টিপ টিপ বৃষ্টিতে পর্ব-২১+২২

0
563

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_২১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

বিথী চোখ বড় বড় করে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছে।
বিথী অবাক হয়ে বললো,’ কেনো পালিয়েছে..?
ঐশী ঠোঁট উল্টে বললো,’ তা তো জানিনা।
বিথী চিন্তিত হয়ে বললো,’ মৌ কেমন আছে..?’
ঐশী বিথীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ হয়তো ভালো আছে ওর সাথে আমার দেখা হয়নি।’
বিথী মন খারাপ করে বললো,’ এটা ঠিক করিসনি ঐশী। তোর দরকার ছিলো মৌ এর সাথে দেখা করে ওকে শান্ত না দেওয়া। ‘
ঐশীঃ আরে পুরো কথাটা তো শুনো…
বিথীঃ বল..?
ঐশীঃ জামাই পালিয়ে গেছে তাই ওর ছোটো ভাই এর সাথে আন্টি মৌ এর বিয়ে দিয়ে দিছে।
বিথী যেনো আরও অবাক হয়ে গেলো,’ দীপ্ত..!!
ঐশী খুশি হয়ে বললো,’ হুম। ‘
বিথী কিছুটা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ ওদের কি সম্পর্ক ছিলো..? ‘
ঐশী কিছু সময় চুপ থেকে বললো,’ না… তবে দীপ্ত মৌ কে অনেক আগে থেকেই ভালোবাস তো।’
বিথীঃ আর মৌ..?
ঐশীঃ না..
বিথী ঐশীকে কিছু না বলে উঠে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। আর মনে মনে ভাবছে মানুষের ভাগ্যে যা আছে তা সে যেভাবেই হোক পাবে।

ঐশী নিজের রুমে গিয়ে দেখে সারারুমে কোথাও শুভ নেই। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে তার মানে শুভ ওয়াশরুমে।

ঐশী বিছানায় বসে মোবাইল হাতে নিয়ে অথৈ কে কল দিলো।

শুভ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে ঐশী ফোনে কার সাথে যেনো কথা বলছে।

ঐশী ফোন রেখে পিছন ফিরে সাথে সাথে দুই হাতে চোখ ডেকে নিলো।

ঐশীঃ ছি! লজ্জা তো একটু করুন।
শুভঃ কেনো কি হয়েছে ঐশী..?
ঐশীঃ খালি গায়ে রুমে আশার মানে টা কি..? এটা আপনার পারসোনাল রুম নয়। এখানে একটা মেয়েও আছে।
শুভ ঐশীর কথা শুনে হাসতে গিয়েও হাসলো না। ঐশীর সামনে এসে বললো,’ ঐশী আমি তোমার হাসবেন্ড সো আমি তোমার সামনে খালি গায়ে কেনো যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই আসতে পারি৷ আর রুমের মেয়েটা আমার বউ। বউয়ের সামনে কিছু পাড়লেই কি আর না পড়লেই কি…
এশী দুই হাতে কান চেপে ধরে বললো,’ চুপ করুন আপনি। দিন দিন নির্লজ্জ পুরুষ হয়ে যাচ্ছেন।’
শুভ ঠোঁট কামড়ে হেঁসে ঐশীর দুই হাতে কানে চেপে ধরে রাখা, চোখ বন্ধ করে, ভ্রু কুঁচকে রাখা দেখে শব্দ করে হেঁসে উঠলো।
ঐশীর কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে বলে উঠলো,’ তোমাকে এখন ঠিক কেমন লাগছে যানো..?’
শুভ এই মাতাল কন্ঠ শুনে ঐশীর গলা শুকিয়ে গেছে, হার্টবিট ক্রমশ বেড়েই চলছে, বুক ধুকপুক করছে।
শুভ আবার বলে উঠলো,’ শুনতে চাও না..?’
ঐশী দু পাশে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে শুনতে চায় না।
শুভ ওর লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে বললো,’ কিন্তু আমার যে বলতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। ‘

সত্যি বলতে ঐশীর ও প্রচুর শুনতে ইচ্ছে করছে৷

শুভ ঐশীর আরেকটু কাছে গিয়ে বললো,’ তোমাকে এখন… না ঐশী এভাবে নয় তুমি আমার চোখের দিকে তাকাও..

