ঝিলমিল রোদ্দুরে পর্ব-৪৮

0
308

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-৪৮]
~আফিয়া আফরিন

পরদিন সকাল থেকে শুরু হলো মেহেদী অনুষ্ঠান এবং তার পরপরই গায়ে হলুদ। ওরা প্রথমে রোদ্দুরকে আলাদাভাবে গায়ে হলুদ দিয়ে, নিচে পাঠিয়ে দিল। তারপর নিয়ে এলো ঝিলমিলকে। ওকে আচ্ছামত হলুদ মাখিয়ে বিকাল পর্যন্ত একেকজন ছাদের উপর লাফালাফি করল। সাবরিনা এসে বকাবকি করে সবগুলোকে নিচে পাঠিয়েছেন।
দু’দিন আগে ঢাকা থেকে রাজ, রায়হান, আবীর, হাসান, আদিয়াত, সৌভিক সবাই চলে এসেছে। রোদ্দুর ওদের সাথেই নিজের ঘরে ছিল। সৌভিক তার স্বভাব অনুযায়ী সুযোগ পেলেই বলছে, ‘আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য, বন্ধুদের বিয়েতে এসে বন্ধুর শালী পটিয়ে নিজের রাস্তাটা ক্লিয়ার করে নেওয়া। কিন্তু ভাই রোদ্দুর, নিজেদের মধ্যে বিয়ে করে আমাকে বঞ্চিত করলি।’

রোদ্দুর বলল, ‘কেনো? শুধু শালী কেনো পটাতে হবে? আশেপাশে অনেক আন্টি, সিনিয়র আপুরা আছে, ওদের সাথে চান্স নিতে পারিস। আফসোস হচ্ছে, তিন্নি আপুর বিয়ে হয়ে গেছে। না হয় একবার তোর কথা বলে দেখতাম, ছোটোবড় ম্যাটার করে না। আপুর তালে পড়লে তুই একদিনেই সিধে হয়ে যাইতি।’

‘কেনো? খুউব ডেঞ্জারাস নাকি?’

‘ব্যাপক।’

সৌভিক বলল, ‘তোর দুলাভাই আছে নাকি? না থাকলে চান্স নিতে পারতাম।’

‘দুলাভাই থাকুক ছাই না থাকুক, তোকে চান্স দিলে তো তারপর! ধর তুই খুব ভদ্র সেজে সামনে গিয়ে দাঁড়ালি, আপু তখন কড়া একটা ধমক দিয়ে বলবে— এই ছোকরা কে তুমি? সারা বাড়ি ঘুরঘুর করছ কোন সাহসে? কোথা থেকে এসেছ? দেখি তোমার আইডি কার্ড দেখাও তো‌। দেখে তো ভদ্র মনে হচ্ছে। ভদ্র হলেই বা কী? অতি ভক্তি চোরের লক্ষন। তারপর তুই যদি তার সামনে অভদ্র সেজে যাস তবুও ধমক দিয়ে বলবে— এ কে রে? এরা আসে কোথা থেকে, কী মতলবে? পুরো গাঁজা খোরের মত দেখতে। ওওওও ছোটো চাচ্চু দেখো তো এই ছেলেটা কে? ভালো করে পরিচয় নিয়ে তারপর ঘরের মধ্যে ঢুকতে দাও।’ রোদ্দুর হুবুহু তিন্নিকে নকল করে দেখাল।
ওর কথা শুনে হাসান চেয়ার টেনে এগিয়ে এসে বসল। গালে হাত দিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলল, ‘তোর সব বোনেরা কি এইরকম নাকি?’

