ঝিলমিল রোদ্দুরে পর্ব-৫৮

0
176

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-৫৮]
~আফিয়া আফরিন

রোদ্দুর ঘরে এসে দুঃখের, ঝিলমিল ঘুমাচ্ছে। অথচ সে সিনেমা হলে দু’টো টিকেট কেটে রেখেছিল, সন্ধ্যার শো দেখবে বলে। আজ আর যাওয়া হবে না… ঝিলমিলকে ডাকতে ইচ্ছে করল না।
চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে রোদ্দুর রান্নাঘরে গিয়ে এককাপ কফি বানাল। ঘরের মধ্যে খুটুরখাটুর শব্দে ঝিলমিলের ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। রোদ্দুরকে দেখে ঘড়ির দিকে তাকাল।
তারপর বলল, ‘কখন এসেছিস? আমিও যে কখনো ঘুমালাম? ডাকলেই হতো।’

‘ডাকতে ইচ্ছে করল না। এখনও কি মন খারাপ? বাইরে ঘুরতে যাবি?’

ঝিলমিল মাথা নেড়ে বলল, ‘না। কোথাও যাব না আর মনের অবস্থাও ভালো আছে।’

রোদ্দুর পাশে বসে বলল, ‘ভালো থাকলেই ভালো! এত মন খারাপ বোধহয় আমি আমাদের বিয়ের সময়ও তোকে করতে দেখি নাই। এমনিতে তুই রাগ করিস, ঝগড়া করিস, অভিমান করিস; আমি এসবের সাথে পরিচিত কিন্তু মনখারাপ করে থাকতে এই প্রথম দেখলাম!’
ঝিলমিল মিষ্টি করে হাসল। এখন পর্যন্ত রোদ্দুরকে ঘিরে কোন কিছু নেই মন খারাপ করার প্রয়োজন পড়ে নাই। তবে সে নিশ্চিত, অন্যান্য অনুভূতিগুলো যেমন রোদ্দুর খুব যত্ন করে এটাকেও করবে; আজ যেমন ঘুরতে নিয়ে যেতে চাইল।
সংসার জীবন এমনিই করে চলছিল। তবে আজকাল ঝিলমিলের মনে মান অভিমান বাসা বেঁধেছে। মনে হচ্ছে, রোদ্দুর আর আগের মত নাই। কথাবার্তার ভঙ্গি অথবা যেকোনো কারণেই রোদ্দুরকে অচেনা মানুষের মত মনে হচ্ছে। এইতো কিছুদিন আগেও যেরকম ছিল— কাজে ব্যস্ত থাকলেও ঝিলমিলকে ফোন করতে ভুলতো না, সন্ধ্যার পর বাইরে ঘুরতে যেত, সে সন্ধ্যার পরপরই বাড়ি ফিরত; এখন রোদ্দুর বাড়ি ফেরে আটটা নাগাদ।
মাঝে মাঝে রোদ্দুর অজান্তেই ওর মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঝিলমিল আকাশপাতাল ভাবনাচিন্তা করে। তার অন্যমনস্কতা, কপালের কুঞ্চন, চোখের দৃষ্টি, ক্লান্তি, ওর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি কিংবা দুষ্টুমি সবকিছুতে পরিবর্তন এসেছে।
ঝিলমিল সহ্য করতে পারে না। হয়ত ইদানিং তার কাজের চাপ বেশি, তাই বলে এতটা পরিবর্তন হতে হবে কেনো? রোদ্দুর যেমন ঝিলমিলের সাথে দুষ্টুমি করে, নানান বাহানায় ওকে মাতিয়ে রাখে, কত খুনসুটি; কোথায় এসব? তখন ঝিলমিলের খুব বিরক্ত লাগত— বিরক্ত লাগত, বলাও ভুল হবে কারণ ঝিলমিল বেশিরভাগ সময় বিরক্তির অভিনয় করত। ওর অসভ্যতামি, দুষ্টুমি, অত্যাচার সবটাই অভ্যাসে মিশে গেছে। এমনভাবে মিশেছে যে এখন একটু এদিক-ওদিক হতেই ঝিলমিলের সারা দেহ মন জুড়ে হাহাকার করছে।
ঝিলমিলেরও পরীক্ষা শুরু হয়েছে। একে তো পরীক্ষার চাপ তার উপর আবার রোদ্দুরের এই অত্যাচার সবকিছু মিলিয়ে দিশেহারা লাগছে। অসভ্যটাকে কতদিন ‘অসভ্য’ বলে না!
এতদিন যা পেয়ে অভ্যস্ত ছিল তা যদি হুট করে এইভাবে হারিয়ে যায়, তাহলে তো পাগল পাগল লাগবেই। রোদ্দুর ঘরে ফিরবে তারপর বোধহয় দায়িত্ব থেকে শুধু জিজ্ঞেস করবে, ‘আজকের পরীক্ষা কেমন দিলি?’

