ঝিলমিল রোদ্দুরে পর্ব-১১+১২+১৩

0
1026

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-১১]
~আফিয়া আফরিন

আনোয়ার ইসলাম সরকার অর্থাৎ রোদ্দুরের দাদা এককালে এই এলাকার বেশ প্রতাপশালী একজন মানুষ ছিলেন। এলাকার উন্নয়নে চেয়ারম্যানের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভালো রকমের উন্নতি করেছিলেন। সেখান থেকেই এই এলাকার মানুষজন তার পুরো পরিবারকেই চেনে। ওনার খুব ইচ্ছে ছিল, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সরাসরি চেয়ারম্যান হয়ে মানুষজনের মুশকিল আসান করবে। তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ার কারণে তা আর পূরণ হয় নাই। বাবার এই আগ্রহের দিকটা ফজলুল সরকার এইবার বাস্তবে রূপ দিলেন। নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। অপরপক্ষ ক্ষ্যাপল প্রচন্ড, কারণ সরকারদের টেক্কা দেওয়া কঠিন বিষয়।
এইবার ফজলুল সরকারের প্রতিদ্বন্ধে রয়েছে ওসমান খন্দকার। এনাদের সাথে অনেক আগে থেকেই পারিবারিক বিরোধ রয়েছে নানান বিষয়ে। কখনো নিজেদের জায়গা জমি নিয়ে আবার কখনো ব্যবসা-বাণিজ্য নয়। আর এইবার সেই বিরোধ রাজনীতি এসে ষোলোকলা পূর্ণ করে দিল। মনোয়ার সরকার অবশ্য অনেকবার বড় ভাইজানকে বলেছেন, এইবার নির্বাচনে না দাঁড়াতে। এমনিতেই আশেপাশে শত্রুর অভাব নেই, অযথা আরও শত্রু বাড়িয়েও কাজ নেই। কিন্তু তিনি তা মানেন নাই। কার না কার ভয়ে, ঘরের মধ্যে লেজ গুটিয়ে বসে থাকবেন নাকি! ঘরের ছাদ’ও তো যেকোনো সময় মাথার উপর ভেঙে পড়তে পারে।

প্রায়ই সময় পাড়ার মোড়ে বারেক মামার চায়ের দোকানে বসে থাকতে দেখা যায়। আজ সকাল থেকে বেশ কয়েকবার একজন অচেনা লোককে তার খোঁজ করতে দেখা গেছে। ওই লোকটাকে এই এলাকার মানুষ আগে কখনো দেখে নাই বলেই, সকলে জানাল। মনোয়ার সরকার সেরকম কিছু মনে করতে পারলেন না। কন্ট্র্যাকের কাজের জন্য অনেকেই তার খোঁজ করে, কিন্তু তারা তো সরাসরি বাড়িতে যায় অথবা নিজের পরিচয় দেয়। এই অজ্ঞাত লোকটা নাকি নিজের নামটাও জানায় নাই। তার সাথে তো কারো দেখা করতে আসার কথা ছিল না, তাই তিনি বিষয়টা পাত্তা দিলেন না। তিনি চায়ের দোকানে বলে রাখলেন, ‘এরপর যদি উনি আমার খোঁজ করতে আসে, তাহলে তাকে সরাসরি বাড়িতে পাঠিয়ে দিবে।’

‘আচ্ছা ভাই।’
বাড়ি ফেরার পথে ওসমান খন্দকারের সাথে লাইব্রেরীর বা’পাশের রাস্তায় দেখা হয়ে গেল। লোকটাকে অনেক আগে থেকেই একইরকম দেখে আসছে। একটুখানিও বদলায় নাই। চেহারায় কেমন সন্দেহজনক একটা ভাব আছে। দেখলেই মনে হবে, এই ব্যাটা নিশ্চয়ই মনে মনে কোনো ছক কষছে।
মনোয়ার সরকারকে দেখেই কেমন অদ্ভুত হাসলেন! ঠোঁটের হাসির রেখা বিস্তৃত করে বললেন, ‘আরে ছোটো সাহেব ভালো আছো? শরীর ভালো তো? বাড়ির খোঁজখবর কি? আমার খালাম্মা ভালো আছেন? ডাক্তার সাবের কাছ থেকে শুনলাম বিগত কিছুদিন আগে তার শরীরটা নাকি খারাপ ছিল।’

‘আপনাদের দোয়ায় আম্মা’সহ সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। আপনারা ভালো আছেন তো?’
উনি মুখে উত্তর না দিয়ে উপর নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলেন। পান খেয়ে লাল করে ফেলা ঠোঁট আর দাঁতের সেই হাসিটা র’ক্তচো’ষার মতই ঠেকল মনোয়ার সরকারের কাছে!
.
গতকাল রায়হানের গায়ে হলুদে একমাত্র রোদ্দুর অনুপস্থিত ছিল। আজ বিয়েতে উপস্থিত থাকবে কিনা সেটা নিয়েও সন্দেহ! রায়হান কাল রাতে ফোন করে বহুত রাগারাগি করেছে। রোদ্দুর নির্বিকার ভঙ্গিতে বলেছে, ‘ভাই আমি এসব গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে গিয়ে কি করব বল? আমার কাজ কি?’

‘তুই শুধু নিজেরটাই দেখলি? আমি যে কতবার করে তোকে অনুরোধ করলাম, তার বেলায় কিছু না? হাসান, রাজ ওরা সবাই ছিল। মা বারবার তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলেন।’

‘আচ্ছা আচ্ছা, আমি কাল চলে আসব।’

‘ভাই তোকে আমার বিশ্বাস হয় না। শোন, জীবনে কত ঘটনা ঘটে যায়। তুই মনে হয় এই বিষয়টাকে অনেক বড় করে নিয়েছিস। বিয়েশাদী সব’ই আল্লাহর হাতে। নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তো ধরা খাবি’ই। যা হয়ে গেছে, সেটা ভুলে যা। আই থিঙ্ক সানিয়া তোকে তার মনের ধারে কাছেও রাখে। সো, ফরগেট এভরিথিং।’ খানিকটা ধমকের সুরে’ই কথাটা বলেছিল রায়হান।
রোদ্দুরের মনে তখন সানিয়া যতটা না প্রভাব ফেলছিল, তারচেয়েও বেশি প্রভাব ফেলছিল বাড়ির বিষয়টা। ওটা কোনোভাবেই মাথা থেকে নামাতে পারছে না।
দাদির কাছে কিছুদিন যাবত ফোন দিচ্ছিল, কিন্তু তিনি কিছুতেই ফোন রিসিভ করছে না। আর সানিয়া? সে যেমন রোদ্দুরকে মনে ধারেকাছেও রাখে নাই, রোদ্দুর’ও ওকে পুরোপুরি ভুলে যাওয়ার চেষ্টায় আছে। হোক না দীর্ঘদিনের প্রেম, তাতে কী? মানুষের তো বছর বছর গড়ে তোলা ভালোবাসাও এক নিমিষেই ভেঙে যায়!

