#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-২৫]
~আফিয়া আফরিন
শনিবারে তো ঝিলমিল আর রোদ্দুরের যাওয়া হলো না। রোদ্দুর তাই বলল, রবিবার সকাল সকাল রওনা দিলে সে অফিসটা ধরতে পারত। কিন্তু রোদশী এবং ফারহান দু’জনেই বাঁধা দিল। বলল, দুয়েকটা দিনের ছুটি নিতে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রোদ্দুর ছুটি নিতে বাধ্য হলো। এখন বড় বোন, তার হাজব্যান্ড বারবার করে বলছে, তাদেরও তো একটা সম্মান আছে! মুখের উপর আর কতই বা না বলা যায়।
সময় মাত্র তিন দিন। ওরা পরিকল্পনা করল, ছোটো পরিসরে একটি পিকনিকের আয়োজন করবে। ঝিলমিল তো এতদিন ঝিমিয়ে ছিল, রোদশী আসা উপলক্ষ্যে এইবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ওরা এক পা আগালে সে পুরো কদম এগিয়ে যায়। রোদ্দুরের আসল অর্থে মনে হচ্ছে, সে শশুর বাড়িতে আছে। দু’দিন আগেও নিজেকে এই বাড়ির ছেলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু ফারহান আসার পর এক তুড়িতে রোদ্দুরকে বলেছে, ‘ভাই! তুমি আর আমি কিন্তু একই পথের পথিক। দেখো, সবকিছুতেই একলা থাকা আনকমফোর্টেবল। তুমি আমি দুই জামাই যদি এইবার একসাথে মাঠে নামি, তবে মনে হবে এটা আমাদের শ্বশুর বাড়ি।’
ফারহান ভাইকে রোদ্দুরের ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ পছন্দ হয়েছে। দারুন একজন মানুষ, অমায়িক এবং আন্তরিক।
.
পিকনিকের পরিকল্পনা থেকে প্রথমেই বাড়ির বড়দের বাদ দেওয়া হলো। তারা থাকলে সবকিছুতে বাঁধা দিবে। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না— নানান কাহিনী। সুখানপুরের শেষ মাথায় ছোটোখাটো একটা জঙ্গলের মত জায়গা আছে, ঝিলমিল সেখানে বনভোজনের আয়োজন করার প্রস্তাব রাখল। জঙ্গলের মধ্যে বিষয়টা কতটুকু নিরাপদ হবে, সেটা নিয়ে দ্বিধায় পড়ল বাকিরা। অবশেষে সবাই মিলে চলল, জায়গাটা দেখতে।
নাহ, সবকিছু ঠিকঠাক। জঙ্গলটা অনেক বেশি গভীর না, শুধুমাত্র হালকা লতাপাতায় ভরপুর। সিদ্ধান্ত নিল, ওগুলো ওরা নিজেরাই ঠিকঠাক করে নিবে। কাজ ভাগাভাগি করার সময় ঝিলমিল দেখল, রোদ্দুরের ভাগে অনেক কম আর সহজ কাজ পড়েছে। সে সেটা নিয়েই ঝগড়া শুরু করে দিল। রোদ্দুর বিদ্রুপের স্বরে বলল, ‘তোর জীবনে গ্যাঞ্জাম পাকানো ছাড়া আর কোনো কাজ নেই? আপাতত যেটা করছিস সেটাই কর।’
‘না, আমি বনজঙ্গল ঘুরে শুকনো পাতা যোগাড় করতে পারব না।’
‘তবে কি গাছ কাটতে পারবি?’
ঝিলমিল ইশারায় সামনে থাকা বনজঙ্গল দেখিয়ে বলল, ‘এগুলো গাছ না, লতাপাতা। হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাবে। তুই এখান থেকে উঠে পড়, এসব আমি করব।’
কোনো বাক্যব্যয় ছাড়া রোদ্দুর উঠে দাঁড়াল। ঠিক আছে, যা ইচ্ছে হয় করুক। এখানে একটু আগেও জোঁক দেখেছিল সে, এইবার ঝিলমিল জোঁকের পাল্লায় পড়লে মজা টের পাবে। রোদ্দুর হাসতে হাসতে চলে গেল।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে এই কাজটাকে পানির মত সহজ মনে হলেও এটা সহজ নয় একেবারেই। গায়ের সব শক্তি দিয়ে ঘাসগুলো টেনে তুলতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ বিশ্রামের উদ্দেশ্য গাছতলায় এসে বসল। কেউ এখানে উপস্থিত নেই অর্থাৎ সবাই নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। সে একাই ফাঁকিবাজি করছে।
রোদ্দুরের খারাপ লাগছে না। সে শহুরে জীবনেই অভ্যস্ত। তবে এই দিকটা দেখলে মনে হয় সাজানো গ্রাম অঞ্চল। প্রতিদিনের একঘেয়েমি রুটিন, ব্যস্ত নগর, বিরক্তিকর যানজট, অফিসে সারাক্ষণ একই নিয়ম— সবকিছু থেকে বেরিয়ে বেশ শান্তি শান্তি লাগছিল। রোদ্দুর এইদিকে এসে দেখল, ঝিলমিল গালে হাত দিয়ে বসে আছে। সে জিজ্ঞেস করল, ‘কিরে শেষ?’
