#টিউলিপ (পর্ব-৩)
#আরশিয়া_জান্নাত
চারপাশে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমার ঘুম ভাঙার পর আম্মুর আহাজারিতে আমার কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো, ভাইয়ার কিছু হয়নি তো? নাকি আব্বুর কিছু হয়েছে। হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গার কারণে আমার মাথা ভনভন করছিল, আমি টালমাটাল হয়ে কোনোরকম সামনের রুমে গেলাম। আমাকে দেখে নিশান কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আপু রুমি আপা রুমি আপা আর নাই, উনি নাকি সু*ই*সা*ইড করেছে….”
আমার বাবা ভাই ঠিক আছে এই স্বস্তিতে আমি দম ফেলবো নাকি আমার অতিপ্রিয় খালাতো বোন মারা গেছে সেই দুঃখে কষ্ট পাবো আমি সত্যিই তখন বুঝতে পারছিলাম না। কোনোরকম কাপড়চোপড় নিয়ে আমরা সবাই রাঙ্গুনিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
রুমি আপা আমার বড় খালার মেয়ে। আমার মামা খালাদের মধ্যে উনিই প্রথম সন্তান, তাই সবার নয়নের মণি বলা চলে। এতো আদরের মাঝে বড় হওয়া আপুটা কেন হঠাৎ এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে? জীবন নিয়ে তার অভিযোগ কী এতোই প্রখর ছিল যে উনি এই জীবনটা আর বইতে পারলো না? মাথায় নানারকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল, কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
খালামণির বাসায় পৌঁছে দেখি আপুকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, শত চেষ্টা করেও নাকি পোস্টমর্টেম করানো থেকে রক্ষা করা গেল না। গ্রামে এরকম খবর খুব দ্রুত রটে যায়, যার কারণে পুলিশ এসে লাশ নিয়ে গেছে। মানুষজন নানারকম কথাবার্তা বলছে, আপুর চরিত্র নিয়ে ও আঙ্গুল তুলছে। সবাই যেন ভুলে গেছে আপু আর নেই, মৃত মানুষের নামে আজেবাজে কথা বলা ঠিক না। আমার আপু তো খুব লক্ষী মেয়ে ছিল। আমরা সব কাজিনরা আপুকে আদর্শ মানতাম। যে কেউ উদাহরণ হিসেবে আপুকেই টেনে আনতো। তবে শুধু মাত্র তার মৃত্যুর জন্য সবকিছু বদলে যাবে কেন?
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো, এখনো আপুকে আনা হয়নি। খালামণি বেহুঁশ হয়ে আছেন, হুঁশ ফিরলেই আহাজারি করতে করতে আবার লুটিয়ে পড়েন। আমি আপার ঘরে বসে আছি। গতকাল ও আপা এই ঘরে জীবন্ত ছিলেন, তার বইখাতা, জামাকাপড় সব বরাবরের মতো গুছিয়ে রাখা। টেবিলের উপর রাখা তাদের ফ্যামিলি ফটো দেখে আমার দুচোখ ভরে উঠে, এতোক্ষণ আমি কাঁদতে পারছিলাম না। কোনোভাবেই পারছিলাম না। কিন্তু আপার ছবি দেখে মনে হলো আমি আর কোনোদিন আপাকে দেখবো না, তাকে জড়িয়ে ধরতে পরাবোনা। আমাদের পার্থিব বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে। আমার প্রিয় রুমি আপা অনেক দূরের পথযাত্রী হয়ে গেছে…..
