ঝিলমিল রোদ্দুরে পর্ব-৯+১০

0
489

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে 🖤 [পর্ব-০৯]
~আফিয়া আফরিন

রোদ্দুর নিজের বাড়ি এলো। ছোট চাচ্চু আগে থেকে কাউকে বলে নাই, রোদ্দুর’ও বলে নাই। তাই ওকে দেখে মোটামুটি সবাই চমকে গেল। সে একবার বাড়ি এলে আবার বহুদিনের ফারাক রেখে তারপর আসে, এইবার ব্যতিক্রম ঘটল। দাদির সাথে দেখা করতে গেল। আগের চেয়ে তিনি একটু সুস্থ। তবে কথা বলতে, চলা ফেরা করতে, খাওয়া-দাওয়া করতে কিঞ্চিৎ অসুবিধা হচ্ছে। একমাত্র নাতিকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলেন। তিনি নিজে তো আর উঠে তদারকি করতে পারছেন না তাই সব ছেলের বউদের ডেকে পাঠালেন। কোনোভাবেই যেনো তার নাতির অযত্ন না হয়!
সে রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর রোদ্দুর বাপ-চাচাদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ ক্যারাম খেলল। জার্নিতে টায়ার্ড ছিল বলে সকলের আগেই নিজের ঘরে চলে আসছিল। আসার কথা ঝিলমিলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। ঝিলমিল তাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল, ‘সেদিন ফোন করে কি বলতে চাইছিলি?’

‘কোনদিন?’ রোদ্দুর যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছে।

‘আরে ওই তো একদিন ফোন দিলি না? কি যেনো বলবি বলবি মনে হচ্ছিল, সম্ভবত তোর গার্লফ্রেন্ডের ব্যাপারে। তখন মন-মেজাজ খারাপ ছিল তাই শুনি নাই। এখন বলতে পারিস।’

‘আমার মনে নেই।’
রোদ্দুরের যেহেতু মনে নেই তাই ঝিলমিল শোনার জন্য আর চাপাচাপি করল না। সে বাধ্য মেয়ের মত নিজের হাতের মুঠোয় ধরে রাখা আংটিটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘এটা নে। সেদিন আমি ফাজলামির ছলে নিয়েছিলাম কিন্তু পরে দিতে ভুলে গিয়েছি।’

‘এটা কার?’

ঝিলমিল ভুরু কুঁচকে বলল, ‘তোর। তুই তো কিনেছিলি তোর গার্লফ্রেন্ডের জন্য। আর ওর ছবিও আছে আমার কাছে, সেটা সকালে দিবনি। মানুষের কাছে ঋণী থাকার একদম ইচ্ছে নেই।’

রোদ্দুর এক হাতে মাথার চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে বলল, ‘ভালো হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে! হুমমমম, কাহিনী তো কিছু একটা আছে। অবশ্য আমি মনে হয় কিছু-মিছু জানি। যাইহোক, এই আংটি তোর কাছে রেখে দে। আর ছবিটা আমাকে দিতে হবে না, ছবির ওই মানুষটার মুখ আমি কখনোই দেখতে চাই না। পুড়িয়ে ফেলে দেয় আর নয়তো ছিঁড়ে ফেল।’
এটুকু বলে রোদ্দুর সটান ওর ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। ঝিলমিল’ও বিষয়টা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করল না। এসব তার প্রয়োজন নেই। ছবিটা পুড়িয়ে ফেলতে বলল, কিন্তু এটা করা যাবে না। এখন হয়তো গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করেছে, রাগারাগী করেছে তাই অভিমানে এসব বলেছে। পরে আবার ঠিকই এসে কড়া গলায় ধমক দিতে দিতে বলবে, ‘ঝিলমিল, কোথায় আমার জানের ছবিটা? দিয়ে দে বলছি। মানুষের জিনিস কেনো নিয়েছিস? লজ্জা করে না তোর? আমার জিনিস আমাকে ফেরত দিয়ে দে।’
মানুষের এসব আবোলতাবোল কথা শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। তাই ঝিলমিল আংটি আর ছবি দুটোই যত্ন করে রেখে দিল।
.
মনোয়ার সরকার সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঘোষণা দিলেন আজ পুকুরে মাছ মারতে যাবেন। যারা যারা তার সাথে যেতে চায় তারা যেনো নয়টার মধ্যে রেডি হয়ে নেয়। মাছ মারা, তার একটা শখ। সুযোগ পেলেই বাড়ির বাচ্চাদের নিয়ে বেড়িয়ে যান। ইদানিং কাজেকর্মে সময় পাওয়া যাচ্ছে না। তবে আজ যেহেতু রোদ্দুর রয়েছে তাই ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে নিলেন। ঝিলমিল, ঝিমঝিম আর তানিশা ওদের আগে থেকেই রেডি আরে উঠোনে অপেক্ষা করছিল। রোদ্দুর ওদের দেখে বলল, ‘আমরা যাচ্ছিলাম আমরাই যাই। এরা আবার যাবে কি করতে? এদের মতো ক্যাঁচ ক্যাঁচানিগুলো আমাদের সাথে গেলে তোমার বরশিতে একটাও মাছ উঠবে ছোট চাচ্চু?’

