#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব১৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
রাস্তার পাশে রাগে গজগজ করতে করতে এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে ঐশী।
শুভ একবার ঐশীর দিকে তাকিয়ে আবার ঘড়ির দিকে তাকালো।
শুভঃ পাগলামো করোনা ঐশী। আমার সাথে চলো৷
ঐশীঃ একদম আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না৷
শুভঃ রাস্তার লোকজন তাকিয়ে আছে।
ঐশীঃ তাতে কি আপনার মানসম্মান ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে …? আপনি চলে যান।
শুভঃ আমি তোমার সাথে যাবো।
ঐশীঃ আপনি কেনো যাবেন..??
শুভঃ মৌ আমাকে ও দাওয়াত দিয়েছে।
ঐশী অবাক হয়ে গেলো। শুভকে কেনো দাওয়াত দিয়েছে ওরা।
শুভঃ এবার তো চলো।
ঐশীঃ আমি যাবো না।
শুভঃ বেশি কথা আমার পছন্দ না ঐশী।
ঐশীঃ আমি বলতে বলেছি?
শুভঃ এবার কিন্তু কোলে নিয়ে নিবো। তুমি কি এটাই চাচ্ছো..?
ঐশী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ এখানে কোনো শুটিং হচ্ছে না। আর আমার গায়ে হাত দিলে আপনার এই হাতটা যে নষ্ট হয়ে যাবে। ‘
শুভ অবাক হয়ে যাচ্ছে ঐশীর কথা শুনে।
শুভঃ ঠিক আছে বাসায় চলো৷
ঐশীঃ কোন বাসায়..?
শুভঃ ঐশী লাস্ট বলছি আমার রাগ তুলো না প্লিজ।
ঐশীঃ রাগ উঠলে কি করবেন..? থাপ্পড় বসাবেন..? মারেন থাপ্পড় এটাই পারবেন আর কিছু না।
শুভঃ তুমি কি চাও আমি অন্য কিছু করি..?
ঐশী কিছু না বলে শুভর সামনে গিয়ে বললো,’ আর মাত্র ১৫দিন তারপর আমাদের মধ্যে সব শেষ।
শুভঃ মানে..?
ঐশীঃ যেটা আপনি চেয়ে ছিলেন।বলেই ঐশী হাঁটা ধরলো বাসার দিকে।
শুভ ঠিক আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ঐশী ওকে ছেড়ে যেতে চাচ্ছে। অবশ্য এটাই ওর প্রাপ্য। প্রথমেই এতো কাহিনি না করে ঐশীকে মেনে নিলে আজ এমনটা হতো না। তবে সে ঐশীকে কখনো ছাড়বে না। ঐশী ছেড়ে যেতে চাইলেও না। নিজের ভুল সে শুধরে নিবে।
ঐশীকে আবার বাড়িতে আসতে দেখে বিথী সহ সবাই বললো,’ ফিরে এসেছে কেনো? কি হয়েছে..??
ঐশী বললো ওর শরীর ভালো লাগছে না। তাই চলে এসেছে। ওর রুমে যেনো কেউ না যায়।
বিথী তাকিয়ে আছে ঐশীর যাওয়ার দিকে। কিছু তো একটা হয়েছে।
ঐশী নিজের রুমে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে পূর্ণার অনেক কল এসে আছে কিন্তু পূর্ণা এতো কল কেনো দিয়েছে…?
ঐশী কল দিতেই পূর্ণা কল ধরে বলে উঠলো, ‘ ভাবিপু আজ তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
ঐশীঃ কিসের সারপ্রাইজ পূর্ণা..?
পূর্ণাঃ ভাই আজকে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের কথাটা।
ঐশীঃ কি!! কিন্তু কেনো..??
পূর্ণাঃ ভাই বাসায় এসে তোমার খোঁজ করছিলো তখন আমি ভাইয়াকে সব বলে দিয়েছি। ভাইয়া রেগে গিয়ে সোনিয়ার গালে থাপ্পড় বসিয়ে বলেছে, ‘ সোনিয়া তোমার এতো বড় সাহস হয় কিভাবে ঐশীকে এইসব বলার..?