সকাল সকাল হাসান এসে হাজির হলো। রায়হান তাকে পাঠিয়েছে। বিয়ের ব্যস্ততার কারণে নিজের আসা তো আর সম্ভব হচ্ছে না, তাই বন্ধুকেই পাঠিয়ে দিয়েছে।
হাসান এসেই তাড়াহুড়ো শুরু করে দিয়েছে। রোদ্দুর ওকে বলল, ‘ভাই! বিয়ে কখন? তুই এত তাড়াহুড়ো করিস কেন? সবকিছুতেই এমন করিস।’

‘আরে ভাই! তুই আমার দুঃখ কী বুঝবি? ওর যে শালী গুলো আছে, সব তো মিস হয়ে যাবে। আমি তো ভেবে রেখেছি আজ ভাবীর বান্ধবী পটিয়ে নিজের দিকটাও ক্লিয়ার করে নিব। বন্ধু-বান্ধব সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আমি সিঙ্গেল থাকলে কেমন দেখায় না! ইজ্জতের ব্যপার ভাই।’

রোদ্দুর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, কপাল চাপড়াল। এই ছেলে দু’দিন পর পর একটাকে পছন্দ করে বসে থাকে। এই কারণেই ওর কপালে আজ পর্যন্ত ঠিকঠাক প্রেম জুটল না। হাসানের কথা চিন্তাভাবনা করেই রোদ্দুর দ্রুত রেডি হয়ে নিল। আয়নার সামনে চুলগুলো ঠিক করতে নিতেই হাসান ফের দৌড়ে এলো। তাড়া দিয়ে বলল, ‘আয়নায় এত নিজের চেহারা দেখতে হবে কেন? প্রেমে পড়ছিস নাকি? তুই এমনিতেই সুন্দর, আর দেখতে হবে না।’

রোদ্দুর বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আমি বাচ্চা পোলাপান না যে প্রেমে পড়লে সারাক্ষণ আয়নার সামনে ঘুরঘুর করব আর নিজের চেহারা দেখব। যথেষ্ট বড় হয়েছি, এসব আবেগের বয়স নাই।’

‘বড় হয়েছিস, বুড়ো হয়ে যাস নাই। আবেগ মানুষের চিরকাল থাকে। কারোরটা বেশি, করোরটা কম। তোর নাই বললেই চলে। নিরামিষ পার্সন!’
রোদ্দুর কথা বাড়াল না। সত্যি কথার পিঠে তর্ক করতে হয় না। হাসানকে নিয়ে সোজা রায়হানের ওখানে রওনা হলো। পৌঁছেও গেল কিছুক্ষণের মধ্যে। বাড়িঘর সুন্দর করে ফুলে ফুলে সাজানো। নতুন বউকে বরণ করার জন্য যা যা করা দরকার সবটাই করা হয়েছে।
ওরা নতুন বছর শুরু হওয়া উপলক্ষে ব্যাচেলর পার্টি করতে চেয়েছিল। আদিয়াত তো প্রথমেই বাদ, এখন বাদ পড়ল রায়হান। সৌভিক লিস্ট করল, এরপর কে কে বাদ পড়তে পারে। হাসান নিজের নামটা দেখে চেঁচিয়ে উঠল। সৌভিক বলল, ‘তোর কপালে বিয়ে নাই ‌সেটা আমাদের ভালো করেই জানা আছে। তাই তোর নাম লিখে কলমের কালি নষ্ট করলাম না।’

‘আন্ডারস্টিমেট করছিস তো? ঠিক আছে কর, মেনে নিচ্ছি। তবে আজকের পর থেকে বিন্দু পরিমান খোঁচা দেওয়ার সুযোগ পাবি না। আজ আমি ফাইনালি আমার জীবন থেকে ২৬ বছর পার হয়ে যাওয়ার পর সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হতে চলেছি। দোস্ত, তোদের জন্য খুব শীঘ্রই আমি ভাবি আনতে চলেছি। প্লিজ, আমার এই ডিসিশনটাকে তোরা সবাই উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানা।’ আপ্লুত হয়ে বলল হাসান।
রোদ্দুর আর সৌভিক দু’জনেই ওর পিঠে ধুপধাপ কয়েকটা কিল বসিয়ে দিল। এরপর সবাই মিলে রওনা হলো।
হাসানের কথা সত্য। বিয়ে বাড়িতে সুন্দরীদের অভাব নেই। যেদিকে চোখ পড়ে সেদিকেই সুন্দরী ললনাদের সমাহার!
বরকে নিজের আসনে গিয়ে বসাতেই বন্ধুরা আলাদা আলাদা হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল। সৌভিক হাসানকে বলল, ‘তোর মিশন কখন শুরু করবি?’

‘করব করব। তার আগে আরেকটা আরেকটা বিষয় আমাদের বাবা উচিত না?’

‘কী?’

‘ওইতো রোদ্দুরকে দেখ, সানিয়ার সাথে সম্পর্কটা নষ্ট হওয়ার পর থেকে ওর ভাবভঙ্গি অনেক পাল্টে গেছে। সবসময় অন্যমনস্ক থাকে। ও আসলে একাকিত্বে ভুগছে। ওকে এই একাকীত্ব থেকে বের করে আনতে হবে।’

‘কীভাবে?’

‘চল ওর সাথে কারো প্রেমের ব্যবস্থা করে দিই। শালা ছ্যাঁকা একটা খাইয়া পুরা দেবদাসের ভাব ধরছে। ওকে দেবদাস থেকে রোমিও বানিয়ে জুলিয়েটের গলায় ঝোলাতে হবে।’

‘কিন্তু ও কি আদৌ প্রেম করবে? আমার তো মনে হয় না। শালার চেহারা দেখ। ভাই তুই একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে আসছিস, কোথায় হাসিখুশি থাকবি, মজা করবি, আনন্দ-উল্লাস করবি। তা না করে মুখটা বাংলার পাচের মত করে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে, কেউ জোর করে ওকে নিমপাতার রস খাইয়ে দিয়েছে।’ সৌভিক মুখ ঝামটা দিয়ে বলল।
রোদ্দুরের এসব হৈ-হুল্লোড় ভালো লাগছে না। সে আশেপাশে তাকিয়ে নিরিবিলি পরিবেশ খোঁজার চেষ্টা করছিল। কিন্তু যেহেতু বিয়ে বাড়ি তাই সবখানেই বাচ্চাদের হৈচৈ, মেয়েদের চেঁচামেচি সবমিলিয়ে রুদ্ধশ্বাস পরিবেশ। অনুষ্ঠান শেষ না হতে চলেও আসতে পারবে না। ওইদিকে বাকিরা সবাই নিজেদের মত আনন্দ করতেছে।
রোদ্দুর এক কোণায় চেয়ারে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে গিয়ে বসল। যেহেতু এখন বিয়ে পড়ানো হচ্ছে, তাই কেউ নাই আশেপাশে। নিজের মত করে ফেসবুক স্ক্রল করছিল। বেশ অনেকক্ষণ বাদে একটা মেয়ে এসে বলল, ‘আচ্ছা ভাইয়া আপনি এখানে একা বসে আছেন কেনো?’

