তবুও ভালোবাসি পর্ব-১৯

0
454

#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_১৯
#রেজওয়ানা_রমা

-কিহ? তুই? 😡
-হুম🥺 আমি। প্লিজ হেল্প কর
-আমি পারবো না।
-প্লিজ😟 না হলে বিয়ের আগেই ডিভোর্স দিয়ে দেবে
-তাই ই দিক😕
-তাহলে তোর টা দিস আমাকে😒
-লাত্তি খাবি আমার বউএর দিকে নজর দিলে😡
-তাহলে বুদ্ধি দে
– ঠিক আছে দিব। কিন্তু আব্বুর এমন অবস্থা কে করলো?🤔
– আংকেলের কাছে আগে শুনতে হবে।
-হুম আব্বুর জ্ঞান ফিরলেই বোঝা যাবে।
-চল উঠি। আংকেলের ওখানে যাতে হবে। মেইবি এতক্ষন জ্ঞান ফিরেছে।
-হুম চল

দুই জনই চলে আসে হসপিটালে। মি.রাইয়ানের জ্ঞান ফিরেছে। সবাই দেখা করে বাইরে এসেছে। রিফার ফোন বাজছে। রিফা নাম্বার দেখেই রেগেমেগে ফোন কেটে দেয়। আবারও ফোন আসছে। রিফার এবার বিরক্ত হয়ে ফোন টা রিসিভ করে বলে,
-কি সমস্যা আপনার? কেন ফোন করছেন? আর কাকে কাকে মারার ইচ্ছা আছে? আমার ক্ষতি কেন করছেন?
-রিফুপাখি! ভুল বুঝো না আমায়। আংকেল কেমন আছেন সেটা জানতে ফোন করেছি।
-কেমন আছেন মানে? নিজে থেকে সব কিছু করে এখন ভালো সাজতেছেন?
– দেখো রিফা অনেক বলেছো। বলছি তো আমি কিছু করি নি। বার বার একি কথা কেন বলছো?? আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি ভালোবাসো বা নাই বা বাসো আমি বাসি। আর আমি তোমার পরিবারের ক্ষতি করবো না। বরং যে ক্ষতি করেছে বা করার চেষ্টা করছে তাকে খুজে বের করবো। আর প্রমাণ করে দেবো আমি নির্দোষ।

বলেই ফোন কেটে দেয়। মেহুল জিজ্ঞাসা করে,
– কে ফোন করেছিল?
-সেই লোক টা।
-কি বলল?
-প্রমান করে দেবে যে সে কিছু করে নি
-হয়তো সত্যি কিছু করে নি। আচ্ছা থাক বাদ দাও।

রিয়ান আর রিক মি.রাইয়ান সাহেবের কাছে যায়।
-এখন কেমন আছো আব্বু?
-এ এই তো বাবা অনেক টাই ভালো আছি।
-আচ্ছা আব্বু কে করেছে এমন টা? কি হয়েছিল রাতে?
– রাতে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। খুব পিপাসা লেগেছিল কিন্তু ঘরে পানি ছিল না। তোমার আম্মু হয়তো ভুল গিয়েছিল রাতে পানি আনতে। তাই আমি পানি আনতে নিচে গিয়েছিলাম যখন ওপরে আসলাম তখন দেখি,

অতীত,
মেহুল আর রিয়ান রুমে যাচ্ছে এমন সময় কেউ রিয়ান কে পিছন থেকে আঘাত করবে তখনই রাইয়ান সাহেব তার হাত ধরে ফেলে। রাইয়ান সাহেব কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ একজন রাইয়ান সাহেবের মুখ চেপে ধরে। ততক্ষণে মেহুল আর রিয়ান রুমে চলে যায় আর দরজাও লক করে দেয়। এতে রিয়ান কে তারা আর আঘাত করতে পারে না। বিধায় রাগে রাইয়ান সাহেব কে আঘাত করে।
দুই জন ছিল।আর দুইজনের ই মুখ ঢাকা ছিল। রাইয়ান সাহেব ওদের একজনের মুখের কাপড় টেনে খুলে দেয়। আর মুখ দেখে ফেলে।এইজন্য তারা রাইয়ান সাহেব কে খুন করতে চেয়েছিল। যদি সবাই কে বলে দেয়।

