#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_২৩
#রেজওয়ানা_রমা
(রহস্যভেদ পর্ব – ২)
উপস্থিত সবাই সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে। রিয়ান তো পুরাই থ।
রিয়ান: তোর বাবা?
আদি: হ্যাঁ। কিন্তু উনি তার এক ছেলে কে সব কিছু থেকে বঞ্চিত করেছেন। আর সেই ছেলে টাই আমি
রিয়ান: এক দম মিথ্যা গল্প বানাবি না
আদি: এই আদি কখনও মিথ্যে বলে না
রিক: তাহলে তুমি আলাদা কেন? কেন নিজের বাবা তোমাকে ছেলের পরিচয় দেন নি?
আদি: সেটা তাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন।
রিয়ান আকাশ কে ইশারা করে আদি কে নিচে নামানোর জন্য। আকাশ আদি কে নিচে নামিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। এবার রিয়ান কে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে আকাশ বলে,
-স্যার এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যা আদি করে নি। কিন্তু স্যার আদির রেকর্ডে খুনের অভিযোগ নেই। মানে ও কাউ কে খুন করে নি।
– কিন্তু খুনের চেষ্টা করেছে। আর এটাও অপরাধ। আর এর জন্য ওকে শাস্তি পেতে হবে
রিয়ান এবার হন হন করে বেরিয়ে যায়। পিছু পিছু রিক ও। উদ্দেশ্য বাড়ি যাওয়ার। কিন্তু রিক কে হসপিটালে যেতে হবে। তাই সে হসপিটানের সামনে নেমে যায়। আর রিয়ান বাড়িতে ঢুকে সোজা রাইয়ান সাহেবের রুমে যায়। রাইয়ান সাহেব ঘুমাচ্ছেন রিয়ান বাবার পাশে গিয়ে বসে। বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর একা একা বলে,
-আমি জানি আব্বু তুমি কোনো ভুল করতেই পারো না। নিশ্চয় এর পেছনে বড় কোনো কারন আছে। আদি কে এমন শাস্তি দেওয়ার পিছনে কি কারন আব্বু। আদি কি করেছিল যাত কারনে তুমি ওকে নিজের সন্তান বলে পরিচয় দাও নি।
হটাৎ চোখ খোলে রাইয়ান সাহেব। রিয়ান কে এভাবে পাশে দেখে বলেন,
– কি রে বাবা তুই এখন আমার এখানে
-না আব্বু তেমন কিছু না। তোমাকে দেখতে এসেছি (মাথা টা নিচু করে)
-তো কি কিছু হয়েছে? চিন্তা করছিস কিছু নিয়ে
-না আসলে তুমি অসুস্থ। আর এদিকে আজকেই আমাকে চলে যেতে হবে। ছুটি শেষ।
-আজকেই চলে যাবি বাবা।
-হ্যা আব্বু।
একটু নিরব থেকে আবারও বলে,
-আদি কে আব্বু?
ছেলের মুখে আদির নাম শুনে ভড়কে যায় রাইয়ান সাহেব। ভয়ে ভয়ে বলেন,
-আ-আ-আদি!!!
-হ্যা আদি। কে আদি? কি সম্পর্ক ওর সাথে তোমার? আর আমদের কি সম্পর্ক ওর সাথে?
-আদি? কোথায় আমার আদি? বলো না বলো না আমার আদি কোথায়? (পেছন থেকে রেহানা বেগম কান্নাভেজা কন্ঠে বলেন)
রিয়ান এবার অবাকের চরম সীমানায়। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
– আম্মু আদি কে?
– রেহানা শান্ত হও। ভুলে যেয়ো না অতীতে কি হয়েছে (রাইয়ান সাহেব)
-তুমি পাষাণ হতে পারো আমি মা আমি পারি না। আমার ছেলে কে ফিরিয়ে এনে দাও।
-আদি সত্যি তোমাদের আরেকটি ছেলে?