রোদ্দুর পাশ ফিরে তাকাল। মাঝখানে সিঁথি করে দু’পাশে বেনী করা বাচ্চা একটা মেয়ে। ঠিক বাচ্চাও না, ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে হয়ত! যাইহোক, রোদ্দুরের তুলনায় বেশ বাচ্চা।
রোদ্দুর অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল, ‘একা…. না মানে একা ছিলাম না তো। আমার বন্ধুরা আমার সাথে ছিল, ওরা একটু অনুষ্ঠানের ওখানে গেছে।’

‘ও আচ্ছা। আপনিও যান‌। ওখানে একা একা বসে কি করছেন?’

রোদ্দুর জবাব দিল, ‘তেমন কিছু করছি না আমার অনেক কিছুই করছি।’

‘আচ্ছা আপনার নাম কি?’

রোদ্দুর এইবার নড়েচড়ে বসল। বলল, ‘আমার নাম শুনে আপনি কি করবেন? আপনি কি আমাকে চেনেন?’

মেয়েটি এইবার হেসে বলল, ‘না চিনলে কি নাম শোনা যাবে না? আপনার বন্ধুরা আপনাকে কি বলেছে জানেন?’

‘কী বলেছে?’

‘বলেছে আপনি মানে আপনার কথাবার্তা নাকি মুরুব্বী টাইপের। আপনার সাথে আমি যদি ১০ মিনিট ঠিকঠাক মত কথা বলতে পারি তবে বরের আই মিন আমার দুলাভাইয়ের জুতো চুরির ক্ষেত্রে তারা কোন বাঁধা দেবে না, ঝামেলা করবে না। কিন্তু আপনার সাথে দুই মিনিট কথা বলতেই আমার কথা বলার মুড নষ্ট হয়ে গেছে। আর পারছি না। হার মেনে নিলাম, আত্মসমর্পণ করলাম। মশাই এইভাবে বসে না থেকে আপনার বন্ধুদের কাছে যান, গিয়ে দেখেন ওরা কি করছে। আপনার বউয়ের কপাল মন্দ হবে বোঝা যাচ্ছে।’

‘কেনো মন্দ হবে?’

‘এইতো আপনার কারণেই। আপনার কথা বার্তায় রস কষ নেই তো। কেমন জানি আলগার থেকে কথা বললেন। যেমন আমি আপনাকে নাম জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তো পারতেন আপনার নামটা আমাকে সুন্দর করে বলে আবার আমার নামটা জিজ্ঞেস করতে। কিন্তু আপনি তা করলেন না। এমন একটা কথা বললেন যে, আপনার সাথে কথা বলার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেল। যাইহোক, আমি আবার আপনার মত এত নাক উঁচু ধরণের মানুষ না। আমার নাম মিলা, কনের ছোটো বোন আমি।’ গড়গড় করে কতকগুলো কথা বলে থামল মেয়েটা।

রোদ্দুর বলল, ‘আচ্ছা আমার বন্ধুরা কোথায় বলতে পারেন?’

মিলা নামের মেয়েটা বা’দিকে হাত দিয়ে ইশারা করল। রোদ্দুর সেই অনুযায়ী তাকাল। রোদ্দুরকে এইদিকে তাকাতেই সৌভিক আর হাসান উল্টোদিকে দৌড় দিল। হাসান দ্রুত বলল, ‘আরে মামা পালা। ফাইসা গেছি রে। ওরে বললাম রোদ্দুরকে আমাদের কথা বলো না, তাও বলেই দিল। শালার দুই দিনের দুনিয়ায় কাউরে বিশ্বাস করতে পারতেছি না।’

‘এইসব বাদ দে। রোদ্দুরের কথা শুনলি তুই? এরপর আর অন্তত বলিস না, প্রেম করার জন্য ওকে কাউকে খুঁজে দিবি। ওর আর প্রেম পিরিতি কিছুই হবে না। মিশন আনসাকসেসফুল।’
.
.
.
চলবে…..

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-১২]
~আফিয়া আফরিন

রোদ্দুরের বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। যেহেতু ওখান থেকে খাওয়া করেই ফিরেছে, তাই এসে ফ্রেস হয়ে সোজা শুয়ে পড়ল। এক ঘুমে রাত কাবার!
সকালে কোন প্রয়োজনে নয়, এমনিতেই বেরিয়েছে ওমনি সানিয়ার সাথে দেখা। একই শহরে থাকে তাই হুটহাট দেখা হওয়াটা মোটেও অবাক করার মত ব্যাপার নয়। রোদ্দুর চেষ্টা করল এড়িয়ে যেতে। কিন্তু সানিয়া ঠিকই পথরোধ করে দাঁড়াল।
রোদ্দুর একরোখা জেদি কণ্ঠে বলল, ‘পথ ছাড়ো।’

‘তুমি বললেই আমাকে শুনতে হবে? আমি যদি এখন তোমাকে বলি, তোমাকে আমি ভালোবাসি; তবে তুমি সে কথা শুনবে?’

রোদ্দুর বিদ্রুপ করল, ‘হাস্যকর!’

‘তুমি একসময় বলেছিলে, যেকোনো পরিস্থিতিতে কখনো আমার হাত ছাড়বে না। তোমার সেই কথার কি কোনো দাম নেই? এতটা ভিত্তিহীন ছিল…..’

