টিউলিপ পর্ব-০৪

0
4

#টিউলিপ (পর্ব_৪)
#আরশিয়া_জান্নাত

বিদায়ে কান্না করতে করতে চোখের পাতা ফুলে ঢোল হয়ে গেছে, তার উপর প্রচুর মাথা ব্যথা। এখন একটা শান্তির ঘুম না দিলেই নয়। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছিল ঘুমানো অসম্ভব ব্যাপার। চারপাশে ফুলের এতো সুভাষ যে রীতিমতো দমবন্ধ লাগছিল আমার, ওদিকে ডাক্তার সাহেবের খোঁজ নেই। তাই উঠে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। এখনো অনেকেই লনে বসে গল্পগুজব করছে, নীল সাদা বাতিতে পুরো বাড়ি সাজানোতে রাত হবার পরো রাত মনে হচ্ছে না। আমি বেলকনিতে থাকা চেয়ারে বসে ঝিমুতে লাগলাম।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করি। আমি কেমন মেয়ে ভাবুন, বাসর রাত ঘুমিয়েই পার করে দিয়েছি। ডক্টর রায়ানের সঙ্গে আমার অনেক কথা ছিল, কৌতুহল ছিল অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর জানার। আমি মনে মনে লিস্ট ও বানিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু ঘুমের কারণে কিছু ই বলা হয়নি। আমি নিজের কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে মনে পড়লো আমি তো খাটে ঘুমাই নি, তবে এখানে আসলাম কীভাবে!
আশেপাশে তাকিয়ে উনার উপস্থিতি টের পেলাম না। লোকটা কী আমাকে এভয়েড করছে? রাতে কখন এসেছে,আমাকে ডাকলোনা কেন? আবার সকালেই বা কোথায় হাওয়া হয়ে গেল। গতকাল গাড়িতেও কথা বলতে পারিনি অনেকেই ছিল বলে। উনার সঙ্গে আমার কোনো কথাই কেন হচ্ছে না, আশ্চর্য!

শাওয়ার নিয়ে তৈরি হয়ে বসতেই দরজায় নক পড়লো, দরজা খুলতেই একদল মেয়ে এসে বললো, “ভাবি আমরা আপনাকে নিতে এসেছি। চলুন সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”

আমি ভদ্রতাসূচক হাসি দিয়ে তাদের সঙ্গে গেলাম। ওরাই চেয়ার এগিয়ে বসতে দিলো, আমি তখনো চারপাশে তাকে খুঁজছিলাম।কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি উপস্থিত হলেন, সাদা পাঞ্জাবিতে তাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছিল। লোকে বলে হলুদের পানি পড়লে নাকি মানুষ সুন্দর হয়ে যায়। উনি কী সেজন্যই এমন সুদর্শন হয়ে গেছেন, নাকি আমার চোখেই অন্যরকম দেখাচ্ছে? আমি তার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকায় তিনি কাশি দিয়ে ধ্যান ভাঙালেন। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে প্লেটের দিকে দৃষ্টিপাত করলাম। সবাই নানারকম গল্প গুজব করে খেতে লাগলো।
খাওয়া শেষে তাজরিন আপু অর্থাৎ আমার বড় ননাস আমাকে উনার সঙ্গে নিয়ে গেলেন। একটা রুমে বসিয়ে বললেন, “নওরিন রায়ান আমার খুব আদরের ভাই। ও এমন এক পেশায় আছে যেখানে পার্সোনাল লাইফ বলে কিছু নেই। যেকোনো সময় তাকে ইমার্জেন্সি চলে যেতে হয়। এক মিনিট দেরি হলেই পেশেন্টের জীবন মরণ অবস্থা। ওর এই ব্যস্ততার সঙ্গে মানিয়ে নেয়া তোমার জন্য একটু কঠিন হতে পারে। আশা করি তুমি ধৈর্য্যের সাথে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করবে। ও এমনিতে খুব কেয়ারিং, চুপচাপ স্বভাবের হওয়ায় অনেকেই ওকে বুঝতে পারেনা। তুমি তো জানো আমাদের মা-বাবা কেউ আর বেঁচে নেই। এই সংসার এখন তোমার উপরেই। তুমি এই সংসারটাকে যত্নে আগলে রেখো। আমার ভাইয়ের দায়িত্ব তোমাকে দিচ্ছি। ওর অযত্ন করোনা…”