ঐশী প্রথম ভাবলো তাকাবে না৷ কিন্তু কথাটা না শুনলে যে ওর রাতে ঘুম ও হবে না। ঐশী মায়াবী চোখে তাকালো শুভর চোখের দিকে।
শুভ গভীর ভাবে ঐশীর চোখের গভীরতা, ভালোবাসার গভীরতা বুঝার চেষ্টা করলো।
ঐশীর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে বলে উঠলো,’ তোমাকে ঠিক আমাদের বাসার পাশের মফিজ চাচার বউয়ের মতো লাগছে..!

শেষ সব শেষ এতো আশা৷ এতো মুগ্ধতা, এতো ভালোলাগা মুহুর্তে বিষে পরিণত হলো।
ঐশী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে শুভর দিকে তাকালো। শুভকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলো।
শুভ শক্ত করে ধরে রেখেছে ঐশীকে।
ঐশী ছুটার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে থেমে গেলো।
শুভ আবার ঐশীকে নিজের সাথে জড়িয়ে বললো,’ এভাবে হাজার বার আমার কাছ থেকে দূরে যেতে চাইলেও পারবে না। এভাবে ঠিক এভাবে আমার বাহুডোরে আঁটকে রাখবো তোমাকে। চাইলেও তোমার আমার কাছ থেকে মুক্তি নেই মৃত্যুর পরেও না। আমার ব্যাক্তিগত জিনিস আমি আগলে রাখতে জানি৷
ঐশী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ কোথায় ছিলেন এতো দিন আপনি…? কোথায় ছিলো আপনার এই ন্যাকামু আগলে রাখা, বাহুডোরে রাখা..? আজ এসেছেন ব্যাক্তিগত জিনিস বলতে..? ‘
শুভ মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে।
ঐশী কোনো উত্তর না পেয়ে রেগে বলে উঠলো,’ আপনাকে এভাবে হাসলে ঠিক শয়তানের মতো লাগে। বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

ঐশী রেডি হয়ে বেড়িয়ে গেলো দীপ্তদের বাড়ির উদ্দেশ্য।

মৌ দীপ্তির সাথে বসে আছে। শাশুড়ীর কাছে গিয়ে ছিলো সাহায্য করতে কিন্তু উনি দেয়নি৷

দীপ্তর আম্মু নাজমা বেগম খুবই ভালো মানুষ। কয়েক দিনে মৌ কে নিজের মেয়ে বানিয়ে নিয়েছে। কখনো মা’য়ের আদর ভালোবাসা না পাওয়া মেয়েটা হঠাৎ সব পেয়ে গেছে। পরিবার,পরিচয়, একজন মা,বোন আর স্বামী।

দীপ্তি মৌ এর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বললো,’ মৌ নিজের রুমে যা।’
মৌঃ কেনো আমি এখানে থাকলে সমস্যা কি..??
দীপ্তিঃ সারাক্ষণ আমার রুমে তোর কি..? নিজের রুমেও তো মাঝে মধ্যে যেতে পারিস। আমার আম্মু ভালো বলে কিন্তু আমি ভালো নই। যা ভাই একা রুমে।
মৌঃ দেখ দীপ্তি তুমি আমার ফ্রেন্ড হয়েও আমার সাথে এমন ব্যাবহার করবি আমি কল্পনাতেও ভাবতে পারি না। আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না।