‘নিজেকে দয়া করে আর হাসির পাত্রী বানিয়ো না প্লিজ। তুমি আমার ভালোবাসা নিয়ে দিনের পর দিন খেলা করে যাবে, আমার যত্ন করা, পাশে থাকাকে ভেজাল মনে করবে, আমি ভালোবাসি বললে তুমি সেটাকে হেসে উড়িয়ে দিব— তোমার কি মনে হয় আমাকে? এরপরও আমি নির্লজ্জের মত তোমার পিছু পড়ে থাকব? হোয়াই? পৃথিবীতে মানুষের আকাল পড়েছে? তুমি ছাড়া আর কেউ নাই আমার জন্য?’ রোদ্দুর রেগে গেল।
রাগের চোটে পুনরায় একনাগাড়েই বলতে লাগল, ‘কোথায় তোমার তানভীর এখন? ওকে পাচ্ছো না এখন? নাকি ওর জীবনে তোমার দরকার ফুরিয়েছে? যাও, যাও ওখানেই যাও। আমার কপালে ভাই মানুষ থাকে না।’
রোদ্দুর সানিয়াকে আর কিছুই বলার সুযোগ দিল না। গটগট করে সামনের দিকে হেঁটে যেদিকে দুচোখ গেল, সে পথ দেখল।
.
শিমুর মেজাজ আজ বড্ড খারাপ হয়ে আছে। রাগে গজগজ করতে করতে উনি রান্নাঘরে ঢুকে দেখলেন কাজের মেয়েটা কাজ বাদ দিয়ে জানালায় উঁকি দিয়ে একজনের সাথে হাসাহাসি করছে। অন্যসময় হলে শিমু কিছু বলতেন না কিন্তু এখন কড়া একটা ধমক দিলেন। মেয়েটা আচমকা ভয় পেয়ে সরে দাঁড়াল। শিমু বলল, ‘এদের কাজ নাই কর্ম নাই, সারাদিন খালি আড্ডা। আড্ডা দেওয়ার হলে কাজ করতে আসিস কেন বাপু? যা না, ওদিকেই চলে যা। এই বাড়িতে কি? সব যন্ত্রণা কেনো যে আমাকেই পোহাতে হয় কে জানে?’

তৎক্ষণাৎ সাবরিনা এসে তার রেগে যাওয়ার কারণটা জিজ্ঞেস করলেন। শিমু তার’ও জবাব দিল না। একমনে চুপ হয়ে চুলায় রান্না বসিয়ে দিল। তার রাগের কারণ কিছু না…. কেউ না; একমাত্র ঝিলমিল ছাড়া। মেয়ের কর্মকাণ্ডে মাঝে মাঝে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। ভাবতে থাকেন, এই মেয়েটাকে আসলেই পেটে ধরেছেন তো!
আজ সকালে ঘরে গিয়ে দেখলেন, সেজেগুজে মহারানী ভিক্টোরিয়া হয়ে বসে রয়েছে। কারণ জিজ্ঞেস করতেই ঝিলমিল উত্তর দিল, ‘ঘুরতে যাব মা।’

‘কোথায় ঘুরতে যাবি? আগে তো আমাকে বলিস নাই। তোর বাবাকে বলেছিস?’

‘না কাউকে কিছু বলি নাই।’

‘তবে কোন সাহসে তুই সেজেগুজে বসে আছিস?’
ঝিলমিল কথার জবাব দিল না। আয়নার সামনে বসে আঁচড়ানো চুলগুলো ফেল ঠিকঠাক করতে লাগল। মা যে বারবার জিজ্ঞেস করছে একটা কথা, সেটা কানেই নিচ্ছে না। মা শেষবারের মত বললেন, ‘কথার উত্তর দিবি নাকি থাপ্পড় খাবি?’

ঝিলমিল মায়ের দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল, ‘কোথাও যাচ্ছি না। তোমার শশুর বাড়িতেই আছি। এমনিই, মনে রং লেগেছে তাই সাজগোজ করে বসে আছি। সুন্দর লাগছে না আমাকে? জানি জানি, সুন্দর লাগছে। আচ্ছা মা তুমি কী ভেবেছ বলো তো? আমি বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাচ্ছি? সো স্যাড! আমার তো বয়ফ্রেন্ড’ই নাই।’
মেয়ের এসব উল্টাপাল্টা কথা শোনার পর থেকেই তার মেজাজ তুঙ্গে। ওর বাবা তো ভুলেও মেয়েকে কিছু বলে না, বাড়ির কেউ বলে না; সবার লাই পেতে পেতে ও এখন তার মাথার উপর চড়ে নাচছে।
বড়টা যথেষ্ট ম্যাচিউর ছিল, বুঝবুদ্ধি জ্ঞান সর্বদা ভালো ছিল। আর ছোটো টা? কীভাবে যে এটার একটা গতি করবেন তাই ভাবছেন। পুরাই বেয়াক্কেল।

রেহানা খাতুন রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালেন। সারাদিন ঘরে শুয়ে বসে থাকতে আর ভালো লাগে না। ঘরের কাজকর্ম করার মত শক্তিও এখন নেই। বউদের বারণ সত্ত্বেও মাঝেসাঝে উঠে এসে রান্নাঘরে উঁকি দেন। বহু বছরের অভ্যাস, কী করে ছাড়বেন!
ওনাকে দেখে নীলিমা এগিয়ে এসে বলল, ‘আম্মা আপনি? কিছু লাগবে?’

‘না কিছু লাগবে না। ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছিল না তাই এলাম। তোমাদের রান্নাবান্না শেষ নাকি? রোদ্দুরের সাথে তোমার কথা হয়েছে?’

‘হয় তো। সকালেই কথা বললাম।’

‘তো সাহেব বিয়ের কথা কি বলল? আর জানিয়েছে কিছু? তোমরা বলেছ কিছু নাকি তোমাদের’ই আপত্তি? কোনটা?’

‘আমাদের দিক থেকে তো কোনো আপত্তি নেই। রোদ্দুরকে অনেকবার বলেছি, ঘুরেফিরে ওর সেই একই কথা; ও নাকি বিয়েই করবে না।’

রেহানা রেগে বললেন, ‘ও বিয়ে করবে না ওর বাপ বিয়ে করবে। যত্তসব কাহিনী করে পোলাপান।’
শাশুড়ির কথা শুনে শিমু আর সাবরিনা দু’জনেই মুখ টিপে হাসলেন। নাতির বদলে ছেলের বিয়ে করাবেন, বাহ বেশ হবে। ওমন সময় ঝিলমিল রান্নাঘরে এসে এককাপ চা চাইল।
দাদি ওকে পাকড়াও করলেন। বললেন, ‘তুই সারাদিন এইরকম টইটই করে ঘুরে বেড়াস কেন?’

ঝিলমিল চুল নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘ভালো লাগে!’