বলেই আপু আমাকে উনার মায়ের বালাজোড়া হাতে পড়িয়ে দিলেন। উনি চোখে পানি নিয়ে হেসে বললেন, “আজকে যদি মা থাকতো কত খুশি হতো জানো না। মা তো পারলে ভাইকে মেডিক্যাল এ এডমিশন নেওয়ার পরপরই বিয়ে করিয়ে দিতো, আমার বিয়ের পর খুব একা হয়ে পড়েছিলেন কি না, তাই সারাক্ষণ বলতেন ছেলে বিয়ে করানোর কথা।”

“আপু মন খারাপ করবেন না, উনারা যেখানে আছেন নিশ্চয়ই ভালো আছেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন উনাদেরকে জান্নাত নসীব করেন।

“আমিন। দেখো অবস্থা, ঘরভর্তি মেহমান রেখে আমি কিসব বলতে শুরু করেছি। তুমি বরং রুমে গিয়ে রেস্ট করো। ”

আমি রুমে এসে দেখি ডাক্তার সাহেব কোচে বসে আছেন, আমাকে দেখে উনি বিশেষ প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। আমি উনার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম, “আপনার চশমায় কী এন্টি নওরিন পাওয়ার আছে যে আমাকে ইনভিজিবল করে রেখেছে!”

“কেউ যদি স্বেচ্ছায় ইনভিজিবল হতে চায় তাকে ভিজিবল করার ক্ষমতা কারো আছে?”

“ক্ষমতা নেই বলছেন? তবে খুঁজে বের করলেন কীভাবে?”

” নওরিন আপনার কী মনে হয় না আপনার প্রপার স্যরি বলা উচিত? কিংবা আমি আপনার থেকে এক্সপ্লেইনেশন ডিজার্ব করি?”

“আমাদের মাঝে কী জবাবদিহিতার সম্পর্ক ছিল ডাক্তার সাহেব? ”

উনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন, “কিছু ছিল না বলছেন? সত্যিই কী কিছু ছিল না?”

“আমি আপনার রেগুলার পেশেন্ট ছিলাম, না আমি কখনো কিছু বলেছি, না আপনি বলেছেন। তবে এখানে স্যরি বা কৈফিয়ত এর টপিক আসছে কেন?”

উনি হঠাৎ ভীষণ রেগে গেলেন, আমার বাহু চেপে কাছে টেনে বললেন, “সবকিছু আপনার জন্য এতো সহজ নওরিন? আমি আপনাকে পাগলের মতো খুঁজেছি, আপনার ফোন নাম্বারে কতবার কল করেছি, টেক্সট করেছি। আপনি হুট করে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। আপনার বাসার ঠিকানা পর্যন্ত বদলেছেন। একটা জলজ্যান্ত মানুষ একদম নাই হয়ে গেল, কোনোভাবেই তাকে রিচ আউট করা যাচ্ছিল না। কী পরিমাণ মেন্টাল প্রেশারে গেছি আইডিয়া আছে আপনার!”

আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে গাঢ় গলায় বললাম, “আমাকে কেন খুঁজেছিলেন আপনি?”

উনি আমার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকালো। সেই তাকানোতে কি ছিল জানি না তবে ভেতরটা পর্যন্ত নাড়া দিয়ে উঠে, মনে হয় আমি সত্যিই খুব অন্যায় করেছি এই মানুষটির সাথে। তার চোখের করুণ চাহনি এটাই বলে আমার ধারণা ভুল ছিল না,এই মানুষটা আমার প্রতি আগ্রহী ছিল। আমার অনুমানের চেয়ে বেশি ই ছিল।
তিনি হাত ছেড়ে দিয়ে বসে কপাল ঘষে বললেন, “আমার মাথাটা ভীষণ ধরেছে। আপনি একটু মালিশ করে দিবেন?”

