#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_৩০ ( অন্তিম পর্ব)
#রেজওয়ানা_রমা
মেহুল আর রিয়ান রেডি হয়ে রুম ত্যাগ করে। মেহুল যায় রিফার রুমে। আর রিয়ান যায় আদির রুমে আদি কে সাথে নিয়ে রিয়ান রিকের ঘরে যায়।
রিয়ান: রিক তুই এখনো রেডি হস নি?
রিক: কেন ? কোথায় যাবো?
আদি: কোথায় যাবো মানে। রিফার বিয়ে আজ। আর তুই এখনো রেডি ই হস নি?
রিক: না মানে। কিছু ভালো লাগছে না।
রিয়ান: ভালো লাগছে না মানে? তারাতারি নিচে আয়। এক্ষুনি বরযাত্রী চলে আসবে
রিক: আচ্ছা ছেলে কে তো দেখালি না।
আদি: একটু পরেই দেখতে পাবি। রেডি হয়ে আয়।
রিয়ান: এই নে। ( একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে) আব্বু আমাদের তিন জনের জন্য শপিং করেছে। আমি আর আদি তো দেখতেই পাচ্ছিস রেডি। তুইও চলে আয়। অনেক কাজ পড়ে আছে।
রিক: হুম
রিক থ হয়ে বসে থাকে। রিকের বসে থাকা দেখে আদি বলে,
আদি: রিয়ান আমার মনে হয় রিক কে আমাদের ই রেডি করাতে হবে।
রিয়ান: আমারও তাই মনে হয়।
আদি গিয়ে রিক কে বসা থেকে উঠায়। রিয়ান রিকের চোখ বেধে দেয়।
রিক: এই এই কি করছিস। আমার চোখ বাধছিস কেন?
রিয়ান: যেন তুই কিছু দেখতে না পাস
রিক: তোরা নিজেদের চোখ না বেধে আমার চোখ কেন বাধলি? কি করছিস।ছাড় আমায়। রিয়ান প্লিজ। আমার মান সম্মান সব শেষ। হায় রে। আল্লাহ রক্ষা করো। আদি ভাই প্লিজ ছাড়ো না। কি করতেছো।
রিক পক পক করেই যাচ্ছে কিন্তু কে শোনে কার কথা রিয়ান ও আদি রিক কে রেডি করাচ্ছে।
রিক কে নিচে নামানোর সময় রেহানা বেগম এসে বলেন,
– কিরে তোরা আমার ছেলে টাকে এভাবে চোখ বেধে কই নিয়ে যাস। একটু পরেই ওর বিয়ে। এক্ষুনি কাজী চলে আসবে।
আদি: ইসস!! আম্মু দিলে তো সব প্লান নষ্ট করে।
রিয়ান: এটা তুমি কি করলে আম্মু? এখনই বলতে হলো। সাজপ্রাইজ টা নষ্ট করে দিলে?
রেহানা বেগম : আমি তোদের অতো সতো সারপ্রাইজ বুঝি না বাবা তোদের যা ইচ্ছা কর এই আমি গেলাম
বলেই রেহানা বেগন চলে যান অন্য কাজে। আর এদিক রিক চোখের কাপড় খুলে আদি আর রিয়ান কে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে,
– শালা বদমাইশ, খালি খালি আমার রাতের ঘুম নষ্ট করলি দাড়া বলছি দাড়া। আজকে তোদের একদিন আর আমার যত দিন লাগে।
এর মধ্যেই বাড়িতে পুলিশ আসে। সবাই অবাক হয়ে যায়। সবাই বলাবলি করছে পুলিশ? এখন এই বাড়ি?
ইন্সপেক্টর : আদি কে আছেন?
আদি: আমি ই আদি। বলুন কি হয়েছে
ইন্সপেক্টর : আপনার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ আছে। আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।
রেহানা বেগম ছুটে আসেন।
– না আমার আদি কে ছেড়ে দিন প্লিজ। ও কিছু করে নি। প্লিজ ওকে নিয়ে যাবেন না।
রিয়ান : কাকে খুন করেছে আদি?
ইন্সপেক্টর : বনি সরকার নামের এক যুবক কে।
রিয়ান: কোনো প্রমাণ আছে?
