ঝিলমিল রোদ্দুরে পর্ব-৫২

0
331

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-৫২]
~আফিয়া আফরিন

রোদ্দুর পানি নিয়ে এসে ঝিলমিলকে ওর জায়গায় দেখতে পেল না। ঝিলমিল বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। রোদ্দুরকে দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে ডাক দিল, ‘অ্যাই।’
রোদ্দুর তাকাল। জিজ্ঞেস করল, ‘ওখানে কি করছিস?’

‘এখানে আয় তোর সাথে আমার কথা আছে।’ ঝিলমিলের বলতে সময় লাগল কিন্তু রোদ্দুরের ওর সামনে হাজির হতে সময় লাগল না। এসে কুর্নিশ করার ভঙ্গিতে বলল, ‘আপনার সব কথা শুনতে আমি প্রস্তুত। বলতে থাকুন।’

ঝিলমিল নিজেকে গম্ভীর রাখার চেষ্টা করল। সেই দুপুরে সে রাগটা উঠেছিল তা এখন প্রায় ফিকে হওয়ার পথে। তখন ওই একগ্লাস পানি খাওয়ার পর থেকে রাগ আর কাজ করছে না। আশ্চর্য, পানির মধ্যে কিছু মিশিয়ে দিল নাকি? ঝিলমিল সরু দৃষ্টিতে তাকাল। বলল, ‘তুই আর সানিয়া বিয়ে করতে চেয়েছিলি?’ কথাটা বলে নিজের কাছেই কেমন যেন অদ্ভুত ঠেকল। এতটা রূঢ়ভাবে বলা উচিত হবে না। একবার যখন বলেই ফেলেছে, তখন রোদ্দুর কি বলে তাই শোনা যাক। রোদ্দুর তৎক্ষণাৎ কিছু বলল না। ওর কপালে পরপর দু’টো ভাঁজ পড়ল। এই বিষয়টা ঝিলমিলকে কখনোই জানানোর প্রয়োজন মনে করে নাই কারণ প্রথমত, নিজের জীবনের চরম ভুলটা সে ভুল মনে করে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে। দ্বিতীয়ত, ঝিলমিল বিষয়টা সহজভাবে না’ও নিতে পারে। আর তৃতীয়ত, অনেকদিন পেরিয়ে যাওয়ার কারণে সানিয়ার অধ্যায়’সহ আগাগোড়া সে রোদ্দুরের জীবনে ঝাপসা এবং গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
কখনো যে হঠাৎ করেই ঝিলমিলের এইরকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, তা ভাবতেও পারে নাই। রোদ্দুর স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করল, ‘সানিয়ার সাথে দেখা হয়েছিল?’

‘এটা কি আমার প্রশ্নের জবাব?’

‘ধীরে ধীরে এগোচ্ছি….।’

ঝিলমিল বলল, ‘হুম দেখা হয়েছিল।’

‘কী কী বলল?’

রোদ্দুরের অযাচিত প্রশ্নে ঝিলমিল বিরক্ত হয়ে বলল, ‘এত কথা না বাড়িয়ে আমাকে জাস্ট আমার প্রশ্নের উত্তর দে। এককথায় বলবি, হ্যাঁ অথবা না।’

রোদ্দুর ঝিলমিলের চোখে চোখ রেখে উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ। যখন আমাদের সম্পর্ক ছিল তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বিয়ে করব। আসলে সানিয়ার সাথে আরেকজনের সম্পর্ক ছিল, যেই জিনিসটা তখন আমার সহ্য হয় নাই। তাই তাড়াহুড়ো করে বিয়ের সিদ্ধান্ত।’

‘সেই বিয়েটা হলো না কেনো? তোরা তো কাজি অফিস পর্যন্ত গিয়েছিলি আমি যেটুকু শুনেছি।’

‘হুম… গিয়েছিলাম। বিয়ের বন্দোবস্ত’ও হয়ে গেছিল। কিন্তু সেদিন সানিয়া আসে নাই। ও তানভীরের সাথে ছিল…. দু’দিন পর যোগাযোগ করেছিল।’ রোদ্দুর আর লুকাছাপার মধ্যে গেল না। সে চায় না, এই ফালতু বিষয়টা নিয়ে পরবর্তীতে তাদের মধ্যে ঝামেলা হোক বা ভুল বোঝাবুঝি হোক। আর সে ইদানিং ভাগ্যে বিশ্বাস করছে খুউব। এখন মনে হয়, তার জীবনে ঝিলমিলের আগমন ঘটবে বলেই সানিয়ার জীবনে তানভীরের আগমন ঘটেছিল।
সব শুনে ঝিলমিল বলল, ‘আমাকে আগে বলিস নাই কেনো?’

