#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-১৪]
~আফিয়া আফরিন
ঝিলমিল জেগে ছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠেছিল দেরিতে, তারপর আবার দুপুরে খেয়েদেয়ে দারুণ একটা ঘুম দিয়েছে। তাই রাতের ঘুম বাবাজি তাকে টাকা বাই বাই করে মামা বাড়ি ঘুরতে বেরিয়েছে। অবশেষে অনেকক্ষণ বিছানায় এ’পাশ ওপাশ করে ঘুম আসছিল না দেখে রান্নাঘরে গিয়ে কড়া করে এক কাপ চা বানিয়ে পেছনের বারান্দায় এসে বসেছে। ঠিক তক্ষুনি চোখে পড়ল এক আগুন্তক। ভয় পেলেও ঝিলমিল মনে সাহস রেখে উঠে দাঁড়াল। বারান্দার এ’কোণা ও’কোণা থেকে অনেকবার দেখেও অন্ধকারের কারণে আগুন্তকের মুখ দেখতে পেল না। আশ্চর্য! ব্যাটা আবার বাড়ির মধ্যে ঢুকছে। উদ্দেশ্য কি তার? চুরি করতে আসছে নাকি এই সেই যে ঝিলমিলের ঘরের জানালায় ঠকঠক করে? বাড়ি ঢুকে পড়ছে, আটকানোর কোনো পথ নেই বলে ঝিলমিল চেঁচিয়ে উঠল। আগুন্তক ওখানেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। ঝিলমিল পুনরায় বলল, ‘শালার সাহস কত্ত বড়! বুকের পাটা কত্ত বড়! আমাদের বাসায় আসছে চুরি করতে? বুকের পাটা আরেকটু বড় থাকলে দাঁড়া ওইখানেই, আমি বাড়ির সবাইকে ডেকে আনতেছি।’
রোদ্দুর কণ্ঠ শুনেই বুঝতে পারল এটা ঝিলমিল। এই মেয়ের স্বভাবই হচ্ছে না বুঝে শুনে চিল্লানো। রোদ্দুর’ও চাপা স্বরে চেঁচিয়ে উঠল, ‘অ্যাই ছেমড়ি, চুপ থাক। এত রাতে চেঁচামেচি করে কি সারা পাড়ার মানুষ জড়ো করবি নাকি?’
ওমা ভূত নাকি! ঝিমঝিল চোখ বড় বড় করে তাকাল। মানুষের অবয়ব’ই তো মনে হচ্ছে। কোন ভূত আবার মানুষের রূপ ধরে এলো নাকি? তাও আবার রোদ্দুরের?
ঝিলমিল সাবধানী কন্ঠে বলল, ‘কে..….. কে?’
‘আবার তুই ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছিস? নিচে নেমে গেট খুলে দে।’
‘তুই এত রাতে এখানে কি করিস?’
‘আশ্চর্য! আমার বাড়িতে আমি এত রাতে কি করি, তার কৈফিয়ত তোকে দিতে হবে? তোকে যেটা বলেছি সেটা কর।’
ঝিলমিল এক মুহূর্ত ভেবে নিচে নেমে এলো। তবে বুঝতে পারছে না, এটা সত্যি রোদ্দুর নাকি ওর রুপ ধরে আসা ভূতরূপী নকল রোদ্দুর! ঝিলমিল পেছনের দরজায় এসে দাঁড়াল। ঝিলমিল ওপাশ থেকে বলল, ‘আগে তোর হাত দেখা, তারপর গেট খুলছি।’
‘আজব! হাত দেখাতে হবে কেনো? তুই জ্যোতিষী?’
‘না। হাত দে।’
রোদ্দুর চুপচাপ হাত বাড়িয়ে দিল। ঝিলমিল বেশ জোরেশোরেই একটা চিমটি বসিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিল, এটা রোদ্দুর। গেট খুলে দিল। আবছা লাইটের আলোয় রোদ্দুর নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাতটা দেখে নিল। রাক্ষসী এমনভাবে চিমটি দিয়েছে যে ওই অংশটুকু লাল টকটকে হয়ে গেছে। ওই জায়গায় চিনচিন করে ব্যাথাও করছে। রোদ্দুর চোখমুখ কুঁচকে বলল, ‘কী সমস্যা তোর? হাতে চিমটি দিলি কেন? দেখ হাতের কি অবস্থা হয়েছে।’
‘আমি দেখলাম তুই আসল নাকি নকল?’
রোদ্দুর ভুল কুঁচকে বলল, ‘মানে?’
‘মানে হচ্ছে, পরীক্ষা না করে তোকে বাড়িতে ঢুকতে দিই কি করে বলতো? তুই যদি ভূত হোস আর এসে আমার ঘাড় মটকাস? তখন কি হবে ভাবতে পারছিস? বাবারে!’ ঝিলমিল দৃশ্যটা কল্পনা করেই চমকে উঠল।
রোদ্দুর জিজ্ঞেস করল, ‘তুই ভূতে ভয় পাস?’
ঝিলমিল দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল, ‘হেহে মাম্মা, ভূত ভয় পায় না এমন কোন মানুষ আছে? তোর ঘাড় মটকাতে এলে তুই’ও বাপ বাপ করে পালাবি। হাহাহা!’
রোদ্দুর ঝিলমিলের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি এই মুহূর্তে ভূতের ভয় পাচ্ছি না। কিন্তু তুই যেভাবে হাসছিস, ঠিক পেত্নীর মত, ওই যে শেওড়া গাছের পেত্নী— তোকে দেখে আমার ভয় হচ্ছে। আমি তো এখানে থাকি না, আমার বাড়ির মানুষজন থাকে। কখন যে কার ঘাড়ে চেপে বসে ঘাড় মটকাস আল্লাহ ভালো জানেন।’
ঝিলমিলের হাসিমুখটা দপ করে নিভে গেল। মুখ কালো করে বলল, ‘তুই জীবনেও মানুষ হবি না। যা যা, বকবক করিস না। আমিও যাই। তোর চক্করে পড়ে এতক্ষণে নিশ্চয়ই আমার চা ঠান্ডা বরফ পানি হয়ে গেছে।’
‘যাব’ই তো। অযথা তোর সাথে এতক্ষণ বকবক করে সময় নষ্ট করলাম। তোর মত তো আর সারাদিন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াই না, আমার অফিস আছে, কাজ আছে; সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হয়। অন্য মানুষের মত পড়ে পড়ে ঘুমাতে পারি না আর নিশাচর হয়ে রাত’ও জাগতে পারি না।’
রোদ্দুর এইটুকু বলেই ভোজবাজির মত চোখের পলকে উধাও হয়ে গেল। ঝিলমিল ভাবল, ওর কথাবার্তা ঠিকঠাক লাগছে না! ও কি আসলেই রোদ্দুর অর্থাৎ মেজো কাকা-কাকির একমাত্র ছেলে, দাদির আদরের নাতি, আর বাড়ির সবার চোখের মণি? যা হয় হোক, ঝিলমিল আর ওখানে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস পেল না। বাহিরের দিকে তাকাতেই পিলে চমকে উঠল। আমাবস্যার মতো অন্ধকার! এখন ভূতে ধরলেও বাঁচানোর মত কেউ নেই। একটু আগে রোদ্দুরকে বলে সে নিজেই এখন বাপ বাপ করে দৌড়ে পালাল।
.
