তবুও ভালোবাসি পর্ব-২৬

0
291

#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_২৬
#রেজওয়ানা_রমা
(রহস্যভেদের শেষ পর্ব)

পিছনে তাকিয়ে দেখন রিক। রিক কে দেখে রেহানা বেগম শুকনো ঢোক গিলে বলেন,

-বাবা তুমি এখানে?

-হ্যা আন্টি আংকেল কে চেকআপ করতে এসেছি। ভিতরে আসবো?

– হ্যাঁ হ্যাঁ এসো এসো।

রিক ভিতরে প্রবেশ করে দরজা লক করে দেয়। দরজা লক করতে দেখে রেহানা বেগম আর রাইয়ান সাহেব একে অপরের মুখের দিকে তাকান। রিক রাইয়ান সাহেবের পাশে গিয়ে বসে। প্রেশার মাপে অতঃপর চেকআপ শেষ করে বলে,

-আংকেল আমি আপনার ছেলের মত। সেই ছোট্ট থেকে আমাকে আপনি আর আন্টি কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন। রাস্তা থেকে তুলে এনে সন্তান স্নেহে বড় করেছেন। এই বাড়ি তে থাকতে দিয়েছেন। বড় স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। রিয়ান আর আমাকে কখনও আলাদা করে দেখেন নি। আজ আমি যা কিছু সব টা আপনাদের জন্য। আংকেল আমি আপনাদের ছেলের মত

-ছেলের মত কি রে? তুই তো আমার আরেক ছেলে রে (রেহানা বেগম)

-তাহলে এই ছেলের কাছে প্লিজ কিছু লুকাবেন না আন্টি। আমাকে বলুন কি হয়েছিল সেদিন? কেন আদি কে দিতে হয়েছিল? আর কোন এক্সিডেন্টের কথা বলছিলেন? প্লিজ আংকেল চুপ করে থাকবেন না। আংকেল রিয়ানের অনুপস্থিতিতে এই দিকের সব কিছু এখন আমাকে সামলাতে হবে। আপনি ভয় পাবেন না বলুন সব টা। প্লিজ আংকেল

– বাবা তুমি যখন শুনে ফেলেছো তখন আর লুকানোর আর কিছুই নেই। সেদিন,,,

রাইয়ান সাহেব অফিস শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। খুব চিন্তায় ছিলেন। কারণ তার ব্যবসা ভালো যাচ্ছিল না। প্রায় পথে বসার মত অবস্থা। অফিসের চিন্তা করছিলেন আর গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই কোথা থেকে এক বাচ্চা দৌড়ে এসে গাড়ির নিচে পড়ে।
সাথে সাথে ব্রেক কষেন। গাড়ি থেকে নেমে দেখেন বাচ্চা টার নিথর দেহ পড়ে আছে।
রাইয়ান সাহেব তারাতারি বাচ্চা টা কে নিয়ে হসপিটালে আসেন। সাথে মিনাজ সাহেব ও তার স্ত্রী। রেবেকা বেগম কান্নাকাটি করে অস্থির। মিনাজ সাহেব রেবেকা বেগম কে শান্তনা দিচ্ছেন। মিনাজ সাহেব রাইয়ান সাহেব কে বলেন,

– মিস্টার চৌধুরী যদি আমার ছেলের কিছু হয় আপনাকে জেলে যেতে হবে মনে রাখবেন।

– মিস্টার খান প্লিজ অবুঝ হবেন না। এটা একটা এক্সিডেন্ট। আমি ইচ্ছে করে করি নি। প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন।

-আমার এক মাত্র ছেলে। ওর কিছু হলে আপনাকে ছাড়বো না

এর মধ্যেই ডাক্তার বের হতেই সবাই ছুটে যায়। ডাক্তার জানান,

– সরি। আমরা আপনার বাচ্চা কে বাচাতে পারলাম না। ও অনেক আগেই মারা গিয়েছে। আপনারা যখন ওকে এনেছেন তখনই সে মৃত

ডাক্তারের কথা শুনে ওখানেই জ্ঞান হারান রেবেকা বেগম। তারাতারি রেবেকা বেগম কে নিয়ে বেডে শুইয়ে দেওয়া হয়।

আর এদিকে মিনাজ সাহেব পুলিশের কাছে সব জানাবেন বলে জানিয়ে দেন।

রাইয়ান সাহেব: প্লিজ মিস্টার খান এমন করবেন না। এটা একটা এক্সিডেন্ট। আমার পরিবার আছে। আমার সন্তান আছে। প্লিজ আমার সন্তানের কথা ভেবে কিছু করবেন না।

মিনাজ সাহেব : আজ আপনার জন্য আমার সন্তান হারিয়েছি। আমার স্ত্রীর এই অবস্থা সব কিছু আপনার জন্য। বলুন আপনি পারবেন আমার ছেলে কে ফিরিয়ে দিতে? বলুন

রাইয়ান সাহেব: না পারবো না। কিন্তু এটা আমি ইচ্ছা করে নি।

মিনাজ সাহেব : আপনার সাথে আমার পরে কথা হবে।

বলেই মিনাজ সাহেব স্ত্রী কাছে চলে যান। আর রাইয়ান সাহেব বাড়ি ফিরে আসেন। পরের দিন সকালে মিনাজ সাহেব আসেন চৌধুরী বাড়িতে।

মিনাজ সাহেব কে দেখে রেহানা বেগম বলেন,

-আপনি?