‘ন্যাকা! পড়াশোনার তো বালাই নাই। অযথা টাকা পয়সা নষ্ট। সবগুলো একই পদের।’

ঝিলমিল চোখ উল্টে বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক বলেছ।’ এরপর ঝিলমিল নাচতে নাচতে, চুল উড়াতে উড়াতে, গান গাইতে গাইতে চলে গেল। তিনি শুধু পড়া চোখে তাকিয়ে নাতনির কর্মকাণ্ড দেখলেন। মেয়েটা দিনকে দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছে। এইজন্য চেয়েছিলেন, রোদ্দুরের সাথে ওর বিয়েটা দায়ে একটা গতি করতে। কিন্তু পাত্র-পাত্রী কেউ রাজি হচ্ছে না, কেউ কাউকে সহ্য’ই করতে পারে না, সম্পর্কটাও সাপে নেউলে!
রোদ্দুর এই বংশের একমাত্র ছেলে। ওনার একটাও মেয়ে নেই আর ওনার ছেলেদের মেয়ের অভাব নেই! একমাত্র নাতিকে তাই নিজেদের মধ্যেই রাখতে চান। কিন্তু এরা যা ত্যাড়া স্বভাবের, ভবিষ্যৎ কী হয় কে জানে?
শিমু বললেন, ‘আম্মা ওর সাথে কথা বলে কাজ নেই। ওই কথায় কথায় ঝংকার মারে। মেয়ে মানুষ এমন হলে হয়? আপনি ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করুন।’

‘মেয়েকে সামলাও। কথাবার্তার সাইজ এমন কেন? এখনই এমন শুরু করছে বাকি জীবন তো পড়েই আছে। মেয়ে মানুষকে হতে হয় সহজ, নম্র, ভদ্র। তোমার এই মেয়ে এইরকম ধানি লঙ্কা হলো কথা থেকে? আশ্চর্য!’
শিমু জবাব দিলেন না। এই মুহূর্তে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, মেয়ের সাথে তিনি আর কথাই বলবেন না।
.
রোদ্দুর বোঝে না, একটা মানুষ কী করে এতটা লাইফলেস এতটা ফালতু কী করে হতে পারবে? সে একসময় সানিয়াকে ভালোবেসেছিল ঠিকই, সেটাও মন থেকে। করো সাথে বাজি রেখে সে কিন্তু সানিয়াকে ভালোবাসে নাই। তবে হ্যাঁ এটা সত্যি যে, নিজের জেদের কারণেই এবং তানভীরের কাছ থেকে সানিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসার জন্য’ই সে দ্রুত বিয়ের ব্যবস্থা করেছিল। তবে সেটাতে তো প্রথমে ভালোবাসাটাই মুখ্য ছিল, বাদবাকি সব অনেক পরে। তানভীর যে এখন আগে পরে পিঞ্চ মেরে কথা বলছে, সেটা রোদ্দুরের হজম হচ্ছে না। এই মূর্খ ছেলের সাথে বাজে তর্ক করার’ও কোনো ইচ্ছে নেই। এমনিতে যাইহোক না কেন, রোদ্দুর শান্তশিষ্ট স্বভাবের; ছোটো বেলা থেকেই। কেউ তাকে না খোঁচালে সহজে সে কারো ধারে কাছে যায় না।
আজকে রোদ্দুরের সাথে দেখা হতেই প্রথম যে কথাটা বলল তা হলো, ‘ফাইনালি চ্যালেঞ্জ’এ হেরেই গেলে। যেখানে হেরে যাবে সেখানে পাঙ্গা নেওয়া কি ঠিক মশাই? তোমার জন্য আমার সত্যি খুব খারাপ লাগছে।’

রোদ্দুর হেসে বলল, ‘আশ্চর্য! এত সিমপ্যাথি দেখাচ্ছ যে? কে চেয়েছে?’

‘আমার মন অনেক বড়। চাইতে হয় না এমনি সবাইকে সবকিছু দিয়ে দিই।’

‘ওহ আচ্ছা…. সবকিছু? আই মিন সবকিছু? ঠিক আছে।’ রোদ্দুর হো হো করে হেসে উঠল।

তানভীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘হোয়াট ডু ইয়ু মিন?’

‘নাথিং। একটা কথা বলে রাখি…. সানিয়া ইজ ইউর’স নাও। বি ইউর’স, কিপ ইট। বাট বাই নো মিনস কাম টু আরগ্যু উইথ মি অন দিজ ম্যাটার। অ্যানিওয়ে, গুড লাক ফর ফিউচার লাইফ।’
রোদ্দুর তানভীরকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না। বাইক স্টার্ট দিল এবং সেখান থেকে চলে গেল। মানুষকে সুযোগ দিলেই মাথায় চড়ে নাচে। আর সুযোগ না দিলে, কথা বলতে আসার সাহসটুকুও পায় না।
.
গতকাল মাঝরাতে হঠাৎ ঝিলমিলের ঘুমের ঘোরে মনে হলো, কেউ তার ঘরের জানালায় ঠকঠক করতেছে। কিন্তু ঘুমের ঘোরে থাকায় তখন খেয়াল করে নাই। সকালে উঠে ঝাপসা মনে পড়তেই, মনের ভুল ভেবে ঝেড়ে ফেলল। কিন্তু সন্ধ্যার পর আবার সেই আওয়াজ… কেউ ঠকঠক করছে। ঝিলমিল জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ যাবত ‘কে কে’ করল। কিন্তু কারো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। জানালা খুলে উঁকিঝুঁকি দিয়েও কাউকে দেখা যাচ্ছিল না। ঝিলমিল চিন্তিত হয়ে ছোট চাচ্চুকে বিষয়টা জানাল। পাড়ার ছেলেপেলেরা অনেকসময় এইরকম ফাজলামি করে থাকে।
তিনি ঝিলমিলকে বললেন, ‘আচ্ছা তুই আজকে রাতে মায়ের সাথে ওই ঘরে থাক। আমি এই দিকটা দেখতেছি।’
ঝিলমিল তাই করল। নাচতে নাচতে দাদির কাছে চলে এলো। পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘হেই ডার্লিং, আজ রাতে তোমার কাছে থাকতে এসেছি।’

রেহানা ঝিলমিলকে সরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘সর তো হতচ্ছাড়ি, এই বয়সে তোর ভার নিতে পারি আমি? এইভাবে বাদড়ের মত ঝুলছিস কেনো?’

‘কারণ তুমি মুক্তো।’ ঝিলমিল বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসল।
অন্য ঘরে ঝিলমিলের মোটেও ঘুম আসে না। মাঝেমধ্যে চিন্তা করে শ্বশুর বাড়ি গেলে সে রাতে ঘুমাবে কি করে? এই চিন্তার সমাধান অবশ্য শিউলি করে দেয়। বলে, ‘তোর স্বামী তোকে রাতে ঘুমাতে দিলে তো তারপর ঘুমাবি।’

ঝিলমিল’ও বলে, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক ঠিক…..’ তারপর’ই বোধগম্য হয় শিউলির অসভ্য কথাখানা। তৎক্ষণাৎ পিঠের উপর ধুমধাম কিল বসিয়ে দেয়।
আজ এই ঘরে এসে রাতে ঘুমানোর সময় কেমন সব অচেনা অচেনা লাগছিল। তার উপর কোলবালিশ’ও নেই। ঝিলমিল কিছুক্ষণ এ’পাশ ও’পাশ করে দাদিকে বলল, ‘কোলবালিশ কই? আমার কোলবালিশ!’

‘কোলবালিশ ছাড়া থাকার অভ্যাস কর।’

‘কেনো?’

‘জামাইয়ের বাড়ি গেলে তখন কোলবালিশ কোথায় পাবি?’