ঝিলমিল জবাব দিল, ‘শেষ না করতে পারলেও তোর জন্য রেখে দিই নাই।’
আচ্ছা? উনি ভাঙ্গবে তবুও মচকাবে না। রোদ্দুর যা ভেবেছিল, ঠিক তাই হলো। একটা জোঁক ঝিলমিলের গলায় আটকে রয়েছে। নিশ্চয়ই ও টের পায় নাই, টের পেলে এতক্ষণে কুরুক্ষেত্র ঘটিয়ে ফেলত। রোদ্দুর ঝিলমিলকে কিছু বলল না। ওর কাছাকাছি এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে দাঁড় করাল। তারপর বলল, ‘চোখ বন্ধ কর।’
ঝিলমিল হতভম্ব দৃষ্টিতে তাকাল। এই ছেলে এমন করছে কেন? সে জিগাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই রোদ্দুর বলল, ‘ওয়েট….. একদম কথা বলবি না।’
তারপর নিজেই একহাত ঝিলমিলের দু’চোখে রেখে আরেক হাত গলায় স্পর্শ করল। ঠান্ডা হাতের স্পর্শ কিংবা যাইহোক ঝিলমিল মৃদু কেঁপে উঠল। বহুকষ্টে কিছু একটা বলতে নিলেই রোদ্দুর ঠোঁটে আঙুল চেপে বলল, ‘চুউউপ, জাস্ট ওয়ান মিনিট।’
তারপর সে ঝিলমিলের গলায় সামান্য চিমটি দিয়ে জোঁকটা তুলে এনে অনেক দূরে ছুঁড়ে মারল। এরপর চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিল। ঝিলমিল জিজ্ঞেস করল, ‘কি হলো বুঝলাম না?’
রোদ্দুর সরে গিয়ে বলল, ‘চেক করলাম তোর গলার ভলিউম ঠিক আছে কিনা।’
‘মানে?’ ঝিলমিল বিস্মিত।
‘সারাক্ষণ যে ধেড়ে গলায় চেঁচামেচি করিস তাতে কোনো সমস্যা হয়েছে কিংবা ভবিষ্যতে হতে পারে কিনা, চেক করলাম। পাশাপাশি এটাও দেখলাম যে, গলার আওয়াজ কমানো বা বাড়ানোর কোনো অপশন রয়েছে কিনা!’ রোদ্দুর দায়সারা ভাবে বলল।
ঝিলমিল কোমড়ে দু’হাত গুঁজে কটমট দৃষ্টিতে তাকাল। ওরা আসছে দেখে চুপ করে গেল। ওরা বাড়ি ফেরার পর খাওয়া শেষে কেউ কেউ বাহিরে বেরিয়ে গেল, কেউ কেউ ছাদে গেল। রিমঝিম, ঝিলমিল, রোদশী, তানিশা ওরা ছাদে ছিল। একটু আগে পর্যন্ত বড় চাচিও ছিল, ঠান্ডা লাগছে বলে সে চলে গেছে। তানিশা বলছিল, ‘তোমাদের সাথে আমাদের মানাচ্ছে না।’
রোদশী হেসে কিছু একটা বলতে নিলেই হঠাৎ ঝিলমিলের গলার দিকে নজর গেল। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ভালো করে খেয়াল করল। একটা দাগ, লাল হয়ে গেছে। এতক্ষণ হাসি চেপে রাখলেও এইবার খিলখিল করে হেসে উঠল। বলল, ‘বাহ ঝিলমিল!’
‘কী?’
‘তেমন কিছুনা। গলায় লাল দাগটা দেখে বললাম।’
ঝিলমিল গলায় হাত দিয়ে বলল, ‘কই? কীসের দাগ? আর দাগ দেখে হাসার কি হলো?’
‘ওটা লাভবাইট!’ রোদশী মুখে হাত দিয়ে হাসল।
ঝিলমিল আকাশ থেকে পড়ল। রিমঝিম আর তানিশাও এগিয়ে এলো। ঝিলমিল ফোনের স্ক্রিনে দেখল আসলেই লাল টুকটুকে একটা দাগ হয়ে রয়েছে। ও চেঁচিয়ে উঠল, ‘এটা কীসের দাগ?’
