টিপ টিপ বৃষ্টিতে পর্ব-২৫+২৬

0
550

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_২৫
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ঐশী হঠাৎ বলে উঠলো, ” এই নিকৃষ্ট লোকটা তুমি ছিলে তাই না..?? ”

আজাদ সাহেব রাতের অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমাকে এই গল্প কে বলেছে..?
ঐশীঃ কিভাবে করতে পারলে একটা সহজ সরল মেয়ের সাথে এমনটা। একটু কষ্ট হলো না। আমি সব সময় তোমাকে নিয়ে গর্ভ করতাম বড় আব্বু আজ তোমার দিকে তাকাতেই ঘৃণা হচ্ছে,বলেই ছাঁদ থেকে নেমে গেলো ঐশী। ওর যা বুঝার সে বুঝে গেছে।

ঐশী ছাঁদ থেকে নেমে যেতেই আজাদ সাহেব বিড়বিড় করে বলে উঠলো,’ আমি পাপী, আমার কর্মের শাস্তি আমার মেয়ে পাচ্ছে। কিন্তু আমি তো এমনটা চাইনি। আমি ফিরে গিয়ে ছিলাম সর্নার কাছে কিন্তু তার আগেই যে সব শেষ….

***

মৌ দূরে দাঁড়িয়ে আছে।

দীপ্ত ভ্রু কুঁচকে মৌ এর দিকে তাকিয়ে বললো,’ এভাবে দূরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো..?? ‘

মৌঃ তোর বোন বেয়াদবটা আমার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

দীপ্তঃ ওহ্হ।

মৌ মুখ ভার করে বসলো সোফায়। মৌ কিছু একটা ভেবে সোফা থেকে গিয়ে বসলো দীপ্তর কাছে গিয়ে বসলো।

মৌঃ একটা কথা জিজ্ঞাসা করি..?
দীপ্তঃ হুম বল…?
মৌ আমতা আমতা করে বললো, ‘ তোর ভাই কোথায়..?’
দীপ্তঃ আছে..
মৌঃ কোথায় আছে..?
দীপ্তঃ কেনো বলতো..? হঠাৎ ভাইয়ার কথা কেনো..??
মৌ একটা জোর পূর্বক হাসি দিয়ে বললো,’ না এমনি,জানতে ইচ্ছে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম।
দীপ্ত কিছু সময় মৌ এর দিকে তাকিয়ে বললো,’ ভাইয়া নিজের অফিসে আছে। ‘
মৌঃ উনি কি কাউকে ভালোবাস তো..??
দীপ্তঃ হুম।
মৌঃ কাকে..??
দীপ্তঃ কাকে বাসতো তা জানিনা।
মৌঃ ওহ্হ, তোর কখনো দেখতে ইচ্ছে হয়নি..?
দীপ্তঃ হুম দেখতে তো ইচ্ছে হয়েছে কিন্তু মুরতাসিম ভাই কখনো দেখায়নি। বলেছে সময় হলে একদম বউ করে নিয়ে আসবে তখন সেটা আমাদের জন্য সারপ্রাইজ থাকবে। কিন্তু হঠাৎ কি হলো জানিনা সব উলট পালট হয়ে গেছে ভাইয়ার পছন্দের মেয়েটি এখন কোথায় কিছুই জানিনা। তবে মেয়েটির হয়তো বিয়ে হয়ে গেছে।
মৌঃ মুরতাসিম!! উনার নাম তো…
দীপ্তঃ হুম ভাইয়াকে আম্মু শাফিন বলে ডাকে আর ভাইয়ার আসল নাম মুরতাসিম আহমেদ শাফিন।
মৌঃ খুব সুন্দর নাম। আচ্ছা আরেকটা কথা..
দীপ্তঃ কি..?
মৌঃ তুই কাউকে ভালোবাসিস..??
দীপ্ত মুচকি হেঁসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
মৌঃ কি হলো বল..?
দীপ্ত মৌ এর দিকে তাকিয়ে বললো,’ হুম বাসি…
দীপ্ত কাউকে ভালোবাসে শুনেই মৌ এর বুকে চিনচিন ব্যাথা শুরু হলো। চোখে জলে টইটম্বুর হয়ে গেছে। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করলো,’ নাম কি..? কোথায় থাকে..? দেখতে কেমন..? আগে তো কখনো বলিস নি..
দীপ্তঃ এতো গুলো এক সাথে প্রশ্ন করলে উপর দেবো কিভাবে..
মৌ মলিন একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ থাক আজ শুনতে ইচ্ছে করছে না।’
দীপ্ত মৌ এর চুপসে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