ইন্সপেক্টর : না মানে। এখনো তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। কিন্তু…
রিয়ান: প্রমান ছাড়াই চলে এলেন? বনি মারা গিয়েছে কি যায় নি সেটাই যাচাই করলেন না আর আদি কে গ্রেফতার করতে চলে এলেন?
ইন্সপেক্টর : আমারা বনির ডেথ বডি খুজছি পেয়ে যাবো
আদি: কিভাবে পাবেন। বনি তো মারাই যায় নি
ইন্সপেক্টর : মানে?
রিয়ান: মানে টা বুঝাচ্ছি। বনি বনি
বনি: স্যার ডাকছেন?
ইন্সপেক্টর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বনি -বেচে আছে?
– ইয়েস বনি বেচে আছে।
রিয়ান: এখন আপনারা আসতে পারেন। আশা করি জীবিত মানুষের খুনের অভিযোগে আদি কে আপাদের সাথে যেতে হবে না।
ইন্সপেক্টর : জ্বি না। কিন্তু উনাকে তো খুন করা হয়েছিলো। উনি বেচে আছেন কিভাবে?
আদি: সেদিন আমি ওকে মেরেছিলাম ঠিকই। কিন্তু এলাকার লোকজন ওকে হসপিটালে নিয়ে যায়। আর ওকে সুস্থ করে তোলে।
ইন্সপেক্টর : ওহ। উনি যেহেতু বেচেই আছেন তাহলে তো এই কেস এখানেই ক্লোজ। আসছি তাহলে মিস্টার রিয়ান।
রিয়ান : জ্বী
পুলিশ চলে যায়। সবাই সবার মতো কাজে ব্যস্ত। রিক কে বসানো হয় স্টেজে। রিক বসে বসে ভাবছে কখন তার প্রিয়সি আসবে। কখন দেখবে তাকে। বউ সাজে কেমন লাগছে তার রিফা কে।
আর এদিকে রিফা সাজবে না বলে জেদ ধরেছে। মেহুল পার্লালের লোক কে বলেছে জোর করে সাজাতে। আর রিফা কেদেই যাচ্ছে।
মেহুল : রিফা কান্না বন্ধ করো। এক্ষুনি বর চলে আসবে। আর তুমি এখনো এই ভাবে
রিফা: ভাবি আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। আমি রিক ভাইয়া কে ভালোবেসে ফেলেছি।
মেহুল: কি বলছো তুমি? পাগল হয়ে গেছো? একটু পরেই তোমার বিয়ে আর তুমি এখন। না রিফা আর কোনো কথা নয়। বাড়ি তে কেউ জানার আগে শান্ত হয়ে যাও।
রিফা: প্লিজ ভাবী
মেহুল: তোমার কোনো কথাই শুনবো না।
রিফা কে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।মেরুন কালারের লেহেঙ্গা। ম্যাচিং জুয়েলারি। পুরাই পরী। রিফা কে নিয়ে মেহুল নিচে আসছে। সাথে রিফার বান্ধবীরাও আছে।
ঝুমু: রিফু তোরে যা লাগছে না। কি বলব তোর বর তো হা করে তাকিয়েই থাকবে
রিফা: ( নিশ্চুপ)
রিফা স্টেজে বাসানো হয়। পাশের স্টেজে রিক বরের সাজে। একটু পরে কাজী এসে বিয়ে পড়ায়। রিফা এতো টাই কাদছে যে কবুল বলার সময় বরের নাম টাও খেয়াল করে নি।
বিয়ের সব নিয়ম শেষ করে রিফা কে বাসর ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘরে ঢুকতেই রিফার বুকের ভিতর কেপে উঠে। রিফা কে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে সবাই চলে যায়। একটু পরে রিক আসে। রিফা এখনো বরের মুখ দেখে নি। নিরবে কেদেই যাচ্ছে। রিক রিফার সামনে গিয়ে বসে।
রিক: কান্না কি বন্ধ হবে? নাকি এবার সত্যি সত্যি অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দেবো?
