ঝিলমিল রোদ্দুরে পর্ব-৫৩

0
244

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-৫৩]
~আফিয়া আফরিন

ফ্লাইট সন্ধ্যা ছয়টায়। রোদ্দুর হাফ টাইমের পরেই অফিস থেকে চলে এসেছিল। কাপড়-চোপড়, ব্যাগপত্র ওরা আগের রাতেই গুছিয়ে রেখেছিল। এয়ার পোর্টে এসে পৌঁছাল পাঁচটার একটু আগে। ইমিগ্রেশন’সহ যাবতীয় কাজকর্ম সারতে সারতে বেশ সময় লাগল।
ঝিলমিলের জীবনে এই প্রথম এত দীর্ঘ যাত্রা। প্লেন ছাড়ার সাথে সাথে ওর বুকের ধুকধুকানি শুরু হয়েছে, তারপর একে একে মাথাব্যথা, বিরক্ত লাগা সবকিছু। কত পরিকল্পনা করে এখানে এসেছিল… এখন মনে হচ্ছে সবটাই ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে।
মায়ের সংসারের কাজ এবং বাবার ব্যস্ততার জন্য কখনো আত্নীয়-স্বজনের বাড়ি ব্যতীত অন্য কোথায় বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠে নাই। মা সবসময় বলত, ‘এমন ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিব যে তোকে সারা দুনিয়া ঘুরিয়ে আনবে।’ সেই স্বপ্ন তো তার একটু একটু করে পূরণ হচ্ছে… তবে বেত্তমিজ মনটা এমন করছে কেনো?
কিছু ভালো লাগছে না বলে, ঝিলমিল রোদ্দুরকে বিরক্ত করতে লাগল। এই একটা কাজ সে খুব মন দিয়ে করতে পারে.. এই একটা কাজে তার সারাদিনের অবসাদ দূর হয়ে যায়। কিন্তু এইবার এই টোটকা কাজে লাগল না, সময় যাওয়ার সাথে সাথে মাথার ঝিমঝিমানি ভাবটা পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগল। এখন তো আবার মাথাব্যথার সাথে সাথে গা গোলাচ্ছে, কেমন কেমন যেনো লাগছে। ক্লান্তিতে চোখ বুঁজে রোদ্দুরের কাঁধে মাথা রাখল… কিছুক্ষণের মধ্যে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। রোদ্দুর একা বসে বোরিং ফিল করলেও সারাটা পথ ওকে আর ডেকে তুলল না। তখন একবার খাওয়ার কথা বলেছিল, ঝিলমিল না করে দিয়েছে। এই যাত্রায় পানি’ই কেমন তিতকুটে লাগছে, অন্য খাবার তো দূরেই থাক।
অবশেষে তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এবং অসংখ্য দ্বীপের এই দেশটিতে এসে পৌঁছাল। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি মালদ্বীপের মালে ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে প্লেনটি এসে ল্যান্ড করল তখন মাঝরাত। বিমানবন্দরে পৌঁছে মনেই হলো না, এখন রাত। চারদিক ঝকঝকে, তকতকে, আলোয় আলোকিত। রোদ্দুর আর ঝিলমিল ইমিগ্রেশন শেষ করে বেরিয়ে এলো। ওখানে দাঁড়িয়েই ঝিলমিলকে ধাতস্থ হওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিল রোদ্দুর। বিমানবন্দর থেকে এখনও ৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হবে। এখান থেকে মালে আইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য দুটো ব্যবস্থা রয়েছে। রোদ্দুর ঝিলমিলকে জিজ্ঞেস করল, ‘স্পিডবোটে যাবি নাকি ট্যাক্সিতে?’

‘এইরাতের বেলা নদীর ভেতরে অবশ্যই না। দ্রুত ট্যাক্সি বুক কর।’ রোদ্দুর তাই করল। দশ মিনিটের মাথায় পোঁছে গেল আইল্যান্ডে। এখানে একটা রিসোর্টে রুম বুক করা রয়েছে। রোদ্দুর লোকেশন খুঁজে ‘সামারসেট ইন’ রিসোর্টে এসে পৌঁছাল। সেখানেও কিছু কাগজপত্র পূরণ করতে হলো। ঝিলমিল বিরক্ত হয়ে বলল, ‘যেখানে যাই সেখানেই এসব হাবিজাবি… এই ফর্ম পূরণ করো, এখানে সই করো যত্তসব। মানুষের জীবন থেকে অর্ধেক সময় এই করতে করতে পার হয়ে যায়।’
রোদ্দুর কথার পিঠে কিছু বলল না। এখন সে ভালো/মন্দ যাই বলুক না কেন, ঝিলমিলের পছন্দ হবে না উল্টো কথা শুনে তেড়ে আসবে।
রিসোর্টটা বেশ সুন্দর… রাতের বেলায়ও লোকে লোকারণ্য। ঝিলমিল আর রোদ্দুর নিজেদের বরাদ্দকৃত ঘরটায় প্রবেশ করতেই ঝিলমিলের মনে মধ্যেকার বিরক্তিকর ভাবটা উবে গেল। এত্ত সুন্দর… এত্ত সুন্দর! পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা বিছানা দেখে ঝিলমিল আর লোভ সামলাতে পারল না, হুমড়ি খেয়ে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
আবেশে গদগদ হয়ে বলল, ‘কী শান্তি! আমি এখন আরাম করে ঘুমাব।’