দীপ্তি গিয়ে মৌ এর সামনে বসলো।
দীপ্তিঃ কেনো রে ভাই কি তোর সাথে কিছু করেছে.?
মৌঃ ভাই!!!!
দীপ্তিঃ বিয়ে হয়ে গেছে এখন নাম ধরে ডাকলে কেমন দেখায় না। তাই ভাই বলতে ছি, ওকে আজ থেকে জিজু বলবো..
মৌঃ জিজু!
দীপ্তিঃ গাঁধি ফ্রেন্ড এর জামাই কি হয়..?
মৌঃ ওহ্হ।
দীপ্তিঃএবার বল..?
মৌঃ ছি! ছি! ছি দীপ্তি দীপ্ত আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর সাথে কিছু হবে তা আমি কল্পনা ও করতে পারি না।

দীপ্তি বিরক্ত হয়ে বললো,’ এখন তোর জামাই বুঝছোস..? আর স্বামী হিসেবে বেস্ট ফ্রেন্ড সব থেকে ভালো। যা আমার রুম থেকে বের হ্।
মৌঃ প্লিজ দীপ্তি আর কিছু সময় থাকি..?
দীপ্তিঃ একদম না। বের হ্।

দীপ্তি মৌ কে রুম থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলো।

মৌ দরজার সামনে গিয়ে রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো দীপ্ত রুমে নেই। শান্তির একটা নিশ্বাস ফেলে রুমে ঢুকলো।

যেই ফ্রেন্ড এর সাথে এক সাথে বসে খাবার খেয়েছে, হাসি ঠাট্টা, মজা করেছে আজ সেই ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

মৌ ফ্রেশ হয়ে রুমে ঢুকতেই দেখলো ব্যালকনি থেকে দীপ্তর কন্ঠ শুনা যাচ্ছে । হয়তো মোবাইলে কথা বলছে কারো সাথে।

মৌ কি করবে ভাবছে আর হাত কচলাচ্ছে।

দীপ্ত কথা শেষ করে রুমে এসে মৌ কে এভাবে বসে থাকতে দেখে ওর পাশে গিয়ে বসলো। সাথে সাথে মৌ এক লাফ দিয়ে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।
দীপ্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মৌ এর দিকে।
দীপ্তঃ মৌ তুই ঠিক আছিস তো..?
মৌ নিজের কাজে নিজেই থমকে গেছে। সে এমন টা কেনো করলো..? আগে তা দীপ্ত পাশে বসলে কিছুই বলতো না। আরো নিজে গিয়ে দীপ্তর পাশে বসে পরতো।
মৌ কোনো রকম নিজেকে সামলে বললো,’ হুম ঠিক আছি…’
দীপ্তঃ কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুই ঠিক নেই।
মৌঃ বললাম তো ঠিক আছি।
দীপ্ত দাঁড়িয়ে মৌ এর কাছে গিয়ে বললো,’ বস আমার পাশে।’
মৌ বসলো।
দীপ্ত মৌ এর দিকে ফিরে হাসি দিয়ে বললো,’ তুই কি আমাকে লজ্জা পাচ্ছিস..?’
মৌ এর বুকের ভেতর মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পিঠাচ্ছে।ফর্সা গাল গুলো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।

দীপ্ত শব্দ করে হেসে উঠলো।
দীপ্তঃ আমাকে তোর লজ্জা পেতে হবে না। আমি তোর ফ্রেন্ড। হা আমাদের মধ্যে এখন অন্য সম্পর্ক আছে। তবে তুই যদি এটাকে স্বাভাবিক ভাবে নিস তাহলে এটা কিছুই না । তুই আমাকে স্বামী না ভেবে সব সময় আগের মতো ফ্রেন্ড ভাব তাহলে তোর কাছে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা তেমন কিছু মনে হবে না।