শীতকাল হোক আর গরমকাল হোক, সরকার বাড়ির বউয়েরা সূর্য্যি মামা উঠার সাথে সাথেই উঠে যায়। তারপর মামার সাথে পাল্লা দিয়ে চলে সংসারের নানান আয়োজন। যেহেতু যৌথ পরিবার, তাই কাজকর্ম বেশি। সবাই মিলে করলে কারোরই গায়ে লাগে না। সকালে একেকজন একেকরকম নাস্তা খায়, কারোর সাথে কারো মিলে না। তাই বাড়ির বউয়েরা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
রোদ্দুরের আসার খবর এখনও কারো জানা নেই। ঝিলমিল রান্নাঘরে এসে বলল, ‘বাহ! তোমাদের ওয়ান এন্ড অনলি সাহেবের জন্য রান্নাবান্না শুরু করে দিয়েছ?’
‘কীসের সাহেব? আমরা রান্না তোদের সবার জন্য’ই করছি। ভালো কথা, তুই আজ এত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে এসেছিস যে? সূর্য কোন দিকে উঠল?’
‘সূর্য তার জায়গা মতই আছে কাকি। কথা হচ্ছে, ভূতের ভয়ে আমার একদম ঘুম হয় নাই। চোখ বন্ধ করলেই মনে হচ্ছে, কেউ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আবার চোখ খুলেও থাকতে পারতেছি না। কী যে অশান্তি! তারমধ্যে ওই রোদ্দুর ব্যাটা যে আসলেই মানুষ না ভূত বুঝতে পারছিলাম না। সারারাত এ’পাশ ও’পাশ করেই কাটল।’
নীলিমা এগিয়ে এসে বললেন, ‘রোদ্দুরের কথা কি বললি?’
ঝিলমিল আহ্লাদী কণ্ঠে বলল, ‘ওপস সরি! তোমার ছেলের নামে তো আবার কিছু বলা যাবে না। সরি সরি ডিয়ার, আমার ভুল হয়ে গেছে। ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আর কখনো বলব না। কানে ধরতে হবে?’
নীলিমা ঝিলমিলের পিঠে হালকা চাপড় মেরে বললেন, ‘ধুর শুধু ফাজলামি করিস। হঠাৎ ছেলেটার কথা বললি তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম। কতদিন থেকে বলতেছি, ছুটির দিনগুলোতে একটু আয়। কই আর আসে? কী এক মুসিবতে পড়লাম বল তো? তোর চাচাকে কতবার বলেছি, ছেলেকে ওতদূর পাঠিয়ো না এখানে রেখেই পড়াশোনা করাও। না, উনি আমার কোনো কথা শুনবে না। আগে উনি শোনেন নাই, এখন উনার ছেলে শোনে না। আমার জ্বালা আর যন্ত্রণা!’
ঝিলমিল অবাক হয়ে বলল, ‘কাকি! তুমি জানো না?’
‘কী জানব?’
‘তুমি আসলেই জানো না?’ ঝিলমিল আবারও অবাক হয়ে প্রশ্ন করল।
‘হেঁয়ালি না করে বল তো।’
‘তোমার ছেলে তো এখানেই, কাল রাতে আসলো তো… আসলেই জানো না তুমি?’
ঝিলমিলের কথা শুনে সবাই ওর দিকে ঘুরে তাকাল। নীলিমা বলল, ‘বলিস কি তুই? স্বপ্ন দেখেছিস নাকি?’
‘না, তুমি গিয়ে দেখে আসো।’
নীলিমা সত্যি দেখতে চলে গেলেন। তার ছেলে এসেছে, অথচ তিনিই জানেন না! রোদ্দুর ঘরের দরজা ভেতর থেকে লাগানো। জানালা দিয়ে তিনি উঁকি দিয়ে দেখলেন, আসলেই তার ছেলে এসেছে। খুশি হয়ে সবাইকে জানালেন, শাশুড়িকেও এক পলক জানিয়ে এলেন। রেহানা বললেন, ‘দাদুভাই ঘুম থেকে উঠলেই আমার এখানে পাঠিয়ে দিবে।’
.
ছাদে উঠে রিমঝিম ঝিলমিলকে পাকড়াও করল। বলল, ‘ভাইয়া যে আসছে, ত তুমি কীভাবে জানো? হুমমমম, ডাল মে কুছ কালা হে! কী চলছে তোমাদের মধ্যে? তুমি কি আসলেই আমার ভাবী হবে? ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়েটা হলে কী যে মজা হবে?’
‘ফালতু বকিস না। রোদ্দুরকে কাল রাতে আমি বারান্দা থেকে দেখেছিলাম, তাই জানতে পেরেছি ও এসেছে। নয়তো আমিও জানতাম না।’ মুখ কেলিয়ে উত্তর দিল ঝিলমিল।
রিমঝিম কাঁধ নাড়িয়ে দুষ্টু হাসি হেসে বলল, ‘ওমা! ওতো রাতে বারান্দায় কি করছিলে তুমি? ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলে নিশ্চয়ই। সামনাসামনি ঝগড়া করো আর মনে মনে ঠিকই আদান-প্রদান হয়ে গেছে!’
‘যা সর, যত্তসব আলতু ফালতু কথাবার্তা। ছোটো মানুষ ছোটো মানুষের মত থাকা।’
রিমঝিমের কথা ঝিলমিলের কাছে আলতু ফালতু মনে হলেও বাড়ির সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলো। দাদি আবারও হন্যে হয়ে পড়লেন বিয়ে নিয়ে। রোদ্দুরকে ডেকে বললেন, ‘এইতো আমি ম’রে যাচ্ছি। আমাকে বাঁচানোর জন্য আমার বাড়ির মানুষের কোনো ভূমিকাই নাই। যাদের কোলে পিঠে করে ছোটো বেলা থেকে মানুষ করলাম, ওরাই আজকে আমারে চিনে না। আল্লাহ! এত দুঃখ আমি কই রাখব? এই পোলা মাইয়া গুলারে এত বড় কইরা কোনো ফল পাইলাম না আমি। ম’ইরা যাওয়ার পর আফসোস করব এরা। আমার কথা এখন শুনতাছে না, বুঝব একদিন! ঘরের বউগুলা আনলাম শখ কইরা, ওরাও এখন পোলা মাইয়া শাসন করে না। আদর দিতে দিতে মাথায় তুলছে, এখন ওরা সবডি মিইলা আমার মাথার উপর চড়ে নাচতেছে।’
রোদ্দুর অসহায় দৃষ্টিতে সকলের দিকে তাকাল। তারাও কিছু বলল না, নিজেদের দিকে তাকিয়ে রইল। ছোট চাচ্চু বললেন, ‘আমি বুঝিনা বিয়েতে তোদের কি সমস্যা? কারো অন্য জায়গায় প্রেম নাই, তারপরও দোনোমনো করছিস কেনো? অন্য কোনো সমস্যা? ঝিলমিল আর তুই দু’জনই বেঁকে যাচ্ছিস। মায়ের কথা একবার ভাব, এত করে যখন বলছে একবার রাজি হয়ে দেখতে পারিস!’
