রকে পরাস্ত হতেই হয়।
এদিকে রূপকথাও আমিয়াকে দেখে ভীষণ কষ্ট পায়। আমিয়ার অবস্থাটা সে আন্দাজ করতে পারছে কারণ কিছু দিন আগে সেও নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়েছে। এই ব্যাথা কত বেশি রূপকথা সেটা বোঝে৷ এপর্যায়ে তার দূর্জয়ের উপর রাগ হয়। কেন সে আমিয়াকে ফিরিয়ে দিল? আমিয়া তো তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসত। আবার পরক্ষনেই মনে হয় দূর্জয় ঠিক কাজই করেছে। এভাবে আমিয়ার আবেগকে প্রশয় দিলে ঠিক হতো না। বরং যা হয়েছে সেটাই ভালো।প্রফেসর শুভ্র ভালো মানুষ। তিনি নিশ্চয়ই আমিয়াকে ভালো রাখবেন। আর এক সময় আমিয়াও অতীত কে ভুলে গিয়ে শুভ্রর সাথে সানন্দে জীবন অতিবাহিত করতে পারবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমিয়া চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছাতেই চৌধুরী বাড়ির ঘরণী তথা তার শাশুড়ী সালমা চৌধুরী আমিয়াকে বরণ করে ঘরে তোলেন। আমিয়ার বড় জা অদিতি আমিয়াকে নিয়ে যায় নিজের সাথে। আমিয়াকে নিজের কক্ষে নিয়ে গিয়ে বলেন,”তুমি এখানে বসে একটু জিরিয়ে নাও। একটু পরে তোমাকে বাসর ঘরে নিয়ে যাওয়া হবে। তোমার অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি। কারণ আমিও এভাবে একসময় নিজের পরিবারের সবাইকে ছেড়ে এ বাড়িতে এসেছিলাম। আমারও প্রথম প্রথম খারাপ লাগত। কিন্তু এখন এখানে একদম মানিয়ে নিয়েছি। এই বাড়ির লোক গুলোই এখন আমার বেশি আপন হয়ে গেছে৷ সবাই এত ভালো। আমার তো নিজের স্বামীর মা-বাবাকে শ্বশুর-শ্বাশুড়ী কম নিজের মা-বাবা বেশি মনে হয়েছে। আর শুভ্র তো আমার ভাইয়ের অভাব পূরণ করেছে। সবাই ভীষণ ভালো। দেখিও এই বিয়েতে তুমি পস্তাবে না।”
আমিয়া গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। সে তো এসব কিছু চায় নি। সে চেয়েছিল শুধু দূর্জয়কে। তার সাথে ছোট্ট একটা সংসার পাতার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু সব কেমন জানি এলোমেলো হয়ে গেল। আজ তার সব স্বপ্নভঙ্গ হলো।
কিছু সময় পরেই আমিয়াকে তার বাসর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। বাসর ঘরে গিয়ে আমিয়া নিষ্প্রাণ, নিষ্প্রভ হয়ে ছিল। একদম চুপচাপ ছিল। কিছু সময় পর একটা শব্দ শুনতে পায়। কেউ ঘরে প্রবেশ করছে। আমিয়া চকিতে সামনে ফিরে তাকায়। শুভ্র কক্ষে প্রবেশ করে আমিয়ার সামনে এসে নম্র স্বরে বলে,”আমি জানি, তুমি আমাকে ভুল বুঝছ,আমাকে হয়তো বিশ্বাসও করবে না। তবে আমি সত্যিটাই বলি, আমি নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি এই বিয়ে টা যাতে কোন ভাবে আটকানো যায়। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। যাইহোক, বিশ্বাস না করা তোমার উপর ছেড়ে দিলাম। তবে আমার সম্পর্কে এই সম্পর্কে কোন জোরাজুরি থাকবে না৷ তুমি এখানে একদম নিজের মতো থাকতে পারো। আমি কখনো স্বামীর অধিকার ফলাবো না তোমার উপর।”
আমিয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আপনি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন? আমি করি। আমার এখন মনে হচ্ছে ভাগ্যে এটাই ছিল৷ তাই এটাই হয়েছে। আর এমনিতেও, আপনাকে দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই। আমি যার আশায় আপনার সাথে বিয়েটা ভেঙে দিতে চেয়েছিলাম তার মনে আমার জন্য বিন্দু মাত্র অনুভূতি নেই। তাই এর কোন ভবিষ্যতও ছিল না। আমি এই বিয়েটা ভাগ্য হিসেবেই মেনে নিয়েছি এবং আপনাকেও নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি। আমার শুধু আপনার কাছে একটাই চাওয়া আর সেটা হলো সময়। ব্যস, আমাকে কিছু দিন সময় দিন। আপনি চাইলে এখনই নিজের স্বামীর অধিকার ফলাতে পারেন আমি বাধা দেব না তবে অনুরোধ করব একটু সময় দেয়ার।”