রোদ্দুর এগিয়ে এসে বলল, ‘উহুঁ.. এখন ফ্রেশ হবি। সারাটা পথ না খেয়ে ছিলি, কিছু খেয়ে নিবে তারপর যা করার করিস।’

ঝিলমিল কমফোর্টার গায়ের জড়াতে জড়াতে হেসে বলল, ‘সরি! আমি প্রচুর টায়ার্ড… উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। আরাম করে একটা ঘুম দিয়ে নিজের কান্ড জ্ঞানহীন মস্তিষ্ককে স্বস্তি দিব, তারপর সব হবে। কথায় আছে না, নিজে বাঁচলে বাপের নাম। তুই গিয়ে ফ্রেশ হ। গুড নাইট।’ এটুকু বলেই সে বালিশে মুখ গুঁজল। যার যা ইচ্ছে হয় করুক। রোদ্দুর গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল। চোখেমুখে পানি দেওয়ার কারণে নিজেকে সতেজ লাগছে… মাইন্ড ফ্রেশ ফিল করছে।
একপলক এসে জানালার কাছে দাঁড়াল। রিসোর্টটা বোধহয় খুব একটা বেশি বড় নয়… গোলাকৃতির। এপাশ থেকে ডাইনিং হলের কিছুটা অংশ স্পষ্ট, বেশ মানুষের ভিড় সেখানে। আবার পুলের ধারে পেতে রাখার চেয়ারেও জোড়ায় জোড়ায় কাপল দেখা যাচ্ছে। নিশ্চয়ই হানিমুনে এসেছে। রোদ্দুর ঘাড় ঘুরিয়ে ঝিলমিলের দিকে তাকাল। তাকে একলা রেখে সে ঘুমিয়ে কাদা। তবে এখানে এসেছে কেনো? ঘুমানোর ইচ্ছে থাকলে ঘরে শুয়ে বসেই ঘুমানো যেত। কষ্ট করে এতদূর আসার কি দরকার ছিল? এমনে পড়ে পড়ে ঘুমালে কখন হবে হানিমুন আর কখন কী? আশ্চর্য!
.
রাতে রোদ্দুর কখন শুয়ে পড়েছিল আর কখন ঘুমিয়েছিল, কিছুই মনে নেই। সকালে ঘুম আলগা হতেই অভ্যাসবশত পাশে হাত রেখে ঝিলমিলকে অনুভব করতে পারল না। তড়াক করে লাফিয়ে উঠল। আশেপাশে তাকাল, রুমের সাথে লাগোয়া বেলকুনিতে উঁকি দিল, ওয়াশ রুমে খোঁজ করল… ঝিলমিলকে কোথাও দেখল না। তৎক্ষণাৎ ফোন করল, ফোনটাও বেজে চলছে বিছানার উপর। রোদ্দুর কোনরকমে রেডি হয়ে নিচে নামল। ঝিলমিলকে পেলে তার কান্ড জ্ঞানহীনতার জন্য কষে দু’টো থাপ্পড় লাগাবে। মাথা আছে ঠিকই কিন্তু মাথায় একটুও বুদ্ধি নেই। এ অচেনা জায়গায় না বলে কেন চলে গেল?
বেশিক্ষণ খুঁজতে হলো না… ডাইনিং স্পেসে দেখল সে একটা গোল টেবিল দখল করে নিয়ে বসে বসে কফি খাচ্ছে। রোদ্দুর এগিয়ে গেল। ঝিলমিলের সামনের চেয়ারটা দখল করে নিল।
ঝিলমিল ওকে দেখে হেসে বলল, ‘তুই উঠে পড়েছিস? এভাবে ঘুমাচ্ছিলি, আমি তো ভেবেছি আজকে আর ঘুম থেকেই উঠবি না। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল, তাই ভাবলাম একটু ঘুরে দেখি চারিদিক। নদীর পার গিয়ে বসবি? আমি ওখানেই ছিলাম। গতদিনের ক্লান্তি একদম মুছে গিয়েছে।’