রোদ্দুর কিছু বলল না। ঝিলমিলের খোঁজ করল। ওকে পেল ওর ঘরেই। গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘এই বিয়ের বিষয়ে তোর মতামত কি?’
ঝিলমিল নখে নেইলপলিশ দিচ্ছিল। রোদ্দুরের কথা কানে নিল না। নেলপলিশ দেওয়া শেষে ফুল দিতে দিতে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিছু বলছিলি?’
রোদ্দুর বলল, ‘তুই একটা অসহ্য! তোকে আমি বিয়ে করব কীভাবে আশ্চর্য। সময়ের কোনো দাম’ই নাই তোর কাছে। পনেরো মিনিট যাবত এখানে দাঁড়িয়ে আছি জাস্ট একটা মাত্র উত্তর শোনার আশায়।’
‘হ্যাঁ বল, কী বলছিলি। নিজের কাজের সময় অন্য কারোর কথা কানে নিতে পারি না।’
রোদ্দুরের রাগ হলেও তা সামলে বলল, ‘তোর বিয়ের ব্যাপারে তোর মতামত কি?’
‘আমাকে বিয়ে দিলে আমি লাফাতে লাফাতে বিয়ে করে নিব, এই বাড়িতে থাকতে ভালো লাগে না। শশুর বাড়িতে যাব, জীবনে কোনোদিন শশুর বাড়ী দেখি নাই। স্বামীর সাথে ঘুরে বেড়াবো, তিন্নি আপু তিথি আপুদের মতো। লাইফে শুধু চিল আর চিল। পড়াশোনা নামক আপদ তখন জীবন থেকে বিদায় দিয়ে দিব।’
রোদ্দুরের মনে হলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পাগলের গ’লা টিপে ধরে। সে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ‘তোর মত গাধার সাথে বাড়ির সবাই আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে!’ রোদ্দুরের কথাটা বলতে বোধহয় খুব কষ্ট হল…..
ঝিলমিল মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বলল, ‘হুশশ, তোকে কে বিয়ে করবে? ভাই তোর জীবনেও বিয়ে হবে না, তোর যা মেজাজ।’
রোদ্দুর মনে মনে বলল, ‘তোর যা কথাবার্তার ধরণ তোর’ও কোনোদিন বিয়ে হবে না। তার উপর বাড়ির সবাই আবার তোর মত ঘাড়ত্যাড়া আমার গলায় ঝুলাতে চাইছে।’
কিন্তু মুখে বলল, ‘তাহলে সবাইকে বলে দে তুই আমাকে বিয়ে করবি না।’
‘কেনো রে? আমি কেনো বলব? আমি সবার কাছে খারাপ হবো, আর তুই রাজপুত্তুরের মত নেচে নেচে বেড়াবি তা আমি মানব কেনো? তোর আপত্তি আছে তুই গিয়ে বল।’
‘তোর’ও তো আপত্তি আছে, তুই বল।’
‘সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কথা বলবি না আমার সাথে, যা। এখন আমি শিউলির সাথে ঘুরতে যাচ্ছি। সাইড প্লিজ….. ডিয়ার ভাইয়া।’
রোদ্দুর সরে দাঁড়াল। ঝিলমিল চুলের জুটি নাড়াতে নাড়াতে বেড়িয়ে গেল।
রাতের বেলা দাদি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ওনার একটাই কথা, নাতিকে ঘরে ফেরাতে হবে নাতি দিনকে দিন বিগড়ে যাচ্ছে। আর ঘরে ফেরানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে বিয়ে দেওয়া।
ঝিলমিল বাড়িতে নেই, সেই যে গেছে এখনও ফেরে নাই। রোদ্দুরের আর কোনো মতামত দেওয়ার নেই। সে যা বলছে, তার কোনো গুরুত্ব’ই দিচ্ছে না কেউ। এখন ঝিলমিল যদি ‘না’ বলে, সেটাই একমাত্র ভরসা। এতদিনকার শত্রুকে আজ বন্ধু মনে হচ্ছে। নিশ্চয়ই ঝিলমিল এসে কিছু একটা করবে! তার হাতে আর কিছু নাই, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেছে।
এইদিকে ছোট চাচ্চু আরেককাজ করে বসে আছে। স্থানীয় মসজিদের ইমামকে ডেকে নিয়ে আসছে, তিনি বিয়েও পড়ান। যেকোনো সময় রেহানা খাতুন বিয়ের রায় দিতে পারেন, তাই আগে থেকে সবাই সব বন্দোবস্ত করে রেখেছে।
দাদি বলতে শুরু করলেন, ‘দোয়া দুরুদ পড়ো বউয়েরা, যেকোনো সময় চলে যাব। মাথা ঘোরে, বুকের মধ্যে ব্যাথা করে। আল্লাহ.. এইদিন মরণের দরজা থেকে ফিরিয়ে এনেছে। আর কতদিন? এইবার ডাক পড়েছে আমার।’
কিছুক্ষণ বাদেই ঝিলমিল ঘরে ঢুকল। বাড়ির পরিস্থিতি দেখে একদম অবাক, মাথায় হাত! রোদ্দুরকে দেখল এক কোণায় মুখ কালো করে বসে আছে। বসার ঘরে ইমাম সাহেবকে দেখল বাবা এবং চাচাদের সাথে বসে আলাপ আলোচনা করছে। বাড়ির বাকিরাও আছে, যে যার মত। কিন্তু সবাই ব্যস্ত হয়ে এ ঘর থেকে ওই ঘরে দৌড়াচ্ছে।
রোদ্দুর ঝিলমিলকে চোখের ইশারায় কিছু বলতে বলল। তৎক্ষণাৎ বড় চাচি তা দেখে ফেললেন এবং বললেন, ‘এই তোরা চোখে চোখে কি বলছিস? কোনো পিরিতের আলাপ এখন চলবে না। এই তোমরা সবাই কোথায় আছো? বউ এসে গেছে, বউ এসে গেছে……!’
