#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_২০
#রেজওয়ানা_রমা
আদনানের স্ত্রী আর মেয়ে কে উদ্ধার করে ফিরে আসে আকাশ আর রিয়ানের লোকজন। আদনানের পরিবার এখন আকাশের পরিবারের সাথে আছে এক ফ্লাটে। আর আদনান সব সত্যি বলে দিয়েছে। এখন আদনান রিয়ানের হয়ে কাজ করছে।আর আদনানের পরিবার আর আদনানের নিরাপত্তা এখন রিয়ানের অধিনে। রিয়ান আর রিক বাড়ি ফেরার পথে মেহুলের জন্য গিফট কিনতে যায়। কেননা মেহুলের বার্থডে তে মেহুল কে কিছুই দেওয়া হয় নি। গাড়ি এসে থামে মস্ত বড় এক শপিংমলের সামনে। রিক বলে,
-কিরে এখানে হঠাৎ?
-হুম দরকার আছে। আয়
-কি দরকার আবার?🤔
-আমার বউ এর জন্য
-আজকে বউ নেই বলে
-যে আছে তাকে কিছু দে তাহলেই তো হয়🙄
-আইডিয়া💡
-রাখ তোর আইডিয়া। চল এখন
দুই জন ই শপিংমলের ভিতরে চলে যায়। রিয়ান মেহুলের জন্য ২৫ টা শাড়ি, ২৫ ডজন কাচের চুড়ি, ২৫ টা কানের দুল, ২৫ টা গোলাপ, ২৫ টা ডার্ক চকলেট, ২৫ টা কিটক্যাট, ২৫ টা পায়েল, ২৫ টা মেহেদী, আর এক দম ছোট্ট শুরু থেকে করে ৬ ফিট পযর্ন্ত বড় মোট ২৫ টা টেডি বিয়ার নিয়েছে। কারন এই বার মেহুলের ২৫ তম জন্মদিন ছিল।
আর নিয়েছে একটা ডাইমন্ডের সেট। এই প্রথম মেহুল কে কিছু দিচ্ছে। তাই সে কোনো ত্রুটি রাখতে চায় না।
আর এদিকে রিক তার প্রিয়শীর জন্য ৩ টি মিডিয়ান সাইজের টেডি বিয়ার নিয়েছে।
রিক আর রিয়ান বের হয়ে ফুলের দোকানে চলে যায়। রিয়ান এবারও ২৫ টা গোলাপ আর ২৫ টা কাঠবেলীর মালা নিয়েছে। আর রিক এক তোড়া গোলাপ নিয়েছে। বড় দুইটা বক্সে সব সাজিয়ে গাড়িতে রেখে দেয়। এর পর তারাও রওনা দেয় বাড়ির উদ্দেশ্যে।বাড়ি ফিরতে সন্ধা হয় দুইজনের। দুইজন বক্স দুটি একা নিতে পারছে না। তাই বাড়ির ড্রাইভার আর দারোয়ান কে বলে বক্স দুইটা নিয়ে রিয়ানের রুমে রেখে আসতে। এতো বড় বড় বক্স দেখে বাড়ির সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। রিফা দরজা খুজে বক্স দুটি দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। রিয়ান বলে উঠে,
-কি রে ভেতরে আসতে দিবি নাকি এখানে দাড়িয়ে থাকবো?
রিফা দরজার সামনে থেকে সরে যায়। দুইজন ই ভেতরে প্রবেশ করে। রিফা বলে,
-কি এগুলা ভাইয়া?
-আমার দরকারি জিনিস
বলেই দুইজন ই নিজেরা নিজেদের রুমে চলে যায়। মেহুল আর রিফা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কিছুই বুঝতে পারে না।
এদিক দুইজন ই রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। রিক বক্স থেকে সব জিনিস বের করে খালি বক্স টা নিয়ে আবারও বের হয়ে যায়। পিছন থেকে রিফা বলে উঠে,
-রিক ভাইয়া আবার কোথায় যাচ্ছেন?
রিফার কথা একটু থমকে গিয়ে উত্তর দেয়,
-আসলে এটা একজনের জন্য এনেছিলাম তাকেই দিতে যাচ্ছি
-কার জন্য? আর কি আছে এতে?
-আমার প্রিয়তমার জন্য (একটু লজ্জা পেয়ে)
-😲😲 আপনি প্রেম করেন?
-আরে আরে না না কি বলো? এইসব না।
-তাহলে?🙄
-তাহলে কিছুই না।
রিক রিফার একটু কাছে এসে বলে,
– আচ্ছা রিফা আমি কি দেখতে খুব খারাপ?
