ঝিলমিল রোদ্দুরে পর্ব-৭+৮

0
487

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-০৭]
~আফিয়া আফরিন

আজ শুক্রবার। অন্যান্য দিনের চাইতে একটু আলাদা, তবে রোদ্দুরের জীবনে আজকের দিনটা পুরোপুরি আলাদা। জীবনের সবচেয়ে বড় একটা সিদ্ধান্ত আজকের দিনে পরিপূর্ণ হতে যাচ্ছে। রোদ্দুর তার জীবনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে, তাই ভালো খারাপ কিছুই তার মাথায় খেলছে না। এখন একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে, যে করেই হোক সানিয়াকে তার’ই পেতে হবে। ঠিক বাচ্চাদের আজগুবি জেদের মত হয়েছে তার ধারণা!
নামাযের পর সে বন্ধুদের নিয়ে কাজী অফিসে চলে এলো। সানিয়া তখনও আসে নাই। রোদ্দুর ওকে ফোন করল অনেকবার, কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে বারবার। হন্যে হয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। বন্ধুরা অধৈর্য হয়ে পড়ল। হাসান বলল, ‘তুই কি সানিয়াকে ফোন করেছিস?’

রোদ্দুর কথা বলল না। সানিয়া যে আর আসবে না, এটা সে এতক্ষণে বুঝে গেছে। ওর নীরবতা লক্ষ্য করে আরেকজন বলল, ‘সানিয়া কি আজকের শুক্রবার’ই ভেবেছে নাকি…’
রোদ্দুর তাকে পুরো কথা শেষ করতে দিল না। বেশ শান্তভাবেই বন্ধুদের উদ্দেশ্য বলল, ‘যে যার মত বাড়ি ফিরে যা। এখানে আর তোদের কোনো কাজ নেই।’ মাত্র এইটুকু কথা সে বলল। কাউকে কিছু বলারও সুযোগ দিল না। সবাইকে পেছনে ফেলে নিজেই এগিয়ে গেল নিজের গন্তব্যে।

মনের ভেতরকার অসহনীয় অনুভূতি থেকে রোদ্দুরের কপালের দু’পাশের শিরা দপদপ করছিল। সব ঠিকঠাক ছিল কিন্তু শেষে সানিয়া এই খেলা খেলল? যে মানুষটা তার না, কোনোদিন হয়ত ছিল’ই না, এতদিনের ভালোবাসাও যেখানে মিথ্যে, যার কাছে সব ছেলেখেলা, তাকে পাওয়ার জন্য নিজের সাথে যুদ্ধ করে এতকিছু করে ফেলল! আর সে, সামান্য দয়া-মায়াটুকু নেই।
গতকাল রাতেই তানভীরের একটা এসএমএস এসেছিল রোদ্দুরের কাছে। সেখানে লেখা ছিল— “আগামীকালের জন্য শুভকামনা! আনন্দে পরিপূর্ণ জীবন খুব শীঘ্রই হতাশায় পাল্টে যাবে। আমি বলছি, একশত ভাগ নিশ্চিত হয়ে। আমি যা একবার নিজের করে পেতে চাই, তা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে নিজে অর্জন করে নিই। যাইহোক, অবশ্যই তোমার জীবনের জন্য আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন রয়েছে। ভালো থেকো।”
রোদ্দুর এই এসএমএস’টার অর্থ বোঝার চেষ্টা করে নাই তখন। কিন্তু এখন হলফ করেই বুঝে গেল। কী আশ্চর্য! সানিয়ার মনে যখন এই ছিল, তখন সে সরাসরি বলল না কেনো? রোদ্দুর কখনোই তাকে জোর করে ধরে রাখতে চাইতো না। বন্ধুদের বিষয় বাদ যাক কিন্তু নিজের কাছে আজ যে অপমানিত হলো সে, সচিব অপমানের জবাব তো সানিয়াকে দিতেই হবে।
রোদ্দুর ওখান থেকে ফিরে নিজের ফোন বন্ধ করে রেখেছিল। কোনো প্রয়োজনে ফোনের আশেপাশেও ঘেঁষে নাই। আজকের দিনটার কথা ভাবতেই মন-মেজাজের তারতাম্য ঘটছিল। সানিয়া আসে নাই— এই বিষয়টা তার জন্য যতটুকু না কষ্টের তারচেয়েও বেশি কষ্টের হচ্ছে— তানভীরের কাছে এইভাবে হেরে যাওয়াটা। নিজের মনেই সে অবাক হয়ে ভাবতে লাগল, তবে কি সত্যিকার অর্থে সানিয়াকে সে ভালোবাসে নাই? সানিয়ার দিক থেকেও কি একইরকম কাহিনী? শুধুমাত্র নিজের জেদের কাছে জিতে যাওয়ার জন্য রোদ্দুরের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া?
এইমাত্র রোদ্দুরের মাথায় খেলল, সে একটা হারা খেলা এতদিন টেনে নিয়ে এই পর্যন্ত গড়িয়েছে। এতকিছু তো হওয়ার কথা ছিল না। আগে বুঝলে বিষয়টা এক চুটকিতেই মিটিয়ে ফেলা যেত।
তবে এতকিছুর মাঝেও মন টিকছে না। সানিয়াকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করল, এসব নাটকের মানে কি?
.
কাজী অফিস থেকে বন্ধুরা সবাই নিজেদের বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। রোদ্দুরকে ফোনে অনেকবার ট্রাই করেছিল, কিন্তু তখন তার ফোন বন্ধ। বাড়ি আসার চিন্তা-ভাবনাও করেছিল, তারপর আবার কি মনে করে এলো না। যে যতই ব্যস্ত থাকুক না কেনো, শুক্রবার সন্ধ্যায় বন্ধুরা তাদের নির্দিষ্ট স্থানে এসে হাজির হবেই হবে। মাস্ট, আজ আড্ডা তাদের দিতেই হবে। স্থানীয় টি স্টলের পা তাদের খেতেই হবে। সবাই সময়মত চলে এসেছিল, রোদ্দুরকে পাওয়া গেল না। ফোন করেও তার হদিস মিলল না।
আবীর বলল, ‘রোদ্দুরের কাহিনী আমি কিছুই বুঝলাম না। বিয়ে করার জন্য নিজেই খুব লাফালাফি করল। সবকিছু তো ঠিকঠাক’ই ছিল। তবে মত চেঞ্জ করল কেন?’