বাকিরাও চিপাচাপা থেকে বেড়িয়ে এসে চেঁচামেচি শুরু করে দিল, ‘বউ এসে গেছে, বউ এসে গেছে!’
.
.
.
চলবে……
#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-১৫]
~আফিয়া আফরিন
এই কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। তবে চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় চারিপাশ অভিভূত। সবাই বলাবলি করছিল, আজ মনে হয় জোৎস্না রাত। রাতের আকাশে মেঘেরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে, মনে হয় আকাশ রাজ্য পাহাড়া দিচ্ছে। মেঘের ফাঁকে ফাঁকে মাঝেমধ্যে দুয়েকটা তারা খুব নজরে পড়ছে। এমনই একটা মুহূর্তে ঘটনাচক্রে এমন দু’জন মানুষের জীবন একই সূত্রে গাঁথা পড়ল, যাদের এই সূত্র সম্পর্কে কোনো ধারনাই ছিল না। কী আশ্চর্য নিয়তির লিখন! আজকের এই ঘটনাটা ঘটবে বলেই হয়ত সেদিন সানিয়ার কাছে থেকে নির্মম প্রত্যাখ্যান পেতে হয়েছিল।
ঝিলমিল অনেকবার মানা করেছিল, কিন্তু কোনো লাভ হয় নাই। মা-বাবা, চাচা-চাচিসহ সবাই উঠে পড়ে লেগেছে, এমনকি হবু শাশুড়িও। ঝিলমিলের মত জেদি মেয়েকে কব্জা করা সোজা ছিল না, শুধুমাত্র দাদি ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলেন বলে মানবিকতার খাতিরে এই বিয়ের আসনে বসতে হলো। ঠিক ৮ টা ১৮ মিনিটে তাদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়েছে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ঝিলমিল মুখ কালো করে বসে আছে। একই অবস্থা রোদ্দুরের’ও।
ছোট চাচ্চু একটা রুমাল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘নতুন জামাই, এই রুমালটা দিয়ে মুখখানা ডেকে রাখো তো।’ রোদ্দুর রুমালটা হাতে নিয়ে সেটাকে হাতের মুঠোয় চেপে ধরে ধলাই মোচরাই করে রাগ মেটানোর ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
রোদ্দুরকে বিয়ে করতে হয়েছে বলে ঝিলমিলের যতটা না দুঃখ হচ্ছে, তারচেয়েও বেশি দুঃখ হচ্ছে এই ভেবে যে সে সারাজীবন এই বাড়ি থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছে অথচ এই বাড়িতেই আজ তার পারমানেন্ট জায়গা হয়ে গেছে।
রিমঝিম ফিসফিস করে ঝিলমিলের কানে কানে বলল, ‘ভাবি ওমন মুখ ভার কেনো গো? একটু হাসো। আমরাও দেখি হাসলে তোমাকে কেমন দেখায়!’
একটু দূর থেকে দাদি বললেন, ‘ওরে মিষ্টি খাওয়া। ওই চোখমুখ এরকম শক্ত করে রেখেছে কেনো? আজ একটা আনন্দের দিন, কোথায় এসে মুরুব্বিদের থেকে দোয়া নিবে তা না করে ঠাঁই ওখানেই বসে আছে। ও সেজো বউ, তোমার মাইয়ার কি হইছে জিগাও না কেন?’
দাদি এতক্ষণ অসুস্থ ছিলেন, এমন নাজেহাল অবস্থা যা মুখে প্রকাশ করার মত নয়। অথচ এখন তিনি সুস্থ, শুধু তাই নয় আগের মত সবাইকে ধমকাধমকিও করছেন, সবার সাথে হাসাহাসি করছেন। অন্যসময় হলে ঝিলমিল খুশি হতো, কিন্তু এখন ওর রাগ লাগছে।
সবার মাঝখান থেকে সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমি ঘরে যাব।’
বড় চাচি বললেন, ‘যাবিই তো মা, তার আগে আরেকটু বস। শুভ কাজে একটু মিষ্টিমুখ করতে হয়। এই তানিশা তুই বসে বসে কি করছিস? উঠ যা। তোর নতুন ভাবিকে মিষ্টিমুখ করা।’ বলেই তিনি চাপা হাসলেন।
রোদ্দুর এইদিকে তাকাল। কী থেকে কী করবে বুঝতে পারছে না। ইচ্ছামতো কাউকে রামধোলাই দিতে পারলে মনের রাগ মিটত। এই অসহ্যকর, ঝগড়াটে মেয়ের সাথে সারাজীবন সংসার করার কথা চিন্তা করলেই তো হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে। নাহ, সম্ভব নয়। এখন’ই ভনভন করে মাথা ঘুরছে, ভবিষ্যতে তাহলে কী হবে!
ঝিলমিল আর কথা বাড়াতে চায় না বলেই চুপচাপ মিষ্টি খেয়ে নিল। তারপর নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই শুনতে পেল, সবাই বলাবলি করছে— বহু কষ্টে বাগান থেকে অল্পকিছু ফুল ছিঁড়ে রোদ্দুরের ঘরটা সাজিয়েছি। বিয়ে যেভাবেই হোক, বাসরটা অন্তত ঠিকঠাক হোক। আমাদের তো আবার…….
ওদের বাকি কথা ঝিলমিল শুনল না। বাসর? হাহ, সে এখন নিজের ঘরে গিয়ে দরজা যে বন্ধ করবে দু’দিনের মধ্যে ঘরের দরজা খুলবে না সিদ্ধান্ত নিল।
এইদিকে রিমঝিম আর তানিশা রোদ্দুরকে ‘দুলাভাই, দুলাভাই’ বলে সম্বোধন করা শুরু করে দিয়েছে।
বিয়ে যেহেতু কোনোরূপ অনুষ্ঠান ছাড়াই হঠাৎ করে হয়ে গেছে, তাই সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা থেকে তারা পরিপূর্ণ ভাবে বঞ্চিত হয়েছে…. হচ্ছে। এখন সবাই বায়না ধরল, শালী হিসেবে নতুন দুলাভাইয়ের কাছ থেকে তারা বখসিস আদায় করেই ছাড়বে। কিন্তু রোদ্দুরকে কিছুতেই টলানো গেল না।
রিমঝিম অনুনয়ের সুরে বলল, ‘দুলাভাই প্লিজ! আজ টাকা না দিলে আপনাকে কিছুতেই ঘরে যেতে দিব না। সারারাত কিন্তু এখানে বসিয়ে রেখে আমরা পাহারা দিব।’
রোদ্দুর নির্বিকার কণ্ঠে বলল, ‘ঠিক আছে।’
ওরা তবুও অনুনয় বিনয় করতেই লাগল। রোদ্দুর কোনো কথা শুনল না। ও ওখানেই বসে রইল। কিছুক্ষণ বাদে মেজো কাকি এসে ধমক দিয়ে বললেন, ‘এই আমার ছেলেটাকে তোরা এইভাবে ধরে বেঁধে রেখেছিস কেনো? ছাড় ওকে। রোদ্দুর তুই উঠ বাবা, উঠে ঘরে যা।’
রোদ্দুর তাই করল। রোবটের মত নিষ্প্রাণ হেঁটে ঘরে চলে গেল।
নীলিমা তানিশাকে বললেন, ‘ঝিলমিল তো ওর ঘরে তাইনা? শোন, নতুন বর বউ বিয়ের দিন এভাবে আলাদা থাকবে এটা তো ঠিক না। তোরা তো এখন দু’পক্ষের আত্নীয়। এক পক্ষের ননদ আরেক পক্ষের শালী। তোদের একটা কর্তব্য আছে না? আর নিশ্চয়ই কিছু বলে দিতে হবে না। যা এইবার।’
তানিশা আর রিমঝিম দু’জনেই ছুটল। পরিকল্পনা করল কীভাবে দু’জনকে আজ রাতে একসাথে করা যায়! দু’জনই ঘরে গিয়ে ভেতর থেকে লক করে রেখেছে। রাত বাজে সাড়ে দশটা! যা করার এক্ষুনি করতে হবে!