‘যেই বাড়িতে আমার পছন্দের জিনিস নাই, সেখানে আমি বিয়েই করব না।’ ঝিলমিল সাফ জানিয়ে দিল।

দাদি হেসে বললেন, ‘ওরে গাঁধী মেয়ে! জামাই কি আর তোকে কোলবা নিতে দিবে? তখন বলবে, আমি থাকতে আবার তোমার কোলবালিশ লাগে? তাই বলছি এখন থেকেই অভ্যাস করে ফেল। হাহাহা!’
.
.
.
চলবে…..

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-১৩]
~আফিয়া আফরিন

কারো সম্পর্কের টানাপোড়েন, জটিলতা আবার কারো আনন্দে-উল্লাসে, নির্বিঘ্নে কিছুদিন কেটে গেল। দাদি এখন অবশ্য আর বিয়ের কথা তোলেন না, তবে রোদ্দুরকে বাড়িও ফিরতে বলেন না।
ছোট চাচ্চু কিছুদিন দেখেছে, কিন্তু ঝিলমিলের ঘরের জানালায় কে ঠকঠক করে তা উদঘাটন করতে পারে নাই। যখন ওরা খুব বেশি সতর্ক থাকে, তখন কিছুদিন আগুন্তকের আগমন’ও বন্ধ থাকে। তবে ঝিলমিল এখন আর একা একা ঘরে থাকার সাহস পাচ্ছে না, বেশিরভাগ সময় সে দাদির সাথেই থাকে। নিজের বই-খাতা, কাপড়-চোপড় সব’ই এই ঘরে ট্রান্সফার করে নিচ্ছে। বাড়ির অন্য মেয়েরা অর্থাৎ তানিশা এবং রিমঝিম’ও একলা থাকছে না।
মনোয়ার সরকার গিয়ে পুলিশে ইনফর্ম করে এসেছেন। অন্তত কোনো ছিঁচকে চোর হলেও ধরা পড়ুক।
.
বিয়ে-শাদী মানেই মানুষ মনে করে, কত জানি মজা! বিয়ের পর শুধু আনন্দ আর আনন্দ। সারাদিন ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া; এককথায় যা ইচ্ছে হয় তাই করতে পারা। কিন্তু আসলেই কি তাই? উঁহু, একদম নয়। এ সম্পর্কে আদিয়াত এবং রায়হান নামক তুই জ্ঞানী ব্যক্তি কিছু মতবাদ দিয়েছে।
আদিয়াতের ভাষ্যমতে, ‘ভাই তোরা কেউ যদি নিজের ব্যক্তিগত জীবন প্লাস নিজেকে নিশ্চিন্তে একজন মানুষের হাতে তুলে দিতে পারিস তবে বিয়ে কর। যদি চাস তোদের জীবনে শাসন চলুক, তোদের বদভ্যাস গুলোকে কেউ এক লহমায় পরিবর্তন করে দিক তবে বিয়ে কর। আর তা না হলে বিয়ে-শাদী করিস না, আমার মত ফেঁসে যাবি একদম। আমি সারাজীবন নিজের মত হেলেদুলে, যেভাবে খুশি সেভাবে চলেছি। কিন্তু এখন তোদের ভাবী কি নিয়ম করে দিয়েছে জানিস? সকালে ঘর থেকে বের হয়ে সোজা অফিসে যাব এবং অফিস থেকে সাতটার মধ্যে আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে। মানে বোঝ! সাতটার মধ্যে কেমনে সম্ভব? বাড্ডার জ্যামে যদি একবার ভুল করে পড়ি তো ওই জ্যাম থেকে মুক্তি পেতে পেতে আমার এক জীবন পার হয়ে যাবে।’

রায়হানের ভাষ্যমতে, ‘ভাই আর কতদিন সিঙ্গেল থাকবি? বিয়েটা করেই ফেল। বিয়া যে কত্ত মজা আমি বলি, ওয়েট…. শশুড় বাড়িতে গেলে আদর আর আদর, একদম কব্জি ডুবিয়ে জন্মের খাওয়া খাইতে পারবি। খাইতে খাইতে যেকোনো মুহূর্তে অজ্ঞান’ও হয়ে যাইতে পারিস বলা যায় না। আর তারপর এক্সট্রা কথার করানোর জন্য শালী গুলো তো আছেই। এমন খাতির করবে যে কখন তোদের পকেট খালি হয়ে যাবে টের’ই পাবি না। ওয়েট…. আরও বলি, কান খুলে শোন। তোর নিজের বাড়ি, অথচ তুই মন খুলে কিচ্ছু করতে পারবি না। বিছানায় বসলে ঝাড়ু নিয়ে এসে চেঁচাবে, এইমাত্র আমি বিছানা গুছিয়ে রাখ রাখছি। নামো এখান থেকে নামো।
আরও কাহিনী আছে, যেমন ধর ঝগড়াঝাঁটি কিংবা মনোমালিন্য। বাবারে বাবা, কী বলব আর? সামান্য কিছু বলাই যাবে না, কান্নাকাটি করে বুক ভাসাবে। অথচ সারাদিন আমাদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করবে তার বেলায় কিছুই না। আমাদের মুখে কুলুপ এঁটে চুপ করে বসে থাকতে হবে। তবে এখানে একটা লাভ আছে। সেটা হচ্ছে, ঝগড়াঝাঁটি যদি একবার একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায় না? তবেই বউ চলে যাবে বাপের বাড়ি। আর তখন হচ্ছে স্বাধীনতা দিবস। এইতো যেমন আমি। আমার বউ কিন্তু এখন এখানে নেই। বাপের বাড়ি আছে, দু’দিন পরে আনতে যাব। একটু মনমতো স্বাধীনতা দিবসটা পালন করে নিই। হেহে, ভাইজানেরা আপনারাও বিবাহ করে ফেলুন। আমরা কেনো শুধু অশান্তিতে থাকব। আপনারাও যোগ দিন, মজা দেখুন। শান্তি অশান্তি দু’টোই ফেস করতে পারবেন।’
এরপর অনবরত চলতেই থাকে বাকবিতন্ডা। বাকিরা গালে হাত দিয়ে সমস্তটা চুপচাপ গিলে। সব শুনে কারো বিয়ে করতে ইচ্ছে করে কারো করে না। আর রোদ্দুর? সে তো সন্ন্যাসী হয়ে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তাকে আর কিছু বলার নেই।
প্রতিদিনের মত আজও চায়ের দোকানে সবাই মিলে ভীড় জমিয়েছে। তবে আজ তাদের কথাবার্তার বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। একেবারে গিরগিটির মত বদলে গেছে এক নিমিষেই। আজ আবার দু’জনের এক কথা, ‘যত যাইহোক ঘরে গিয়ে বউয়ের চাঁদ মুখখানি না দেখলে শান্তি লাগে না। বুকের মধ্যে ব্যাথা করে।’