মৌ মাথা নেড়ে আচ্ছা বুঝালো।

দীপ্ত মৌ এর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুই জানিস আজ কে আমরা ঐশীর হাসবেন্ড এর সাথে দেখা করেছি। আমরা না উনি নিজেই আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছে।
মৌ মন খারাপ করে বললো,’ আমার দেখার খুব সখ ছিলো। আজ আমি যাইনি তাই উনি আসলো।’
দীপ্ত হেঁসে বললো,’ ভাগ্যিস তুই দেখোস নাই। না হলে তোকে আজকে হসপিটাল ভর্তি করাতে হতো। ‘
মৌঃ ছেলে কি দেখতে ভালো না..??
দীপ্তঃ আচ্ছা তোর ক্রাশ যেনো কে ছিলো..?
মৌ খুশিতে বলে উঠলো,’ শুভ স্যার..
দীপ্তঃ কখনো যদি শুনিস শুভ স্যার তোর কোনো ফ্রেন্ড এর হাসবেন্ড তখন তোর কেমন লাগবে..??
মৌ কিছু সময় চুপ থেকে বলে উঠলো,’ শুভ স্যার ঐশীর হাসবেন্ড..!??

দীপ্ত মৌ এর মাথায় গাট্টা মেরে বললো,’ যাক আমার সাথে থেকে থেকে তাহলে তোর মাথায় একটু বুদ্ধি এসেছে।’
মৌ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে দীপ্তর দিকে। এটা সে কি শুনলো! শুভ স্যার আর ঐশী কিভাবে সম্ভব।

ঐশী,অথৈ,শান্ত বসে আছে দীপ্তির রুমে।

কিছু সময়ের মধ্যে দীপ্ত মৌ ওরা ও এসে যোগ দিলো আড্ডায়।

বিথী মোবাইল হাতে নিয়ে বসে আছে। অতি খুশিতে চোখে পানি চিকচিক করছে।

ওর চাকরি হয়ে গেছে। ভেবেছিলো হয়তো অনেক ঘুরতে হবে একটা চাকরির জন্য।
একটু আগে একজন লোক ফোন দিয়ে বললো ওর চাকরি হয়ে গেছে। কাল সকাল ১০টার মধ্যে যেনো অফিসে থাকে।

ঐশী সবাইকে আকাশের সম্পর্কে বললো।

ঐশীঃ শুনলি তো সব..? এখন বল হেল্প করবি কি..?

শান্ত, দীপ্ত বলে উঠলো,’ কি করতে হবে বল..?

ঐশীঃ অজ্ঞান করে ভার্সিটির পেছনে একটা ভাঙাচোরা বাড়ি আছে ওইটায় নিয়ে আসবি।

~ আচ্ছা।

ঐশীঃ আর অথৈ তুই গিয়ে ওকে পটানোর চেষ্টা করবি। যখন বুঝবি বেটা একদম পটে গেছে তখন রুমাল টা নাকে মুখে চেওে ধরবি।
অথৈঃ আচ্ছা।

ঐশীঃ আমি শুনতে চাই কেনো ও এমন করলো….আমার কলিজায় হাত দিয়েছে সে। এর শাস্তি ওকে পেতেই হবে।

চলবে…

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_২২
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ঐশী দীপ্তদের বাসা থেকে এসে দেখে শুভ এখনো যায় নি।

ঐশী ফ্রেশ হয়ে বিথীর রুমে গেলো।

বিথীঃ কখন আসলি..?
ঐশীঃ এই তো কিছু সময় আগে।
বিথীঃ শুভ ভাইয়া খাবার খায় নি।
ঐশীঃ কেনো..??
বিথীঃ বউয়ের জন্য বসে আছে।
ঐশীঃ কিন্তু আমি তো খেয়ে এসেছি।
বিথীঃ তো কি হয়েছে। আবার খাবি।
ঐশীঃ আবার!!
বিথীঃ চুপচাপ গিয়ে ভাইয়াকে নিয়ে খেতে যা। বেচারা না খেয়ে এখনো বসে আছে।
ঐশীঃ আমি বলেছি..?
বিথী ঐশীর মাথায় হাত রেখে আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ সোনা বোন আমার যা খেয়ে নে। ‘
ঐশীঃ আচ্ছা, তোমার চাকরি কি হয়েছে..??
বিথী ঐশীকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ হুম। কাল থেকে জয়েন করতে বলেছে।’
ঐশীঃ ট্রিট দিবা কখন..?
বিথীঃ ফাস্ট বেতন পাওয়ার পর।
ঐশী বিথীকে শক্ত করে ধরে বললো,’ তোমার জীবনটা আবার আগের মতো হয়ে যাক। আমাদের সোনামনি টা খুব তারাতারি আমাদের কাছে চলে আসুক। ‘
বিথী পেটে হাত রেখে বারান্দা দিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকালো। তাঁরা ঝলমল করছে বড় একটা চাঁদ উঠেছে। আজকের আকাশটা খুব সুন্দর লাগছে।