আর রাইয়ান সাহেব কে আঘাত করার আগে ক্লোরোফম দেয়। যার ফলে রাইয়ান সাহেব অজ্ঞান হয়ে যায় আর তারা আঘাত করে চলে যায়।

বর্তমান
-তার মানে আপনি একজনের মুখ দেখেছেন? (রিক)
-হ্যা
-কে ছিল? তুমি তাকে চিনতে পেরেছো আব্বু?
– হ্যাঁ (নরম সুরে)
-কিহ! কে ছিল? (উত্তেজিত হয়ে)
-বললে বিশ্বাস করতে পারবি না।
-কে ছিল আংকেল?
-কথা দাও তোমরা ওকে কিছু বলবে না।
-কি বলছো আব্বু? কিছু বলব না মানে? কে ছিল? সেটা বলো জ্যান্ত পুতে ফেলব
-উত্তেজিত হয়ো না। আমি এখন ঠিক আছি এই নিয়ে আমরা পরে কথা বলব। তোমরা এখন যাও।
-কিন্তু আব্বু….
-আমি যেতে বলেছি

রিয়ান রাগে কটমট করতে করতে বের হয়ে আসে পিছু পিছু রিক ও।

এভাবে তিন দিন পার হয়ে যায়। রাইয়ান সাহেব কিছু সুস্থ। কিন্তু পুরোপুরি নয়। আর এই তিন দিনে সেই অচেনা লোক রিফা কে দিনে ৭০ বার ফোন করেছে আর বলেছে সে নির্দোষ। কিন্তু রিফা প্রতি বারের মত তাকে অবিশ্বাস করেছে। আর শেষে একদিন বলে,
ঠিক আছে যত দিন না আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে পারছি আর আসল দোষী কে খুজে পাচ্ছি ততদিন আর ফোন করবো না। নিজের খেয়াল রেখো
– ঠিক আছে। আমিও দেখবো আপনি কেমন সাধু মানুষ।
-ওকে

এদিকে হসপিটানে বাবা কে দেখিতে এসে রিয়ান রিক কে বলে,
-রিক
-হ্যা বল
-আব্বু কে বাসায় নিয়ে যেতে চাই
-এখনই? উনি তো এখনো সুস্থ নন
-এখানে থাকা সেফ নয়। বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। কারন সে যদি জানতে পারে আব্বু বেচে আছে তাহলে আবারও মারার চেষ্টা করবে।
-হুম তুই ঠিক বলেছিস। কিন্তু সে তো তোর বাড়ি তে আবারও যেতে পারে।
-হুম পারে। এবার গেলে সে নিজেই ধরা পড়বে(বাকা হাসি দিয়ে)
-কিভাবে?
-যেভাবে আমি বাড়ির সব খবরাখবর রাখি🥱
-ওহ বুঝেছি😅
-হুম চল
রাইয়ান সাহেব কে নিয়ে বাড়ি চলে আসে। আর রিক ও আসে। রিক কিছুদিন এবাড়িতেই থাকবে। রাইয়ান সাহেবের জন্য। আর এ বাড়ি থেকেই হসপিটালে যাওয়া আসা করবে। যদিও ছোট থেকে এবাড়ি থেকেই লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হয়েছে। নিজের বাড়ির মতই এই বাড়ি টাও। রাইয়ান সাহেব কে রেহানা বেগম রুমে নিয়ে যায়। আর রিফাও রিফার রুমে চলে যায়। রিয়ান রিক কে বলে,
– নিজের রুমে পরে যাবি। আগে আমার রুমে আয়।
– হুম চল

দুইজন রুমে এসে কি যেন প্লান করে আবার বের হয়ে যায় গাড়ি নিয়ে। গাড়ি থামে একটা ফার্ম হাউজের সামনে। এটা রিয়ানদের ফার্ম হাউজ। রিয়ানের গাড়ি থামতেই আকাশ (রিয়ানের গুপ্তচর ) আসে,