রিমঝিম বলল, ‘তোমরা ঠিকই তো চুপি চুপি প্রেম করো কিন্তু কাউকে বলো না। সেদিন আমি ভুলবশত দেখে ফেলেছি, ভাইয়া তোমাকে কোলে নিয়েছে। ইশশশ, কী লজ্জা!’
‘আরে সেটা তো আমি পড়ে যাচ্ছিলাম তাই ও আমাকে ধরেছে। কিন্তু এই দাগটা…? ও হ্যাঁ মনে পড়ছে, কিছুক্ষণ আগে রোদ্দুর আমাকে চিমটি কেটেছে। তারপর কি বলেছ জানো? বলেছে, ও নাকি আমার গলার আওয়াজ চেক করছে যে বাড়ানো অথবা কমানোর অপশন আছে কিনা! আমি নাকি সবসময় অনেক বেশি চেঁচামেচি করি। তোমরা যেটা ভাবছ সেটা তো একদম’ই না। ছিঃ ছিঃ, আজ ওর একদিন কি তো আমার একদিন!’ ঝিলমিল কাঁদো কাঁদো গলায় বলল।
‘আহারে, শেষমেষ এই অবস্থা!’ ওরা নিজেদের মত হিহি/হাহা করে হাসতে লাগল। ঝিলমিল বুঝল, ওরা মোটেও তার কথা বিশ্বাস করে নাই। সে হনহন করে নিচে নেমে এলো। রোদ্দুরকে এখুনি খুঁজে বের করতে হবে।
.
রোদ্দুর এখানে থাকে না অনেকদিন হচ্ছে, তবুও পরিচিতি রয়েছে। যাইহোক, ছোটোবেলা পুরোটাই এখানে কেটেছে। আজ ফারহানের সাথে মন্টু মামার চায়ের দোকানে আসতেই ওসমান খন্দকারের বড় ছেলের সাথে দেখা হলো। ওরা দোকানে দোকানে ঝামেলা করে বেড়ায়, চাঁদা তোলে। রোদ্দুরকে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে এসে কথাবার্তা বলল। ফারহানের সাথে আলাপ হলো। ওরা উঠে চলে আসার সময় হঠাৎ মনোয়ার সরকারের খোঁজ পড়ল চায়ের দোকানে। মন্টু মামা রোদ্দুরকে ডেকে বললেন, ‘ও মামা দ্যাখেন তো, এই লোকটা প্রায় সময় আপনার ছোটো চাচার খোঁজ করে। আপনি দ্যাখেন তো ওদের।’
রোদ্দুর এগিয়ে এলো। লোকটাকে সে চেনে না। তাই সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘হ্যাঁ বলুন। যার খোঁজ করছেন উনি আমার ছোটো চাচ্চু।’
আগুন্তক বললেন, ‘আমার তো উনার সাথেই কথা ছিল।’
‘আচ্ছা তবে বাড়িতে চলুন আমার সাথে, চাচ্চু এই সময় বাড়িতেই থাকে।’
‘না না, আমি যাব না। আসলে আমি উনার খোঁজ করছিলাম না, অন্য একজন করছিল। আমার মাধ্যমে খবর পাঠিয়েছে।’
মন্টু মামা রোদ্দুরকে আলাদাভাবে ডেকে নিয়ে বলল, ‘এই লোক প্রায় আপনার চাচার খোঁজ করে কিন্তু বাড়িতে যাইতে বললে যায় না। নিশ্চয়ই কোন ঘাপলা আছে। আমার কেমন সন্দেহ সন্দেহ মনে হয় তারে।’
রোদ্দুর প্রথমেই উনার ফোন নাম্বারটা নিয়ে রাখল। তারপর খতিয়ে জিজ্ঞেস করল, কাহিনী কি? অন্যকেউ কেন ছোট চাচ্চুর খোঁজ করছে?
উনি যা বললেন রোদ্দুর তাতে বেশ অবাক হলো। তারপর বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে। আমি ব্যাপারটা দেখব, আপনি এত ঘনঘন এইভাবে খোঁজ করলে আপনাকে সন্দেহভাজন মনে করে গণপিটুনি দিবে মানুষ।’
ওই লোক রোদ্দুরের কথায় সায় জানাল এবং ঠিকানা দিয়ে গেল, বলে গেল মনোয়ার সরকার যেনো খুব দ্রুত এখানে যোগাযোগ করে।
রোদ্দুর বাড়ি আসার পর ঝিলমিলের সাথে একচোট ঝগড়া হয়ে গেল। বাড়ির মানুষ দেখে আর হাসে। বলে, ‘এরা এতই পারে রে?’