পরবর্তী সময়টা আমাদের সবার কেমন কেটেছে তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। মেয়েদের অস্বাভাবিক মৃত্যু পরিবারের সবার জন্য কতোটা ভয়াঙ্কর হতে পারে তা রাঙ্গুনিয়া না গেলে আমি কখনোই উপলব্ধি করতে পারতাম না। জীবনে যত ঝড় তুফান আসুক, যদি পরিবার কে একটু হলেও ভালোবেসে থাকেন কখনো এই ভুল করবেন না। আপনি হয়তো ভাবছেন আপনি মরে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আদৌতে কিছু ঠিক হবেনা। বরং মৃত্যুর পরবর্তী জীবন যেমন ধ্বংস হয় পাশাপাশি আপনার পরিবারের মানসম্মান ও ধুলিসাৎ হয়। আপনি পৃথিবী ছেড়ে বেঁচে গেলেও তারা বাঁচতে পারেনা। অপমান অপদস্থ হওয়া তাদের রোজকার সঙ্গী হয়ে উঠে। আমার খালামণিদের অবস্থা দেখে এটাই বুঝলাম এদেশে মেয়ের বাবা মা হওয়া কতটা কষ্টের।
সেইসাথে আমি আরেকটা কঠিন সিদ্ধান্ত ও নিয়েছি। আমি কোনো ছেলের প্রতি দূর্বল হবোনা। ডক্টর রায়ানের প্রতি আমার যে অনুভূতি ছিল সব মাটি চাপা দিয়ে বাকিটা পথ পাড়ি দিবো।
ভালোবাসা খুব সুন্দর অনুভূতির নাম। এই অনুভূতির তীব্রতায় মানুষ কত পাগলামি করে। চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে যায়, বুঝদার মেয়েটাও অবুঝ হয়ে যায়। দিনশেষে যখন প্রতারণার স্বীকার হয়। আর কিছুই করার থাকেনা। আমার রুমি আপাও হয়তো সেই বিরহ সইতে পারেননি। তাইতো আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তাই আমি ঠিক করেছি এই আবেগে গা ভাসাবোনা, কোনোভাবেই না।
২বছর পর…
আজকে আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। তাই বাসায় সবাই খুব ব্যস্ত। আমাকে আজ প্রথম পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে তা নয়। গত ১বছর অনেকেই এসেছেন। হয় তাদের পছন্দ হয় না, নয়তো আমাদের পছন্দ হয় না। এভাবেই চলছে এই দেখাদেখির পর্ব। এর মাঝে লাভ একটাই আমার এক্সট্রা ইনকাম হয়েছে হেহে…
এ কয়েকমাসে আমাকে এতোবার শাড়ি পড়ানো হয়েছে, এখন আমি নিজে নিজেই গুছিয়ে শাড়ি পড়তে পারি। তাই এখন আর কারো সাহায্য লাগেনা। আমি মনের সুখে শাড়ি পড়ে সেজেগুজে পটের বিবি হয়ে বসে আছি। কয়েকটা সেলফি তুলে মুন্নিকে পাঠানোও হয়ে গেছে। মুন্নি লাভ রিয়েক্ট দিয়ে বলল, “এবার আর নাক তুলিস না। বিয়েটা করে সবাইকে শান্তি দে।”
আমি রিপ্লাই দিলাম, “এটা তোর ভ্রান্ত ধারণা। আমিতো চাইছি আমার বিয়ে হোক। সবার কাপল ব্লগ দেখে দেখে আমার চোখে ছানি পড়ে যাচ্ছে। আমিও ওরকম ভিডিও আপ দিয়ে ডলার কামাবো…”
“নাটক কম কর ভাই। তোর নাটক দেখতে দেখতে আমি ২য় বার মা হতে যাচ্ছি। তবুও তোর নাটক শেষ হচ্ছে না। কত শখ ছিল তোর ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো। এদিকে আমার মেয়ে হয়ে গেছে তোর ছেলে আর হচ্ছে না….”
“চিন্তা করিস কেন তোর ছেলে হলে আমার মেয়ে দিবোনে….”
“নওরিন, এমন নয়তো তুই এখনো ডাক্তার সাহেব কে ভুলতে পারিস নি? সেজন্যই তোর কাউকে পছন্দ হচ্ছে না?”