– এ্যাহ? আপনি দেখতে খারাপ? কে বলল? কত মেয়ে আপনার পিছে ঘুরে। সকল মেয়ের ক্রাস সে নাকি দেখতে খারাপ। আপনি হ্যান্ডসাম অনেক। আর বেশ সুন্দর ও।
-তাহলে আমার প্রিয়তমা আমাকে গ্রহণ করবে বলো?
– অবশ্যই করবে। কিন্তু রিক ভাইয়া আমি আপনাকে যত টুকু চিনি আপনি কখনও এইসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভাবেন নি হঠাৎ কি হলো আপনার?
-আসলে আমি নিজেও বুঝি নি যে মায়াবতীর মায়াবী চোখে আটকে গিয়েছি😅 কখন যে ভালোবেসে ফেলেছি।
-ইসসসস কি প্রেম হিহি
-যাচ্ছি থাকো টাটা
– অল দ্যা বেস্ট রিক ভাইয়া
রিক বাইরে এসে বক্স টা ফেলে দিয়ে সোজা হসপিটালে চলে যায়। ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ন’টা বাজে। বাড়ি ফিরে সোজা নিজের রুমে যায়। ফ্রেস হয়ে বের হতেই দেখে রিফা। রিক কে দেখে রিফা বলে,
– কি খবর আপনার প্রিয়তমার?
রিক মুচকি হেসে বলে,
– আজকে রাতে জানাবে বলেছে।
-ওহ। আচ্ছা চলুন ডিনার রেডি। সবাই অপেক্ষা করছে
-হুম তুমি যাও আমি আসছি
– আচ্ছা
রিফা চলে যায় নিচে। রিক একটু উকি দিয়ে দেখে যে রিফা নিচে। তাই তারাতারি করে জিনিস গুলো নিয়ে রিফার রুমে রেখে নিচে চলে যায়।
( হ্যাঁ আপনারা ঠিকই ধরেছেন রিফা কে যে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করে সেটা আর কেউ নয় রিক😅 আর এটা রিয়ান ও জানে। রিক সেদিন রিফার কথা বলার
জন্য রিয়ান কে ডেকেছিলো)
ডিনার শেষ করে হন হন করে রুমে চলে আসে রিয়ান। আর মেহুল নিচের সব কিছু গুছিয়ে রাইয়ান সাহেবের রুমে যায়। রাইয়া সাহেব কে ঔষধ খাইয়ে বিছানা ঠিক করে দিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। কিন্তু একি!!!😯
রুম টা ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মেহুলের কাছে ফোন টাও নেই যে ফ্লাশ দিয়ে দেখবে। আস্তে আস্তে পা ফেলে রুমে প্রবেশ করে মেহুল। সামনের দিকে এগোতেই কেউ একজন মেহুলের হাত ধরে এক টানে বুকে টেনে নেয়। আচমকা এমন হওয়ায় মেহুল একটু ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু তার বুঝতে বাকি রইল না সে কে। বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে নিয়েছে তার প্রিয়শী কে। দুইজনের নিশ্বাস ভারী হচ্ছে। মেহুল ও জড়িয়ে নেয় দুই হাতে শক্ত করে তার আপন মানুষ টিকে।আবেগ জড়ানো কন্ঠে ভেসে আসে,
-ভালোবাসি জানপাখি
রিয়ানের এমন কন্ঠে ভালোবাসি বলা তে মেহুল লজ্জা পেয়ে রিয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে নেয়। রিয়ান এবার আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। রিয়ানের স্পর্শে মেহুল ফ্রিজ হয়ে রয়েছে। রিয়ান আস্তে আস্তে মেহুল কে ছেড়ে দিয়ে লাইট অন করে। অতঃপর সেই বক্স টি মেহুলের হাতে দিয়ে বলে
-তোমার বার্থডে গিফট।
মেহুল বক্স টি ধরে রাখতে পারে না। কারন প্রচন্ড ভারী। ফ্লোরে রেখে বলে,
-এত বড় বক্সে কি আছে? এত ভারি
-নিজেই খুলে দেখো
মেহুল বক্স টা খুলতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। মেহুল খুশি তে আত্নহারা। লাফিয়ে উঠে বলে,
-এত কিছু আমার জন্য? সত্যি? এতো গুলো শাড়ি? চুড়ি? এতো কিছু
-তোমার খুশির কাছে এটা অতি সামান্য
-আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি খুব খুশি খুব। আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না রিয়ান আমি কতটা খুশি। এখানে সব কিছুই আমার অনেক প্রিয় অনেক
-জানি তো। যাও এখন একটা শাড়ি পড়ে এসো আমি দেখবো😁
-কিহ! এখন?😒
-হুম এখন। তারাতারি যাও।
-উম কোন টা পরবো কোন টা পরবো🤔
-ওই যে ওই অফ হোয়াইট কালার টা পরো
-এটা?