হাসান গভীর ভাবে কিছু একটা ভেবে বলল, ‘যদিও আমি ব্যাপারটা জানি না তবুও ধারণা করতে পারি। নিশ্চয়ই সানিয়া গন্ডগোল বাঁধিয়েছে। এই মেয়ে তো তালের পাগল ভাই। রোদ্দুরকে এত বুঝিয়েছি, কিন্তু ও বুঝল না। পরে অবশ্য আর কিছু বলি নাই এই নিয়ে, কারণ যদি আবার ভাবে ওর গার্লফ্রেন্ড সম্পর্কে ওকে উল্টাপাল্টা কথা বলছি। আরে ভাই, ওই মেয়েটাকে আমি তানভীরের সাথে যতবার দেখেছি ততবার তো রোদ্দুরের সাথেও কখনো দেখি নাই।’

‘আমাদের উচিত এই সময়টায় রোদ্দুরকে বোঝানো। যে গেছে, তাকে যেতে দেওয়াই ভালো। আশা করি, এইবার সে বুঝবে; এতদিন দুধকলা দিয়ে কালসাপ পুষেছে। উঠ সবাই, ওর সাথে দেখা করে আসি। আমরা সবাই মিলে গেলে নিশ্চয়ই আমাদের তাড়িয়ে দিবে না।’
সবাই উঠল। রোদ্দুরের বাড়ির দিকে রওনা হলো‌। কিন্তু রোদ্দুরকে ওর বাড়িতে পাওয়া গেল না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল ওখানেই। সৌভিক আশেপাশে তাকিয়ে দেখছিল, তার সেই সেদিনের ক্রাশকে দেখা যায় কিনা! কিন্তু দেখতে পেল না। মনে মনে হতাশ হলো। ওরা সিদ্ধান্ত নিল আরোও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে। তাই যে যার মত সিঁড়িতে বসে পড়ল। যখন’ই হোক না কেন রোদ্দুর ফিরবে তো!

ওইদিকে বাসায় বসে থেকে ভালো লাগছিল না রোদ্দুরের। বের হওয়ার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে দেখল সেখানে কেউ নেই। ফোনটাও সাথে আনে নাই যে ফোন করে খোঁজখবর নিবে। অবশেষে সে ক্লান্ত পথিক হয়ে একলা একলাই অনেকক্ষণ পথচারণ করল। হাঁটতে হাঁটতে মিরপুরের এইদিকে চলে এলো। আবার হেঁটেই নিজেই গন্তব্যে ফিরল। তখন রাত বাজে দশটা। আরও কিছুক্ষণ বাহিরে কাটানোর প্রয়াস চালিয়ে গেল কারণ ঘরে ঢোকা মাত্রই যেনো ঘুম এসে যায়। এই ক্লান্ত শরীরে আর রাত জেগে মনের কষ্ট বাড়াতে চায় না।
রোদ্দুর যখন ফিরবে তখন সাড়ে এগারোটা। এখনও চারিপাশ আলোয় আলোকিত। সে লিফটে নিজের ফ্লোরে আসতেই সিঁড়িতে চোখ পড়ল। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গাধা গুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। এগিয়ে এসে সকলের উদ্দেশ্যে বিশ্বাস করল, ‘তোরা সবাই এই সবাই এখানে? তাও আবার এই অবস্থায়?’