রিকের এমন কথায় রিফ মাথা তুলে দেখে সামনে রিক। রিক কে দেখে রিফার চোখ চটকগাছ। যেন রিফার চোখ গুলো বের হয়ে আসবে।
রিফা: আপনি? এখানে?
রিক: তো! আমার বাসর ঘরে অন্য কেউ থাকবে নাকি?
রিফা: আপনার বাসর ঘর? ঠিক বুঝলাম
রিক: বিয়ে করলে আর বর কে সেটাই জানো না। এই যে তোমার সামনে তোমার বর স্বয়ং উপস্থিত
রিফা: আপনি?
রিক: ইয়েস ম্যাডাম
রিফা: এই একটা চিমটি দিন তো।
রিক এবার রিফার কাছে চলে যায়। রিফা কে বুকের জড়িয়ে রিফার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। রিফার গলায় জোরে কামড় বসিয়ে দ্য রিক,
– আউউউউউ
– কি হলো?
-কামড় দিলেন কেন?
– আরে তুমি স্বপ্ন দেখছো কি না সেটাই দেখাচ্ছি। তুমি চিমটি দিতে বললে আমি একটু কামড় দিলাম ( চোখ মেরে)
-😦
এবার রিক রিফার আরো কাছে চলে আসে। রিফার গলায় গভীর ভাবে কিস করছে।রিফা খামচি দিয়ে রিকের চুল ধরে। রুমের লাইট অফ।
( অতঃপর লেখিকা আর কিছু দেখে নাই🤭😅আর আপনারা এখানে কি করেন চলুন রিয়ান আর মেহুল কি করছে দেখে আসি😄)
এদিকে মেহুল ফ্রেস হয়ে বের হতেই রিয়ান মেহুল কে কোলে তুলে নেয়
– কি করছেন
– এখনো কিছু করি নি। বাট তুমি চাইলে….
মেহুল রিয়ানের মুখ চেপে ধরে।
– চুপ একদম চুপ
– ( বাকা হাসি)
রিয়ান মেহুল কে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়। অতঃপর রমের লাইট অফ করে দেয়।
– লাইট অফ করলেন কেন? কিছুই দেখতে পাচ্ছি না তো
– দেখলে তো লজ্জা পাবে এই জন্য লাইট অফ করেছি😁
-কিহ!! 😳
– আজ রিক ও রোমান্স করবে আর আমি?
– আপনি কি🙄
– আমার কি হবে ( কাদো কাদো সুরে)
– আপনি ঘুমাবেন
-না আমিও রোমান্স করবো
বলেই রিয়ান আস্তে আস্তে মেহুলের কাছে আসে। মেহুলের হাতে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। অতঃপর মেহুলের কপালে, দুই গালে এবং মেহুলের দুই ওষ্ঠো জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়। মেহুল খিচ ধরে চোখ বন্ধ করে আছে। রিয়ান এবার মেহুলের গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলে,
– আজও কি আমি আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবো নীড়?
-(নিশ্চুপ)
– তুমি না চাইলে কিছুই হবে না
– (নিশ্চুপ)
এবার মেহুল কে ছেড়ে দিয়ে বলে,
– ঠিক আছে ঘুমাও
– আপনি কি নিরবতার ভাষাও বুঝেন না ( লাজুক স্বরে)
রিয়ান মুচকি হেসে মেহুল কে বিছানায় শুইয়ে দেয়। মেহুলের পেটের ওপর থেকে শাড়ি সরিয়ে গভীর ভাবে কিস করতে থাকে। অতঃপর ডুবে যায় ভালোবাসার অন্য জগতে।
২০ বছর পর,,,
মেহুল: রিশান বাবা দাড়া। এটা খেয়ে নে প্লিজ
রিশান: আর খাবো না। লেট হয়ে যাচ্ছে মম
মেহুল: খাবার টা শেষ করে যা বাবা
রিয়ান: রিশান এদিকে এসো। খাবার টা শেষ করে যাও।
রিশান: পাপা তুমিও। লেট হয়ে যাচ্ছে ভার্সিটির। প্লিজ এখন আর নয়। আমি গেলাম বাই মন বাই পাপা