অবশেষে রোদ্দুর বলেই দিল, ‘তোর গলায় ইয়া বড়, পেট মোটকু একটা কালো কুচকুচে জোঁক জেঁকে বসেছিল। আমি সেটাই সরিয়ে দিয়েছিলাম। তার বদলে কপালে যে এত এত মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা হবে, তা জানতাম না।’
জোঁকের কথা আর বর্ণনা শুনে ঝিলমিল ওয়াক ওয়াক করল, ঘেন্নায় গা গুলিয়ে উঠল। ছিঃ, শেষ পর্যন্ত জোঁক লাভবাইট দিল! এর থেকে তো রোদ্দুর’ই ভালো ছিল।
রোদ্দুরের কথা ওইভাবে চিন্তা করতেই মাথা ঘুরে উঠল। নিজের কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল, ‘আল্লাহ! এসব কি হচ্ছে আমার সাথে? আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাব। আমার এসব উল্টাপাল্টা ভাবনার মূলে আছে রোদ্দুর। উফফফ, ওরে যে কী করব!’
মা’কে বলে ঝিলমিল শিউলিদের বাড়ির দিকে রওনা হলো। এখানে অশান্তি লাগছে। যেদিকে তাকাচ্ছে সেদিকেই জোঁক দেখতে পাচ্ছে আর নয়তো রোদ্দুরকে।
শিউলির বাড়িতে একলাই রওনা দিতে চেয়েছিল, কিন্তু রোদ্দুর পিছে পিছে চলে এলো। ঝিলমিল শর্টকাট ধরার জন্য ধানি জমির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। রোদ্দুর বলল, ‘এই ঠান্ডা, এই কুয়াশার মধ্যে এইখান দিয়ে আসার কোনো মানে হয়?’
‘আমি এসেছি তাতে তোর কি? তুই কেনো এসেছিস? আমি বলেছিলাম তোকে আসতে? মে’রে একদম মাথা ফা’টি’য়ে দিব।’
‘বাবারে কী ঝগড়ুটে। মানুষের কথায় এত তেজ থাকে?’
‘মানুষের না থাকুক আমার থাকে।’ ঝিলমিল হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে বলল।
‘হ্যাঁ থাকবেই তো, তুই কি মানুষ? তুই আস্ত একটা গাধা।’
‘আর তুই বাঁদর।’
ঝিলমিল মুখ ভেংচাল। রোদ্দুরের একটু ফাজলামি করার সাধ জাগল মনে। ওইতো সামনেই শিউলিদের বাড়ি দেখা যাচ্ছে। ঝিলমিল রোদ্দুরকে চলে যেতে বলল। কিন্তু রোদ্দুর গেল না উল্টো চেঁচিয়ে উঠল, ‘অ্যাই অ্যাই জোঁক জোঁক!’
ঝিলমিল থমকে গেল। রোদ্দুরের কথা শোনা মাত্র ঝিলমিল লাফিয়ে উঠে বলল, ‘কই কই?’
রোদ্দুর হাতের ইশারায় সামনের দিকে দেখাল। ঝিলমিল এক দৌড়ে পিছু হটে রোদ্দুরকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘ওইটাকে আমার সামনে থেকে সরিয়ে ফেল।’
.
.
.
চলবে…..
#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-২৬]
~আফিয়া আফরিন
রোদ্দুর ঝিলমিলকে বেশ কয়েকবার বলল, ‘আমি ফাজলামি করছি। ওখানে কিচ্ছু নেই।’ যতই ঝিলমিলকে বোঝানোর চেষ্টা করে, ততই ঝিলমিল ওর শার্ট খামচে ধরে। শিউলির বাড়িতে আর যাওয়াই হলো না। বাড়ি ফেরার সময় ঝিলমিল এমনভাবে রোদ্দুরকে চেপে ধরল যেনো কি না কি হয়ে যাচ্ছে।আজ আর রাতে ঘুমানোর সময় ঝিলমিল একা শোয়ার সাহস পেল না, সুরসুর করে রোদ্দুরের ঘরে চলে এলো। এসে আগেই কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে। রোদ্দুর তখনও ঘরে আসে নাই, কিন্তু রোদ্দুরের ফোনটা বাজখাঁই শব্দে বাজতে শুরু করল। কম্বল সরিয়ে গিয়ে যে ফোনটা নিবে, এই সাহসটুকু তার নেই। জোঁকের ভয় বেশ ভালোভাবেই কাবু করেছে। দ্বিতীয়বার যখন ফোনটা বাজতে শুরু করল তখন রোদ্দুর ঘরে এলো। ফোন হাতে নিয়ে সাইলেন্ট করে রেখে দিল। ঝিলমিল সেটা খেয়াল করে বলল, ‘এটা ওই মেয়েটা তাইনা?’