সৌভিক ধরফর করে উঠে বসল। এতক্ষণ রাজের গায়ের সাথে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করতে করতে প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিল। রোদ্দুরের কথা শুনে বলল, ‘সকাল হয়ে গেছে? মাত্রই না ঘুমালাম।’
রোদ্দুর’ও ওদের পাশে বসে পড়ল। হাসান সৌভিকের উদ্দেশ্য বলল, ‘শালা টাল! নিশ্চয়ই এতক্ষণ ঘুমের মধ্যে লাল পানি খেয়েছে। তার ইফেক্ট বাস্তবে পড়ছে।’

রোদ্দুর পুনরায় প্রশ্ন করল, ‘কিন্তু তোরা এখানে কেন?’

‘দোস্ত সেই সন্ধ্যা থেকে তোমার অপেক্ষা করছি। এখন ঘুম ধরেছে। তুই যেয়ে দরজা খোল। এখন আর বাড়ি ফিরে যাওয়ার শক্তি নেই। শালা কই মরছিলি?’

‘এখানেই ছিলি তোরা সব? মানুষজন চোর মনে করে দৌড়ানি দেয় নাই?’

‘আমাদের কোয়ালিটি এতটাও খারাপ না যে আমাদের দেখে চোর মনে হবে। বর্তমানে তোকে দেখে কি মনে হচ্ছে জানিস?’

‘কি?’ রোদ্দুর চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।

‘তোকে দেখে মনে হচ্ছে পাক্কা ছ্যাঁকা খোর।’ এটুকু বলেই হাসান অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। হাসি তো ছোঁয়াচে রোগ। ওর দেখাদেখি বাকিরা হেসে উঠল। হঠাৎ হাসি থাকলে আদিয়াত জিজ্ঞেস করল, ‘তোরা হাসছিস কি জন্য?’

‘তুই যে কারণে হাসছিস। হেহেহ।’

‘আমি কেন হাসছি?’ আদিয়াত বোকার মত প্রশ্ন করল।
এইবার রোদ্দুরকে ছেড়ে অট্টহাসি শুরু হলো আদিয়াতকে নিয়ে। রোদ্দুর ওদের মাঝ থেকে উঠে দাঁড়াল। এরা সবগুলো চিরিয়া। কখন কি করে নিজেরাও জানে না। রাতটা সবাই ওখানে থাকার বন্দোবস্ত করল। কারো আর এত রাতে ঠান্ডার মধ্যে বাড়ি ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। একটা মাত্র ঘরে এতগুলো মানুষ যে কীভাবে চাপাচাপি করে ছিল, সেটা ভাবলেও হাসি পায়।
.
ঝিলমিল চেয়েছিল এই সময় বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কোথাও ঘুরতে যাবে। সবাই সেই পরিকল্পনাই করছিল। ঝিলমিল’ও বহুত খুশি। আগে কখনও সেইভাবে বাহিরে যাওয়ার অনুমতি পায় নাই ছোটো ছিল বলে। এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে, এখন নিশ্চয়ই বাড়ি থেকে আর বাঁধা দিবে না। খুশিমনেই ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরছিল। বাড়ি এসে মাকে কথাটা বলতেই তিনি বললেন, ‘আমি জানি না কিছু। তোর বাবার কাছে গিয়ে বল।’
ঝিলমিল বাবাকে গিয়ে বলতেই তিনি তৎক্ষণাৎ নাকোচ করে দিলেন। একা একা মেয়েকে ছাড়তে নারাজ।
ঝিলমিল অনুরধের সুরে বলল, ‘প্লিজ বাবা। আমি তো একা একা যাচ্ছি না। আমার বন্ধুরা সকলেই আছে। এমনকি শিউলিও থাকবে।’

‘না মা। সম্ভব নয়। যাও দেখি, আমার কাজ আছে।’
ঝিলমিল তবুও নানাভাবে বায়না করতে লাগল। মা-বাবা এমনকি বাড়ির অন্যকেউ’ও রাজি হলো না। দাদিকে গিয়ে সকলের নামে নালিশ করল। দাদি হেসে বললেন, ‘বিয়ের পর বরের সাথে ঘুরতে যাবি। এখন বাড়িতেই থাক দাদু।’

‘তো দিয়ে দাও আমার বিয়ে। আমি আমার বরের সাথে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াব। বসিয়ে রেখেছ কেনো আমাকে? তোমার ছেলের বউ আমায় আগে বলত, এখন তুই ছোটো যখন বড় হবি তখন ইচ্ছেমত ঘুরবি। আর এখন যখন আমি বড় হলাম তখন বলে, বড় মানুষের আবার কীসের বাচ্চাদের মত আহ্লাদ। তোমরা বলো, আমি এখন কি করব?’ ঝিলমিল চেঁচামেচি করতে লাগল।

রেহানা খাতুন ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা, তাহলে পাত্র দেখব?’