ঝিলমিল উত্তর দেয়, ‘ভালো দিয়েছি।’

রোদ্দুর তখন এই বিষয়ে একগাদা জ্ঞানী বুলি আওড়াতে শুরু করে, ‘বাকি গুলোর জন্য প্রিপারেশন নে। এই সময়টা খুব ইম্পরট্যান্ট, হেলাফেলায় নষ্ট করিস না। জীবনে যা কিছু অর্জন করতে চাইবি, সবটাই কিন্তু এই সময়ের উপর নির্ভর করছে।’
নিখুঁচি করেছে এসব অর্জনের। ঝিলমিল চেয়েছে নাকি এসব? পড়াশোনা করা দরকার, তাই সে পড়ছে না হয় কবেই সব ছেড়ে দিত! এমনিতেই তাঁর পড়াশোনা করতে খুউব বিরক্ত লাগে। বাড়িতে থাকতে তো পরীক্ষার আগেরদিন রাতে কোন রকম পড়ে পাশ করত। ওটাই তার কাছে অনেক ছিল। এখন তো তাও মাঝে মাঝে টুকটাক পড়তে বসতে হয়, রোদ্দুরের চাপে পড়ে।
ঠিক আছে, যা হচ্ছে হতে থাকুক। ঝিলমিল মুখ ফুটে কিছু বলবে না, কোনো অভিযোগ করবে না। সে চুপচাপ ভীষণ নিরবে নিভৃতে নিজের কাজ করে যেতে লাগল। আগে তো রাতে দু’জন একসাথেই খেতো, রোদ্দুর দেরি করে ফেললেও ঝিলমিল অপেক্ষা করতো; কিন্তু আজকের দিনটায় রোদ্দুর দেরি করেই ফিরল আর ঝিলমিলও না খেয়ে ওয়েট করছিল।
কিন্তু ফেরার পর রোদ্দুরকে যখন বলছিল খেয়ে নেওয়ার কথা তখন রোদ্দুর জবাব দিল, ‘আমি খেয়ে এসেছি।’

রাগে ঝিলমিলের ব্রক্ষতালু জ্বলে গেল। শান্ত মেজাজে বলল, ‘আজকাল বাইরে দেখছি খুব সময় কাটানো হচ্ছে। দিনে তো থাকাই হচ্ছে… আবার রাতেও! ভালোই।’

‘কাজকর্মের ব্যাপার আছে না।’

‘ও আচ্ছা।’
রোদ্দুর ঘরে চলল। সেদিন রাতে ঝিলমিল রাগে দুঃখে আর খাবার স্পর্শ করল না। পরপর দু’টো দিন ঝিলমিল আর রোদ্দুরের সাথে কথা বলল না। রোদ্দুর যে ব্যাপারটা খেয়াল করছে না, এটা ঝিলমিল বুঝেছে। ঠিক আছে, আজ না খেয়াল করুন কাল তো করবে। কতদিন আর খেয়াল না করে থাকবে?
সেদিন রাতেই অবশ্য খেতে খেতে রোদ্দুর বলল, ‘কি হয়েছে তোর? আজ সকালে ফোন করেছিলাম, ফোন রিসিভ করলি না। আবার কথাবার্তাও বলছিস না। কিছু হয়েছে?’

ঝিলমিল নির্বিকার কন্ঠে উত্তর দিল, ‘না।’

‘তবে? মন খারাপ কোনো কারনে?’

‘না। আমি চাইনা কেউ আমার জন্য বিরক্ত হোক। আমাকে ফোন করে, আমার খোঁজ নিয়ে অযথা কেউ কেন তার মূল্যবান সময় নষ্ট করবে?’

রোদ্দুর ভুরু কুঁচকে তাকাল। জিজ্ঞেস করল, ‘কথাটা কি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললি?’