ঝিলমিলের হাসি দেখে রোদ্দুরের গা পিত্তি জ্বলে গেল। সে গমগমে গম্ভীর গলায় বলল, ‘আমার অনুমতি ছাড়া তুই ঘরের বাহিরে পা রাখলি কীভাবে? তোর বুঝতে হবে, এটা একটা অচেনা জায়গা। আর হ্যাঁ, ফোন কেনো সাথে থাকে না?’
ঝিলমিল জিভ কাটল। তখন রোদ্দুরকে বলবে কীভাবে? সে তো ঘুমাচ্ছিল। আর ওমন আদুরে লাগছিল তখন যে একদম ঘুম ভাঙাতে ইচ্ছে করে নাই। ফোনটা হাতেই নিয়েছিল, মনের ভুলে কীভাবে যে রেখে চলে এলো কে জানে? ঝিলমিল নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিল। বলল, ‘এই ভুল আর কখনো হবে না।’
এইবারের মত রোদ্দুর’ও মাফ করে দিল। ব্রেকফাস্ট সারতে সারতে তারা আলোচনা করে নিল, কোথায় কোথায় ঘুরবে। হাতে যেহেতু সময় কম তাই সিদ্ধান্ত নিল, প্রায় ১.৫ কিলোমিটার লম্বা এবং ১ কিলোমিটার চওড়া এই দ্বীপটাকেই তারা স্মৃতি হিসেবে নিয়ে যাবে।

মালদ্বীপে ছোট বড় প্রায় ১২০০ দ্বীপের অবস্থান। তারমধ্যে মালদ্বীপের রাজধানী মালে আইল্যান্ড অন্যতম। প্রায় সব পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণ এই আইল্যান্ড। হানিমুন কাপলদের জন্যও নাকি এই জায়গা উপযুক্ত— এমনটাই শুনেছিল ঝিলমিল।
রিসোর্ট থেকে বের হয়ে অবশ্য তার বাস্তব প্রমাণটাও পেল। চারিদিকে নারকেল গাছ ও সুপারি গাছে পরিপূর্ণ। এখানকার প্রকৃতি কিছুটা বাংলাদেশের সেন্টমার্টিনের মতো। সবচেয়ে চোখে পড়ার মত যে জিনিসটা তা হচ্ছে, এখানে সাগরের মাঝেও নগরায়নের ছোঁয়া। ছোটো ছোটো ঘরে, বাচ্চা-কাচ্চা, নারী-পুরুষ, তাদের সংসার!
ঝিলমিল আর রোদ্দুর রিসোর্টে ফিরে ইনফিনিটি পুলে গেল। এখানে বেশিরভাগ সবাই জলখেলায় মত্ত। ঝিলমিল এসবে অভ্যস্ত নয় তাই এককোণে গিয়ে দাঁড়িয়ে এখান থেকে মালদ্বীপের সৌন্দর্য খুঁজতে লাগল। কিছুক্ষণ পর কয়েক ফোঁটা পানির ছিটা গায়ে পড়ল… ভুল ভেবে পাত্তা দিল না। মিনিট দুয়েক পর অঝোরে ঝড়া বৃষ্টির মত পানি এসে তাকে ভিজিয়ে দিল। ঝিলমিল দেখল, একাজ রোদ্দুরের। সেও ছাড় দিল না… যতটুকু সম্ভব রোদ্দুরকেও ভিজিয়ে ছাড়ল। সেখানেই দু’জন অজান্তেই, অনিচ্ছাকৃতভাবে হৈ-হুল্লোড় করল। শেষে রোদ্দুর যখন ঝিলমিলকে একেবারে কাকভেজা করে দিতে যাচ্ছিল, ঠিক তখন ঝিলমিল ওর হাত থেকে বাঁচার জন্য একদৌড়ে নিজেদের রুমে চলে এলো। কিন্তু লাভ কি? রোদ্দুর’ও এলো তো পিছে পিছে।
ঝিলমিল মুখ ফুলিয়ে বলল, ‘অসভ্য কোথাকার। আমাকে ভিজিয়ে দিলি কেনো? কী সুন্দর প্রকৃতি উপভোগ করছিলাম, আমি তো একটু পর সাঁতার কাটতে যেতাম।’

‘তো এখানে চলে এলি কেন? চল।’
ঝিলমিল ভাবল, তাইতো সে চলে এলো কেনো? কান্ড জ্ঞানহীন মস্তিষ্ক মাঝেমধ্যে একদম’ই কাজ করতে চায় না।
কিন্তু এই কথা তো রোদ্দুরকে বলা যাবে না। একটু ভাব নিয়ে বলল, ‘আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই এসেছি। তোর কি সমস্যা তাতে? তুই কেন আমার পিছে পিছে এসেছিস?’