‘কোনটা কোন মেয়ে?’
‘এত রাতে ও বাদে তোকে কেউ ফোন করবে না। তুই ফোন রিসিভ কর, তারপর ও কি বলে সেটা শোন। বারবার ফোন করলে কেটে দিস কেনো? হতে পারে জরুরী কিছু বলবে।’
‘ওসব বাদ দে।’
ঝিলমিল জেদ ধরা গলায় বলল, ‘না। তুই ফোনটা আমাকে দে, আমি কথা বলে দেখি তোর যদি কোনো আপত্তি না থাকে।’
‘তুই কি বলবি?’
‘ও যা জিজ্ঞেস করবে জাস্ট তার উত্তরগুলো দিব, এরচেয়ে বেশি কিছু বলব’ও না আর কিছু করব’ও না।’
রোদ্দুর একমুহূর্ত কিছু ভেবে ঝিলমিলের কাছে ফোনটা এগিয়ে দিল। তারপর ওর পাশে সবল গালে হাত দিয়ে। দুই শ্রোতার মাঝে সে এখন দর্শক। ঝিলমিল কল ব্যাক করতেই সাথে সাথে ও’পাশ থেকে রিসিভ হলো। মেয়েটা হন্তদন্ত হয়ে বলল, ‘ফাইনালি তুমি কল ব্যাক করলে? এইভাবে কাম ব্যাক করবে কবে বলো তো রোদ্দুর?’
ঝিলমিল রোদ্দুরের দিকে তাকাতেই রোদ্দুর তাকে কথা চালিয়ে যাওয়ার ইশারা দিল।
ঝিলমিল বলল, ‘কাকে চাই আপনার?’
ও’পাশে অনেকক্ষণের নীরবতা। তারপর হঠাৎ বলে উঠল, ‘আপনি কে?’ ঝিলমিল ফোন মিউট করে রোদ্দুরকে জিজ্ঞেস করল, ‘কী বলব?’ রোদ্দুর নির্বিকার ভাবে বলল, ‘যা ইচ্ছে।’
ঝিলমিল তাই ফোন আনমিউট করে উত্তর দিল, ‘আমি মানুষ। আপনি কাকে চাচ্ছেন?’
‘রোদ্দুর কোথায়?’
ঝিলমিল কিছুটা অবাক ভঙ্গিতে বলল, ‘রোদ্দুর কে? এটা তো আমার ফোন নম্বর। এই রাতের বেলা কি খেয়ে ফোন করেছেন আশ্চর্য!’
‘না, এটা রোদ্দুরের নম্বর। আপনি ভুলভাল বকছেন। সত্যি করে বলেন তো, আপনি কি সেই মেয়েটা যার সাথে আমার দেখা হয়েছিল? আপনি এত রাতে রোদ্দুরের ওখানে কি করছেন? আশ্চর্য তো আমার হওয়ার কথা।’
ঝিলমিল বলল, ‘আপনার সাথে আমার ফাস্ট কথা হচ্ছে। আচ্ছা যাইহোক, আপনি রং নম্বরে ফোন করেছেন। এখানে কোনো রোদ্দুরকে পাওয়া যাবে না। তবে আমার হাজব্যান্ডকে পাওয়া যাবে, ওর সাথে কথা বলবেন? দিব ওর কাছে?’
রোদ্দুর ইশারায় ‘না’ বলল। ঝিলমিল চোখ টিপি দিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘চুপ থাক।’
ও’পাশ থেকে সানিয়া বলল, ‘না না, আপনার হাজব্যান্ডের সাথে আমি কেনো কথা বলব?’
‘ওকে তাহলে ফোন রাখছি আপু। হয়তোবা আপনার শরীর খারাপ অথবা আপনি লাল পানি খেয়ে এসে উল্টাপাল্টা কথা বলছেন। এক কাজ করুন, রান্নাঘরে গিয়ে একগ্লাস লেবুর শরবত খান ভালো লাগবে।’ ঝিলমিল ওকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিল।
তারপর রোদ্দুরকে জিজ্ঞেস করল, ‘তুই বিয়ে করেছিস এটা ওকে বলিস নাই কেনো?’
‘ঢোল পিটিয়ে পিটিয়ে সবাইকে বলতে হবে নাকি?’