সোনিয়া আপু তখন রেগে বললো,’ ওই মেয়েকে রাতে তোমার সাথে রাখার মানে কি..? একটা মেয়ে কেনো সারা রাত তোমার সাথে থাকবে..?
শুভঃ কারন সে আমার বউ। আমার বউকে এইসব বলার সাহস দ্বিতীয় বার ভুলেও করবে না।এবার ছেড়ে দিলেও দ্বিতীয় বার দিবো না।’
তখন সোনিয়া অবাক হয়ে বললো,বউ কে আপনার..? তখন ভাই ড্রয়িং রুমে সবার সামনে তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের কথা বলেছে। আর কি বলেছে জানো..?
ঐশীঃ কি!..?
পূর্ণাঃ না, না এটা তোমার জন্য সব থেকে বড় সারপ্রাইজ এটা বলা যাবে না।
ঐশীঃ কিসের সারপ্রাইজ..?
পূর্ণাঃ বাদ দাও তো। আশা করি খুব জলদি সব ঠিক হয়ে যাবে।
ঐশীঃ হুম খুব জলদি ঠিক হয়ে যাবে।
পূর্ণাঃ তুমি তারাতারি চলে আসো ভাবিপু।
ঐশীঃ আমি আর কখনোই ফিরবো না ওই বাড়িতে পূর্ণা। কখনই না!
বিথী বসে আছে ছাঁদের এক কোনায়।
প্রথম দিন বিথী যখন বাড়িতে আসে সবাই ভূত দেখার মতো চমকে যায়। বিথীর আম্মু ওকে জড়িয়ে ধরতে গেলে ও দূরে সরে যায়। সবাই কতো কথা জিজ্ঞাসা করে কিন্তু বিথী মুখ খুলে না। এখনো কাউকে কিচ্ছুটি বলেনি। বিথীর আব্বু ওর সামনে আসে না কিন্তু কেনো..? শুধুই কি বিথীর এই অল্প আবেগের বসে করা কাজের জন্য নাকি অন্য কিছু..?? ওর আম্মু মেয়ের পাশে পাশে থাকতে চাচ্ছে কিন্তু বিথী ঠিক করে নিজের মায়ের সাথেও কথা বলছে না। কেনো বলবে কথা এতো দিন তো কেউ একটা খুঁজ খবর নেয়নি ওর। ছোটো আব্বু দু একবার গিয়ে ছিলো কিন্তু বিথীর সাথে একবার ও দেখা করতে পারেনি। কালকে একটা চাকরির ইন্টারভিউ আছে, চাকরিটা হয়ে গেলে সে চলে যাবে। নিজের সন্তানকে নিয়ে নিজের মতো করে বাঁচবে। আর সব থেকে বড় কাজ হলো খুব জলদি আকাশকে ডিভোর্স পেপার পাঠাতে হবে।
বিথীর পাশে গিয়ে বসলো ঐশী।
ঐশীঃ এবার বলো গালের দাগ, কপালের কাটা, ঠোঁট ফাটা, হাত পোড়ারক্ষত এইগুলো কিভাবে..??
বিথী ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমার জন্য তোর জীবনটাও নষ্ট হয়ে গেলো রে ঐশী।
ঐশী অবাক হয়ে বললো,’ আমার জীবন কেনো নষ্ট হবে..??
বিথীঃ আজ যদি আকাশের সাথে আমি আগে সম্পর্কে না জড়াতাম তাহলে আজ তুই সুখে থাকতি। আমি জানি শুভ তোকে এখনো মেনে নেয়নি।
ঐশী আবারও বিথীর কথা শুনে অবাক হলো,’ কিভাবে জানো..?’