ঝিলমিল জোর করে হেসে বলল, ‘কাউকে উদ্দেশ্য করে কোন কথা বলার ইচ্ছা নেই আমার। তবে যদি গায়ে লেগে যায়, তবে সে ক্ষেত্রে আর কি করতে পারি?’ তবে অভিমান এবং দুঃখে তার কন্ঠরোধ হয়ে এলো।

রোদ্দুর বলল, ‘তোর কি হয়েছে?’

‘এই প্রশ্নটা আমিও তোকে অনেকবার করেছিলাম কিন্তু তোর থেকে উত্তর পাই নাই। তাই আমার উত্তর পাওয়ার আশা করিস না।’
রোদ্দুর কিছুটা চমকে গেল। ঝিলমিল কখনোই এভাবে কথা বলে না। এত ঠান্ডা দৃষ্টি, এত শীতল কণ্ঠ!
রোদ্দুরের জানামতে, সজ্ঞানে সে কিছু করে নাই। তাই ঝিলমিলকে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, ‘আমি কি কিছু করেছি?’
দিনে-রাতে একটু একটু করে যে অভিমানের বোঝাটা ভারী হচ্ছিল আর যার কারণে ঝিলমিল নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছিল, তা বোধহয় রোদ্দুরের একটা কথায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।
সে খানিকটা চেঁচিয়ে বলল, ‘না তুই কিছু করিস নাই, তুই ধোঁয়া তুলছি পাতা। যা করার সব আমি করেছি। আমি হলাম আস্ত একটা ঝামেলা। হয়েছে? উত্তর পেয়েছিস? যা এখন আমার চোখের সামনে থেকে।’
রোদ্দুর সত্যিই খতমতো খেয়ে গেল। ঝিলমিলের থেকে এমনটা আশা করে নাই। এতদিন শান্ত থেকে আজ এইভাবে ফুঁসে উঠল— তারমানে ভয়ংকর কিছু হয়েছে। রোদ্দুর মোটেও আন্দাজ করতে পারল না।
ইদানিং তার কাজের চাপ বেশি, সেটা সমস্যা না। কিন্তু ঝিলমিলের যেহেতু পরীক্ষা চলছে, তাই সবকিছু থেকে সে দূরে আছে। প্রতিদিন দুপুর নাগাদ কতবার যে আপনাকে ফোন করতে গিয়ে ফোনটা হাত থেকে নামিয়ে রেখেছিল, তার ইয়ত্তা নেই। ভেবেছে, ঝিলমিল হয়ত মাত্র বাড়ি ফিরল। এখন একটু রেস্ট নেবে, খাওয়া-দাওয়া করবে; এখানে রোদ্দুরের বিরক্ত করাটা ঠিক হবে না। এই কয়েকদিন নিজের মত থাকুক!
সন্ধ্যার পরের সময়টা ঝিলমিলের সাথে কাটিয়ে অভ্যাস হয়ে গেছে, ওকে বিরক্ত না করলে তার ভালো লাগে না। তাই সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরে না। আবার কখনো বাহিরে খেয়ে নাই, যেনো আলাদা করে রোদ্দুরের জন্য ঝিলমিলের সময় নষ্ট না হয়!

আর এখানে ঝিলমিল? সে কি বুঝেছে কে জানে? রোদ্দুরের মাথাতেও আসে নাই, ঝিলমিল রাগ করতে পারে কিংবা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে!
উফফফ— রোদ্দুর কপাল চাপড়াল। কোনোমতে খাওয়া শেষ করল। ঝিলমিল অনেক আগেই উঠে গেছে। রোদ্দুর’ও সে পথে দৌড়াল। ঘরে গিয়ে দেখল ঝিলমিল একটা বই নিয়ে বসেছে। পড়ছে কিনা জানা নেই তবে মনোযোগ বইয়ের পাতায়। রোদ্দুর গিয়ে ঝিলমিলের পাশে বসল, কাঁধে হাত রাখল। ঝিলমিল এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিল। বলল, ‘আমাকে বিরক্ত করিস না, কাল আমার পরীক্ষা। আমি পড়ছি।’
রোদ্দুর থামল না, সে যা বলার বলে গেল। এসব পড়াশোনা, পরীক্ষা, কাজকর্ম সব চুলোয় যাক— বউ রাগ করেছে, বউয়ের রাগ ভাঙাতে হবে। রোদ্দুর এতকিছু বলার পরেও ঝিলমিলের যখন কোন প্রতিক্রিয়া দেখতে পেল না তখন হতাশ কণ্ঠে বলল, ‘তুই বুঝলি না আমাকে!’
এতক্ষণ বুকের মধ্যে চেপে রাখা অভিমান এইবার টুপটাপ করে চোখের অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ল। ঝিলমিল যথাসম্ভব চেষ্টা করল, নিজেকে লুকিয়ে রাখতে কিন্তু পারল না।
রোদ্দুর ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল, ‘নিজে কি খুব সুখে আছিস? এইতো কান্নাকাটি করছিস? একবার আমাকে বোঝালে হতো না? আমি স্বীকার করে নিচ্ছি আমি বোকা, আমি এত সহজে কিছু বুঝি না। একবার যদি তুই মুখ ফুটে বলতি… আমি তো তোর ভালোর জন্য….’