‘শুধু দেখবা কেনো? দেখার সাথে সাথে আমার বিয়েটাও দিয়ে দাও। আমি থাকব না তোমাদের এই বাড়িতে। তোমরা সবাই স্বার্থপর, পাষন্ড, নিষ্ঠুর।’ ও রাগে গজগজ করতে করতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। দক্ষিণের বারান্দায় আসতেই রিমঝিমের সাথে দেখা হয়ে গেল। রিমঝিমকে জিজ্ঞেস করল, ‘তুই কি এই বাড়িতে খুব শান্তিতে আছিস?’

‘হ্যাঁ আছিই তো।’

‘কেনো আছিস? আমি শান্তিতে নেই তুই কেনো একা শান্তিতে থাকবি?’

‘ওমা! তোমার কি হয়েছে আপু? এরকম রেগে আছো কার উপর? কে কি বলেছে তোমাকে? ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি দেয় নাই?’

‘না।’

রিমঝিম মন খারাপ করে বলল, ‘ওহ। এইদিক দিয়ে আমিও অবশ্য একটু অশান্তিতে আছি। ভাইয়ার কী শান্তি! ও সবকিছু করতে পারছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না। থাক, মন খারাপ করো না।’
ঝিলমিল সিদ্ধান্ত নিল, বাড়ির কারো সাথেই সে আর কথা বলবে না। দু’চোখ পৃথিবীর যে প্রান্তে যায় সেখানেই চলে যাবে। কিন্তু কোথায় যাবে এই কনকনে শীতের মধ্যে? ইশশশ, তার যে কেনো পার্মানেন্ট কোনো থাকার জায়গা নেই!
.
রোদ্দুর সবাইকে ডেকে তুলল। রাতে কারোর’ই ঘুম ভালো মত হয় নাই। রোদ্দুর সকালে ফোন ওপেন করেছিল‌। তার অবোধ মন হয়ত ভেবে নিয়েছিল, সানিয়ার একটা ফোনকল বা এসএমএস আসবে। কিন্তু পুনরায় তাকে আশাহত হতে হলো। কললিস্ট ঘেঁটে দেখল ছোট চাচ্চু, আর মা-বাবা ফোন করেছিল। তাদের সাথে কথা বলে বন্ধুদের পাকড়াও করল।
জিজ্ঞেস করল, ‘এখন বল, তোরা কীসের উদ্দেশ্য এসেছিস?’

আদিয়াত বলল, ‘তোর বিয়ের ঘটকালি করতে চাচ্ছি। শোন, তোর যখন এতই বিবাহের শখ তবে আমার হাতে একটা বিবাহযোগ্যা পাত্রী আছে।’

‘আমি বলেছি তোকে যে আমার বিয়ে করার শখ!’

‘না না ওসব আমাদের বলতে হবে কেনো? আমরা বুঝি না নাকি! মানুষের একটা বয়স আছে, সে বয়স পার হয়ে গেলে বুড়ো বয়সে বিয়ে করে কোনো লাভ নাই। শোন, আমার বউয়ের একটা চাচাতো বোন আছে; দেখতে শুনতে ভালোই। তুই চাইলে….’

রোদ্দুর ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘বাদ দে, আমি আর বিয়েশাদী করব না।’
এরপর রোদ্দুর আর কোনো কথার বলার সুযোগ দিল না। কাজের দোহাই দিতেই একেকজন বেড়িয়ে গেল। আজ শনিবার, তার অফ ডে। আপাতত কোনো কাজকর্ম নাই। একা থাকতে ইচ্ছে করছিল, তাই সবাইকে বিদায় করে দিয়েছে। আবার একা থাকলেই ঘুরে ফিরে সেই সানিয়ার বিশ্বাসঘাতকতার কথা মনে পড়ছে। ভালোবাসার মত একটা অপার্থিব সুর তার ভেতরটাকে আটকে ধরেছে। ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে বুকের ভিতরে। একজন মানুষের জন্য সীমাহীন মায়া সবকিছু চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিচ্ছে। সেই ধ্বংসযজ্ঞে মিশে রয়েছে আর্তনাদের তীব্র ছোঁয়া।
নাহ, এভাবে ভালো থাকা যাবে না….. বেঁচে থাকা যাবে না। এই শহরে বারবার ওর কথা মনে পড়ে যাবে, ওর বিশ্বাসঘাতকতা বারংবার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে।
.
.
.
চলবে…..