‘ওকে জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছি। রংচঙ মিশিয়ে ওর কাহিনী আর বলতে ইচ্ছে করে নাই। আমি ভুলে গেছি এখন তোর’ও ভুলে যাওয়া উচিত।’

‘তুই তো স্মৃতি বিসর্জন দিয়ে বসে আছিস আর সে স্মৃতিচারণ করছে। এখনও বোধহয় মনে মনে তোকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে। কখনো ওর সাথে দেখা হলে সাবধান করে দিবি। আমার জিনিসে যদি হাত বাড়ায় তবে আমি ওর দিল কে’টে টু’করো টু’করো করে নদীর পানিতে ভাসিয়ে দিব।’ শেষ কথায় ঝিলমিলের কণ্ঠে অভিমান স্পষ্ট। সে রোদ্দুরের কাছাকাছি এগিয়ে পুনরায় বলল, ‘আমি জানি, নিয়মানুসারে যার ভাগ্যে যে আছে; দুনিয়ার কোনোকিছু তাদের আলাদা করতে পারবে না। তুই শুধুমাত্র আমার, ঠিক আছে?’

রোদ্দুর একহাতে ঝিলমিলকে জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে গাল টিপে দিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে।’ ঝিলমিল নিজের ভার সবটুকু রোদ্দুরের উপর ছেড়ে দিয়ে মুচকি হাসল। বেশ কিছুক্ষণ ওর বুকের উষ্ণতায় থাকার পর হঠাৎ মনে হলো একটা কথা। তৎক্ষণাৎ মুখ তুলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘তুই যে তখন আমাকে পানি দিয়েছিলি, তারমধ্যে কি কিছু মিশিয়ে দিয়েছিস?’

রোদ্দুর কিছুটা অবাক হয়ে ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ‘কেনো? এমন মনে হচ্ছে কেন?’
ঝিলমিল এইবার সোজা হলো। চিন্তিত স্বরে বলল, ‘আমি ভেবেছিআম তোর সাথে মারকাটারি টাইপের ঝগড়া করব আজকে। মনে মনে প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। তারপর যখন পানি খেলাম, তখন রাগ ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল। এটা উচিত হয় নাই। দুপুর থেকে রাগে আমার ব্রক্ষতালু জ্বলছিল আর সেই রাগ আমি ঠিকঠাক মত প্রকাশ করতে পারলাম না। বল, কি করেছিলি?’

রোদ্দুর ঝিলমিলের গালে হাত রেখে হেসে বলল, ‘ভালোবাসা মিশিয়ে দিয়েছিলাম….. একদম পরিপূর্ণ ভালোবাসা।’

ঝিলমিল রোদ্দুরের শার্টের কলার টেনে ধরে বলল, ‘খুব ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে আজকাল। এত ভালোবাসা আমদানী হচ্ছে কোথা থেকে শুনি?’

‘শুনবি…. বলব?’ বলতে চেয়েও রোদ্দুর চুপ করে থাকল। ঝিলমিল ওর দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের আশায়। মিনিট পাঁচেক নিঃশব্দে কাটল। রোদ্দুরের দৃষ্টি ঘোরাফেরা করছে ঝিলমিলের চোখে… মুখে…. কপালে… নাকে… ঠোঁটে! এমনি সময় হলে অস্বস্তিবোধ করত, কিন্তু আজ আর অস্বস্তি হচ্ছে না। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘বল।’

‘আমি ভাবছি কথাটা বলার আগে আমার কি নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখা উচিত নাকি এখানে দাঁড়িয়েই বলতে পারব?’