রিশান আর একটু দাড়ায় না। রিশান মেহুল আর রিয়ানের এক মাত্র ছেলে। এইবার ভার্সিটির ফাস্ট ইয়ার। রিশান কে নিয়ে সুখে দিন কাটছে মেহুল আর রিয়ানের। ভালোবাসার কমতি নেই। আজও মেহুল ছোট ছোট ভুল করে। আর মেহুলের ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়ে রিয়ান আজও বলে #তবুও_ভালোবাসি নীড়পাখি
রাতের খাবারের পর মেহুল বেলকানি তে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর রিয়ান ও মেহুলের পাশে গিয়ে বসে।
– দেখতে দেখতে সময় চলে যায় তাই না রিয়ান
– হুম।
– দেখো না আমি সেদিন তোমার বউ হয়ে এলাম আর দেখতে দেখতে আমাদের ছেলে ও বড় হয়ে গেলো।
– হুম এর পর ছেলের বউ আসবে। নাতি নাতনি আসবে
মেহুল ফিক করে হেসে দেয়।
– আসলেই। সময় কত দ্রুত চলে যায়।
– আজ আব্বু আম্মু বেচে থাকলে কতই না ভালো হতো নীড়।
– হুম। কিন্তু কেউ যে চিরস্থায়ী নয়। সবাই কে যেতে হবে একদিন।
– আদি টাও এখনো বিয়ে করলো না। আব্বু আম্মুর খুব ইচ্ছা ছিল আদির বউ দেখে যাওয়ার।
– এক তরফা ভালোবাসা হয়তো এমনই হয়🙂
-হয়তো। নীড় ঘুম পাচ্ছে ভীষন।
-হুম চলো
দুইজন এসে শুয়ে পড়ে। মেহুল আজও রিয়ানের বুকে মুখ গুজে ঘুমিয়ে পড়ে। রিয়ান মেহুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আর ফিস ফিস করে বলে,
– আজও সেই প্রথম দিনের মত ভালোবাসি। তোমার শত শত ভুলের পরেও বলতে চাই #তবুও_ভালোবাসি
আর এদিকে আদি একটা অন্ধকার রুমে রকিং চেয়ারে বসে বসে মেহুলের সেই কলেজ লাইফের একটা ছবি দেখছে আর ভাবছে,
আজ বিশ বছর পরেও তোমায় ভুলতে পারলাম না। আজও ভালোবাসি তোমায়। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। কি করে ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে নিজের করি বলো। তাই তো আজও নিরবে তোমাকে ভালোবাসি। এক তরফা ভালোবাসা গুলো খুব অদ্ভুত জানো। এখানে প্রিয়জন কে হারানোর ভয় নেই। তাই তো তোমাকে হারানোর ভয়ও আমার নেই। কল্পনায় বেশ আছি। দূর থেকে দেখি। আজও বেশ সুন্দর ই আছো। তোমারও চুলে পাক ধরেছে। মুখের চামড়া ঝুলে গিয়েছে। তুমিও এখন চোখে কম দেখো। আমিও ঠিক তাই। আমাদের বয়স হয়েছে, সময় বদলেছে, আমাদের বংশের একমাত্র প্রদ্বীপ রিশানও বড় হয়ে গেছে। আমি আজও বিয়ে করতে পারি নি মেহুল। একা ভালোই আছি। তোমাকে নিজের করে চাওয়া টা এখন নেহাত কুরুচিপূর্ণ মানসিকতার পরিচয় দিবে। আমি চাই না তোমাকে নিজের করে কিন্তু #তবুও_ভালোবাসি আর ভালোবেসেই যাবো এভাবে দূর থেকে।
তুমিও ভালো থেকো আমার আদরের ভাই রিয়ান আর আমার রিশানের সাথে। আমি তোমার শুভাকাঙ্কি হয়েই রয়ে যাবো। তোমার গল্প আমার আমাদের সবারই একটা নিজেস্ব গল্প থাকে। কখনও গল্প টা পূর্ণতার আর কখনও অপূর্ণতার।এই পূর্ণতা অপূর্ণতার গল্পে কেউ পেয়েছি কেউ পাই নি কিন্তু আমি #তবুও_ভালোবাসি।
সমাপ্ত