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-০৮]
~আফিয়া আফরিন

এরপর বেশ কিছুদিন কেটে গেল। রোদ্দুর তার জীবনের আগের নিয়মে ফিরে গিয়েছে। এই কয়েকদিনে সানিয়ার সাথে একবার’ও দেখা বা কথা হয় নাই। তবে খোঁজ পেয়েছে, ভালোই আছে। নিজে থেকেও রোদ্দুরের কাছে ফোন করে নাই। যাইহোক, সে তার জীবন নিয়ে ভালো থাকুক।
রোদ্দুরের এখন ব্যাপক ব্যস্ততা। দিন ছোটো হওয়ায় কাজেকর্মে কখন যে সময় চলে যায়, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাওয়া যায় না। আর সন্ধ্যার পর তো বন্ধুদের সাথে আড্ডা আছেই‌। তারপর বাড়ি ফিরে এসে নিজের জন্য হালকা পাতলা রান্নাবান্না করে খেয়ে মা-বাবার সাথে ফোনে কথা বলে। এরপর আরও বেশ কিছুক্ষণ ফেসবুক স্ক্রলিং চলে। তারপর তো এক ঘুমে রাত কাবার। ভেবে দেখছে এই জীবনটাও মন্দ নয়। একটু অন্যরকম। আগে কাজের ফাঁকে সানিয়ার সাথে কথা বলতে হতো, সবসময় নিজের মধ্যে একটা উতলা ভাব ছিল, মাথাভর্তি দুঃশ্চিন্তা ছিল ওকে নিয়ে। তার জেগে কথা বলতে হতো, ন্যাকামি প্রশ্রয় দিতে হতো; এইরকম আরও কত কী! এখন নিজের একলা নির্ভেজাল জীবন।
সে ভেবেছে, আর বিয়েই করবে না কোনোদিন। এইরকম একলা একলা থাকবে, যা ইচ্ছে তাই করবে— শান্তির জীবন। ‘বিয়ে’ শব্দটাই সহ্য হয় না ইদানিং। মা কথায় কথায় আজকাল বলে, ‘এইবার ঘরে একটা লাল টুকটুকে বউ নিয়ে এসে আমার ঘরটা পূর্ণ করব।’
মা তো বলবেই! নির্দিষ্ট একটা বয়সের প্রতিটা মা-বাবাই তার সন্তানের একটা গতি করতে চায়। তবে রোদ্দুর গায়ে মাখে না। এসব কারণে বাড়িও যাচ্ছে না, অথচ বাড়ির জন্য মন টানছে।
এই বছরের আর মাত্র ক’টা দিন রয়েছে। সামনের বছর গিয়ে বরং সবাইকে চমকে দেওয়া যাবে— নতুন বছরের নতুন শুভেচ্ছা হিসেবে!
.
এই বাড়িতে এখন বড় মেয়ে হিসেবে ঝিলমিল’ই রয়েছে। ওর পরে রিমঝিম আর সবার শেষে তানিশা। তাই ঝিলমিল আপাতত সময়ের জন্য বড় হওয়ায় আগের গুলো যেমন তার ছু’ড়ি চালিয়েছে, এইবার সেও ছোটোদের সাথে তাই করছে। আপু আর দুলাভাই বেড়াতে আসবে, ঘরবাড়ি সব পরিষ্কার করার দায়িত্ব পড়েছে তাদের উপর। কিন্তু ঝিলমিল কিছুই করছে না। ছাদে কড়া রোদে বসে নখে নেইলপলিশ দিচ্ছে আর ছোটোদের অর্ডার করছে। রিমঝিম এইবার এইচএসসি দিল, তাই তার হাতে অফুরন্ত সময়। আর তানিশা ক্লাশ টেনে, তার বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। ঝিলমিলের কাছে বারবার এসে বলছে, ‘আপু আমার তো পরীক্ষা। আমি এইবার পড়তে যাই?’

ঝিলমিল ধমকে বলছে, ‘পড়াশোনার দোহাই দিয়ে তুমি যে এখন ঘরে গিয়েই ফোনের মধ্যে ঢুকে যাবা, এইটা আমি বুঝি। আমাকে এসব বাহানা দিয়ে লাভ নাই। যা গিয়ে সবগুলো কাজ করবি। আচ্ছা, তোর যেহেতু পরীক্ষা তাই তোকে আপুর ঘরটা গোছাতে হবে না। এই কাজে ছাড় দিলাম। এটা আমি করে নিব। এখন যা সামনে থেকে।’
তানিশা মুখ কালো করে চলে গেল। ঝিলমিল’ও ভেংচি কাটল। তিথি আপু, তিন্নি আপুও যখন এই বাড়িতে ছিল; তারাও এইরকম’ই করত। কোনোকিছুতে একচুলও ছাড় দিত না। শুধু বলত, ‘কাজকর্ম না শিখলে শশুর বাড়িতে গিয়ে কি করে খাবি? তোকে তো আজ নিয়ে কাল বিদায় করে দিবে।’
যত্তসব, মান্ধাতা আমলের কথাবার্তা! ঝিলমিল অবশ্য এতকিছুর পরেও কাজের আড়ালে থেকে গেছে। ঘরের কোনো কাজে সে নেই। আগে তার মা শিমু খুউব বলতেন, এখন হতাশ হয়ে আর কিছু বলেন না। কিন্তু মেয়েকে নিয়ে তিনি আসলেই ভীষণ চিন্তিত।

ঝিলমিল রিমঝিমকে ডেকে বলল, ‘নিচ থেকে আমার জন্য কিছু নিয়ে আয় তো। এত কাজ করতে করতে ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে।’

রিমঝিম কোমড়ে দু’হাত গুঁজে বলল, ‘কাজ? তুমি আবার কখন কাজ করলে আপু? খাটাচ্ছ তো আমাদের দিয়ে। তুমি তো আরামসে বসে বসে নখে….’