‘তুই কি বলিস? ঝিলমিল তো মাছ মারায় এক্সপার্ট। আমি ওদেরকে কখনো যাই নাই। কিচ্ছু হবে না, চল তুই। এনজয় করতে পারবি।’
ছোট চাচ্চুর কথাটা রোদ্দুরের পছন্দ হলো না। মুখে বিতৃষ্ণা নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে পথ চলতে লাগল।
রিমঝিম ফিসফিস করে বলল, ‘ভাইয়া এমন কেন? সবকিছুতেই ওর বাঁধা দিতেই হবে। ওর কোনোকিছুতে আমরা বাঁধা নিই? মানা করি?’

তানিশা বলল, ‘সেই সাহস আছে তোমাদের? একমাত্র আদরের ছেলে বলে বাড়ি সবাই ওকে মাথায় তুলে নাচে। দেখলে না ভাইয়া আসে মাত্র দাদী কিরকম হয়ে গেছে।’

‘আমাদের সবার আদর ভাইয়া একাই দখল করেছে, ইটস্ নট ফেয়ার।’ রিমঝিম মুখ ভেংচি কাটল।
ঝিলমিল ওদের কথায় মনোযোগ দিতে গিয়ে সামনের দিকে আর তাকায় নাই। হঠাৎ পায়ে গাছের গুঁড়ি বেঁধে পড়ে যেতে নিলেও তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিল। রোদ্দুর পেছনে তাকিয়ে বলল, ‘আমাকে নিয়ে আজগুবি গবেষণা করলে এরকমই হবে। তাও ভালো যে পড়ে গিয়ে নাকমুখ বোঁচা হয় নাই।’

ঝিলমিল তেড়ে এসে বলল, ‘তুই কোন সেলিব্রিটি যে তোকে নিয়ে গবেষণা করতে যাব? আমি এমনিতেই নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম। তুই আমাদের কথায় কান দিস কেন? লজ্জা লাগে না আড়ি পাততে? অভদ্র ছেলে কোথাকার!’

রোদ্দুর হেসে বলল, ‘তোদের নিজেদের মধ্যে কথা বলার বিষয়বস্তুও যে আমি, এটা ঠিক জানা ছিল না। এইতো আজকে এই মুহূর্তে জেনে নিলাম। মাঝে মাঝে একটু আমার প্রশংসা করবি, শুনতে ভালো লাগে।’

‘তুই কোন রাজপুত্র যে তোর প্রশংসা করতে হবে?’

রোদ্দুর কলার নাচিয়ে বলল, ‘হাস্যকর! আমি কাদের নিজের ডিমান্ড বোঝাতে এসেছি? এরা বুঝবে আমার ডিমান্ড? আদৌ পসিবল? হেহেহে!’
ছোট চাচ্চু এসে দু’জনকে থামালেন। ঝগড়াঝাঁটি করতে নিষেধ করলেন।
রোদ্দুর তবুও বিড়বিড় করে বলল, ‘এই ঝগড়াটে মহিলাদের কারণেই এই বাড়িতে আমার আসতে ইচ্ছে হয় না। নিজের বাড়ি, কতদিন পর পর আসি; তবুও এদের সহ্য হয় না। অসহ্য কোথাকার।’
ঝিলমিল শুনে ফোঁস ফোঁস করে উঠল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না। সুযোগের অপেক্ষায় রইল। সেই সুযোগটা এইবার খুব সহজেই ধরা দিল। একেই শীতকাল, ডিসেম্বরের হাড় কাঁপানো শীত; তারমধ্যে চোখের সামনে দৃষ্টি যতদূর যায়, পানি আর পানি! ছোট চাচ্চু এক কিনারে বড়শি নিয়ে বসে আছেন। রোদ্দুর পাশেই দাঁড়িয়ে। ঝিলমিল, রিমঝিম আর তানিশাও একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এইদিক’টা খোলা বিধায় ঠান্ডা বেশি।
রোদ্দুর যেহেতু রিমঝিমের নিজের ভাই, তাই তাকে তার পরিকল্পনায় নিল না। তানিশাকে নিয়ে রোদ্দুরের পাশে এসে দাঁড়াল। এমনভাবে গল্প করতে করতে এলো, যেনো কেউ বুঝতে না পারে। হেসে হেসে গল্প করতে করতেই হঠাৎ রোদ্দুরকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিল। আচমকা এমন অকল্পনীয় আক্রমণে রোদ্দুর তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল। ছোট চাচ্চু তৎক্ষণাৎ হাতের বড়শি ফেলে দিয়ে ‘অ্যাই অ্যাই’ করে উঠে দাঁড়ালেন।
এমনিতেই পানিতে সামান্য পা ভেজানো যাচ্ছে না, সারা শরীর কেঁপে উঠছে ঠান্ডায়। আর রোদ্দুর এই অবস্থায় বেশ ভালোই নাকানিচুবানি খেল। ততক্ষণে তানিশা আর ঝিলমিল একটু সরে দাঁড়িয়ে আবারও ফিরে এসেছে, ওদের সাথে রিমঝিম’ও।
রোদ্দুর পাড়ে উঠে এসে আশেপাশে তাকাল। ধাক্কা যে খেয়েছে এটা স্পষ্ট বুঝেছে কিন্তু ধাক্কা কে দিয়েছে, তা ঠিক বুঝতে পারছে না।
ছোট চাচ্চু বললেন, ‘কী আশ্চর্য! এভাবে দিনে দুপুরে পড়ে গেছি কীভাবে? ঠান্ডা লাগছে তো তাইনা? আচ্ছা আজ মাছ ধরা থাক। ঝিলমিল তুই ওদের নিয়ে বাড়ি যা। আমি রোদ্দুরকে নিয়ে যাই। এইভাবে বেশিক্ষণ থাকলে আর দেখতে হবে না।’