‘না না, বাকিরা এইরকম না।’
হাসান আর রোদ্দুর কথা বলছে। সত্যি বলতে, সৌভিক এখানে এসেছিল একটা আশায়। আশা তো কত বছর আগে থেকেই বুকে পুষে রেখেছে, কিন্তু কই; কাউকে পাচ্ছে না তো। মা-বাবা ছেলের উপর পাত্রী খোঁজার ভার দিয়ে দিয়েছে। সাফ বলে দিয়েছে, ‘হয় নিজে কাউকে জুটিয়ে আনো নয়তো থাকো বিয়ে ছাড়া। আমরা তোমার জন্য কাউকে খুঁজে আনতে পারব না। তোমা্য পছন্দের সাথে আমাদের পছন্দ মিলবে না বাপু।’
সৌভিক নিজেও চাচ্ছে, এই ছন্নছাড়া জীবন থেকে পরিত্রাণ পেতে। কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। রায়হান, আদিয়াত, রাজকে দেখলে প্রচুর আফসোস হয়। আর এখন তো রোদ্দুর! নাহ আর চেষ্টা করে লাভ নাই। এই পোড়া কপাল দেখেই সকলে দৌড়ে পালাচ্ছে। আগে ফেসিয়াল করে নিজের কপালের ফাটা দূর করতে হবে। তারপর যা করার করবে। একদম কোমড় বেঁধে নামবে। বন্ধুমহলের সবাইকে চমকে দিয়ে হুট করে বিয়ে করে হাজির হবে। আটকাবে কে তাকে?

রোদ্দুর ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতেই হঠাৎ ঝিলমিলের সেই মামাতো ভাইকে চোখে পড়ল, যে ঝিলমিলকে ঢং করে ঝালমুড়ি সম্বোধন করেছিল। ওর সাথে রোদ্দুরের চোখাচোখি হতেই রোদ্দুর মুখে প্লাষ্টিক হাসি ঝুলিয়ে এগিয়ে গেল। কিন্তু সে তৎক্ষণাৎ দৌড়ে পালাল। ভাবটা এমন যে, এইরকম ডেঞ্জারাস আধপাগল মানুষের বিয়ে খেতে এসেছি সেই তো অনেক; আবার যেচে পড়ে কথা বলব কেনো?
ওর দৌড়ানো দেখে রোদ্দুর হো হো করে হেসে উঠল। বাড়ির পরিবেশ বেশ জমে গিয়েছে। এই রাতের বেলায়ও একেকজন শাড়ি, গয়নাগাটি, চুড়ি পড়ে সেজেগুজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
রোদ্দুর পুরো বাড়ি চক্কর দিল। ছাদে এসে পা দু’টো আপনাআপনি থেমে গেল। চওড়া রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারল, কিছুক্ষণ আগ পর্যন্তও এখানে ঝিলমিলের অবস্থান ছিল। একবার দেখা পাওয়ার জন্য অবাধ্য মন উথাল পাথাল করে উঠল। থাক, আজ আর ওর সাথে দেখা হবে না। একই বাড়িতে থেকেও যে কড়া পাহারায় রাখা হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল। তবুও গত রাতে দেখা করতে এসেছিল, রিক্স নিয়ে। রোদ্দুরের জন্য এটাই অনেক। যদিও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিল, মশার কামড় খেতে হয়েছিল; কিন্তু তাতে কী? দেখা তো পেয়েছে, উপড়ি পাওনা হিসেবে আবার ঝিলমিল জড়িয়েও ধরেছিল। আর কী? শান্ত, নিবিড়, ভাষাহীন জীবন উদ্বিগ্ন উচাটন করতে আর তো কিছুর প্রয়োজন পড়ে না।

ওইদিকে ঝিলমিল অন্যমনস্ক চিত্তে বসে আছে। মনে হচ্ছে, নিজের মহামূল্যবান সম্পদ তার ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে। বুকের পাঁজরে কেমন অস্থির অস্থির ভাব! শূণ্যতা বোঝার চেষ্টা করতে গিয়ে রোদ্দুরকে খুঁজে পেল। ও ছাড়া….. ভাবনার দেওয়ালে ছেদ পড়ল তিন্নির কথায়। সে বলল, ‘আচ্ছা তোরা কি বিয়ের পরেও তুই তোকারি করবি নাকি?’

ঝিলমিল মুখ তুলে তাকিয়ে বলল, ‘হুম… এখনও তো বলি।’

‘কেনো রে? এখন বলছিস ঠিক আছে, বাট কাল থেকে আর বলতে পারবি না।’

‘কেনো পারব না?’

