#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_২৯
#রেজওয়ানা_রমা
– তুমি?
– অবাক হচ্ছো? কি ভাবেছিলে আমাকে জেলে পাঠিয়ে এখানে সুখে সংসার করবে?
-তুমি কেম এসেছো এখানে?
-তোমাকে নিয়ে যেতে। তোমাকে আমি বিয়ে করবো আর এটাই তোমার শাস্তি আমাকে জেলে পাঠানোর
ঈশান মেহুলের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। মেহুল চিৎকার করছে। বাড়ির সবাই ছুটে এসেছে। মেহুল কে গাড়ি তুলবে এই মূহুর্তে কারো সজ্বোরে লাথি খেয়ে ছিটকে পড়ে ঈশান। আর মেহুল কে কেউ নিজের বুকে টেনে নেয়। মেহুল মাথা তুলে তাকাতেই হাউমাউ করে কেদে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোক টি কে জড়িয়ে ধরে।
– আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না নীড়। আমি চলে এসেছি।
-ও ও আমাকে… (কেদে )
রিয়ান এবার মেহুল কে সরিয়ে ঈশানের কাছে যায়। কিছু উত্তম মাধ্যম দিয়ে পুলিশের কাছে ফোন দেয়। পুলিশ এসে আবারও নিয়ে যায়।
– ধন্যবাদ মি. রিয়ান এ পালিয়ে এসেছিল জেল থেকে। খোঁজ চলছিল। আপনি আবারও ওকে ধরিয়ে দিয়েছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
– নিয়ে যান ওকে। এমন মাইর দেবেন যেন সোজা হয়ে দাড়াতে না পারে।
পুলিশ ঈশান কে নিয়ে চলে যায়। আর মেহুল দৌড়ে এসে রিয়ান কে জড়িয়ে ধরে। মেহুলের এমন কান্ড সবাই হাসছে। রিয়ান মেহুলের কানেএ কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
– সবাই দেখছে নীড়। রোমান্স টা আমারা রুমে গিয়ে করি। এখন ছাড়ো প্লিজ
রিয়ানের কথায় মেহুল লজ্জা পেয়ে ছেড়ে দেয় সবাই বাড়ির ভিতরে চলে যায়। রিয়ান সবার সাথে দেখা করে নিজের রুমে চলে য্য। ফ্রেস হয়ে বের হয়ে দেখে মেহুল শরবত বানিয়ে এনেছে। শরবত টা রিয়ান কে দিয়ে বলে
-এই নিন। এটা খেয়ে নিন
-উহুহ এটা নয় আমার অন্য কিছু চাই ( বাকা হাসি দিয়ে)
– ধ্যাত। এই রইলো আমি গেলাম
মেহুল যাওয়ার আগেই রিয়ান হাত ধরে নেয়। মেহুল দাড়িয়ে পড়ে। রিয়ান এক পা এক অআ করে এগিয়ে যায় মেহুলের দিকে। পিছন থেকে মেহুলেএ কোমর জড়িয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। গভীর ভাবে কিস করছে। মেহুল চোখ বন্ধ করে নেয়।
এরই মধ্যে রুমে প্রবেশ করে রিফা।
– এই সরি সরি সরি সরি। আমি একদম ভুল সময় চলে আসছি।
রিফার কথায় রিয়ান মেহুল কে ছেড়ে উল্টা ঘুরে তারাতারি বেলকানি তে চলে যায়। আর মেহুল জিভে কামড় দিয়ে অন্য দিকে তাকায়।
রিফা আবারও বলে,
-এই আমি পরে আসছি। খাবার রেডি আছে চলে এসো তোমরা
-আরে রিফা দাড়াও।
রিফা আর দাঁড়িয় না। চলে যায়। সাথে সাথে মেহুল ও। রিফা কে দৌড়ে নিচে নামতে দেখে রেহানা বেগম বলেন,
-কি রে দৌড়াচ্ছিস কেন। আস্তে নাম। পড়ে যাবি তো।
– উফফ পড়বো না।
– রিয়ান আর মেহুল কে যে ডাকতে বলেছিলান গিয়েছিলি?