ঝিলমিল তাই করল। মুখ টিপে হেসে এগিয়ে গেল। একবার রোদ্দুরের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল সে ওর দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। ঝিলমিল একদম’ই পাত্তা দিল না।
বাড়ি ফিরে দেখল সবাই রান্নাঘরে একত্রিত হয়ে গোল মিটিং করছিল। তাদের মধ্যমণি হয়ে দাদিও উপস্থিত ছিলেন।
ঝিলমিল সবার উদ্দেশ্যে বলল, ‘তোমরা সবাই এখানে কীসের আলাপ-আলোচনা করছ গো?’

দাদি বললেন, ‘বিয়ে-শাদীর। রোদ্দুর তো যথেষ্ট বড় হয়েছে, ওর তো এইবার বিয়ে দিতে হবে। মেজো বউমাকে তাই জিজ্ঞেস করছি, তাদের পছন্দের কোনো পাত্রী আছে কি না! না থাকলে আমি আমার পছন্দের কথা জানাতাম‌।’

সহসা রোদ্দুরের মা নীলিমা বললেন, ‘না আম্মা, আমরা কাউকে পছন্দ করে রাখি নাই। এখন রোদ্দুরের যদি পছন্দের কেউ থাকে ভবে ভিন্ন কথা। আমি ওকে বেশ কিছুদিন থেকে বলছিলাম বিয়ের কথা, ও তো গা করল না। কোনো পছন্দের কথাও সেভাবে বলে নাই।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি কথা বলো, ওর সাথে। কী বলে পরে আমাকে জানিও।’

নীলিমা বললেন, ‘আচ্ছা। কিন্তু আম্মা আপনার পছন্দের পাত্রী কে? আমরা কি তাকে চিনি?’

রেহানা খাতুন হেসে বললেন, ‘অনেক বছর ধরে সংসার করছি। সংসারের ভালোমন্দ, খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আমি জানি। মানুষ চিনতে এখন কিন্তু আর ভুল হয় না। নিশ্চিন্তে থাকতে পারো, আমার পছন্দ করা পাত্রী তোমার ছেলের জন্য খারাপ হবে না। আর হ্যাঁ, তোমরা তাকে চেনো; বেশ ভালো করেই চেনো।’
এটুকু বলে তিনি উঠলেন। আজ সকাল থেকে শরীরটা ভালোই ছিল, এখন আবার খারাপ লাগতে শুরু করছে। এতগুলো কথা বলে নিঃশ্বাস নিতেও বেগ পেতে হচ্ছে।
উনি ঘরে যেতেই ঝিলমিল সামনের টুলে বসে পড়ল। কাতর গলায় বলল, ‘মা আমার খিদে পেয়েছে।’

‘ভেবেছিলাম সবাই একসাথেই খেতে বসবে। তা না করে, কে যে কোনদিকে দৌড় দিল। রোদ্দুর কোথায়? তোর ছোট চাচ্চু কোথায়?’