মৌ বিছানা থেকে উঠতে গেলে দীপ্ত বলে উঠলো,’ মৌ তোর পেছনে আরশোলা ‘
মৌ ভয়ে চিৎকার দিয়ে গিয়ে দীপ্ত কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ‘
দীপ্ত বাঁকা হাসি দিয়ে নিজেও মৌ কে জড়িয়ে ধরে বললো,’ আমাকে ধরে রাখ আরশোলা চলে গেলে আমি বলবো..’
মৌঃ তুই সরানা এটাকে।
দীপ্তঃ এখানে একটা না চারটা আছে।
মৌ ভয়ে দীপ্ত কে জড়িয়ে ধরে আছে।

অনেক সময় পার হয়ে গেলে দীপ্ত অবাক হয় মৌ এর কোনো সারা শব্দ না পেয়ে।
মৌ এর মুখটা নিজের দিকে করে দেখে ওর কাঁধে মাথা রেখে মৌ ঘুমিয়ে পড়েছে।
দীপ্ত সুন্দর করে মৌ কে শুইয়ে দিলো। লাইট অফ করে মৌ কে জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে ওর কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বললো,’ কবে বুঝবি আমাকে তুই..? সবাই বুঝে আমার ফিলিং শুধুই তুই এতো কাছে থেকেও কেনো বুঝিস না..? ভালোবাসি তোকে নিজের চাইতেও বেশি।

ঐশী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের রুমে আসতেই শুভকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।

ঐশীঃ আপনি কখন আসলেন..?
শুভঃ কেনো মিস করছিলে বুঝি আমাকে…?
ঐশীঃ ফালতু কথা রাখুন।
শুভঃ ফালতু কথা কখন বললাম ঐশী। আমি জানি তুমি আমাকে খুব মিস করছিলে তাই চলে আসলাম। দশ-টা নয় পাঁচটা নয় একটা মাত্র বউ আমার।

ঐশী শুভর কথায় বিরক্ত হয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।
শুভ সোফায় বসে ঐশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঐশী উপরে রাগ, বিরক্ত দেখালেও মনে মনে সত্যি শুভকে খুব মিস করতে ছিলো। শুভকে দেখে খুব খুশি হয়েছে।

ঐশী ফ্রেশ হয়ে এসে চুল আঁচড়ে নিলো।

শুভ গিয়ে দাঁড়ালো ঐশীর পেছনে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঐশী চুল আঁচড়াচ্ছিলো। শুভকে নিজের পেছনে এভাবে দাঁড়াতে দেখে কিছুটা অবাক হলো।
শুভ পকেট থেকে বেলীফুলের মালা বের করে ঐশীর একদম কাছে গেলো৷ খুব যত্ন করে মালাটা পড়িয়ে দিলো। দুই হাতে পড়িয়ে দিলো। ঐশীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পায়ে পড়িয়ে দিলো।
ঐশীকে আয়নার দিকে ঘুড়িয় পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ শাড়ী পড়লে আরও বেশি সুন্দর লাগতো।