ঐশী রুমে এসে দেখে শুভ বিছানায় হেলান দিয়ে বসে মোবাইলে কি যেনো করছে।

ঐশী শুভর কাছে গিয়ে বললো,’ কি করছেন..? ‘
শুভঃ কিছু না।
ঐশীঃ খাবার খেতে আসুন…
শুভঃ তুমি খাবে..?
ঐশীঃ হুম।
শুভঃ তাহলে চলো।

রাতে শুভ বসে বসে অপেক্ষা করছে ঐশীর জন্য।

ঐশী ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে। রাতের আকাশের দিকে তাকালে অশান্ত মনটাও শান্ত হয়ে যায়।

ওদের সম্পর্কটা আজ কে অন্য রকম হতো যদি না শুভ ওর সাথে খারাপ আচরণ প্রথমে না করতো। চাইলেই সব কিছু ভুলা যায় না। চাইলেই ক্ষমা করে দেওয়া যায় না।
ঐশী আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো,’ আচ্ছা আমার কি উনাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত..? সব কি ঠিক করে নেওয়া উচিত..? উনি কি আমাকে ভালোবাসে..?
তখনি ভেতরের সত্ত্বাটি ওকে বলে উঠলো, ‘ তুই কি পাগল ঐশী শুভ তোকে কেনো ভালোবাসবে…?
~ কিন্তু উনার এমন আচরণের কারন কি তাহলে..? উনার আচরণে বলে দেয় উনি আমাকে ভালোবাসে।
আবার ভেতরের সত্ত্বাটি হাসতে হাসতে বলে উঠলো, ‘ আচ্ছা, কই তোকে কি একবারও বলেছে..?
ঐশীর মনটা সাথে সাথে খারাপ হয়ে গেলো। আসলেই তো শুভ ভাইয়া তো এখনো ওকে ভালোবাসার কথা বলেনি। তারমানে এই সব মামী মার কথায় করছেন ভাইয়া..?

উদাস মনে তাকালো দূরে চাঁদটার দিকে। এখন প্রায় নিজেকে ওই চাঁদের মতো একা মনে হয়।

ঐশীর হাতের ফোন বেজে উঠতেই নিজের ভাবনা থেকে বের হয়ে মোবাইলের দিকে তাকালো।
অচেনা নাম্বার।
ঐশী প্রথম কল রিসিভ করার আগেই কেটে গেলো। কিছু সময় পর আবার কল আসলো।