‘জানিনা।’ নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল ঝিলমিল।

‘কাজের কাজ তো কিছুই জানবি না তোরা। তোরা শুধু জানবি আমার জ্বালিয়ে খেতে। এত বড় হয়েছিস, এই বয়সে মানুষের চার/পাঁচটা করে বাচ্চাকাচ্চাও থাকে। আর তুই? একদম অবুঝ যেনো। কিছু বুঝিস না। সবকিছু এখনও আমাকেই করে দিতে হবে? নিজের খাবারটা নিজে নিয়ে খাওয়া যায় না? সারাক্ষণ মা এটা দাও, ওটা দাও, এই করো, সেই করো— বাপুরে তোর আর তোর বাপের ফুট ফরমায়েশ খাটতে খাটতে আমার জীবন গেল।’
ঝিলমিল ওখান থেকে কেটে পড়ল। বড় চাচির কাছে গিয়ে বলল, ‘মায়ের কি হয়েছে বলতে পারো? কার উপর করা রাগ আমার উপর ঝাড়তেছে?’

‘এত কথা না বলে খেতে যা। পরে আবার আরও বেশি রাগারাগী করবে।’ ওরা সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ড্রয়িং রুমে এসে দেখল টিভি চলছে। কেউ নেই আশেপাশে। টিভিতে ফুটবল খেলা হচ্ছে, সোফায় রোদ্দুরের ফোন; তারমানে এখানে রোদ্দুর ছিল। ঝিলমিল টি-টেবিলের উপর থেকে রিমোট টা নিয়ে চ্যানেল পাল্টে দিয়ে রিমোট লুকিয়ে রেখে তানিশাকে নিয়ে টিভির সামনে বসল। কিছু দেখুক বা নাই দেখুক, রোদ্দুরকে জ্বালাতে তো পারবে।
মুখ্য বিষয় তো তাদের টিভি দেখা নয়। মুখ্য বিষয় হচ্ছে, রিমোট লুকিয়ে রাখা এবং রোদ্দুরকে এখানে টিভি দেখতে না দেওয়া।
ঠিক ওইসময় রোদ্দুর এসে টিভির দিকে তাকিয়ে তার পছন্দীয় খেলা নাই বলে রেগে গেল। উপস্থিত দু’জনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোরা এখানে কি করছিস?’

দু’জনে রোদ্দুরের কথায় পাত্তা দিল না। চুপিচুপি করে গল্প করতে লাগল। নাটকের কোন নায়ক বেশি সুন্দর, কে ভালো অভিনয় করে, কে সুন্দর করে কথা বলে; সেটা নিয়ে কথা বলছিল। রোদ্দুর পুনরায় বলল, ‘তোদের আমি কিছু বলছিলাম!’

ঝিলমিল এইবার রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কী ভাই! আমাদের ভালো সহ্য হয় না তোর? দেখছিস তো একটা নাটক দেখছি তাও খুব জমজমাট একটা জায়গায় আছি, প্লিজ কথা বলিস না। তুই’ও বসে দেখ।’
সকালের বিষয়টা রোদ্দুর হজম করে নিয়েছে। কেউ তাকে বলে দিল না, সে নিজেও চোখে দেখল না, তবুও ঠিকই বুঝে গেছে তাকে পানিতে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার মত জঘন্যমত অন্যায় কাজটা ঝিলমিলের’ই! কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে বড় চাচী এসে বললেন, ‘তোরা সব এখানে? আম্মা তোদেরকে ডাকছে। এই ঝিলমিল এখনও বসে আছিস কেন? উঠ। কথা কি কানে যায় না নাকি? এইজন্য একটু আগে শিমুর কাছে বকা খাইছিস।’

ঝিলমিল অলসতা নিয়ে উঠে দাঁড়াল। রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘টিভি দেখবি? রিমোট ওই ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারের মধ্যে রেখে আসছি। নিয়ে এসে দেখ যাহ।’

‘লাগবে না। তোর বাপের সম্পত্তি, তুই’ই ভোগ কর।’ রোদ্দুর দাদির ঘরের দিকে রওনা হলো। ঝিলমিল’ও টিভি অফ করে পিছু পিছু গেল। দাদির ঘরে সবাই উপস্থিত হয়েছে। তিনি রোদ্দুরকে ডেকে তার পাশে বিছানায় বসালেন। সবার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘বয়স তো আমার কম হলো না। ইদানিং শরীরটাও বিশেষ ভালো যাচ্ছে না। ইচ্ছে ছিল, নাতি-নাতনি সবার বিয়ে-শাদী দেখে তারপর যাব। কতদূর হায়াত আছে কে জানে? এখন আমার দাদাভাইকে বিয়ে দিতে চাচ্ছি। অন্তত মনে শান্তিটুকু তো পাব। এই বাড়ির নাতবউকে তো দেখে যেতে পারব।’
রোদ্দুর বিস্ময় নিয়ে তাকাল। বিয়ে সে জীবনেও করবে না। ‘বিয়ে’ শব্দটা শুনলেই শরীরের রক্ত চিরিক চিরিক করে উঠে।
সে তবুও ধৈর্য ধরে চুপ থাকলেন। রেহানা খাতুন তার বড় ছেলের বউ সাবরিনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘বড় বউমা, আলমারিটা খোলো। দেখো, সামনেই আমি একটা গলার হার আলাদা করে রেখেছি। তুমি ওটা আমাকে বের করে দাও।’