ঐশী একের পর এক অবাক হচ্ছে শুভর কাজে।

ঐশী শুভর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দূরে সরে গেলো।

শুভ হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে।

ঐশী মিনমিনে সুরে বললো,’ আমি আপনার জন্য খাবার রেডি করছি নিচে আসুন…

শুভঃ আমি খেয়ে এসেছি।

ঐশীঃ ওহ্হ আচ্ছা।

ঐশী রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে শুভ ওর হাত ধরে নিজের কাছে এনে কোমর জড়িয়ে ধরে বললো,’ কোথায় যাচ্ছো..??’
ঐশীর কন্ঠ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
শুভ ঐশীর মুখে ফুঁ দিতেই ঐশী কেঁপে উঠল।
ঐশী কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে উঠলো, ‘ ছাড়ুন বলছি।
শুভঃ যদি না ছাড়ি..?
ঐশীঃ আমার রাগ হচ্ছে।
শুভঃ কেনো..?
ঐশীঃ আপনি এভাবে জড়িয়ে আছেন কেনো, ছাড়ুন দূরে যান।
শুভঃ আমি কি তোমাকে ধরেছি? আমি আমার বিয়ে করা বউকে ধরেছি।
ঐশী বিরবির করে বললো,’ এভাবে আর কিছু সময় থাকলে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করবো।’

শুভ শব্দ করে হেঁসে উঠলো ঐশীর কথা শুনে।

শুভঃ ওকে ছেড়ে দিলাম। বলেই ঐশীকে ছেড়ে দিলো।

শুভ ঐশীর কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বুকে হাত দিয়ে বললো,’ আমার একটা মাত্র বউ তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার বাসরের কি হবে..?
ঐশী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে শুভর দিকে। এই নিরামিষ বর এতো রোমান্টিক হলো কবে!!

শুভ ঐশীর মুখের রিয়াকশন দেখে হেঁসে উঠলো।
শুভঃ অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো।
ঐশী মাথা নেড়ে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
শুভ গিয়ে ঐশীর পাশে শুয়ে পরলো।
ঐশী শুয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
শুভঃ কি হয়েছে..?
ঐশীঃ আপনি আমার পাশে ঘুমাবেন..?
শুভঃ ঐশী আমার প্রচুর ঘুম পেয়েছে তুমি কি এখন আমাকে একটু তোমার পাশে ঘুমাতে দিবে.?সত্যি আমি তোমাকে কিছু করবো না।
ঐশীঃ সত্যি তো..??
শুভঃ ভুলে কিছু হয়ে গেলে আমার দোষ নেই।
ঐশীঃ তাহলে আপনি ঘুমান আমি বিথী আপুর কাছে ঘুমিয়ে পড়বো।
শুভঃ একদম না৷ শুয়ে পড়ো আমি তোমার সাথে কিছুই করবো না যতদিন না তুমি আমাকে পারমিশন দাও।
ঐশী শুভ ইনোসেন্ট মুখটার দিকে তাকিয়ে চুপটি করে শুয়ে পরলো।
শুভ ঐশীর দিকে ফিরে বললো,’ ঐশী একটা কথা রাখবে..?
ঐশীঃ কি..??
শুভঃ আমি কি তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারি..? প্লিজ না করো না।
ঐশী না করতে পারলো না।
শুভ ঐশীকে শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরলো। কিন্তু সারা রাত আর ঘুম হলো না ঐশীর।

সকালে বাসায় চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে গেলো ঐশীর।
পাশে তাকিয়ে দেখে শুভ নেই।
জলদি উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।

বিথী রেগে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।
আকাশের আম্মু সোফায় বসে আছে।
বাসার সবাই ড্রয়িং রুমে।
বিথী বলে উঠলো, ‘ এই বাড়িতে কেনো এসেছেন..??
আকাশের আম্মু সোনালী বেগম ঘার কাত করে বিথীর দিকে তাকালো।
সোনালী বেগমঃ কেনো তোমার শাশুড়ী আর স্বামী কি তোমার কাছে তোমার বাবার বাড়িতে আসতে পারে না..??৷
বিথী তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ শাশুড়ী!! আদৌও কি আপনি শাশুড়ী হওয়ার যোগ্য…?
সোনালী বেগম বিথীর কথার উত্তর না দিয়ে আজাদ সাহেব এর দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি আমার ছেলের বউ কে নিতে এসেছি..?
আজাদ সাহেব কিছু না বলে চুপচাপ তাকিয়ে আছে সোনালীর দিকে।
কিছু সময় চুপ থেকে আজাদ সাহেব বলে উঠলো,’ আমার মেয়ে যাবে না তোমার সাথে। ‘
সোনালী বেগমঃ এখন আর সে আপনার একা মেয়ে নয় আমার ছেলের বউ৷ আর এখন সব আমার কথায় হবে না হলে আমি পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো।