বিথী অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আকাশ তোর সব খবর রাখে। তোদের বিয়ে হয়েছে সেটাও বাসার বাহিরের কেউ জানেনা। এমন সম্পর্কে থাকার কি দরকার..? যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে না থাকাই ভালো।
ঐশী বুঝলো বিথীর কথার মানে।
ঐশী বিথীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি শুরু থেকে শেষ অবদ্ধি সবটা জানতে চাই। ‘
বিথী ঐশীকে সবটা বললো।
ঐশী যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ওর এই বোকা বোনটার উপর দিয়ে এতো এতো ঝড়-তুফান গেছে আর ও নিজেই কিছু জানে না। আর এই সব কিছুর পেছনে কে..? কি রহস্য লুকিয়ে আছে..? কেনো আকাশ এমন করলো..?? ঐশীর মাথায় হাজারো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু কোনোটার উত্তর সে পাচ্ছে না কিন্তু এটার শুরু যেই করুক শেষ তো ঐশীর হাতেই হবে। ওর বোনের সাথে এমন নিকৃষ্ট গেইম খেলার জন্য উপযুক্ত শাস্তি সে দিবে।
ঐশী নিজের রুমে এসে আরও অবাক হয়ে গেলো এই লোক এখানে কেনো..?
ঐশীঃ আপনি এখানে কেনো..?
শুভঃ বউ যেখানে স্বামী ও সেখানেই থাকার কথা।
ঐশীঃ ফালতু কথা রাখুন। আপনি নিজেকে স্বামী দাবি কিভাবে করতে পারেন যেখানে আমি নিজেই আমাকে আপনার বউ ভাবি না।
শুভঃ সেটা তোমার ইচ্ছে ঐশী। তুমি নিজেকে আমার বউ নাই ভাবতে পারো তাই বলে কি আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো।
ঐশী তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো,’ ধরেছেন কখন যে ছেড়ে দিবেন..? আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিলো না আর না আছে। আপনি সব ভুলে যান আমিও ভুলে যাবো।
শুভঃ আমরা দুজন পালিয়ে বিয়ে করিনি, আমরা ভুলে গেলেও বাকিরা তো ভুলবে না।
ঐশীঃ আমার বাড়ির লোকদের আমি বুঝিয়ে নিবো।
শুভঃ আর যাই বলো তুমি আমার বউ আমারি থাকবে। তোমার মুখের কথায় কিছু চেঞ্জ হবে না।
ঐশীঃ আমি আপনার সাথে এমন পুতুল খেলায় আর জড়িয়ে থাকতে চাই না।
শুভ ঐশীর কাছে এসে । ওর গালে হাত রেখে বললো,’ সব কিছুর জন্য সরি আবার সুন্দর করে নতুন করে সব শুরু করা যায় না।’
ঐশী শুভর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে দূরে সরে গেলো। টেবিল থেকে একটা গ্লাস নিয়ে বললো, ‘ এটা নিচে ফেলে দেন..’
শুভঃ এটা কেনো..?
ঐশীঃ ফেলতে বলেছি আমি।
শুভ ঐশীর কথা শুনে গ্লাসটা নিচে ছুড়ে ফেললো।
সাথে সাথে গ্লাসটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।
ঐশীঃ এবার এটাকে সরি বলুন..
শুভঃ কি!!
ঐশীঃ বলতে বলেছি বলুন।
শুভ বাধ্য হয়ে বললো,’ সরি।’
ঐশীঃ আপনার সরি বলায় এটা জোরা লেগে গেছে কি..? আমিও ঠিক এমন। একটা সস্তা মানের সরি তে সব ঠিক হয়ে যায় না। বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ঐশী নিজের রুমে আসলো। কাল বিথীর সাথে ঘুমিয়েছে বিথীও নিষেধ করেনি।
বিথী রেডি হয়ে ভাষা থেকে বেরিয়ে গেলো।
বিথীর আম্মু অনেক বার জিজ্ঞেস করলেন মেয়ে কোথায় যাচ্ছে বিথী কোনো কথার উত্তর দিলো না। নিজের আম্মু আব্বুর উপর এক আকাশ সমান অভিমান জমে আছে এতো সহজে শেষ হবার নয়৷ শুধু একটা চাকরি পেলে এই বাড়ি ও ছেড়ে দিবে সে। আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাবে না।
ঐশী নিজের রুমে এসে শুভকে কোথাও দেখলো না। নিচে গিয়ে নাস্তা করার সময় তীব্র এসে বললো,’ মোটি সর এই প্লেট টা আমার। ‘
ঐশীঃ তীব্র আমার একদম ঝগড়া করার ইচ্ছে নেই।
তীব্রঃ কিইই আমি ঝগড়া করি এতো বড় কথা।
ঐশী তাকিয়ে আছে তীব্রর দিকে গাল ফুলিয়ে মেয়েদের মতো বসে আছে।
ঐশী হেঁসে উঠলো তীব্রর গাল ফুলানো দেখে।
ঐশী ভার্সিটিতে এসে সবাইকে পেয়ে গেলো ক্যান্টিনে। শুধু মৌ বাদে বাকি সবাই আছে।
ঐশী গিয়ে ওদের মধ্যে বসে পরলো।
কেউ কিছু বলছে না।
ঐশীঃ কি রে সবাই এভাবে চুপ করে আছিস কেনো..??