‘দিচ্ছি আম্মা।’ তিনি তৎক্ষণাৎ জিনিসটা বের করে শাশুড়ির হাতে তুলে দিলেন। রেহানা খাতুন এইবার ঝিলমিলকে ডেকে পাশে বসালেন। ওর গলায় সেই হারটা ঝিলমিলের গলায় পড়িয়ে দিয়ে ওর থুতনিতে হাত রেখে বললেন, ‘আমি ঘরের মেয়ে থাকতে পরের মেয়ে আনতে চাই না। আমার দাদু ভাইয়ের জন্য আমার ঝিলমিল’ই যথেষ্ট। আশা করি এতে তোমাদের কারো কোনো আপত্তি নেই….!’
.
.
.
চলবে…..

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-১০]
~আফিয়া আফরিন

রোদ্দুরের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল, ঝিলমিলের পায়ের তলায় মাটি সরে গেল, বাদবাকি সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারা অবাক হলেও, মনে হয় না অখুশি হয়েছে। কারণ, পরক্ষণেই সবার মুখে হাসি ফুটে উঠল। একমাত্র রোদ্দুর চোখমুখ শক্ত করে উঠে দাঁড়াল। উপস্থিত সবার দিকে তাকিয়ে বেশ জোরে একটা হুঙ্কার ছেড়ে বলল, ‘আমি বিয়ে করব না।’
রেহানা খাতুন কিছু বলার আগেই সে গটগট করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। ঝিলমিল ওর মায়ের দিকে তাকাল, কিছু বলবে সেই ভাবনায়। কিন্তু মা’কেও বেশ খুশি মনে হচ্ছিল।
রেহানা খাতুন নীলিমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘মেজো বউমা, তুমি দাদু ভাইয়ের সাথে কথা বলো নাই?’

‘না আম্মা, ওকে জিজ্ঞেস করার মত সেই সুযোগ পাই নাই।’

‘আমার প্রস্তাবে কি তোমাদের কারো কোনো আপত্তি রয়েছে? যদি থাকে তবে তার কারণ সহ আমায় জানিয়ে দাও।’
কারোর’ই আপত্তি ছিল না। এরা কেউ কখনো শাশুড়ি মায়ের সিদ্ধান্তের উপর কথা বলে নাই। আজ’ও বলবে না।
শুধুমাত্র সাবরিনা বললেন, ‘আমাদের আপত্তি দিয়ে কি দিয়ে আসে যায় আম্মা? রোদ্দুর কি রাজি হবে? ও এভাবে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। আমার মনে হয়, ওর সাথে একবার ভালো করে কথা বলা দরকার। ওর যদি অন্য কোথাও পছন্দ থাকে…..’

‘পছন্দ থাকলে সেটা সরাসরি বলে দিবে। বিয়ে করব না— এটা আবার কেমন কথা? বিয়ে কেনো করবে না?’
মনোয়ার সরকার এসে মাকে থামালেন এবং জানালেন তিনি নিজে রোদ্দুরের সাথে কথা বলে বিষয়টা পরিষ্কার করবেন।
এইদিকে ঝিলমিল স্তব্ধ! ভেবে নিয়েছিল, মা-বাবা বিয়ের কথা তুললে সে মোটেও গাঁইগুই করবে না। সোজা রাজি হয়ে যাবে। এটাও ভেবে রেখেছিল যে— বাড়ি থেকে কেউ যদি তাকে বলতো, পরীক্ষায় ফেল করলে বিয়ে দিয়ে দিব। তবে সে হাজারবার পরীক্ষায় ডাব্বা মেরে বসে থাকত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে তাকে কখনো এসব কথা শুনতে হয় নাই। এই বাড়িতে, একই পরিবেশে থাকতে থাকতে কিছু সময় খুব বিরক্ত লাগতো বলেই মনে মনে এই বিয়ের ইচ্ছেটা পোষণ করে রেখেছিল। কিন্তু দাদি যেই মুহুর্তে রোদ্দুরের কথাটা বলল সে মুহূর্তে মনে হয়েছিল, সারাজীবন বিয়ে না করে এই বাড়িতে পড়ে থাকবে তাও রোদ্দুরকে নয়। অসম্ভব!
ঝিলমিল’ও সবাইকে আড়াল করে উঠে চলে গেল। বাবাকে বললে, বাবা নিশ্চয়ই তার কথা বুঝবে।
.
রোদ্দুরের রাগের সীমা ঠিক কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে সে নিজেও আন্দাজ করতে পারছে নাহ। বিয়ে কার সাথে হবে বা কী বিস্তারিত; এসব কিছু তার মাথার ধারে কাছেও আসে নাই। শুধুমাত্র ‘বিয়ে’ শব্দটা শোনামাত্র মেজাজ হারিয়ে ফেলেছে। সানিয়ার বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা, বন্ধুদের সামনে চরম অপমান কোনোটাই সে ভুল যায় নাই….. জীবন থাকতে ভুলতেও পারবে না। সে এইভাবেই এইরকম একা ঠিক আছে, কাউকে দ্বিতীয়বার জীবনের সাথে জড়িয়ে ফেলার মত ভুল করতে পারবে না।
ছোট চাচ্চু রোদ্দুরের খোঁজে ঘরের দরজায় কড়া নাড়লেন। রোদ্দুর ঘরের ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করল, ‘কে?’