-স্যার আপনি হঠাৎ এখানে?
-হ্যা। দরকার আছে ভিতরে এসো।

রিয়ান হন হন করে ভিতরে চলে যায় সাথে লোক টাও। একটা অন্ধকার রুম যেখানে ঈশান আর মিরা কে আটকে রেখেছিল। রিয়ান ঈশানের চুল ধরে বলে,
-আদি কে?
-আ-আ-আদি? (ভয়ে ভয়ে)
– হ্যাঁ হ্যাঁ আদি। চিনিস?
– হ্যাঁ চিনি। খুব খারাপ ছেলে। আমাকে খুব মেরেছিল মেহু আমাকে ভালোবাসত তাই।
-কত টুকু জানিস ওর সম্পর্কে?
-বেশি কিছু জানি না। মেহুল কে পছন্দ করতো জানতাম।

রিয়ান এবার ঈশান কে ছেড়ে দিয়ে আকাশ কে বলে,
-ওই আদির সব ডিটেলস আমার চাই।
– পেয়ে যাবেন স্যার।
-আর সে কোথায়?
-স্যার ও তো এখনো কিছু স্বীকার করছে না। প্রান দেবে তবুও নাকি কিছু বলবে না।
-গুড। তোমার মতই বিশ্বস্ত😄
-😅😅
-আচ্ছা চলো দেখি বলে কি না
-জ্বী স্যার চলুন

হাত পা শিকল দিয়ে বেধে উল্টা করে ঝুলিয়ে রাখা। শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে আঘাত করা হয় নি। পুরা শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। জ্ঞান নেই। রিক এভাবে কাউ কে দেখার জন্য একদম প্রস্তুত ছিল না। রুমে ঢুকতেই থমকে যায় রিক বলে,
– ও তো মরে যাবে রিয়ান।
-যাক। তুই ভিতরে আয়।

রিক ভিতরে আসে। রিয়ান লোক টার চুল মুষ্ঠি করে ধরে বলে,
-কি নাম তোর?
-বলবো না
-বল (ধমক দিয়ে)
-না। আমাকে মেরে ফেললেও কিছু বলবো না।
-তাহলে তোকে বাচিয়ে রেখে যখন কোনো লাভ নেই তাহলে তুই মরেই যা।

বলেই রিয়ান রিভলবার বের করে লোক টার মাথায় ধরে বলে,
-দেখ তোকে মেরে ফেলতে আমার হাত কাপবে না। কিন্তু তুই মরে গেলে তোর বাড়ি তে তোর স্ত্রী মা ছেলে মেয়ে তাদের কি হবে? তুই যার জন্য কাজ করছিস সে কি তোর পরিবারের দায়িত্ব নেবে?

লোক টা একটু দমে গিয়ে নরন সুরে বলে,
-আপনার সাথে কাজ করলে কি আমার পরিবার সেফ থাকবে?
-কাজ করে দেখতে পারো😏
-বিশ্বাস করবো কিভাবে?
-আমার কাছে আমার পরিবার সব। আজ যা কিছু করছি সব টা আমার স্ত্রী আর আমার মেয়ের জন্য। তাদের জীবন বাচাতে আজ আমি এখানে

রিয়ান আকাশ কে ইশারা করে লোক টা কে নামিয়ে চেয়ারে বসাতে। আকাশ লোক টা কে নামিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়। লোক টা পানি খেয়ে আবারও বলতে থাকে,
-আমি এমন ছিলাম না। আমার মেয়ে আর আমার স্ত্রী কে মেরে ফেলবে যদি আমি আপনাকে সব বলে দেই।
-তোমার নাম?
-আদনান
-কোথায় আছে তোমার স্ত্রী?
-তার কাছে।
-কার কাছে?
-যার হয়ে কাজ করছি।
-তোমার স্ত্রী আর মেয়ে কে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবো। এবং তাদের নিরাপত্তা দেবো। এখন বলো কে সে?
-(……………..)

রিয়ান আকাশ আর আরো কিছু লোক পাঠায় আদনানের সাথে। আদনানের স্ত্রী আর মেয়ে কে উদ্ধার করতে। আর এইদিকে রিক আর রিয়ান ফার্ম হাউজ থেকে বের হয়ে আসে।

রিক: এবার কি করবি?
রিয়ান: নেক্সট প্লান রেডি ব্রো ( বাকা হাসি দিয়ে)

#চলবে