-হুম
-ওকে
মেহুল চট করে শাড়ি টা নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। কোনো মত পেচিয়ে বাইরে আসে। আয়নার সামনে দাড়িয়ে এবার ভালো করে পরছে। আর রিয়ান অপলক তাকিয়ে আছে মেহুলের উন্মুক্ত পেটের দিকে। মেহুলের সেদিকে খেয়াল নেই সে শাড়ি পরতে ব্যস্ত। আচল টা বুকের ওপর ফেলে দিয়ে চুল গুলো চিরুনী করতে থাকে। রিয়ান পিছন থেকে গিয়ে গলায় ডাইমন্ডের হার টি পরিয়ে দেয়। মেহুল হা হয়ে তাকিয়ে রয়। অতঃপর রিয়ান কানে দুল পরিয়ে দেয় নিজের হাতে। রিয়ানের এমন হালকা স্পর্শে মেহুল কেঁপে কেঁপে উঠে। মেহুল কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। মেহুল চক্ষু জোড়া বন্ধ করে নেয়। রিয়ান এবার বেলির মালা টা চুলে পরিয়ে দেয়। মেহুলের মুখে মেকআপের কোনো ছাপ নেই। তবুও এত্ত এত্ত সুন্দর লাগছে তাকে। রিয়ান চোখ সরাতে পারছে না। তার নীড়পাখি কে এতো সুন্দর লাগছে। রিয়ানের এমন তাকিয়ে থাকা তে মেহুল লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। রিয়ান মেহুল কে আচমকা কোলে তুলে নেয়। মেহুল কোনো কথা বলছে না। রিয়ান বিছানায় বসিয়ে দিয়ে মেহুলের পায়ের কাছে হাটু ভাজ করে বসে মেহুলের হাত ধরে বলে,
– আমি সারাজীবন তোমাকে এই ভাবে হাসি খুশি দেখতে চাই নীড়পাখি। খুব ভালোবাসি তোমায় খুব। আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ আমি খুব অসহায় হয়ে যাব। ভীষন এলোমেলো হয়ে যাবো আমি নীড়
-আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না। আমি সারাজীবনের জন্য আপনার।
আমি বুঝেছি আমার সুখ আমার খুশি আমার ভালো থাকা সব কিছুই আপনি। আমিও আপনাকে ভালোবাসতে চাই যতটা আপনি আমাকে বাসেন তার চেয়েও বেশি।
রিয়ান মেহুলের হাত ঠোঁট ছুইয়ে বলে,
– কালকেই ছুটি শেষ। ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে যাবো। কিন্তু বাড়িতে এমন অবস্থা। আমি আগামী মাসে আবার আসবো। তখন তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো।
রিয়ানের চলে যাওয়ার কথা মেহুলের বুকে আঘাত করে। অশ্রুসিক্ত চোখে বলে,
-কালই?
-হুম
-আমার খুব ভয় করছে রিয়ান। বার বার হুমকি দিয়েছে।
-আমার কিচ্ছু হবে না। ক্রিমিনাল ধরা পড়েছে।
-কে? কে সব করেছে?
-আদি
-আদি? আদি এসব কিছু করেছে?
-হুম। ভয়ের কিছু নেই এখন তাই তাই হবে যা আমি চাইবো
-মানে
-তোমাকে এতো মানে বুঝতে হবে না। এখন তুই আমাকে আমার রিটার্ন গিফট দাও😇
-রিটার্ন গিফট? কিন্তু আমার কাছে তো এখন কিছুই নেই
-আছে।
-কি আছে?
রিয়ান উঠে দাঁড়ায়। সাথে সাথে মেহুল ও। রিয়ান মেহুলের কাছে এসে নেশাক্ত কন্ঠে বলে,
– তোমার ওই গোলাপি ঠোঁট
মেহুল লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়। রিয়ান আবারও বলে,
-আমি কি পাবো আমার রিটার্ন গিফট?
মেহুল রিয়ানের কাছে এগিয়ে যায়। রিয়ানের গালে হাত রেখে ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়।
আর এদিকে রিফা রুমে ঢুমে বিছানায় এতো গুলো টেডি আর গোলাপ দেখে তো অবাক। হা করে তাকিয়ে আছে। বিছানার কাছে গিয়ে একটা চিরকুট পায়। লেখা আছে,
আমার রিফুপাখি,
বলেছিলাম না নিজেকে নির্দোষ প্রমান করবো। আর অপরাধী কে শান্তি দেবো।
আমার ভালোবাসা গ্রহণ করো রিফুপাখি। তোমার আব্বুর মুখ থেকেই শুনে নিও আসল অপরাধী কে।
এর মধ্যেই আবারও ফোন আসে রিফার কাছে। সেই অচেনা লোক। মানে রিক। রিসিভ করতে,
#চলবে