দীপ্তি, অথৈ,শান্ত ওর দিকে তাকিয়ে বললো,’ কাল কোথায় ছিলি তুই..??
ঐশীঃ তোরা তো জানিসই আমি শশুর বাড়ি ছিলাম। শাশুড়ীর শরীর খুব খারাপ ছিলো রে তাই আসতে পারিনি।
অথৈঃ কেনো আন্টির কি হয়েছে..?
ঐশীঃ বাদ দে এখন ভালো আছে।
তারপর দীপ্তর দিকে তাকিয়ে ওর নিজেরও মন খারাপ হয়ে গেলো। ঐশী জানে দীপ্ত মৌ কে কতটা ভালোবাসে কিন্তু সে দীপ্তর জন্য কিছুই করতে পারলো না।
দীপ্তর কাঁধে হাত রেখে বললো,’ কি হয়েছে মন খারাপ নাকি…?
শান্তঃ বইন আমার দিকে তাকা। মন খারাপ থাকলে আমার থাকবে ওর কেনো থাকবে..?
ঐশীঃ তোর মন খারাপ কেনো থাকবে..
শান্ত আপসোসের সুরে বললো,’ বন্ধু বান্ধবী সবাই বিয়ে করে নিলো আমি এখনো সিঙ্গেল। মন খারাপ তো তোদের আমার জন্য হওয়া উচিৎ।’
ঐশী শান্তর পিঠে ডুম করে একটা বসালো। তারপর বলে উঠলো,’ আমরা মেয়ে তাই আমাদের আগে আগে বিয়ে হয়ে গেছে। তোদের সময় হলে হবে।’
শান্ত বলে উঠলো,’ তুই এখনো তাহলে আসল কাহিনি জানিস না…
ঐশীঃ আসল কি কাহিনি..?
শান্ত ঘার কাত করে অথৈ আর দীপ্তির দিকে তাকালো।
শান্তঃ ঐশী কে কিছু বলিস নাই তোরা।
দীপ্তি আর অথৈ বলে উঠলো,’ কাল কে এতো কিছুর পর সময় কই পাইলাম।
শান্তঃ ওহ্হ।
ঐশীঃ কি হইছে বলবি কেউ..? মৌ ঠিক আছে তো..?
অথৈঃ মৌ বেচারি ঠিক আছে। তবে জামাই তো কাল কে বিয়ের আগেই পালাইছে..
ঐশীঃ কিইইই!! কেনো..??
অথৈঃ তা তো জানিনা। বউকে রেডি করাই গিয়ে দেখে জামাইর রুমে জামাই নাই। মোবাইলে ফোন দিলো কিন্তু বন্ধ। অনেক খোজার চেষ্টা করেও জামাই যখন পেলো না তখন..
ঐশীঃ তখন কি..??
অথৈঃ বড় ভাই বিয়ের দিন পলাইছে তাই ছোটো ভাই কে দিয়ে কাম সেরে ফেলেছে।
ঐশীঃ কিইই সত্যি!!
অথৈঃ হুম।
ঐশী গিয়ে খুশিতে দীপ্ত কে জড়িয়ে ধরলো।
শান্তঃ ওরে ছাড়, বেচারার বউ বাসর রাতে ঘরে জায়গা দেয় নাই, তাই মন খারাপ বলেই হেঁসে উঠলো।
পাশ থেকে একটা পরিচিত কন্ঠ বলে উঠলো,’ কাকে বাসর রাতে ঘরে জায়গা দেয়নি..?’
সবাই চমকে পিছনে তাকালো। পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ।
শান্ত আমতাআমতা করে বললো,’ স্যার আপনি..?’