-হ্যা। চলে আসবে
এরই মধ্যে মেহুল চলে আসে। পিছনে রিয়ান। দুপুরের খাবার টেবিলে সবাই আছে। রোজ সার্ভ করছে। রিয়ানের ডান পাশের চেয়ারে মেহুল আর বাম পাশের চেয়ারে রিক। রিকের সোজাসুজি রিফা । রিফা খাওয়া মাঝে মাঝে কয়েক টা লাথি দেয় রিকের পা ভেবে রিয়ান কে। রিয়ান কিছু বলে না। চুপচাপ খাচ্ছে। সাথেরিক আর রিফা কে ফলো করছে। দুইজন চোখে চোখে কথা বলছে ইশারা করছে। তা দেখে রিয়ান মুচকি হাসে। খাওয়া শেষ করে রিক আর রিয়ান যায় ফার্ম হাউজে। আদি কে নিয়ে বাড়িতে ফেরে রিক আর রিয়ান।
এতো বছর পর আবারও এই বাড়িতে। আদি ভয়ে ভয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। আদির বেশ অনুসূচনা ও হয় নিজের ভাই রে মারতে চেয়েছিল এটা ভেবে। আদিকে দেখে রেহানা বেগম ছুটে আসেন।
-আমার আদি এসেছিস বাবা। আদি (আদি কে বুকে জড়িয়ে ধরে কেদে)
– হ্যাঁ মা। আদি এসেছে তোমার আদি এসেছে মা।
-এত দিনে মায়ের শূন্য বুক টা ভরে উঠলো। ( কান্না করতে করতে)
-আদি ( রাইয়ান সাহেব)
– বাবা ( রাইয়ান সাহেব কে জড়িয়ে ধরে)
সবার সব মান অভিমান ভেঙে শুরু হলো নতুন জীবন।
কয়েকদিন পর,
বাড়িতে এখন রিফার বিয়ের তোড়জোড় চলছে। রিফার এ বিয়ে রে মত নেই। কারণ রিফা রিক কে ভালোবেসে ফেলেছে। এদিকে রিক ও ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। রিক ভাবছে,
-রিয়ান সব টা জানার পরও কিভাবে রিফা কে অন্য কোথাও বিয়ে দেয়। না রিয়ানের সাতগে আমায় কথা বলতেই হব। কোথায় ও।
রিক রিয়ান কে খুজতে খুজতে ছাদে আসে। রিয়ান আর আদি ছাদে আড্ডা দিচ্ছিলো। এমন সময় রিক উপস্থিত হয় সেখানে। রিক কে দেখে আদি বলে,
– আরে রিক। আয় বস।
রিক চুপচাপ গিয়ে বসে পড়ে।
রিয়ান: কিরে তোর মুখ টা এমন লাগছে কেন? কি হয়েছে?
রিক: রিয়ান তুই এটা কি করে করতে পারলি? তুই তো জানতিস
রিয়ান: কিসের কথা বলছিস বল তো
রিক: তুই জানতিস না আমি রিফা কে ভালোবাসি। তাও পরও এই বিয়ে? কেন?
আদি: আমার বোনের দিকে নজর দিবি না রিক। পুতে ফেলবো।
রিয়ান: আদি ঠিকই বলছে। রিফা কে ভুলে যা। কাল বাদে পরশু ওর বিয়ে।
রিক: আমি কি দোষ করেছি?