তিন্নি একপ্রকার বিতৃষ্ণা নিয়ে বলল, ‘দাদি বোধহয় তোদের কথাবার্তা এখনও ভালো করে লক্ষ্য করে নাই। বউ হয়ে স্বামীকে তুই করে সম্বোধন, শুনলে সে তৎক্ষণাৎ হার্ট অ্যাটাক করবে।’

ঝিলমিল মুখ কালো করে বলল, ‘আমি তুমি করে বলতে পারব না। নিজের কাছে শুনতেই তো কেমন লাগে। ওকে সারাজীবন তুই করে বলে এসে, জীবনের এই পর্যায়ে এসে তুমি করে বলব? অসম্ভব। ও এত ভালো কথা শোনার যোগ্যই না। অভদ্র একটা। আমি পারব না। সেক্ষেত্রে ও যদি আমাকে তুমি করে বলতে চায়, তাহলে বলবে।’
তিন্নি হো হো করে হেসে উঠল। ওর হাসির শব্দে বাকিরাও ঘুরে তাকাল। ঝিলমিল মুখ ঘুরিয়ে নিল। ওদের কথা শোনাই উচিত না। এখন তো শুনতেই ইচ্ছে করছে না। এমনিতেই রোদ্দুর আর তার পথে লকডাউন দিয়ে দিয়েছে। এখন আবার বড় বড় কথা!
সে রাতটা কেটে গেল কোনোরকম। উথালপাথাল মন আনচান করছিল বটে। কেমন অদ্ভুত তাইনা? আগেরবার এইরকম অনুভূতি হয় নাই। এইবার হচ্ছে। বিয়ে সম্পর্কে এইরকম কত কথাই তো বান্ধবীদের কাছে শুনেছে। কিন্তু নিজের বেলায় সেসব কিছুই হয় নাই বলে, কিছুটা মনখারাপ ছিল। তবে এইবার ভিন্নধর্মী অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়েছে। ভালো লাগছে, মনের অন্দর মহলে আনন্দ মিছিল হচ্ছে, কৌতূহলের ছাঁচে ভেতরকোণ অস্থির হয়ে উঠেছে, মন ও মস্তিষ্কের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে বারবার বেজে চলছিল রোদ্দুরের বলা কথাগুলো, —আমি তো অপেক্ষা করছি তবে জানিনা আদৌ এই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে কিনা!
স্বপ্ন বোনা ইচ্ছে গুলো একে একে, ধীরে ধীরে, সবটাই পূর্ণ হচ্ছিল। শুধু আরেকটু ক্ষণের অপেক্ষা। সেই অপেক্ষায় লাগাম টেনে ঝিলমিল চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমাল।
.
ছাদে জড়ো হওয়া প্রতিটি মানুষ উৎসবমুখর আনন্দে হইচই শুরু করেছে। তবে সবচেয়ে বেশি আনন্দ বাচ্চাদের মনে। বড়রা অনেকেই নিচে নেমে গেছে। গানের আওয়াজে কান পেতে রাখা যাচ্ছে না। আজকের দিনে কারো কোনো শাসন বারণ নেই। যে যা ইচ্ছে করুক— শাসন করার কেউ নেই। তবে বলে দেওয়া হয়েছে, ‘যা করবে ভদ্রভাবে করবে, শালীনতা বজায় রেখে করবে। বাইরের কোন মানুষ যেন অভিযোগ করার সুযোগ না পায়।’