টি টেবিলের উপরেই টাইগার বাম ছিল, সেটা নিয়ে তার কপালে মালিশ করতে লাগলাম। উনি চোখ বুজে ঠাঁই হয়ে বসে রইলো।

“আচ্ছা আপনি গতকাল আমাকে ডাকেন নি কেন?”

“যেভাবে সারা রাস্তা কান্না করেছেন, বুঝেছিলাম খুব ক্লান্ত হয়ে গেছেন। তাই আর ডাকিনি।”

” সত্যি বলুন তো বিয়ে টা কাকতালীয় ছিল নাকি আপনার কারসাজি?”

“আমি আপনার উপর প্রচন্ড রেগে আছি নওরিন। পারলে সেই রাগ আগে ঠান্ডা করুন। তারপর সকল প্রশ্নের জবাব দিবো।”

“বিরিয়ানি রান্না করলে রাগ কমবে? আমি এখন খুব ভালো কাচ্চি রান্না করতে পারি…”

“নাহ।”

“তাহলে ডেজার্ট আইটেম করবো? কিংবা চাইনিজ?”

“আপনি কী শেফ হয়ে গেছেন? সব দেখি খাবার!”

“আমার দাদী বলতো বাঙালি পুরুষদের মন পেটের সাথে কানেক্টেড। পেট খুশি হলেই তাদের মন খুশি হয়ে যায়।

“তাই নাকি! সেজন্যই বুঝি রান্না খাইয়ে মনে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন?”

আমি মাথা নেড়ে বললাম, উঁহু… আমি নেহাতই সহমর্মিতা থেকে কাজটা করেছিলাম।

“তা সবার বেলাই বুঝি এই সহমর্মিতা কাজ করে?”

“আপনি কথা অনেক প্যাঁচান।”

“এসবে আমার মান ভাঙবেনা নওরিন‌। অন্য কিছু ট্রায় করুন।”

“আচ্ছা যান আমি যত সালামি পেয়েছি সব আপনার।”

রায়ান এবার চোখ সরু করে আমার দিকে তাকালো। মাথা নেড়ে বললো, “নাহ আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা। আশা রেখে লাভ নেই।”

আমি উনার গালে হাত রেখে বললাম, আপনার জীবনে অনেক খারাপ সময় গেছে তাই না? একা একা নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হয়েছিল নিশ্চয়ই!

উনি মুচকি হেসে বললেন,”আমার জন্য মায়া হচ্ছে বুঝি?”

“নাহ কিছু ই হচ্ছে না হ্যাপি?”

উনি আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন, “আপনার মনে আমার জন্য মায়ার পাহাড় গড়ে উঠুক, এর বিশালতা এতো বেশি হোক যেন আর কখনো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার দুঃসাহস করতে না পারেন….”

দুপুরে বিউটিশিয়ান এসে আমাকে বৌভাতের জন্য সাজানো শুরু করলো। এর মাঝেই আমার বাসার সবাই আসে। মুন্নি ওর বাচ্চাকে হাজবেন্ড এর কাছে দিয়ে আমার পাশে এসে বসে। গলা নামিয়ে বলে, “কিরে কথাবার্তা বলেছিলি ঠিকমতো ? রহস্য সমাধান হয়েছে?”

“আর সমাধান, বললো শুধু কঠিন রেগে আছে আমার উপর। রাগ না ভাঙালে কিছু ই বলবেনা।”

মুন্নি ডাইনির মতো হেসে বললো, “এই কথায় তো রাগ দেখছি না সোনা, বরং মধু ঝরে পড়ছে। তুই এর মানে বুঝেছিস তো?”