শুভ অবাক হয়ে বললো,’ আমি! আমি কখন বউকে ঘরে জায়গা দেয়নি..? তোমাদের ফ্রেন্ড কে জিজ্ঞেস করো বিয়ের দিন রাতে তোমার ফ্রেন্ড ভিতর দিয়ে দরজা দিয়ে রুমে বসে ছিলো। তাই আর বাসর রাতে বউয়ের মুখ দেখে হলো না। এটা কি আমার দোষ..? ‘
সবাই চোখ বড় বড় করে ঐশীর দিকে একবার আরেক বার শুভর দিকে তাকাচ্ছে।
ঐশী প্রথমে শুভকে দেখে রেগে গেলেও এখন রাগের থেকে বেশি লজ্জা লাগছে। সব গুলা কিভাবে তাকিয়ে আছে।
শুভ গিয়ে ঐশীর পাশের চেয়ারে বসে পড়তেই সবাই দাঁড়িয়ে গেলো।
শুভঃ তোমরা দাঁড়িয়ে গেছো কেনো..? ক্লাসে আমি তোমাদের স্যার আর বাহিরে…
শুভ কিছু বলার আগেই ঐশী বলে উঠলো,’ বাহিরে সবার ভাইয়ার মতো।’
সব গুলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ঐশীর দিকে।
অথৈ মুচকি হেঁসে বললো,’ স্যার আপনি এখানে…? ‘
শুভঃ হুম আমি। কেনো আমিকি তোমাদের কোনো সমস্যায় ফেলে দিলাম এসে।
অথৈঃ না, না একদম না। আপনাকে দেখে ভালোই লাগছে। কি খাবেন স্যার।
শান্ত ফিসফিস করে বললো,’ স্যারের কি হইছে রে মাথা ঠিক আছে তো..??’
দীপ্তঃ চুপ থাক এখন। আর দেখে যা কি হয়।
শুভ অথৈ কে বললো,’ না আমি কিছু খাবো না তবে তোমাদের ট্রিট দিবো আজ ভেবে রেখেছি।’
শান্তঃ ভাই স্যারকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা।
দীপ্তিঃ শান্তর বাচ্চা চুপ থাক।
অথৈঃ কিসের ট্রিট স্যার..?
ঐশী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে শুভ ঐশীকে ইশারা করে বললো,’ আমাদের বিয়ের। ‘
চলবে…
#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_২০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
দীপ্ত, দীপ্তি, শান্ত, অথৈ সব গুলো গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে।
ঐশী ওদের কিছু বলতে যাবে তখনি শান্ত বলে উঠলো,’ এতো বড় ধোঁকা!! একটুর জন্য হার্ট অ্যাটাক করি নাই।
দীপ্তি শান্তর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,’ দুস্ত চিমটি কাট তো। মনে হয় কাল রাতে যে ঘুম হয় নাই তাই এখন জাইগা জাইগা স্বপ্ন দেখতেছি।’
শান্ত দীপ্তির হাতে চিমটি কাটার সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো দীপ্তি।
শান্তর পিঠে ডুম করে একটা কিল মেরে বললো,’ শালা এতো জুড়ে চিমটি দেয় কেউ। ‘
শান্ত রেগে বললো,’ তুই তো বললি।’
অথৈঃ থামবি তোরা…!
দীপ্তঃ ঐশী স্যার যেটা বলে গেলো সবটা কি সত্যি..?
ঐশী দুই হাত উপরে তুলে হামি দিয়ে বললো,’ তোর কি মনে হয়। ‘
অথৈঃ আমি আগেই এমন কিছু একটা ভাবছিলাম।
শান্তঃ যেই স্যার আমাদের কাউকে দেখতে পারে না উনি কিনা তোকে বিয়ে করছে কেমনে কি ভাই…?