ঝিলমিলকে সাজানো হচ্ছিল। ওকে ঘিরে বসে আছে ছোটোবড় বোনেরা। অস্থির ও অশান্ত মন তখন বেশ ভীতিগ্রস্থ। কেমন হাঁসফাঁস লাগছে! এত ভারী সাজগোজের কারণেই হয়ত! এভাবে বেশিক্ষণ টিকে থাকা মুশকিল। ঝিলমিল চোখ তুলে আশেপাশের জাঁদরেল মানুষগুলোর দিকে তাকাল। সব দোষ ওদের। এত চাপাচাপিতে দম বন্ধ হয়ে আসছে।
সাজগোজ শেষ হওয়ার পর সবাই যখন আশপাশ থেকে সরে গেল তখন ঝিলমিল একটু শান্তিমত নিঃশ্বাস নিল। এতক্ষণ তো সবাই বিউটিশিয়ানকে ডিরেকশন দিচ্ছিল, এভাবে না ওভাবে করেন।
তারপর ওরা যে যার মত চলে গেল। সন্ধ্যা হয়ে আসছে প্রায়, বাহির থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছিল। ঘরে ঝিলমিল একা, বুক ভরা অসক্তি নিয়ে বসে আছে। বিকেলের লালচে রঙের সূর্যটা নিস্তেজ হয়ে হেলে পড়েছে পশ্চিমদিকে। মৃদু হাওয়া বইছে, অবাধ্য হওয়ায় তার মন অলীক ভাবনার ভেলায় ভেসে হাবুডুবু খাচ্ছে। অবসন্ন এই সন্ধ্যায় ওর মন হারিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো।
এর আগেরবার উচ্চ আওয়াজে কর্ণকুহরে ভেসেছিল, ‘বউ এসেছে, বউ এসেছে।’
এইবার কানে ভেসে আসছে, ‘বর এসেছে, বর এসেছে।’
ঝিলমিল তৎক্ষণাৎ উঠে গিয়ে অন্যপাশের জানালাটা খুলে দিল। শান্ত বাতাস তার চোখেমুখে আঁছড়ে পড়ল। জানালা দিয়ে দেখার চেষ্টা করল বর বেশে রোদ্দুরকে। কিন্তু এত মানুষের ভীড়ে ওকে দেখাই গেল না, সবাই একদম ঘিরে ধরেছে।
ঝিলমিল মনে মনে বলল, ‘ধুর আমার বরের সাথে এরা যে কী শুরু করেছে। একবার বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর এই শালীদের নাগালের বাহিরে চলে যাব। তখন দেখব, কী করে আমাকে আর ওকে দূরে রাখে?’

আজ বর সাজে রোদ্দুরকে দেখে সত্যি সত্যিই ঝিলমিলের মাথা ঘুরে গেল। বিশ্বাস হতে চাইল না, এটা আসলেই রোদ্দুর! চোখ পাকিয়ে তাকাল। ভালো করে আগাগোড়া দেখে নিল, নাহ ঠিকই আছে। কিন্তু একদম অন্যরকম লাগছে। এত ভদ্র, ইনোসেন্ট, মুখচোরা— আহারে, সব সময় যদি এরকম সাদাসিধা আর সহজ সরল ভঙ্গিতে থাকত সে! কিন্তু আফসোস করে লাভ নাই। রোদ্দুরের এই রূপ বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারবে না সে। কারণ অভ্যস্ত নয় তো। ভালোবেসে ওই অভদ্রটাকে।
অনুষ্ঠানে উল্লাসপূর্ণ সকলের মনে আনন্দের হিল্লোল বইয়ে দিচ্ছে। গানের তালে তালে সুর মিলিয়ে, হাতে তালি ঠুকে, কোমড় দুলিয়ে নাচও শুরু করে দিয়েছে পরিচিত অপরিচিত কয়েকজন। ভীষণ আনন্দঘন আমেজ।
এতকিছুর মাঝেও রোদ্দুরের চোখ দুটো বা’দিকে ঘুরিয়ে পাশে বসে থাকা প্রাণোচ্ছল মেয়েটিকে আড়চোখে দেখে যাচ্ছে। বহুদিনের তৃষ্ণা মিটল। এই মুহূর্তে রোদ্দুরকে দেখল যে কেউ বলবে— এই বিয়ে, এই মুহূর্ত, এই পরিবেশ, হইহুল্লোড়, নাচ গান, মাতামাতি, আনন্দ উল্লাস কোনটাই সে উপভোগ করতে আসে নাই। সে এসেছে তার ওয়ান এন্ড অনলি বউটাকে এক নজর দেখার জন্য। পিপাসার্ত মন তৃষ্ণা নিবারণের সেই সুযোগটুকু খুব সহজেই পেয়ে গেল।
ঝিলমিল ছটফট করছিল। ভারী একটা শাড়ি, গয়নাগাটি গায়ের মধ্যে কুটকুট করছে। ইচ্ছে হচ্ছে, সব ধরে এক ঝটকায় ফেলে দিতে।
বিদায়ের পালা চুকাতে চুকাতে রাত বারোটা বেজে গেল। এই বিদায় তো আর মেয়ে বিদায় নয়, মেহমান বিদায়। ঝিলমিলকে এতক্ষণ পর্যন্ত এই সঙ সেজে বসে থাকতে হয়েছে।
মাত্র গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তবে এখনও পর্যন্ত নিজের ঘরে যেতে পারে নাই। ওরা কেউ ছাড়ছে না। ওখানে তিন্নি, রিমঝিমকে দেখা গেল না। ঝিলমিলের সন্দেহ হলো, দাবি করার মূল দু’জন কোথায় গেল? রোদ্দুরের কাছ থেকে সব মিলিয়ে কত হাজার টাকা যেনো দাবি করেছে, সেটা রোদ্দুর দিতে অস্বীকার জানাচ্ছে সাথে তার বন্ধুরাও তাল মিলাচ্ছে।
ঝিলমিল তানিশাকে আড়ালে ডেকে বলল, ‘ভাই আমাকে অন্তত ঘরে যেতে দে। আমি কাপড়-চোপড় চেঞ্জ করব। এতক্ষণে নিশ্চয়ই আমার চেহারার অবস্থা বারোটা বেজে গেছে।’