শুভ বিথীকে বলে উঠলো, ‘ বিথী তুমি কি আকাশের সাথে থাকতে চাও.?
বিথী আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,” না”
শুভ হাসি দিয়ে সোনালী বেগম এর দিকে তাকিয়ে বললো,’ বিথী যেতে চায় না। যে পুরুষ নারীর গায়ে হাত তুলতে দু’বার ভাবে না সেই পুরুষের কাছে না যাওয়াই আমি বেটার মনে করি।
আকাশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো বিথীর দিকে।
সোনালী বেগমঃ বিথী তুমি কেনো যেতে চাচ্ছো না..? ভুলে যেও না আকাশের বাচ্চা তোমার গর্ভে।
বিথীঃ এটা শুধুই আমার বাচ্চা আর কারু নয়। বিয়ের পর আমার পরিবারের কাউকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে দেননি৷ একজন মা হয়ে বপনি একজন সন্তানের কষ্ট বুঝেননি।
সোনালী বেগম মাথা নিচু করে ফেললেন প্রতিশোধের আগুনে তিনি অন্যয় করেছেন যাকে শাস্তি দেওয়ার তাকে না দিয়ে একটা ভালো নিষ্পাপ মেয়ের জীবন নরকে পরিণত করেছেন।

শুভ বিথীর থেকে কিছু পেপার নিয়ে সোনালী বেগম এর সামনে রাখলো।
সোনালী বেগম অবাক হননি।এমনটা যে হবে সেটা উনি খুব ভালো করেই জানতেন।

উনি আকাশের হাতে ডিভোর্স পেপার গুলো দিয়ে বিথীকে বললো আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই।
বিথী অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,’ বলুন ‘
সোনালী বেগমঃ এখানে নয়।

বিথী আর সোনালী বেগম দাঁড়িয়ে আছে ছাঁদে।

বিথীঃ বলুন কি বলবেন..?
সোনালী বেগমঃ তুমি হয়তো সবটাই যেনেছো আকাশের কাছ থেকে..?
বিথী চুপ করে আছে।
সোনালী বেগম আবার বলা শুরু করলো,’ আমি এতোদিন একটা প্রতিশোধের আগুনে ছিলাম। যার কারনে সত্যি টা কখনো জানতে চাইনি।
কাল আমার তোমার বাবার সাথে আবারও কথা হয়। তখন আমি সত্যি টা জানতে পারি।
এইসব এ তোমার বাবার দোষ আছে আবার নেই।
আমার বোনকে যেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে ছিলাম উনি গিয়ে সবটা বলে দিয়ে ছিলো আজাদ এর নানাজির কাছে।
তখন উনি আজাদকে মিথ্যা বলে শহরে পাঠিয়ে দেয়। আজাদের আম্মুর শরীর খুব খারাপ বলে। শহরে আসার সময় গাড়ি এক্সিডেন্ট হয় আজাদ এর। একমাস পর হাঁটতে পারে আজাদ।
আজাদ শহরে ছিলো, অসুস্থ ছিলো বলে কিছুই জানতো না গ্রামে কি হয়ে ছিলো।
আজাদ শহর থেকে গ্রামে আবার যেতে যেতে অনেক দেরি হয়ে যায় ততদিনে সব শেষ।

তারপর আজাদ ওর নানার সাথে ওই গ্রামের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেয়। মানুষিক ভাবে ভেঙে পরে। হয়তো সত্যি আমার দিদিকে ভালোবেসে ছিলো।

আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও বিথী।
পারলে আকাশের সাথে সব ঠিক করে নাও। বিয়ে মেয়েদের বার বার হয় না।
বিথী হেঁসে বলে উঠলো,’ আপনি না হয় প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এমনটা করেছেন। কিন্তু আপনার ছেলে এমনটা কেনো করলো আমার সাথে..? প্রতিশোধ নিলে অনেক ভাবেই নেওয়া যায়। আমার আব্বু যেটা ৩০বছর আগে করেছে ঠিক সেটা আজ আপনারা আমার সাথে করলেন..? আমার আব্বুর সাথে আপনাদের পার্থক্যটা কোথায়..? আর সম্পর্ক ঠিক করার কথা বলছেন..? যেই পুরুষের মনে ২বছরে এক ফোঁটা জায়গা করে নিতে পারিনি আর যাই হোক সারাজীবন ওর সাথে থাকলেও ভালোবাসা নামক শব্দটা আসবে না।
সোনালী বেগমঃ বাচ্চার কথা ভাবো..? আমাদের বংশের সে..?
বিথীঃ এক বার বলেছেন দ্বিতীয় বার বলবেন না প্লিজ। এই বাচ্চা শুধুই আমার আজকের পর আপনাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার বাচ্চা মানুষ করার মতো ক্ষমতা আমার আছে।

বলেই বিথী ছাঁদ থেকে নেমে আকাশের সামনে গিয়ে বললো,’ সাইন করে দিবেন। আর আজকের পর যেনো আপনার এই মুখ কোনোদিন আমি না দেখি। ভুলেও আমার সামনে আসবেন না৷
আকাশ অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে ডিভোর্স পেপার এর দিকে তাকিয়ে আছে। সব হাতের বাহিরে চলে গেছে কিভাবে ঠিক করবে সে সব কিছু..?

রাতে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আলোচনা করছে কাল গায়ে হলুদে কে কি পড়বে।

ঐশী সোফায় বসে বসে গালে হাত দিয়ে সবার কাহিনি গুলো দেখছে। ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে সোনিয়ার বিয়ে কি এই বাড়িতে হবে..? কার সাথে বিয়ে হবে..? জামাই কি করে.? আর সোনিয়ার নিজের বাসা থাকতে এই বাসায় কেনো..? ওর বাসার লোকজন কোথায়..? এতো কিছু ভাবতে ভাবতে বিরক্ত হয়ে গেছে সে।

সবাই মিলে ঠিক করলো মেয়েরা হলুদ লেহেঙ্গা আর ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি পড়বে। আর বউ এর জন্য হলুদ শাড়ি।

সোনিয়া তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে।
ঐশী সোনিয়া কে বলে উঠলো,’ আচ্ছা সোনিয়া তোমার বাসার লোকজন কোথায়..?’
সোনিয়াঃ কেনো..?
ঐশীঃ না এমনি।কাউকে দেখছি না তাই জিজ্ঞেস করলাম।
সোনিয়া ঐশীর মনের কথাটা বুঝতে পেরে মুখটিপে হেঁসে বলে উঠলো, ‘ কাল সন্ধ্যায় হলুদ নিয়ে সবাই আসবে।
ঐশী অবাক হয়ে বললো,’ হলুদ নিয়ে তোমার বাড়ি থেকে কেনো আসবে..? আসলে তো ছেলের বাড়ি থেকে আসবে।
সোনিয়া কিছু না বলে চুপচাপ উঠে চলে গেলো।

ঐশী রুম থেকে বেরিয়ে গেলো বিথীর রুমের দিকে।সবাই মিলে ওর কাছ থেকে কি লোকাচ্ছে জানতেই হবে…

চলবে…

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_২৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

বিথী গালে হাত দিয়ে বসে আছে আর ভাবছে কাল আবার আরেকটা ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে।

ঐশী ধুমধাম পা ফেলে বিথীর রুমে ঢুকলো।
বিথী ভ্রু কুঁচকে ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ কি হয়েছে..??’
ঐশীঃ আমারও তো একি কথা বাসায় কি হচ্ছে..?
বিথী কিছু না বলে মোবাইল রেখে উঠে দাঁড়াতেই ঐশী রেগে বলে উঠলো,’ যাকে জিজ্ঞেস করি সেই চুপ হয়ে যায় কেনো..??
বিথীঃ তুই এতো কিছু না ভাবলেও চলবে।
ঐশী গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে বসে থাকে। বিথী ঐশীকে কিছু বলতে যাবে তখনি হাতের ফোন বেজে উঠে।
বিথী ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে বলে উঠে,’ কাল সময় মতো অফিসে চলে আসবেন। বলেই ফোন কেটে দেয়।
বিথী অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। আজিব লোক কিছু না বলতে দিয়ে ফোন কেটে দিলো৷