একেকজন একেক কথা বলে! শোনার আর ধৈর্য নেই। হাসান একটা কাজের অযুহাত দেখিয়ে রোদ্দুরের সাথে বেরিয়ে পড়ল।
.
আজ নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হবে। হাইস্কুল মাঠে মানুষজনের ছড়াছড়ি, সাথে রয়েছে পুলিশি পাহাড়া। ওসমান খন্দকার কিছুক্ষণ পরপরই আসছেন, অবস্থা দেখে যাচ্ছেন। আর কারো কোনো উৎকণ্ঠা নেই, শুধুমাত্র তিনি আসছেন এবং যাচ্ছেন। তার দুই ছেলে অবশ্য প্রথম থেকেই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত রয়েছে। জনে জনে ধরে জিজ্ঞেস করছে, ‘আপনারা এইবার কাকে ভোট দিচ্ছেন?’
অনেকেই উত্তর দিচ্ছে আবার অনেকে তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। ঝিলমিল শিউলিকে নিয়ে ভোট দেখতে এলো। একই পাড়ার মানুষজন, প্রায় সকলকেই চেনে।
ওরা একপাশে দাঁড়িয়ে মানুষজনের আনাগোনা দেখছিল। ওসমান খন্দকারের বখাটে ছোটো ছেলে আহাদকেও দেখল কয়েকজনের সাথে তর্কাতর্কি করছে। উড়ে এসে মারামারি’ও করতে চাচ্ছে। আশেপাশের সাঙ্গপাঙ্গরা দৌড়ে এসে তাকে থামাচ্ছে, শান্ত করছে।
শিউলি বলল, ‘ব্যাটার তেজ দেখেছিস? র’ক্ত বোধহয় সবসময় গরম থাকে।’

‘ওর কথা বাদ দে। আয় আমরা মাঠের পেছন থেকে ঘুরে আসি।’

‘এখন ওখানে কোনোভাবেই যাওয়া সম্ভব নয়। বাজে বাজে ছেলেদের আড্ডা বসে এই সময়। আর আজকে তো মাস্ট। এখানেই দাঁড়িয়ে থাক চুপচাপ।’

ঝিলমিল বলল, ‘তাহলে চল ফুচকা খাই। সকাল থেকে কিছু খাই নাই। মায়ের বকা খেতে খেতে পেট ভরে গেছে।’
ও শিউলিকে সাথে নিয়ে ফুচকা কিনতে গেল। ফিরে আসার সময় আহাদের গন্ডগোলের মুখে পড়ে দু’জনের হাতের ফুচকাই পড়ে গেল।
শিউলি বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল, ‘আরে ধুর… ফালতু পোলাপান।’

তৎক্ষণাৎ আহাদ এগিয়ে এলো। আহ্লাদী সুরে বলল, ‘ওহো, আমি তো তোমাদের দেখি নাই।’ তারপর বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এই তোরা জায়গা খালি কর। এইদিকে এইরকম ঝামেলা করিস না। মানুষজনের যাওয়া আসার রাস্তা কেনো ব্লক করে রেখেছিস? সর সর, সরে যা।’
তারপর আবার ঝিলমিলদের দিকে তাকাল। বলল, ‘সরি, এক্সট্রিমলি সরি। চলো আমি তোমাদের ফুচকা কিনে দিচ্ছি।’

ঝিলমিল রিনরিনে কন্ঠে চটাস চটাস করে উত্তর দিল, ‘নো, থ্যাংকস।’
তারপর ওরা ওখান থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ি চলে এলো। বাড়ি এসেও ঝিলমিল কিছু করার পাচ্ছিল না। সারাদিন’ই তার কিছু করার থাকে না। ওইদিকে মা-চাচীরা সবসময় নিজেদের মধ্যে গল্প করে, কী এত গল্প করে কে জানে! ঝিলমিল এসব নিয়ে কখনোই মাথা ঘামায় না।
সে বাড়িতে বসে বোর ফিল করতে করতে বাড়ির পেছন দিকে চলে এলো। বিগত কিছুদিন হলো ছিঁচকে চোরের উৎপাত কম। ছিঁচকে চোর বলতে তাকেই বোঝানো হয়েছে, যে তার ঘরের জানালায় ঠকঠক করে।
ঝিলমিল বিষয়টা খতিয়ে দেখার জন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল চারিপাশে। ঘুরে ঘুরে পুরো জায়গাটা দেখল, পরখ করল। সন্দেহজনক কিছু দেখলে সেখানেই নানা গবেষণা শুরু করে দিল, কিন্তু ফলাফল শুন্য। কিছুই পেল না। এমনকি কোথাও কারো পায়ের ছাপ পর্যন্ত না। ভেজা মাটি হলে অবশ্য খুব সহজে পায়ের ছাপ ধরা পড়ত, কিন্তু এখন মাটি শুকনো।
ফিরে আসার সময় হঠাৎ পায়ে কিছু একটা বিঁধল। ঝিলমিল থেমে গিয়ে সেটাকে হাতে নিল। বিশেষ কিছু না, একটা কালো বেল্টের সাধারণ ঘড়ি। যে কারো হতে পারে! তবুও প্রমাণ হিসেবে নিজের কাছে নিয়ে রাখল।
.
ভোটের আনুষ্ঠানিকতা বিকেলের মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফলাফল রাতে প্রকাশ করা হবে। বাড়ির সবাই নিঃশ্বাস আটকে টিভির সামনে বসেছে। ওইদিকে ছোট চাচ্চু রোদ্দুরকে সব ইনফরমেশন ফোনে দিচ্ছে। বলে দিয়েছে, ‘এবার ভাইজান নির্বাচনে জিতলে তোকে বাড়ি আসতে হবে।’
রোদ্দুর হেসেছে, সহসা উত্তর দেয় নাই।
অবশেষে সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে, ওসমান খন্দকারের অহংবোধের চুক্তি দলাই মলাই করে ভোটে নিযুক্ত হলেন ফজলুল সরকার।
সরকার বাড়িতে আনন্দের ধুম নেমে গেল। বাড়িতে পুরুষ মানুষ যারা যারা ছিলেন, সবাই তৎক্ষণাৎ আনন্দ মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ঝিলমিল, তানিশা, রিমঝিম’ও পিছু পিছু কতক্ষণ দৌড়াল। রেহানা খাতুন আফসোস করে বললেন, ‘আহারে! আজকের এমন একটা খুশির দিনে আমার দাদুভাইটা নাই। ও ঝিলমিল, দাদুভাইরে একটা ফোন করে দেখি। মাঝেমাঝে নিজেও তো একটু কথাবার্তা বলতে পারিস। বাড়িতে আসতে বলতে পারিস তো নাকি?’