ঝিলমিল তাড়া দিয়ে বলল, ‘বল, বল এখানেই বল।’
রোদ্দুর ঝিলমিল হাত ধরল। ওর দু’টো হাত নিজের হাতে বন্দী করে বলল, ‘ভালোবাসার প্রথম আবির্ভাব ঘটে পাশে থাকার অঙ্গীকারে।’ তারপর সরাসরি তারপর চোখের পাতায় চুমু খেয়ে বলল, ‘ভালোবাসার আবির্ভাব ঘটে টাল মাটাল করা দৃষ্টিতে। যে সৃষ্টি স্বচ্ছ, সুন্দর, মায়াবী, নির্মল এবং নির্ভুল। এইজন্যই বলা হয়েছিল, সেদিন চৈত্র মাস তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ!’ ঝিলমিল ওর দিকে পলকহীন তাকিয়ে আছে তার ঠোঁটের কোণে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে হাসার রেখা। সেই হাসিময় ওষ্ঠ্যযুগল ছুঁয়ে দিল রোদ্দুর। ঝিলমিল চোখ বুঁজে সেই অমৃত সুধা পান করতে করতে মন হারানোর রাজ্য হারিয়ে গেল। ফিরে এলো রোদ্দুরের কণ্ঠস্বর শুনে। সে বলল, ‘এটা আছে পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় জিনিস। যার উষ্ণ ছোঁয়া ভালোবাসা ছাড়া পাওয়া যায় না। আর গেলেও তা…..’
রোদ্দুরের পুরো কথা ঝিলমিল শেষ করতে দিল না। ছিটকে বেরিয়ে গেল ওর আবদ্ধতা থেকে। সে যে লজ্জায় লাল, নীল, বেগুনি হয়ে দৌড় দিল রোদ্দুর তা ঠিকই বুঝেছে। ওখানে দাঁড়িয়ে থেকেই একা একা কিছুক্ষণ হাসল। তারপর ঘরের চলে এলো।
এইদিকে ঝিলমিল…. নিজেকে কী বলবে বুঝতে পারছিল না। ওই যে রোদ্দুর জাদুকরের মত এসে জীবনটা পাল্টে দিয়েছে, জীবনের রং চিনিয়েছে। কতকিছু ভেবে রেখেছিল যার কিছুই হলো না, উল্টো যা হলো…. ইশশশ, নাহ আর কল্পনা করা যাচ্ছে না। ওসব স্বর্গীয় মুহূর্ত, অনুভূতি। বাস্তব হয়েই থেকে যাক আর কল্পনা করার প্রয়োজন নেই। আস্ত কল্পমানব সবসময় সামনাসামনি অবস্থান করছে, যখন ইচ্ছে হবে কল্পনার বিষয়বস্তু অনুসন্ধান করে বাস্তব করে ফেলা যাবে।
.
মান-অভিমানে, ভালোবাসার তৎপরতায়, রাগ-অনুরাগে অগোচরে দু’টো দিন কেটে গেল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার। তিথি আপু সকালে ঝিলমিলকে ফোন দিয়েছিল। মনে করিয়ে দিয়েছে, তাদের মালদ্বীপ ভ্রমনের কথা। ঝিলমিলের মনেই আছে। সে তো আরও কয়েকদিন আগে থেকে ওখানে গিয়ে কী করবে তা বলতে বলতে রোদ্দুরের মাথা খারাপ করিয়ে দিয়েছে। রোদ্দুর যখন বাসায় থাকে, তখন তো বকবক করেই এতে কোনো ছাড় নেই। কিন্তু যখন অফিসে থাকে, তখনও ঝিলমিল ফোন করে।
এইতো ক্লাস করে বাড়ি ফিরল কিছুক্ষণ আগে। বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে এককাপ চা হাতে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। এখানকার বারান্দাটাও সুন্দর তবে আগেরটা বেশি সুন্দর ছিল। এখানে সামনে আরও বড় বড় দালান যার কারণে সন্ধ্যা আর রাতের সুন্দর দৃশ্যটা ঠিকঠাক মতো উপভোগ করা যায় না।
মনের মধ্যে খুব সামান্যই বিষাদ অনুভব করল। সকালে মা ফোন করেছিল, কী জানি বললেন। ঝিলমিল কিছু বুঝল, কিছু তার না বোঝাই থেকে গেল। ওর বাপ-চাচাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছে, কারণটা সুস্পষ্ট নয়। একেকজন বলছে, বাড়ি ভাগাভাগির কথা। দাদির কানে এসব এখনও যায় নাই। কিন্তু নিত্যদিন যা ঝামেলা হচ্ছে, খুব একটা সময় লাগবে না বিষয়টা জানাজানি হতে। এখানেই ভয়…. দাদি জেনে গেলে নিশ্চিত অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তার এত আদরে, এত মায়ার ঘরে তোলা সংসার মরণের আগেই যদি দেখেন তাসের ঘরের মত ভেঙে ভেঙে পড়ছে; তবে তো জীবন্ত থেকেও তিনি মৃ’তের ন্যায় অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়বেন।
ঝিলমিল কখনোই এসব চায় নাই। এসব ভাগাভাগি কিংবা আলাদা থাকা, তার অভ্যাসেই ছিল না কখনো। ছোটোবেলা থেকে সবাইকে একসাথে দেখে বড় হয়েছে। মা কখনো পাশে না থাকলেও আদরের কমতি হয় নাই।
তার জীবনে আলাদা থাকার প্রসঙ্গ এসেছে রোদ্দুরের কারণে। বিয়ের পর থেকে এখানে এসে প্রথম প্রথম খুব বিরক্ত লাগত, একা একা লাগত। এমনকি রোদ্দুর বাড়ি ফিরলেও কেমন একটা লাগত!
মায়ের কথা শুনে তাই একটু খারাপ লাগছে। রোদ্দুরকে এসব কিছুই জানায় নাই। এমনিতেই সারাদিন সে নিজের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে.. তার উপর আলাদা করে প্যারা দেওয়ার আর কোনো মানেই হয় না। বাড়ি ফিরলেও ঝিলমিলকে তার পাওনা সময়টুকু বুঝিয়ে দিয়ে সেই যে ল্যাপটপ নিয়ে বসে, ঘুমাতে ঘুমাতে কত রাত্রি!
ঝিলমিল ওকেই ফোন করল। দু’বার ফোন করার পর সাহেব ফোন রিসিভ করলেন।
ঝিলমিল বলল, ‘কোথায় আছিস? অফিসে?’