ঐশীঃ হ্যালো..
~ কেমন আছো ঐশী..?
ঐশী চমকে উঠলো এতো রাতে আদিত্যের ফোন। কন্ঠ শুনেই ঐশী বুঝতে পেরেছে এটা আদিত্যের কন্ঠ।
ঐশীঃ জ্বি ভালো।
আদিত্যঃ অন্যের ঘুম হারাম করে তুমি তো ভালো থাকবেই।
ঐশী অবাক হয়ে বললো,’ কিইই!!
আদিত্যঃ কিছু না। কি করো..?
ঐশীঃ এতো রাতে কেনো কল দিয়েছেন..?
আদিত্যঃ তোমর সাথে কথা বলতে।
আদিত্যের কথা শুনে ঐশী অবাক হলো।
ঐশীঃ আদিত্য আপনি ঠিক আছেন তো..?
আদিত্যঃ সত্যি বলবো..?
ঐশীঃ থাক বলা লাগবে না। আমি এখন রাখছি।
আদিত্য শব্দ করে হেঁসে উঠলো,’ কেনো ভয় পেয়ে গেলে নাকি..?
ঐশী শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,’ আমি এখন ঘুমাবো আদিত্য। আমি এখন রাখছি।
আদিত্যঃ ঐশী তুমি কি আমার সাথে একটু দেখা করবে..? প্লিজ..
ঐশীঃ আদিত্য আমি আপনার ভাইয়ার কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আপনাকে জানাবো।
আদিত্য কিছুটা রেগে বলে উঠলো,’ ভাই এর কাছ থেকে পারমিশন নিতে হবে বাহ্ বাহ্। তুমি কি জানো ভাই তোমাকে এখনো স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়নি। এখনো তোমাকে ভাই ভালোবসে না।
ঐশী স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো, ‘ তো কি হয়েছে..? ‘
আদিত্য হয়তো এমন উত্তর আশা করেনি।
আদিত্যঃ আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
ঐশীঃ আমি আপনার বড় ভাইয়ের বউ, যখন তখন কল না দিলে খুশি হবো। আর কাল আমার সময় নেই। আমি আপনার সাথে অন্য একদিন সময় করে দেখা করে নিবো। বলেই ঐশী ফোন কেটে দিলো।

পাশে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে তাকালো৷
পাশে এক হাত পকেটে দিকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে শুভ।

ঐশীঃ আপনি এখনো ঘুমাননি..?
শুভঃ ঘুম আসছে না।
ঐশীঃ কেনো..?
শুভঃ তা তো জনিনা। তবে..
ঐশীঃ তবে কি..?
শুভঃ তোমার হাতের চা খেতে ইচ্ছে করছে।
ঐশীঃ বাসায় চিনি নেই।
শুভঃ সমস্যা নেই।লবন দিয়ে নিয়ে আসো। তোমার হাতের চা’য়ে এমনিতেও চিনি লাগবে না।
ঐশী ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো, ‘ লবন নেই।
শুভ ঐশীর আরও কাছে গিয়ে বললো,’ ওকে লবন লাগবে না। ‘
ঐশীঃ পাতি নেই।
শুভ হতাশ কন্ঠে বললো,’ তাহলে আমার সাথে চলো..’
ঐশীঃ কোথায়..?
শুভঃ চা খেতে রাস্তায় যাবো।
ঐশীঃ আমি ঘুমাবো।
শুভঃ ঠিক আছে চলো।
ঐশী শুভর আগেই ছাঁদ থেকে নেমে গেলো৷
শুভ কিছু সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেও ছাঁদ থেকে নেমে গেলো।

শুভ রুমে বসে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঐশী হাতে চা নিয়ে রুমে ঢুকলো।
শুভ অবাক হওয়ার মতো মুখ করে বললো,’ কোথায় থেকে আনছো..?? বাসায় না কিছু নেই..?
ঐশীঃ খেয়ে দেখুন।
শুভ কিছু না বলে চা হাতে নিয়ে বললো,’ ধন্যবাদ বউ।’
ঐশী থমকে তাকিয়ে রইলো শুভর দিকে। শুভ যখনি বউ বলে সাথে সাথে ঐশীর হার্টবিট অস্বাভাবিক ভাবে বেরে যায়।

শুভ চা মুখে দিয়ে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছে। এটা চা না-কি অন্য কিছু!

ঐশী শুভর মুখের রিয়াকশন দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,’ ভালো হয়নি..?’
শুভ ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ হুম খুব ভালো হয়েছে…
ঐশী ভাব নিয়ে বললো,’ কে বানিয়েছে দেখতে হবে।
শুভ ঐশীর কথা শুনে বললো,’ হুম অনেক ভালো হয়েছে। একবার খেলে সারাজীবন ও কেউ ভুলতে পারবে না।

ঐশী ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে শুভ হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
ঐশী শুভর চোখ থেকে চশমা খোলে টেবিলের পাশে রাখলো।

ঐশীর চোখ গেলো শুভর খাওয়া চা’য়ের কাপের দিকে।বেশ কিছুটা চা রয়ে গেছে। মনে পড়ে গেলো শুভর ছাঁদে ওর কাছে চা খোঁজার কথা।
নিজ মনে হেঁসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতেই চোখ মার্বেলের মতো বড় বড় হয়ে গেলো।
এটা চা নাকি বিষ..?
ঐশী মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। চিনির জায়গায় ভুল করে লবন দিয়ে দিছে। এই চা শুভ কিভাবে খেয়েছে..?