বাকি কথা শেষ করতে দিল না ঝিলমিল। বাষ্পাচ্ছন্ন কন্ঠে বলল, ‘অনেক ভালো করেছিস আমার। দয়া করে, আরেকটু ভালো কর প্লিজ। আমার সাথে কথা বলিস না তুই।’

রোদ্দুর খুব গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বলল, ‘কথা না বলে থাকতে পারব? এটা সম্ভব?’

‘সম্ভব! যে দু’দিন কথা না বলে থাকতে পারে, সে সারাজীবন পারে। তার কথা বলার প্রয়োজন নেই। অন্যের প্রয়োজন যে গুরুত্ব দেয় না, তার কথা আমি শুনতে চাই না। তুই অনেক পাল্টে গেছিস… যদি আগের মত করে আমার সমানে ধরা দিতে পারিস তবেই কথা বলবি, তার আগে নয়… কখনোই নয়।’

রোদ্দুর কান ধরে বলল, ‘আই এম ভেরি সরি।’
ঝিলমিল মুখ ফিরিয়ে নিল। তার লাগাম ছাড়া অভিমান আর রোদ্দুরের রাগ ভাঙানোর বেহিসেবি চেষ্টার মাঝে রাতটা ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে গেল।
.
ঝিলমিল নিজের ঠাট বজায় রাখল। এত সহজে রোদ্দুরের সাথে কথা বলল না। পাহাড় সমান হতাশা নিয়ে হতাশা বুকে চেপে অফিসে রওনা হলো। ঝিলমিলও নিজের মত পরীক্ষা দিতে চলে এলো। আর মাত্র দু’টো পরীক্ষা আছে, তারপর মুক্তি!
দুপুরের পর বাড়ি ফিরে ঝিলমিল অবাক হলো। সারা বাড়ি জুড়ে, এখানে ওখানে সবখানে রংবেরঙের স্টিকি নোট দেওয়লে লাগানো। সে ভুরু কুঁচকে এগিয়ে এলো। ডাইনিং রুমে সব কয়টা স্টিকি নোটে লেখা ‘Sorry, I am extremely sorry.’ ঝিলমিল বেডরুমে এগিয়ে এলো। এখানে প্রতিটা নোটে লেখা রয়েছে, ‘I love you very much.’
ইশশশ আহ্লাদ! এসব রংঢং দেখলে বিরক্ত লাগে। পুরো ঘরটার কী বাজে অবস্থা করে রেখেছে। ঝিলমিল একে একে সবগুলো নোট খুলতে লাগল। এত আহ্লাদ সহ্য হয় না মানুষের। পাহাড় সমান অন্যায় করে এখন আসছে ‘সরি’ বলতে! যত্তসব।
ঠিক সেইসময় ঝিলমিলের ফোনে একটা ফোন এলো। আননোন নম্বর; ঝিলমিল ফোন রিসিভ করল।
ওপাশ থেকে কেউ একজন হন্তদন্ত গলায় বলল, ‘ভাবী আপনি রোদ্দুরের সাথে কথা বলছেন না? আল্লাহ! সেই শোকে দুঃখে বন্ধু আমার পাথর হয়ে গেছে ভাবী। আপনি প্লিজ ওর সাথে ইমারজেন্সি কথা বলেন। এমন একটা অবস্থা যে রোদ্দুর এখন নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। আপনি হচ্ছেন এই মুহূর্তে অক্সিজেন। প্লিজ ওরে ফোন দেন, একটু কথা বলেন।’