ঐশী রেগে বললো,’ আমাকে বিয়ে করছে বলে এতো অবাক হওয়ার কি আছে। তোদের স্যারের কপাল ভালো আমার মতো সুন্দরী, স্মার্ট, হাসিখুশি, ভদ্র একটা বউ পেয়েছে।উনার মতো এমন গম্ভীর, আনরোমান্টিক , শক্ত মনের লোক কে কোনো মেয়ে বিয়ে করতে চাইতো না।’
অথৈঃ আমার ক্রাশ কিনা বান্ধবীর জামাই হয়ে গেলো। আমাদের সাথে কেনো এমন হয়। বিয়ের দিন এক বান্ধবীর জামাই পালাই যায়। আর আমার ক্রাশ বান্ধবীর জামাই, ভাল্লাগে না কবে নিজের জামাইর দেখা পামু।
কথা শেষ করতে না করতেই অথৈর ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।
অথৈ রেগে মোবাইল আছাড় দিতে গিয়ে বন্ধ করে ব্যাগে রেখে দিলো৷
শান্ত অথৈর দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ তুই আবার কি লুকাস..? তোরা সব গুলা এতো হারামি কেন..
অথৈঃ ক… কি লোকামো কিছুই লুকাই নাই। আমার লুকানোর মতো কিছু নাই৷
দীপ্তি দীপ্তর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোর এখন বাড়ি যাওয়া দরকার। ‘
শান্ত দীপ্ত দিয়ে তাকিয়ে বললো,’ হ্ মামা নতুন বউ ঘরে রাইখা বেশি বাহিরে থাহন ভালা না। ঘরে যাও বলেই চোখ মারলো। ‘
দীপ্ত হাতের কলমটা ছুড়ে মারলো শান্তর উপর।
দীপ্তঃ শালা তুই আর ভালো হইবি না।
ঐশী দাঁড়িয়ে বললো, ‘ দীপ্ত আমি বিকেলে তোদের বাড়ি যাবো বাকি তোরা ও চলে আসিস। খুব জরুরি কথা আছে সবাই আসবি কিন্তু।
সবাই ভার্সিটির বাহিরে আসলো।
দীপ্তি আর দীপ্ত বাইক নিয়ে চলে গেছে।
শান্ত হাঁটা ধরেছে স্টুডেন্ট এর বাসার দিকে।
অথৈঃ একটা রিক্সায় উঠে ঐশীকে বললো বাসায় গিয়ে কল দেওয়ার জন্য।
ঐশী দাঁড়িয়ে আছে রিক্সার জন্য । তখনি ওর সামনে বাইক নিয়ে এসে দাঁড়ালো আদিত্য।
আদিত্য কে এই সময় এখানে দেখে অবাক হয়ে ঐশী বললো,’ আপনি এখন এখানে কেনো..?’
আদিত্য ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ বাইকে উঠে বসো। ‘
ঐশীঃ কেনো..?
আদিত্যঃ কিছু কথা ছিলো।
ঐশীঃ এখানে বলুন।
আদিত্যঃ সব জায়গায় সব কথা বলা জায় না।
ঐশীঃ এমন কি কথা যা সব জায়গায় বলা যাবে না..?
আদিত্যঃ প্লিজ ঐশী বেশি সময় নিবো না।
ঐশী আদিত্যর দিকে তাকিয়ে মানা করতে পারলো না। বাইকে উঠতে যাবে তখনি কোথায় থেকে শুভ এসে ঐশীর হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ ঐশী চলো আমার সাথে। ‘
ঐশী অবাক হয়ে বললো,’ কোথায়..? ‘
শুভ ঐশীর কথার উত্তর না দিয়ে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুই এখানে কেনো…?’