তানিশা অনেক ভেবেচিন্তে একটা বুদ্ধি বের করল, যদিও সেটা কতটা যৌক্তিক হবে তার জানা নেই। রিমঝিমকে বলতেই, সেও সায় জানাল। আপাতত মাথায় যেহেতু কিছুই আসছে না, তাই এই উপায়’ই অবলম্বন করতে হবে। প্রথমে তানিশা গেল ঝিলমিলের কাছে। গিয়ে দরজা ঠকঠক করে বলল, ‘আপু আছো? একটু দরজা খোলো। কথা আছে।’
ঝিলমিল তৎক্ষণাৎ ওপাশ থেকে জবাব দিল, ‘যা বলবি বাইরে থেকেই বল। আমি দরজা খুলব না।’
‘আপুউউ…. আপু! একটা সারপ্রাইজ আছে। প্লিজ একটু বাইরে আসো।’
ঝিলমিল দরজা খুলে বের হলো। উঁকি দিয়ে তানিশার আশপাশ’টা দেখে নিল। কাউকে দেখতে পেল না বলে মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
তানিশাকে জিজ্ঞেস করল, ‘কি হয়েছে? অসময়ে আমাকে বিরক্ত করছিস কেনো?’
‘ছোট চাচ্চু দারুন একটা সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছে তোমার জন্য। চলো প্লিজ। আমরা তো দেখে থ! ভাবছি, তুমি দেখলে কিনা করবে। তোমার কতদিনের স্বপ্ন ফাইনালি পূরণ হতে যাচ্ছে।’
ঝিলমিল তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল, ‘কী সারপ্রাইজ?’
‘সেটা আমি বলে দিলে মজা থাকবে? সবাই ওখানেই আছে, চলো প্লিজ।’
‘আচ্ছা চল।’
ঝিলমিল দু’পা এগিয়ে গেলেই তানিশা বাঁধা দিয়ে বেশ সাবধানী কন্ঠে বলল, ‘আপু দাঁড়াও। এভাবে যেও না।’
ঝিলমিল নিজের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কেনো? খারাপ দেখাচ্ছে বা কি সমস্যা?’
‘না না, তুমি ঠিক আছো। সারপ্রাইজ অবশ্যই সারপ্রাইজের মত হতে হবে তাইনা! আসো, তোমার চোখ বেঁধে নিয়ে যাই।’ বলেই তানিশা হাতের মুঠোয় লুকিয়ে রাখা রুমালটা বের করল।
ঝিলমিল ইতস্তত করে বলল, ‘আশ্চর্য! এসবের কি দরকার? এমনিতেই তো….’
‘উহুঁ, সবসময় শাসন চলবে না। দেখি ঘোরো ওইদিকে, তারপর চলো আমার সাথে।’ তানিশা ঝটপট ঝিলমিলের চোখ বেঁধে দিল। তারপর ঝিলমিলকে নিয়ে একবার ড্রয়িংরুম রুমে গেল, একবার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আবার উপরে উঠে কয়েকটা ঘর ঘুরে রোদ্দুরের ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল। উঁকি দিয়ে দেখল, রোদ্দুর’ও ঘরে নেই। তারমানে রিমঝিম’ও তার কাজ ঠিকঠাক মত করেছে। তানিশা ঝিলমিলকে নিয়ে বসিয়ে দিল। ঝিলমিল বুঝল না কোথায় এসেছে! জিজ্ঞেস করল, ‘সারা দুনিয়া ঘুরে কোথায় এসে বসলাম? এইবার কি চোখের বাঁধন খুলতে পারব?’
‘এক মিনিট….’
ততক্ষণে রিমঝিম’ও রোদ্দুরকে নিয়ে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। ওর’ও চোখ বাঁধা। তানিশা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো দ্রুত। দুজন’ই রোদ্দুরকে পেছন থেকে ধাক্কা মেরে তৎক্ষণাৎ দরজা বাহির থেকে লক করে দিল। ওইদিকে রোদ্দুর কিছু বুঝে উঠতে পারল না, হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়ে টেবিলের কোণার সাথে হাতে কপালে বেশ ব্যথা পেল। শব্দ শুনে ঝিলমিল উঠে দাঁড়াল এবং চোখের বাঁধন একটানে খুলে ফেলল। রোদ্দুর এবং ঝিলমিল দু’জনই দু’জনকে এইভাবে দেখে হতবাক হয়ে গেল। রোদ্দুর কোনোমতে কপাল ডলতে ডলতে উঠে দাঁড়াল। দু’জনেই একসাথে বলে উঠল, ‘তুই? তুই এখানে?’
কথাটা বলেই রোদ্দুর চারিদিকে চোখ বুলাল। এগিয়ে এসে পুনরায় বলল, ‘আমার ঘরে তুই কি করছিস? এসবের মানে কি?’
ঝিলমিল তাকিয়ে দেখল, সে সত্যিই রোদ্দুরের ঘরে। তারমানে ওরা তাকে ধোঁকা দিয়েছে, এত্ত বড় ধোঁকা! এতক্ষণ ঝিলমিলের কান্না পায় নাই, চাপা রাগ ছিল। কিন্তু এইবার সত্যি সত্যি কান্না পেল। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘আমি কীভাবে আসলাম এখানে? চলে যাব। আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।’
রোদ্দুর দরজায় হাত দিয়ে দেখল বাহির থেকে দরজা লক। বুঝতে পারল, এতক্ষণ তার আদরের ছোটো বোনের বলা প্রতিটা কথাই ছিল ওদের পরিকল্পনার একটা অংশ মাত্র।
রোদ্দুর ঝিলমিলের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, তুই এখানে কেনো এসেছিস? ওরা তোকে বলল আর তুই ঢ্যাংঢ্যাং করে নাচতে নাচতে চলে এলি?’