‘অবশ্যই। এ আমাকে বারবার জিজ্ঞেস করে, রোদ্দুরের সাথে তোমার কী? ওর সাথে কেনো সবসময় তোমায় দেখি? যত্তসব ন্যাকা।’
‘তো তুই বলে দিতি!’
ঝিলমিল চোখ ছোটো করে বলল, ‘কী?’
‘যে তুই আমার বউ!’ রোদ্দুরের কাছে নিজের বলা কথাটাই কেমন যেনো অদ্ভুত শোনাল। বউ? শব্দটা সহজ মনে হলেও ওজন ভারী বটে। তাই তো সেই অনুভূতির ছোঁয়া পুনরায় ফিরে এলো। এটা এমন এক অদ্ভুত অনুভূতি, যেখানে নিজেকে খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু কাউকে ভালোবাসা ছাড়া তার প্রতি অনুভূতিতে নিজেকে কীভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে? সানিয়াকে তো সে ভালোবেসেছিল, কিন্তু কখনো সেই ভালোবাসায় এই অনুভূতি সৃষ্টি হয় নাই; অথচ সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। সানিয়া তো কথায় কথায় তার ভালোবাসা প্রকাশ করত! ঝিলমিলের সাথে সারাক্ষণ যেমন ঝগড়া হয়, কথা কাটাকাটি হয় ওর সাথে এসব কিছুই ছিল না। বেশ বোঝাপড়ার সম্পর্ক ছিল। ওর সাথে রাত জেগে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ভাইবারে কমিউনিকেট ছিল তবুও কখনও এমন মনে হয় নাই। যদিও সানিয়ার সেই ঘটনার পর বুকের মধ্যে তীব্র ব্যথার চাপ অনুভব করেছে। সময়ের সাথে সাথে অবশ্য সেই ব্যথার উপর একটা প্রলেপ চলে এসেছে। আচ্ছা, সেই প্রলেপটা কে এনেছে? ঝিলমিল! হতেই পারে। ভেবেছিল, আর কখনৈ বিয়েই করবে না। অথচ বিয়ের করেছে এবং সেই মেয়েটাকে পাশে নিয়ে ঘুমিয়েও থাকে দিনের পর দিন। নিজের মত করে চেষ্টাও করছে সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু একেক সময় মনে হয়, ‘কী দরকার এত মানিয়ে নেওয়ার? ওরা তো আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে দিয়েছে। ওদের জন্য আমি আমার জীবনটা আরেকজনের পেছনে কেনো ব্যয় করব?’
কিন্তু রোদ্দুর বারবার বিবেকের কাছে হেরে যায়। মেনে নিলে যদি শান্তি ফিরে আসে, তবে মেনে নেওয়াই শ্রেয়।
আড়চোখে তাকাল ঝিলমিলের দিকে। ইতোমধ্যে কম্বল মুড়ি দিয়ে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়েছে। মনে মনে বলল, ‘প্রচন্ড প্যারা দিস তুই।’
.
সবাই মিলে সময় কাটালে দিনগুলো খুব দ্রুতই পার হয়ে যায়। ফারহানের ছুটিও ফুরিয়ে আসছে, এইবার বিদায় নিতে হবে। রোদ্দুরের’ও একই অবস্থা। এতদিন বাড়িটা পরিপূর্ণ ছিল, একসাথে সবাই চলে যাবে তাই সকলের মন খারাপ। দাদি বললেন, ‘তোমরা সকলে সুখে আছো, আনন্দে আছো এতেই আমি খুশি। শেষ বয়সে এসে তোমাদের এই সুখ দেখতে বড় ভালো লাগছে।’
যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলো। দুই মেয়ে চলে যাচ্ছে, তাই শিমুর মন খারাপ। কান্নাকাটিও করলেন একধাপ। রোদশী আর ফারহান সকাল সকাল রওনা হলো, ঝিলমিল আর রোদ্দুর দুপুরের পর বের হলো। ছোট চাচ্চু ওদের বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতেই রোদ্দুরের হঠাৎ মনে পড়ল, ওই লোকটার কথা যে ছোট চাচ্চুকে খোঁজ করেছিল। উনি আসলেই সত্যি বলেছেন কিনা রোদ্দুরের সন্দেহ হচ্ছে। উনি যে ঠিকানা দিয়েছেন সেটাও রোদ্দুরের চেনা। ঠিক করল, ছোট চাচ্চুকে অযথা এসব ঝামেলায় জড়াবে না তারচেয়ে একদিন নিজে গিয়েই দেখে আসবে ওই লোকটা কতটা সত্যি বলেছে। একজন অসুস্থ, রুগ্ন মানুষ কেনো ছোট চাচ্চুর জন্য ওয়েট করবে? তার সাথে একবার…. শুধুমাত্র একবার কথা বলার জন্য বেঁচে থাকবে? আশ্চর্য!