‘আমি….চাচ্চু, দরজা খোল।’
রোদ্দুর দরজা খুলে দিয়ে আবার নিজের জায়গায় এসে বসল। ছোট চাচ্চু ঘরে এসে চারিদিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বাবাহ কতদিন পর তোর ঘরে পা রাখলাম।’
রোদ্দুর কিছুই বলল না, মুখ ভার করে রইল। তিনি পুনরায় বললেন, ‘আমি বাবা তোকে জ্ঞান দিতে আসি নাই। জ্ঞান দিলে আবার বলবি, নিজেই এখনও বিয়ে করো নাই আর আমাকে আসছ বিয়ের কথা বলতে! কী তাইতো? এটাই তো বলবি তাইনা?’

‘বিয়ে-শাদী তোমার অন্যকিছু বলার থাকলে সেটা বলো। আমি বিয়ে করব না। আমাকে দয়া করে তোমরা সবাই এসবের মধ্যে জড়িয়ে নিও না। আমি একলা মানুষ, একলাই থাকতে চাই।’
রোদ্দুর ঘড়িতে সময় দেখল। প্রায় চারটা বাজে। ছোট চাচ্চুর উদ্দেশ্য পুনরায় বলল, ‘আমার যাওয়ার টাইম হয়ে গেছে। একটু বাদেই রওনা দিব।’

‘আমাকে বলে লাভ আছে? মাকে গিয়ে বল। বিয়ে করবি না সেটাও বল আর চলে যাবি তাইও গিয়ে বল।’
রোদ্দুর চাচ্চুর দিকে তাকাল। মাথা ঝাঁকিয়ে জানাল, সে তাই করবে। নিজের কাপড়চোপড় গোছাতে গোছাতে ভাবল, দাদির মাথায় হঠাৎ কি করে এই ভাবনা এলো যে সে ঝিলমিলের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে বসে আছেন। এত জল ঘোলা করে লাভ নেই, সে তো বিয়েই করবে না এখন পাত্রী ঝিলমিল হোক বা সানিয়া। এই যে আজ ঢাকা ফিরবে সহজে আর বাড়িই ফিরবে না। ইচ্ছে হলে বছরে একদিন! যার যার তাকে দেখতে ইচ্ছে করবে তারা যেনো সরাসরি ঢাকা চলে আসে। সব ভাবনা-চিন্তা শেষে রোদ্দুর ঘর ছেড়ে বের হলো‌। দাদির ঘরে উঁকি দিয়ে দেখল, এই মুহুর্তে সেখানে কেউ নেই।
সে সরাসরি গিয়ে বলল, ‘দাদি আমি আজকে চলে যাচ্ছি’

‘কোথায় যাচ্ছ দাদুভাই?’

‘ঢাকা।’

‘আজই যাবে? আর দু’টো দিন…..’

‘সম্ভব না দাদি। আজ চলে যাব, এমনটাই ভেবে এসেছিলাম। অনেক কাজকর্ম পড়ে আছে, আর থাকা সম্ভব নয়।’

‘ঠিক আছে। যাওয়ার ইচ্ছে যখন পোষণ করেছ, তখন যাবে। আর আগে আমাকে বলো, আমি একটু আগে যে কথাটা বললাম সে সম্পর্কে তোমার মতামত কি?’

রোদ্দুর সহসা বলে দিল, ‘আমি তো তখনই বলে দিয়েছি। আমি এখন বিয়েশাদী করব না।’

‘এখন করবে না? ঠিক আছে। তবে বলো, তুমি কবে বিয়ে করতে চাও? ঝিলমিল ততদিন অপেক্ষা করবে।’

‘ওর অপেক্ষা করতে হবে কেনো? আমি বিয়েই করব না। তোমরা যদি ঝিলমিলের বিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করো তবে ওর বিয়ে দিয়ে দাও। মাষ্টার কাকার ছেলে সাইফুলের সাথে মনে হয় ওর সম্পর্ক আছে। তোমরা সেখানে কথা বলে দেখতে পারো।’ রোদ্দুর একটু রেগেই কথাটা বলল।