‘দুপুর দেড়টা নাগাদ আমি আর কোথায় থাকতে পারি বলে আপনার মনে হয় ম্যাডাম?’

‘প্রশ্নের পিঠে এত প্রশ্ন করিস কেন? সোজাসুজি উত্তর দেওয়া যায় না? বললেই তো হয়, অফিসে আছি।’ ঝিলমিল ভেংচি কেটে বলল।

রোদ্দুর হেসে বলল, ‘হ্যাঁ ওখানেই আছি। কি হয়েছে? বাড়ি ফিরেছিস কখন? ফোন করতেই চেয়েছিলাম। পরে আর মনে ছিল না।’

ঝিলমিল আশ্চর্য হয়ে জুলজুল কণ্ঠে বলল, ‘হ্যাঁ মনে থাকবে কেনো? আমি এখন পুরাতন হয়ে গেছি না। নতুন নতুন তো সারাবেলা ফোন করতি, খোঁজখবর নিতি। বাবারে বাবা, কী আপ্যায়ন তখন! আর এখন তো মনেই থাকে না। ভালোই ইম্প্রুভ হচ্ছে দিনকে দিন।’

‘আরে আমি সেটা বোঝাতে চাই নাই। টোটালি ভুল বুঝলি তুই।’

‘আমি সবসময় ভুল’ই বুঝি। তুই তো সর্বক্ষেত্রে ঠিক। যাইহোক, আমার কথা ভুলে গেছিস মেনে নিলাম। আগামীকালের কথা মনে আছে তো?’

‘হুমমম।’

‘ঠিক আছে, মেনে নিলাম এবং মাফ করে দিলাম। বাড়ি ফিরে আসিস তাড়াতাড়ি। সন্ধ্যার পর বের হবো। পুরাতনটাকে নিয়েই আজ ঘুরব, আয়।’