.
বাসে উঠে রোদ্দুর ঝিলমিলের হাতের দিকে খেয়াল করল, আঙ্গুলে কাটা দাগ। জিজ্ঞেস করল, ‘হাত কেটেছে কীভাবে?’
‘কাল তোদের ফুট ফরমায়েশ খাটতে খাটতে এমন অবস্থা হয়েছে। পিকনিক তো তুই আর ভাইয়াই করলি, আমরা তো গেছিলাম খাটতে। যতগুলো কাজ কাল করতে হয়েছে তত কাজ তো আমি আমার সারাজীবনেও কখনো করি নাই। আর কোনোদিন মুখ দিয়ে পিকনিকের কথা উচ্চারণ করিস, তারপর দেখিস!’
রোদ্দুর হাসতে হাসতে বলল, ‘যাক এই উসিলায় তোকে দিয়ে কাজ তো করানো গেল। বেশি বেশি কাজ করবি, শরীর ঝালাপালা থাকবে।’
‘এমনিতেই আমি ঠিক আছি।’
রোদ্দুর বিড়বিড় করে বলল, ‘হুমম, ঠিক তো থাকবিই। যেই হারে সারাক্ষণ টেপ রেকর্ডারের মত করে মুখ চলে তাতে খারাপ থাকার তো কোনো সম্ভাবনাই নেই।’
ঝিলমিল রোদ্দুরের কথা শুনতে পেল না, চুপচাপ হেলান দিয়ে বসে রইল। ওরা বাড়ি পোঁছাল সন্ধ্যায়। শীত হোক অথবা গরম, সন্ধ্যার ঢাকা শহর বরাবরই জমজমাট। ঝিলমিল জানালা খুলে সেসব’ই দেখছিল। রোদ্দুর বারবার বলছিল, ‘জানালা অফ কর, বাতাস আসতেছে। ঠান্ডায় কুপোকাত হয়ে গেলাম বাবারে।’
‘আমি জানালা খুলেই রাখব, তোকে বাতাস খাওয়াব। এইদিকে আয়, একটা জিনিস দেখে যা।’
রোদ্দুর এগিয়ে এসে বলল, ‘কী?’
ঝিলমিল নিচের দিকে ইঙ্গিত করল। এত উপর থেকে কিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। রোদ্দুর জিগাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই ঝিলমিল বলল, ‘পাশের বাসার ভাবি আর উনার হাজব্যান্ড। চল আমরাও যাই, ঘুরে আসি। বাসায় বসে থাকতে আমার ভালো লাগতেছে না।’
রোদ্দুর হাত এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘চল।’
দু’জনে বেরিয়ে গেল। রোদ্দুরের’ও বাহিরে যেতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু ঝিলমিলকে একা বাসায় রেখে যেতে মন সায় দিচ্ছিল না। ওকে নিয়ে প্রথমেই চৌরাস্তার মোড়ে এলো। বেশ কিছুদিন হয়ে গেছে, বন্ধুদের সাথে দেখা হচ্ছে না। এদিকে আসতেই সকলের দেখা পেয়ে গেল। এমনিতে ওরা যেমন’ই হোক, ঝিলমিলকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিল। বেশ আন্তরিক ভঙ্গিতে বারবার জিজ্ঞেস করল, ‘ভাবি চা খাবেন? এক কাপ চা খান। এখানকার চা বেশ ভালো, নামডাক রয়েছে।’
ঝিলমিল হাসিমুখে মানা করে দিল। সাধলেই যে সাথে সাথে খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এতটা হ্যাংলা সে কখনোই ছিল না, হতেও পারবে না। তবে রোদ্দুর যখন চায়ের কথা বলল, ‘তখন আর মানা করল না।’
রোদ্দুর ওদের সাথে কিছুক্ষণ যাবত আড্ডা দিচ্ছিল, ঝিলমিল নিরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও ওর খারাপ লাগছিল না। ওদের মধ্যে শ্যামলা করে ছেলেটার বিয়ে সম্ভবত, নামটা তার জানা নেই। বিয়েশাদী নিয়ে কথা হচ্ছিল। ওই ছেলেটা ঝিলমিলের উদ্দেশ্য বলল, ‘ভাবি নিজেই নিজের বিয়ের দাওয়াত দিচ্ছি, কিছু মনে করবেন না। আপনার হাজব্যান্ডকে বলে লাভ নাই, ওই সবকিছু মিস করে। ওর কোনোকিছু মনে থাকে না। সামনের মাসের প্রথম শুক্রবার, আপনাদের উপস্থিতি একান্ত কাম্য।’
ঝিলমিল মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। এদেরকে তার দারুন লেগেছে— কী সুন্দর করে কথা বলে, কী সুন্দর ব্যবহার, কথাবার্তায় আন্তরিকতা স্পষ্ট, কী কিউট করে ভাবি ডাকে আর সালাম দেয়। এদের মধ্যে একমাত্র রোদ্দুর’ই বোধহয় এত কাঠখোট্টা স্বভাবের। ঝিলমিল চোখ ছোটো ছোটো করে ওর দিকে তাকাল। আহা, কী হাসি! এত হাসি তো তার সাথে কথা বলার বেলায় আসে না। হুহু বন্ধুদের সাথে কথা বলতে গেলে, এক্স গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনলে তখন ঠোঁটের কোণে মুচকি মুচকি হাসি ফুটে উঠে। ঝিলমিল ভেংচি কাটল, তার দরকার নেই মানুষের হাসি। সে আয়নায় নিজের হাসি বহুবার দেখেছে, সকলের থেকে হাজার গুণে ভালো আছে!