রেহানা খাতুন বললেন, ‘ঝিলমিলকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। তুমি নিজের কথা বলো। তোমার কি কাউকে পছন্দ যার কারণে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছো না? যদি পছন্দ থাকে তাহলে সেটাও তোমার পরিবারকে জানানো উচিত।’
দাদির কথাগুলো বেশ ভারিক্কি মনে হচ্ছে। সাধারণত তিনি তুই করেই সম্বোধন করেন। হঠাৎ তুমি সম্বোধন করায় রোদ্দুরের ভেতরে সাজানো কথাবার্তা গুলো এলোমেলো হয়ে গেল।
সে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলল, ‘না… পছন্দ না। কাকে আবার পছন্দ করব? আমি এমনিতেই বিয়ে করতে চাচ্ছি না। যদি পরে কখনো মনে হয় বিয়ে করা উচিত তাহলে করব।’

‘ঠিক আছে। কোথায় যেনো যাবে বলছিলে, যাও।’
রোদ্দুর দাদির রাগ-অভিমান বুঝল। কিন্তু এখন আর কিছু বলতে ইচ্ছে করল না। বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। ঝিলমিল’ও এই ঘরেই আসতে নিয়েছিল। রোদ্দুরকে দেখে আড়ালে ছিল। সে চলে যেতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। হাতে তখন দাদির দেওয়া সেই গলার হার’টা। সেটা সে ফেরত দিয়ে দিল। রেহানা শুধুমাত্র দু’জনের কর্মকান্ডগুলো দেখলেন, কোনো কথা বললেন না।
রোদ্দুর চলে গেল। বাড়ির কারোর’ই মন মেজাজ ভালো নেই। রোদ্দুর মুখ গোমড়া করে বেরিয়ে গেছে। যাওয়ার আগে মাকে বলেছে, ‘আমি আর তোমাদের এই বাড়িতে আসছি না। দাদির মাথা থেকে যদি এই বিয়ের ভূত নামে, তবেই আসব।’

নীলিমা নিজেও শাশুড়ির সিদ্ধান্তের সাথে একমত। ঘরে বিবাহযোগ্যা মেয়ে থাকতে বাইরের কাউকে বরণ করে নিয়ে আসার তো কোনো প্রয়োজন’ই পড়ে না। ছেলেকে অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সে কিছুতেই বুঝতে চাইছে না। বারবার এক বুলি, ‘আমি বিয়ে করব না।’
শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে মাহফুজ সরকার ছেলেকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘এখন তো মনে হচ্ছে তোমাকে একা ছেড়ে দেওয়াটাই ভুল হয়েছে। কাউকে মানছ না, কারো কথা শুনছ না; নিজে যা বুঝছ তাই করছ। তাহলে তো আর মা-বাবাকে দরকার নাই। নিজেই এখন সবকিছু করছ, তাই করো।’
এখানে রোদ্দুর কিছু বললে আরও তর্ক বাড়বে। তাই সে চুপচাপ বিদায় নিয়ে চলে এলো। বাড়ি থেকে বের হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বাব্বাহ, বাঁচা গেছে।
.
রাতে শোয়ার আগে ঝিলমিল মাকে ডেকে নিয়ে এলো নিজের ঘরে। সেখানে এসে বলল, ‘মা আমি কিন্তু রোদ্দুরকে বিয়ে করতে পারব না।’

‘বিয়ে-শাদীর ব্যপারে আমি কিছু জানি না। আম্মা তো বললেন’ই। আমি আম্মার মুখের উপর কখনো কথা বলি নাই। তিনি আজ পর্যন্ত সংসারের মঙ্গলের জন্য যা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোনোটাই বিফলে যায় নাই। আমার মনে হয় না, তোদের নিয়ে এই সিদ্ধান্তটা ভুল। আর তোর’ই তো ভালো, ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকতে পারবি।’
ঝিলমিল কিছু বলতে পারল না। এরপর বাড়িতে আরও কিছুদিন কেটে গেল। সবকিছু আগের নিয়মেই চলছে, কোথাও কোনো ফারাক নেই। বিয়ের ব্যাপারে কেউ আর কথা বলে নাই। ঝিলমিলের এখন মনে হচ্ছে, তার বিয়ে না হলেই বেশ ভালো হবে। শিউলিকে রোদ্দুরের কথাটা বলেছিল, তারপর থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে সে ঝিলমিলকে ক্ষ্যাপাতে ভোলে না।
আজ দেখা হতেই বলল, ‘কী রে! দুলাভাই আসবে না? কবে আসবে ভাই আবার? বিয়ে খাবো তো।’

‘নিজে বিয়ে করে নিজে খা। আমার বিয়ে নিয়ে উঠে পড়ে লাগিস না।’