“আরেহ ধুরর সেরকম কিছু না। তাছাড়া এটা কত আগের কাহিনী, উনিও আমাকে এতো দিনে ভুলে গেছে হয়তো।”
“তুই নিজেই তো সব পথ বন্ধ করেছিস। বাসা পাল্টিয়েছিস, ফোন নাম্বার পর্যন্ত পাল্টালি। যোগাযোগ করার মতো কোনো অপশন ই তো রাখিস নি…”
“তুই উনার কথা তুলছিস কেন বলতো? আমি তো বলেছিই আমার পরিবার যেখানে বিয়ে দিবে আমি সেখানেই বিয়ে করবো। নিজের পছন্দ অপছন্দ এখানে ম্যাটার করেনা। আমি পরিবারের বাইরে কাউকে এতোটা ভালোবাসবো না যতোটা ভালোবাসলে নিজের সত্তা বিলীন হতে হয়!”
“আচ্ছা ঠিকাছে এই টপিক বাদ। তোর মুড খারাপ করার জন্য স্যরি। আশা করি খুব শীঘ্রই তোর বিয়েতে নাচার শখ পূরণ হবে। শুভ কামনা।”
নিশান দরজা নক করে উঁকি দিয়ে বলল, “আপু উনারা এসে গেছেন। তোর কিছু লাগবে?”
“নাহ। আমাকে কেমন লাগছে বলতো?”
“পেত্নির মতোই লাগছে, নতুনত্ব তো নেই”
“কী বললি তুই দাঁড়া…”
নিশান দৌড়ে পালালো। আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসলাম। মনে মনে ঠিক করলাম আজ যদি ওরা পছন্দ করে আমি আর দ্বিমত করবোনা। বারবার নতুন নতুন মানুষের সামনে যেতে সত্যিই আর ভালো লাগে না।
।
“আমি তোমাদের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। তোমরা ছেলের ছবি দেখলে না, তাকে সরাসরি ও দেখলে না। অথচ তার সঙ্গে টেলিফোনে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলে! এটা কেমন আজগুবি ঘটনা হয়ে গেল না?”
“আজগুবির কী আছে? ছেলের পরিবার দেখলাম, বাড়িঘর দেখলাম। চারপাশে খোঁজখবর ও নিয়েছি সবকিছু যখন ওকে রাজী হবোনা কেন? ”
“সবকিছু দেখেছ ছেলে তো আর দেখোনি! আমি তার ঘরবাড়ি বা পরিবার কে বিয়ে করছি না, তাকে বিয়ে করছি। এখন সে দেখতে কেমন তাই যদি না জানি কীভাবে কী!”
“তোর ভাই,বাবা দেখেছে তো। ছেলের সঙ্গে ভিডিও কলে কথাও বলেছে…”
“তো আমাকেও কল দিতে বলো, আমি ও দেখি।”
“এতো ঝামেলা করিস কেন বুঝিনা। আমাদের উপর কী তোর একটুও বিশ্বাস নাই? আমরা কী তোকে খারাপ কোনো ছেলের হাতে তুলে দিবো? চোখের দেখাটাই কী সব?”
“তোমাদের কার্যকলাপ দেখলে যে কেউ ই সন্দেহ করবে আমি তোমাদের আপন মেয়ে কি না…”
আমি বিরক্ত হয়ে রুমে এসে পুনরায় সিভিটা চেক করলাম, ছেলে পেশায় একজন সার্জন। চমেক থেকে পড়াশোনা করেছে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি করছেন। সত্যি বলতে চমেক আর ডাক্তার শুনে আমি শুরুতে ভেবেছিলাম এ বুঝি ডক্টর রায়ান। কিন্তু নাম দেখে সেই ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তাছাড়া চমেকে তো একজন দুজন ডাক্তার পড়েনাই, লাখলাখ ডাক্তার এখান থেকে পাশ করেছে। তাই ডাক্তার মানেই রায়ান সাহেব হবে তা তো নয়। এতোদিনে উনি হয়তো বিয়ে করে বাচ্চার বাবা হয়ে গেছেন। আমি অযথাই উনাকে নিয়ে ভাবছি।