“আচ্ছা তুই ই বল আমি উনার সাথে কানেকশন কেটেছি এটা অন্যায় ছিল? কোনো ধরনের কমিটমেন্ট তো আমাদের হয়নি। যদি এখানে সেরকম কিছু ঘটতো তারপর আমি না বলে চলে যেতাম তবেই না রাগ করা যুক্তিযুক্ত। যেখানে আমার কোনো দোষ ই নেই আমি কেন রাগ ভাঙাতে যাবো!”

মুন্নি আমার মাথায় চাটি মেরে বলল, “নাটক কম করো পিও। তুমি যেভাবে কটা দিন তার পিছে পড়েছিলে অনুভূতি জন্মানো কঠিন ছিল নাকি? তাছাড়া সেও তো গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছিল। মনের কথা প্রকাশ পাওয়ার সময়েই তো তুই সবকিছু বন্ধ করেছিলি। সে এখনো তোকে মনে রেখেছে তারপরও তোর বুঝতে অসুবিধা হয় তোর ফল্ট কী?”

“তুই বিয়ের পর অনেক বদলে গেছিস মুন্নি। হাহ…”

“বদলে যাই নি, শুধু ছেলেদের মন বুঝতে শিখেছি।”

“হুহ ঢং….”

আপুর মেয়ে তুনাজ্জুন আমার সঙ্গে বসে খেলনা দিয়ে খেলা করছিল, আর পাশেই রায়ান শুয়ে আমাদের দেখছে। তুনাজ্জুন খুব কিউট বাচ্চা। ও এখনো স্পষ্ট কথা বলতে পারেনা, আধো আধো বুলিতে কিসব বলে বোঝা যায়না। তবুও এতো আদর লাগে ওকে। তাজরিন আপু এসে ওকে‌ নিয়ে বললো, “তোমাকে কষ্ট দিলাম। আসলে বড়টা বয়সেই বড় হয়েছে। কাজেকর্মে তনুর চেয়ে বেশি বাচ্চা। তনু সোনা চলো আম্মুর সাথে, আমরা এখন ঘুমু দিবো। ভাই আমরা তো কাল সকালে রওয়ানা হবো। ড্রাইভার কে বলে দিস সকালে চলে আসতে।”

“এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবি? আরো ক’টা দিন থেকে যা?”

“নাহ রে অনেক দিন আছি এখানে, তাছাড়া মাহিনের পড়াশোনা আছে। এখানে তো একটা দিন পড়তে বসাতে পারিনাই।”

“তুই একবার গেলে আর সহজে আসিস! ”

“এখন আর টেনশন কী তোকে একা তো ফেলে যাচ্ছি না। তোর সাথে এখন নওরিন আছে। আমার চিন্তা অনেকটাই শেষ হলো।”

আপু তুনাজ্জুনকে নিয়ে চলে গেল। আমি চুপচাপ নিচেই বসে আছি।

“সারারাত কী এখানেই বসে কাটানোর প্ল্যান আছে?”

“না পায়ে ঝিনঝিন ধরেছে, এখন উঠা যাবেনা…”

“আমি কী হেল্প করবো?”

“না না ঠিকাছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।”

উনি আমার কথা পাত্তা না দিয়ে নিচে নেমে আসলেন আমার পাশে বসে বললেন, “একটা সত্যি কথা বলবেন?”

“কী?”

“আপনি কী কোনো কারণে আমার উপর বিরক্ত হয়েছিলেন? আমি কিছু না বলে আপনার বাসায় গিয়েছিলাম…..”

“না না না ছিঃ কী ভাবছেন এসব। ওরকম কিছু ই না।”

“তাহলে?”

“আমি ভয় পেয়েছিলাম।”

“ভয়?”

” হুম। আমার মনে হয়েছে আমি খুবই আবেগপ্রবণ মেয়ে। হয়তো আমি খুব দ্রুত আপনার প্রতি দূর্বল হয়ে যাবো। যেটা পরবর্তীতে নানা সমস্যার সৃষ্টি করবে। ভালোবাসার বিনিময়ে সবাই তো আর ভালোবাসা পায় না। তাই অল্পতেই মায়া কাটিয়ে ফেলাই উত্তম মনে হয়েছে।”

“আপনি তাহলে সফল ই হয়েছেন। আমার কথা ভুলে কি সুন্দর বিয়ে করে সুখী হয়ে যাচ্ছিলেন….”