রোদ্দুর হেসে বলল, ‘যথাজ্ঞা ম্যাডাম। আপনি একটা কথা বলেছেন আর আমি তা মানব না, কখনো হয়েছে? হবেও না। রেডি হয়ে থাকিস, কিছুক্ষণ বাদেই আসছি।’
ঝিলমিল খুশি হয়ে গেল। গোসল করে এসে কোনোরকম দৌড়ের উপর খেয়ে নিল। তারপর বসল ড্রেসিং টেবিলের সামনে। নিজেকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। ভেজা চুলগুলো তোয়ালে সরিয়ে ছড়িয়ে দিল। তারপর উঠে গেল আলমারির কাছে। গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগল, শাড়ি পড়বে নাকি সাধারণ জামাকাপড়! অনেক চিন্তাভাবনা করে একটা শাড়িই বের করল। আকাশী রঙের এই শাড়িটা রোদ্দুর দিয়েছিল কিছুদিন আগে। ও পড়তে বলেছিল কয়েকবার…. কিন্তু উপলক্ষ্যে ছাড়া শাড়ি পড়তেই ইচ্ছে করে না।
ঝিলমিল ওই শাড়িটাই পড়ল। কোনো উপলক্ষ্যে না থাকলেও, রোদ্দুরের সাথে ঘুরতে বের হবে এটাই বা কম কীসের? শাড়ি পড়ে মুখে হালকা মেকআপ করল, চোখের নিচে কাজলের চিকন একটা আব্রু আঁকল, ঠোঁটে লিপস্টিক দিল, হাতে গলায় খুব সামান্যই প্রসাধনীর ছোঁয়া লাগল, সবশেষে চুলগুলো আঁচড়ে পিঠের উপর ছড়িয়ে দিল‌। আয়নায় নিজেকে দেখে বলল, ‘হুম… একদম ঠিকঠাক লাগছে।’

রোদ্দুর আজ সন্ধ্যার আগেই ফিরল। ঝিলমিল অপেক্ষা করছিল, পরপর দু’বার কলিংবেলের আওয়াজে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল। রোদ্দুর তাকে দেখে ব্যাপক অবাক হলো। ওকে দেখা মাত্র মনটাও সুস্থির হয়ে গেল। সারাদিনের কাজের চাপে অতিষ্ঠ এবং উত্তপ্ত মস্তিষ্কে ঝিলমিল যেনো শান্তির পরশ বুলিয়ে দিল।
ঝিলমিল একটু খোঁচা মারার ভঙ্গিতে বলল, ‘অবশেষে সাহেবের দেখা মিলল। আমি তো ভেবেছিলাম, আমাকে অপেক্ষা করতে বলে নিজেই কোথাও হাওয়া হয়ে গেছে। যত যাইহোক, পুরাতন হয়ে গেছি কিনা!’

রোদ্দুর এগিয়ে এসে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলল, ‘পুরাতন মানুষ দিনে দিনে নতুন রূপে ধরা দিলে তো আমার মনটাকে সামলানো মুশকিল।’
রোদ্দুর সচরাচর, হুটহাট ঝিলমিলকে নিয়ে প্রশংসাসূচক কিছু বললেও ঝিলমিল কেমন বলতে পারে না। পেটের মধ্যে থেকে সব কথা বেরিয়ে গলায় এসে ঠিক আটকে যায়।
মাঝেমধ্যে তো আদুরে গলায় বলতে ইচ্ছে করে, ‘তোর আউলা চুলের ঝাউলা বাতাস আমার এত ভালো লাগে কেন বল তো? কিছু কিছু সময় তোর চোখের বাঁকানো দৃষ্টিতে আমি কেন সংকুচিত হয়ে যাই? ওভাবে তাকাস কেন? দাঁড়িতে পূর্ণ চোয়াল কিংবা কপালের এককোণে পড়ে থাকা তিলটাল প্রেমে আমি কেন বারবার পড়ে যাই? তোর সারা শরীর জুড়ে যে অসাবধানী সৌন্দর্যের অবয়ব তা আমাকে এত টানে কেন, বলতে পারিস?’
মনের মধ্যে এত কথা থাকা সত্ত্বেও ওকে কিছু বলা হয়ে উঠে না। রোদ্দুর শুধু বলে যায়। ঝিলমিল শুনে যায়… লজ্জায় গাল লাল হয়ে যায়… নিজে অপ্রস্তুত হয়ে উঠে… শুদ্ধ হাসিতে সারা মুখটা মাখামাখি হয়ে যায়… উড়ন্ত পাখির মত উড়ে যেতে ইচ্ছে করে!
.
.
.
চলবে….
কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৭৬২