আমার ঘ্যানঘ্যানানিতেই হোক কী তাদের মর্জিতে টেলিফোনে বিয়ে আর হলোনা। সিদ্ধান্ত হলো ছেলে দেশে ফেরার পরই বিয়ে হবে। আমি ও আর দ্বিমত করিনি, সবাই যখন এখানে সায় দিচ্ছে আমি বেঁকে বসে লাভ কী! এইটুকু ভরসা আমার পরিবার কে করাই যায়।
হলুদের রাতে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। আমি হলুদের কনে সেজে স্টেজে বসে আছি এমন সময় ডক্টর রায়ান এসে উপস্থিত হলেন। তার কোলে একটা ছোট বাচ্চা ছিল। উনাকে দেখে আমার মনে কী তান্ডব শুরু হয়েছিল বলার অপেক্ষা রাখেনা। এমন নয় আমি এই চিত্র কল্পনা করিনি। আমি তো জানতাম ই তার বিয়ে হবে, সংসার হবে। তাই বলে আমার বিয়েতে সে স্ত্রী সন্তান নিয়ে হাজির হবে এটা আমি সত্যিই কখনো কল্পনা করিনি
আমাকে ঠাঁই হয়ে বসে থাকতে দেখে ডক্টর রায়ান স্টেজের দিকে এগিয়ে এলেন। হঠাৎ বাজি ফোটানোর শব্দ শুনে আমি হকচকিয়ে উঠলাম, পার্টি স্প্রে করে ফুল ছিটিয়ে সবাই খুব জোরে চেঁচাতে লাগলো। মুহুর্তেই তাকে ঘিরে ফেলল সবাই, আমার কাজিন রা নাচানাচি করে তাকে নিয়ে স্টেজে উঠলো। আমি বোকার মতো তাদের কার্যকলাপ দেখছি। উনি তো ভাই শাহরুখ খান না যে তাকে ঘিরে এমন নাচানাচি করা লাগবে সবাই কী পাগল হয়ে গেল নাকি তার গেটাপ দেখে কনফিউজড হয়ে গেছে? এই বাচ্চার বাপ আমার বর হবে এই চিন্তা ওরা করলো কীভাবে! স্টেইঞ্জ!!
কিন্তু না কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি টের পেলাম বোকা ওরা না আমিই বনে গেছি। কনফিউজড ওরা না আমিই হয়ে আছি। আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি, ডক্টর রায়ান কে নিয়ে গত কিছুদিন বেশি ভাবার ফলেই হয়তো স্বপ্ন দেখছি তার সঙ্গে আমার বিয়ে হচ্ছে। স্বপ্নে যেমন লজিক মতো কিছু ঘটেনা, আমার সাথেও ঘটছেনা। সবকিছু মোহের মতো লাগছে। হাতে চিমটি কাটতেই ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে দেখি এটা স্বপ্ন না।
পুরোটা সময় উনি আমার সঙ্গে একটা কথাও বলেননি। আমি যে পাশে আছি সেটাও যেন তার মনে নেই। অথচ সবার সঙ্গে এমনভাবে হাসিমুখে কথা বললেন যেন কতদিনের চেনা।
রুমে ফিরে মেকাপ তুলতে তুলতে বললাম, মুন্নি ঘটনা কী হলো বল তো! উনি ডক্টর রায়ান থেকে আজফার ইয়াসির কিভাবে হয়ে গেলেন? নাকি নিকনেইম টা ইচ্ছে করে সিভিতে লেখেনাই?”
“আমার মনে হয় আন্টি এই বিষয়টা জানতেন। নয়তো তোকে ছবি না দেখিয়ে টেলিফোনে বিয়ে দিতে রাজী হয়েছিলেন কেন? ”
“তোর কথায় যুক্তি আছে, শালা সেদিন এসে আম্মু কে ঠিকই বশ করেছিল। আমিও তো বলি আম্মু এতো খুশি কেন।”
“তোর তো ভালোই হলো, পছন্দের মানুষ কে পরিবারের মাধ্যমেই পেয়েছিস। ”
“খুশি না ছাই, কথা হচ্ছে উনি আমার সঙ্গে একবার ও কথা বলেন নি, মিনিমাম কুশল বিনিময় পর্যন্ত করেনি।”
“তুই ও তো করিস নি! তাছাড়া উনার রাগ করা জায়েজ। তোর ভাষ্যমতে উনি তোর প্রতি আগ্রহী ছিল। তারপরও তুই যেভাবে নিখোঁজ হয়েছিলি আমি হলে আমিও রাগ করতাম।”
“রাগ করলে করুক না, এমন ঢ্যাং ঢ্যাং করে বিয়ে করতে আসলো কেন?”