ঝিলমিল হাসানের কণ্ঠ শুনে চিনতে পারল। অবাক হয়েছিল তবে সেটা প্রকাশ না করে বলল, ‘ভাইয়া আপনি কি আপনার বন্ধুর হয়ে আমার কাছে সুপারিশ করছেন? কোনো লাভ হবে না।’

‘না ভাবী সুপারিশ একদম না। ওর হয়ে সুপারিশ করা মানে হচ্ছে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারা। আমরা তো সেটা কখনোই করতে পারব না। আমি তো আপনাকে ফোন করতেই চাই নাই। রোদ্দুর এলো, বলতেছে সে নাকি ইঁদুর মা’রার বি’ষ কিনে খাবে আপনি যদি ওর সাথে কথা না বলেন।’

‘আচ্ছা ভাইয়া, ও কোথায়? ওকে বাসায় আসতে বলেন।’

‘যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার রাগ না ভাঙ্গে ততক্ষণ পর্যন্ত রোদ্দুর বাসায় যাবে না। আপনি ওকে ফোন করেন, তারপর কথা বলেন।’
ঝিলমিলের হাসি পেল। বেচারা গিয়ে বন্ধুদের সাথে দুঃখ শেয়ার করছে। ঝিলমিল ফোন রেখে দিল তবে রোদ্দুরকে ফোন করল না। রোদ্দুর বাড়ি ফিরল সন্ধ্যায় সাথে তার বন্ধুরাও আছে।
হাসান বলল, ‘রোদ্দুর একা একা বাড়িতে আসতে ভয় পাচ্ছিল তাই আমরা নিয়ে এলাম ওকে।’
রোদ্দুর কটমট দৃষ্টিতে তাকাল আর ঝিলমিল হেসে উঠল। বলল, ‘কিছু কিছু মানুষ যে কী চায় সেটাই বুঝিনা।’
ঝিলমিল তখন ঘরে থাকা সবগুলো স্টিকি নোট খুলে ফেলেছিল। রোদ্দুর ঘরের চারিপাশে তাকাল। এত কষ্ট করে আজকের দিনটা অফিসে না গিয়ে এসব করল আর ঝিলমিল তার পাত্তাই দিল না। নিশ্চয়ই রেগেমেগে নিচে গিয়ে নর্দমায় ফেলে দিয়েছে।
ঝিলমিল গেল চা বানাতে। চা খেয়ে গল্পগুজব করে বিদায় নিতে নিতে সন্ধ্যা সাতটা পার হলো। যাওয়ার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে হাসান বারবার বলল, ‘ভাবী আমরা চলে গেলে আপনি কিন্তু রোদ্দুরকে কিছু বলবেন না। আর ওর সাথে রাগারাগি করবেন না, প্লিজ। বেচারা বহুয অসহায় হয়ে পড়েছে। কান্নাকাটি করে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে, মুখটা কী মলিন, বিষন্ন, চেহারায় রুক্ষতা। রোদ্দুর কিন্তু এমন ছিল না। আপনি কথা বলছেন না বলেই এই অবস্থা! এত কষ্টে যখন চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে যাবে, তখন বুড়ো বর নিয়ে সংসার করবেন কীভাবে?’
হাসান আরও কিছু বলত, কিন্তু রোদ্দুর যেইহরে চোখ গরম করে তাকাল, তাই কিছু বলার সাহস পেল না।
এইদিকে ঝিলমিলের হাসি পাচ্ছে। রোদ্দুরের অবস্থা হয়েছে বাচ্চাদের মত; কার কার কাছে যে নালিশ করে বেরাচ্ছে!
বাকিরা আগেই নিচে নেমে গিয়েছিল, হাসানও যাচ্ছিল। রোদ্দুর শূণ্যে তাকিয়ে ঝিলমিলের উদ্দেশ্য বলল, ‘আমি যাই, ওদের এগিয়ে দিয়ে আসি।’
বলেই দু’পা বাহিরে রেখেছে, তৎক্ষণাৎ ঝিলমিল পেছন থেকে রোদ্দুরের কলার টেনে ধরে ভেতরে নিয়ে এসে বলল, ‘এই ব্যাডা, তুই যাচ্ছিস কোথায়? আয়, ভেতরে আয়।’
.
.
.
চলবে….
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৮১৬