ঝিলমিল নিজস্ব কায়দায় তার মুখ বাঁকিয়ে বলল, ‘উহ শখ কত! তোমার দাদুভাইকে আমি কেন আসতে বলব? আমি বললেই যেনো তোমার সাহেব শুনবে আমার কথা? আমি ফোন করে দিচ্ছি, তুমি কথা বলো। খুব তো বলেছিলে, রাগ করে থাকবে আর কথাই বলবে না। এখন কোথায় তোমার রাগ? হুঁ হুঁ?’

‘কতক্ষণ আর রাগ করে থাকব বল? তোর দাদার খুব ইচ্ছে ছিল, একমাত্র নাতীকে নিজের কাছেই রাখবে, তাই আমাকে বলে গিয়েছিল; নিজেদের মধ্যেই ওর বিয়ে দিতে। এখন বিয়ের উপযুক্ত এই বাড়িতে তুই ছাড়া আর কে আছে বল?’
আজকে বাড়ির সকলের মন ভালো। তাই ঝিলমিল আর তর্ক করল না এই বিষয়ে। দাদিকে ফোন ধরিয়ে দিল।
রেহানা খাতুন হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসলেন। তার চোখজোড়া বোজা। পাশেই ঝিলমিল বসে পান বানিয়ে দিচ্ছে। তিনি ফোন লাউড স্পিকারে দিয়ে রোদ্দুরের সাথে কথা বলছেন। ঝিলমিল এইপাশ থেকে রোদ্দুরের সব কথাই শুনছে, আর নাকমুখ কুঁচকে ফেলছে। কী নাটক! কী আদিখ্যেতা! কী আহ্লাদ! একদম অসহ্যকর। ঝিলমিল ফিসফিস করে দাদিকে বলল, ‘আর কথা বলতে হবে না। আমার ফোনের সব ব্যালেন্স শেষ হয়ে যাচ্ছে তো। ফোন রাখো। ব্যাদ্দব ব্যাটায় মিসড কল দিলে ব্যাক করে না।’
দাদি ইশারায় ওকে থামিয়ে দিলেন। রোদ্দুর ওপাশ থেকে বলল, ‘দাদি তোমার পাশে কে পেত্নীর মত ফিসফিস করে কথা বলছে?’

দাদি হেসে বললেন, ‘আরে ঝিলমিল!’

‘ওহ আচ্ছা, তাই তো বলি। আমাদের বাসায় হঠাৎ পেত্নীর আবির্ভাব হলো নাকি? বাবা কী ভয়ঙ্কর গলা। এইভাবে মানুষ কথা বলে? ওরে বাড়িতে না রেখে সবচেয়ে ভালো হবে যদি শ্যাওড়া গাছের নিচে রেখে আসো। ভূতেদের সাথে মিলে ভালো নিত্য করতে পারবে, মানুষকে ভয় দেখাতে পারবে।’

ঝিলমিল ফুঁসে উঠে চেঁচিয়ে বলল, ‘ওকে বলে দাও আমি ভূত হলে আগে ওর ঘাড় মটকাব।’

দাদি বললেন, ‘আরে তোরা ঝগড়া করিস না। আমি একটু কথা বলি। কতদিন পর দাদু ভাইয়ের সাথে কথা বলছি!’
ঝিলমিলের এসব আদিখ্যেতা সহ্য হয় না কখনোই, কোনোকালেই। সে ফোন আর ব্যালেন্সের মায়া ছেড়ে দিয়ে এই ঘর ছেড়ে উঠে চলে গেল।
রেহানা ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে বললেন, ‘শোন দাদুভাই, কখন যে মা’রা যাই! শরীরটা খুব খারাপ জানিস? সবাই মনে করে ভালো আছি, কিন্তু আমার ভেতরে যে কী হচ্ছে তা আমিই জানি। বলছিলাম কি, এইবার একবার বাড়িতে আয় না? না হয় শেষ দেখা দেখে গেলি, দাদিকে। ম’রে গেলে পরে কিন্তু এই ম’রা মানুষের জন্য আফসোস করতে হবে।’
আরও কিছুক্ষণ কথা বলার পর রোদ্দুর ফোন রেখে দিল। আজ বুধবার। ইচ্ছে করলে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া যায়, কিন্তু সেটা কতটুকু নিরাপদ হবে জানা নেই! বলা যায় না, আবারও বিয়ের কথা উঠতে পারে। যাইহোক না কেনো, দাদির কথা শুনে আজ নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে। রোদ্দুর সিদ্ধান্ত নিল, সে আগামীকাল সন্ধ্যায়’ই রওনা দিবে।
প্রথমত নতুন বছরের শুরু, দ্বিতীয়ত শীতকাল একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া; তাই সাধারণত পিকনিকের একটা ধুম পড়ে। রোদ্দুরের বাড়ি যাবার কথা শুনে ওর কলিগরা বলল, ‘ভাই এইবার যাচ্ছ যাও, পরেরবার অর্থাৎ পরের শুক্রবার কিন্তু শ্রীমঙ্গল যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। তখন কিন্তু ছাড়ব না।’

‘আচ্ছা আচ্ছা।’
রোদ্দুর যে বাড়ি যাবে তা আগে থেকে কাউকে জানায় নাই। গাড়িতে বসেও মায়ের সাথে ফোনে হচ্ছিল, তবুও মাকে জানায় নাই। রওনা দিতে দিতে বেশ দেরিই হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরতেও দেরি হবে, আনুমানিক দশটা তো বাজবেই। কিন্তু দশটার দিকেও গাড়ি জ্যামে আটকে রইল। দশ মিনিট গাড়ি আগালে এক ঘন্টা বসে থাকতে হয়।
অবশেষে বারোটা নাগাদ সুখানপুর বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি থামল। মানুষজন এই শীতের রাতে সবাই শুয়ে পড়েছে বোধহয়। চারিদিক অন্ধকার, খাঁখাঁ করছে, কেমন গা ছমছমে একটা পরিবেশ। বাকি পথটুকু হাঁটার রাস্তা, ১০ মিনিট হাঁটলেই বাড়ি পৌঁছে যাবে।
রোদ্দুর একটা পরিকল্পনা করল— এখন যেহেতু বাড়িতে সবাই ঘুমে আর তার আসার খবর যেহেতু কারো জানা নাই তাই সকালে যদি হঠাৎ করে সবার সামনে উপস্থিত হওয়া যায় তখন সবাই সারপ্রাইজড হবে।
তাই রোদ্দুর পেছনের দিক দিয়ে ঢুকল। এই গেটের একটা চাবি তার কাছে থাকে সবসময়। সামনের গেটের লকের চাবি নাই। রোদ্দুর ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল। হঠাৎ উপর থেকে কেউ একজন ‘অ্যাই অ্যাই পাইছি পাইছি’ বলে চেঁচিয়ে উঠল।
.
.
.
চলবে…..