“বাহ বস বাহ! ড্রামায় নায়করা এসব করলে রোমান্টিক সারপ্রাইজ, রিয়েল লাইফে করলে শালা? হিপোক্রেট একটা!”
“কি রে ভাই, তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে আমার বিপক্ষে যাচ্ছিস!”
“বিপক্ষে কই, জাস্ট সত্যিটাই তুলে ধরলাম।”
মুন্নির হাজবেন্ড এসে নক করায় আমাদের ঝগড়াটা শুরু হতে গিয়েও হলোনা। খুব ক্লান্তবোধ হলেও সে রাতে নানাবিধ চিন্তায় দুচোখের পাতা এক করতে পারছিলাম না। আমি আনন্দিত হবার বদলে শঙ্কিত হচ্ছিলাম পরবর্তী সময় নিয়ে। উনার সঙ্গে কথা বলতে পারলে হয়তো এতো অসুবিধা হতো না। মনমেজাজ খারাপ করে বিছানায় ছটফট করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই।
পরদিন ঘুম থেকে উঠেই মায়ের খোঁজে গেলাম। আম্মুকে টেনে উনার ঘরে নিয়ে বললাম, “তুমি আমাকে বলোনি কেন ডক্টর রায়ানের সঙ্গে আমার বিয়ে হচ্ছে? আর কালকে উনি আসবেন সেটাও তো কেউ বলোনি আমাকে…”
আম্মু ডোন্ট কেয়ার মুডে বলল, “আমি কিছু জানিনা বাবা, আমাকে অযথাই এসব বলছিস। এটা নেহাতই কাকতালীয় ব্যাপার। কেন এক শহরে থাকলে পরিচিত মানুষের সাথে বিয়ে হতে পারেনা?”
“আম্মু তুমি যতোই জাস্টিফাই করোনা কেন এটাকে কাকতালীয় বলা যায় না। সত্যি কথাটা বলে ফেলো দেখি।”
আম্মু আমার কথা পাত্তা না দিয়ে বললেন,” এতো লেট করে উঠেছিস এখনো গোসল করানো হয়নি। মেকাপ করাতে আবার কয় ঘন্টা লাগবে কে জানে। দেখি সর তো আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।”
।
বিয়ে নিয়ে মেয়েদের মনে কত স্বপ্ন থাকে। সেই ছোট থেকেই তাকে জানিয়ে দেয়া হয় সে পরের ঘরের সম্পদ। একটা সময় তাকে বাবার বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়ির বৌ হতে হবে। এই দিনটা ঘিরে বাবা-মায়ের কত কল্পনা জল্পনা থাকে, আদরের মেয়েকে পরের বাড়িতে পাঠানোর আগে প্রতিটা বাবা তার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা দিয়ে রাজকন্যা কে মুড়িয়ে রাখার চেষ্টা করে। আমার বাবাও তার ব্যতিক্রম নয়। আমার বিয়েতে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন কোনো খামতি না রাখার। আমি বড় হবার পর কখনো আব্বু কে জড়িয়ে ধরিনি। কিন্তু উনি যখন আমার হাত রায়ানের হাতে তুলে দিয়ে কাঁপা গলায় আমার দায়িত্ব দিচ্ছিলেন আমি নিজের কান্না আটকাতে পারিনি। আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কেঁদেছি, তিনি আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেই কান্না করে দিয়েছিলেন। সেই মুহুর্তের কথা ভাবলে আজও চোখ ভিজে আসে। মনে হয় সমাজের এই নিয়মটা খুবই খারাপ। পরের ঘরে পাঠানোর নিয়ম যে করেছে সে খুব নিষ্ঠুর….
অতঃপর আমার জীবনে অন্য এক অধ্যায় শুরু হলো।
চলবে…