‘শোন, বান্ধবীর বিয়ে খাওয়ার যে মজা সেটা দুনিয়ার আর কোনো খাওয়াতেও নাই। নিজের বিয়েতে তো নাই’ই। বান্ধবীর বিয়েতে যে বরের দিক থেকে তার ভাই-বন্ধুরা আসে, তাদের সাথে লাইন মারার সুযোগ থাকে। নিজের বিয়েতে এত এত ড্যাশিং ড্যাশিং বয় থাকতে তো ওই একজনকেই চোখ দিয়ে গিলে খেতে হয়। হবু দুলাভাইয়ে যের বউ বিয়ে কর প্লিজ। রোদ্দুর ভাইয়ের বন্ধুদের দরকার।’

‘ওর কথা বলবি না আমাকে। ওকে তো আমি কখনোই বিয়ে করব না। অভদ্র ছেলে একটা! জানিস, কথায় কথায় বেয়াদবি করে। ধমক দেয়। ওর সাথে আমার জীবনেও মানবে না। দেখিস কা’টা’কা’টি, হা’না’হা’নি, মা’রা’মা’রি বেঁধে যাবে। আসলে ওর সাথে আমার কেনো? পৃথিবীর কোনো মেয়েই টিকবে না। দুনিয়ার ঘাড়ত্যাড়া! এটা সময় থাকতে থাকতে বুঝে গেছে বলেই তো ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, আমি কখনো বিয়েই করব না। যত্তসব ফালতু নাটক।’ ঝিলমিল চোখ ছোট ছোট করে বলল।

শিউলি বলল, ‘সে যাইহোক না কেনো, তোমার যে বিবাহের ফুল ফুটে গেছে সেটা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি। দয়া করে সেই ফুল শুকিয়ে ঝরে যাওয়ার আগে গলার মালা হিসেবে পড়ে নাও জানেমান!’
ঝিলমিল রাগ করে উঠে চলে গেল।
.
রোদ্দুরের শুধুমাত্র মায়ের সাথে কথা হয়। বাবার সাথে মাঝখানে একদিন কথা বলেছিল। ছোট চাচ্চুর সাথে মাঝেসাঝে কথা হয় আর কী! দাদির খোঁজখবর নেওয়া হয়, তিনি ভালোই আছেন আবার মাঝে মাঝে শরীর খারাপ থাকে।
বিকালে রায়হান ফোন করল। রোদ্দুর রিসিভ করতেই বলল, ‘পরশু আসছিস তো?’

রোদ্দুর কানে ফোন চেপে দু’হাতে তোয়ালে নেড়ে দিতে দিতে বলল, ‘কোথায়?’

‘আমার বিয়েতে।’

‘তোর বিয়ে?’ রোদ্দুর কেমন অজানা ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল।

রায়হান ভারি অবাক হয়ে বলল, ‘হ্যাঁ। তোকে তো কতদিন আগে থেকেই বলেছিলাম। গতকাল’ও বললাম। দোস্ত তুই ঠিক আছিস?’

‘ওহ হ্যাঁ। আমি একটু অন্যমনস্ক ছিলাম তাই মাথা থেকে তোর বিয়ের কথা বেড়িয়ে গেছে। আসব, আসব ইনশাআল্লাহ। বাকিরা সবাই আসবে?’

‘হ্যাঁ আসবে।’

‘ঠিক আছে রাখছি।’
গত দুয়েকদিন যাবত রোদ্দুর নিজেও লক্ষ্য করছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মাথা থেকে হুটহাট বেড়িয়ে যাচ্ছে। আজ দুপুরে রান্না করার পর চুলা অফ করতে ভুলে গিয়েছিল। পরে পোড়া পোড়া গন্ধ অনুসরণ করে চুলা অফ করল, ততক্ষণে রান্না পুড়ে গিয়ে ছাই হয়ে গেছে। গতকাল’ও অফিসে যাওয়ার সময় মেইন দরজা লক করতে ভুলে গিয়েছিল, বাড়ি ফিরে এসে দেখে দরজাটা কোনোমতে ভেজানো। কী হলো কে জানে? কবে জানি আবার নিজেই নিজেকে ভুলে বসে থাকে।
রোদ্দুর মাথা থেকে সব ধরণের অসহ্য চিন্তাগুলো সরাতে চায়, কিন্তু কোনোভাবেই পারছে না। সানিয়াও মাথার মধ্যে জটলা পাকিয়ে দিয়েছে আর ওইদিকে বাড়ির ব্যপারটা তো পুরো মাথা হ্যাং করে রেখেছে। আপাত দৃষ্টিতে তাকে একজন সুখী মানুষ মনে হলেও সত্যিকার অর্থে তার মনের মধ্যে মোটেও সুখ নেই। আছে শুধু দুঃশ্চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা…….!
.
.
.
চলবে…..
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা —১৬০৪