‘আচ্ছা চলো। আমি তোমাকে ঘরে রেখে আসছি।’ তানিশার সাথে ঝিলমিল ঘরে এলো, রোদ্দুরের ঘরে। ঘরটার ভেতরটা অদ্ভুত সুন্দর, আলোয় পরিপূর্ণ। টান টান করে চাদর বিছানো, তার ওপর গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছড়ানো। লাল টুকটুকে গোলাপ আর রজনীগন্ধার ছোঁয়ায় ঘরের চেহারাই চেঞ্জ হয়ে গেছে। সে লাজে রাঙা হয়ে এককোণে বসল। ঘরের দুটো জানালায় খোলা, বেশ শব্দ করে হাওয়া ডুকছে।
একটু পর মানে এক্ষুনি নিশ্চয়ই রোদ্দুর’ও ঘরে প্রবেশ করবে। তখন ঝিলমিল নিজেকে কোন জায়গায় লুকিয়ে রাখবে? ওর মুখোমুখি দাঁড়ালে, সত্যি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না। তার চোখের চাহনি, হাতের দৃঢ় বন্ধন অন্যরকম এক কারসাজিতে ঝিলমিলকে বেঁধে ফেলে। কীভাবে তখন নিজের লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটা আড়াল করবে?
ঝিলমিল চোখ তুলে সামনের দিকে তাকাল। তানিশাকে দেখতে পেল না। হয়তো চলে গেছে।
অবশেষে আকুতিবিকুলি মনের অপেক্ষা শেষ হলো। রোদ্দুর ঘরে প্রবেশ করতেই ঝিলমিল মিইয়ে গেল। মাথা ঘোরাচ্ছে, কেমন কেমন লাগছে, শরীর জুড়ে কম্পন, মনে হচ্ছে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না; এক্ষুনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। রোদ্দুর এসে ঝিলমিলের সামনাসামনি দাঁড়াল। ও তো অলরেডি মাথা নিচু করে নিয়েছে। রোদ্দুরকে দেখেও মাথা তুলে তাকাচ্ছে না। রোদ্দুর বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ করে ভারী গলাটা ভীষণ অধিকার সুলভ নির্ভারচিত্তে ডেকে উঠল, ‘ঝিলমিল!’
ব্যস, ওই একটা ডাকেই ঝিলমিলের সর্বনাশের শুরু হলো। থেমে যায় তারপর মাথা তুলে তাকায়, সরাসরি একদম রোদ্দুরের চোখে চোখ রেখে। রোদ্দুর আরও দু’কদম অগ্রসর হতেই আচমকা ডানপাশ থেকে কেউ একজন চেঁচিয়ে উঠল, ‘ওয়েট ওয়েট…. আমি আগে ঘর থেকে বের হই। এরপর নিজেদের রোমান্স শুরু কর।’ এই বলেই তিন্নি পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে সোজা দরজা খুলে দৌড় দিল।
ঘরে উপস্থিত দুই দম্পতির হতভম্ব ভাব কাটতে না কাটতেই আরেক চিপা থেকে রিমঝিম বেরিয়ে এসে বলল, ‘আমি কিছু জানিনা, আমি এখানে আসতেও চাই নাই। তিন্নি আপু আমাকে জোর করে টেনে নিয়ে আসছে।’
রিমঝিম যাওয়ার পর তানিশাও বেরিয়ে এলো। দৌড়াতে দৌড়াতে বলল, ‘আবেগে বিবেক ভুলে আমিও চলে এসেছিলাম। সরি সরি, আর হবে না কোনোদিন।’
.
.
.
চলবে….
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা —১৭৮৭