রিয়ান: এতো সতো বুঝি না। তুই আমার বোনের জীবনে বাধা হবি না ব্যাস।
বলেই রিয়ান আর আদি উঠে চলে যায়। রিক এই মূহুর্তে কি করবে বুঝতে পারছে না। এবার সিগারেট ধরিয়ে নেয়।
এদিকে রিফা রুমে দরজা বন্ধ করে কাদছে। না চাইতেও সে রিক কে ভালোবেসে ফেলেছে। এখন সে অন্য কারো হয়ে যাবে। কি করে সে অন্য কাউ কে মেনে নেবে।
– না অনেক হয়েছে। রিক ভাইয়ার সাথে আমাকে কথা বলতেই হবে। পালিয়ে যাবো তবুও এই বিয়ে করবো না।
রিফা হন্তদন্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়। রিক কে খুজছে কিন্তু পাচ্ছে না। বাড়ির ভিতরে কোথায় নেই তাই সে ছাদে চলে যায়। গিয়ে দেখে রিক এক নাগাড়ে সিগারেট টানছে।
– রিক ভাইয়া
– রিফা তুমি এখানে?
– আপনি আবার সিগারেট খাচ্ছেন?
– তো?
– আপনাকে না নিষেধ করেছি
– তোমার নিষেধ আমাকে শুনতে হবে তুমি কে?
-আমি কে মানে? আমি কেউ না?
– আমার কেউ নও।
– কেন এসেছিলেন আমার জীবনে? আমাকে কাদাতে? নাকি আমাকে নিয়ে খেলতে? ( কাদতে কাদতে)
রিক আবার উঠে দাঁড়ায়। আস্তে আস্তে রিফার এদিকে এগিয়ে আসে।
-এই বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। যাও এখন
– না যাবো না। আমার কথা আপনাকে শুনতে হবে। ভালোবাসি আমি আপনাকে।
– কাল বাদে পরশু যার বিয়ে তাকে এখানে মানায় না। এখান থেকে যাও
-যাওয়ার জন্য আসি না। আমি আপনার কাছে এসেছি। চলুন আমাকে নিয়ে এখান থেকে। পালিয়ে যাবো।
– পাগল হয়ে গেছো? যাও এখান থেকে। কোথায় যাবো তোমায় নিয়ে? পালানোর কথা বলছো? আংকে আন্টির কথা ভাবলে না। তাদের ভালোবাসার মুল্য নেই? আজ যাদের জন্য আমি আজ এখানে তাদের সম্মান নষ্ট করে তোমায় নিয়ে পালিয়ে যাবো?
-তাহলে আমাকে মেরে ফেলেন। আমি অন্য কাউ কে বিয়ে করতে পারবো না।
– আমার সামনে থাকে যাও। আর বিয়ের জন্য প্রস্তুত হও।
রিফা এবার ছুটে গিয়ে রিকের গলা জড়িয়ে ধরে কান্না করে। রিক পাথরের মত দাড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না। একটু পরে রিক নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
– আমাকে নিয়ে আর না ভেবে হবু জামাই এর কথা ভাবো
– আপনি একবার আম্মু আব্বু র বা ভাইয়াদের সাথে কথা বলুন না প্লিজ
– রিয়ান সব জানে। আদিও জানে। ভাবি ও জানে। কেউ রাজি নয়। আমি কথা বলেছি রিয়ানের সাথে।
– তাহলে এখন আমি কি করবো?
– বিয়ে টা করে নাও
– আর আপনি
– আমিও কয়েকদিন পর বিয়ে করে নেবো
– আমাকে ছেড়ে অন্য কাউ কে মেনে নিতে আপনি পারলেও আমি পারবো না। নিজেকে শেষ করে ফেলবো।
বলেই রিফা দৌড় দিতে গেলেই রিক হাত ধরে বুকে টেনে নেয়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় রিক। রিফাও রিক কে জড়িয়ে ধরে কাদছে।
দেখতে দেখতে গায়ে হলুদ শেষ হয়ে গেল কাল বিয়ে, আজকে সারারাত রিফা রিক কারো চোখে ঘুম নেই। কান্না করতে করতে রাত ফুরিয়ে যায়। ভোর হয়ে যায়। সূর্য উদিত হয়। আস্তে আস্তে বাড়ির সবার ঘুম ভাঙে। সবাই বিয়ের কাজে আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আর এদিকে মেহুল………….
#চলবে