রোদ্দুরের সাথে বাড়ি ফিরছিল। রোদ্দুর ওকে জিজ্ঞেস করল, ‘তখন কি বিড়বিড় করছিলি বল তো? আমি কিন্তু বুঝতেই পেরেছি আমার নামে নিন্দে করছিলি।’
ঝিলমিল জিভ কাটল। ইশশশ, বুঝে গেল কীভাবে? তবে স্বীকার করল না উল্টো বলল, ‘আমার এত সময় কোথায় মানুষের নামে নিন্দে করার? আমার আবার সামনে পরীক্ষা, সেই কথাই ভাবছিলাম।’
‘উহুঁ…. উঁহু…. একদম না।’
‘কীভাবে এত সিওর হচ্ছিস? মন পড়তে পারিস নাকি?’
রোদ্দুর ঠোঁট ঠোঁট চেপে বলল, ‘উমমমমম….. পারিই তো।’
‘আচ্ছা বল, আমি এখন কি ভাবছি?’
‘এই মুহূর্তে তুই ভাবছিস, ইশশশ এভাবে ধরা পড়ে যাব ভাবতেই পারি নাই।’ বলেই হেসে উঠল।
ঝিলমিল কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না কারণ রোদ্দুরের কথাটা সত্যি ছিল। এই ছেলে যদি এখন থেকে মন পড়া শুরু করে দেয়, তাহলে তো খুব সাবধানে চলাফেরা করতে হবে। ওর সমন্ধে উল্টাপাল্টা কিছু ভাবলেই তো জেনে যাবে। তার উপর বাড়ির মানুষ অর্থাৎ ছোটোবড় বোনেরা যা বলেছে সেসব জানতে পারলে তো মানসম্মান টিকে থাকবে না। ঝিলমিল চোখ বন্ধ করল। না, আর কিচ্ছু ভাবা যাবে না। এক ভাবনার সূত্র ওকে সারা পৃথিবী ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। বাড়ি ফিরে এসে ঝিলমিল সেই যে একটা বই নিয়ে বসেছে, সেখান থেকে আর নড়াচড়ার নাম নেই। বইয়ে শুধুমাত্র চোখ দিয়ে রেখেছে, পড়ছে না মোটেও। মস্তিষ্ক যত শূণ্য রাখতে চাইছে ততই আবোলতাবোল চিন্তাভাবনা উঁকি মারছে। ওর মাঝে অস্থিরতা লক্ষ্য করে রোদ্দুর বলল, ‘কি হয়েছে তোর? মনের মধ্যে আবার কি চলছে?’
ঝিলমিল দ্রুত বলল, ‘কিছুনা, সর।’ বলেই সে জোরে জোরে পড়া আরম্ভ করল। রোদ্দুর ছাড় দিল না। এগিয়ে এসে বলল, ‘আমি কিন্তু জানি তোর মনের মধ্যে এই মুহূর্তে কি চলছে?’
ঝিলমিল ঘাবড়ে গিয়ে বলল, ‘কী চলছে?’
‘কিছুমিছু!’
‘সেটা কি?’
রোদ্দুর ভুরু কুঁচকে বলল, ‘বলব? এই মুহূর্তে তোর মনে চলছে…….’
ঝিলমিল তৎক্ষণাৎ রোদ্দুরের মুখে হাত চাপা দিল। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখল, রোদ্দুর ওর দিকেই তাকিয়ে আছে তাও পলকহীন। ঝিলমিল অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলল, ‘না না, কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি।’
.
.
.
চলবে…….
কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৬৭০