-জ্বী। মিস্টার রাইয়ান চৌধুরী কে ডাকুন

– উনি তো ঘরে আছেন। আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।

– চৌধুরী কে ডাকুন উনি আনাকে চিনেন উনার গাড়ি তে এক্সিডেন্ট হয়ে আমার বাচ্চা মারা গিয়েছে।

-কিহ!!!

– হ্যাঁ। ডাকুন উনাকে।

রাইয়ান সাহেব কে ডেকে নিয়ে আসেন রেহানা বেগম। কোলে আদি। রাইয়ান সাহেব কে দেখে মিনাজ সাহেব বলেন,
-আপনার কারণে আজ আমি সন্তান হারা হয়েছি। আমার স্ত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে। বলুন এখন আমি কি করবো?

-মিস্টার খান আমার কিছুই বলার নেই। আমি তো চাইলেও পারবো না আপনার সন্তান কে ফিরিয়ে দিতে। আপনার অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি আপনাকে এখন কিভাবে সাহায্য করলে পারি বলুন। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে সাহায্য করবো

-আপনি সত্যি আমাকে সাহায্য করতে চান?

-জ্বী। বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি

-আমার স্ত্রীর একজন সন্তান প্রয়োজন। তার কোলে একটা বাচ্চা তুলে না দিলে সে সুস্থ হবে না। তাকে শান্ত করা যাচ্ছে না। ডাক্তার বলেছেন একটা বাচ্চা এনে দিতে

– এখন বাচ্চা কোথায় পাবো। এতিমখানা তে খোঁজ নিতে হবে।

-না। আপনি চাইলেই পারেন। আপনার কাছেই আছে।

-মানে?

-আপনার স্ত্রীর কোলের ওই বাচ্চা টি কে আমাদের দিন ( রাইয়ান সাহেবের হাত ধরে)

– অসম্ভব! ( হাত ছাড়িয়ে)

– আমার স্ত্রী কে বাচান প্লিজ। আপনি যা চান সব পাবেন। শুধু মাত্র এই বাচ্চা টি আমাদের কে দিন। আপনার বিজনেসে আমি সাহায্য করব। যা যা দরকার সব পাবেন। আমি পুলিশের কাছেও যাবো না। প্লিজ দিন।

-আপনি এখন আসতে পারেন। আমার আদি কে আমি দেবো না। ( রেহানা বেগম )

– মিসেস চৌধুরী প্লিজ আমার স্ত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে। সেটা তো আপনার স্বামীর জন্য। আমারা আমাদের এক মাত্র সন্তান কে হারিয়েছি। এখন আপনারাও আপনাদের সন্তান কে আমাদের হাতে তুলে দিন।

মিনাজ সাহেবের কথা শুনে রেহানা বেগমের মাথা ঘুরাচ্ছে। নিজেকে সামলাতে না পেরে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যান তিনি।

– রেহানাআআআ

রেহানা বেগম কে নিয়ে হসপিটালে যান রাইয়ান সাহেব। সাথে মিনাজ সাহেব ও আছেন। ডাক্তার চেকআপ করে বলেন,

– কনগ্রাচুলেশন মিস্টার রাইয়ান। আপনার স্ত্রী মা হতে চলছেন।

-সত্যি? ( খুশি হয়ে)

– জ্বী। আপনি এখন দেখা করে আসতে পারেন।

ডাক্তার চলে যায়। রাইয়ান সাহেব কে তখন মিনাজ সাহেব বলেন,

-মিস্টার চৌধুরী আপনার তো আরেকটি সন্তান আসছে। প্লিজ চৌধুরী সাহেব আদি কে দিন ( হাত জোর করে )

-(একটু ভেবে) ঠিক আছে। কিন্তু এখন নয়। আমাদের দ্বিতীয় সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর।

– আপনি সত্যি বলছেন? ( খুশি নিয়ে)

– জ্বী।

-কথা দিন

– কথা দিলাম

রাইয়ান সাহেব সেদিন বাধ্য হয়ে কথা দেন। আদির বয়স তখন মাত্র এক বছর। দুধের শিশু মাত্র। তাই রাইয়ান সাহেব সময় নেন। এক বছর পর যখন রিয়ান জন্ম নেয় তখন মিনাজ সাহেব আদি কে নিয়ে যান।

বতর্মান,

– বাবা রিক সেদিন আমি নিরুপায় ছিলাম। উনাদের দিক টা বিবেচনা করলেও খারাপ লাগে। সন্তান হারিয়ে উনার ভেঙে পড়েছেন। আদি কে পেয়ে মিসেস খান আবার যেন নতুন জীবন ফিরে পেয়েছিলেন। এই ছাড়া যে আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না বাবা।

-জ্বী আংকেল আমি বুঝতে পেরেছি। আপনি চিন্তা করবেন না আদির কিচ্ছু হবে না। আমি আছি

রিক চলে আসে নিজের রুমে অতঃপর,

#চলবে