সকালে বিথী নিজের কাজে চলে যায়।

সবাই সবার মতো নিজেদের কাজে লেগে যায় ।

সন্ধ্যায় গায়ের হলুদের আয়োজনে সবাই নিজেদের ড্রেস পরে সুন্দর করে সেজে যখন ঐশীর রুমে যায় ঐশী অবাক হয়ে সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,’ তুমি লেহেঙ্গা কেনো পরেছো..?’
সোনিয়া মলিন একটা হাসি দিয়ে বলে উঠে,’ বউ বাদে সবাই লেহেঙ্গা পরবে..’
ঐশীঃ বউ তো তুমি।
সোনিয়াঃ এখনি জানতে পারবে বউ কে৷
ঐশীঃ মানে..?

ঐশীর আম্মু হাতে করে হলুদ শাড়ি নিয়ে ঐশীর রুমে এসে। ঐশীর হাতে শাড়ি দিয়ে বলে,’ রেডি হয়ে নাও। ‘
ঐশীঃ মানে..?
~ কাল সোনিয়ার নয় তোমার বিয়ে।
ঐশী রেগে বলে উঠলো,’ পাগল হয়ে গেছো আম্মু…
~ কেনো?
ঐশীঃ আমি বিবাহিত আমার আর কি বিয়ে হবে.?
~ শুভ নতুন করে আবার বিয়ে করতে চাচ্ছে।
ঐশীঃ আমাকে একবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো না।

পূর্ণাঃ এটা তোমার জন্য সারপ্রাইজ ভাবি।
ঐশী আর কিছু বললো না।

বিথী অফিস থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির জন্য।

মুরতাসিম গাড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় বিথীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে, ‘ চাইলে আমি পৌঁছে দিতে পারি আপনাকে। ‘
বিথীঃ ধন্যবাদ। কিন্তু আমি চলে যেতে পারবো।
মুরতাসিমঃ রাতে এদিক টা ভালো না উঠে পড়ো।
বিথী হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই উঠে পরলো মুরতাসিম এর গাড়িতে।সারা রাস্তা আর কেউ কারু সাথে কথা বললো না। গাড়ি থেকে নেমে বিথী বলে উঠলো,’ স্যার কিছু না মনে করলে একটা কথা বলতাম।
মুরতাসিমঃ হুম বলেন.?
বিথীঃ কাল আমার বোনের বিয়ে যদি আপনি আসতেন খুশি হতাম।
মুরতাসিম খুশি হয়ে বলে উঠলো, ‘ অবশ্যই আসবো আমি। ‘
বিথীঃ ধন্যবাদ স্যার।

ছাঁদে খুব সুন্দর করে হলুদ আয়োজন করা হয়েছে। মেয়েরা সবাই লেহেঙ্গা ছেলেরা পাঞ্জাবি পরে ছাঁদে গানের সাথে সাথে নাচছে।
বিথী বাসায় এসেই ছাঁদে গিয়ে দেখলো ঐশী নেই। সবাই কে জিজ্ঞেস করলো ঐশী কোথায়..?

ঐশীকে নিয়ে শুভ দাঁড়িয়ে আছে ঐশীর রুমে।

ঐশীঃ সরে দাঁড়ান।
শুভঃ আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি এক পা ও নরতে পারবে না ঐশী।
ঐশীঃ আপনার কাজটা কি শুনি..?
শুভঃ আমি আমার বউকে নিজে সবার আগে হলুদ লাগাতে চাই।
ঐশীঃ এই জন্য আমাকে এখানে তুলে নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো। ছাঁদেই দিতে পরতেন।
শুভ নিজের হাতের হলুদ ঐশীর গালে লাগালো।
ঠান্ডা কিছু অনুভব হতেই ঐশী চোখ বন্ধ করে নিলো৷
শুভ নিজের গাল নিয়ে লাগালো ঐশীর গালের সাথে। ঐশীর গালের হলুদ শুভর গালেও লেগে গেলো।
ঐশীর গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
শুভ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,’ এবার যাও। ‘
ঐশী রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার ছিটকিনি তে হাত দিতেই শুভও এক সাথে হাত দিলো ছিটকিনিতে, হাতের উপর হাত পরার সাথে সাথে ঐশী হাত নামিয়ে নেয়। এতো লজ্জা কেন লাগছে আজকে লজ্জা যেনো চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে।