‘অ্যাই, তুই দেখেছিস আমি কিছু করি নাই? একটু আগে এসে বসলাম। তোকে যেটা বলেছি সেটা কর গিয়ে। বড়দের সাথে একদম মুখে মুখে তর্ক করবি না। একে তো কাজ করতে করতে মাথা ধরেছে তার উপর তোরা আবার এসে তর্ক জুড়েছিস। থাক, কিছু করতে হবে না। আমিই যাচ্ছি।’
ঝিলমিল উঠে নিজের ঘরে গেল। ড্রেসিং টেবিল খুলে নেলপলিশ’টা রাখতে গেলে রোদ্দুরের সেই আংটিটা চোখে পড়ল। ঝিলমিল আংটিটা হাতে নিল। ছুঁড়ে ফেলে দিল ঘরের এক কোণায়। সেদিন তো নিয়েছিল কৌতুহলবশত, ফেরত দিতে চেয়েছিল কিন্তু মনে নেই। আংটিটার দিকে চোখ পড়তেই মনে পড়ল, সেদিন রোদ্দুর ফোন করেছিল, কিছু একটা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু সে বলার সুযোগ দেয় নাই। রোদ্দুরের সাথে কথাবার্তা যা হয়, তা সরাসরি’ই। কখনো ফোনে কথা বলার প্রয়োজন পড়ে নাই। কিন্তু ও কেনো হঠাৎ ফোন দিল তা এই মুহুর্তে জানতে ইচ্ছে করছে। থাক, সব জানার ইচ্ছে মনের মধ্যেই থাকুক। ঝিলমিল গিয়ে আংটিটা কুড়িয়ে নিয়ে যত্নে রেখে দিল। বেচারার গার্লফ্রেন্ডের জন্য শখ করে কিনেছিল!
.
গতকাল রাত ০৮ টা নাগাদ রোদ্দুরের ফোনে আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছিল। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সানিয়ার গলা ভেসে এসেছিল। রোদ্দুর তৎক্ষণাৎ ফোন কেটে নাম্বারটা ব্লক লিস্টে রেখে দিয়েছিল। এই মেয়েটার সাথে কথা বলার ধৈর্য তার নেই, ইচ্ছেও নেই। কোন আক্কেলে ফোন দিয়েছে আল্লাহ ভালো জানে! তারপর থেকে অন্য নাম্বার দিয়ে ফোন করেই যাচ্ছে। রোদ্দুর অফিসে, ফোন সাইলেন্ট করা; তারপরও বারবার ওইদিকে চোখ যাচ্ছে। অবশেষে বিরক্তিতে ফোন রিসিভ করল। যথাসম্ভব চেষ্টা করল নিজেকে সংযত করার।
সে বলল, ‘কি চাও তুমি? নির্লজ্জের মত বারবার ফোন করছ কেনো? আর কি বলার থাকতে পারে তোমার?’

‘অনেক কিছু। তুমি প্লিজ আমাকে একটু সময় দাও। একটু দেখা করতে চাই, প্লিজ।’

‘কাউকে দেওয়ার মত ফালতু সময় আমার কাছে নেই। আমি ব্যস্ত মানুষ, আমার অনেক কাজকর্ম আছে। তুমি তো নিজের রাস্তা নিজেই দেখে নিয়েছ। এরপর আমার আর কিছু বলার নেই এবং আমাকেও তোমার আর কিছু বলার থাকতে পারে না। কাজ করছি, বারবার ফোন দিয়ে বিরক্ত করো না।’ স্টেইট কথাগুলো বলে দিয়ে ফোন রেখে দিল রোদ্দুর।
যখন’ই সবকিছু ভুলে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছিল, তখন’ই আবার তার আবির্ভাব। রোদ্দুর সেই যাত্রায় নিজের কাজে মনোযোগ দিল।
তবে সানিয়ার বোধহয় আসলেই রোদ্দুরকে কিছু বলার ছিল। এতকিছুর পরেও সে কোনোভাবেই নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে না। রোদ্দুরের সাথে একটুখানি দেখা করার জন্য পাগলের মত বারবার অনুরোধ করে যাচ্ছে। কিন্তু রোদ্দুর এড়িয়ে যাচ্ছে সমানতালে।
আগেও এইরকম অনেকবার হয়েছিল যে, সানিয়া হয়তো কোন একটা ভুল কাজ করেছে যেটা রোদ্দুরের পছন্দ নয়। প্রথমবার হয়ত সে কিছু বলে নাই, দ্বিতীয়বার বলেছে কিংবা রাগ করেছে— সেই রাগ সানিয়া প্রতিবার’ই নিজের মত করে ভাঙ্গিয়ে নিয়েছে। এইবার’ও বোধকরি এই রকমটাই ভেবেছে। কিন্তু সবসময় কি চিড়া ওতো সহজে ভিজে! আর এমনটা হওয়ার কথাও তো নয়। এত সহজে ভুল ক্ষমা করা যায় না….. কখনোই না। সানিয়া এইবার’ও ভেবেছে রোদ্দুরের সাথে কথাবার্তা বলে, মাফ-টাফ চেয়ে হয়ত ছাড় পাওয়া যাবে। কিন্তু না, যেই আঘাত মনের গভীর পর্যন্ত দাগ কেটেছে সেই আঘাতে শত ভালোবাসার প্রলেপ লাগালেও তা মিথ্যে মনে হবে।
সানিয়ার সবকিছু’ই এখন ভান মনে হয়। আগে তার বোঝা উচিত ছিল, সে অযথাই মরীচিকার পেছনে ছুটে চলেছিল। সানিয়া যতটুকু না তার ভালোবাসা ছিল, তারচেয়ে বেশি ছিল জেদ। তানভীর যেকোনো মূল্যে ওকে পেতে চেয়েছিল, তার সাথে পাল্লা দিয়ে রোদ্দুর’ও জেদ করেছিল। আর তার ফলাফল তো নিজের হাতেই পেল।
বাড়ি থেকে রোদ্দুরের কাছে ফোন এলো, ছোট চাচ্চু ফোন করেছেন।
রোদ্দুর রিসিভ করতেই উনি বললেন, ‘কি রে বাড়ির খোঁজখবর রাখিস? ঢাকা গিয়ে তো সবাইরে ভুলেই গেছিস ভাতিজা।’