রোদ্দুর’ও একরোখা কণ্ঠে বলল, ‘আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই এসেছি। তুই এত বেশি কথা কেন বলিস?’

ঝিলমিল মুখ ঝামটে বলল, ‘আমার মুখ আছে আমি তাই কথা বলেছি। এটা আমার স্বাধীনতা… বাক স্বাধীনতা!’
রোদ্দুর ওর দিকে সরু চোখে তাকাল। মাথা নাড়িয়ে ঝিলমিলের কাছে এগিয়ে এসে নিজের কপালের উপর লেপ্টে থাকা ভেজা চুলগুলো পেছন থেকে সরিয়ে দিয়ে, শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভালোভাবে গুঁটিয়ে, দু’হাতে কলার ঝাঁকিয়ে ঝিলমিলের মুখটা দু’হাতের আজলায় নিয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে দীর্ঘ সময় নিয়ে চুমু গেল।
তারপর যখন ছেড়ে দিল তখন ঝিলমিল চোখ বড় বড় তাকিয়ে কিছু বলতে গেলে রোদ্দুর তর্জনী তার ঠোঁটে চেপে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজে বলল, ‘আমার মুখ আছে তাই আমি চুমু খেয়েছি। এটা আমার স্বাধীনতা… স্বামীগত স্বাধীনতা!’
ঝিলমিল তৎক্ষণাৎ রোদ্দুরের পিঠে কয়েকটা ধুমাধুম চাপড় মারল।
বলল, ‘বেয়াক্কেল কোথাকার! অভদ্র কোথাকার!’

রোদ্দুর চোখ টিপি দিয়ে বলল, ‘অভদ্র হয়েছি আমি তোমার’ই প্রেমে। কাছে আসো না… আরও কাছে আসো না।’
রোদ্দুর ঝিলমিলের ওড়নার প্রান্তদেশ ধরে টান দিয়ে নিজের আরও কাছে নিয়ে এলো। ঝিলমিল সরে গিয়ে বলল, ‘ধ্যাৎ… অসময়ে আমার সাথে এইরকম অসভ্যতামি করলে কিন্তু তোর সাথে আমার মারামারি হয়ে যাবে। এখানে এসে তোর সাথে মারামারি করি, এমন কিছু করিস না।’

‘ঠিক আছে, ঠিক আছে.. সময়ে করবনি।’
ঝিলমিল রোদ্দুরের দিকে এমনভাবে তাকাল যেনো চোখের দৃষ্টিতেই তাকে ভষ্ম করে ফেলবে।
.
ওরা বিচে সাঁতার কাটার মজা মিস করল না। লাঞ্চ শেষে সোজা তীরে চলে এলো। এখান থেকে ফেরিতে চড়ে তারা যাবে আইল্যান্ডের পূর্বদিকে ভারুনুলা রালহুগান্ধু’তে। ওখানে নাকি অদ্ভুত সুন্দর সূর্যাস্ত দেখা যায়।
এদের দু’জনকে দেখে কে বলবে, একটু আগে দু’জন ঝগড়া করে এসেছে! একদম গলায় গলায় মিল লাগিয়েছে… দেখে মনে হচ্ছে দুনিয়ার সবচাইতে ভদ্র, সভ্য, শান্ত কাপল; একদম মেড ফর ইচ আদার!
এমনিতেই ঝিলমিল বেশ সরল ও প্রাণোচ্ছল টাইপের মেয়ে। সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকাটা তার অভ্যাস। কিন্তু এই অভ্যাসটা হুটহাট পাল্টে যায়। তখন রোষপরবশ ভর করে তার মধ্যে, রোদ্দুরের অবশ্য ঝিলমিলের তেড়ে আসা ওই মারকাটারি ভাবটাই ভালো লাগে… আপন আপন লাগে। ওর এই রাগ, দুঃখ, অভিমান, জেদের বিপরীতে রোদ্দুরের বলতে ইচ্ছে করে, ‘তোকে শান্তভঙ্গিতে মানায় না। এই যে যখন দু’হাত কোমড়ে বেঁধে আমার সাথে ঝগড়া করতে আসিস না, তখন আমার সারা দুনিয়া একপাশে রেখে শুধু তোকে দেখতে ইচ্ছে করে। তুই যখন অভিমান করে কান্নাকাটি করিস, তখন সেই অভিমান আমার আরেকটু বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে যেনো তোর পানির সামান্য ছোঁয়া আমি পাই। তোর জেদি মনোভাবে আগুনে ঘি ঢালার মতো করে আরেকটু জেদ বাড়িয়ে দিতে চাই, যেনো তোর ওই কোমল হাতের স্পর্শ আমি পাই।’