‘ওরা তো আমাকে সারপ্রাইজের কথা বলে নিয়ে এসেছে।’ ঝিলমিল এইবার কেঁদেই বলল।
রোদ্দুর বুঝল, ওকে কিছু বলে লাভ নেই। ওই নিজেই ষড়যন্ত্রের শিকার। এমনিতেই কপালের অংশটুকু কেটে যাওয়াতে ওই জায়গাটা চিনচিন করছে, তারমধ্যে এই মেয়ের ফ্যাসফ্যাস করে কান্নাকাটির শব্দ একেবারেই মাথা ধরিয়ে দিল। সারাদিন আজ বহুত ধকল গেল, আর সন্ধ্যার পর তো জীবনের উপর দিয়ে ঝড় উঠে গেছে। ভেবেছিল, এখন একটু শান্তিমত বসে বিশ্রাম করতে পারবে। কিন্তু তা আর হলো কোথায়? একটু আগে ঘরে ঢুকেই সর্বপ্রথম ফুল লতাপাতা গুলো সরিয়ে এই সাইডে রেখে দিয়েছিল।
ঝিলমিল এক কোণায় ওই ফুলগুলো দেখে বলল, ‘আমার কষ্ট করে লাগানো ফুলগুলো তুই তুলে কেনো এনেছিস? আবার নষ্ট করে ফেলে দিয়েছিস।’
এখন তার কথায় ঝগড়ার আভাষ টের পাওয়া যাচ্ছে না। কান্নাকাটির কারণে কথা বলছে মৃদুস্বরে।
রোদ্দুর ধমক দিয়ে বলল, ‘চুপ থাক।’
‘আমি এখানে থাকব না।’
‘আমার’ও তোকে এখানে থাকতে দেওয়ার ইচ্ছে নেই। ওই যে বারান্দা, গ্রিল বেয়ে নেমে চলে যা। আমি আটকে রাখি নাই।’
রোদ্দুর ওর সামনে থেকে চলে গেল। ঝিলমিল ভাবতে লাগল, কী করে ওকে এই ঘর থেকে বের করা যায়। এই বাঁদরের সাথে সে কিছুতেই এক ঘরে এক বিছানায় থাকতে পারবে না, অসম্ভব। রোদ্দুর ফ্রেশ হয়ে এলো, হাতের তোয়ালেটা বারান্দায় নিয়ে যেতেই ঝিলমিল সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাল। রকেটের গতিতে দৌড়ে গিয়ে বারান্দায় দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল। রোদ্দুরের উদ্দেশ্য বলল, ‘চেঁচামেচি করবি না। আমি কিন্তু একদম দরজা খুলব না। সকাল হবে, তখন নিজে গিয়েই দরজা খুলে দিব।’
রোদ্দুর জীবনে প্রথম এতটাই হতভম্ব হয়ে গেল। একটু আগে যখন ওরা দরজা বন্ধ করেছিল, তখন অযথা সিনক্রিয়েট হবে ভেবে সে চেঁচামেচি থেকে বিরত দিয়েছে। এইবার’ও তাই করল…. করতে বাধ্য হলো। উফফফ আল্লাহ, ভালো মানুষীর ফল বারবার এইরকম নিষ্ঠুর হচ্ছে কেনো?
.
.
.
চলবে……
#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-১৬]
~আফিয়া আফরিন
রোদ্দুরের সারারাত কাটল ওইভাবেই ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে। ঝিলমিলের উপর এত রাগ লাগল, যা বলার মত নয়। সিদ্ধান্ত নিল, কাল কাল সকাল সকাল’ই কেই জেলখানা থেকে নিজেকে মুক্ত করবে।
সারারাত একদমই ঘুম হলো না। হেলায় দিয়ে দাঁড়িয়ে এবং বসে রাত কেটে গেল। সকালের দিকে চোখটা একটু লেগে গেল। ঠিক ওই সময় ঝিলমিল এসে দরজা খুলে দিয়ে দেখল, রোদ্দুর এক কোণে ঘাপটি মেরে বসে আছে, মনে হয় ঘুমাচ্ছে। ঝিলমিলের এই বিষয়টা একদম খেয়াল ছিল না। তখন খেয়ালে থাকলে, ঠিকই একটা কম্বল দিয়ে দিত। একটু খারাপ লাগল নিজের কাছে। তার উপর আবার কপালের ক্ষতটা। বেশ গাঢ় হয়য়ে উঠেছে। ওই জায়গাটা লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। যত যাইহোক, একটা মানুষ তো! এভাবে সারারাত কষ্ট দেওয়া একদম ঠিক হয় নাই। ঝিলমিল একটা কম্বল নিয়ে এসে আলতো ভাবে রোদ্দুরের গায়ে দিয়ে দিল। ঘরের দরজার লক’টা এইবার খোলাই পেল। দ্রুত বের হলো। এক দৌড়ে তানিশার ঘরে এলো, কিন্তু তাকে ঘরে পাওয়া গেল না। রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল। দরজায় উঁকি দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল, ‘তানিশা কি এখানে আছে?’
সাবরিনা হেসে বললেন, ‘আরে আরে, আমাদের বাড়ির নতুন বউ যে! এসো এসো, সুস্বাগতম। রাতে ঘুম ভালো হয়েছে আম্মাজান! এই নীলিমা, তোমার ছেলের বউ এসেছে খোঁজখবর নাও, ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করো।’
নীলিমা জিজ্ঞেস করলেন, ‘রোদ্দুর কোথায় রে? উঠেছে ঘুম থেকে?’
‘আমি জানিনা।’ ঝিলমিল এইবার রিমঝিমকে খোঁজার উদ্দেশ্য সব ঘর উঁকি দিল। দু’জন ষড়যন্ত্রকারী একসাথে পালিয়েছে। দাদির ঘরের সামনে আসতেই তিনি ঝিলমিলকে ডাক দিলেন, ‘কী রে নাতবউ! রাতে ঘুম হয়েছে ঠিকঠাক মত? আমার দাদুভাই কোথায়?’
‘ঘুমাচ্ছে।’
‘আচ্ছা, তুই এদিকে আয়। আমার পাশে বস দেখি। রাগ করে আছিস আমার উপর? দেখিস, একদিন ঠিকই বলবি দাদি তুমি ভাগ্যিস আমাদের বিয়েটা দিয়েছিলে। সেদিন আর সেই কথাটা শোনার জন্য আমি বেঁচে থাকলেই হয়!’