‘কাউকেই ভুলি নাই। একটু কাজের চাপে রয়েছি, এই আর কী!’

‘আচ্ছা শোন, মা একটু অসুস্থ; একটু মানে ভালোই অসুস্থ। শীতের মধ্যে হাঁপানির টান বেল বেড়েছে। তুই আসতে পারবি? মা বারবার তোকে দেখতে চাচ্ছে।’

রোদ্দুর এক মুহুর্ত ভাবনাচিন্তা করে বলল, ‘ওহো! কাল বৃহস্পতিবার, আমি কাল বিকালে রওনা দিই তাহলে। রাতের মধ্যে পৌঁছে গেলে পরদিন থেকে সে রাতেই রওনা দিব।’

‘আচ্ছা আয় তাহলে।’

‘ঠিক আছে। তুমি দাদিকে বলে রাখো, তার আদরের ওয়ান এন্ড ওনলি ভাইজান আসতেছে।’
মনোয়ার সরকার হেসে উঠলেন। তারপর বললেন, ‘তুই আসবি শুনলে মায়ের অসুখ অর্ধেক সেরে যাবে। চলে আয় তো কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে।’

রোদ্দুর হেসে সুর টেনে বলল, ‘ক..য়ে..ক..দি..নে..র? বাব্বাহ, তাহলে হয়েছে। আমার আর চাকরি-বাকরি করতে হবে না। কিছুদিন আগেই রোদশী আপুর বিয়ে উপলক্ষ্যে কতদিনের ছুটি নিলাম। আবার দিবে আমাকে?’

‘বাপুরে, তোদের কাহিনী বুঝিনা। আচ্ছা, চলে আয়।’
রোদ্দুর সম্মতি জানিয়ে ফোন রেখে দিল। ভালোই হয়েছে, ব্যস্ততার শহর থেকে সামান্য সময়ের জন্য হলেও মুক্তি মিলবে‌। সবচেয়ে ভালো হতো, কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে কিছুদিনের জন্য মায়ের কাছে গিয়ে থাকা। কিন্তু তাও সম্ভব নয়, এখানে সে বিশেষভাবে জড়িয়ে গেছে। পড়াশোনা শেষ করার পর বাড়ির সকলে বলেছিল, তাদের ফ্যামিলির বিজনেসে জয়েন করতে। কিন্তু রোদ্দুর সম্পূর্ণরূপে নারাজ ছিল। তারপর পুনরায় ঢাকায় এলো। চাকরির জন্য প্রায় সবধরনের বইপত্র পড়ে শেষ করতে করতে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি হয়ে গেল। একবছর হয় নাই এখনও…. এইতো আর মাত্র মাস দুয়েক বাকি আছে।
.
পরদিন সব ঠিকঠাক মত চলছিল। রোদ্দুর একেবারে রেডি বাড়ি যাওয়ার জন্য। আপুর বিয়ের পর বাড়ি থেকে এসেছে, তাও প্রায় একমাস হতে চলছে। এইবার স্বল্পসময়ের ব্যবধানে বাড়ি যাওয়ার আনন্দে সে নিজেও উচ্ছ্বসিত।
বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতেই সানিয়া এসে হাজির হলো। রোদ্দুর ওকে দেখে অবাক হলো। এই সময় ওর এখানে থাকার কথা নয়।
সানিয়া নিজে থেকেই বলল, ‘রোদ্দুর আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। প্লিজ, আমার কথাটা শোনো একটু। তারপর যদি তোমার মনে হয় আমি ভুল, তবে সেটা আমি মেনে নিব।’

রোদ্দুর হাত ঘড়িতে সময়টা দেখে নিয়ে বলল, ‘তাড়াতাড়ি বলো, হাতে সময় কম।’

‘এমন তো তুমি ছিলে না। আমার জন্য তোমার সময় কম? এটা বলতে পারলে তুমি?’