আদিত্য আমতা আমতা করে বললো,’ ভাই আমার ঐশীর সাথে কিছু কথা ছিলো। ‘
শুভ আদিত্যর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ “ঐশী ” ডাকটা কেমন লাগে না..? সম্পর্কে তোর বড় ভাইয়ের বউ আশা করি পরের বার আর মনে করিয়ে দিতে হবে না।
আদিত্য জোর পূর্বক মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো, ‘ জ্বি ভাই।’
শুভ ঐশীর হাতে ধরে হাঁটা ধরলো গাড়ির দিকে। ঐশী হাত মোচড়া মুচড়ি করছে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। শুভ ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ চুপচাপ হাঁটো না হলে সবার সামনে কোলে তুলে নিবো।
ঐশী রাগে গজগজ করতে করতে গিয়ে বসে পড়লো গাড়িতে।
আদিত্য তাকিয়ে আছে ওদের যাওয়ার দিকে। জীবনে প্রথম কোনো মেয়েকে মন দিয়ে ছিলো আর সেই মেয়েই কিনা বড় ভাইয়ের বউ। রাগে ফুল স্পিড দিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো।
*****************
বিথী ক্লান্ত হয়ে বাসায় ঢুকেই সামনে আকাশ কে দেখে অবাক হয়ে গেলো।
আকাশ বিথী কে দেখে একটা বিজয়ী হাসি দিয়ে কাছে গিয়ে বললো,’ জান তুমি এখানে আর আমি তোমাকে কোথায় কোথায় না খুঁজেছি। তুমি জানো আমি তোমাকে ছাড়া একদিন ও থাকতে পারি না।’
বিথী স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।
আকাশ ঘার কাত করে পিছনে তাকিয়ে বললো,’ শশুর আব্বা আপনি তো বললেন আপনার মেয়ে এখানে আসেনি। মিথ্যা বলে লাভ কি হলো৷ আমার জিনিস কিন্তু আমি ঠিক খুঁজে নিতে জানি।
বিথী ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে দেখে মাথা নিচু করে আছে৷ বিথী খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে ওর আব্বু এখন প্রচুর রেগে আছে। উনি যখন রেগে থাকেন তখন নিচের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।
ঐশী গাড়িতে বসে রাগে গজগজ করতে করতে বললো,’ সমস্যা কি আপনার..? এমন কেনো করছেন..? নতুন করে আর কি তামাশা করার প্লেন করছেন..? আপনি তো এমন লোক নন তাহলে আজ কাল এমন আচরণ কেনো করছেন..?
শুভ ঐশীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো সাথে সাথে ঐশী চোখ সরিয়ে নিলো।
এই পুরুষের মুচকি হাসি যে খুবই ডেঞ্জারাস হাজারো রাগ কে এক হাসিতে গলিয়ে দেয়।
শুভ বলে উঠলো,’ ঐশী তুমি আমার বিয়ে করা বউ। দশটা না পাঁচ টা না একটা মাত্র বউ। আর সেই একটা মাত্র বউ কে আমি কিভাবে অন্য কারো বাইকে বসতে দেই। তোমার বাইকে ঘুরবার ইচ্ছে হলে আমাকে বলো আমি এক রাতের শহর ঘুরে দেখবো তোমাকে।
ঐশী বিরক্তিকর শ্বাস ফেলে বাহিরে তাকিয়ে আছে।
বিথীকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আকাশ বাঁকা হেঁসে বিথীর গালে হাত রাখতে গেলে বিথী সরে যায়।
বিথীকে এভাবে সরে যেতে দেখে আকাশ শয়তানী হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ কি হয়েছে সোনা রাগ করেছো আমার উপর..? সরি চল আমার সাথে। বলেই বিথীর হাত ধরতে গেলে বিথী এক হাত দিয়ে আকাশ কে থামিয়ে দেয়। ঘর ভর্তি সবার দিকে তাকায়। বিথীর আম্মু ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। ওর ছোটো আম্মু কিছু হয়তো বলতে চাচ্ছেন । ওর আব্বু সিঁড়ি দিয়ে ছাঁদের দিকে চলে যাচ্ছেন।
তীব্র এসে বিথীর হাত ধরে বললো,’ আপু জিজু আব্বুর কলার চেপে ধরে ছিলো। ‘
বিথী শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ তারপর..? ‘
তীব্রঃ আম্মুকে তোমার শাশুড়ী খুব বাজে বাজে কথা বলেছে।
বিথী আকাশের দিকে তাকিয়ে এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলো।