রেহানা বেগম কাদতে কাদতে রিয়ানের কাছে এসে বলেন,
– হ্যাঁ বাবা। আদি আমার সন্তান। আমি মা হয়ে সন্তান কে নিজের কাছে রাখতে পারলাম না। সব অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে আদি। আমার আদি কে ফিরিয়ে এনে দে বাবা। আমি মা হয়ে আর সহ্য করতে পারছি না এনে দে আমার আদি কে এনে দে
-মা শান্ত হও। আদি বলো কি হয়েছে? আদি তোমাদের ছেলে আর আমি জানতাম না? কেন আম্মু? আদি কে তো আমি কখনো দেখি ই নি এ বাড়ি তে। কারো কাছে আদির কথা শুনি ও নি।
-সে অনেক কথা বাবা। আজ থেকে ২৭ বছর আগে,
অতীত,
আজকে রাইয়ান চৌধুরীর ঘর আলো করে তার আরেকটি সন্তান এসেছে। বাড়ি জুড়ে আনন্দের ছড়াছড়ি। আদির বয়স তখন মাত্র দুই বছর ভালো করে কথা বলতেও পারে না। ছোট থেকে আদি দেখতে বেশ সুন্দর। সবাই আদি কে অনেক ভালোবাসত। রেহানা বেগমের কোলে রিয়ান কে দেখে ছোট্ট আদি বলে,
– তুমি এই বাবু তা কোতায় পেয়েথো আম্মু?
-এই বাবু টা তোমার ছোট ভাই। তোমার জন্যে এনেছি সোনা। তুমি বলেছিলে না তোমার একটা বন্ধু এনে দিতে। এই দেখো তোমার বন্ধু এনেছি
-ছত্তি আম্মু এই বাবু তা আমাল বন্দু?
-হ্যা সোনা তোমার বন্ধু।
-কি ছুন্দল। নলম আম্মু
আদি তার ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে রিয়ানের হাত ধরছে। মুখে স্পর্শ করছে। আর আদর করে দিচ্ছে। রেহানা বেগম মুচকি মুচকি হাসছেন।
এর মধ্যে রাইয়ান সাহেব রুমে প্রবেশ করেন। ছেলে আদির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেন,
-সময় হয়ে গেছে আদি ছেড়ে থাকার
-সময় হয়ে গেছে মানে? আমার দেবো না আমার ছেলে কে ( চিৎকার করে)
-কিছু করার নেই রেহানা। মন শক্ত করো। আর রিয়ান কে নিয়ে আদি কে ভুলে থাকতে হবে আমাদের।
-তুমি উনাদের বলো না আমারা আমাদের ছেলে কে দেবো না। (কান্না করতে করতে)
-উনারা নিচে অপেক্ষা করছেন
রাইয়ান সাহেবের এমন কথায় রেহানা বেগমের বুকের ভিতর কেপে উঠে। তারাতারি রিয়ান কে বিছানায় রেখে আদি কে বুকে জড়িয়ে নেয় আর অসংখ্য চুমু খায় ছেলের গালে। রাইয়ান সাহেব আবারও বলেন,
-আমাদের আদির ভালোর জন্যে আমাদের কে শক্ত হতে হবে। উনারা আদি কে ভালো রাখবেন। আদি ভালো থাকবে। আর আদি তো আমাদের ই থাকবে।
-কিভাবে আমাদের থাকে? উনারা তো নিয়ে যাবেন আদি কে। আমি দেবো না। লাগবে না উনাদের সাথে তোমার ব্যবসা করা।
-উনি আমার বিজনেস পার্টনার। আর আমাদের চুক্তি হয়েই গেছে। এখন আর কিছু করার নেই।
ছেলে কে নিয়ে রেহানা বেগম আর রাইয়ান সাহেব নিচে আসেন। আদি কে দেখেই একজন মহিলা ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
#চলবে