শুভ্র বলে,”তোমার যত সময় দরকার তুমি নিতে পারো। আমার এত তাড়াহুড়ো নয়। তবে আমি তোমাকে একটা পরামর্শ দিব,অতীত ভুলে সামনে আগানোর চেষ্টা করো। এই চেষ্টায় প্রতি পর্যায়ে আমি তোমার সাথে থাকব। আমার পরিবারের সদস্য তুমি, আমার স্ত্রী। আমি আমার সকল দায়িত্বই পালন করব। আশা করি, তুমিও নিজের দায়িত্বে অবহেলা করবে না।”
আমিয়া মাথা নাড়ায়। শুভ্র নম্রস্বরে বলে,”অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমাতে পারো। আমি তোমার পাশে শুলে কোন অসুবিধা আছে? আসলে আমি সোফায় কিংবা কাউচে শুতে পারি না। তবে ভয় নেই, আমি যথেষ্ট দূরত্ব রেখেই শোবো।”
আমিয়া বলে,”না, আমার কোন অসুবিধা নেই। এটা তো আপনারই ঘর। আপনি চাইলে এখানে শুতেই পারেন।”
শুভ্র বলে,”তাহলে আমি এই পোশাক বদলে আসছি৷ তুমিও এই ভারী শাড়ি-গহনা খুলে, হালকা কিছু পড়ে নাও।”
বলেই শুভ্র বাথরুমে যায়। আমিয়া উঠে দাঁড়িয়ে চেঞ্জ করার প্রস্তুতি নেয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
গভীর রাত,
ক্লাবঘরে বসে সাগর ও মুন্না একে অপরের সাথে কিছু জরুরি আলাপ করছিল। এমন সময় সেখানে চলে আসে দূর্জয়। সে এসেই সাগর ও মুন্নার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”কি রে! তোরা কিসের আলাপ করছিস।”
সাগর দূর্জয়ের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”শুনলাম ঐ আমিয়া নামের মেয়েটার নাকি বিয়ে হয়েছে।”
মুন্না বলে,”তাও আবার আমাদের ভার্সিটির প্রফেসর শুভ্রর সাথে।”
আমিয়ার নাম শুনতেই দূর্জয় বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে বলে,”হ্যাঁ, তো তোদের কি সমস্যা?”
“সমস্যা তো নেই..কিন্তু…”
দূর্জয় বলে,”ঐ মেয়ের নাম আর নিবি না। ওর বিয়ে হয়েছে আমি খুব খুশি হয়েছি। দুই রাকাত নফল নামাজও আদায় করেছি এই খুশিতে। এখন আর কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করবে না।”
সাগর হেসে বলে,”কেন রে? তোর কি ঐ মেয়ের প্রতি কোন অনুভূতিই ছিল না?”
“না।”
“ওহ ভালো। তাহলে কার প্রতি অনুভূতি আছে?”
“কারো প্রতি নেই। আর কখনো হবেও না।”
“যদি হয়।”
“এসব ফালতু কথা বন্ধ কর৷ দূর্জয়ের জীবনে এসব পাতি অনুভূতির স্থান নেই। আমি মরে যাবো তবু কারো প্রেমে পড়বো না।”
সাগর বলে,”এসব কথা যারা বলে তারাই সবার আগে প্রেমে পড়ে। দেখিস, কারো প্রেম আবার তোকে ঝলসে না দেয়।”
দূর্জয় পাত্তা দেয় না সাগরের কথায়। এদিকে ঠিক সেই সময়ই দূর্জয়ের ফোন বেযে ওঠে।
দূর্জয় ফোন রিসিভ করতেই কেউ বিপরীত দিক থেকে বলে,”আপনি যার খোঁজ চেয়েছিলেন তার খোঁজ পেয়ে গেছি..সে ইন্ডিয়ায় যেতে পারে নি এখনো। সিলেটে অবস্থান করছে বর্তমানে। এখানেই চা বাগানের কাছাকাছি লুকিয়ে আছে। সুযোগ খুঁজছে বর্ডার পার করে আসামে যেতে কিন্তু পারছে না।”
“আর পাবেও না। কালই আমি আসছি ঐ বাপ্পীর কাল হয়ে।”
বলেই দূর্জয় ফোন কে’টে দিয়ে সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”ঐ কু*ত্তার বাচ্চাটার খোঁজ পেয়েছি। এবার আমি আহনাফের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবোই।”
to be continue…..