ঝিলমিল বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ধুর, এসব ইমোশনাল ডায়লগ দিও না তো। তোমার এই ডায়লগের চক্করে আমার জীবনের সাড়ে সর্বনাশ হয়ে গেছে।’
‘ওই তো বললাম, একদিন ঠিক বুঝবি। বাদ দিই এসব কথা। একটা কথা সবসময় মনে রাখবি, মেয়ে মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে তার স্বামী। চেষ্টা করবি স্বামীর মন যুগিয়ে চলতে, মেনে নিতে। এইটুকু করতে পারলেই তুই সংসার জীবনে সুখী। আর হ্যাঁ, পুরুষ মানুষ কিন্তু উড়তে পছন্দ করে। ঘরে অর্থাৎ খাঁচায় বন্দী পাখি থাকা সত্ত্বেও আকাশে চলতি পথে উড়ে যাওয়া অনেক পাখি কিন্তু মনে ধরে যায়। তুই কি করবি জানিস? মায়ায় বেঁধে রাখবি। মানুষ অনেক ক্ষেত্রে ভালোবাসা ছাড়তে পারে কিন্তু মায়া কখনোই কাটিয়ে উঠতে পারে না। আর হ্যাঁ স্বামী মানে হচ্ছে…….’
ঝিলমিল চিবিয়ে চিবিয়ে নিজের মনেই বলল, ‘স্বামী না তো আসামি।’ দাদির করা পুরোপুরি শোনার প্রয়োজনবোধ করল না, উঠে চলে গেল।
.
রোদ্দুর ঘুম থেকে উঠে আসার পর বাড়ির সবাই ওর কপালের ক্ষতটা দেখে নিশ্চিত মনে মনে ভেবে নিয়েছেন, কাল রাতে নিশ্চয়ই দু’জন মারামারি করতে গিয়ে এই অবস্থা করেছে। শিমু ঝিলমিলকে একগাদা কথা শোনালেন। সম্ভব হলে, দু’টো থাপ্পড়’ও মারতেন। আফসোস করে কপাল চাপড়ালেন, এটা তিনি কেমন মেয়ে পেটে ধরেছেন! রাগে গজগজ করতে করতেই রোদ্দুরের কপলে খুব যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাবা, আর ব্যথা আছে?’
রোদ্দুর হেসে জবাব দিল, ‘না কাকি।’
এতক্ষণ সে একটাও কথা বলে নাই। বাড়ির সবাই যা বলেছে, তা চুপচাপ কানে নিয়েছে। ওরা ভেবেছে, কপাল কেটে যাওয়ার জন্য ঝিলমিল দায়ী, রোদ্দুর সেটাতেই চুপচাপ সায় দিয়েছে। কাল ও যা করেছে, সেই তুলনায় এটা তেমন কিছুই নয়। শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেওয়ার প্রথম ধাপ আর কী! ঝিলমিল অনেকবার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইলেও কেউ তাকে বিশেষ পাত্তা দেয় নাই, সবাই রোদ্দুরকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল। ঝিলমিলের অসহায় চাহনি দেখে অনেকক্ষণ বাদে রোদ্দুরের ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসির রেখা ফুটে উঠল।
.
দুপুরের আগে আগেই রোদশী এসে হাজির। গতকাল রাতে বিয়ের সময় সশরীরে উপস্থিত না থাকতে পারলেও ওরা ভিডিও কলে ঠিকই উপস্থিত ছিল। এই বাড়িতে সবাই তো ঝিলমিলের বিপক্ষে একমাত্র রোদশী’ই সবকিছুতে ওর পক্ষে ছিল। বড় বোনকে দেখেই ঝিলমিল কান্নায় ভেঙে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘দেখেছ ওরা কি করল আমার সাথে? আমি তো এই বিয়েটা করতে চাই নাই, জোর করে ইমোশনাল ব্ল্যাক’মেইল করে আমাকে বিয়ে করাইছে। তুমি এদের কিছু বলো আপু।’
সবসময় রোদশী ওর পক্ষে থাকলেও এইবার থাকতে পারল না। বলল, ‘রোদ্দুর আমাদের হিরের টুকরো ছেলে। আমি তো তোদের সম্পর্কের কথা কোনদিন ভুলেও ভাবি নাই, ভাগ্যিস দাদি ভেবেছিল।’
‘অ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যা…. আমার হিরের টুকরো চাই না তো। কোনোমতে ভাঙ্গা চোরা একটুখানি কয়লার টুকরো আমার কপালে জুটলেও আমি খুশি হতাম।’
ঝিলমিলের হা’হুতাশ গেল না। কার কাছে একটু শান্তনা পাবে, তাই ভেবে ভেবে শিউলির কাছে ছূটল। আর শিউলি করল কি? ক্রিকেট খেলায় খেলোয়াড় ছক্কা মারলে যেমনে লাফায় ও ঠিক সেভাবেই লাফিয়ে উঠল। ঝিলমিলকে কংগ্রাচুলেশন জানিয়ে বলল, ‘আরে বাহ দোস্ত! জীবনে একটা কাজের কাজ তুই’ই করলি। দেখ, আমার চাচাতো ভাই’ও নেই আর বিয়ের কোনো খবর’ও নেই। সবার মত তুই’ও প্রমাণ করে দিলি আজকের ভাইয়া, কালকের ছাইয়া!’
ঝিলমিল শুধু পারছে না দুনিয়াদারি উল্টে দিতে। ওর এই সাপের মত হিসহিস করা দেখে সকলেই মজা পাচ্ছে।
.
তানিশা আর রিমঝিম সকালেই বের হয়ে গিয়েছিল। তারা জানে, সকাল সকাল অবশ্যই ওদের খোঁজ পরবে। নতুন দুলাভাই এবং নতুন ভাবীর কাছে উত্তম মাধ্যম’ও খেতে পারে। তাই দুপুরের পর ওরা বাড়িতে ঢুকল। প্রথমেই ঝিলমিলের সাথে হয়ে গেল, কিন্তু ও কিছুই বলল না। তানিশা হেসে সুর টেনে জিজ্ঞেস করল, ‘বাসর রাত কেমন কাটল ভাবিইইইইইই? কী কী করলে একটু শুনি। ননদ হিসেবে শোনার অধিকার তো আছেই।’
ঝিলমিল দাঁত কেলিয়ে হেসে জবাব দিল, ‘খুউউউউব ভালো কেটেছে। এত ভালো কাটবে কল্পনাও করি নাই। আগে যদি জানতাম জীবনে এত আনন্দে কাটবে, তাহলে আগেই বিয়ে করে ফেলতাম তাও তোর ভাইকে।’
তানিশা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল, ‘ওয়াও! আই এমন রিয়েলি হ্যাপি। ভেবেছিলাম গতকালের জন্য তুমি অনেক বেশি রেগে থাকবে প্লাস আমাদের বকাবকি করবে। কিন্তু তুমি যে নিজেই এতটা হ্যাপি হবে, ভাবতেই পারি নাই। কংগ্রাচুলেশন ফর ইওর ম্যারিড লাইফ।’
ঝিলমিল আবারও খিলখিল করে হেসে উঠল। ওকে দেখে মনে হচ্ছে, ও দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষের মধ্যে একজন। কিন্তু সর্বক্ষণ ওর মাথার ভেতর যে বুদ্ধি এবং মানুষকে ফাঁসানোর ধান্দা ঘোরে, এটা আপাতত সবার জানা থাকলেও কেউ গুরুত্ব দিল না। মেয়েকে তো সবাই জানে, বোঝে। সবাই বলাবলি করছিল, ‘এখন যেহেতু বিয়েশাদী হয়েছে, দেখে নিও ঝিলমিলের মাথার বুদ্ধি খুলবে। মেয়ে এইবার একটু মানুষের মত মানুষ হবে। এতদিন তো গায়য়ে গতরে যা বড় হয়েছে, মাথায় বুদ্ধিসুদ্ধি ছিল কিছু?’