আকাশের সামনে গিয়ে শার্টেরকলার চেপে ধরে ফিসফিস করে বললো,’ খেলা তুমি প্রথম শুরু করেছো কিন্তু শেষ আমি করবো। নিজের এই আগুনের খেলায় নিজে পু*ড়বে,জ্ব*লবে, ছাই হবে শুধু অপেক্ষা করো এই দিন গুলোর। আমাকে যেভাবে একটু একটু করে ঠকিয়েছো আমিও ঠিক একি পদ্ধতিতে তোমাকে তিলে তিলে শে*ষ করবো। ভে*ঙে চু*রে চু*রমা*র করে দিবো তোমাকে। তোমার এই খেলার সমাপ্তি হবে খুব জলদি।তারপর ধাক্কা দিয়ে আকাশকে দূরে সরিয়ে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে গালে ঠা*সস করে থা*প্পড় বসালো।
আকাশ ভাবতেও পারেনি বিথী ওর গায়ে হাত তুলবে।
বিথী বাঁকা হেঁসে বললো,’ এটা আমার মা’কে তোমার মায়ের করা অপমানের প্রতিশোধ।’
আকাশ অপমানে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে আছে৷
বিথীঃ আব্বুর টা তুলা থাকলো।
আকাশ বিথীর গায়ে হাত দিতে নিলে বিথী আকাশের হাত শক্ত করে ধরে বলে উঠলো,’ ভুলে যেও না তুমি এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছো সেটা আমার নিজের বাড়ি৷ এটা তোমার বাড়ি নয় যে ইচ্ছে হলো গায়ে হাত তুললে। আমি নিজে চাইলে এখন তোমার এই হাত ভে*ঙে মুচড়ে দিতে পারি।’
ক্লান্ত শরীর নিয়ে গিয়ে সোফায় বসলো বিথী তীব্রকে বলে উঠলো,’ যাকে তাকে বাসায় ঢুকতে দেয় কে..?’
আকাশ বিথীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ একদম ভালো করলে না তুমি। আজ যা যা করেছো তার পরিবর্তে কি কি হয় শুধু তুমি দেখো। আমার পায়ে ধরতে হবে তোমাকে।’
বিথী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ এমন দিন আশার আগে আমার মৃত্যু হোক। আর আল্লাহ না করুক এমন দিন তোমার ও আসতে পারে। এক ফুটা সুখের জন্য, ভালোবাসার জন্য আমার কাছে এসে ভিক্ষে না চাওয়া লাগে।’
বিথীর আম্মু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নিজের মেয়ের দিকে । এই তো তার প্রতিবাদী মেয়ে। অনেক দিন পর আগের বিথী ফিরে এসেছে। খুশিতে উনার চোখে পানি চলে আসলো।
বিথীর ছোটো আম্মু ওর জন্য শরবত নিয়ে আসলো।
আকাশ রাগী লুক এ বিথীর দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে।
ঐশী গাড়ি থেকে নেমেই সামনে আকাশ কে দেখে কিছুটা অবাক হলো।
আকাশ গাড়ি নিয়ে চলে গেলো নিজের গন্তব্যের দিকে।
ঐশী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের গাড়ির দিকে।
শুভ গাড়ি থেকে নেমে ঐশীকে ওই গাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠলো,’ গাড়িটা কি বেশি পছন্দ হয়েছে..? ‘
ঐশী উত্তর না দিয়ে বাসার ভেতর চলে আসলো৷ পিছু পিছু শুভও আসলো।
ঐশী ড্রয়িং রুমে এসে দেখে বিথী বসে আছে।
শুভ কে ঐশীর পিছু পিছু আসতে দেখে বিথী কিছুটা হেঁসে দিলো।
শুভ বিথীর সাথে টুকটাক কথা বলে ঐশীর রুমে চলে গেছে।
বিথীর প্রথম প্রথম শুভকে ভালো না লাগলেও এখন খুব ভালো লাগে। ছেলেটা খুব মিশুক অন্য ছেলেদের থেকে অনেকটাই আলাদা।
বিথী ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোর এখন সবটা ঠিক করে নেওয়া উচিৎ। ‘
ঐশী মুখ ভেংচি কেটে বললো,’ এতো সহজে না।’
বিথী হেঁসে বললো,’ তাহলে..?’
ঐশীঃ ঘুরতে থাকুক, মাত্র তো শুরু।
বিথী ঐশীকে নিজের কাছে টেনে নিলো।
ঐশী বিথীকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ চাকরি হয়েছে..? ‘
বিথীঃ রাতে মেসেজ দিয়ে জানাবে।’
ঐশীঃ আপু কি হয়েছে জানো..??
বিথীঃ না বললে জানবো কিভাবে..
ঐশী খুশি হয়ে বললো,’ মৌ এর জামাই পালিয়ে গেছে..!
চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।