মৌ,দীপ্ত, দীপ্তি, অথৈ,শান্ত সবাই ছাঁদে বসে আছে। কিছু সময় আগেই এসেছে ওরা। ঐশী ওদের দেখেই জড়িয়ে ধরলো।

ওদের শুভ নিজে ইনভাইট করেছে।

সবাই মিলে আড্ডায় মেতে উঠলো।

দূরে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে বিথী। নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তাকালো।
আকাশ তাকিয়ে আছে বিথীর দিকে।
বিথী আকাশকে দেখে তেমন কোনো রিয়েক্ট করলো না। আবারও তাকালো ঐশীর দিকে।
আকাশ বলে উঠলো,’ আমাদের বিয়ে টাও আবার নতুন করে করা দরকার।
বিথী কিছুই বললো না।
আকাশ বিথীর সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বলে উঠলো,’ তোমার কাছে ভালোবাসা চাই না। তোমার চোখে তাকিয়ে ভালোবাসার স্বপ্ন বুনতে চাই । তোমার চোখে এই ঘৃণাময় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকানো দেখতেও আমি রাজি তাও প্রতি দিন তোমার এই মুখটা দেখার জন্য আরেকটা চান্স দাও আমাকে। আমি এবার একজন সত্যি কারের প্রেমিক নয় স্বামী হয়ে দেখাতে চাই। আমি একজন দায়িত্ববান বাবা হতে চাই। আমি একজন ভালো স্বামী হয়ে তোমার ঘৃণা থেকে মুক্তি পেতে চাই প্লিজ বিথী ফিরিয়ে দিয়ো না।
বিথী আকাশের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,’ ভালোবাসা হুট করে হয়ে যায় তাই না। আমি যখন আপনাকে প্রথম বৃষ্টি মধ্যে দেখি তখনি ভালোবেসে ফেলি। আপনি যখন লোক গুলোর কাছ থেকে আমাকে রক্ষা করেন ঠিক সেই সময় আমি আপনাকে আমার মনে জায়গা দিয়ে দেই। আমাদের দ্বিতীয় দেখাটা অন্য রকম ছিলো কিন্তু তখন আমার আপনার প্রতি আর কোনো ফিলিং কাজ করেনি। আমাদের প্রথম দেখাটা আমি আজ-ও ভুলতে পারি না। নিজের অজান্তে আপনাকে জায়গা দিয়ে ছিলাম তার বিনিময়ে আপনি আমার গায়ে কলঙ্কের দাগ এঁকে দিলেন। আমাকে এক বুক কষ্ট উপহার দিলেন। আমি এখন নিজেকে সামলে নিয়েছি। আমার জীবনে আর কাউকে চাই না। দ্বিতীয় বার স্বামী, ভালোবাসা এইসব নিয়ে আমার সামনে আসবেন না। আমাকে একলা থাকতে দিন প্লিজ।
আকাশ অবাক হয়ে বলে,’ প্রথম দেখা, বৃষ্টি মানে..?
বিথীঃ বাহ্ বাহ্ এতো তারা তারি সব ভুলে গেছেন। ভুলারি কথা, এতো কিছু ভুলে গেলেন আর এটা তো সাধারণ।
আকাশঃ কি ভুলবো..? তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় ফুচকার দোকানে।
বিথীঃ বৃষ্টির মধ্যে সন্ধ্যায়, লোকগুলোর হাত থেকে আপনি আমাকে বাঁচাননি..?
আকাশ মাথা নেড়ে না বলে।
বিথী স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে।