ঝিলমিল আড়াল থেকে সেসব শুনে ঠোঁট বাঁকা করে, ত্যাড়া করে যেভাবে পারল; হাসল। আনন্দে তার নাচতে ইচ্ছে করছে। সবাই কত ইতিবাচক ভাবনা ভাবছে, ঝিলমিল সবার ভাবনা এক চুটকিতে হাওয়া করে দেওয়ার যোগ্যতা রাখে। গতরাতে রোদ্দুরকে বারান্দায় বন্দি করেছিল, আজ রাতের জন্য আরেকটা পরিকল্পনা সাজিয়ে রাখল।
.
রোদ্দুর বাড়ির সবার কাছে এক কাপ চা চাইল। কারো সময় হচ্ছে না, বাড়ি ভর্তি মেহমান। শিমু এসে ঝিলমিলকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘তোর কি কোনো কান্ড জ্ঞান নাই? অকর্মা মেয়ে কোথাকার! রোদ্দুর কখন থেকে এক কাপ চা চাইছে, একটু বানিয়ে দে যা। এইরকম করলে তুই সারাজীবন সংসার করবি কি করে? আশ্চর্য। এইরকম বেয়াদবি যেনো আমার সামনে করিস না ঝিলমিল। বড় হয়েছিস বলে কিন্তু ছাড় দিব না, থাপড়ে গাল লাল করে দিব।’
ঝিলমিল মুখ কালো করে ফেলল। রোদ্দুর যে সত্যিকার অর্থে তার চরম শত্রু, এটা বুঝতে পারল। আর তা না হলে, ওর জন্য তাকে কথায় কথায় বকা খেতে হয়!
ঝিলমিল চা বানাতে গেল। চা সে বেশ ভালোই বানাতে পারে। কিন্তু ঘরের শত্রু বিভীষণকে যত্ন করে চা বানিয়ে দিবে, তা হতে পারে না। ঝিলমিল চায়ে চিনির বদলে তিন চামচ লবণ দিয়ে দিল। তারপর সুন্দর করে ট্রে’তে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে গেল। রোদ্দুরকে বলল, ‘নে খা। চায়ের জন্য নাকি সারা বাড়ি শুদ্ধ মানুষকে পাগল করে দিয়েছিস।’
রোদ্দুর চায়ের কাপ হাতে নিল, কিন্তু ঝিলমিলের কথার জবাব দিল না এবং ওর সাথে উচ্চবাচ্য’ও করল। মনে মনে বলল, ‘মূর্খের সাথে তর্ক করা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বোকামি।’
ঝিলমিল চা দিয়ে ঘর ছেড়ে চলে গেল। রোদ্দুরের হঠাৎ করে মনে পড়ল, আগামীকাল রবিবার। তার অফিস আছে, সে ঝট করে উঠে দাঁড়াল। সবকিছুর চিন্তায় মাথা থেকে আসল জিনিস’ই বেড়িয়ে গেছে। রোদ্দুর মনে মনে খুশি হলো। এই জেলখানা থেকে পালানোর একটা যুক্তিসঙ্গত উপায় সে পেয়ে গেল। উঠে ফটাফট নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিল। একটু বাদেই ঢাকার উদ্দেশ্য বেরিয়ে যাবে, কিন্তু কাউকে বলবে না। পৌছে গিয়ে তারপর বাড়িতে একটা ফোন করে দিবে।
রোদ্দুর চায়ের কাপ হাতে নিল। এক চুমুক খেয়েই চোখমুখ বিষিয়ে গেল। থু থু করে ফেলে দিল। প্রথম অবস্থায় টেস্ট বুঝল না, আরেকবার চুমুক দিল। ইয়াক থুহহহ! বেয়াদব মেয়েটা চিনির বদলে একগাদা লবণ ঢেলে দিয়েছে। উফফফ, আল্লাহ! এই মেয়েটা এমন কেনো? ওর মাথায় কি সামান্যও বুদ্ধি নেই! নাকি এসব ইচ্ছে করেই করে। কীসের যে এত শত্রুতামি? আজকালের নয়, একদম জন্মের পর থেকে। তখন খামচা খামচি করত। একবার তো খা’ম’চি দিয়ে রোদ্দুরের হাতের চা’ম’ড়া তুলে ফেলেছিল। কোলের সেই ছোটো বাচ্চা তখনই চুল টেনে ছিঁ’ড়ে ফেলত। আর এখন? সেই মেয়ে তো খ্যাপা ষাঁড় হবেই, স্বাভাবিক!
রোদ্দুর আর অপেক্ষা করল না। এখানে থাকলে সে পাগল হয়ে যাবে। আর এক মুহূর্তও নয়…. এক মিনিটও নয়। প্রথমে আশেপাশে দেখে নিল কেউ আছে কিনা। কাউকে দেখতে পেল না, তবুও রিস্ক নিতে চাইল না। নিজের ঘরের জানলা দিয়ে ব্যাগটা ফেলে দিল, আগে যেভাবে স্কুল পালানোর সময় বন্ধুদের সাথে করত; তাই ভালো অভিজ্ঞতা আছে। ব্যাগ নিচে ফেলে দিয়ে সকলের সামনে দিয়েই নেমে এলো। তারপর সোজা চলে এলো বাড়ির পেছনে। ব্যাগটা তুলল এবং ঝড়ের গতিতে দৌড় দিল। কিছুটা দূরে এসে হাঁটার গতি স্লথ হয়ে এলো। হেলতে দুলতে হাঁটতে হাঁটতে নিজেকেই বলল, ‘সাব্বাস রোদ্দুর। অবশেষে জেলখানা থেকে নিজেকে মুক্ত করে এনেছিস। ক্যারি অন, কোনো স্বৈরাচারীর ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না… কিছুতেই না। তোর এই সহজ-সরল, সুন্দর, ভদ্র জীবনে স্বৈরাচারীর স্থান হবে না।’
.
.
.
চলবে……
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৪৬০