‘বাধ্য করালে।’

সানিয়া নিজের কথার প্রসঙ্গে ফিরে এলো। বলল, ‘আমি সত্যিই দুঃখিত। সেদিন তানভীর আমাকে বারবার বলছিল, এখন নাকি বিয়ে করাটা আমার জীবনের চরম পর্যায়ের ভুল। আমার ক্যারিয়ার নাকি ধ্বংসের মুখে। আমি সবকিছুর জন্য তৈরি ছিলাম। বাট পরবর্তীতে মনে হলো, বিয়ে করলে তো আমি একটা বাধ্যবাধকতায় আটকে যাব। তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম। তানভীর তাতেও বাঁধা দিল। বলল, তুমি নাকি জোরাজুরি করতে পারো।’
রোদ্দুর সবটা চুপচাপ শুনল। তার কিছুই বলার নেই। এই মেয়েটা সম্পুর্ণরূপে তানভীরের হাতের পুতুল হয়ে গেছে। তানভীর যা বলছে সব ঠিক, আর কারো কোনো কথার মূল্য নাই!
সানিয়া পুনরায় বলল, ‘আমার আবার কি মনে হলো জানো? আমি মনে হয় তোমার সাথে অন্যায় করলাম। নিজেকে বিশ্বাসঘাতক মনে হলো। তারপর থেকেই তোমার সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছি। কিন্তু তুমি তো আমাকে….! যাইহোক, আজ ভাবলাম তোমার সাথে যে করেই হোক দেখা করবই। তোমার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম, দেখলাম তুমি বাসস্ট্যান্ড আসছ। তাই আমিও পিছু নিলাম।’

রোদ্দুর প্রথমেই কিছু বলল না। মনের কথাগুলো মাথায় সাজিয়ে নিতে লাগল। তারপর বেশ শান্তভাবেই বলতে লাগল, ‘আমাদের সম্পর্কের শুরুটা একবার মনে করো? আমি তোমাকে কখনো কোনোকিছুতে বাঁধা দিয়েছি? শুধুমাত্র তানভীরের ব্যাপারটা ছাড়া। ওকে আমার ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ না। আমাদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি যাইহোক না কেনো, তুমি সবটা গিয়ে তানভীরকে বলে দাও। এতবার বুঝিয়েছি, তাও তোমার মাথায় ঢুকলোই না। ঠিক আছে, আমি হব মেনে নিলাম। সত্যি কথা হচ্ছে, এই বিষয়গুলো তানভীর যখন আমায় বলত তখন গায়ে কাঁটা লাগার মত লাগত! তাও ঠিক আছে, চুপচাপ মেনে নিয়ে থেকে গেছি। কিন্তু সেদিন যা করলে, বিশ্বাস করো এরপর আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি আর নিতে পারতেছি না। এতদিন এসব তোমার আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সেদিনের ঘটনাটার সাক্ষী ছিল আমার বন্ধুরাও। তুমি ওদের কাছে আমাকে অপমান করেছ। তারপর একটু আগে যা যা বললে, তাতে কি মনে হচ্ছে জানো? তুমি সম্পূর্ণরূপে তানভীরের উপর নির্ভরশীল। আমি তোমাকে বলছি শোনো, আমার সাথে তোমার হবে না। আমি তানভীরের মত না। যেটা আমরা সেটা পুরোপুরিভাবে আমার করে রাখার একটা ইনটেনশন সবসময় আমার মধ্যে কাজ করে। নিজের জিনিস অন্যকারো কাছে সহ্য করতে পারি না। আমি একাই ঠিক আছি। কারো সাথেই আমার বনবে না। প্লিজ সানিয়া লিভ মি আ এলোন!’ রোদ্দুর এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো শেষ করল।

সানিয়া রোদ্দুরের কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। বলল, ‘দ্যাট মিনস ইউ ওয়ান্ট টু ব্রেকআপ?’

‘ইয়েস, মাচ নিডেড।’

সানিয়া অনুরোধের সুরে বলল, ‘রোদ্দুর প্লিজ! আমাদের এতদিনের সম্পর্ক….’

‘সানিয়া আমার হাতে সময় কম। আমাকে বাস ধরতে হবে‌। আমি সমস্ত পিছুটান ছেড়ে দিতে চাচ্ছি….. ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছি।’
রোদ্দুর ওকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। সানিয়ার চোখ ভিজে এলো। এটা সে রোদ্দুরের থেকে আশা করে নাই।
.
.
.
চলবে…..
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৭৫৫