অনুষ্ঠান শেষে সবার সবার বাড়িতে চলে যায়।

বিথীর সারারাত আর ঘুম হয়নি। সে ভুল কাউকে ভালোবেসে ঠকেছে। আজ আর জানার ও ইচ্ছে নেই। সেই লোকটি এখন কোথায়..? কে ছিলো..? আজ থেকে সে শুধু নিজেকে, নিজের সন্তান কে নিয়েই ভাববে। পেছনে ফিরে তাকাবে না।

সকাল থেকেই বিয়ের তোরজোর শুরু হয়ে গেছে। আত্মীয়স্বজন আসা শুরু।

ঐশীর ফ্রেন্ডরা সবাই চলে এসেছে। পার্লার থেকে লোক আনা হয়নি। ঐশীর নিষেধ ওর কথা হলো ওকে ওর বোন আর ফ্রেন্ডরা মিলে সাজাবে।

সবাই মিলে অনেক সুন্দর করে ঐশীকে সাজালো।

কিছু সময়ের মধ্যে ডাক শুনা গেলো জামাই এসেছে

ঐশীকে নিয়ে বসানো হলো স্টেজে

অথৈ গিয়ে দাঁড়ালো শান্তর পাশে।

শান্ত অথৈর কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলো,’ সবাই বিয়ে করে নিচ্ছে তুই কবে করবি..?’
অথৈ কিছু বলার আগেই পাশ থেকে একজন বলে উঠলো,’ আমি আজ ২বছর ধরে বলছি কিন্তু আপনার ফ্রেন্ড তো রাজি হচ্ছে না।
শান্ত আর অথৈ অবাক হয়ে পাশে তাকালো।

সৌরভ হাসি হাসি মুখ করে অথৈর দিকে তাকিয়ে আছে।
অথৈ রেগে বলে উঠলো,’ আপনি!!…
সৌরভঃ তুমি রাজি থাকলে আমি আজি ডাকতে পারি কাজী।
শান্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,’ আরে বাহ্। কিন্তু আপনাকে চিনলাম না..?
সৌরভ শান্তর সাথে নিজের পরিচয় দেয়,’ আমি সৌরভ মাহমুদ। একজন ডাক্তার। মানে এখনো হয়নি হবো। আর আপনার ফ্রেন্ড এর একমাত্র বয়ফ্রেন্ড। আর এখন আপনাদের বেয়াই।
অথৈ রেগে বলে উঠে, ‘ আপনি আমার কোন কালের বয়ফ্রেন্ড ছিলেন আজব! বাঁদর লোক একটা। ডাক্তার না হাতুড়ি ডাক্তার।
এই নিয়ে অথৈ আর সৌরভ কথা কাটাকাটি শুরু করে দেয়।
শান্ত একবার উপরের দিকে তাকিয়ে কেটে পড়ে এখান থেকে।

সৌরভ আর অথৈর বিষয়টা ওরা সবাই অনেক আগে থেকেই যানে। ওদের ফ্রেন্ড কে কোনো ছেলে ডিস্টার্ব করবে আর ওরা জানবে না, তা কি করে হয়। কিন্তু অথৈ কে কখনো বুঝতে দেয়নি৷ আর সৌরভ ছেলে হিসেবে খুবি ভালো। অথৈ নিজেও সৌরভ কে হয়তো ভালোবাসে কিন্তু বুঝতে পারছে না।

মুরতাসিম কে আজকে খুব সুন্দর লাগছে। এমনিতেও সে খুব সুন্দর, হ্যান্ডসাম একটা পুরুষ। বিয়ে বাড়ির সব মেয়েরা ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

সুরভি সিঁড়ি দিয়ে তারাহুরো করে নামতে গিয়ে পিছল খেয়ে গিয়ে পড়ে মুরতাসিম এর উপর। বেচারা একদম এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। সুরভি উপরে আর মুরতাসিম নিচে।
সুরভি হা করে তাকিয়ে আছে মুরতাসিম এর দিকে।
মুরতাসিম যে ওকে উঠতে বলছে সেটা ওর কানে গেলে তো সে উঠবে৷
সুরভি কে এভাবে হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে চলে যায় মুরতাসিম। সুরভি নিচে বসে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে মুরতাসিম এর যাওয়ার দিকে।

চলবে…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।