“আমরা মেয়েরা খুব স্ট্রং বুঝলেন, আমরা চাইলেই সব করতে পারি।”

“আমি ভেবেছিলাম আপনাকে সামনে পেলে কঠিন শাস্তি দিবো। শাস্তি কী দেওয়া যায় তা ভেবে বহুরাত কাটিয়েছি। কিন্তু কোনোটাই মনে সায় দেয়নি। এমন নয় আমি চাইল্ডিশ, আমি যথেষ্ট ম্যাচিউর একজন মানুষ। তবুও আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। আমার মনে হয়েছে আপনি আমার সঙ্গে অন্যায় করেছেন। আমাকে সময় দেননি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার। তবে এটাও অস্বীকার করবোনা আপনার যদি অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যেতো, আমি কখনোই আপনাকে ক্ষমা করতাম না….”

“এখনো তো ক্ষমা করছেন না! নাকের ডগায় রাগ নিয়ে বসে আছেন….”

“আমি মোটেও রাগ নিয়ে বসে থাকিনি। রাগ করে থাকলে আপনার সঙ্গে এতো সহজ সাবলীল কথাবার্তা বলতাম না।”

“রাগ নেই বলছেন?”

“হুম নেই। পরে ভেবে দেখলাম আপনার কথায় যুক্তি আছে, আমাদের মধ্যে আসলেই কোনো কমিটমেন্ট ছিল না। এখন এই ভেবে বরং হাসি পাচ্ছে আমি অযথাই কত পাগলামি করেছিলাম। ইউ নো হোয়াট আমি মরতে……”

আমি আঁতকে উঠে বললাম, “কি বলছেন আপনি এসব! এতো ডেস্পারেট থিংকিং আপনার আসলো কিভাবে?”

উনি কোনো জবাব দিলেন না, মৃদু হেসে বললেন,”আমাকে বাহ্যিক ভাবে যতোটা দৃঢ় মনে হয় আমি ততোটাই দৃঢ় নই নওরিন। আমি মেডিকেলে ভর্তির ২য় বছর আমার মা মারা গেছেন, মায়ের শোকে শোকে বাবাও চলে গেছেন। আমার এই পৃথিবীতে বোন ছাড়া কেউ ছিল না। আমি জানি না তারপরও আমি কীভাবে সার্ভাইব করেছি। যাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছি, যারা পরম আশ্রয় হয়ে আমাদের বড় করেছেন। তারা সব শিখিয়েছেন জানেন কিন্তু তাদের ছাড়া এই পৃথিবীতে কিভাবে থাকতে হয় তা শেখাননি। আমি ভেবেছিলাম আমি বেশিদিন টিকতে পারবোনা। কিন্তু মানুষ আসলে এতো সহজে মরেও না। আমিও মরিনি। ”

আমি উনার হাত মুঠোয় নিয়ে বললাম, “আল্লাহ আপনাকে অনেক ভালোবাসে, তাই আপনাকে কঠিন পরীক্ষা করেছেন।”

“তাই নাকি!”

“হুম।”

“যাই হোক, রাত তো কম হলোনা, ঘুমাবেন চলুন। কাল সকালে ভোরে উঠতে হবে।”

“ডাক্তার সাহেব?”

“জ্বি?”

“স্যরি ফর এভরিথিং!”

“স্যরি হতে হবে না। ইটস ওকে”

“কিছু ওকে না, আমার সত্যিই খুব গিল্টি ফিল হচ্ছে।”

“বেশি গিল্টি ফিল হলে আমাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে পারেন, আমি কিছু মনে করবোনা..”

আমি আর দেরি না করে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম এই মানুষটাকে আমি অনেক ভালোবাসবো, অনেক অনেক অনেক ভালোবাসবো। তাকে আর কখনোই একা ফেলে যাবোনা…

চলবে..