এইতো শেষ বিকেলের সোনাঝরা রোদ শেষে সূর্যটা ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছিল, ঝিলমিল সেটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আবার রোদ্দুরকেও ইশারায় দেখাচ্ছে, হেসে হেসে কীসব যেনো বলছে; রোদ্দুর এত কথা কানে নিচ্ছে না। এত ভিড়, এত কোলাহল, এরপরেও একাকী নিঝুম দ্বীপের মত ঝিলমিলের দিকে তাকিয়ে আছে। বাঁধনহীন মন ওর দুই চোখের দৃষ্টিতে ডুবে আছে… প্রেমে পড়ার মত একটা মুহূর্ত।
ঝিলমিল হাসছে… ওর ঠোঁটের কোণে ওইরকম ঢেউ তোলা হাসি দেখে বুকের মধ্যে কাঁপন ধরা অনুভূতি হয়। ওর চোখের তারায় চাঞ্চল্য দেখলে, নৈঃশব্দ্যে মনের গহিনে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিটা বুক চিরে বেরিয়ে আসে।
.
ওরা ভারুনুলা থেকে সরাসরি রিসোর্টে এসে পৌঁছাল রাত আটটা নাগাদ। পুলের পাশে চেয়ারে বসে ঝিলমিল বাড়িতে কথা বলছিল। রোদ্দুর একটা শপ থেকে গিয়ে অরেঞ্জ জুস এসে দিল। নিজেও একটা নিয়ে বসে পড়ল। ঝিলমিলের কথা শেষ হতে ওকে জিজ্ঞেস করল, ‘কেমন লাগল আজকের দিনটা?’

ঝিলমিল উচ্ছ্বাসে গদগদ হয়ে বলল, ‘সেরা ছিল। এত ভালো লাগছে যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। গতকাল ফ্লাইটে মনে হচ্ছিল, আমার জীবনে এখানে আসার সিদ্ধান্তটা সবচেয়ে বড় ভুল। এখন মনে হচ্ছে, ছোট্ট এই জীবনে মাঝে মাঝে ভুল করার প্রয়োজন আছে।’

‘ভালো লাগলেই ভালো… আমাকে ছাড়া সবকিছুই তো তোর ভালো লাগে।’ রোদ্দুর চেয়ারে হেলান দিয়ে বলল।
ঝিলমিল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। সে কিছু বলার আগেই ঝড়ের গতিতে ডান পাশ থেকে একটা মেয়ে তাদের দিকে এগিয়ে এলো। ঝিলমিল প্রথমে তাকাল, ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে রোদ্দুর’ও তাকাল।
মেয়েটা রোদ্দুরকে দেখে আশ্চর্য ভঙ্গিতে হেসে উঠে বলল, ‘আরে রোদ্দুর… তুমি এখানে? তোমার সাথে যে আবার দেখা হবে ভাবতেই পারি নাই। বিশ্বাস’ই করতে পারছি না।’
রোদ্দুর উঠে দাঁড়াল। ওর মুখটাও হাসি হাসি।
এটা আবার কে?— ভাবছিল ঝিলমিল। সেও কৌতূহলী দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। দু’জনের অসহ্যকর হাসাহাসি দেখে মনে মনে বলল, ‘উমমম.. কী ঢং! ওরে বাবা, আবার দেখি হাত মিলায়। তলে তলে এতকিছু? কোনদিন তো আমাকে এমন মিষ্টি করে কিছু জিজ্ঞেস করে নাই, কোনো কথা বলে নাই। আর ওর সাথে এমন পিরিতি? উঁহু, এটা তো মানতে পারব না। সানিয়ার চ্যাপ্টার তো ক্লোজ, এটা তাহলে কোথা থেকে আমদানি হলো? কোন ক্ষেতের মূলা এই মেয়ে?’
.
.
.
চলবে….
কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৮৪৬