ঐশী মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকালো শুভর দিকে।
কি সুন্দর লাগছে শ্যামবর্ন পুরুষটিকে।
ঐশী নিজের হাতটা যত্নে করে শুভর গালে রাখলো। মায়াবীকন্ঠে বলে উঠলো,’ সরি….’

ঐশী গিয়ে শুয়ে পরলো সোফার মধ্যে।

সকালে যখন ঐশীর ঘুম ভাঙলো নিজেকে বিছানায় দেখে অবাক হয়ে গেলো। রাতে তো সোফায় ঘুমিয়ে ছিলো!।
নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সে শুভকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।
লজ্জায় হাত পা সরিয়ে তারাহুরো করে উঠে বসলো। বড় বড় শ্বাস নিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো৷
ঐশী বিছানা থেকে চলে যেতেই চোখ খুললো শুভ। রাতে শুভই ঐশীকে নিজের সাথে নিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলো। ঐশী জাগার আগেই শুভ জেগে গিয়েছে৷ এতো সময় ঐশীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো শুভ। এতোটা কাছে কখনো আশা হয়নি। হলেও ভালো করে লক্ষ করা হয়নি।

বিথী রেডি হয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হতেই ঐশীও ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বিথীর সাথে বের হলো।

ঐশীঃ কখন আসবে..?
বিথীঃ ঠিক জানিনা।
ঐশীঃ ২টার দিকে আমি তোমাকে ভার্সিটির ভেতর দেখতে চাই।
বিথীঃ ঐশী আমার আজ প্রথম দিন।
ঐশীঃ আমি বেশি কিছু জানিনা। যা বলেছি তাই। না হলে একদম অফিসে চলে যাবো৷
বিথীঃ এটা কেমন বাচ্চামো ঐশী।
ঐশী কিছু না বলে রিক্সায় উঠে গেলো।

সকালের পর আর লজ্জায় ঐশী শুভর সামনে যায়নি।

ভার্সিটিতে এসেই ঐশী মৌ আর দীপ্তি কে দেখতে পেলো।

ঐশীঃ বাকি গুলো কি কাজে গেছে।
মৌ কিছুটা চিন্তিত সুরে বললো,’ হুম রে কিন্তু ওদের কিছু হবে না তো..?

ঐশী মুখ কঠিন করে বললো,’ হবে ধরা পরলে ওদের ফিরে আশার কথা ভুলে যা।’

ঐশীর কথা শুনে দীপ্তি মুখটিপে হাসলো।

মৌ চিন্তিত হয়ে বার বার দীপ্ত কে কল দিচ্ছে। কিন্তু মোবাইল বার বার বন্ধ দেখাচ্ছে।

ঐশীঃ ওরা এখন আসবে না ক্লাসে চল।

ক্লাস শেষ করে বাহিরে এসে দেখে দীপ্ত, অথৈ,শান্ত ক্যান্টিনে বসে আছে।

মৌ দীপ্ত কে দেখে খুশি হয়ে দূরে দাঁড়িয়ে দীপ্তর দিকে তাকিয়ে আছে।

ঐশী গিয়ে বসলো ওদের পাশে।
ঐশীঃ কাজ হয়েছে..?
অথৈঃ হুম।
ঐশী বাঁকা হাসি দিয়ে দীপ্তি কে বললো বিথী কে কল দিতে। তারপর দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলো নিজের শিকারের দিকে।

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।